পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাবার ডায়রী-প্রথম পর্ব


এ্যাই ছেলে, এ্যাই... ইউ, ইউ স্ট্যাডআপ...দাঁড়াও বলছি....

মজিদ স্যার হুংন্কার দিয়ে নিশাদের দিকে তাকালো। তারপর ইশারা করে তাকে বেন্ঞ্চ এর উপর উঠে দাঁড়াতে বললো। মজিদ স্যারকে চেনে না এমন ছাত্র এই স্কুলে খুবই কম আছে। মজিদ স্যার খুব বদরাগী মানুষ। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে তিনি বরাবরই ভালো। স্কুুলের লেখা পড়া ঠিক মতো হচ্ছে কি-না, সেটা পরিদর্শন করতে এসে সোবহান সাহেবও মজিদ স্যারের ব্যাপক প্রশংসা করলেন। সেই মজিদ স্যারের ক্লাসে নিশাদের মতো একটা পুছকে ছেলে পড়া শোনা করবে না, তা-কি হয়? তিনি নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-বল কি পড়ানো হচ্ছিল...

-স্যার ভুগোল। 

-তাতো বুঝলাম। কিন্তু ভুগোলের কোন্ অধ্যায়টি পড়ানো হচ্ছিল? সেটা বল্..

নিশাদ আমতা অামতা করে বললোঃ

-উত্তর আমেরিকা...

আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। নিশাদকে দেখলাম একটা ডায়েরী বের করে পড়ছে। স্যার কি পড়াচ্ছে সেই দিকে তার খেয়ালও ছিল না। অথচ কি আশ্চর্য্যের কথা, নিশাদ নির্ভুলভাবে সঠিক উত্তরটা দিতে পারলো...ও কি তাহলে ডায়েরী পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্যারের পড়ার দিকেও মন দিয়েছিল...একসাথে দুইটা....টু ইন ওয়ান...গুড, ভেরী গুড.....মনে মনে বললাম। আমি নিশাদকে মানা করেছিলাম। তুই এখন ওটা পড়িস না। ও আমার কোন বারণই শুনলো না। ও ডায়েরীটা বের করে পড়া চালিয়ে যেতে লাগলো। আর ঠিক সেই সময় স্যার দেখে ফেললেন। ইস্ স্যারটা যে কি? কোন মতেই স্যারের চোখকে ফাঁকি দেয়া যায় না। ঠিকই দেখে ফেলে...
স্যার নিশাদের দিতে তাকিয়ে বললেনঃ

-হুম...তা বাছাধন, তোর হাতে ওটা কি?

-স্যার ডায়েরী...

-ডায়েরী?....

ডায়েরীর কথা শুনে স্যার যেন রীতিমতো ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ভুগোলের বই। কিন্ত্তু ডায়েরী? তিনি বললেনঃ

-এই দিকে নিয়ে আয়...দেখি তুই পড়া বাদ দিয়ে কি ডায়েরী পড়ছিস?
স্যারের তর্জন-গর্জন শুনে নিশাদ ডায়েরীটা হাতে নিয়ে মজিদ স্যাারের দিকে গেল। ক্লাসের সকল ছেলেরা অবাক করা সেই ডায়েরীটা দেখতে পেল। কিন্তু ডায়েরীর মধ্যে কি লেখা আছে...সেটা জানা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ডায়েরীটা কার....তাও জানা সম্ভব হয়নি। কেন সে পড়া বাদ দিয়ে ডায়েরী পড়ছিল...সেটাও রহস্য রয়ে গেল। নিশাদ ভীরু পদক্ষেপে ধীরে ধীরে মজিদ স্যারের দিকে আগাতে লাগলো। পুরো ক্লাসে তখন পিন পতন নীরবতা....এক সময় নিশাদ মজিদ স্যারের কাছে ডায়েরীটা দিল।

ডায়েরীটা হাতে নিয়ে মজিদ স্যার বেশ অবাক হলেন। তিনি পুরো ডায়েরীটা উল্টে পাল্টে দেখলেন। তারপর গম্ভীর হয়ে জিগ্যোস করলেনঃ

-কার ডায়েরী?

-স্যার অামার বাবার ডায়েরী।

-ডায়েরীটা আমার কাছেই থাক। ক্লাস শেষ হলে পাবি। এখন যা....

নিশাদ কিছু না বলে মাথা নিচু করে তার জায়গায় বসে পড়লো। তারপর ভুগোল বই বের করে পাঠ্যসুচীটা দেখতে লাগলো। ক্লাসে কেউ কোন কথা বলছে না...অধিকাংশ ছাত্ররা ধরেই নিয়ে ছিল, আজকে নিশাদের কপালে খারাপিই আছে। কিন্তু সেটা না দেখতে পেয়ে অনেকেই বেশ ঘাবড়ে গেল। তারা লক্ষ্য করলো-মজিদ স্যার নিজেই সেই ডায়েরীটা পড়ছেন। বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়ছেন।

(ক্রমশঃ)

