পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন -শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

সাত্তার সাহেব একটি একটি করে কোরআনের আয়াত বলছেন আর তার ব্যাখা বিশ্লেষণ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত্তু রহিম সাহেবের বিক্ষিপ্ত মন তা শুনতে নারাজ। সাত্তার সাহেব বিষয়টা আঁচ করতে পেরে তিনি তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন

সুরা বাকারার ৭০ নং অায়াতে বলা হয়েছেঃ " তাহারা বলিল আপনার রবকে ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখা করিতে বলুন ইহা কি ( অর্থাৎ বাকারাটি আসলে কিরুপ?)  নিশ্চয়ই গাভী জাতি আমাদের নিকট (সকলই) একরুপ। এবং নিশ্চয় আমরা যদি আল্লাহর ইচ্ছা অসীম রাখিয়া থাকি তবে অবশ্য আমরা হেদায়েত প্রাপ্ত আছি "।

ব্যাখ্যাঃ এতদুর বলার পরেও যখন কোরবাণী হওয়ার যোগ্য একটি গাভীর স্বরুপ জিগ্যাসা করিল এবয তাহারা আরো জানাইলো যে, আল্লাহ লাভের ইচ্ছা যদি তাহারা অসীমভাবে মনে পোষণ করিয়া খাকে তবে অবশ্য তাহারা হেদায়েত প্রাপ্তদের মধ্যেই গণ হইয়া থাকিবে।

আবার ঐ সুরার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ নিশ্চয়ই তিনি বলিলেনঃ " অবশ্য ইহা একটি বাকারা, জমি চাষে (বা দেহচাষে) হীন হয় নাই এবং ক্ষেত্র বিশেষকে পান করায় নাই। সালামত প্রাপ্ত এবং ইহাতে নাই কোন কলংক (বা দুর্বলতা)। তাহারা বলিলঃ এখন আপনি সত্যসহ আনয়ন করিয়াছেন। তারপর তাহারা ইহাকে জবাই করিল কিন্ত্তু তাহারা জবাই ক্রিয়ার মানসিকতা (সৃষ্টি) করে নাই (বা দুঃখ স্বীকার করে নাই) "।


ব্যাখ্যাঃ এই প্রশ্নের জবাবে মুসা নবী বলিলেন যে তাহার রব বলিতেছেন অবশ্য ইহা একটি বাকারা কিন্ত্তু ইহা দেহ চাষ করিয়া হীন হয় নাই। এবং বিশেষ প্রকার ক্ষেত্রকে পান করায় নাই। এর অর্থ সে হইবে এমন এক ব্যক্তি যে বীর্যস্খলন করে নাই। সুতরাং সে সালামত প্রাপ্ত অর্থাৎ নিরাপত্তা প্রাপ্ত হইয়া থাকে এবং নারী মোহ বা বস্তুমোহের কোন কলংক বা দুর্বলতা তাহাতে থাকে না। তিনি হবেন বীর্যবান জিতেন্দ্রিয় পুরুষ। যৌবন প্রাপ্তির কাল হইতে আত্মিক সাধনায় অনুশীলন সম্যক গুরুর মাধ্যমে না করিলে উক্তরুপ গুণাবলী অর্জন করা যায় না। নিশ্চয় করিয়া স্ত্রীলিংগ রুপে গাভী বলার উদ্দেশ্য হইল সে এখনও পুরুষ হওয়ার পথে সে একজন সাধক।

এতদুর বলিবার পর শিষ্যবর্গ কোরবাণীর বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিতে পারিল। তাই তাহারা বলিলঃ এখন আপনি বিষয়টির ব্যাখাসহ সত্য আনয়ন করিয়াছেন। কিন্ত্তু তাহারা কেহই কোরবাণী করিল না। অর্থাৎ তাহাদের কেহই গুরুর হাতে ঐরুপ একটি সন্তান সঁপিয়া দিল না। পক্ষান্তরে তাহারা একটি চতুষ্পদী গাভী আনিয়া কোরবাণীর নামে হত্যা করিল। উহা দ্বারা তাহারা শুদ্ধি ক্রিয়ার মানসিক হাল অর্জন করে নাই এবং ঐরুপ করিতেও পারে নাই। সেই জন্য কোরআন মতে তাহারা কোরবাণী করে নাই।

একথা বললে সাত্তার সাহেব রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-এবার বলুন রহিম ভাই, কোরআন মতে,  আপনি যে কোরবাণী করতে চাচ্ছেন তা কি নিছক একটি পশু হত্যার আনুষ্ঠানিকতা বৈ অন্য কিছু কি-না? কারণ আপনি তো সেই মুসা নবীর অনুসারীদের মতোই গাভী খরিদ করার মানসিকতায় ভুগছেন?

রহিম সাহেব প্রথম থেকেই আনমনা থাকায় সাত্তার সাহেবের কোন কথাই তিনি হৃদয়াংগম করতে পারেননি। সাত্তার সাহেবের হটাৎ এ প্রশ্নে কিংকর্তব্যবিমূঢ় রহিম সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তিনি কি বলবেন ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। আর অন্যদিকে সাত্তার সাহেব সোফা সেটে হেলান দিয়ে চোখ মুদে গাইছেনঃ

গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
আত্মার সাথে পশু বেঁধেছি
কাম যাতনার ফাঁসে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
কারোর ভাল সহ্য হয়না
অন্তর ভরা হিংসে,

গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
শাক ভাত আর কত খামু
মন মজেছে আমিষে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
২ পয়সার লোভ সহ্য হয়না
ফিৎনা বাঁধি কষে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
"মনের পশু বড় পশু
তারে দেইনা বলি,
মিছে মিছি জীব হত্যার
আজব খেলা খেলি "
[সংগৃহীত]

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন - তৃতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

রহিম সাহেব একটি ট্রেতে চা আর বিস্কুট নিয়ে আসলেন। টেবিলের উপর তা রেখে সাত্তার ভাইকে বললেন

