পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শন পর্ব-৩৯

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

জীবাত্মা খুবই ছোট বলে অনেকে মনে করেন, কারো মতে অঙ্গুষ্ট প্রমাণ, কারো মতে অনুতূল্য । আসলে আমি অধম বলি--- জীবত্মা স্থুল দেহেরই পরিমাণ স্বরূপ। এ হল এক ধরনের সূক্ষ্ম পরমাণু দিয়ে সৃষ্টি-বিজ্ঞান যাকে Estoplasm নামে অবিহিত করতে চায়। এই ধূমাকৃতি সূক্ষ্ম পদার্থ বলে স্থুল নজরে দৃষ্ট হয় না। ওজনেও হালকা । মৃত্যুর পর পানি যেমন ডুবন্ত দেহকে ঠেলে উপরে তোলে তেমনি কোন একটা কিছু যেন সেই সূক্ষ্ম সত্ত্বাকে ভাসমান করে উপরে তুলে দেয়। 

কামনা বাসনা যার যত কম তাঁর সূক্ষ্মদেহ ততই লঘু এবং মৃত্যুর পর লঘুতার পরিমাণ এক একজন এক এক স্তর প্রাপ্ত হন । কেউ যদি তার ধ্যান শক্তিতে জীবিত অবস্থায় মূলাধারস্থ সুপ্ত শক্তিকে সূক্ষ্ম বায়ুর দ্বারা তাড়িত্ করে স্তরে স্তরে যদি উর্ধে উঠাতে পারেন, তবে তিনি সেই সেই স্তরে কখনও কখনও সূক্ষ্ম আত্মা সমূহের তরঙ্গের সমান্তরাল পর্যায় এলে তা্ঁদেরকে দেখতে পান।


কোন শক্তি উত্তলনকারী ব্যাক্তি মূলাধারস্থ শক্তিকে যে স্তরে উঠান সেই স্তরের আনূপাতিক যে তরঙ্গ তা তাঁর মস্তিষ্ক স্নায়ুতে আলোড়ন সৃষ্টি করে সেই সেই Frequency র সমান্তরাল Frequency র বিভিন্ন স্তরের সূক্ষ্মদেহী প্রাণী বা আত্মাকে তা্ঁর তৃতীয় নয়নে অর্থাৎ মস্তিষ্ক তরঙ্গের টিভির পর্দায় দেখা ছবির মতন ফুটিয়ে তোলে এবং সূক্ষ্মদেহের যে অস্তিত্ব আছে যারা ধ্যান যোগে সফল তাঁদের কাছে এইটাই বিশ্বাসযোগ্য। দেহের উর্ধে অদৃশ্য সেই সত্ত্বা যে আলোর তরঙ্গ হিসাবে ফটোর চোখে ধরা পরে এটাও বিশ্বাসযোগ্য 

(চলবে)
Written by:Ariful Islam Mitu

শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৮

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

যত কামনার পশুত্ব বেশি, ততই তার Frequency স্থূল, ততই সে স্থূলতার ভারে আচ্ছন্ন। এইক্ষেত্রে জগতের মধ্যে জীবকে ব্যাখা করলে তাকে সাগরে নিমজ্জিত একটি জাহাজ বলে প্রতীয়মান হবে। মালপূর্ণ জাহাজের অধিকাংশই জলের নীচে থাকে। জাহাজ হালকা হলে একমাত্র নিচের অংশ ছাড়া আর বাকি সব অংশ উপরেই থাকে। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। যতই তার কামনা বাসনার ভার, ততই তার নিমজ্জমান অবস্থা। যত কামনা বাসনা কম ততই তার লঘুতা। লঘুতা হলেই তার উচ্চমার্গ বা স্তর। 

ধরা যাক এই ডায়াগ্রামের ছবিটার মতো দাঁড়াবে । নিম্নে ছবিটা দেওয়া হলঃ



চিত্র অনুসারে, স্থূল জগতে প্রথম দিকের মানুষ কামনা বাসনায় থাকে ভর্তি । ফলে জগত সমূদ্রে আকুন্ঠ ডুবে আছে। মৃত্যুর পর জগত পর্যায়ের প্রথম স্তরে সে ঘোরা ফেরা করে অর্থাৎ মূলাধার স্তরে । দ্বিতীয় পর্যায়ের মানুষের কামনা বাসনা আরেকটু কম । মৃত্যুর পর তার দেহের সূক্ষ্মাংশ কামনা-বাসনার তুলনামূলক লঘুতা হেতু স্বাধিষ্ঠান পর্যায়ে ভাসমান থাকে। তৃতীয় পর্যায়ের মানুষ অর্থাৎ যার কামনা বাসনা আরও কম, মৃত্যুর পর তার সূক্ষ্ম দেহের লঘুতা আরও বেশি। সে তার সূক্ষ্ম দেহের সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় স্তরে হালকা হয়ে ভাসতে থাকে। তিন স্তর পর্যন্ত পার্থিব জগতের অভিকর্ষ অত্যন্ত বেশি। ফলে এইসব স্তর থেকে সূক্ষ্ম দেহগুলি অতি তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে নেমে এসে মাতৃগর্ভ হতে জন্মলাভ করে। এইসব আত্মা জলভরা মেঘের মতো। বেশিক্ষণ ভাসমান থাকতে পারে না। জলভরা মেঘ যেমন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, তেমনই কামনা-বাসনার ভার ঘনীভূত হয়ে অল্পদিনের মধ্যেই এই তিন স্তরের আত্মাকে ভারী করে তোলে। পুনরায় তারা পৃথিবীতে ঝরে পড়ে অর্থাৎ নতুন দেহ ধারণ করে। চতুর্থ পর্যায়ে যারা ওঠে তারা অনেকটা কম কামনা-বাসনা দ্বারা আক্রান্ত। এরা চতুর্থ স্তরে বেশ কিছুদিন বিরাজ করে। 

এখানে অনেকটা শান্তভাবে থাকে কিন্ত তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিম্নস্তরের আত্মারা স্থূলদেহের অভাবে কামনা-বাসনা দ্বারা পীড়িত হয়ে কষ্ট পায় এবং চতুর্থ পর্যায়ে যে আত্মা যেতে পারে (আত্মা মানে সূক্ষ্ম দেহ) BIOPLASMIC BODY, সে কিছুদিন শান্তিতে থাকার পর অবচেতন কামনা বাসনা পুনরায় ফুটে উঠতে থাকলে অর্থাৎ কর্মের ভোগের উপর উদয় বিলয় ঘটতে থাকলে সূক্ষ্মদেহ ভারপ্রাপ্ত হয় ও অবশেষে জলভরা মেঘের মতো একদিন নিচের দিকে ঝরে পড়ে। 

(চলবে)
Written by:Ariful Islam Mitu

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

বস্তু সত্ত্বা তার শেষভাগ থেকে আবার উৎসে ফিরে যাবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়, অর্থাৎ বিস্ফোরণের শক্তি যখন শেষ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের টানে দ্রুত আভ্যন্তরমুখী হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ''Centripetal Force'' নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জগতের গোলাকার পরিধির প্রান্তভাগে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জড় থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে মন, মন থেকে যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাতে মনুষ্য জাতি ও জীব আত্মপ্রকাশ করে । 