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ক্কালবঃ হৃদয় Heart


ক্বালব সম্বন্ধে হাদিস শরীফেও এ মর্মে উক্তি এসেছে,
আলা ইন্না ফিল জাছাদি মুদগাতুন। ইজা ছালুহাত ছালুহাল জাছাদু কুল্লুহু ওয়া ইজা ফাছাদাত ফাছাদাল জাছাদু কুল্লুহু আলা ওয়া হিয়াল ক্বালব। (বুখারী-৭৩ হাদিস)।
অর্থাৎ"নিশ্চয় নিশ্চয় মানব দেহের ভিতরে এক খন্ড গোশত রয়েছে। যদি ঐ গোশত খন্ড পাক ছাফ হয়ে যায়, তবে তার সারা দেহ মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাক ছাফ হয়ে যায়। আর ঐ গোশত খন্ড যখন নাপাক থাকে তখন তার সম্পূর্ণ দেহটি নাপাক থেকে যায় এবং ঐ গোশত খন্ডের নামই হচ্ছে ক্বালব"।
ক্বালব সম্বন্ধে বোখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, "লা সালাতা ইল্লা বি হুজুরি ক্কালব" অর্থঃ "হুজুরী ক্বালব ছাড়া নামাজ কামেল হবেনা"।
অন্যত্র হাদিস শরীফে এসেছে,
"আশ্বাইতানু জাছিমুন আলা ক্বালবে বানি আদামা ফা ইজা জাকারাল্লাহা খানাছা ওয়া ইজা গাফালা ওয়াছ ওয়াছা। (আল-হাদিস, বুখারী শরীফ)
"বনী আদমের অর্থাৎ মানুষের ক্বালবের উপরে শয়তান সাওয়ার হয়ে ( ক্বালবটিকে জালে মাছ জড়ানোর মত জড়িয়ে) আছে। যখন মানুষ আল্লাহর জেকের( ঐ ক্বালবে) করে শয়তান ভিমরি খেয়ে পড়ে যায়। ( তার ক্বালব জাগ্রত হয়, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আরশও জাগ্রত হয়। তার নামাজে মাওলার সাথে দিদার হয়ে যায়। আর যখন ঐ ক্বালবে আল্লাহর জেকের থাকে না, যখন মানুষ গাফেল হয়, শয়তান তাকে ওয়াছওয়াছা ( কুমন্ত্রণা) দিয়ে গুনাহের কাজে লিপ্ত করে দেয়। ( নামাজে মনে নানা কুচিন্তা ভাবনা ঢুকিয়ে নামাজীকে আল্লাহর দিদার থেকে মাহরুম করে রাখে) "।
বলা বাহুল্য ক্বালবই হচ্ছে আল্লাহ্ পাকের আরশ। হাদিস শরীফে অন্যত্র আছেঃ
ছুয়িলা আন্ রাসূলিল্লাহি ( সাঃ) আইনা বাইতাল্লাহি ক্কালা রাসূলুল্লাহি (সাঃ) ফি কুলুবিল মু'মিনিন। ( আল হাদিস)
" রাসূলুল্লাহ্ ( সাঃ) - কে প্রশ্ন করা হয়েছিল আল্লাহর বাড়ী কোথায়? অর্থাৎ তিনি কোথায় থাকেন? তিনি উত্তর দিলেন, মোমিনের ক্বালবের ভিতরে ( আল্লাহর বাড়ী)" এ মর্মে আল্লাহ্ পাকও ফরমায়েছেন-
ওয়াফি- আনফুছিকুম আফালা তুবছিরুন। ( আল- কোরআন, সূরা জারিয়াত ২১)
অর্থাৎ" আমি তোমার আনফাসের ভিতরে আছি ( সিনার মধ্যে) কেন তুমি আমাকে দেখ না?"
দেহের ভিতরে আনফাছ তো বিরাট স্থান, আল্লাহ্ ঠিক কোথায় আছেন, কে আপনাকে চিনিয়ে দিবে? আল্লাহ্ পাক কোথায় আছেন, দেহের ভিতরে সঠিক করে যে জেনেছে, কষ্ট ও রিয়াজাত করে তার নিকট থেকেই সত্য জানতে হবে। এ স্থান যিনি নির্দেশ করে দিতে পারেন, তাকেই পীর বা মোর্শেদ বলা হয়। যিনি, মাবুদের সঠিক সন্ধান কোথায় মিলে (যদিও তিনি মানুষের ভেতর থাকেন) দিতে পারেন, তাকেই পীর বলে। পীর বা ওস্তাদ ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।
হাদিস শরীফে অন্যত্র আছে-
লিকুল্লি শাইয়িন ছিকালাতুন ওয়া ছিকালাতুল ক্কুলুবি জিকরুল্লাহ্। ( আল- হাদিস)
অর্থাৎ" প্রতিটি জিনিস পরিস্কার করার রেত আছে, ক্বালব পরিস্কার করার রেত হচ্ছে আল্লাহর জেকের"।
হাদিস শরীফ শুনতে সহজ সরল কিন্ত আভ্যন্তরীণ মাহাত্ম গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, এটি খুবই একটি কঠিন কাজ।
একটি লোহায় মরিচা ধরলে তার জং পরিস্কার করার জন্য একটি রেতের প্রয়োজন। শুধু ঘষা দিলেই জং ছাফ হয় কিন্ত একটি করাতে জং বা মরিচা ধরলে ক' জনে তা পরিস্কার করে করাতটাকে ধারালো করতে পারে? করাতের মরিচা পরিস্কার করে তাকে ধারালো করতে হলে সোজাসুজি রেতে তা সম্ভব হবেনা। ত্রিকোণ বিশিষ্ট রেত লাগবে এবং তা একজন মিস্ত্রীর নিকট থেকে চালনা শিখতে হবে। ক্বালবটি কি এত সহজ একটি ফালতু লোহার মত হয়ে গেল নাকি যার ভিতর স্বয়ং মাওলা পাক অবস্থান করছেন? ত্রিকোণ বিশিষ্ট রেত যেমন ওস্তাদের নিকট থেকে শিক্ষা না করে চালনা করলে করাতের দাঁত নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ ঈস্পিত ফল লাভ হয়না ঐ রকম আল্লাহর জিকির দিয়ে ক্বালব ছাফ করা শিক্ষা না করে যেন তেন জিকির করলে ক্বালব তথা আল্লাহর আরশ জাগ্রত হয়না। নামাজেও দিদার হয়না। এমন কি ওস্তাদের নিকট থেকে উত্তম রুপে শিক্ষা বিধান না করে যেন তেন করে জেকের করলে মানুষ পাগলও হয়ে যেতে পারে। ভাল জিনিস ভালভাবে পরিচালনা করতে না জানলে তার বিপরীত ফল ঐ ভালর অনুপাতে মন্দের দিকেও ঐ রকম মন্দ হতে পারে। এ মর্মেই একজন হক্কানী খাঁটি পীরের নিকট থেকে ক্বালবের মরিচা পরিস্কার করার কায়দা কানুন উত্তম রুপে শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন পড়ে। এজন্যই আল্লাহ্ পাক বলেন,( ওয়াত্তাবিয়ি) অর্থাৎ সেই মানুষকে পুংখানুপুঙ্খ রুপে অনুসরন কর, মান্য কর। আল্লাহর হুকুমটি কি খেল তামাশা হল নাকি যে মানুষের কাছে যাবার প্রয়োজন হল না। এ মর্মে আরও বলেন-
কু- নু- মাআসসাদিকিন। ( সূরা তাওবাঃ১১৯)
অর্থাৎ" তোমরা একজন সাদিক লোকের সঙ্গে লেগে থাক"।

