পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮

মানব সৃষ্টির রহস্য

 আল্লাহ বলেনঃ
 ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲْ ﺧَﺎﻟِﻖٌ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِّﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ
ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮْﻥٍ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴْﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲْ ﻓَﻘَﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳْﻦَ -
‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি মিশ্রিত পচা কাদার শুকনো মাটি দিয়ে ‘মানুষ’
সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি তার অবয়বপূর্ণ ভাবে তৈরী করে ফেলব ওতাতে আমি আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদায় পড়ে যাবে’ [হিজর ১৫/২৮-২৯]। 

অন্যত্র তিনি বলেনঃ, ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻳُﺼَﻮِّﺭُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺣَﺎﻡِ ﻛَﻴْﻒَ ﻳَﺸَﺂﺀُ ﻵ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ
ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ- (ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৬)- ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে আকার-আকৃতি দান করেছেন যেমন তিনি চেয়েছেন।তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও মহা বিজ্ঞানী’ (আলে ইমরান ৩/৬)।

তিনি আরও বলেন, ﻳَﺨْﻠُﻘُﻜُﻢْ ﻓِﻲْ ﺑُﻄُﻮْﻥِ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗِﻜُﻢْ ﺧَﻠْﻘًﺎ ﻣِّﻦ ﺑَﻌْﺪِ
ﺧَﻠْﻖٍ ﻓِﻲ ﻇُﻠُﻤَﺎﺕٍ ﺛَﻼَﺙٍ - ( ﺯﻣﺮ ৬)- ‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেন একের পর একস্তরে তিনটি অন্ধকারাচ্ছন্ন আবরণের মধ্যে’ (যুমার ৩৯/৬)। তিনটি আবরণ হ’ল - পেট, রেহেম বা জরায়ু এবং জরায়ুর ফুল বা গর্ভাধার।

উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আদম সৃষ্টির তিনটি পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমে মাটি দ্বারা অবয়ব নির্মাণ, অতঃপর তার আকার-আকৃতি গঠন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহে শক্তির আনুপতিক হার নির্ধারণ ও পরস্পরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এবং সবশেষে তাতে রূহ সঞ্চার করে আদমকে অস্তিত্ব দান। অতঃপর আদমের অবয়ব (পাঁজর) থেকে কিছু অংশ নিয়ে তার জোড়া বা স্ত্রী সৃষ্টি করা। সৃষ্টির সূচনা পর্বের এই কাজগুলি আল্লাহ সরাসরি নিজ হাতে করেছেন (ছোয়াদ৩৮/৭৫)। অতঃপর এই পুরুষ ও নারী স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে প্রথম যে যমজসন্তান জন্ম দেয়, তারাই হ’ল মানুষের মাধ্যমে সৃষ্ট পৃথিবীর প্রথম মানব যুগল। 

তারপর থেকে এ যাবত স্বামী-স্ত্রীর মিলনে মানুষের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদরাজি, জীবজন্তু ওপ্রাণীকুলের সৃষ্টি হয়েছে মাটি থেকে। আর মাটি সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে। পানিই হ’ল সকল জীবন্ত বস্ত্তর মূল (ফুরক্বান ২৫/৫৪)। মৃত্তিকাজাত সকল প্রাণীর জীবনের প্রথম ও মূল একক (Unit) হচ্ছে ‘প্রোটোপ্লাজম’ (Protoplasm)। যাকে বলা হয় ‘আদি প্রাণসত্তা’। এ থেকেই সকল প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলী একে Bomb shell বলে অভিহিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাটির সকল প্রকারের রাসায়নিক উপাদান। মানুষের জীবন বীজে প্রচুর পরিমাণে চারটি উপাদান পাওয়া যায়। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন,কার্বন ও হাইড্রোজেন। আর আটটি পাওয়া যায় সাধারণভাবে সমপরিমাণে। সেগুলি হ’ল-ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, সালফার ও আয়রণ। আরও আটটি পদার্থ পাওয়া যায় স্বল্পপরিমাণে। তাহ’ল: সিলিকন, মোলিবডেনাম,ফ্লুরাইন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন,কপার ও যিংক। কিন্তু এই সব উপাদানসংমিশ্রিত করে জীবনেরকণা তথা ‘প্রোটোপ্লাজম’ তৈরী করা সম্ভব নয়। 

জনৈক বিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এসব মৌল উপাদান সংমিশ্রিত করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাতে কোন জীবনের ‘কণা’ পরিলক্ষিত হয়নি। এই সংমিশ্রণ ও তাতে জীবন সঞ্চার আল্লাহ ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বিজ্ঞান এক্ষেত্রে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মাটি থেকে সরাসরি আদমকে অতঃপর আদম থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করার পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ আদম সন্তানদের মাধ্যমে বনু আদমের বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছেন। এখানেও রয়েছে সাতটি স্তর। যেমনঃ মৃত্তিকার সারাংশ তথা প্রোটোপ্লাজম, বীর্য বা শুক্রকীট, জমাট রক্ত, মাংসপিন্ড,অস্থি মজ্জা, অস্থি পরিবেষ্টনকারী মাংস এবং সবশেষে রূহ সঞ্চারণ (মুমিনূন ২৩/১২-১৪;মুমিন ৪০/৬৭; ফুরক্বান ২৫/৪৪; তারেক্ব ৮৬/৫-৭)। স্বামীর শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে রক্ষিত ডিম্বকোষে প্রবেশ করার পর উভয়ের সংমিশ্রিত বীর্যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে (দাহর ৭৬/২)। উল্লেখ্য যে, পুরুষের একবার নির্গত লম্ফমান বীর্যে লক্ষ-কোটি শুক্রাণু থাকে। আল্লাহর হুকুমে তন্মধ্যকার একটি মাত্র শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করে। এই শুক্রকীট পুরুষ ক্রোমোজম Y অথবা স্ত্রী ক্রোমোজম X হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেটি স্ত্রীর ডিম্বের X ক্রোমোজমের সাথে মিলিত হয়, সেভাবেই পুত্র বা কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আল্লাহর হুকুমে। 

