পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

সুলতানুল আজগার

মানবদেহে সুলতানুল আজগার জারি হলে, মানবের তিনটি স্থানের পরিপূর্ণ ভাবে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। যথাঃ 
১.লজ্জাস্থানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারে না।
২.চক্ষু, ও
৩.নিতম্বতে। 

কেননা, তখন মানবের রক্ত ​​ পরিপূর্ণভাবে পরিশুদ্ধতা হয়ে যায়। সেই জন্য শয়তান আর প্রবেশ করতে পারে না। কারণ তখন মানবের মন পবিত্রতা অর্জন করে ফেলে। ঠিক সেই সময় মানব মহান প্রভুর খাস বান্দা হয়ে যায়। সুলতানুল আজকার অর্থাৎ ক্বলব, রুহ, সের, খফি, আখফা, নফস, আব, আতশ, খাক, বাদ , লতিফা বলেন আর যেটা বলেন, যখন একসাথে জিকির জারী হবে, সেটাকে বলা হয় সুলতানুল আজগার। 

শয়তান বলছেঃ 
সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন। আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব। [সূরা হিজরঃ আয়াত নং -৩৯]
আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।[সূরা হিজর আয়াত নং ৪০ - ]

সেই জন্য মহান প্রভু বলেছেনঃ  আল্লাহ বললেনঃ এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।[সূরা হিজরঃ আয়াত নং-৪১]
যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে।[সূরা হিজর আয়াত নং ৪২ ]

আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মু ক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। । তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে [ সূরা আল-যুমারঃ আয়াত নং-২২] 

আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র   হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।[সূরা আল-যুমারঃ আয়াত নং - ২৩  ]

শরিয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারিফত এ বিষয় চারটিকে ভালোভাবে জানা দরকার। শরিয়ত শব্দের দুই রকম অর্থ আছে। একটি আম বা সাধারণ অন্যটি খাস বা বিশেষ। আম বা সাধারণ অর্থেঃ রসুল (সাঃ) ইসলাম সম্পর্কিত যে সব বিশ্বাস, কাজ-কর্ম, স্বভাব-চরিত্র, ফরজ-ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, মুবাহ, আদেশ ও নিষেধ প্রকাশ করেছেন তারই নাম শরিয়ত। খাস বা বিশেষ অর্থেঃ যে সব ইবাদত বাহ্যিক অবয়ব বা অর্থের দ্বারা সম্পাদিত হয় তাকে শরিয়ত বলে। 

খাস বা বিশেষ অর্থেঃ শরিয়তকে বর্ণনা করা ফকিহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্রবিদদের ফরজ বা কর্তব্য কাজ। সেটি ফিকাহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। তাছাড়া তরিকত, হকিকত ও মারিফতের কাজও আছে। আত্মগরিমা, অহংকার, হিংসা, দ্বেষ, লোক দেখানোর উদ্দেশে ইবাদত করা, কৃপণতা ও ক্রোধ সম্বলিত চরিত্রগুলো বর্জন করা এবং কাকুতি-মিনতি ও বিনয়-নম্র তার সঙ্গে ভীত হয়ে একাগ্র-চিত্তে সর্বাঙ্গ সুন্দর ইবাদত করাকে তরিকত বলে। 

ইখলাছ বা মনের শুদ্ধ ইচ্ছা। আইনুল-ইয়াকিন বা প্রত্যেক বস্তু নিজ চোখে দর্শন করে অটল বিশ্বাস অর্জন করা, মোশাহাদা বা অদৃশ্য বিষয়গুলোর দর্শন লাভ করা এবং এর তত্ত দর্শনে আত্ম বিস্মৃতিকে হকিকত বলে। 

মহান আলাহ পাকের একত্ব, নৈকট্যলাভ ও প্রিয়-পাত্র হওয়ার তত্তজ্ঞান আক্বিদা বা বিশ্বাস সম্বলিত গোপন তত্তগুলো অবগত হওয়াকে মারিফত বলে। মারিফত অর্জনের জন্য শরীর ও মনকে শরিয়তের আজ্ঞাবহ বানাতে হয়। কলব বা অন্তর যখন মহান আলাহ পাকের ভালোবাসায় নিবেদিত হয় এবং নফস বা রিপু তার সহবাসে ভালোবাসা আকর্ষণ করে, পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে, আলাহ পাকের নবী-রসুলদের বন্ধুরূপে ও আলাহ পাকের শত্রুদের শত্রুরূপে গ্রহণ করে তখনই বাতিনি কামেলিয়ত বা পরিপূর্ণতা লাভ করা সম্ভব হয়। 