তাঁরা স্থূল জগত Centripetal Force এর টানে লয় প্রাপ্ত হবার আগেই আপন আন্তর্সত্ত্বায় জগত রহস্যের মূল সূত্র ধরতে পেরে জেনে যান যে জগতে প্রত্যেকটি পদার্থের মধ্যেই জগত ব্রহ্মাণ্ডের লীলা স্তব্ধ হয়ে আছে । শক্তির বিচ্যুরণ হলে সেই ক্রিয়া আবার ফুটে ওঠে। মানুষ দেহতত্ত্বের মধ্যে সেই সত্য আবিষ্কার করে জগতের উৎসের সন্ধান পেয়েছে। যে সত্য সন্ধানের কাহিনী বর্তমান পুস্তকের দেহতত্ত্বাংশে আমি মিঠু লিখেছি । 

অণু পরমাণু থেকে জীব ও মানুষ সব কিছুতেই জগত সৃষ্টি প্রক্রিয়ার নানা স্তর ভেতরের শূন্যতাকে আবরিত করে আছে । এই আবরণ একে একে সরে গেলে ভেতরের অনন্ত শূন্যতা তার স্বরূপে ফিরে যায় । যেমন পিঁয়াজের শেষ খোসা সরে গেলে অন্তঃস্থ শূন্যতা বাইরের শূন্যতার সঙ্গে একাকার হয়ে মিলে যায় । শক্তির একান্নতম ধাপে জগত স্থূলতা প্রাপ্ত হয় । দেহতত্ত্বে এই একান্ন ধাপ সপ্তস্তরে বিভক্ত । এর মধ্যে স্থূল থেকে সূক্ষ্ম বস্তু স্তর রয়েছে ছয়টি । তার তন্মত্র সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুকরণ রয়েছে সপ্ততলে। 

সপ্ততলের শেষ পর্যায়ে ব্রহ্মরন্ধ্রে কিছুই নেই। রয়েছে শুধু মহাশুন্যতা। স্থুলতা হলো তরঙ্গের হের ফের হেতু, সুক্ষ্মতাও তাই । যত স্থূল, Frequency তত কম । যত সূক্ষ্মাসূক্ষ্ম, Frequency তত বেশি । আলোর নির্দিষ্ট Frequency যেমন দৃশ্যমান। অতিরিক্ত Frequency তেমনই অদৃশ্য। তেমনই বস্তুসত্ত্বার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটি Frequencyই বস্তুরূপে বিরাজমান।বেশি হলে সূক্ষ্ম অবস্থায় স্থিতিমান। যা স্থূল দৃষ্টি দ্বারা দর্শনযোগ্য নয় । জীবের ক্ষেত্রে এই Frequency তার কামনা,বাসনা,লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, গীবত,অহংকার, আমিত্বের আবেগ । যত কামনার পশুত্ব বেশি ততই তার Frequency স্থূল।  ততই সে স্থূলতার ভারে আচ্ছন্ন । এইক্ষেত্রে জগতের মধ্যে মানুষ জীবকে ব্যাখা করলে তাকে সাগরে নিমজ্জিত একটি জাহাজ বলে প্রতীয়মান হবে । 

(চলবে) 
Written by:Ariful Islam Mitu

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৬

( পুর্ব প্র্রকাশের পর হতে ) 

যা রচিবে তাই সত্য তুমি
কবি তবো মনোভূমি,
রামের জনম স্থান
অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন

...... সত্যি সত্যি কবি যদি মানস নেত্রে রামায়ণ কাহিনী তৈরি করেন, জাগতিক সূক্ষ্মা সত্ত্বার জীবন্ত হয়ে তা ফুটে থাকতে পারে । প্রতিটি মানুষের প্রতিটি চিন্তাই জাগতিক সূক্ষ্মাসত্ত্বায় চিত্র হয়ে ফুটে আছে, খারাপ চিন্তাই হোক আর ভালো চিন্তাই হোক । শক্তি জাগরণ প্রয়াসী ব্যক্তিরা অনেকেই তাই চৈতন্য সত্ত্বাকে উত্তোলনকালে নানা ধরণের ছবি দেখে থাকেন--- যে ছবিগুলো তাঁদের কাছে অদ্ভূত হেঁয়ালির মতো মনে হয় ।

এর কারণ, তাঁরা নিজেরা এ ধরণের কোন চিন্তা কখনও করেছেন বলে তাঁদের মনে পড়ে না । যে পটভূমিতে এই দর্শন হয় তা দর্পন সাদৃশ্য, সেই স্বচ্ছ দর্পন সাদৃশ অবস্থাকেই ফকির লালন বাবা বলেছেন ''আরশি নগর'' আর তিব্বতি লামারা বলেছেন ''স্বচ্ছ পাথর"। এ স্বচ্ছ পাথরে বা আরশি নগরে যে শুধু জীবের তরঙ্গজনিত প্রতিফলনই দেখা যায় তা নয়, স্থূল দেহান্তে জীবাত্মার অবস্থানও হয় এই সূক্ষ্ম জগতে ।

ফলে এই আরশি নগরে যাঁদের প্রবেশাধিকার হয়েছে, তাঁরা স্থূল দেহ শেষে মানুষের সূক্ষ্মা অস্তিত্বও সেই মার্গে গেলে দেখতে পান । এ ক্ষেত্রেও অদ্ভূত এক তত্ত্ব কাজ করে, এ তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল হয়েছেন আধ্যাত্মবিদরা । আধ্যাত্মপুরুষেরা পরমাত্মার উপর ছয়টি, কারও মতে পাঁচটি আবরণে আবদ্ধ জীবরূপে স্বতন্ত্র সত্ত্বার কল্পনা করেছেন ।

ঘটনাটি এই ধরণের--- শূন্যস্থিত শক্তি স্বভাব গুণে বিস্ফোরিত হলে নানা তরঙ্গে গোলাকার, কিছুটা ডিম্বাকৃতি অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে । অধিমনোবিজ্ঞানে এই বিস্ফোরণের ফলে সম্প্রসারণশীল গোলক একান্নটি কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে অর্থাৎ ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়ে । একান্নতম ধাপে শক্তির ফ্রিকোয়েন্সি হেতু তা অণুর বা পরমাণুর রূপ নেয় ।
তাদেরই পারস্পারিক যোগাযোগে স্থূল বস্তু সত্ত্বার উদ্ভব হয় । বস্তু সত্ত্বা তার শেষভাগ থেকে আবার উৎসে ফিরে যাবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়, অর্থাৎ বিস্ফোরণের শক্তি যখন শেষ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের টানে দ্রুত আভ্যান্তরমুখী হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ''Centripetal Force'' নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জগতের গোলাকার পরিধির প্রান্তভাগে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জড় থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে মন, মন থেকে যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাতে মনুষ্য জাতি ও জীব আত্মপ্রকাশ করে । 
 
( চলবে )

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৫

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

অতীতের চিত্র দেখতে হলে কুণ্ডলিনীর গতিমাত্রা তীব্রতম হতে হবে। আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি বেশি হওয়া প্রয়োজন--- Tachyon moves faster than the speed of Light, So goes back in Time........... এসব তত্ত্ব নিয়ে জগতেও তোলপাড় ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও তাঁদের এমন ত্রুটি রয়েছে, যে জন্য অলৌকিক কথা কতকগুলি অভিজ্ঞতা হলেও তার যে যথার্থ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি তাঁরা তা ধরতে পারছেন না। আবার এই অলৌকিক ক্ষমতাগুলিকে ব্যবহার করে কেউ কেউ বা রীতিমত প্রতারণা করবার চেষ্টা করছেন বা মহাপুরুষ সেজে প্রতারণার পথ ধরেছেন। 