মাতৃগর্ভের তিন তিনটি গাঢ় অন্ধকার পর্দার অন্তরালে এই ভাবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বেড়ে ওঠা প্রথমতঃ একটি পূর্ণ জীবনসত্তার সৃষ্টি, অতঃপর একটি জীবন্ত প্রাণবন্ত ও প্রতিভাবান শিশু হিসাবে দুনিয়াতে ভূমিষ্ট হওয়া কতই না বিষ্ময়কর ব্যাপার। কোন মানুষের পক্ষে এই অনন্য-অকল্পনীয় সৃষ্টি কর্ম আদৌ সম্ভব কী? 

মাতৃগর্ভের ঐ অন্ধকার গৃহে মানব শিশু সৃষ্টির সেই মহান কারিগর কে? কে সেই মহান আর্কিটেক্ট, যিনি ঐ গোপন কুঠরীতে পিতার ২৩টি ক্রোমোজম ও মাতার ২৩টি ক্রোমোজম একত্রিত করে সংমিশ্রিত বীর্য প্রস্ত্তুত করেন? কে সেই মহান শিল্পী, যিনি রক্তপিন্ড আকারের জীবন টুকরাটিকে মাতৃগর্ভে পুষ্ট করেন?  অতঃপর ১২০ দিন পরে তাতে রূহ সঞ্চার করে তাকে জীবন্ত মানব শিশুতে পরিণত করেন এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেন (আবাসা ৮০/১৮-২০)। 

বাপ-মায়ের স্বপ্নের ফসল হিসাবে নয়নের পুত্তলি হিসাবে? মায়ের গর্ভে মানুষ তৈরীর সেই বিষ্ময়কর যন্ত্রের দক্ষ কারিগর ও সেই মহান শিল্পী আর কেউ নন, তিনি আল্লাহ! সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি ,সুবহানাল্লাহিল আযীম!! পুরুষ ও নারীর সংমিশ্রিত বীর্যে সন্তানজন্ম লাভের তথ্য কুরআনই সর্বপ্রথম উপস্থাপন করেছে (দাহর ৭৬/২)। আধুনিক বিজ্ঞান এতথ্য জনতে পেরেছে মাত্র গত শতাব্দীতে ১৮৭৫ সালে ও ১৯১২ সালে। তার পূর্বে এরিষ্টটল সহ সকল বিজ্ঞানীর ধারণা ছিল যে, পুরুষের বীর্যের কোন কার্যকারিতা নেই। 

রাসূলের হাদীছ বিজ্ঞানীদের এই মতকে সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করেছে। কেননা সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সন্তান প্রজননে পুরুষ ও নারী উভয়ের বীর্য সমানভাবে কার্যকর। উল্লেখ্য যে, মাতৃ গর্ভে বীর্য প্রথম ৬ দিন কেবল বুদ্ বুদ আকারে থাকে। তারপর জরায়ুতে সম্পর্কিত হয়। তিন মাসের আগে ছেলে বা মেয়ে সন্তান চিহ্নিত হয় না। চার মাস পর রূহ সঞ্চারিত হয়ে বাচ্চা নড়ে চড়ে ওঠে ও আঙ্গুল চুষতে থাকে। যাতে ভূমিষ্ট হওয়ার পরে মায়ের স্তন চুষতে অসুবিধা না হয়। এ সময় তার কপালে চারটি বস্ত্তু লিখে দেওয়া হয়। তার আজাল (হায়াত),আমল, রিযিক এবং সে ভাগ্যবান না দুর্ভাগা। এভাবেই জগত সংসারে মানব বংশ বৃদ্ধিরধারা এগিয়ে চলেছে। এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই কেবল আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। একারণেই আল্লাহ অহংকারী মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ " মানুষ কি দেখেনা যে,আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অতঃপর সে হয়ে গেল প্রকাশ্যে বিতন্ডাকারী’। ‘সে আমাদের সম্পর্কে নানারূপ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে। অথচ সে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে ভুলে যায়, আর বলে যে  কে জীবিত করবে এসব হাড় গোড়সমূহকে, যখন সেগুলো পচে গলে যাবে। - ইয়াসীন ৩৬/৭৭-৭৮

আত্মদর্শন কি?


 

















দর্শন শাস্ত্রে এবং সুফিবাদে আত্মদর্শন নিয়ে অনেক কথাই লেখা রয়েছে। এমনকি হিন্দুদের সনাতন ধর্মে, গৌতম বুদ্ধের শাস্ত্রে আত্মদর্শন নিয়ে অনেক কথাই লেখা হয়েছে। হটাৎ করে কেউ এত শাস্ত্র পড়তে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রথমে আসি আমার আত্মদর্শন হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নে। 
অনেকেই জানতে চান আত্মদর্শন কি এবং সেটা কিভাবে হয়? আপনার আত্মদর্শন হয়েছে কিনা?