পুজা

#মুর্তিপুজা বনাম #মানুষপুজা
__________________
#মুর্তিপুজা = মুর্তি + পুজা। মুর্ত মান হয়ে উঠেন যিনি। বস্তুমোহ থেকে যিনি নির্লিপ্ত থেকে রবকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তথা মুর্তমান করতে পেরেছেন, তিনিই জাগ্রত মুর্তি এবং তার পুজাই মুর্তিপুজা। পুজা বলতে ফুল দ্বারা আর্চনা করা বুঝায়।
#মানুষপুজা = মানুষ + পুজা। মানুষ বলতে মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রতচেতনা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিবিশেষ কে বোঝায়, যার ভেতর রয়েছে স্র্রষ্টার রহিম এবং রহমান নামক বিশেষ দুটি গুণের প্রকাশ্যমান বৈশিষ্ট্য। এ ধরণের মানুষকে সদা সর্বদাই সমাজের সাধারণ স্তরের জনগণের জন্য কল্যাণপ্রসুত বিভিন্ন কার্য্যসম্পাদন করতে দেখা যায়। তাদের পুজা হয় জনগণের ভজনা দ্বারা। অর্থাৎ তাদের জয়জয়কার হয় মানুষের মুখে মুখে।
সুতরাং উভয়বিদ পুজা বোধবিহীন মানুষ(?) নামক সাধারণ্যের মাথায় ঢোকে না বলেই তারা সর্বদাই এ শ্রেণীর মানুষকে নিন্দাবাক্যে পর্যভুষিত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে। সমাজে ঐরুপ মহাপুরুষ যতো থাকবে, সমাজ তত মঙ্গলময় এবং কল্যাণপ্রসুত হয়ে উঠে এবং যে সমাজে যত মানুষ(?) নামক সামাজিক জীব থাকবে, সে সমাজ তত উৎশৃংখল এবং অধঃপতনে যাবে।
#স্বপনচিশতী





#খন্ডিত স্বত্ত্বা ও #বিভেদজ্ঞানঃ অনুমাননির্ভরতা ভুল
----------------------------------------------------
একক কোন স্বত্ত্বা যখন তার নিজের স্বত্ত্বাকে খন্ডিত করলেন, তখন সেই খন্ডিত স্বত্ত্বাগুলো কোনটি অত্যাধিক উজ্জ্বল, কোনটি অনধিক উজ্জ্বল আবার কোনটি একেবারেই ম্রিয়মান দেখাতে লাগলো।
তুমি যদি উজ্জ্বল্যপ্রাপ্ত স্বত্ত্বাটিকে স্বীকার কর এবং অনুজ্জ্বল অথবা ম্রিয়মান স্বত্ত্বাটিকে অস্বীকার কর, তাহলে পুর্ণ স্বত্ত্বাটিকেই অস্বীকৃতি জানালে। কেননা ঐ অনুজ্জ্বল স্বত্ত্বাটি বা ম্রিয়মান স্বত্ত্বাটিও ঐ একক স্বত্ত্বাটির একটি খন্ডিত স্বত্ত্বা।
কাজেই তোমার উচিত উভয়কেই মেনে চলা এবং কাউকে অবজ্ঞা না করা। কারণ বিভেদজ্ঞান অজ্ঞানতারই নামান্তর।

#স্বপনচিশতী


#আলোকপোকাঃ
---------------
আলো আঁধারে ঘিরে থাকা বনাঞ্চলে একধরণের পোকা বাস করে যেগুলো আলো দেখলেই ধেয়ে চলে আসে। যতদুরেই রাখা হোক না কেন...আলোর সন্ধান পেলেই তারা ছুটে আসবে এবং কিছু পোকা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মারা যাবে।
তোমার ভেতর যদি সেই আলো থাকে তাহলে তুমি তা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তোমার হৃদয়ালোকের ঐশী তেজে পোকা-মাকড়ের মতো আশেকান ভক্তবৃন্দ তোমারে ঘিরে ধরবে।

#স্বপনচিশতী





বিশ্বাস ও আস্থা
---------------
তুমি যে কোন কিছুতেই বিশ্বাস আনতে পারো আবার নাও আনতে পারো। কিন্ত্তু একবার যদি বিশ্বাস স্থাপন কর, তাহলে সাথে আস্থাটাও অর্জন করিও। কেননা, সহজেই বিশ্বাস স্থাপন করা গেলেও আস্থা সহজেই অর্জন করা যায় না। পরীক্ষিতের যেমন পরীক্ষা দরকার তদ্রুপ বিশ্বাসেরও আস্থা দরকার।।