অধুনা ইউরোপীয় প্যারাসাইকোলজীর নামে যে জগতে প্রবেশ করে দিশেহারা অবস্থাতে আছেন, সে অবস্থা ভারতীয়রা অনেক আগেই অধিগত করেছিলেন এবং মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এগুলি যে এক ধরণের অন্তরায়, তা বুঝে বহু পূর্বেই এসব পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সত্যকে জানা। বিশ্বের উৎস কোথায়, সত্য কোথায়, তা জানার জন্যই তাঁদের অভিযাত্রা। শেষ পর্যন্ত সেই সত্যকে তাঁরা জেনেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে, সবই সত্য, জীব, অজীব, সব। অন্তরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে অর্থাৎ স্থূলতার খোলস খুলে ফেললে নিত্য ও অনিত্যের মধ্যে কোন ভেদ থাকে না। কিন্তু সেসব কথা থাক। যে কথা বলা হচ্ছিল তাই বলা যাক। অর্থাৎ দৈব ভাষার জগতে প্রবেশের পূর্ব পর্যায়ে দিব্য দর্শন জগতের কথা প্রতীকময় দৈব ভাষা জগতে প্রবেশ করার আগে অদ্ভুত এক দৈব দর্শন হয় কোন এক ঘটনা প্রবাহে--- ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগে যে এমন হতে পারে এই ইচ্ছা শক্তিই পীর ও সাধুদের করায়ত্ত্ব আছে বলে হাজার হাজার লোক তাঁদের সান্নিধ্যে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকেন। তবে ইচ্ছা শক্তি জাগরিত হয়েছে এমন পীর বা সাধুদের সংখ্যা কম। কদাচিৎ দেখা যায়। সবই খুঁত, নিখুঁত নয় । 

চল্লিশ বছর পদ্ম আসনে বসে অনেকেই সাধনা করেছেন। কিন্তু চল্লিশ বছরে মানুষের স্থূল দেহ বন্ধনের অন্তরালে যে 'অনন্ত অসীম' বিরাজ করছে তার কোন সন্ধান পান না। অথচ এইসব পীর সাধুদের শিষ্য সামন্তের অভাব নেই। সে ধরণের অপদার্থদের সংখ্যা কম নেই। যাকে এঁরা আত্মতত্ত্ব বলেন সেই আত্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এঁদের কারোরই নেই। না থাকার কারণ, শাস্ত্রে বাক্যের প্রতি নির্ভেজাল আত্মসমর্পণ এবং প্রশ্ন করার স্পর্ধাহীনতা। 

মানুষ নিজেই যে একধরণের স্র্রষ্টা বা ঈশ্বর অপেক্ষা কোন অংশে কম নয়। এ কথা তারা জানেন না। তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাষা ও ছন্দ কবিতায় বাল্মীকি সম্পর্কে ব্রহ্মার বক্তব্য যে কতদূর সত্য সাধারণ মানুষ তাতো বোঝেই না আর পীর বা সাধুরা বুঝবেন কি? রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন বলেই লিখেছেন---

যা রচিবে তাই সত্য তুমি কবি তবো মনোভূমি, 
রামের জনম স্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন...... 


(চলবে)

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৪

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এই বিশ্ব আত্মার বিশেষ কোন তরঙ্গ পর্যায়ের ছবির সঙ্গে জীবাত্মার আন্তর-সচ্ছতার নির্দিষ্ট স্তর সমান্তরাল হলেই এমন হয় । সূক্ষ্ম জগতের এই রহস্যটাই অদ্ভূত, যদিও ভূত-ভবিষ্যত সম্পর্কিত ছবি Web Length এর ভিত্তিতেই কাজ করে, তবুও এই সব তরঙ্গ অনেক সময় এমন সব Symbolic ছবি ছুড়ে দেয়, যেগুলি রীতিমত হেঁয়ালী । মনের আকাংক্ষা চেতনার প্রহরীকে এড়িয়ে বার হবার সময় ছদ্মবেশ ধারণ করে । সেই ছদ্মবেশ অদ্ভূত Symbolic . আমি যাকে দৈব জগতের ক্রিয়া কলাপ বলে মনে করি, তাও অনেক সময় অদ্ভুত প্রতীকের ছবিতে আত্মপ্রকাশ করে । তবে এই হেঁয়ালী অত্যন্ত বেশি রকমের কাজ করে প্রতীকময় ভাষাতে, যেই কথা বর্তমান অধ্যায়ের পরেই আসছি । 

বর্তমান অধ্যায়ের বক্তব্য হলো জীবাত্মার স্বচ্ছ সত্ত্বায় জাগতিক সমান্তরাল স্বচ্ছতায় প্রতিফলিত চিত্র দর্শন-যে স্বচ্ছতা স্বত্ত্বাকে তিব্বতি লামারা 'স্বচ্ছ পাথর' বলে বর্ণনা করেছেন । দর্শন ক্ষমতাকে তাঁরা ভগবৎ ক্ষমতাপ্রসূত বলে মনে করেন এবং একে গুহ্য তত্ত্ব ESOTERIC KNOWLEDGE হিসাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অগোচরে রাখতে চান । কিন্তু বর্তমান আমি মিঠু একে অধিমনোবিজ্ঞানের একটি সীমাক্ষেত্র মনে করি । অধিবিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের উপরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে আমার তা হলো---- Telepathy (কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মাধ্যম ছাড়াই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে চিন্তা তরঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়া )। Clairvoyance (মানুষের কাছে অজ্ঞাত ঘটনা সম্পর্কে অতিন্দ্রিয় জ্ঞান অর্জন এহেতু ) । Psychometry (কোন অদৃশ্য ব্যক্তি বিষয়ে তার ব্যবহৃত সামগ্রী দেখে তার সম্পর্কে কথা বলা )। Pre-Recognition (এতে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা যায় ) । 

Psychokinesis (মানসিক শক্তি বলে বস্তু নাড়িয়ে দেওয়া ) । Teleportation ( এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়া ) । Lavitation ( ভূমি থেকে উর্ধ্বে উঠা । Psychic Healing (আত্ম শক্তি বলে রোগ নিরাময় করা )। Materialisation ( শূন্য থেকে ইচ্ছা শক্তি বলে বস্তু তৈরি করা ) । Out of the body projection (অর্থাৎ স্থূল দেহ থেকে সুক্ষ্মা স্বত্ত্বাকে বিচ্ছিন্ন করে আকাশ পথে পরিভ্রমণ করা ) । কুলকুন্ডলিনীর গতি আলোর গতির বেশি হলে সময় পিছনে চলে । ফলে পরমাত্মায় ফুটে থাকা ছবি মানুষ নেত্রে ফুটে ওঠে । এই ক্ষেত্রে কারণের আগেই ফল দেখা যায় । 

আবার কোন গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম হলে, তার প্রাণী দীর্ঘকায় হয় । অতীতের চিত্র দেখতে হলে কুণ্ডলিনীর গতিমাত্রা তীব্রতম হতে হবে, আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি বেশি হওয়া প্রয়োজন--- Tachyon moves faster than the speed of Light, So goes back in Time........... 