আমার দর্শন নিয়ে কিছু বলা হতে বিরত থাকলাম। তবে আত্মদর্শন নিয়ে আমি সহজ ভাবে আল কোরআনের দৃষ্টিতে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি-

আত্মদর্শন হলঃ নিজেকে দর্শন এবং নিজের মধ্যে রুহের মানবীয় দর্শন। আত্মদর্শনের জন্য নফস (প্রান), রুহ (আত্মা), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময়ের (স্রষ্টার) মধ্যে সম্পর্ক ও ক্রিয়াকলাপ জানা এবং নিজের মধ্যে অনুধাবন করা জরুরী। তারপর মালিকের কৃপা হলে একদিন হয়ত ইলহাম, ইলকান, কাশফ বা স্বপ্নের মাধ্যমে আপনি আপনাকে দেখতে পাবেন। নফস (প্রান), রুহ (আত্মা), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময় (স্র্রষ্টা) এই চারটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আল কোরআনে এ বিষয় গুলো নিয়ে অনেক কথা থাকলেও তার থেকে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি।

আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-

আয়াতঃ ওয়া নাফাখতু ফীহি মির রুহী ।
অর্থঃ এবং সেটার মধ্যে(মানবকৃতিতে) আমার হইতে রুহ ফুতকার করে দেই । [সূরা হাজর, আয়াত-২৯]

আয়াতঃ "ওয়া ফি আনফুসিকুম; আফালা তুবসিরুন । 
অর্থ- আমি তো তোমাদের নফসের সাথেই মিশে আছি। তোমরা আমাকে দেখ না কেন ? [সূরা যারিয়াত, আয়াত-২১]

এই দুই আয়াত হতে জানতে পারলাম আল্লাহ কে জানতে ও চিনতে হলে নিজের নফস (প্রান) এবং রুহ সম্পর্কে জানা জরুরী।
আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-

আয়াতঃ "ওয়াসিয়া কুরসিয়্যূহুস (তার সিংহাসন) সামওয়াতি ওয়াল আরদ্ব; ওয়া-লা ইয়াউদু-হু হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল (উচ্চ,উর্ধ্ব) আজিম (মহান,আজমত)।"
অর্থঃ তার সিংহাসন আকাশসমুহ এবং জমিন ব্যাপী বিস্তৃত । এবং না তার কোন অবসাদ আছে উভয়েরই সংরক্ষণে এবং তিনিই সুউচ্চ মহান। [সুরা বাকারা, আয়াত-২৫৫]

আয়াতঃ "ওয়া লিল্লাহিল মাশরিকূ (পূর্ব)ওয়াল মাগরিবু (পশ্চিম) ফাআইনামা তুওয়াললু ফাসামমা ওয়াজহুল্লাহ (আল্লাহর চেহারা)। ইন্না-ল্লাহা ওয়াসিউন (সকল দিকেই অবস্থিত। সর্বব্যাপী। সকল দিকে বিস্তৃত,পরিব্যাপ্ত ) আলীম ( জ্ঞানী, সবকিছু জানেন )।
অর্থঃ এবং পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফেরাও সুতরাং সেখানেই আল্লাহর চেহারা।নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল দিকেই বিস্তৃত, সবকিছু জানেন । [সুরা বাকারা, আয়াত-১১৫]

আয়াতঃ "সিবগাতাল্লাহ  ওয়া মান আহসানূ (সুন্দরতম,উতকৃষ্ট) মিনা-ল্লাহি সিবতাগাতাঁও ওয়া নাহনূ (আমরা) লাহূ আবিদূন।
অর্থঃ আল্লাহর রং এবং কে আল্লাহর চাইতে রংয়ে উত্তম? এবং আমরা তারই জন্য ইবাদতকারী। [সুরা বাকারা, আয়াত-১৩৮]

আয়াতঃ "সানুরিহিম আয়াতিনা ফিল আফাক্বি ওয়া ফি আনফুসিহিম হাত্তা ইয়াতাবাইয়্যানা লাহুম আন্নাহুল হাক্ক; আওয়ালাম ইয়াকফি বিরাব্বিকা আন্নাহু আলা কুল্লি শায়ইন শাহিদ। আলা ইন্নাহুম ফি মিরইয়াতিম মিললিক্বায়ে রাব্বিহিম। আলা ইন্নাহু বিকুল্লি শায়ইম মুহিত।

অর্থঃ আমি তাদের জন্য প্রকাশ করবো, আমার নিদর্শনসমুহ (চিহ্নসমুহ) সমগ্র বিশ্বজগতে এবং তাদের মধ্যে(নফসের মধ্যে), যতক্ষণ না সুস্পষ্টভাবে তাদের নিকট প্রকাশ হয় যে, নিশ্চ য় তা সত্য। ইহাই কি তোমাদের প্রভুর জন্য যথেষ্ট নয় যে, নিশ্চ য়ই তিনি সবকিছু/সববস্তুর উপর সাক্ষী।

জেনে রাখ! নিশ্চ য়ই তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের (দর্শনের) ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করে। সাবধান (জেনে রাখ)! নিশ্চ য়ই তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (সুরা হামীম সেজদাহ,আয়াত- ৫৩,৫৪)

এই আয়াত গুলো হতে জানতে পারলাম আল্লাহ কে জানতে ও চিনতে হলে নিজের নফস(প্রাণ), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময় (স্র্রষ্টা) সম্পর্কে জানা জরুরি।