-নিন। শুরু করুন। বলেই তিনি বিস্কুটের প্লেটটি সামনে এগিয়ে ধরলেন।

সাত্তার সাহেব বিস্কুট  খেতে খেতে বললেনঃ

-শুনুন ভাই, আল্লাহ পাক সুরা বাকারার ৬৭ নং আয়াতে বলছেনঃ

 "এবং যখন মুসা তাহার কাওমের জন্য বলিলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে আদেশ দিতেছেন যেন তোমরা একটি বাকারা জবেহ কর। তাহারা বলিলঃ আপনি কি আমাদিগকে উপহাস্যরুপে গ্রহণ করিতেছেন? তিনি বলিলেনঃ আমি আল্লাহর সংগে আশ্রয় গ্রহণ করি যেন মুর্খগণের অর্ন্তভুক্ত না হই "।
ব্যাখ্যাঃ বাকারা = 'বে' অর্থ সহিত, 'ক্কাফ' অর্থ মহাশক্তি, 'রে' অর্থ রাজি। সুতরাং বাকারা অর্থ মহাশক্তির সহিত যে রাজি হইয়া আছে। সম্যক গুরু একজন সম্মুখে মহা শক্তিরুপে বিরাজমান। গুরু হইতে সেই শক্তি অর্জন করার বিষয়ে যে শিষ্য রাজি হইয়া থাকে তাহাকেই শুধু কোরবাণী করা যাইতে পারে। অর্থাৎ সত্যের সেবায় নিয়োজিত করার যোগ্য করিয়া গড়িয়া তোলা যাইতে পারে। এই অর্থে মুসা নবীর বারংবার একজন শিষ্যকেই একটি গাভী (বাকারা) বলিতেছেন। এই গাভী অবশ্য একজন যুবক যে এখনও বীর্যপাত করে নাই এবং সংসারের ঘানি টানে নাই। তাই সে সবার আকর্ষণীয়।
ইব্রাহীম (আঃ) যেমন ইসমাইলকে তাহার মনের মোহ হইতে কোরবাণি করিয়াছিলেন এখানেও ঠিক সেইভাবেই শিষ্যদের মন হইতে জবেহ করিয়া মুসা নবীকে দান করার জন্য আদেশ করিতেছেন। অবশেষে রুপক কথাটি সঠিক বুঝিয়া লইবার পরও কেহই উহা পালন করে নাই এবং একটা চুতষ্পদী গাভী "জবেহ" এর নামে হত্যা করিল। এ কারণেই মুসা নবীর রব বলিলেন যে, তাহারা কেহই জবেহ করে নাই।

কোরআন বলিতেছেঃ " ফাক্কতুলু আনফুসাকুম জালিকা খাইরুল্লাহকুম ইনকুনতুম তা'লামুন "। অর্থাৎ অতএব তোমাদের নফসের কোরবানি (কতল) কর ইহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জ্ঞানী হইয়া থাক। প্রত্যেক মানুষকে তাহার নফসের কোরবানি আদেশ দিতেছেন। কোন পশু কোরবানির আদেশ দিতেছেন না। নফসের কোরবানি হইলেই মুক্তি নামক মহা কল্যাণ আসিয়া থাকে। শিষ্যদিগকে কেহ বলিতেছেন মেষ। তাই তাদের নবী ছিলেন মেষ পালক। কেহ ধেনু, কেহ বা বাকারা ইত্যাদি। সঠিক রুপক গ্রহণ না করিয়া স্থুলতাকে গ্রহণ করার প্রবণতা বস্তুবাদী ধার্মিকগণের মধ্যে প্রবল।

কতল = "ক্কাফ" অক্ষর দ্বারা আল্লাহর ছয়টি শক্তিশালী গুণের সমষ্টিকে বুঝায়। 'তে' অক্ষর দ্বারা বিস্তার বুঝায়। 'লাম' দ্বারা লা অর্থাৎ না বুঝায়। অতএব কতল অর্থ "না" এর বিস্তার সাধন করিয়া ক্কাফ শক্তির অধিকারী হওয়া। মনের মধ্যে মহা শুণ্যতা অর্জন করাই কতল করা।

সাত্তার ভাইয়ের হাইথট শুনতে শুনতে রহিম সাহেবের মাথা ঘুরতে লাগলো। তিনি আগা-মাথা কিছুই বুঝলেন না। তিনি শুধু চিন্তা করতে লাগলেন-কিভাবে টাকা সংগ্রহ করে একটি গরু কেনা যেতে পারে? তার কাছে গচ্ছিত আছে হাজার চল্লিশেক টাকা। আর হাজার বিশেক হলে একটা মোটা সোটা গরু কিনতে পারে। সে টাকার চিন্তায় বিভোর। কিন্ত্তু মনোযোগী শ্রোতার মতো ভান করে পাগল বিদেয় হবার অপেক্ষায় আছেন। তিনি তাকালেন সাত্তার সাহেবের দিকে...দেখলেন তিনি তার কথা বলেই যাচ্ছেন

-বুঝলেন ভাই, মুসা নবী যখন তার কাওমের স্বার্থে শিষ্যগণকে বলিলেন যে, আল্লাহ একটি বাকারা জবেহ করিতে আদেশ করিতেছেন তখন শিষ্যবর্গ ইহাকে উপহাস বাক্যরুপে গ্রহণ করিল। নবীর শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া তাহারা ভালরুপেই জানিয়াছে যে চতুষ্পদী পশু হত্যা করা জবাই ক্রিয়া নয়। সুতরাং ইহা আল্লাহর আদেশ হইতে পারে না। যখন বুঝিল ইহা পরিহাস নয় তখন "বাকারা বা গাভী " এই রুপক দ্বারা কি বুঝাইতেছেন তাহা নবীর আপন রব হইতে জানিয়া লইয়া তাহাদিগের নিকট প্রকাশ করিতে বলিল। নবীর মধ্যে তাহার রব জাগ্রত। তাই আপন রবের সংগে কথোপকথন হইয়া থাকে। শিষ্যগণের মধ্যে রব জাগ্রত হয় নাই। তাই তাহারা নবীর রব হইতে ইহার অর্থ জানিবার প্রার্থনা জানাইল।

সুরা বাকারার ৬৮-৬৯ নং আয়াতঃ "তাহারা বলিল আপনার রবকে আমাদের জন্য ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করিতে বলুন ইহা কি? (অর্থাৎ বাকারাটি আসলে কি বা কিরুপ)। তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয়ই তিনি বলেন ইহা অবশ্য একটি বাকারা-বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়। ইহার মধ্যবর্তী জোয়ান। সুতরাং ক্রিয়া কর যেমন আদিষ্ট হইয়াছ । তাহারা বলিল আপনার রবকে আমাদের জন্য ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করিতে বলুন ইহার রং কেমন? তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয় তিনি বলেন ইহা একটি বাকারা, চির হলুদ-বিশুদ্ধ রং, আনন্দিত হয় দ্রষ্টাগণ।

সাত্তার ভাই চা খান। চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চা খেতে খেতে বলুন। রহিম সাহেবের কথা শুনে সাত্তার সাহেব চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে আবারো বলা শুরু করছেন। আর রহিম সাহেব চাচ্ছেন সে চা খেয়ে কেটে পড়ুক। কারণ তিনি এখন আর কোরবাণী বিষয়ক কোন হাইহট শোনার জন্য আগ্রহবোধ করছেন না। তার চিন্তা একটাই। একটা মোটা-সোটা স্বাস্থ্যবান গরু।

ব্যাখ্যাঃ প্রতি উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সহিত বলিলেন-ইহা অবশ্য একটি বাকারা। তবে ইহা বৃদ্ধাও নয় কুমারীও নয়। ইহাতে
যৌবনের জোয়ার আসিয়াছে। ইহাতেও যখন তাহারা  রুপক শব্দটি বুঝিতে পারে নাই তখন তাহারা ইহার রং কিরুপ তাহা জিগ্যাসা করিল। তিনি জবাব দিলেন যে ইহা চির হলুদ। অর্থাৎ অত্যন্ত আকর্ষণীয় রং। যে রং অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং দর্শনকারীর নিকট আনন্দদায়ক। এই কারণে তাহার দিকে যাহারা তাকাইয়া থাকিবে তাহাদিগের মনের শুদ্ধি ক্রিয়া থাকিবে। জবেহ যে হয় সে হয় সৌন্দর্য বিতরণকারী পুরুষ।
(চলবে)