(চলবে)

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্ম জগতে ধ্যান দর্শন আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান । তিব্বতের লামাদের কাছে নাকি একধরণের স্বচ্ছ পাথর আছে, যে পাথরে ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ছবি ফুটে থাকতে দেখা যায় । আসলে তিব্বতীয় পাথর সম্পর্কে যে গল্প আছে তা যথার্থ পাথর নয় অন্য কিছু, সে গোপন রহস্য ভেদ হবার নয় । 

গুহ্যবিদ্যার গোপন কথা সাধকরা কখনই প্রকাশ করতে চান না, তাই হয়তো পাথরের গল্প করেছেন । আসলে এই স্বচ্ছ পাথর হল আত্মার স্বচ্ছ দর্পন । পূর্বেই বলেছি যে, ব্যক্তি ও বস্তুর বা বিশ্বজগতের গঠনপ্রণালী একই ধরণের । বস্তুর যদি স্থূল বন্ধনের এক প্যাঁচ খোলে তো বিশ্বেরও স্থূলবন্ধনের এক প্যাঁচ খুলে যায় । তখন দুই স্বচ্ছতার পর্যায়ের মধ্যে এক সমান্তরাল ভাব সৃষ্টি হয় অর্থাৎ আত্মার সূক্ষ্ম অবস্থাও বস্তুর সূক্ষ্ম অবস্থা একটা স্বচ্ছ ব্যবধানের এপার ও ওপারে থাকে । যতক্ষণ ব্যবধান ততক্ষণ ব্যক্তির অভ্যন্তরস্থ স্বচ্ছতার নাম আত্মন এবং বিশ্বের অভ্যন্তরের স্বচ্ছতার নাম ব্রহ্মণ । শেষ ব্যবধান ঘুচে গিয়ে দুইটি যখন একাকার হয়ে যায় তখন হয় পরমাত্মন । 

ফলে বিশ্ব আত্মায় তরঙ্গ নিক্ষিপ্ত কোন ছবি জীবাত্মায় তার প্রতিসরণ ঘটায় , ঘটনাটাটি এইরকমঃ ধরা যাক বহু পূর্বে পৃথিবীতে কোন এক যুদ্ধ হয়েছে, যেমন মহাভরতের যুদ্ধ । সেই যুদ্ধের তরঙ্গজনিত প্রতিফলন বিশ্ব আত্মার স্বচ্ছ অবস্থায় ফটোর নেগেটিভে ধরা ছবির মত হয়ে আছে । বিশ্ব আত্মার যে স্তরে এই ছবি ফুটে আছে জীবাত্মার সে স্তর উন্মোচিত হলে -- এবং বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার অনুরূপ স্তরের আকস্মাৎ সমান্তরাল ভাব হলে অর্থাৎ correspondence of wave length হলে জীবাত্মায় সেই বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির প্রতিসরণ ঘটবে । এই বিশ্ব আত্মার বিশেষ কোন তরঙ্গ পর্যায়ের ছবির সঙ্গে জীবাত্মার আন্তর-সচ্ছতার নির্দিষ্ট স্তর সমান্তরাল হলেই এমন হয় । 

(চলবে)

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন পর্বঃ ৩২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্মজগতে ধ্যান দর্শন-- 

দিব্যজগতে প্রবেশ করে দৈবী-ভাষা অধিগত হবার আগে আত্মার স্বচ্ছ দর্পনে জীবন্ত কতকগুলি চিত্র দেখা যায়, দৈবী ভাষার পূর্বস্তর হিসেবে একে বলা যায় দৈবীদর্শন । দৈবী-ভাষাতে জীব ও জগতের ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বোঝা যায় । দৈবী দর্শনে এই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্র দর্শন হয় । 

ধ্যান যোগের মাধ্যমে এই চিত্র দর্শন পর্যায় পার হলে তবেই দৈবী সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৈবী ভাষার মাহাত্ম্য বোঝা যায়। এই দৈবী দর্শন কিভাবে হয় বর্তমান অধ্যায়ে সে কথাই আগে বর্ণনা করে নিচ্ছি। দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণকালে পূর্বেই বলেছি যে, শক্তি বায়ুতাড়িত হয়ে মেরুদণ্ডের রন্ধপথে উর্ধদিকে যত উঠতে থাকে ততই মস্তিষ্ক স্নায়ুতে শক্তি তরঙ্গের তারতম্য হিসেবে মানুষের নিজের অভ্যন্তরেই নানা স্তরে নানা পর্যায়ের স্বচ্ছতা অনুভুত হয়। এই স্বচ্ছতায় তরঙ্গের সমভাব হেতু অনুরূপ তরঙ্গের নানা ছবি ফুটে উঠে। Wave length reflects the picture of different things which correspond to the created wave length in the brain. যে স্বচ্ছতার মধ্যে সমতরঙ্গের এইসব ছবি প্রতিফলিত হয় সেই সচ্ছতাকেই "আত্মা" রূপে বলা হয়েছে। 

তাই আত্মার স্বরূপ কি? এ ধরনের কথা বোঝাতে গিয়ে আমি "মিঠু" বলি --- আত্মা হল উজ্জ্বল, আত্মা স্বচ্ছ। এই উজ্জ্বল বা স্বচ্ছ আত্মার আরেকটি বিশেষ গুণ আছে যাকে বলা হয়েছে Viscous ও Glue অর্থাৎ একধরণের আঠা জাতীয় জিনিষ, তাই এই রহস্যগত কথা এই পর্যন্ত থাক। বস্তুত স্থূল জগতের অভ্যন্তরস্থ এই উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ আত্মার অবস্থা অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মত। স্থূল জগতে যখন যে জিনিষের মধ্য থেকে তরঙ্গ Wave Length ওঠে সেই জিনিষের অনুপাতে Proportionate to the body of the object - এই নেগেটিভ সদৃশ্য আত্মায় তাঁর প্রতিফলন পড়ে স্থায়ী হয়ে যায় । 

সম্প্রসারণশীল জগত স্বভাবগুণে সংকুচিত হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হলে তবেই এই তরঙ্গের আনুপাতিক চিত্রগুলি মুছে যায়, নইলে আত্মার স্বচ্ছ অবস্থার নানা স্তরে ছবির মত তা ফুটে থাকে। অতীতে বস্তু জগতের যেসব ঘটনা ঘটে গিয়ে বস্তুর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে, তারও নানা পর্যায়ের তরঙ্গের আনুপাতিক ছবি কিন্তু সেই আত্মার দর্পনে ফুটে আছে । বর্তমানে যা ঘটেছে তাও তরঙ্গ অনুপাতে সেই স্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে নিজেকে অনবরত বিচ্যুরিত করে দিচ্ছে। তাৎক্ষনিক এই তরঙ্গানুপাতিক ছবির বাইরেও ব্যক্তির প্রাণীজগতের নানা মানুষিক তরঙ্গ দেহানুপাতিক তরঙ্গ বিচ্যুরিত করে দিয়ে পরমাত্মায় কর্মফল হিসেবে তাঁর ছবি এঁকে রাখছে। আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান।

 (চলবে)