#স্বপনচিশতী









সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) সঞ্জরী বলেছেনঃ-
"আউসাফে আলী বগুফতেগু মুমকিন নিস্ত,
গুনজায়েশে বহর দর সবু মুমকিন নিস্ত "
বংঙ্গানুবাদঃ আলীর (আঃ) মহিমা ভাষার তুলিতে যায় না কখনো আঁকা,
অসীম সাগর কলসির মাঝে যায় কি কখনো রাখা ?
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রহঃ) তাঁর 'দিউয়ানে শামস তাবরিজ' গ্রন্থে হযরত আলীর (আঃ) তাৎপর্য নির্দেশ করেছেনঃ-
"এটা কুফরি নয়, আমি কাফির নই।যত দিন হতে এই সৃষ্টি আছে,আলী (আঃ) আছেন, যত দিন সৃষ্টি থাকবে,আলী (আঃ) থাকবেন।
"এক রাতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আলীর (আঃ) কাছে কোরআনের তফসির শুনতে আসেন।শুধু সুরা ফাতেহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল দেখে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ এক সুরা ফাতিহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল। বাকি কিতাব তো পড়ে রইল।
মাওলা আলী (আঃ) বললেনঃ কোরআনের মূল সুরা এই ফাতিহা আর সুরা ফাতেহার মূল বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিমের মূল হচ্ছে বিসমিল্লাহ। বিসমিল্লাহর মূল হছে 'বে' হরফ টি।'বে' হরফের মূল হচ্ছে নুকতাটি আর এই নোকতাটি কে জানো?
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না।
আলী (আঃ) বললেনঃ"আনা নুখতাতু আতহাল বায়ে " আমিই 'বে' -এর নিচের এই নুকতা।
মহানবী (সাঃ) বলে গেছেনঃ হে আল্লাহ্‌, আলী যেদিকে ঘুরবে হককে সেদিকে ঘুরিয়ে দিও।আরো বলেছেনঃ মোনাফেক ব্যতীত কেউ আলী বিদ্বেষী হতে পারে না।আলীর সাথে বিদ্বেষ রাখে কি-না, তা দেখে কে মোনাফেক, সাহাবা ও আনসারগণ তা নির্ণয় করতেন।[তিরমিজি ]
হযরত জাবের (রাঃ) বলেনঃ তায়েফ গমনের দিন রসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলীকে (আঃ) ডেকে নিয়ে পরামর্শে বসলেন।এক ঘণ্টা বেশী দেরি হওয়ায় সাহাবীগণ আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে এমন কি লম্বা-চওড়া গোপন পরামর্শ করলেন?
রসুলে খোদা (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ গোপন পরামর্শ আমি করিনি, স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই তাঁর সাথে পরামর্শ করেছেন ।


স্মৃতির ভাব সম্প্রসারণঃমন ও আত্মা
------------------------------------
-তোমার কি মনে আছে সেই দিনটির কথা?
-কোন্ দিনটির কথা,বলোতো?
-ঐযে সেদিন তুমি বলেছিলেঃ
তোমার কেবল তুমি আছো, আছোতো বেশ
আমার কেবল আমি আছি, রাঙ্গিয়েছিতো বেশ।
কিছু তার স্মৃতি, কিছু পাচ্ছি তার রেশ।।

সারসংক্ষেপঃ তোমার আত্মা আর তুমি দুটি কেবল ভিন্ন বিষয়। প্রেম যদি করতেই হয়, তাহলে তোমার নিজের সাথেই করো।ভালো যদি বাসতেই হয়, তো নিজেকেই বাসো। যার সাথে চলছো, ফিরছো, অথচ তার সাথে প্রেম করবে না, ভালোবাসবে না - এটা কেমন কথা?




নিরাকার খোদাঃ মোল্লাবাদ বনাম সুফীবাদ
-------------------------------------------
নিরাকার খোদা অনেকেই বলে থাকেন। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে একটি ধারণা পাওয়া যায়। সেটি হলোঃ নিরাকার=নির+আকার এবং খোদা=খোদ তথা নিজ বা আত্মা। তাহলে নিরাকার খোদা = নির (পানি)+আকার +খোদ তথা আত্মা।
নির বলতে জল বা পানি বোঝায়।
আকার অর্থ যার ওজন আছে, আয়তন আছে এবং যা স্থান বা জায়গা দখল করে অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে যা দৃষ্টিগোচরীভুত হয় এবং স্পর্শ করা যায়,তাকেই আকার বলে।
আত্মা বলতে পন্ঞ্চভুতে তথা ক্ষিতি, অপ, তেজ,মরুৎ এবং ব্যোম - এ পন্ঞ্চ উপাদানে সৃষ্ট দেহরুপকে বোঝায়।

এবার আসি ব্যাখ্যা প্রসংগে। পানির কোন আকার নেই। পানিকে যে পাত্রে রাখা হয়, সেই আকার ধারণ করে। তদ্রুপ নিরাকার খোদা যে দেহে অবস্থান করছে, তা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আকারে দেখছে। পণ্ঞ্চভুতে স্থিত আত্মা বিভিন্ন রংগে প্রকাশ হচ্ছে। যেমনঃ ফর্সা, কালো, শ্যামলা ইত্যাদি। যার ফলে যারা আত্মাকে নিরাকার বলছে মুলতঃ তাদের কাছে এর সঠিকরুপটি ধরা পড়ছে না। বিধায় তারা আকাশের দিকে ইংগিত করে নিরাকার বোঝার চেষ্টা করছে। আর যারা তার স্বরুপকে ধরতে পারছে, তারা তাকে তার প্রেমের সমীকরণে নিয়ে রচনা করছে প্রেমের মহাকাব্য। তারা তাকিয়ে থাকে সেই প্রেমের মানুষটির দিকে, যে তাকে প্রতিনিয়ত ভ্রমন করাচ্ছে দেহ হতে দেহান্তরে।
মোল্লাদের সাখে পার্থক্যটা এখানেই। মোল্লারা যেটা বলে-সেটা তারা বুঝে না।

#স্বপনচিশতী


মনা পাগলার সন্দেশঃ অনুগল্প

স্বাদ ও সাধ্যঃ অন্যচিন্তা
-----------------------
কোন একটি বস্তু চেখে দেখার পর আমরা যে অনুভুতি পাই, সেটাকেই ব্যক্ত করি এক অস্ফূট শব্দের বিকাশে। কেউ বলে উঠে...আহা...কি মজা...কেউ বা বলে অতুলনীয়..ইত্যাদি। আর সাধ্য হলোঃ তোমার আয়ত্ত্বাধীনের মধ্যে সীমার উপস্থিতি।

