পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬

বিভ্রান্ত ও পথহারা এক পথিক

----------------------------
বিভ্রান্ত ও পথহারা এক পথিক
-----------------------------
এলোমেলো পথ চলায় আমার আনন্দ। এ আনন্দের স্বরুপ উপলব্দি করার জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে কোন অচেনা পথে হাঁটা। তারপর ক্লান্ত হয়ে পড়লে কোন ছায়া সুনীবিড় বৃক্ষ তলের কোন একটি টং দোকানে বসে পড়া। আর সে যদি সাথে থাকে ঝির ঝির পাতলা বাতাস, তাহলে চোখ দুটো একটু মুদে থাকুন। স্রষ্টাকে স্বরণ করুন। কেননা, এ বাতাসের জন্য আপনাকে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। কোন সুইচ অন করা লাগবে না। বিনা মুল্যে পেয়ে যাবেন প্রাণকে শীতল করা পরশবুলি। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো-সেখানে আপনি পাবেন একদল জ্ঞানীমানুষ। যারা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে থাকে। তেমনি একজন জ্ঞানী মানুষ পেলাম। নাম বশির মিয়া। হাড় জিরজিরে কংকালসার শরীর। কাঁধে একটি লাল গামছা। লুঙ্গিপড়া। সে বসে আছে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে। একটি পা মাটিতে অন্য পা বেঞ্চিতে রাখা। সে বেশ আয়েশের ভঙ্গিতে বসেই আলাপ চারিতা করছে। আলাপের বিষয়বস্ত্তু ঠিক মতো ধরতে পারছি না। যেহেতু প্রথম থেকেই ছিলাম না, তাই মাঝখান থেকে শুনতে হচ্ছে। সে বলছেঃ অাল্লাহ পাক কুরআন পাক যখন সর্ব প্রথম নাযিল করলেন তখন নবী মস্তফা (সাঃ) তা পড়তে পারলো না। হযরত জিব্রাইল আঃ জিগ্যাসা করলেনঃ পড়....সে বললোঃ আমি পড়তে পারি না। এরপর জিব্রাইল তারে যখন ধইর‌্যা ছিনায় চাপ দেয় তখন সে পড়তে পারে। সে তখন পড়ে একরা বিসমি রাব্বিকাল লাজি খালাক্...তাইলে দেখা যাইতাছে হযরত রসুলে পাকের ওস্তাদ হইতাছে জিব্রাইল আঃ। কি বলেন আপনারা? জিব্রাইল যদি তারে ছিনায় চাপ না দিতো তাইলে কি নবী পড়তে পারতো? পারতো না....
বশির মিয়ার কথা শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেল। আমি তাকে বললামঃ বশির ভাই, এদিকে আসেন। আমি পকেট থেকে গোল্ডলিফের প্যাকেটটা বের করে তাকে ইংরেজিতে লেথা Make by British American Tobacco Bangladesh লেখাটা পড়তে দিলাম। বললাম পড়েন। সে বললোঃ ভাই অামিতো ইংরাজি পড়তে পারি না। ও ...তাই...এদিকে আসেন। সে আসতেই তাকে ধরে জোরে চাপ দেই। সে ওরে বাবারে মইর‌্যা যাইতাছি গা...ছারেন...ছারেন...ও ভাই ছারেন বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। তারপর বললামঃ পড়েন...কি পড়মু ভাই...এই যে এই লেখাটা....কেমতে পড়মু....কেন্ আপনি না বললেন জিব্রাইল ফেরেস্তা নবীকে ধরে চাপ দিল আর নবী পড়া শুরু করে দিল...আরে ভাই আপনে কি জিব্রাইল ফেরেস্তা......কি বলা যায়...