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন - দ্বিতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

রহিম সাহেবের অবস্থা দেখে সাত্তার সাহেব বেশ খানিকটা মর্মাহত হলেন। তিনি নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। কেন যে সব জায়গায় পান্ডিত্য ফলাতে চান? কি দরকার ছিল এসব বলার? বেচারা কেমন মনমরা হয়ে আছে? সাত্তার সাহেবের মনের কোণায় একটা মমত্ববোধ জন্মাতে লাগলো। তিনি বিষয়টি পরিস্কার করে বোঝার জন্য আবারো রহিম সাহেবের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। তারপর বলা শুরু করলেন। শুনুন রহিম ভাই

-ধর্ম সাধনার মুল উদ্দেশ্য মানুষের সমগ্র ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে মানবীয় অবাধ্য প্রবৃত্তিকে সংযত করে বিশ্ব-প্রতিপালকের পরম কল্যানকর ইচ্ছার সাথে একসুত্রে গেঁথে ফেলা। এজন্য সর্বপ্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভিতর এবং বাহির দুটি রুপ থাকে। প্রথমটি "নিয়ত" বা মনন-সৃষ্টি যা দ্বারা উহার বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছবার সংকল্প গ্রহণ করা যায়। তারপর প্রকাশ্য কোন ক্রিয়ার সাহায্যে সেই নিয়ত বা সংকল্পকে অধিকতর শক্তিশালী করে তোলা। এরুপে ভিতর-বাহির একটি অপরটির সহায়ক ও পরিপুরক এবং এজন্য তাদের সমন্বয় সাধনের দিকে অগ্রসর হইতে হয়।

কারণ সম্যক গুরুরা সত্যকে সাগর মনে করে এবং এই সাগরে সাঁতার কাটা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে সত্য সাগরের একটি বিন্দু সবার সামনে রেখে বলেন "এটা হলো অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটুকু পালন করতে চেষ্টা কর "। এই বিন্দুটুকু দিতেই হয় দুটো কারণে। একটি হলোঃ কেউ গ্রহণ করুক আর নাই করুক কিন্ত্তু সবার জন্য অতি সহজ সরল একটি ব্যবস্থাপত্র আর অপরটি হলোঃ যদি যে কোন সত্যের অনুষ্ঠান অথবা রুপক কথার স্থুল চেহারাটি না থাকে তাহলে আসল সত্যটি হয়ে পড়ে বিমুর্ত তথা নিরাকার। সবার অনুভুতি এই বিমুর্তিকে অনুধাবন করতে পারে না। তাই বিন্দুর অনুষ্ঠান দিয়েই কিছুলোক সাগরের গন্ধ পায়।

-কিন্ত্তু তাই বলে কোরবাণী ঈদকে আপনি পশুহত্যার আনন্দানুষ্ঠান বলতে পারেন না। পশুরা মানব জাতির কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে নিজেদের ধন্য মনে করে। কারণ মানব জাতি হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানবই শ্রেষ্ঠ। সেই শ্রেষ্ঠ জাতির প্রতি নিম্নবৃত্তি সম্পন্ন পশু তার জীবন বিসর্জন দিয়ে ধন্য হয়ে যায়।

-আপনার কথাগুলো ছেলে মানুষী হয়ে যাচ্ছে না রহিম সাহেব? একটু ভেবে দেখেনতো? যে আঠারো হাজার মাখলুকাতের কথা আপনি বলছেন সেই আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে নিজেকে জাহির করতে হলে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি ঐ পশুর চেয়েও শ্রেষ্ঠ। জীব জগতের দিকে তাকিয়ে দেখেনঃ হিংসাত্মক কার্য্যাবলীর জন্য কুকুর এবং বন্যপশু হায়েনা অন্যতম। আপনি যদি আপনার হিংসাবৃত্তি পরিত্যাগ করতে না পারলেন তাহলে আপনার আর কুকুরের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়? গর্ভবতী মহিষ কখনো ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় না। মানুষ করে। একটি নারী পশু একাধিক পুরুষ পশুর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়। নিম্নস্তরের পশুদের মধ্যে কামপ্রবৃত্তি প্রবল। যেমনটা আমরা বর্তমানে পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই-মানুষরুপী এই পশুদের। তাদের মধ্যে আর পশুদের মধ্যে স্বভাবগত পার্থক্য কোথায় রহিম সাহেব?

সাত্তার সাহেবের কথাগুলো শুনে রহিম সাহেব বেশ খানিকটা চিন্তাভাবনায় পতিত হলেন। তিনি বেশ গভীরভাবেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছেন। তার মনের মধ্যে খেলা করছে কুকুর স্বভাবের পশু মানুষ আর বাস্তবিক পশু কুকুরের মধ্যে কি কি মিল আছে তার সায়ুজ্য খুঁজে ফেরা। তিনি একবার অফিস হতে আসার পথে গলির মোড়ে দেখেছেন-একটি নারী কুকুরকে ঘিরে আছে একাধিক পুরুষ কুকুর। কেউ তার জননইন্দ্রিয়ে জিহ্বা দিয়ে চাটছে কেউ তার মুখ চাটছে....আবার তার বাড়িতে যে মিনি বিড়ালটা আছে সেখানেও তিনি দেখেছেন। মোরগ-মুরগী পাখি সব কিছুতেই তিনি কিছু না কিছু মিল বা সায়ুজ্য খুজে পাচ্ছেন। আর আধুনিক সভ্যতায় শিক্ষিতরাতো রীতিমতো প্রজনন ক্রিয়াকে আনন্দ উপকরণের নয়া হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্ত্তু তারা কি ভেবে দেখেছে এতে কি হচ্ছে? ইনপুট হিসেবে যা দেয়া হচ্ছে আউটপুট হিসেবে তাই বের হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ যদি কামের বশে ক্রিয়া করে তার আউটপুট হিসেবে সেই শিশুটির মধ্যে কামভাব প্রবল থাকবে। 

-কি ব্যাপার রহিম সাহেব? হটাৎ এমন গম্ভীর হয়ে গেলেন কেন? কি ভাবছেন এত শত..