ঐ ধরনের সামর্থ্যবান এবং যোগ্যতাবান হওয়া ছাড়া ইলমে বাতিনি বা ইলমে লাদুন্নির আশা করা যায় না। ইলমে বাতিনি বা ইলমে লাদুন্নি ঘরের দরজা তুল্য। হাদিসে বলা হয়েছেঃ রসুল (সাঃ) হলেন সেই জ্ঞানের শহর এবং হযরত আলী (রাঃ) হলেন ভেতরে যেতে সেই শহরের দরজা। সত্যপথ পাওয়ার জন্য সাধারণ উম্মতের ওপর তাদের কোনো এক ইমাম এবং কোনো এক পীর-ওলির অনুসরণ করা আমি ফরজ বলবো। কেননা, তারাই শরিয়তের গোপন ভেদ ও তরিকতের গভীর তত্ত্ব বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষ রিয়াজত বা কঠোর পরিশ্রম ও মোজাহাদাত বা তরিকত অবলম্বন দ্বারা নিজের বাহ্য ইন্দ্রিয় ও নফস বা রিপু দুর্বল করতে চেষ্টা করে। যে সময় সেগুলো দুর্বল হয় তখন তার জ্ঞানইন্দ্রিয় প্রবল হয় ও তার জ্ঞানইন্দ্রিয় আল্লাহ পাকের নূরে আলোকিত হয় এবং তখন সে ব্যক্তি মারিফত এর তত্ত্ব জ্ঞানের পরিপূর্ণতা পায়। আর সে ইলেম বা জ্ঞানকে ইলমে লাদুন্নি নামে অভিহিত করা হয় । 

ইলমে লাদুন্নি দুনিয়াবি অন্যান্য ইলেম বা জ্ঞান অপেক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা এবং সবচেয়ে বেশি দামি। সে দামি ইলেম বা জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ পাকের খাস রহমত বা দয়া কামনা করাই উচিত। যদিও সে ইলেম বা জ্ঞানটি সর্ব সাধারণের জন্য প্রাপ্ত হওয়া অতোটা সহজ সাধ্য নয়। তথাপিও বিশ্বাসের খুঁটির জোর নিয়েই শরিয়তের পথযাত্রী হয়ে ধাপের সিঁড়ি অতিক্রম করার ব্যাপারে চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যেতে কারো পক্ষে মানা নেই। তবে কোনো মানুষের প্রত্যাশিত সব কর্মেই যেমন সঙ্গতি থাকার দরকার আছে তেমনি ইলমে বাতিনি বা ইলমে লাদুন্নি প্রাপ্ত হওয়ার আকাংখা করার ক্ষেত্রেও দৈহিক, মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ, ইলম এবং আমলের সমন্বয় থাকতে হবে, চেষ্টা-সাধনা থাকতে হবে। তাহলেই সেটি প্রাপ্ত হওয়ার সামর্থ্য ও যোগ্যতা পয়দা হবে। আর একদিন হয়তো প্রসারিতও হতে পারে ইলমে লাদুন্নির জন্য সংশ্লিষ্ট কোনো মানুষের হৃদয় বা মন পরিপূর্ণ ভাবে। এ মর্মে কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছেঃ "আল্লাহ পাক যার হৃদয় বা মন ইসলামের জন্য খুলে দিয়েছেন, সে ব্যক্তি তার পালন কর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর উপর পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা পাবেন [সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত নং -১৫১]। 
যেমনঃ আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন। আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।
[সূরা আল বাক্বারাহঃ আয়াত নং-১৫২]

সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর। আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। অকৃতজ্ঞ হয়ো না [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-৪]। 

তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন [ সূরা আল হাদীদ আয়াত নং ৩]। 

তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত [সূরা ক্বাফ আয়াত নং-১৬]

আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।

হে মানব আমি নিজ চিহ্ন জগতে ও মনুষ্য শরীলে দেখার উদ্দেশ্যেই যাতে সত্যের অবস্থা তাদের নিকট প্রকাশিত হয় [সুরা হা মিম সেজদা]