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্মজগতে ধ্যান দর্শন--

দিব্যজগতে প্রবেশ করে দৈবী-ভাষা অধিগত হবার আগে আত্মার স্বচ্ছ দর্পনে জীবন্ত কতকগুলি চিত্র দেখা যায়, দৈবী ভাষার পূর্বস্তর হিসেবে একে বলা যায় দৈবীদর্শন । দৈবী-ভাষাতে জীব ও জগতের ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বোঝা যায় । দৈবী দর্শনে এই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্র দর্শন হয় । ধ্যান যোগের মাধ্যমে এই চিত্র দর্শন পর্যায় পার হলে তবেই দৈবী সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৈবী ভাষার মাহাত্ম্য বোঝা যায় । এই দৈবী দর্শন কিভাবে হয় বর্তমান অধ্যায়ে সে কথাই আগে বর্ণনা করে নিচ্ছি । 

দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণকালে পূর্বেই বলেছি যে, শক্তি বায়ুতাড়িত হয়ে মেরুদণ্ডের রন্ধপথে উর্ধদিকে যত উঠতে থাকে ততই মস্তিষ্ক স্নায়ুতে শক্তি তরঙ্গের তারতম্য হিসেবে মানুষের নিজের অভ্যন্তরেই নানা স্তরে নানা পর্যায়ের স্বচ্ছতা অনুভুত হয় । এই স্বচ্ছতায় তরঙ্গের সমভাব হেতু অনুরূপ তরঙ্গের নানা ছবি ফুটে উঠে । Wave length reflects the picture of different things which correspond to the created wave length in the brain. যে স্বচ্ছতার মধ্যে সমতরঙ্গের এইসব ছবি প্রতিফলিত হয় সেই সচ্ছতাকেই "আত্মা" রূপে বলা হয়েছে । তাই আত্মার সরূপ কি? এ ধরনের কথা বোঝাতে গিয়ে আমি "মিঠু" বলি --- আত্মা হল উজ্জ্বল, আত্মা স্বচ্ছ । এই উজ্জ্বল বা স্বচ্ছ আত্মার আরেকটি বিশেষ গুণ আছে যাকে বলা হয়েছে Viscous ও Glue অর্থাৎ একধরণের আঠা জাতীয় জিনিষ, তাই এই রহস্যগত কথা এই পর্যন্ত থাক । 

বস্তুত স্থূল জগতের অভ্যন্তরস্থ এই উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ আত্মার অবস্থা অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মত । স্থূল জগতে যখন যে জিনিষের মধ্য থেকে তরঙ্গ Wave Length ওঠে সেই জিনিষের অনুপাতে Proportionate to the body of the object - এই নেগেটিভ সদৃশ্য আত্মায় তাঁর প্রতিফলন পড়ে স্থায়ী হয়ে যায় । 

সম্প্রসারণশীল জগত স্বভাবগুণে সংকুচিত হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হলে তবেই এই তরঙ্গের আনুপাতিক চিত্রগুলি মুছে যায়, নইলে আত্মার স্বচ্ছ অবস্থার নানা স্তরে ছবির মত তা ফুটে থাকে । অতীতে বস্তু জগতের যেসব ঘটনা ঘটে গিয়ে বস্তুর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে, তারও নানা পর্যায়ের তরঙ্গের আনুপাতিক ছবি কিন্তু সেই আত্মার দর্পনে ফুটে আছে । বর্তমানে যা ঘটেছে তাও তরঙ্গ অনুপাতে সেই স্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে নিজেকে অনবরত বিচ্যুরিত করে দিচ্ছে । তাৎক্ষনিক এই তরঙ্গানুপাতিক ছবির বাইরেও ব্যক্তির প্রাণীজগতের নানা মানুষিক তরঙ্গ দেহানুপাতিক তরঙ্গ বিচ্যুরিত করে দিয়ে পরমাত্মায় কর্মফল হিসেবে তাঁর ছবি এঁকে রাখছে । আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান। 

 (চলবে)

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩১

(পুর্ব প্রকাশের পহ হতে) 
তবে এইসব প্রতীকী ভাষার ব্যাখ্যা স্বরূপ বুঝতে হলে দেহতত্ত্ববোধ আগে থাকা প্রয়োজন । 

ব্রহ্মবিদ্যার অধিকারীগণ নিজেরা আত্মচেতনায় আধ্যাত্মজগতের আঙিনায় প্রবেশ করে যথার্থস্বরুপ চৈতন্যসত্ত্বায় উপলব্ধি করতে পারেন অনায়াসে এই প্রতীকী ভাষার, এই কারনে আধ্যাত্মজগতে প্রবেশের পর মনে হবে সব রহস্যময় । বস্তুগ্রাহ্য ভাষা দিয়ে তার যথার্থ রূপরেখা অঙ্কন করা যায় না । সেইজন্য প্রতীকময় ভাষায় এবং রূপক গল্পে এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে । যেমনঃ অগস্ত্যের সমুদ্র শোষণ, একটা ছোটখাট মানুষ সমুদ্র শোষণ করে ফেলবেন তা সম্ভব নয় । 

আসলে এ হল জীবাত্মার সীমিত বন্ধন হারিয়ে অনন্ত হওয়া, নিজের মধ্যে অনন্তকে ধারণ করা--- অর্থাৎ নিজেই অনন্ত হওয়া--- যে অনন্ত আবারনের সীমার মধ্যে তার নিজের অভ্যন্তরেই রয়েছে, যে কথা মনে রেখে আধ্যাত্মিক কবি নজরুল লিখেছিলেন '' ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর । '' পিঁয়াজের খোলা ছাড়িয়ে নিলে ভেতরকার শূন্য যেমন বাইরের শূন্যের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, সেইরকম অর্থাৎ পিঁয়াজের ভেতরকার শূন্যতা অনন্ত শূন্যতাকে গ্রাস করে অর্থাৎ আত্মস্থ করে, অর্থাৎ নিজের অসীমত্ব উপলব্ধি করে । নিজস্ব কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলে আধাত্ম প্রতীক ব্যাঞ্জনার কোন স্বরূপ ধরা যায়না এবং কাউকে বোঝানও সম্ভব নয় । 

উপরোক্ত যে মরমিয়া গানের কথা আমি '' মিঠু " বলেছি সে সবই আধ্যাত্মজগত থেকে আহরিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রতীকময় রুপ, কোন অধমের সেই আধ্যাত্মজগতের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলে এইসব প্রতীকী ব্যাঞ্জনার স্বরূপ প্রকাশ করা যায় না । বাক্যার্থে কথাগুলির অর্থ এক, ভাবার্থে আর এক । 

তাইতো মরমিয়া শব্দের অর্থ হল-- " To close অর্থাৎ to close outer senses ." বহিরিন্দ্রিয় বন্ধ করলে মানুষ মরম বা অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে কুন্ডুলিনীর শক্তি বৃদ্ধি হেতু অনন্ত আকাশের রহস্য দেখতে পায় । মরমে এই দর্শন হয় বলে এরাঁ মরমিয়া নামে পরিচিত। Greek শব্দ Myem = to close থেকে মরমিয়া শব্দের ইংরেজি হল Mystic. আর অধি Para beyond আত্ম (জীবাত্মা) থেকে অধি+আত্ম = আধ্যাত্ম শব্দ । ধর্ম আর আধ্যাত্ম শব্দ এক নয় । ইংরেজি Religion শব্দের অর্থও ধর্ম নয়, আধ্যাত্মতা । কারণ Religion শব্দের উৎস হল ল্যাটিন শব্দ Religare অর্থাৎ Tie back. অর্থাৎ উৎসের সঙ্গে গীটছড়া বাঁধা । 

চলবে.........