হৃদয়ের কোমলতাকে স্রষ্টার চাটনি ভেবে চেখে দ্যাখো। তোমার কঠোরতা নির্জীব হয়ে ফুটে উঠবে অতুলনীয় মোহনীয়তায়। স্নিগ্ধতায়। মুগ্ধতায়...সেটা অসাধ্য নয়। সেটা তোমার সাধ্যের মধ্যেই নিহিত।

-স্বপন চিশতী

প্রতিমা নির্মাণঃ অন্যচিন্তা
------------------------
প্রতিমা বলতে সাধারণতঃ আমরা মুর্তিকে বুঝি। কোন একটা রুপকে তার প্রতিরুপে মুর্ত করে গড়ে তোলাই হচ্ছে প্রতিমা নির্মাণ।
তোমার ভেতর যে কোমলতা আছে তা মায়েরই আদলে সৃষ্টি। তার রুপ সৌরভ বিকশিত করে জগতের মাঝে নির্মাণ কর। তাহলেই দেখবে সেই সৃষ্টিটাই হয়ে উঠেছে অপার প্রতিমা।

-স্বপন চিশতী

সাপ ও সাপুড়ের গল্প এবং মনা পাগলার উপলব্ধি
-----------------------------------------------
বাজারের মধ্যে গোল একটা জটলা দেখে মনার মনটা কেমন যেন উসখুস করতে লাগলো। কি ব্যাপার....বাজারের পাশে এত মানুষ জটলা পাকিয়ে কি এমন দেখছে....আবার বিন বাঁশির শব্দ শোনা যাচ্ছে....
মনার বুঝতে বাকী রইলো না যে সেখানে মানুষ জড়ো হয়েছে সাপের খেলা দেখার জন্য। মনা আর দেরী করলো না...সে ভোঁ করে একটা দৌড় দিয়ে ভীড় ঠেলে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সত্যিইতো...একজন সাপুড়ে সাপ খেলা দেখাচ্ছে...সেই সাপুড়ে ঝুলির ভেতর থেকে একটি একটি করে সাপ বের করছে আর বলছেঃ

-এই যে এই সাপটা দেকতাছেন, এইডার নাম অইলো গক্কুর সাপ। বাপরে বাপ...কেমুন ত্যোজ...দেকছেন....অই খাড়া....লরিস না....

সাপটি সাপুড়ের হাতের মধ্যে কেমন যেন একটা কুন্ডলী পাকিয়ে ফনা তুলে রইলো...আর তার লকলকে জীবের অগ্রভাগটি দেখাতে লাগলো।

মনা বেশ কিছুক্ষণ সেই সাপটির দিকে তাকিয়ে থেকে দেখতে পেল সাপটির জিহ্বাটি দুটি ভাগে বিভক্ত....সেটা কিছুক্ষণ পর পর বের করছে আবার ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে.....

....মনার মনে পড়ে গেল পুরোনো দিনের একটা স্মৃতির কথা....

একবার শীতের রাতে চাদোয়ায় ঘেরা একটা ওয়াজের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। সেই ওয়াজের মধ্যে মাওলানা সাহেব বলেছিলঃ
বুঝলেন, মিয়া ভাইরা...আল্লাহয় যখন আদম হাওয়ারে বেহেস্তের মইধ্যে রাকছিল, হেই সময় নাফরমান শয়তান তখন বেহেস্তের বাইরে ঘুর ঘুর করতেছিল...আর ধাঁন্দা খুঁজতে ছিল কেমনে সে বেহেস্তের মইধ্যে ঢুকতে পারে.....অনেক চেষ্টা তদবীর করার পর যখন সে ব্যর্থ হইলো...তখন সে গেল ময়ুরের কাছে। ময়ুর তার কথা শুনে বললোঃ

-ভাই , আমার তো সেই ক্ষমতা নাই। তুমি এক কাজ কর। সাপের কাছে যাও। তার কাছে গেলে সে তোমাকে বেহেস্তের মইধ্যে নিয়া যাইতে পারবো....

শয়তান ময়ুরের কথা শুনে গেল সাপের কাছে...সাপ সব শুনে বললোঃ

-ঠিক আছে। তুমি আমার মুখের মধ্যে ঢুক। তারপর অামি তোমারে বেহেস্তে নিয়া যাইতাছি...শয়তান সাপের মুখের ভেতর ঢুকতেই তাকে নিয়ে বেহেস্তের দিকে যাত্রা শুরু করলো।

দেখলো..বেহেস্তের একটা স্থানে একটি ফুটো রয়েছে। সাপটি সেই ফুটোর মধ্যে প্রবেশ করে বেহেস্তে নিয়ে গেল। তারপর শয়তান আদম হাওয়ারে প্রলোভন দিয়া গন্দম ফল খাইলো। আর সেইথিক্কা সাপের জিহ্বা দুই ভাগ হইয়া গেল। আর ময়ুর যেহেতু সহায়তা করছে...সেই কারণে ময়ুরের সঙ্গমকালীন অবস্থায় পুরুষ ময়ুরের বীর্য স্ত্রী ময়ুরী ভক্ষণ করে থাকে।

মাওলানা সাহেবের শোনা সেই ওয়াজের সাথে মনা যেন আজকে এই সাপুড়ের সাপটিকে দেখে তার কিছুটা মিল পেল। সে বুঝতে পারলো-আসলে এই পুরা গল্পটি রুপক দিয়ে ঢাকা। এখানে সাপ বলতে বুঝিয়েছে পুংলিঙকে আর ময়ুর বলতে বুঝিয়েছে স্ত্রীলিংগকে। আর শয়তান বলতে বুঝানো হয়েছে কুরিপুর তাড়নাকে অর্থাৎ বিষাক্ত কামনা-বাসনাকে।

বিষাক্ত কামনা-বাসনা পুর্ণ পুংলিঙই বিষধর সাপের ন্যায় ফনা তুলে বসে থাকে। আর বেহেস্তর ফুটোর উপমাটা নাইবা টানা হলো।

মনা সাপুড়ের সাপটি দেখছে আর পুরোনো সেই ঘটনা এবং বাস্তবতা উপলব্দি করে খিল খিল করে হাসছে....