-আপনার কথাটার বাস্তব প্রতিফলনটা দেখার চেষ্টা করছিলাম।

রহিম সাহেবের কথা শুনে সাত্তার সাহেব বেশ ক্ষাণিকটা হাসলেন। তিনি বুঝতে পারলেন-রহিম ভাই বাস্তবতার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিয়েছেন। যা একটি পজিটিভ দিক। ইংগিতটা ভালোই।

-আচ্ছা সাত্তার ভাই আপনি আমাকে কোরআনের আলোকে কোরবাণীর বিষয়টা একটু পরিস্কার করে বলেনতো? আচ্ছা আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে বসিয়ে রেখেছি। একটু চায়ের কথা বলে আসি। 

রহিম সাহেব ভিতরে চলে গেলেন চায়ের কথা বলার জন্য। আর সাত্তার সাহেব চিন্তা করছেন কোথা থেকে শুরু করবেন? তিনি চিন্তা করলেন প্রথম থেকেই শুরু করবেন। তিনি রহিম সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছেন।

(চলবে)

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন - প্রথম পর্ব

রহিম সাহেবের মনটা বেজায় খারাপ। তিনি এ বছর কোরবাণী দিতে পারছেন না। প্রতি বছরই তিনি কোরবাণীর আনুষ্ঠানিকতা সারেন। কিন্ত্তু এ বছর কোরবাণী দিতে না পারার যন্ত্রণা তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না। তার ছেলে-মেয়েরা কোরবাণীর পশু দেখতে পারবে না -এটা কিছুতেই হতে পারে না। তাছাড়া তার ছোট মেয়ে অর্থি তার বান্ধবীকে মোবাইলে বলছেঃ

-জানিস, আমার বাবা এ বছর বড় দেখে একটা গরু কিনবে। তোরা কি কিনেছিস?

রহিম সাহেবের মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। আহা! মেয়েটা কতো আশা নিয়ে তার বান্ধবীকে বলছে গরু কেনার কথা। অথচ তিনি জানেন তার পকেটে টাকা নেই। যে টাকা আছে তাতে বড়ো জোর একটা ছাগল কেনা যেতে পারে। তিনি কি করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। অস্থির চিত্তে তিনি বারান্দায় এপাশ ওপাশ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কি করা যায় তাই ভাবছেন? কারো কাছ থেকে যে টাকা ধার করবেন সে সাধ্য নেই। টাকা ধার করলে কিভাবে শোধ দেবেন? এম্মনিতেই তিনি দেনায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। যে পেঁয়াজ ছিল ত্রিশ-চল্লিশ টাকা তা হটাৎ করে বেড়ে হয়ে গেল আশি টাকা। প্রতি কেজিতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে চল্লিশ টাকা। মাছ-মাংসের কথা না হয় ছেড়েই দিলেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে এম্মনিতেই যে ঘোর অন্ধকার ছিল তাও আরো গাঢ় হয়ে আসছে। তার উপর লেখা-পড়া করার উপর সরকার ট্যাক্স বসাচ্ছে। ছাত্ররা মাঠে নামছে। রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা তাতে মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে নামছে পরিবহন সেক্টরে। বাস ভাড়া বাড়ছে। রিক্সা ভাড়া বাড়ছে। অথচ সে অনুপাতে বাড়ছে না তার ইনকাম। কি করা যায়? এই বয়সে এসে শেষ পর্যন্ত ঘুষ দুনীতিতে লিপ্ত হবেন না-কি সেই চিন্তা করছেন। তার চিন্তায় ছেদ পড়লো একটি কলিং বেলের শব্দে। কে আসতে পারে এ সময়? তিনি দরজা খুলতে গেলেন। কিন্ত্তু তার আগেই সায়মা দরজা খুলে দিল। দেখলেন সাত্তার সাহেব আসছেন। সাত্তার সাহেব তার কলিগ মানুষ। তাছাড়া তার প্রতিবেশি। তাকে দেখে আপাততঃ চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে তাকে সালাম দিলেন। তারপর কুশল জিগ্যেস করলেন।

-কেমন আছেন ভাই?

-আছি কোন রকম।

-কেন ভাই? কি হয়েছে? বসতে বসতে সাত্তার সাহেব জানতে চাইলেন।

-কি আর হবে? এ বছর বোধ হয় আর কোরবাণী দিতে পারবো না।

-ভালো তো। একটা পশু হত্যা করা হতে বেঁচে গেলেন।

-জ্বী? রহিম সাহেব মনে হয় পশু হত্যা ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। তিনি বেশ আশ্চর্য্য বোধ করলেন।

-সত্য কথাইতো বলছি। সাত্তার সাহেব বললেন।

-শুনেন ভাই, সব সত্য শুনতে নেই। সত্য বড়ো নির্মম।

-আরে ভাই তার জন্যইতো বলছি। আপনি একটা পশু হত্যা করার অপরাধ হতে বেঁচে গেলেন আর কি?

-কেন ভাই? কোরবাণী করা কি পশু হত্যা করা?

-অবশ্যই।

-তার মানে আপনি বলতে চাইছেন কোরবাণীর ঈদ মানে হচ্ছে পশু হত্যার আনন্দ অনুষ্ঠান?

-না। আমি যে অর্থে বুঝাতে চাইছি সে অর্থে আপনি বুঝেননি। অথবা আপনি যে অর্থে বুঝছেন সে অর্থে আমি বলিনি..

-ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি বললেন আর আমি কি বুঝলাম?

-শোনেন, “ক্বোরবানুন” অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য। আর ঈদ মানে আনন্দ। সুতরাং ক্বোরবাণীর ঈদ অর্থ হচ্ছে নিকটবর্তী হওয়ার আনন্দ। কার নিকটবর্তী? প্রভু গুরুর। যিনি সারা জাহানের প্রভু। আপন নাফসানিয়াত পশুবৃত্তিকে জবেহ করে পবিত্র হতে হয়। জবেহ করা অর্থ “ উৎসর্গ করা, পবিত্র করা বা শুদ্ধিকরণ”। সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার পথে যে সব ধর্মরাশি তথা মুর্তি মানবের মন-মস্তিস্কে প্রবেশ করে তা মন-মস্তিস্কে স্থায়ী ছাপ ফেললে তাকে বলা হয় শিরিক। এই শিরিকের কারণেই বারংবার জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে পতিত হতে হয়। ফলে তা দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই মুর্তিগুলি বর্হিজগত হতে দৃশ্যমুর্তি, শব্দমুর্তি, গন্ধমুর্তি, অনুভুতিমুর্তি ইত্যাদি রুপে আসে এবং তা মনজগতে ভাবমুর্তির উদয় করে অস্তিত্বের সাথে লেগে থাকে। তথা শিরিক সম্পন্ন করে। এগুলি হয় তার পুণঃজন্মের উপাদান। উপাদান শুন্য হলে জন্মান্তর নাই। জন্মই দুঃখের কারণ। তা সে জাহান্নামের হোক আর জান্নাতেরই হোক। জান্নাতে দুঃখের পরিমাণ কম হলেও আছে। সকল প্রকার দুঃখ হতে তথা জন্মচক্র হতে মুক্ত হতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রকৃত মুসলমান হতে হবে অর্থাৎ পরিপুর্ণভাবে সমর্পণকারী ব্যক্তিই কেবল গুরুর নির্দেশ পালনের সাহায্যে অনন্ত জন্মচক্রের দুঃখ হতে মুক্ত হয়ে লা-মোকামে তথা মোকামে মাহমুদায় উন্নীত হতে পারে।

রহিম সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে সাত্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি পুরো বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করলেন।
(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাবনার ডানা-শেষ পর্ব


(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি ভুত দেখার মতো চমকে গেলাম। দেখলাম মনা পাগলা আয়েশের ভংগীতে আমার বিছানার উপর বসে আছে। প্রথমে ভীষণ ভয় পেলেও পরে ধাতস্থ হলাম। তারপর তাকে প্রশ্ন করলামঃ

-আপনি? এখানে কিভাবে আসলেন?