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩০

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

সেই প্রতীকের অর্থ সূক্ষ্মভাবে ধরা গেলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত করা যায়। ভুল হলে উল্টো ফল হয়। 

যেমনঃ প্রাচীনকালে পারস্য যখন এথেন্স আক্রমণ করে তখন এই আক্রমণের পরিণতি কি হতে পারে তা জানার জন্য এথেনীয়রা ডেলফি নামক একজন সাধকের কাছে দৈবী বাণী শোনার জন্য গিয়েছিল । সেখানে দৈবী বাণী হয়েছিল এরকম যেঃ "Athens would be destroyed except the Wooden Wall" অর্থাৎ কাঠের দেওয়াল ছাড়া বাকী এথেন্স ধ্বংস হবে । এথেন্স শহরের চতুর্দিকে সত্যি সত্যি কাঠের দেওয়াল ছিলও । ডেলফির ভবিষ্যৎ বাণীতে যাদের অগাধ বিশ্বাস ছিল তারা দৈব বাণী বাক্যার্থ ধরে নিয়ে এথেন্সেই থেকে গেলেন এবং কাঠের দেওয়ালের পিছনে আশ্রয় নিলেন । 

এথেন্সের তখন রাষ্ট্রনেতা থেমিস্টোক্লিস। তিনি আদেশ দিলেন, "সবাই নৌকাতে গিয়ে আশ্রয় নাও!" যারা দৈবী বাণী অপেক্ষা রাষ্ট্র বাণীতে বেশি আস্থাশীল ছিলেন, তারা নৌকাতে উঠলেন। ইতোমধ্যে পারস্য বাহিনী এথেন্স আক্রমণ করলো। কাঠের দেওয়াল তাদের ঠেকাতে পারলো না। এথেন্স ধ্বংস হলো। যারা কাঠের দেওয়ালের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা মারা গেলেন। কিন্তু এথেন্সের নৌকা বাহিনীর কাছে পারস্যের রণবহর ধ্বংস হয়ে গেল। তারপর পারস্য ফিরে যেতে বাধ্য হলো। প্রশ্ন হলঃ তাহলে কি ডেলফির দৈব বাণী মিথ্যা হলো ? বাক্যার্থে তা মিথ্যা হলো ঠিকই, কিন্তু ভাবার্থে সত্য হলো। কাঠের তৈরি জাহাজই এথেন্সের স্বাধীনতা রক্ষা করলো। যা রক্ষা করে তা দেওয়াল তুল্য। সুতরাং ভাবার্থে কাঠের রণবহরই ছিল দেওয়ালতুল্য। দৈব ভাষা এমনই প্রতীকময় (Symbolic) ও ইঙ্গিতবহ (Suggestive) হয় । কারণ অতিন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি তথাকথিত ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। 

ডেলফির দৈব বাণীর মতো সাধকের অন্তরমথিত সেই প্রতীকময় ভাষা যখন নিঃসৃত হয়, তথাকথিত পণ্ডিত ব্যক্তিরা বাক্যার্থ দিয়ে তখন তার যথার্থ অর্থ ধরতে পারেন না। কাঠের দেওয়ালকে যারা কাঠের দেওয়াল বলেই ভাবেন তারা এথেন্সের মূর্খ নাগরিকদের মতই ভুল করেন। ব্যাখার নামে তারা নানা আবোল তাবোল বকতে থাকেন। 

মরমিয়া সাধক, যারা নিজের অন্তর্জগতে ডুব দেয় বা দিয়েছেন তাঁরা এরকম অনেক রহস্যময় অনুভূতিকেই প্রতীকী ভাষার রূপ দিয়েছেন--- যেমন রাম প্রসাদ সেন একজন প্রথিতযশা শাক্ত পণ্ডিতকে রাম প্রসাদ সেনের এই গানের অর্থ জিজ্ঞাস করেছিলেনঃ "এবার কালী তোমায় খাবো"। তিনিও এর ব্যাখা দিতে পারেন নি। একজন বৈষ্ণব পণ্ডিতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মীরার "জ্যোতি মে জ্যোতি মিলাও" এর অর্থ কি ?  তিনিও কিছু বলতে পারেন নি । তবে এইসব প্রতীকী ভাষার ব্যাখ্যা স্বরূপ বুঝতে হলে দেহতত্ত্ববোধ আগে থাকা প্রয়োজন। 

(চলবে)

শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৯

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

কবি তাই ঘটনা লক্ষ্য করে লিখেছেন "শূন্যে শুন্য মিলাইলো ।" 

মানুষের এই দেহটাও একটা পেঁয়াজের খোলসের মতো। মানবদেহের বাসনা-কামনার তীব্রতার হের ফের হেতু খোলগুলো পুরু এবং সূক্ষ্ম। যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায়, ততো বাসনার স্তর সূক্ষ্ম। যত বহির্দেশাভিমুখী, ততই তা স্থূল। পেঁয়াজের একেকটা স্তর খুললে স্তরে স্তরে রঙ পাল্টায়। মানুষ যত তার ধ্যান জগতের ভেতরে ঢুকতে পারে ততই তার স্থূল আবরণ সরে গিয়ে সূক্ষ্ম আবরণ দেখা দেয়। পেঁয়াজের একেক আবরণের যেমন বর্ণভেদ আছে। তেমনই মানুষ যতই তার ভেতরে প্রবেশ করে ততই নিজের ভেতরে বর্ণের তারতম্য দেখতে পায়। 

এমনটি হওয়ার কারণ মানুষের দৈহিক গঠন ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে মূলাধার পর্যন্ত এমনভাবে স্তরে স্তরে সাজানো যার সঙ্গে BLACK HOLE থেকে নির্গত শক্তির ধাপে ধাপে প্রান্তমুখী হয়ে বিশ্ব সৃষ্টি করার মিল রয়েছে। বিশ্ব সৃষ্টির আদিতে উত্তাপ ছিল তীব্রতম। সেখানে সেজন্য যেমন রয়েছে তীব্র জ্যোতি তেমন ঘন নীল রঙ। যতই নীচে নেমেছে ততই রঙের তীব্রতা কমে গেছে। তাই বলা হয়েছে "The Hotter a Star bluer it is and the more luminous it is. In a Blue Galaxy, light comes essentially from hot star---whereas in a Red Galaxy,light from cold stars. 

তাছাড়া Galaxy গুলি মানুষের দেহেরই মতো অসংখ্য cell দ্বারা গঠিত। Just as a human being a collection of hundred trillion cells--- is typically in a steady state between synthesis and decay and more than the sum of it's parts, so also in a Galaxy. সেইজন্য মানুষ নিজের ভেতরেই নানা রঙের খেলা দেখে আশ্চর্য্য হয় ধ্যান জগতে। এই রহস্যময় অন্তর্জগত দেখতে পেয়েই অনেক ধ্যানীযোগীগণ বলে উঠেছেন, "মানুষের দেহ একটা 'রঙের বাক্স' "। সেই রঙ বেরঙের বিচিত্র জগতে যে মানুষ প্রবেশ করে অনেক রহস্যময় জিনিস দেখে, সে অবাক হয়ে যায়। তার রহস্যময় অনুভূতিকে তখন সে নানা প্রতীকময় ভাষাতে প্রকাশ করে। কারণ পরিচিত বাচনভঙ্গি দিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার সে যথার্থ ব্যাখা করতে পারে না। তাছাড়া অদ্ভুত প্রতীকের মাধ্যমেও দিব্য জগত তাঁকে বিভিন্ন ধরণের ইঙ্গিত দেয়। সেই প্রতীকের অর্থ সূক্ষ্মভাবে ধরা গেলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত করা যায়। ভুল হলে উল্টো ফল হয়। 