[স্বপন চিশতী]


মাছের গল্প ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
-------------------------------
আজ সকালে রহিম সাহেব বাজার থেকে একটি বড়ো বোয়াল মাছ কিনে এনেছেন। মাছটি কিনে এনে তিনি মিতুর হাতে তুলে দিয়ে বললেনঃ

-মাছটি ভালো করে কেটে কুটে বেশ ভুনা ভুনা করে রাঁধবে। আর মাছের টুকরো গুলো বেশ বড়ো বড়ো করে কাটবে। পেট পুরে খাব।

-তাতো বুঝলাম। কিন্ত্তু এতো বড়ো বোয়ালমাছটি কোথা থেকে কিনে আনলে?

-মাওয়া ঘাট থেকে। সকালে গিয়েছিলাম। যেতেই দেখলাম এই বোয়াল মাছটি। কিনে ফেললাম।

মিতু আর রহিম সাহেবের কথোপকথনের সময় তার নয় দশ বছরের মেয়ে অর্থি দৌড়ে এসে মাছটি দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। সে তার ছোট দুই ভাইদেরকেও ডেকে এনে মাছটি দেখাতে লাগলো। তারাও মাছটি দেখে উৎফুল্ল চিত্তে চেঁচামেচি শুরু করে দিল। তাঁদের চেঁচামেচিতে পুরো বাড়িটির পরিবেশ বদলে গেল। রহিম সাহেব বেশ উৎসাহ পেলেন সন্তানদের আনন্দচিত্তে হৈ হুল্লোড়ে। যে প্রভুর হাতে তার জীবন সেই স্রষ্টার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর তিনি তার ঘরে ঢুকে বই পড়ায় মনোযোগ দিলেন। আর মিতু মাছটি কাটার জন্য উঠোনে বসলেন। তার পাশে তার ছেলে-মেয়েরা। বেশ আনন্দ চিত্তেই তারা বসে আছে।

মিতু মাছটির পেটটি যখন কাটলেন তখন দেখতে পেল সেই মাছের পেটে আরেকটি মাছ। সেটা হলো টাকি জাতীয় মাছ। সেটা দেখে তার ছোট ছেলে তাইয়্যু বলে উঠলোঃ

-মাত..

কি মনে করে মিতু টাকি মাছটি হাতে নিয়ে পেটটি টিপে দেখলেন। সেটার মধ্যে কোন কিছু আছে কি-না? কারণ তার ধারণা বোয়াল মাছ হচ্ছে রাক্ষস জাতীয় মাছ। আর টাকি মাছও সেই প্রজাতির মধ্যে পড়ে। সে বেশ অবাক হয়ে দেখতে পেল মাছটির পেটটি কেমন যেন শক্ত শক্ত লাগছে। সে মাছটি কাটতেই দেখতে পেল একটি আংটি। এটি দেখে মিতু ছেলে মানুষের মতো চিৎকার করে তার স্বামী রহিম সাহেবকে ডাকলেন।
-এ্যাই শুনছো...দেখে যাও...কি কান্ড....

রহিম সাহেব তখন তাজকেরাতুল আম্বিয়া পড়ছিলেন। হযরত ইউনুস (আঃ) এর জীবনী গাথা পড়ছিলেন। হযরত ইউনুস (আঃ)-কে প্রথমে একটি মাছ খেয়ে ফেললো। এরপর সেই মাছটিকে আরেকটি মাছে খেয়ে ফেললো। তারপর গভীর জলে চলে গেল..সেই মাছের পেটে ইউনুস নবী মুক্তি পাবার জন্য....

-এ্যাই দেখে যাও না...তাড়াতাড়ি আসো...
মিতু আর তার ছেলে-মেয়েদের চিৎকারে রহিম সাহেব বের হয়ে এলেন। তারপর তিনি জানতে চাইলেন...এতো চিৎকার চেঁচামেচির কারণ কি?

রহিম সাহেব চিৎকার চেঁচামেচির কারণটা জানতে পেরে তিনি নিজেও বেশ উৎসাহ বোধ করলেন। তিনি আংটিটা হাতে নিলেন। দেখলেন..সেটা আংটি নয়...একটা বড়ো বড়শি। অনেকটা আংটির মতো বাঁকানো। সোনালী রংয়ের। সেটা যাই হোক। রহিম সাহেবের তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ে গেল হযরত ইউনুস (আঃ) এর ঘটনাটি। এই আংটির মতোইতো ইউনুস (আঃ) মাছের পেটের মধ্যে পড়েছিলেন। তারপর আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই স্থান থেকে মুক্তি পেলেন। কিন্ত্তু এই গল্পটির মধ্যে কি কিছু শিক্ষনীয় কিছু দর্শন লুকিয়ে আছে? যদি থাকে, সেটা কি? কি এমন দর্শন লুকিয়ে আছে..যা আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত মাছের গল্পটির মাধ্যমে অবতারণা করলেন? রহিম সাহেব কিছু বললেন না। চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলেন। কারো সাথে কোন কথা বললেন না...নীরবে প্রস্থান করলেন। তারপর ভাবতে বসে গেলেন...কি এমন দর্শন লুকিয়ে আছে এই মাছের গল্পটির মধ্যে.....


চাষাবাদ এবং কিছু প্রাসংগিক ভাবনা
------------------------------------
- শোন, তোমাকে একটা গল্প বলি। গল্পটা হলোঃ একটা কৃষককে নিয়ে। যে কেবল চাষাবাদ করে চলে। যার একটুকরো জমি অাছে, সেই জমিতে। কিন্ত্তু সে ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারে না। কারণটা কি?