-তুই ডাকলি। তাই চলে এলাম। 

-আমি ডাকলাম মানে?

-এইতো কিছুক্ষণ আগেইতো বললি সুত্রটার মুলভাব ধরতে পেরেছিস। কি ধরতে পেরেছিস, তাই শুনতে আসলাম।
মনা পাগলাকে প্রথমে দেখে যে ভয়টা ছিল,তা কাটতে শুরু করায় বেশ স্বস্তি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই তার সাথে আলাপচারিতা করা যায়। আমি তাকে আমার সুত্রটার কথা বললাম। দেখলাম সে তা শুনে স্মিত হাস্যবদনে মাথা নাড়ছে। তারপর সে বলে বসলোঃ

-সুরা ইখলাসের কথা শুনেছিস?

-জ্বি। 

-তার অর্থ বুঝিস ? 

-বুঝি। কিন্ত্তু সেইভাবে না যেভাবে আপনি বুঝাতে চাইছেন?

-ঠিক আছে। তুই কি জানিস আগে সেটা বল। আমি সেটা শুনে তারপর তোর সাথে কথা বলছি।

-সুরা ইখলাস। খালেস তথা খাঁটি। অর্থাৎ নির্ভেজাল। বলা হয়েছেঃ ১। কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ্। ২। আল্লা-হুচ্ছমাদ্। লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্। অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্। অর্থঃ বলুন, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

-তাই? ব্যাস এতটুকুই?

-আসলে সেভাবে তো ভাবি নাই। তাই বুঝতে পারছি না আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?

-শোন। সুরা ইখলাস। খালেস হতে এসেছে। ঠিক আছে। এখানে দেখবি বলা হয়েছে আল্লাহু আহাদ অর্থাৎ আহাদ আল্লাহ এবং সামাদ আল্লাহ। এবং সর্বশেষে বলা হয়েছে কুফুওয়ান আহাদ। আবারো সেই আহাদ। ওয়াহেদ অর্থ এক। একটি সিংগেল বস্তু। আর আহাদ হচ্ছে একক। সমষ্টিগত একক সত্ত্বা। সেই সত্ত্বা কারো মুখাপেক্ষী নয়। কারণ সে ভিন্ন অন্য কোন দ্বিতীয় কোন কিছুরই অস্তিত্বই নেই। তাই সে সামাদ আল্লাহরুপী। সেই স্বয়ং স্বয়ংভু। যদি সৃষ্টির মধ্যে অন্য কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকতো তাহলে সে অবশ্যই শেরেক করতো। যেহেতু নেই সেহেতু সেই ঘোষণাই সে দিচ্ছে। অন্য কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকলে মুখাপেক্ষী হবার প্রশ্ন আসতো । যেহেতু নেই তাই সেটা অবান্তর। শেষেও তাই আবার আহাদ। মুল সার কথা হচ্ছে – স্রষ্টার অদ্বিতীয়তা অক্ষুন্ন রাখা। সর্বত্রই তার সরব উপস্থিতি। এটাকেই তোরা তোদের ভাষায় বলিস সর্বেশ্বরবাদ তথা ওয়াহদাতুল অযুদ। এক কথায় বলা হয় – লা মউজুদা ইল্লাল্লাহ। আচ্ছা, তুই কি হুসনে হাকীকী জানিস? শুনেছিস কখনো?

- না। হুসনে হাকীকী কি?

-হুসনে হাকীকীর অর্থ হচ্ছে সত্যের সৌন্দর্য্য। হযরত খাজা শেখ ফরিদ শকরগন্জ (রাহঃ) এর কালামে পাক। 

আমি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আবার তার কথাও সঠিকভাবে বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ কেটে গেল নীরবতায়। দেখলাম মনা পাগলা চোখ বুজে গুণ গুণ করে গাইছে হুসনে হাকীকীঃ-

এ্যায় হুনছে হাক্কীকি নুরে আযাল তেনু ওয়াজিব তে ইমকান ক্যাঁহু
তেনু খালিক জাত কাদিম ক্যাঁহু তেনু হাদিস খালক জাহান ক্যাঁহু
তেনু মুতলাক মেহিজ ওয়াজুত ক্যাঁহু তেনু আলমিয়া আইয়ান ক্যাঁহু
অরভি নাফস আকল ক্যাঁহু আসবাহ আইয়্যান ক্যাঁহু
তেনু আরশ ক্যাঁহু আফলাক ক্যাঁহু তেনু নাজ নাইম জাননান ক্যাঁহু
তেনু জাত জামাদাত নাবাত ক্যাঁহু হাইয়্যান ক্যাঁহু ইনসান ক্যাঁহু
তেনু মাসজিদ মান্দির দায়ির ক্যাঁহু তেনু পোথিতে কোরআন ক্যাঁহু
তাসবিহ ক্যাঁহু জুননার ক্যাঁহু তেনু কাফির ক্যাঁহু ইমান ক্যাঁহু
[সংক্ষিপ্ত]

গানটি শুনে ভাবে তন্ময় হয়ে রইলাম। এর ভাবার্থ বুঝতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু রান্না ঘর হতে কি যেন পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম। যেয়ে দেখলাম চায়ের পানি শুকিয়ে পাতিলটা জ্বলে লাল হয়ে উঠছে। তাড়াতাড়ি চুলাটা বন্ধ করলাম। তারপর রুমে এসে দেখি সে নেই। কিভাবে আসলো কিভাবে গেল কিছুই বুঝলাম না। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমার বিছানার দিকটাতে। যেখানটায় মনা পাগলা বসেছিল। একটা চিরকুট দেখতে পেলাম। সেখানে লেখাঃ ” আমি আর কেউ না। তোরই অবচেতন মনের কল্পনা “।
(সমাপ্ত)

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাবনার ডানা-ষষ্ঠ পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম যেহেতু আজ আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, তাই আজকে সারাটা দিন মনা পাগলার বিষয়টা নিয়ে ভাববো। তাই প্রাতঃরাশ সেরে হাত-মুখ ধুয়ে জামাটা গায়ে দিলাম। তারপর সকালের নাস্তাটা করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলে ঢুকে নাস্তা সেরে বের হয়ে এলাম। সিগারেট কিনে রুমে ফিরলাম। এবার নিঃচিন্তে চিন্তা করা যাবে।কিন্ত্তু কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। বারান্দায় বসে সিগারেট ধরিয়ে চিন্ত্তা করলাম যেহেতু মনা বলেছে বিষয়টি জাগতিক নয় আধ্যাত্মিক। তাই আমি এ বিষয়টার প্রতিই আমার দৃষ্টি নিবন্ধ করলাম। কাগজ কলম বের করে লেখা শুরু করলাম। হেডিং দিলাম আধ্যাত্মিকতা ও এর পারিপাশ্বিক বিষয়াবলী।