আমি গুপ্ত ছিলাম গুপ্ত ভান্ডারে, যখনি আমি নিজেকে প্রকাশ হতে ইচ্ছে করলাম তখনি আমি এইসব সৃষ্টি করলাম এবং প্রকাশ হলাম। [আল হাদিস]

পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চ য় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ [সূরা আল বাক্বারাহ অায়াত নং-১১৫]

যারা কিছু জানে না, তারা বলে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কেন কথা বলেন না? অথবা আমাদের কাছে কোন নিদর্শন কেন আসে না? এমনি ভাবে তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও তাদেরই অনুরূপ কথা বলেছে। তাদের অন্তর একই রকম। নিশ্চ য় আমি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেছি তাদের জন্যে যারা প্রত্যয়শীল [সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত নং ১১৮]

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না [সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত নং-১১৯ ]

তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রিতে। তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত [সূরা আল হাদীদ আয়াাত নং-৬ ]

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-৭ ]

তিনিই তাঁর দাসের প্রতি প্রকাশ্য আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকে আনয়ন করেন। নিশ্চ য় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-৯]

যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-১৩]

তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হা যা কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-১৪ ]

যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-১৬

তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্যে আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি, যাতে তোমরা বোঝ [ সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-১৭ ]

আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-১৯ ]

মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজে অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদেরকে দিবেন, তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময় [সূরা আল হাদীদ অায়াত নং-২৮ ]

যাতে কিতাবধারীরা জানে যে, আল্লাহর সামান্য অনুগ্রহের উপর ও তাদের কোন ক্ষমতা নেই, দয়া আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা, তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল [সূরা আল হাদীদ আয়াত নং-২৯]

পরিশেষে একটি কথা বলি, হে মানব তুমি নিজেকে গায়রাল্লাহ রুপে পরিপূর্ন ভাবে প্রতিষ্ঠা কর।

হে মানব তুমি যদি আল্লাহকে তালাশ বা অনুসন্ধান কর, তাহলে তুমি সুফি ফকিরগনের নিকট গমন কর।আল হাদিস 

[কৃতজ্ঞতাঃ আব্দুল্লাহ আল রায়েদ কুতুবিয়া কলন্দর]

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮

ভয়ংকর নদী




















দুটো মাংস পিন্ড লন্ডভন্ড করিল এই সোনার দেশ।
তিন ইঞ্চি নদীতে পড়ে সাড়ে তিন হাত নৌকা শেষ ।। ঐ
সেই নদীর মাঝখানে ভাই তিনকোনা এক চর ,
কামিনী বাঘিনী নাচে চরের ও উপর
জীবের যাওয়া-আসা নদীর ভেতর
স্বর্গ-নরক দুঃখ ক্লেশ ।। ঐ
সেই নদীটির চৌদিকে ভাই ভয়ংকর জঙ্গল
তারি মাঝে পাতা আছে পাক মাড়া এক কল ,
যত লোভী কামি যায় রসাতল
দেখে নদীর পরিবেশ ।। ঐ
কেউ জানে না সেই নদীটির গভীর যে কত ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তার জানেনা তথ্য ডুবাইতে স্বর্গ মত‍্য লাগে নদীর এক নিমেষ ।। ঐ
সেই নদীতে আসেরে ভাই মাসে মাসে বান রসিক যারা চিনে ধারা করিতেছে স্নান অসীম না জানিয়া সন্ধান
ধরল ভবার ভাবা কেশ ।।


[সংগৃহীত]

মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮

গর্ভদ জাতি

হেকায়াতঃ
----------

বনের রাজা সিংহ মশাই সহসা হুংকার দিয়ে উঠলেন। তার হুংকারে পুরো বনের পশু-পাখিদের অন্তারাত্মা কেঁপে উঠলো। পাশে বসে ঝিমুতে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাঘ মশাই চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন। শিক্ষামন্ত্রী শেয়াল পন্ডিতের চশমাটা নাকের ডগা থেকে খসে পড়লো।

পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই সিংহ মশাই বজ্র কন্ঠে আওয়াজ তুলে বললেনঃ

- এত বড় সাহস...আমার বিরুদ্ধে লিখে? বলি এত সাহস বনের পশুদের হলো কি করে?