সুতরাং মহান রাব্বুল আলামিন কে নিজের মধ্যে জানতে ও অনুধাবন করতে নফস [প্রাণ],  রুহ [আত্মা] , বিশ্ব [প্রকৃতি,সৃষ্টি] ও বিশ্বময় [স্র্রষ্টা] এই চারটি বিষয় সম্পর্কে জানা জুরুরি। এ বিষয় গুলো জেনে ও অনুধাবন করে যে সিবগাতাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রং বা স্বভাবে রঞ্জিত হতে পারেন, তার মধ্যে রুহ জাগ্রত হয় বা রুহ নাযিল হয়। 

মালিকের কৃপায় রুহ কারো উপর জাগ্রত হলে সাধক রুহের মানবীয় দর্শন পেয়ে যান যা ''বাশারান সাবিইয়া তথা পরিপুর্ন মানবকারে দেখা যায়। 

আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ
ফাত্তাখাযাত মিন দুনিহিম হিজাবান;ফাআরসালনা ইলাইহা রুহানা ফাতামাসসালা লাহা বাশারান সাবিইয়া।

অর্থঃ যখন তিনি (মরিয়ম) মানুষ হতে পর্দা গ্রহন করলেন,তারপর তার প্রতি আমরা আমাদের রুহ প্রেরণ করলাম। উহা তার (মরিয়মের) সামনে পুর্ণ মানব রুপে আত্মপ্রকাশ করলো। [সুরা মরিয়ম, আয়াত-১৭]

ক্বালাত ইন্নী আউযু বিররাহমানি মিনকা ইন কুনতা তাক্বিয়া।
অর্থঃ মরিয়ম বললেন, আমি তোমার হইতে রহমানের নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যদি তোমার মধ্যে খোদার ভয় থাকে।
 
ক্বালা ইন্নামা আনা রাসুলু রাব্বিকি; লিআহাবা লাকি গুলা মান যাকিয়া।
অর্থঃ তিনি (রুহ) বললেন, নিশ্চ য়ই আমি তোমার রবের প্রেরিত [একজন রাসুল]।  আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র প্রদান করিব।
[সুরা মরিয়ম, আয়াত- ১৮-১৯]

এ আয়াতগুলোর একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। মরিয়ম যখন মানুষ হতে পর্দা অর্থাৎ নির্জনে দুনিয়ারি হতে খোদার ধ্যানে মশগুল হলেন তখন তার উপর রুহ নাযিল হলো পুর্ণমানবাকারে। রব হতে রুহ যখন পুর্ণ মানবাকারে হযরত মরিয়মের কাছে প্রকাশ হলো তখন মরিয়ম তাকে দেখিয়া ভয় পান। কেননা রুহ তার নিকটে পুরুষের আকৃতি/রুপে এসেছিলেন। এ নির্জনে পুরুষ দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। রুহ যখন মরিয়মকে অভয় দিল যে আমি তোমার রবের নিকট হতে প্রেরিত একজন রাসুল। আমি তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দেওয়ার জন্য এসেছি। মরিয়ম তার কথায় আশ্বস্ত হলে তিনি মরিয়মকে একটি সন্তান দান করেন।

এই রুহ যে সাধকের উপর যখন নাযিল হয় সেটাই তার জন্য শবে কদর এবং মেরাজ। রুহ যে কোন রুপ ধারন করতে পারে তবে মানবরুপই তার সত্যিকার ও আসলরুপ। রুহ যার উপর নাযিল হয়, সে সাধারন মানব নহে। সে আল্লাহর আকৃতির মানব। এজন্য হাদিসে বলা হয়েছেঃ "নিশ্চ য়ই আল্লাহ আদমকে তার নিজ আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। যার উপর রুহ নাযিল হয়, সে আদম অর্থাৎ আল্লাহর প্রকৃতি (স্বভাব) এবং আকৃতি (সুরত) তার উপর মুর্তিমান হয়। 
সুতরাং যে নিজেকে চিনতে পেরেছেন তার উপর রুহ নাযিল হয়েছে।  সে সৃষ্টি ও স্র্রষ্টার পরিচয় লাভ করতে পারে। ওয়াস সালাম। শান্তি।

বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

আল্লাহকে কি চর্ম চক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব ?

প্রশ্নঃআল্লাহকে কি চর্ম চক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব ?

উত্তরঃ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ সমূহ হতে বোঝা যায় যে ,মহান আল্লাহকে কখনও চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয় ।
কারন চক্ষু শুধু বস্তু বা বস্তুর কিছু প্রকৃতিকে অবলোকন করতে পারে । তাই যা বস্তু নয় এবং বস্তুর প্রকৃতিও ধারণ করে না তা কখনই চক্ষু দ্বারা দেখা যায় না ।

অন্যভাবে বলা যায় যে , যদি কোন কিছু দর্শনীয় হয় তাহলে অবশ্যই তার বস্তুপ্রকৃতি রয়েছে অর্থাৎ তা স্থান , কাল ও পাত্রের অধীন ।

কিন্ত মহান আল্লাহ্ এ সবের বহু ঊর্ধ্বে ।

তিনি অসীম এক অস্তিত্ব । তিনি সকল বস্তুর ঊর্ধ্বে । কারন বস্তু জগতের সকল কিছু সীমিত ।
ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) এর এক শিষ্য মুয়াবিয়া ইবনে ওয়াহাব তাঁকে (ইমাম সাদেক (আঃ) কে) প্রশ্ন করেন ,
“ হে রাসূলের সন্তান ! রাসূল (সাঃ) আল্লাহকে দেখেছেন - এ সম্পর্কিত হাদীস সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? কিভাবে মহানবী (সাঃ) আল্লাহকে দেখেছেন ? ”

ইমাম সাদেক (আঃ) বললেন ,“ হে মুয়াবিয়া ইবনে ওয়াহাব ! বিষয়টি কতটা দৃষ্টিকটু যে , মানুষ সত্তর-আশি বছর আল্লাহর রাজত্বে তাঁর নিয়ামত ভোগ করে তাঁকে সঠিকভাবে চেনে না !