যেখানে দেখিবে ছাই কুড়াইয়া দেখ তাই

সদরঘাটের রাস্তা-ঘাট সর্ম্পকে যাদের কিঞ্চিৎ ধারণা আছে, তারা বোধ করি দেখে থাকবেন সারি সারি বইয়ের দোকান। তার মাঝে আছে পশরা সাজিয়ে কম দামে বই বিক্রি করার কিছু দোকানী। " যারা দেইখ্যা নেন দশ টাকা বাইছ্যা নেন দশ টাকা " দামের কিছু বই বিক্রি করে থাকে। তেমনি একটি বইয়ের পশরার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখছি কি কি বই বিক্রি করে। বইগুলো উলট পালট করে দেখতে থাকলাম। দেখলাম আছেঃ বেহেস্তের শান্তি দোযখের অাযাব, নেকী বদীর হিসাব-নিকাশ, দশ লক্ষ নেকীর দোয়া-কালাম, স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলন, ওয়াজে ইসলাম, সাওয়াল-জওয়াব ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে দৃষ্টি নিবন্ধিত হলো একটি বইয়ের উপর। উপরের মলাটটা হাওয়া হয়ে গেছে। হাল্কা-পাতলা চটি ধরণের বই। পিনআপ করা। বইটির মাঝখানে লেখাঃ মকতুবাদে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) ও আসরারে হাকিকী। অনুবাদ-জিয়াউল আলম মোহাম্মদ ই্‌উসুফ খাঁ।
হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ মঈনউদ্দিন চিশতী (রহ) তাঁর প্রিয়তমযোগ্য শিষ্য হযরত খাজা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রহঃ) এর উদ্দেশ্যে লিখিত পত্রাবলী। বইটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলামঃ
-------------------------------------
বইটির ভুমিকা নামক অধ্যায়ে হাদিয়া নামক স্থানে লিখিত আছেঃ
যে মহান আউলিয়াকুল চুড়ামণির অপুর্ব আধ্যাত্মিক তত্ত্বের সুখ্যাতি বিভক্তি পুর্ব সমগ্র ভারতবর্ষে, উপজাতীয় সীমান্ত অন্ঞ্চলে, আফগানিস্তান ইরানে এবং আরব জগতে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল যাহার দারাজ দাস্ত মোবারকে হিন্দু মুসলমান, খ্রীষ্টান ইহুদী পারসিক জৈন এবং বৌদ্ধ মারাঠী ইত্যাদি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে জামে মারেফাত পান করিয়া রাহে নাজাতের সন্ধান পাইয়াছে-যাহার খেদমত পাকে হায়দারাবাদের নিজাম বাহাদুর রামপুর ভুপাল এবং আলীগড়েরর নবাব নাজিমগণ ছের বাছজুদ থাকিতেন-যাহার নির্দেশ মোতাবেক ও তত্ত্বাবধানে জামানা দারাজ পর্যন্ত আজমীর শরীফের পবিত্র উরছ শরীফ সুসস্পন্ন হইত- যাহার শানে পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জেমা নিবাসী ছৈয়দ হাবিব উলুবি উদাত্ত কন্ঠে গাহিয়াছেন-
ভাই কি দেকতাছেন? নিলে নেন, না নিলে রাইখ্যা দেন। খাড়াইয়্যা খাড়াইয়্যা খামাখা কেচ্যাল কইরেন না...দোকানীর কথায় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সাথে সাথে দশটি টাকা দিয়ে বইটি কিনে নিলাম।
এমন একটি অমুল্য ধন যে দশটি টাকার বিনিময়ে পেয়ে যাবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। হয়তো গরীব নেওয়াজের অশেষ রহমত ও নেগাহ পাকের করমে ভাগ্যগুণে পেয়ে গেছি। যদিও দশটি টাকা এই পার্থিব জীবনে অতি নগণ্য কিন্ত্তু যে বস্ত্তুটি ক্রয় করেছি তার মুল্য হয়তো অপার্থিব জীবনে অমৃত সুধার ন্যায় শরাবান তাহুরা...