(চলবে)

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৮

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)


বীজের মধ্যে যেমন মহীরূহ থাকে, শূন্যের মধ্যেও তেমনই জগত থেকে যায় ।



বীজের মধ্যস্থিত অদৃশ্য মহীরুহ যেমন তার গুণস্বরূপ, জগৎও তেমনই পরব্রহ্মের গুণস্বরূপ । ফুটে উঠলে দেখা যায়, না ফুটে উঠলে সুপ্ত থাকে । যে মৌল বস্তুপুঞ্চ স্থুল জগৎ তৈরি করেছে, মাত্রার দিক থেকে তা এত ক্ষুদ্র যে, প্রায় অদৃশ্য থাকে বললেই চলে । বিজ্ঞানে একে বলে Seemingly invisible matter. তবে তার অস্তিত্ব যে থাকে না তা নয় । আর জগৎ যদি মিথ্যে হয় তাহলে শীবশঙ্করের কথাও মিথ্যা। এই কারনে যে, জগতের অংশ হিসেবে শীবশঙ্করও মিথ্যা । 

মিথ্যা থেকে উদ্ভুত বাক্যও মিথ্যা, বরং শীবশঙ্করের কথাটাকে এইভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে, যেমন "ব্রহ্ম নিত্য জগৎ অনিত্য," নিত্য হল VOID. VOID স্থিত শক্তি কখনও ফুটে উঠে আবার কখনও লয় প্রাপ্ত হয় । অর্থাৎ VOID এ সুপ্ত (LATENT) অবস্থা প্রাপ্ত হয় । আবার ফুটে উঠে জগৎ গতিশীল রূপ ধারণ করে । VOID অর্থাৎ অনন্তের বুকে সুপ্ত শক্তির এই যে নিত্য লীলা এর স্বরূপ যোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেন না । আর VOID বা VACCUMও যে অনুভূতিহীন তা নয়, কারন দেখা যায় শূন্যে কোন বৃহৎ বস্তু দেখা দিলে তার পাশে শুন্যও বেঁকে যায় । আধ্যাত্মিক মানব নজরুল ইসলামের লেখাতেই বোধ হয় একটি গান শোনা যায়---"ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেরব, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর ।" 

ধ্যান সাধন মানুষকে নিজের অন্তরের দিকে তাকাতে শিখিয়েছে । যখনই সে নিজের অন্তরের দিকে তাকাবার অবকাশ পেয়েছে, তখনই অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছে যে, দেহটা ক্ষুদ্রাকৃতি হলেও আসলে ক্ষুদ্র নয় । সীমার মধ্যে অসীম লুকিয়ে রয়েছে । এটা ঘটে মনঃসংযোগের ফলে, মানুষের কুণ্ডলিনী শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবার জন্য । ত্রিমাত্রিক জীবের শক্তি মাত্রা চতুর্মাত্রিক হলেই বিজ্ঞানের ভাষায় It could also turn us inside out. আর এই কারনেই আমরা নিজেদের মধ্যে অনন্ত বিশ্ব প্রত্যক্ষ করি । সীমার মধ্যে অসীমের এই আত্মগোপনের ব্যাপারটি আমরা অত্যন্ত সহজে বুঝে থাকি একটা পিঁয়াজকে চোখের উপর রেখে । 

একটা পিঁয়াজকে যদি শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা যায় এবং তারপর একে একে তার খোলস বা আবরণ খুলে ফেলা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, শেষ আবরণটুকু সরে গেলে ভেতরে কিছুই নেই । রয়েছে সব VOID. তখন বাইরেও VOID. দুই VOID এ মিলে গিয়ে আবারনের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যায় । কবি তাই ঘটনা লক্ষ্য করে লিখেছেন "শূন্যে শুন্য মিলাইলো ।" 


(চলবে)

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সে যাই হোক, কথাটি হচ্ছে এই যে একদল মানুষ ব্যাখার অতীত জীবনের বহু ঘটনাকে বিধাতা পুরুষের ললাট লিখন বলে ধরে নেন এবং সেখানে যা লিখিত আছে তা ঘটবেই এবং তাকে অতিক্রম করা যাবে না--------- এরূপ বিশ্বাস করেন । কিন্তু একজন খেয়ালী বিধাতা পুরুষ কপালে আপন মর্জিতে যা খুশি তাই লিখে দেবেন এবং মানুষ জীবকে তাই ভোগ করতে হবে এমন কোন কাহিনীতে বর্তমান আমি মিঠু বিন্দুমাত্র আস্থাতে নেই । আমি বিশ্বাস করি, মানুষ পৃথিবীতে নিজস্ব কর্মফলই ভোগ করে তা ইহজন্মের হোক, গতজন্মের হোক । তার সুখ দুঃখের স্রষ্টা সে নিজেই, অন্য কেউ নয় । একটা মানুষের কর্মফলই গুপ্তচিত্র হিসাবে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার খাতায় তার বর্তমান,ভবিষ্যৎ কে এঁকে রেখে দেয় । সেই ভবিষ্যৎই মানুষের কর্মজীবনে নির্দিষ্ট সময়ে ঘটনাগুলি ঘটে যায় । 

তবে বিধাতা পুরুষের অস্তিত্বে আমি মিঠু বিশ্বাস করি এবং দেব দেবীর অস্তিত্বেরও । কিন্তু আল্লাহ্ বা ভগবান এর স্বতন্ত্র দেহ ধারী কোন অস্তিত্বরূপ নেই, উনি প্রকৃতপক্ষে নিরাকার । এই নিরাকার রূপ ধরে কোন মহাসাধক বা মহাপুরুষের ভিতর জাগ্রত হন । তখন উনি আকার সাকার রূপ নেন । 

হিন্দুমতে নির্গুণ (VOID) কে ভগবান বলেন কারণ ভগবান ভগের অধিকারী, ভগ হলো-- যোনী বা শক্তি (KINETIC ENERGY). এই ভগ শূন্যতার মধ্যে নিস্ক্রিয় থাকে । তখন অবিচলিত নিরবতা । আর এই অবিচল নিরবতাকেই পরব্রহ্ম বা পরমাত্মন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । শক্তি যখন তার নিজস্ব চরিত্র অনুযায়ী নড়ে ওঠে, তখনই জগত বা SPHERICAL UNIVERSE কিছুটা OVAL ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে, যাকে আরেক নামে VACCUM FLUCTUATION IN QUANTUM FIELD বলে । দেশে (SPACE) এ জগত রহস্যের যে বিচিত্র লীলা খেলা চলছে কখনও তাতে একমেবাদ্বিতীয়ম অবস্থা হলেও আবার দ্বৈতের আবির্ভাব হয় । অবস্থাটা গভীর ভাবে বিচার করতে গেলে শিব শঙ্কের পুরুশ-প্রকৃতি তত্ত্ব দাঁড়াতে চায় বটে কিন্তু চিরকালীন একটা দ্বৈত সত্ত্বা স্বীকৃত হয় না । এক্ষেত্রে শিব শঙ্করের অদ্বৈতবাদ সত্য বটে ।