আধ্যাত্মিকতা ও এর পারিপাশ্বিক বিষয়াবলী
আধ্যাত্মিকতা কি? আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে আত্মা লব্দজ্ঞান। আত্মা কি? আত্মা হচ্ছে পন্ঞ্চভুতের সংমিশ্রণে গঠিত দেহ। পন্ঞ্চভুতের উপাদান কি? ক্ষিতি, অপ, তেজ মরুৎ, বোম। মাটি, পানি, আগুণ, বাতাস, আকাশ। পন্ঞ্চভুতের মুল উপাদান হচ্ছে চিৎ পরমাণু। চিৎ পরমাণু হচ্ছে ঈশ্বরের অংশ। ঈশ্ ধাতু হতে ঈশ্বর। ঈশ্ হচ্ছে শক্তি। শক্তির মুল হচ্ছে আলো বা নুর। সুতরাং নুরময় পন্ঞ্চ উপাদান দ্বারাই যে দেহ গঠিত তা অসংখ্য নুরের সমষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু নয়। আর এজন্যই বলা হয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান। সমগ্র শক্তির মুলাধার। মুল+আধার। আর এই দেহই হচ্ছে নুরে নুরময় জ্ঞানের পুণ্যভুমি। এই ভুমিতেই সেই সর্বশক্তিমানের বাস। কিভাবে? কারণ আল্লাহ পাক যখন দেহ সৃষ্টি করেছেন সেই দেহে রুহ নামক একটি উপাদানও দিয়ে দিয়েছেন। রুহ্ হচ্ছে অতিচেতনাময় সূক্ষ্মদেহ বিশিষ্ট। যার আকার একটি চুলের সহস্রভাগের একভাগ। এটি এতো সূক্ষ্ম যে একে দেখা দুষ্কর। কিন্ত্তু অনুভব করা যায়। যেমনঃ পন্ঞ্চ উপাদান দ্বারা যে দেহ তৈরী করা হয় সেই একই উপাদান দ্বারা যদি মুর্তি তৈরী করা হয় সেটি চৈতন্য প্রাপ্ত হয় না। কেন? কারণ সেটির মধ্যে রুহ নামক অতিচেতন চিৎ পরমাণু তথা স্বয়ং রবের হুকুম নেই। যেমনঃ বলা হয়েছে-কুল্লির রুহ মিন আমরি রাব্বি।
তার মানে কি দাঁড়ালো? তার মানে দাঁড়ালো – মানবদেহ তথা আদম আর কেউ নন। স্বয়ং আল্লাহ পাকেরই কৌশলে সৃষ্টি একটি রহস্যময় অথচ দৃশ্যমান বাস্তবতার প্রতীক। এই আদমের মধ্যেই পুং এবং স্ত্রী বিদ্যমান। কিভাবে?
এই দেহ তৈরী হয় দুটি ভিন্ন উপাদান তথা পুরুষ এবং নারীর মৈথুনাত্মক মিলন ক্রিয়ায়। এক পুরুষ এবং এক নারী সংযোগ তথা সৃষ্টি। আবার সেই সৃষ্টির মাঝেই একক সৃষ্টি। তার মানে কি দাঁড়ালো? এক + এক = এক । মহাসৃষ্টির কৌশলী আল্লাহপাক হয়তো এ কারণেই বলেছেনঃ হাল আতা আলাল ইনসানি হীনুমম্মিনাদ্দাহরি লাম ইয়াকুম শাইয়াম মাযকুরা। সেই সৃষ্টিটা কিরুপঃ “লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানে তাকবীম”। সেই আহসানে তাকবীমে যখন রুহ প্রবেশ করানো হলো অর্থাৎ নাফাকতু ফি মির রুহী তখন আদম একটা হাঁচি দিল এবং বললোঃ আলহামদুলিল্লাহ। জবাবে রবের তরফ থেকে বলা হলোঃ ইয়ারহামুকাল্লাহ।
পর্যালোচনাঃ আদম সৃষ্টির রহস্যটা পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্ত্তু হাওয়ার ব্যাপারে সেরুপ কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে তিনি সৃষ্টি করেন নারী-পুরুষ জোড়ায় জোড়ায়। আদমের জাওজ হচ্ছে হাওয়া। সাধারণ ভাষায় হাওয়া বলতে আমরা বায়ুকেই বুঝে থাকি। কিন্ত্তু সেই বায়ুকে আমরা উপলব্দি করতে পারি তথা এর যে স্পর্শগুণ তা অনুভব করতে পারি। পরিপুর্ণ মানবাকারে তা পাই না। অথচ প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে তার রুপ দেওয়া হয়েছে দেবতারুপে। পন্ঞ্চভুতের সব ভুত তথা আত্মাকে দেবত্বোরুপ দেয়া হয়েছে। কোন মানবকে অতি মানবে তথা দেবত্ব আরোপ করাকে বলা হয় নরোত্তরোপ করা বা নরমরফিইজম। বলা হয়- ইসলাম এটা স্বীকার করে না। অথচ আদম এবং তার জাওজ তথা জোড়া যা আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাকে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। কারণটা কি? কারণ হচ্ছেঃ বস্তুর স্বরুপ উপস্থিতি। স্বরুপ উপস্থিতি না থাকলে কল্পনায় তার বিভিন্নরুপ অংকিত হতে থাকে। অংকিত কল্পরুপ বাস্তবতার সাথে না মিললে বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে। একটা প্রচন্ড আঘাত খেতে পারে। এটা হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়?
জগতে ভালো এবং মন্দ এ দুটো রুপ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে রেজান্ট আসবে একটা। হয় ভালো নয়তো মন্দ। ১+১=১। সুত্রটা স্বাভাবিক। সমগ্র শক্তিজগতেরও দুটো রুপ রয়েছে। শুভ শক্তি এবং অশুভ শক্তি। আহুরা-মাজদা। শুভ শক্তিকে গ্রহণ করে ফলাফল শুভ হয়। এবং অশুভ শক্তিকে গ্রহণ করলে ফলাফল অশুভ হয়। প্রশ্ন হলো এ অশুভ শক্তির মুল কি? বলা হয়েছেঃ “ওয়া নাফসিও ওয়ামা সাও ওয়াহা ফা আলহামাহা ফুজুরাহা ওয়া তাক্কওয়াহা”[সুরা শামস ৭-৮]। নফস এবং উহাকে সুগঠিতরুপে সৃষ্টিকারীর শপথ, যিনি তাদের অন্তরে ভাল এবং মন্দ ঢেলে দিয়েছেন। অর্থাৎ মহান সৃষ্টিকর্তা নফসের মধ্যেই ভালো এবং মন্দ মিশ্রিত করে দিয়েছেন। এখানেও ভালো=১ এবং মন্দ=১। সৃষ্টি=১। সুত্রটা দাঁড়ালোঃ ১+১=১। ফল ভালো হলে রব সেই ভালো নফসেরও একটা নাম দিয়েছেন এবং তাকে আহ্বান করেছেন এভাবেঃ “ইয়া আইয়্যুতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না ইরজিয়ী ইলা রাব্বিকি রাদ্বিইয়াতাম্মারদিয়্যা, ফাদখুলী ফী ঈবাদী ওয়াদখুলী জান্নাতী”। হে প্রশান্ত আত্মা! স্বীয় প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন কর। তুমিও তার উপর সন্ত্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার ওপর সন্ত্তুষ্ট। সুতরাং আমার বান্দাদের মাঝে প্রবেশ কর এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর[সুরা ফজর আয়াতঃ ২৭-২৮]। আর অশুভ শক্তিতে কার্যরত নফসকে লক্ষ্য করে স্বীয় রব বলছেনঃ “ওয়া লাও তারা ইযিযলিমুনা ফী গামাতিল মাওতি ওয়ালমালায়িকাতু বাসিতু আইদীহিম আখরিজু আনফুসাকুম”।
এ পর্যন্ত লিখে মনে মনে প্রশান্ত হলাম এই ভেবে যে হয়তো আমি এর সমাধানটা খুঁজে পেয়েছি। সুত্রটার মুলভাব ধরতে পেরেছি। দেখাই যাক না কি হয়? এবার মনাকে পাগলটাকে বলতে পারবো-এই নাও তোমার উত্তর। তখন মনা পাগলা কি বলে? সেটা শোনার অপেক্ষায় থাকবো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দায় বসে সিগারেট খাবো। চায়েরও বড্ড নেশা পেয়েছে। তাই রান্না ঘরে যেয়ে চায়ের পানি বসিয়ে বারান্দায় আসবো ঠিক সেই মুহুর্তে ঘটে গেল এক অত্যাশ্চর্য্য ঘটনা।
চলবে।


