পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

দেহ কোরআন

ফকির লালন শাহ ছিলেন বাউল সম্রাট। বাউলদের মধ্যে এমন সাধক পুরুষ খুব কমই দেখা গেছে। বাউলরা তাকে গুরু হিসেবে মানেন। কারণ গুরু লালন ছিলেন দেহতত্ত্ববিশারদ তত্ত্বজ্ঞানী। গুরু লালন শব্দটির মধ্যেই রয়ে গেছে লালনের দর্শন। গু অর্থ অন্ধকার আর রুহ অর্থ আলো। যিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পথ দেখান তিনিই গুরু। আর লা অর্থ মহা শুন্য। মানুষের মন-মস্তিস্কে পন্ঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বার দ্বারা যা কিছু প্রবেশ করে তা মস্তিস্কে স্থায়ী ছাপ ফেলে। এই ধর্মরাশি সংস্কার করার জন্য সালাত তথা ধ্যান করতে হয়। সালাতের মাধ্যমে অর্থাৎ ধ্যানের মাধ্যমে সেই প্রবেশ পথে প্রহরীর মতো একটা একটা করে অণু অণু বিশ্লেষণ করে সংস্কার করে শুণ্যে আনতে হয়। তখন তা মস্তিস্কে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে না। এই মহাভাব আনার জন্যই সালাত দর্শন তথা ধ্যানের দর্শন করা প্রয়োজন। যারা এই লা-কে হৃদয়ে ধারণ করতে চান তথা নিতে রাজী থাকেন তারাই লা – কে লালন করেন। সুতরাং ব্যক্তি লালন আর মানুষের মধ্যে বিরাজিত লালন এক নন। লা(মহা শুন্যতা) কে যিনি লন (নেন তথা গ্রহণ করেন ) তিনিই লালন। তথাপি দেহ তত্ত্ববিশারদ হিসেবে লালন ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। এখানে গুরু লালনের একটি দেহতত্ত্ব কালাম দেয়া হলো -
মানব দেহের ভাব জেনে কর সাধনা।
দেল কোরান না পড়িলে আয়াত কোরান
পড়লে কিছু হবেনা।।
মুন্ডুতে ‘মিম ‘আলো
‘হে ‘তে মগজ ছিল
‘তৈ ‘ ‘যৈ ‘তে দু কান জানা গেল
‘আয়েন ‘ ‘গায়েন ‘দু নয়না।।
অধর যুগল ‘লাম ‘ ‘মীম ‘
সর্ব অঙ্গে আলেফের চিন
আরও দু বাজুতে ‘সিন ‘ ‘ছিন ‘
মুখেতে ‘বে ‘র গঠনা।।
‘লাম ‘ ‘আলিফ ‘ নাসিকা খানি
‘ছিয়া’ তে দুই কন্ঠ ধ্বনি
‘মিমে ‘ হয় জেকের ধ্বনি
‘হে’ হাড়ের গঠনা।।
‘ফে ‘তে ফোঁফড়া পানি পুরা
‘কাফ ‘তে কলিজা ঘিরা
আরও বড় ‘কাফ’ নাড়িতে ঘিরা
‘জে ‘তে দমের ঠিকানা।।
‘তই ‘ ‘জই ‘ তিল্লিতে ছিল
‘ছোয়াত ‘ ‘দোয়াত ‘ হৃদয় রাখিল
‘নফস ‘তে ‘নু ‘ হরফ হল
রুপেতে ভেদ যায় জানা।।
আরও টিমটিমরী ‘হামজা ‘ আরো
জেনে নেও মুরশীদের ধারে
‘দাল ‘ ‘জাল ‘ দুই জানুর পরে
দলিতে তার নিসানা।।
দশ হরফে সাধনের গতি
সাধনে জ্বলে জ্ঞানের বাতি
নিষ্টায় রেখ রতি মতি
গুরু কর ভজনা।।
আরও লাহুত নাছুত মুলকুত জবরুত
ছয় লতিফা ঐ দেহে মজুত
দরবেশ লালন কয় দিয়াছে মাবুদ
এই ‘জি ‘তে কেন খোঁজ না।।
_____ফকির লালন সাঁই

ব্যাখ্যাঃ-
তিরিশ হরফে মানব দেহ গঠনঃ
মাথা=মীম
মগজ=হে
কান=তে,যে
চোখ=আয়েন,গায়েন
নাক=লাম আলিপ
ঠোট=লাম মীম
ফোফড়া,ফেসকি=ফা
মুখ=বে
জিহবা=জীম
বাজু=ছিন,সিন
কলিজা=ক্বফ
নাভি=বড় ক্বাফ
হৃদ=ছোয়াদ,ধোয়াদ
নুনু,খুন,নাড়িভূড়ি=নুন
জানু=দাল,জাল
হাড়=হে
পায়ের বেড়ী=ইয়া,ইয়ায়ে মারুফ
টিমটিমারি=হামজা
তিল্লী=ত্বয়,জ্বয়
আওয়াজ=ওয়া
দম=জে
আরোও দশ হরফ আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন।এগুলো হলো দেল কোরান।
১।দর্শন
২।শ্রবন
৩।গন্ধ
৪।স্বাদ
৫।বাক
৬।দেহ
৭।মন
৮।আহাদ
৯।আহমদ ও
১০।মোহাম্মদ
আলিপের নুক্তা চুরীর ঘটনায় অর্থাৎ রতি ও মতিতে ব্রক্ষ্মান্ডের খবর। পাঁচ আত্মার পঁচিশ খেতাব + ৫ জাত+ ৭ সেফাত + আহাদ + আহমদ + মুহাম্মদ মিলে অনেকে ৪০ পারা। এগুলোর কার্যাবলী ও ফজিলত মিলে অনেকে ৬০ পারা ও ৯০ পারা বলে। তবে ৯০ পারা একসাথে নারী মহলে নাযীল হয়। এই মীমের ঘোমটার আড়েই সকল রহস্য। এই মানব কোরানের জবান আছে।তাইতে বলে *আনাল হক্ক্। জয়গুরু