হে মুয়াবিয়া ! মহানবী (সাঃ) কখনও এই চর্মচক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখেন নি ।
দর্শন দু’ভাবে হতে পারে -
অন্তর্চক্ষু ও বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা ।
যদি কেউ বলে রাসূল (সাঃ) অন্তর্চক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখেছেন , তাহলে সে সত্য বলেছে ।
আর যদি কেউ বলে রাসুল (সাঃ) বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখেছেন , তাহলে সে ডাঁহা মিথ্যা বলেছে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ।

কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন , যদি কেউ আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সদৃশ মনে করে তাহলে সে কাফের ।
মহান আল্লাহ্ বলেছেন -
ليس كمثله شيء
" --- কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় ----।”
সূরা - শুরা / ১১ ।

অন্য এক রেওয়ায়েতে ইসমাঈল ইবনে ফযল হতে বর্ণিত হয়েছে ,
তিনি বলেন ,
আমি ইমাম সাদেক (আঃ) কে প্রশ্ন করলাম , আল্লাহকে কি কিয়ামতের দিন দেখা যাবে ?”
ইমাম (আঃ) বললেন , “ সুবহানাল্লাহ্ ! তিনি এ সব হতে পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে । কারন চক্ষুসমূহ ঐ বস্তুসমূহকে দেখতে পায় যার রং ও প্রকৃতি রয়েছে । আল্লাহ্ স্বয়ং নিজে রং ও প্রকৃতি সমূহের স্র্রষ্টা ।”
বর্তমানে আমরা জানি পদার্থকে এর শোষিত রংয়ের কারণে দেখা যায় । যা কিছু রং ধারণ করে না তা দেখাও যায় না । তাই কিয়ামত দিবসে আল্লাহকে বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা দেখার বিষয়টি অসঙ্গত এবং সম্পূর্ন ভুল একটি ধারনা ।

উত্তরটি দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ্ নাসের মাকারেম সিরাজী ।

রবিবার, ২০ মে, ২০১৮

মূর্তিপূজা এবং কলিযুগের সাকার উপাসনা

উপাসনা বা পূজা সাকার নিরাকার উভয়ই হতে পারে।উপাসনার মূল উদ্দেশ্য সান্নিধ্য লাভ না মুক্তি।গীতাতেও ভগবান শ্রীবিষ্ণু তিনটি পথের কথা বলেছেন-কর্মযোগ,জ্ঞানযোগ এবং ভক্তিযোগ। তিনটি পথেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব।তবে এই তিনের মধ্যে কর্মযোগ ও ভক্তিযোগ সাকার উপাসনামূলক।শুধুমাত্র জ্ঞানযোগেই নিরাকার উপাসনার সমর্থক।

সাকার উপাসনার একটি মাত্র সূত্র-তা হল,চঞ্চল মনকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কেন্দ্রিভূত করা।মন এত চঞ্চল যে একে অচঞ্চল করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।গুরুকৃপা নিজের ঐকান্তিকতা, অভ্যাস প্রভৃতি প্রয়োজন মনকে অচঞ্চল করার জন্য।

যুধিষ্ঠিরকে ধর্মরাজ বক প্রশ্ন করেছিলেন- সবচেয়ে দ্রুতগামী কি?যুধিষ্ঠির উত্তর দিয়েছিলেন-"মন"। চঞ্চল মন স্থির হলে দৃষ্টি স্থির হয়,দৃষ্টি স্থির হলেই লক্ষ্য অচঞ্চল হয়।এগুলো অভ্যস্ত করার নামই উপাসনা।


মনকে অচঞ্চল করার একটি সহজ উপায় ঋষিগণ বের করেছেন-তা হলো চোখের মধ্যে কোন বস্তুর ছবি ফেলা। ছবিটি একবার চোখে পড়লে ঐ ছবি যদি চোখের সামনে নাও থাকে,তাহলেও মনে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। এভাবেই মানুষ অতীতের স্মৃতিচারন করতে পারে। অনেক সময়ই দেখা যায় মানুষ এরূপ স্মৃতিচারণে পারিপার্শ্বিকতাও ভুলে যায়। তাতে বোঝা যায় যে,অতীতের ছবি তার মনকে আবিষ্ট করে অচঞ্চল করেছে।

মনুষ্য জন্মের উদ্দেশ্য ঈশ্বর লাভ। তা করতে হলে ঈশ্বরীয় গুণের অধিকারী হতে হবে। ঈশ্বরের অনন্ত গুণ। এর সবই অর্জন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়,তা সত্তেও কিছু গুণ অর্জন সম্ভব বলেই আর্য ঋষিগণ ঈশ্বরীয় গুণের প্রতীক দেবতা বা দেব-দেবীর রূপ কল্পনা করেছেন। এই মূর্তিগুলো হলো ঈশ্বরের গুণের প্রতীক।

একটি দেশকে বোঝাতে আমরা যেমন সেই দেশের পতাকাকে ইঙ্গিত করি, সেইরূপ দেব-দেবীকে দেখলে ঈশ্বরের গুণকে বুঝতে পারি।