প্রশ্নটা করে মনা পাগলা তাকালেন মাহিনের দিকে। কিন্ত্তু মাহিন বিষয়টা ঠিক মতো অনুধাবণ করতে পারলো না। সে ভাবলোঃ যিনি কৃষক, তিনিতো চাষাবাদ করার পদ্ধতিটা জেনেই চাষবাস করেন। তাহলে তিনি কেন সঠিক সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না? সত্যিইতো। বেশ অবাক করা প্রশ্ন। সে আবার ভাবতে বসলো...কিন্ত্তু কুল কিনারা করতে পারলো না...একবার মনে হয় সে ধরতে পারছে আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে সেটাতো নাও হতে পারে...এমনি দোদুল্যমান অবস্থায় সে মনার দিকে তাকিয়ে এর উত্তরটা জানতে চাইলো।
মনা হেসে বললোঃ

- এই তোমার ভাববার নমুনা?...সামান্যতেই টাস্ করে কাত হয়ে পরলে?

- না টাস করে পড়ে যাইনি। ভাবছি আমি যেটা বলবো সেটা তোমার মনঃপুত হয় কি-না?

- বুঝেছি...কিন্ত্তু তোমারটা বলবে তো?

-তাহলে শোন। কৃষক বলতে তুমি বুঝিয়েছো একজন সমর্থ্যবান পুরুষকে। আর তার জমি বলতে বুঝিয়েছো তার স্ত্রীকে। আর চাষাবাদ করার যে কথাটি তুমি বলছো সেটা হলো মৈথুনক্রিয়া। মৈথুন ক্রিয়ায় যখন বীজ বপন করার কথা, কৃষকটি সেই সময়ে তার বীজ বপন করলেও জমিনটিতে তখনো কোন পাকা ব্যবষ্থা ছিল না। অর্থাৎ জমিনটা উর্বর হয়নি। কাজেই যে যতই বীজ বপন করুক না কেন, সে ফসল সময় মতো ঘরে তুলতে পারেনি। ঠিক বলেছি কি-না বলো?

মাহিনের উত্তরটা শুনে মনা পাগলা হো হো করে হেসে উঠলো। সেই হাসির রেশ কাটলো মাহিনের আরেকটি প্রশ্নে। সুরা বাকারা অর্থঃ গাভীর অধ্যায়। সুরা অর্থ অধ্যায় বা চাপ্টার আর বাকারা অর্থ গাভী। কাজেই সুরা বাকারার মধ্যেই আছে চাষাবাদের প্রকৃয়া। কিন্ত্তু সেটা কি? যেখানে গাভী দিয়েই গল্পটি শুরু করেছে....



মনা পাগলার অনুধাবণঃ আত্মজাগরণ
-------------------------------------
মনা পাগলা বেশ ভাব গম্ভীর ভাবে বসে আছে। আর ভাবছেঃ "অাইনামা কুমতুম আফফালাহ তুবছিরুন"। আমি তোমার সাথেই আছি অতঃপর তুমি কি দেখছো না?
কি দেখবে সে? দেখার তো কিচ্ছুই নেই। সে বার বার আয়নায় তাকে দেখেছে। কিন্ত্তু সে আয়নায় যাকে দেখছে, সেই কি বলছে ভেতর থেকে "আইনামা কুনতুম আফফালাহ তুবছিরুন"? না-কি অন্য কেউ? যদি অন্য কেউ হয়, তাহলে সেতো তার সাথে সবসময়ই থাকার কথা না। কেন না কোন কোন সময় সে তাকে ছেড়ে চলে যাবে তার গন্তব্যে। তাহলে সে কে? যে তাকে বলছেঃ অাইনামা কুনতুম আফফালাহ তুবছিরুন?
সে বেশ ভাবিত হলো।
তারপর সে নিজে নিজে চিন্তা করলো সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ অাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লাতা খুঁজুহু সিঁনাতাহু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আর্দ্ব। মান যাল্লাযী ইয়াশ ফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহি ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম অমা খালফাহুম অলা ইউহিতুনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা য়া অসি অা কুরসিই য়্যুস সামা আ তি অল আর্দ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা অহুয়াল আলিয়্যুল আযিম। তিনিই আল্লাহ যিনি চিরন্ঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী। তাকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান জমিনে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর। কে আছে যে তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে এবং পশ্চাৎতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তার জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে অক্ষম। তার আসন আকাশ ও জমিনে পরিব্যাপ্ত। ওদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না, তিনি অতি উচ্চ, সুমহান।
মনা চিন্তা করে দেখলো এটাতো আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। সেই আয়াতেই বলা হয়েছে তিনি তন্দ্রা যান না। অর্থাৎ সর্বদাই জাগ্রত থাকেন। কিন্ত্তু মনা এর কোন কুল কিনারা করতে পারলো না। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে গেল। ঘুমাতে যাবার সময় সে বালিশে যখন মাথা রাখলো তখন সে ভালো করে কান পেতে শুনলো একটা শব্দ হচ্ছেঃ ডিবডিব..ডিবডিব...মনা সেই শব্দটার সাথে তাল মিলিয়ে তাকে যে মন্ত্রটা তার গুরু শিক্ষা দিয়েছিল, সেটার সাথে ,মেলাতে চেষ্টা করতে লাগলো....সে দেখলো সেই শব্দটার সাথে তার শেখানো মন্ত্রটির একটা অদ্ভুত মিল পাচ্ছে।
সে আরো অনুধাবণ করলো - যে শব্দটা হচ্ছে,সেটা ক্রমাগতই হচ্ছে..থামছে না....কি মনে করে মনা হটাৎ একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো....পাইছি....পাইছি....তারপর সে ধৈই ধৈই করে নাচতে আরম্ভ করলো......."Hash....Listen what your internal voice says-Rumi(Rh)"


#ময়ুর এবং #কাকঃ পরনিন্দাচর্চ্চার দৃষ্টান্ত
---------------------------------------
এক বনে একটি কাক বাস করত এবং তার জীবন নিয়ে সে মোটামুটি সন্ত্তুষ্ট ছিল ।
একদিন কাকটি উড়তে উড়তে একটি লেকের পারে যায়। সেখানে সে একটি সাদা রাজ হাঁঁসের দেখা পায় । এতে সে মনে ভীষন কষ্ট পায়। আমি কত কালো ! এতে সে নিজেকে অসুখী মনে করে ।

কাক রাজহাঁসকে বলেঃ

-তুমি দেখতে কত সুন্দর। তোমার গায়ের রং কত সাদা। তুমি কি বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ?

