(পুর্ব প্রকাশের পর)
পবিত্র
কুরআন পাকে এরশাদ হয়েছেঃ
"ইয়া আইয়ুহাললাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা ইয়াবতাগু ইলাহিল অসিলাতা। ওয়া
জাহিদু ফি সাবিলিল্লাহি লা
আল্লাকুম তুফলিহুন [সুরাঃ মায়িদা আয়াতঃ
৩৫]।" ইয়া আইয়ুহাললাজিনা
বলতে তাদের বুঝায় যারা
সদ্য ঈমান এনেছে। অর্থাৎ
নব্য মুসলমান হয়েছে। কিন্ত্তু মোমিন
তখনো হয়নি। মোমিনের জন্য
কোরআনে একটি আয়াতও নেই।
কেননা যিনি মোমিন তিনি
এসবের উর্ধ্বে অবস্থান করেন। যদি মোমিনকেই
লক্ষ্য করেই বলা হতো,
তাহলে উক্ত আয়াতে বলা
হতোঃ ইয়া আয়্যুহাললাজিনা মোমিনুত্তাকুল্লাহা
কিন্ত্তু সেখানে বলা হয়েছেঃ
ইয়া আয়্যুহাললাযিনা আমানু। আমানু আর
মোমিন এক নয়। অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই আমানুকে মোমিন দ্বারা অনুবাদ
করায় এই ভুলটা হয়ে
থাকে। তাই তোমার প্রথমেই
পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে
আমানু এবং মোমিন সম্পর্কে।
মোমিন
অর্থ বিশ্বাসী। নীতিগত কোন সত্যকে
মৌখিক ও আন্তরিকভাবে যে
ব্যক্তি স্বীকার করে নেয় তাঁকে
সেই বিষয়ে বিশ্বাসী বলা
হয় । সেরূপ আমাদের
ধর্মীয় পরিভাষায় আমরাও বিশ্বাসী তাঁকেই
বলি যিনি না দেখে
বিশ্বাস করে নিয়েছেন আল্লাহ্,
পরকাল, ফেরেস্তা এবং আল্লাহ্র
রসূল ও তাঁহার অবতীর্ণ
কেতাব। এরূপ সাধারণ বিশ্বাসীকে
(আমানুকে) সম্বোধন করেই কোরআন তাঁর
প্রায় সকল আদেশ-উপদেশ
দান করেছে তাঁদের সংশোধনের জন্য। কারণ বিশ্বাসী
ব্যতীত অন্য লোক কোরআনের
দ্বারা মেনে চলতে রাজি
হবে না। অপরপক্ষে কোরআন
বিশ্বাসীর (মোমিন) জন্য যে
বিধান দিয়েছে তাঁর মান
এত উন্নত যে, সেরূপ
বিশ্বাসী অল্পই দেখা যায়।
সকল মানুষকে উৎসাহিত করা এবং বিশ্বাসীর
অন্তর্ভুক্ত করার জন্যই শব্দটির
এরূপ ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
মোমিন (৩:৩৮), যিনি
ঈমানে পরিপূর্ণ। যে কোন দিক
বিবেচনায় নিরাপত্তার নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত।এটি বাস্তব ব্যাপার—অহেতুক যুক্তিতর্কের বিষয়
নয়। মুমিন আল্লাহ্ একটি
নাম বিশেষ (৫৯ হাসরঃ২৩) । যেই
গুণে আল্লাহ্ মুমিন সেই গুণ
কোন ব্যক্তির মাঝে বিকশিত হলে
তিনিই মুমিন পদবাচ্য। ঈমান
অর্জনের পথে পূর্ণ সফলতা
যখন অর্জিত হয়ে যায়
তখন আমানু মোমিন হয়ে
যান। মোমিনকে লক্ষ্য করে কোরআনে
একটি নির্দেশও দেয়া হয়নি,
কারণ ঐটি তার জন্য
তখন নিষ্প্রয়োজন।[কোরআন দর্শনঃ সুফী
সদরউদ্দিন আহমদ চিশতী]
তো
সেই আমানুকেই লক্ষ্য করে কোরআন
একটি অসিলা ধরার ব্যাপারে
আদেশ দিতেছে। অসিলা শব্দটির মুল
আত্তাওয়াস্সুল এর আভিধানিক অর্থ
‘নৈকট্য লাভ করা’।
অসীলাহ হচ্ছে যার মাধ্যমে
অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। অর্থাৎ
অসীলাহ হচ্ছে সেই উপায়
ও মাধ্যম যা লক্ষ্যে
পৌঁছিয়ে দেয়। ইবনুল আছীর
(রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত নিহায়াত্ গ্রন্থে
এসেছে আল অসিল অর্থ
আররাগিব অর্থাৎ আগ্রহী। আর অসীলাহ্ অর্থ
নৈকট্য ও মাধ্যম বা
যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট বস্তু পর্যন্ত পৌঁছা
বা নিকটবর্তী হওয়া যায়। অসীলাহর
বহু বচন হচ্ছে অসায়েল।
(আন্নিয়াহায়াত ৫খন্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা)
কাসূম অভিধানে এসেছে, অর্থাৎ, এমন
আমল করা যার মাধ্যমে
নৈকট্য অর্জন করা যায়।এটি তাওয়াস্সুলের অনুরূপ অর্থ [ক্বামূসুল
মুহীত্ব ৪র্থ খন্ড ৬১২পৃঃ]।
কেন
দিচ্ছে? ইয়াবতাগুত অর্থ তাগুত মানে
হলোঃ যা মন-মস্তিস্কে
ধর্মরাশিসমুহের উৎপত্তি ঘটায় তা দুর
করবার জন্য। এবং অসিলা
ধরার কথা বলার কারণ
হল যাতে তাগুত বর্জন
করতে পারা যায়। তাই
কোরআন আদেশ দিচ্ছে একটি
অসিলা ধরে তাগুত বর্জন
করার এবং জেহাদ করার
জন্য আল্লাহর রাস্তায়। যাতে তোমরা জয়যুক্ত
হতে পারো। এখানে জেহাদের
কথা বলার অর্থ হইলো-আপন নফসের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করা। আর আল্লাহর
রাস্তা বলতে - দেহ ও
মনোজগতে যাবার রাস্তাই হচ্ছে
আল্লাহর রাস্তা। একজন মোমিন ব্যক্তি
কর্তৃক আদৃষ্ট হয়ে তাঁকে
গুরু মেনে তাঁর আদেশ
নির্দেশ মতো চললে যে
সফলতা আসবে এবং জয়ী
হওয়া সহজ হবে সেই
বিষয়টিই উক্ত অায়াতে বলা
হয়েছে।কারণ "কুলুবুল মোমিনিনা আরশু আল্লাহ।"এখানে বলা হয়েছে মোমিনের কলবই হচ্ছে আল্লাহর আরশ। তো আমাদের জানতে হবে আল্লাহ এবং তার আরশ সর্ম্পকে। উক্ত দুটো বিষয়ই যদি আমরা অবগত হতে পারি তাহলে এই বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ হবে।(চলবে)