আচার্য রামানুজ শঙ্করের অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী হয়েও মূর্তিপূজা করতেন। মূর্তিপূজা দ্বৈতবাদের কথা। পরবর্তিকালে তিনি বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ মত প্রচার করেন।
একদিন তিনি পূজায় বসেছেন এমন সময় একজন শিষ্য তার কাছে এসে বসলেন।
আচার্য তাকে দেখে বললেনঃ আগুন আনো।
শিষ্য দৌড়ে গিয়ে একটি পাত্রে আগুন নিয়ে এলেন। তা দেখে আচার্য বললেনঃ
"দগ্ধ অঙ্গার কেন এনেছো? আগুন আনো।"
শিষ্য আবার দৌড়ে গিয়ে একটি জ্বলন্ত লাকড়ি নিয়ে এলেন। তা দেখে আচার্য আবার বললেনঃ
"প্রজ্জলিত কাষ্ঠ কেন এনেছো? আগুন আনো।"
শিষ্য এবার হতবাক। আচার্য একবার বলছেনঃ "দগ্ধ অঙ্গার" আবার বললেন "প্রজ্জ্বলিত কাষ্ঠ"। তাহলে আগুন কি করে আনব? শিষ্যের এমন অবস্থা দেখে আচার্য এগিয়ে এলেনঃ আগুন পৃথিবীর সর্বত্র আছে। কিন্তু তাকে দিয়ে যদি আমার কোন কাজ করতে হয়, তাহলে তাকে বসার আসন দিতে হবে। কাষ্ঠ হলো আগুনের বসার আসন। ঠিক একই ভাবে, ঈশ্বর পৃথিবীর সর্বত্র আছেন। তাকে দিয়ে আমার কোন কাজ করাতে হলে অর্থাৎ তার গুণাবলি আমার ভিতর সমাহিত করতে হলে তাকে বসার আসন দিতে হবে। হৃদয় মাঝে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান করাতে হবে। এইসব মূর্তিই ঈশ্বরের বসার আসন।


[সৌজন্যেঃ সনাতন সন্দেশ]

প্রতিমা পূজা কি?
-----------------
অস্থির চিত্তকে স্থিরাবিস্থায় আনয়নই উপাসনার প্রধান ও প্রথম অঙ্গ। কিন্তু মন স্থির করতে হলে স্থির বস্তুর ধ্যান আবশ্যক,চঞ্চল বস্তুতে মন স্থির হয় না। তাই প্রতিমা বা প্রস্তর খন্ডকে ধ্যানের আশ্রয় বস্তু হিসেবে গ্রহন করা হয়।

চার প্রকার ভাব অবলম্বন করে সাধকগণ চার শ্রেণির সাধন ভাবে ঈশ্বরে মন স্থাপন করেন অর্থাৎ ঈশ্বর আরাধনা করেন।
যথা-

১. বৈষ্ণবভাবঃ তুমি সুখে থাক,যত দুঃখ যন্ত্রণা আমার উপর দিয়ে( সাধকের) বয়ে যাক।

২. শাক্তভাবঃ তুমি সুখে বা দুঃখে থাক আমি জানি না।যেমন করে হোক আমাকে সুখী কর। সন্তান যেমন মায়ের কাছে আবদার করে।

৩. ব্রহ্মজ্ঞানীভাবঃ যার সর্বভূতে ভগবান বোধ হয়েছে,সে বলে-তোমাকে কি দিব? যা দেখি সকলই তুমি।পূজার উপকরণ ফুল,জল চন্দন,নৈবদ্য যা কিছু সবই তুমি।সুতরাং তোমাকে দেবার কিছু নাই। আমিই তুমি,তুমিই আমি।

৪. শিশুভাবঃ শিশু যেমন মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে,মাও শিশুকে কোলে করে আছেন,কখনই শিশু মার কোল ছাড়া হতে ইচ্ছুক নয় অর্থাৎ সাধক সর্বদাই ঈশ্বরে স্থিত থাকতে চান। শিশু রোগ শয্যায় যেমন মা মা বলে কাদে সাধকের অবস্থাও তেমন।


 শ্রী গণেশঃ
-----------
সমাজের উচুনিচু ধনী দরিদ্র সকলের শক্তিকে সমন্বিত করাই সংঘ শক্তি। ধনী অভিজাত পণ্ডিত শক্তিমান নাগরিকের সাথে দরিদ্র অবনত,মূর্খ,দুর্বল ব্যক্তিদের ঐক্য সাধনাই জাতীয় সংহতি। সিদ্ধিদাতা গণেশ তাই সর্বাপেক্ষা বৃহৎজীব হস্তীর মুখ ও অতিশয় ক্ষুদ্র ও উপেক্ষিত মুষিককে গ্রহন করেছেন নিজদেহে ও বাহন রূপে।

গজ অর্থ এখানে হাতি বা বন্যজন্তু নয় শুধু প্রতীকের সাহায্যে শব্দ উচ্চারন করে ব্রহ্মবিদ্যা অধ্যয়ন করা।
গ+জ=গজ।
গ অর্থে গতি
জ অর্থে জন্মের উৎসভূমি প্রকৃতিরূপা মায়াময় এই পৃথিবী।
মুণ্ড অর্থ এখানে ম+উ+ণ্ড=মুণ্ড। ম অর্থে ব্রহ্মা এবং হরকেই বোঝানো হয়েছে। ব্রহ্মারূপে সৃজন করেন আর হর না শিবরূপে হরন বা ধ্বংস করেন। জন্ম মৃত্যুর এই যে গতাগতি উ অর্থে স্থিতি।
কিন্তু কোথায় স্থিতি? এই মায়াময় পৃথিবীতে।