কিন্তু তাই বলে "ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা" এ কথা গ্রাহ্য নয় । ব্রহ্ম থেকে উদ্ভুত যে জগত তা মায়ারূপে প্রতিফলিত হলেও যেহেতু তা সত্য স্থিত শক্তি থেকে উদ্ভুত, তাই তা মিথ্যা হতে পারে না । জগত অদৃশ্য হলেও শূন্য সুপ্তভাবে থাকে । শুণ্য সুপ্তভাবে থেকে আবার প্রকাশিত হয় বলে তার অস্তিত্ব যে নষ্ট হয়ে যায় তা নয় । বীজের মধ্যে যেমন মহীরূহ থাকে, শূন্যের মধ্যেও তেমনই জগত থেকে যায় । 

( চলবে )

মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৬

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

ঠিক এমনিভাবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণও দুশ্চরিত্র ও লম্পটে পরিণত হন। যদি তাঁর নানা লীলা কাহিনীর অন্তর্নিহিত অর্থ ধরা না পড়ে। -- গোপিনীদের বস্ত্রহরণ তো পর্নোগ্রাফীর গল্প পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া ষোল হাজার পত্নীও সুসংযমী চরিত্রের পরিচায়ক নয় । কিন্তু গোপিনীদের যদি জীবাত্মা বলে ধরি এবং বস্ত্র কে যদি কামনা বাসনা রূপ পাশ বলে ধরি, তাহলে অশ্লীল গল্পটি অতি শ্লীল ও মহৎ ভাবাদর্শে উদ্বোধিত হয় । 

জীব সকল পাশ বন্ধন মুক্ত হলেই অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান মেলে। অর্থাৎ ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাক্ষাৎ পায় বা তাঁকে লাভ করে । এই শ্রীকৃষ্ণ মূলত বৈকুন্ঠাধিপতি অর্থাৎ এমন এক অবস্থায় বিরাজ করেন যেখানে কোন প্রকার কুণ্ঠা আলোড়ন নেই। UN STIRRED STATE OF VACUUM. ষোল হাজার পত্নী হলো ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ষোল হাজার গুণের প্রতীক । এই গুণ হলো COUNTLESS DIMENSIONS. আমরা মানুষ মাত্র একটি সময় ও তিনটি মাত্রা দেখতে অভ্যস্ত । এতে SPACE TIME কে Flat দেখায়। যেন কমলা লেবুর খোসা রূপ আবরণের মত। 

কাছ থেকে দেখলে সবই বাঁকা ও ভাঁজ করা দেখায় । দূর থেকে দেখলে সুডৌল, খুব ছোট হলে এটি দশ মাত্রার এবং বেশি রকম বাঁকানো । কিন্তু বৃহত্তর বৃত্তে এর বক্রত্ব অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা যাবে না। তবে এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন জাগে যে - কিছু কিছু মাত্রা বেঁকে গোল হয়ে গেলেও সব যায় না কেন ? এর একটি সম্ভাব্য উত্তর এই যে, দেশের দুটি মাত্রা আমাদের মত জটিল জীবের উদ্ভবের পক্ষে সহায়ক নয় । এক্ষেত্রে তার খাদ্যাখাদ্য, রক্ত চলাচল ব্যাখা করা অসম্ভব । ত্রিমাত্রার বেশি হলেও আমাদের মত ত্রিমাত্রিক জীবের পক্ষে তা ব্যাখা করা দুরূহ। তিন মাত্রাধিক দুটি জিনিসের দূরত্বের ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ত্রিমাত্রিক জিনিসের ক্ষেত্রে তার প্রভাব অপেক্ষা কম । অনুপাত এই ধরণেরঃ তিন মাত্রার ক্ষেত্রে ১/৪, চার মাত্রায় ১/৮, পাঁচ মাত্রায় ১/১৬ চতুর্মাত্রায় এবং অনুরূপভাবে কম হ্রাসমান । এমনও অনেক জগত আছে যেখানে সব মাত্রাই ক্ষুদ্র বৃত্তাকার কিংবা চতুর্মাত্রার বেশি মাত্রিক বস্তুও FLAT. তবে এক্ষেত্রে কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর এসব বিচার করে দেখার জন্য অস্তিত্ব না থাকাই সম্ভব। সুতরাং বহু মাত্রার গুণ হিসাব করা যায় না । গুণই পুরুষের স্ত্রী হিসাবে কল্পিত । 

পুরাণ কাহিনীতে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার একটি গল্প আছে ----- তিনি নাকি মানুষের সকল কর্মের হিসাব রাখেন । মৃত্যুর পর হিসাবের খাতা খুলে মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাকে জাহান্নাম (নরক) বা জান্নাত (স্বর্গ) বাসের অনুমতি দেন । গল্পটি হাস্যকর প্রমাণিত হবেই---- যদি না তার অন্তর্নিহিত সত্যকে ধরা যায় । আসলে জড় জগতের অন্তরালে সূক্ষ্ম এক জগত আছে। যেমন নির্দিষ্ট FREQUENCY নিয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য আলোর বাইরে একটি সূক্ষ্ম আলো আছে । সেই সূক্ষ্ম জগত সূক্ষ্ম আলোর মতই আমাদের কাছ থেকে গুপ্ত থাকে । সেই সূক্ষ্ম জগতের চরিত্র অনেকটা ফটোনেগেটিভের মত । 

মানুষের কর্মজনিত তরঙ্গ বা Vibration কর্মকারীর সম আকৃতির তরঙ্গ সৃষ্টি করে ফটোনেগেটিভের উপর দাগ ফেলার মত ব্যক্তি মানুষের সূক্ষ্ম ছাপ ফেলে যায়। তাতে কর্মজনিত কম্পনের ফলস্বরূপ তার সূক্ষ্ম চিত্র ফুটে ওঠে । এই চিত্রটি সাধারণ মানুষের স্থূল দৃষ্টির অগোচরে গুপ্ত ভাবে থাকে বলেই একে 'চিত্রগুপ্ত' বলা হয়েছে, অর্থাৎ 'যে চিত্র গুপ্ত' । সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী সাধক সেই সূক্ষ্ম চিত্র দেখতে পেয়ে প্রতিটি মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন । এই সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথাই চিত্র গুপ্তের কাহিনী আকারে পুরাণে স্থান লাভ করে আছে । সেই পুরাণ পড়ে কেউ যদি চিত্র গুপ্তের হাত পা ওয়ালা কোন জীব বলে ধরে নেন। যিনি মুদিখানার হিসাব রক্ষকের মত হিসাব লিখে চলেছেন, তাহলে এর চাইতে ভ্রান্ত ধারণা আর কিছুই হতে পারে না । 

এ ধরণের কাহিনীকে যিনি সত্য বলে গ্রহণ করেন তিনি অজ্ঞ এবং বর্বর ছাড়া আর কি হতে পারেন ? যেমন ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিঃ " এই... খারাপ কাজ করিস না ! তোর দুই কাঁধে দুই ফেরেস্তা আছে। যাদের নাম মুনকির আর নকির । ওরা তোর কর্মের হিসাব লিখছে । সাবধান !" এইভাবেই পুরাণ, কোরআন, বেদ, গীতা, বাইবেল বিভিন্ন গ্রন্থের রূপকের ব্যাখ্যাগুলি বিকৃতরূপে প্রতিফলিত হয়ে আছে এইসব ভাষ্যে । সুতরাং বিধাতার ললাট লিখনও সেই ধরণেরই একটি কাহিনী, সন্দেহ নাই।

চলবে.........