ভাবনার ডানা-পন্ঞ্চম পর্ব


(পূর্ব প্রকাশের পর)
ঘুমের মাঝে কি না জানি না আমি দেখতে পেলাম আমি মীন আকারে ভেসে বেড়াচ্ছি। কোটি কোটি মীন সাঁতার কাটছে। সবার মাঝে একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেছে। কে কার আগে সেই লক্ষ্যবস্তুটাতে পৌঁছাতে পারবে? লক্ষ্যবস্তুটা দুর হতে সুর্যের আলোক ঝলকানির মতো মনে হচ্ছে। কখনো আমি আগে যাচ্ছি কখনো অন্য কেউ। মারামারি কাটাকাটিতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে। লক্ষ্য সবার একটাই। ঐ আলোক পিন্ডের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া। কিন্ত্তু আমি যেন দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। আমার আগে আমি কাউকে সেটা স্পর্শ করতে দেব না। সবাইকে ঝটকা মেরে আমি এগিয়ে চলছি। এক সময় আমি সেটা স্পর্শ করতে পেরেছি। আমার সহযোদ্ধারা সবাই কে কোথায় হারিয়ে গেল জানি না। আমি প্রবেশ করলাম একটা সুর্য দীপ্ত আলোক পিন্ডে। মনে হচ্ছে সেটাই আমার স্থান। আমি সেখানে চল্লিশ দিন অবস্থান করলাম। এরপর আমার আকার আবার পরিবর্তিত হচ্ছে। দেখলাম আমি থেকে আরেক আমির সৃষ্টি হলো। আমি এক হতে দুইয়ে পরিবর্তিত হলাম। দুই হতে চারে। চার হতে আটে। এভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছি। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় আমি পূর্ণ হলাম। তারপর এ ধরাধামে এলাম।
কি দেখলাম জানি না। আমার ঘুম ভেংগে গেল। আমি উঠে বসলাম। বারান্দায় গেলাম। চারদিকে সুসান নীরবতা। মাঝে মাঝে দু চারটা কুকুরের ডাক শোনা যেতে লাগলো। বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া খানিকটা শীতল। আমি আবার রুমে ঢুকে সিগারেট আনলাম। তারপর আবার বারান্দায় গেলাম। সিগারেট ধরালাম। মনের মধ্যে আবারো উকি দিচ্ছে প্রশ্ন? আবার সেই ভাবনার বিষয়।
আচ্ছা আমি যে মীন রুপে ছিলাম তখন আমাকে সাঁতার কাটার জন্য শক্তিটা কে দিয়েছে? কে আমাকে প্রেরণা দিয়েছে সেই লক্ষ্যবস্তুতে যাওয়ার? কে আমাকে বিভাজন ঘটিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হতে পূর্ণাংগ রুপ দিয়েছে? শুনেছি লোকমুখে বাউলগণ মীনকেই ঈশ্বর বলে থাকেন। যদি তাই হয় তাহলেতো দেখা যায় সেই ঈশ্বরের সৃষ্টির উপকরণ হচ্ছে খাদ্য। খাদ্যের কারণেই বীর্য তৈরী হয়। তাহলে এখানে রিজিকের ভুমিকা অপরিসীম। কিন্ত্তু সেই মীনের মধ্যে আমার যে খুবী ছিল তাতো অস্বীকার করার কোন কারণই দেখছি না। আবার মীনের শক্তিকে সেটাকেওতো অস্বীকার করতে পারছি না। এতো দেখছি মহা ঝামেলা।
চিন্তা ভাবনার কারণে অঘুমোই রয়ে গেছি। মনে হচ্ছে রাতে আর ঘুম হবে না। আবার ঘুমেরও প্রয়োজন। না ঘুমালেতো সকালে স্কুলে যেতে পারবো না। ছেলে-মেয়েদের ক্লাসও করাতে পারবো না। সিগারেটটা শেষ করে আবারো ঘুমাতে গেলাম। দেখি ঘুম আসে কি-না?
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। জেগে দেখি রুমে কেউ নেই। সবাই যার যার কর্মস্থানে চলে গেছে। শুধু আমি একাই রয়ে গেছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বেজে গেছে। আজ মনে হয় স্কুলে আর যাওয়া হবে না।
(চলবে)

ভাবনার ডানা-চতুর্থ পর্ব


(পূর্ব প্রকাশের পর)

এখন বৃষ্টি বেশ জোরে শোরে শুরু হয়েছে। টিনের ছাদে বৃষ্টির শব্দ শুনতে বেশ লাগছে। মনটা কোন সুদুরে হারিয়ে যেতে চাইছে। কিন্ত্তু পারছি না। মনা পাগলা নামক লোকটির একটি কথা বেশ জোরে শোরেই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বার বার মনে পড়ছে  " এটা এমন একটা বিষয় - যা দেখা যায় না। ধরা যায় না কিন্ত্তু অনুভব করা যায়। উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সর্বত্রই তার সরব উপস্থিতি। এই মনের মাঝেই ভাবের আবেশেই সে ধরা দেয় ভাবুকের কাছে। যারা তার ভাবুক তাদেরকেই সে ভাবায়। তাদেরকেই সে চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করায়। সেই চিন্তা রাজ্যে তারা সারাক্ষণ ডুবে থাকে। "