গ+জ+ম+উ+ণ্ড=গজমুণ্ড অর্থাৎ জন্মের উৎসভূমিই এ প্রকৃতিরূপা সুন্দর মায়াময় পৃথিবী।

এখানেই জন্ম মৃত্যুর গতাগতি। জন্ম এবং মৃত্যুর যন্ত্রনায় জীবকুল অস্থির। জঠর জ্বালায় জর্জরিত, জরা ব্যাধিতে মুমূর্ষ, শোকতাপে তাপিত আর এজন্যই মানবদেহে গজমুণ্ড সংযোজিত এবং ওই শুণ্ড দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন এই মায়াময় শু+অণ্ড=শুণ্ড।

শুণ্ড অর্থ অতীব সুন্দর আর অণ্ড অর্থ ডিম্ববৎ গোলাকার পৃথিবী।
মায়ামোহ দিয়ে ভরা এ অতীব সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর প্রকৃতি আমাদের আকৃষ্ট করে রেখেছেন। রোগ শোক আমাদের নিত্য সঙ্গী। এই নরক যন্ত্রনা থেকে বাচতে হলে আমাদের সকল অসার বস্তু ত্যাগ করে একত্বে এসে পৌছাতে হবে।

গণেশের দাঁত একটি। গণেশ মুণ্ডে এক দন্ত।
দ+অন্ত=দন্ত। এখানে দ অর্থ আনন্দ আর অন্ত অর্থ অসীম। যেখানে গেলে অপার আনন্দলাভ হয়,তাই এখানে দন্ত। মুষিক যেমন অসার আবর্জনা কেটে পথ পরিষ্কার করে অগ্রসর হয় তদ্রুপ মানুষেরও উচিত প্রকৃতিকে অবলম্বন করে বা স্বীয় চেষ্টায় সংসারের মায়ামোহ অসার বস্তু ত্যাগ করে পথ সুগম করা।

ধ্যান

‘ধ্যৈ চিন্তায়াম্’- অর্থাৎ ( ভ্বাদিগণীয় পরস্মৈপদী) ‘ধ্যৈ’ ধাতুর অর্থ চিন্তা করা । এই ‘ধ্যৈ’ ধাতুর উত্তর ভাবে বা করণে অনট্ ( পানিনির ‘ল্যুট’) প্রত্যয় করে ‘ধ্যান’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। ‘ধ্যায়েতে ইতি ধ্যানম্’ ভাবে, অর্থাৎ ধ্যান মানে চিন্তন বা চিন্তা। যদিও ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হ’ল চিন্তা, রূঢ় অর্থাৎ প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে প্রগাঢ় চিন্তা । আবার ‘ধ্যায়তে অনেন ইতি ধ্যানম’- ( করণে ) – যার দ্বারা , যার সাহায্যে ধ্যান করা যায় অর্থাৎ ধ্যেয় রূপ, গুণ ও চরিতাদিকেও ‘ধ্যান’ বলে । ‘কালীর ধ্যান’, ‘শিবের ধ্যান’ ইত্যাদি প্রচলিত প্রয়োগে ধ্যানের অর্থই হ’ল রূপ বা মূর্তিবিশেষের বর্ণনা , যার সাহায্যে ধ্যান করা হয় । 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদ – সংহিতায় ‘ধ্যান’ শব্দটি নেই। ‘ধ্যয়া’ বলে একটি শব্দ , একবার মাত্রই , সেখানে পাওয়া যায়, সায়নাচার্য যার অর্থ করেছেন ‘ধ্যানেন’। ‘ধ্যা’ শব্দের তৃতীয়ার একবচনে ‘ধ্যয়া’ হয়। সুতরাং ধ্যা ও ধ্যান একার্থক । পরবর্তীকালে সংস্কৃত সাহিত্যে এই ‘ধ্যা’ শব্দটি লোপ পেয়ে গেছে এবং তার পরিবর্তে ‘ধ্যান’ শব্দটির বহুলপ্রচার ঘটেছে ।



পাতঞ্জল যোগদর্শনে ধ্যানের সংজ্ঞাসূত্র হচ্ছে- ‘তত্র প্রত্যয়ৈকতানতা ধ্যানম্ (৩/২) । ‘তত্র’ কথাটি থেকে সংজ্ঞাসূত্রটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে না- অব্যবহিত পূর্ব সূত্রের অনুবৃত্তি থেকে যাচ্ছে। সুতরাং আগের সূত্রটির উল্লেখ না করলে এই সূত্রটির উল্লেখ না করলে এই সূত্রটির অর্থ পরিষ্কার হবে না। আগের সূত্রটি হচ্ছে ‘দেশবদ্ধশ্চিত্তস্য ধারণা’ ( ৩/১ )। চিত্তকে বাহ্যদেশে কোন মূর্তিবিশেষে, চন্দ্র, সূর্য, ধ্রুবতারা ইত্যাদিতে, অথবা আভ্যন্তর প্রদেশে, নাভি, মূল, হৃদয়, কণ্ঠকূপ ইত্যাদিতে নিবিষ্ট রাখার নাম ধারণা। ‘তত্র’ অর্থাৎ ঐ ধারণার অবলম্বিত বিষয়টিতে প্রত্যয়ের একতানতার নাম ধ্যান। অর্থাৎ যখন চিত্তে একই চিন্তাস্রোত তৈলধারাবৎ অবিছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়, বিজাতীয় কোনও চিন্তা বাধা সৃষ্টি করে না, তখনই তাকে ধ্যান বলে, সহজ কথায় ধারণা গভীর হলেই হয় ধ্যান ; আর ধ্যান গভীর হলেই হয় সমাধি ।