- হুজুর, গোস্তাতি মাফ করবেন। এসব শেয়াল পন্ডিতের কাজ। ওকে শিক্ষা মন্ত্রী করায় সকলেই শিক্ষিত হয়ে উঠছে জনাবে আলা..

- তাই না-কি? সিংহ মশাই শিয়ালের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

সবাইকে তোমার মত পন্ডিত বানাতে চাও না-কি হে শেয়াল পন্ডিত? শিক্ষার আলো..ঘরে ঘরে জ্বালো বলে তুমি কোচিং সেন্টার খুলে ঘরে কি আলো জ্বালিয়েছো হে...তোমার শিক্ষার আলোর জ্বালায় টিকতে না পেরে মুরগীর ছানাগুলো যে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে...আর তোমার দলের সদস্যরা দিব্যি তাদের সাবাড় করছে, সেই খবরও তো আমার কাছে আছে...

শেয়াল পন্ডিত সিংহ মশাইয়ের কথা শুনে একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে গেল। সে চিন্তা করলো-এখন পরিস্থিতি খুবই গরম। কথা বলতে গেলে হয়তো পাছে তার গর্দানটা না চলে যায়...

সিংহ মশাইয়ের উপদেষ্টা কৃকৃর ঘেউ ঘেউ করে কয়েকটা আওয়াজ তুলে বললোঃ

-হুজুর, যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে একটা প্রস্তাব পাঠাতে পারি?

সিংহ মশাই গম্ভীর গলায় বললেনঃ

- কি প্রস্তাব? বলো, শুনি?

- বলছিলাম কি... শেয়াল পন্ডিতকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব না দিয়ে যদি গর্দভকে শিক্ষামন্ত্রী বানানো যায়, তাহলে এই বনের সকলেই গর্দভ জাতিতে পরিণত হবে। তারা আর বুদ্ধি করে কোনো কাজ করতে পারবে না..হুজুর...তাছাড়া তাদেরকে শিকারও করা সহজ হবে...

কুকুরের কথা শুনে সিংহ মশাই মনে মনে হাসলেন। বুঝলেন, তিনি ভুল করেননি। বিশ্বস্থতায় কুকুরের চেয়ে আর কে তাকে ভালো নিরাপত্তা দিতে পারে...ওর কথা মতোইতো হায়ানাদের নখ কেটে দিয়ে হিংস্র্রতার হাত থেকে বাঁচতে পেরেছি। নচেৎ ওরা ছিঁড়ে খেতো আমায়..ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাঘের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে স্মিত হেসে সিংহ বললেনঃ

- হুম। তবে তাই হোক। কি বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মশাই...

সিংহ মহাশয়ের উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাঘ মশাইও মাথা ঝাঁকালেন। বোঝা গেল তারও মত আছে। অন্ততঃ আন্দোলন ফান্দোলন করলে দু'চারকে তো সাইজ করা যাবে...

মন্ত্রীত্ব হারিয়ে শেয়াল পন্ডিত ভেবেছিলেন, দু দন্ড শান্তিতে থাকবেন। কিন্তু তা আর হলো না। সভা সেমিনারে গেলেই তার সাথে তর্ক বেঁধে যায় সদ্য শিক্ষিত হওয়া নব্য শিক্ষিতদের সাথে। কোণঠাসা শেয়াল পন্ডিত মনে মনে প্রমাদ গুনলেন আর বললেনঃ

বয়েতঃ
------
শিক্ষা দীক্ষা শিকায় উঠলো, প্রাণ যে মিশেছে প্রাণে
গর্দভরা জানে না যে, কোথায় আছে তার মানে?
চিন্তা-চেতনায় মোরা হয়েছি যে মুঢ়, নির্জীব, অর্থব,
বুদ্ধিজীবী সেজে হয়েছি যে মোরা একশ্রেণীর গর্দভ।।

শিক্ষাঃ
------
যে শিক্ষা-দীক্ষায়, দীক্ষিতের মন-মানসিকতাকে উন্নত করতে পারে না, সেই শিক্ষা জাতির জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আর সেই জাতিও বিশ্ব দরবারে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। কার্যতঃ সেই জাতি একটা গর্দভ জাতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
#স্বপন #চিশতী