আচ্ছা অামি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? ঠিক মনা পাগলার মতো। আমার কাছে কেন বার বার সে প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে? কি যে করি? কার কাছে এই প্রশ্নের উত্তরটা পাই? ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আবার সমাধানও পাচ্ছি না। ভাবনার ডানা কেবল বিস্তৃত হচ্ছে। আচ্ছা ভাবনা কি? ভাবনার প্রকারভেদ কি? কেন ভাবনা আসে? ভাবনার সংজ্ঞাটা জানা দরকার
আমি আর দেরি করলাম না। বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করলাম। তারপর কাগজ কলম বের করে লেখা শুরু করলামঃ

ভাবনা কি

মনের কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত চিত পদার্থ যা অতি সূক্ষ্মকারে বিরাজিত তাই ভাবনার বিষয়। সেই চিত পদার্থই একটি জীব থেকে আরেকটি জীব থেকে পার্থক্য সুচীত করে। এর থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথই হচ্ছে-ভাবনা। ভাবনার মুল হচ্ছেঃ ভাব + না = ভাবনা। ভাব হচ্ছে মনের গতি প্রকৃতি। মন হচ্ছে চিত পদার্থ। চিত পরমাণু হচ্ছে ঈশ্বরেরই অংশ। ঈশ্ ধাতুর অর্থ হচ্ছে শক্তি। ঈশ্বর হচ্ছেন সেই শক্তির বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং যে চিত পরমাণু ঈশ্বরের অংশ তা যদি প্রতিটি জীবের মধ্যেই থাকে তাহলে সেতো ঈশ্বরেরই অংশ। আর সেই অংশ বিশেষ যদি পুর্ণভাবে মিলিত না হয়, তাহলে ঈশ্বরকেতো পূর্ণাংগ বলা যায় না। না-কি ঈশ্বর পূর্ণাংগতা প্রাপ্তির জন্যই তার দিকে আহব্বান করে? যাকে আমরা বলি ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। যেখান থেকে আমাদের আগমণ সেখানেই প্রত্যাবর্তন। ঝর্ণার জল যেরুপ সাগরের সাথে মিলিত হতে ছুটে চলে অনন্ত পানে আমরাও কি মৃত্যু নামক স্রোতধারায় সেই দিকেই গমণ করছি?

-স্যার কি লিখছেন? শরীফ ভাই জিগ্যেস করলেন

-তেমন কিছু না। একটা আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করছি

-তা লিখেন। রাত কয়টা বাজে সেটা কি খেয়াল করেছেন?

শরীফ ভাইয়ের কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় একটা ছুই ছুই করছে। সবাই যার যার বিছানা পত্র গোছাতে ব্যস্ত। কারো চাকুরি আছে। কারো আছে ব্যবসা। আর আমার আছে স্কুল। আমি লেখাটা বন্ধ করে হাত মুখ ধোয়ার জন্য আবার ওয়াশরুমের দিকে গেলাম। যেয়ে দেখি বিরাট লাইন লেগে আছে। অগত্যা আমি আমার স্বস্থানে ফিরে এলাম। লেখাটায় চোখ বোলালাম। আরো কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্ত্তু পারছি কই? কর্ম ব্যস্ততা আমায় দেয় না অবসর। আমি আবার ওয়াশ রুমের দিকে গেলাম। হাত মুখ ভালো করে পানি ওয়াশ করলাম। চোখে পানির ঝাপটা দিলাম। ওয়াশ রুম হতে বের হয়ে বিছানায় সটান শুয়ে পড়লাম। 

রুমের বাতি নেভানো হয়েছে। চারি দিকে হাল্কা অন্ধকার। সবাই ঘুমুতে ব্যস্ত। কারো কারো নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্ত্তু আমার ঘুম আসছে না। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলাম

ঘন অন্ধকারে আমি যেরুপ জেগে আছি। যখন আমি আমার মায়ের পেটে ছিলাম তখনো কি আমার চৈতন্য ছিল? আমি কি জেগে ছিলাম না সেখানেও ঘুমাতাম? যদি সেখানে আমার ঘুমের স্থান হয় আর আমি যদি ঘুমাতাম তাহলে কে আমাকে ডাকতো? খিদে লাগলে কে আমাকে খাওয়াতো? বাথরুমের প্রয়োজন হলে কি করতাম?

আচ্ছা কোরআন বলেঃ একটা সময় তুমি অতিক্রান্ত করেছো যখন তুমি উল্লেখ করার মতো কোন কিছুই ছিলে না। না আমার আকার ছিল না রুপ ছিল? অর্থাৎ আমি ছিলাম নিরাকার। নির+আকার। নিরাকার অর্থ পানির আকার। তার মানে আমি ছিলাম পানির আকারে। তাহলে সেই পানিটা কি? সেটা নিশ্চয়ই আমার পিতার মণি তথা বীর্য। আর সেটা তৈরী হয় খাদ্যবস্তু হতে। খাদ্য পরিপাক হয়ে হয় রক্তরসে। রক্ত হতে বীর্য তথা মণি। অর্থাৎ আমি মণির মধ্যেই ছিলাম। অর্থাৎ অামার স্থান ছিল বীর্যে। যদি তাই হয় তাহলে কাকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছেঃ পড় তোমার প্রভুর নামে। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্তবিন্দু হতে? কোরআনের বাক্য হচ্ছে আদেশ-নিষেধ মুলক। তথা ইম্পারেটিভ সেনটেনস। সেখানে কর্তা ঊহ্য থাকে। যে পড়ে তাকেই উদ্দেশ্য করে যেন বলা হচ্ছে। তাহলে কাকে উদ্দেশ্য করে বলছে সেই কথা? বিধেয়টা কে? যদি নুর মুহাম্মদকে লক্ষ্য করে বলে থাকে তাহলে কোথ্থথেকে আদেশ আসছে? সেই আদেশ কোথা থেকে উদিত হচ্ছে? কোথা থেকে উরুয হচ্ছে কোথায় নুজুল হচ্ছে?

মাথাটা খারাপ করেই ছাড়বে দেখছি। মনা পাগলার হাত থেকে বাঁচতে হবে। নয়তো সমস্ত উল্টা পাল্টা প্রশ্নে পুরো মাথাটাই খারাপ হয়ে যাবে। আমি আবারো ঘুমাতে চেষ্ট করলাম। কিন্ত্তু ঘুমটা হটাৎই উধাও হয়ে গেছে। খাটে শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। বৃষ্টিও থেমে গেছে। আমিও আমার চিন্তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম। উবু হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। দেখি ঘুমটা আসে কি-না? কারণ ঘুমটা জরুরী। পরদিন আমার স্কুল আছে

(চলবে)