আচার্য শঙ্কর গীতাভাষ্যে ( ১৩/২৪) লিখেছেন- “ধ্যানং নাম শব্দাদিভ্যো বিষয়েভ্যঃ শোত্রাদীনি করণানি মনসি উপসংহ্রতা মনশ্চ প্রত্যক্ চেতয়িতরি একাগ্রতয়া যৎ চিন্তনং তদ্ ধ্যানম্ । তথা ‘ধ্যায়তীব বকো ধ্যায়তীব পৃথিবী ধ্যায়তীব পর্বতাঃ’ ( ছান্দোগ্য ৭/৬/১ ) ইতি উপমোপাদানাৎ তৈলধারাবৎ সন্ততঃ অবিছিন্ন প্রত্যয়ো ধ্যানম্।” অর্থাৎ শব্দাদি বিষয় থেকে শোত্রাদি ইন্দ্রিয় সমূহকে মনে নিরুদ্ধ করে যে চিন্তা তার নাম ধ্যান। ‘বক যেন ধ্যান করছে পৃথিবী যেন ধ্যান করছে, পর্বতগুলি যেন ধ্যান করছে ( উপনিষদের ) এই সব উপমা থেকে বোঝা যায় যে তৈলধারাবৎ সতত অবিছিন্ন প্রত্যয় বা জ্ঞানবৃত্তিই হচ্ছে ধ্যান।”
( ধ্যান... স্বামী ধ্যানানন্দ )

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮

ই-বুক ডাউনলোড

২) “দাকায়্কুল আকবার” – হুজ্জাতুল ইসলাম এমাম গাজ্জালি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ।
৩) “তাকমীলুল ঈমান” – মূল: মুহাদ্দিস সম্রাট শায়েক আব্দুল হক মুয়াহ্দ্দিস দেওলাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি),পার্শটীকা:আ’লা হজরত ইমাম আহমেদ রেযা খান বেরলাবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ।
৪) “রাহাতুল মুহিব্বিন (প্রেমিকদের শান্তি)” – হজরত খাজা নিজামুদ্দিন আওলিয়া (রহমাতুল্লি আলাইহি) ।
৫) “ইসলাহে মাশায়েক (পীর সাহেবদের সংশোধনী)” – মূল => ইমামে রাব্বানী,শায়খুল ইসলাম,মোজাদ্দেদে জামান আবু নছর সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ; অনুবাদ=> আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী আল-আবেদী (মাদ্দে জিল্লুহুল আলী) ।
৬) “আল্লাহ প্রদত্ত বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহ আলায়হ ওয়াসাল্লাম )’এর ক্ষমতা”–আল্লামা শায়ক খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী ।
৭) “প্রচলিত তাবলীগ জামাতের স্বরূপ উন্মোচন” ।
৮) “মাআরিফে লাদুন্নিয়া” –হজরত শেখ আহমাদ সির্হিন্দী মোজাদ্দেদে আলফেসানি (রাহমাতুল্লাহ) ।
৯) “সুন্নী পরিচয় ও তাবলীগ পরিচয়” ।
১০) মাদারেজুন নবুওয়াত==>১ম পর্বঃ
১১) মাদারেজুন নবুওয়াত==>২য় পর্বঃ
১২) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৩য় পর্বঃ
১৩) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৪র্থ পর্বঃ
১৪) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৫ম পর্বঃ
১৫) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৬ষ্ঠ পর্বঃ
১৬) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৭ম পর্বঃ
১৭) মাদারেজুন নবুওয়াত==>৮ম পর্বঃ
১৮) ইমামে রাব্বানী শায়েক আহমেদ সিরহিন্ধি মোজাদ্দেদে আলফে সানি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আকবরের দীনে এলাহির বিরুদ্ধে রচিত অমর গ্রন্থ “ইসবাতুন নবুওয়াত” ।
১৯) “আল-কওলুল জামিল” – শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেওলবি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) এবং “ফায়্সালায় হাফতে মাস’আলা – হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) [বাংলা ও উর্দু] ।
২০) সিররুল আসরার (মারেফতের নিগুড় রহস্য)- বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রা:) ।
২১) আযানের দোআয় “ওয়ার জুকনা শাফা’আতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ” বলা বৈধ .. ।
২২) “বিদায় হজ’এর খুতবা (বিশ্ব শান্তির আলোকবর্তিকা)” ।
২৩) “হুসনুল মাকসিদ ফি আমালিল মাওলিদ ও ইম্বাউল আজকিয়া বি হায়াতিল আম্বিয়া”–ইমাম জালালউদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর আস-সুযুতি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ।
২৪) “ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ” – মুফতি মুহাম্মদ আলী আকবার ।
২৫) “মীলাদুন্নবী (দ:)”- ড.তাহির-উল-কাদরী ।
২৬) “ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (কোরআন ও হাদিস সমর্থিত এক নুরানী মাহফিল)” – মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ সাফওয়ান নোমানী ও সাইয়েদ মুহাম্মদ নাইমুল ইহসান বারকাতি ।
২৭) “পবিত্র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সংকলন: শায়েক খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী ।
২৮) “মদিনার আলো” – ড.সুফী সাগর শামস ।
২৯) “আন-নেওয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম ফি মাওলিদে সাইয়েদে উলদে আদম” – ইবনে হাজার হাইসামী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) ।
৩০) “আল-মুনকিজু মিনাদ্দালাল বা ভ্রান্তির অপনোদন” – হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ।
৩১) “বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইলমে গাইব” -ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ।
৩২) “হাদীসে কুদসী বা রাসুলের (দঃ) জবানে আল্লাহর বানী” ।