রাজ হাঁস চিন্তা করে দুঃখের সাথে উত্তর দেয়ঃ

-নাহ আমার তো মাত্র একটা রং ! আমার মনে হয় তোতাপাখি বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি তার গায়ে দুইটা রং।

লেকের ধারে ঝোপেই ছিল তোতাপাখির বাস। কাক তাকে প্রশ্ন করলঃ

-তোমার কত সুন্দর তোমার গায়ের রং। দুই রংয়ের আলপনায় তোমাকে কত ভাল লাগছে। নিশ্চয় তুমি বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ?

তোতা পাখি হতাশ কন্ঠে বলেঃ

-আমার তো শুধুমাত্র দুটি রং আছে, কিন্ত্তু ময়ুরের একাধিক রং আছে।আমার মনে হয় সেই বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ?

তারপর কাক চিড়িয়াখানা যায় এবং খাঁচায় বন্ধী একটি ময়ুর দেখতে পায়। খাঁচার সামনে শত শত মানুষ ছিল যারা তাকে দেখতে ছিল ।

এক সময় মানুষ গুলো চলে যায়। তখন কাক ময়ুর কাছে যেয়ে প্রশ্ন করেঃ

-"প্রিয় ময়ুর," তুমি এত সুন্দর !!, . প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তোমাকে দেখার জন্য এখানে আসে। অথচ দেখ মানুষ আমাকে দেখলেই, তারা অবিলম্বে আমাকে দূর দুর করে তাড়িয়ে দেয় । আমার মনে হয় তুমিই বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ?

ময়ুর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেঃ

-আমি সবসময় নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখী পাখি মনে করতাম । কিন্ত্তু আমার সৌন্দর্য্যর কারনেই আমি এই চিড়িয়াখানা মধ্যে বন্ধী আছি । আর খাঁচায় বন্ধী থাকা পাখি আর পাখি থাকে না। এটা কি তুমি উপলব্ধি করতে পার?

কাক এবার মনের আনন্দে আকাশে উড়ে চললো আর মনে মনে চিন্তা করলঃ হোক না আমি কাল তাতে কি? আমি যে মনের আনন্দে নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি এর চেয়ে বড় সুখ আর কি হতে পারে।

আমাদের সমস্যাঃ
-----------------
আমরা অন্যদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় তুলনা করি ।
আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন, তার মূল্যায়ন না করে কি পেলাম, না পেলাম, এসব ভেবে কষ্ট পাই ও দুঃখিত হই এবং নিজেদের অসুখী করি।
আমরা যদি এর পরিবর্তে আমার যা আছে তাই নিয়ে এ খুশি থাকি এবং সন্ত্তুষ্ট থাকি তবে আপনিই হবেন বিশ্বের হ্যাপিয়েস্ট ব্যক্তি বা সুখী ব্যক্তি।



#অন্ধঅনুকরণ এবং #অন্ধঅনুস্বরণঃ
--------------------------------------------------------------
একবার একটি কাক ময়ুরের কিছু পালক এবং পুচ্ছ সংগ্রহ করে সেগুলো সে যত্ন করে তার সমগ্র শরীর জুড়ে লাগিয়ে তা ধৈই তা ধৈই করে নাচলে লাগলো। আর বিকট স্বরে গান জুড়ে দিল। তার ঐ কান্ড দেখে তার স্বজাতীয় কাকগুলো তাকে সমালোচনা করে ঠোকর মেরে তাকে তাড়িয়ে দিল।

কাকটি মনের দুঃখে একটি বৃক্ষে একাকীত্বে অবস্থান করে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওমন করে কাঁদতে দেখে তোতার খুব মন খারাপ হলো। সে প্রশ্ন করলোঃ কাক ভাই, ও কাক ভাই? তুমি ওমন করে কাঁদছো কেন?

-তা জেনে তোমার কি লাভ? কাকটি বললো।

-আরে বলো না, শুনি। দেখি তোমাকে কোন উপকার করতে পারি কি-না?

উপকারের কথা শুনে কাকটি তার মনের দুঃখের কথা খুলে বলা শুরু করলো। সে বললোঃ

-তবে শোন আমার দুঃখের কাহিনী। আমি জন্ম থেকেই কালো। আর আমার কন্ঠস্বরও ভালো নয়। তাই আমি কোকিলের কাছ থেকে গান শিখি। কিন্ত্তু আমার কন্ঠস্বরের কোন পরিবর্তন হয় না। তাছাড়া ময়ুরের সৌন্দর্য্য দেখে সেখান থেকেও কিছু পালক কুঁড়িয়ে নিয়ে তাঁদের মতো করে নিজেকে সাজাই। তারপর নাচতে থাকি। কিন্ত্তু আমার গান আর নাচ দেখে আমার স্বজাতীয়রা অামাকে ঠোকর মেরে তাড়িয়ে দেয়। সে দুঃখেই কাঁদছি। একথা বলেই কাকটি আরো জোরে কাঁদতে শুরু করে দিল।
তার কথা শুনে তোতা পাখিটি বিজ্ঞের ভাষায় বললোঃ

-কেঁদো না ভাইয়া। তুমি যেটা করেছো সেটা তোমার প্রকৃত শোভা নয়। তোমার অন্তঃকরণের শোভাই প্রকৃত শোভা। তুমি যা করেছো, সেটা হলো অন্ধ অনুকরণ। অন্ধ অনুকরণ কখনোই প্রকৃত শোভা পরিবর্তন পরিবর্ধন করে না। তা ক্ষণিকের জন্য হাস্যরসের সৃষ্টি করে মাত্র। কিন্ত্তু তুমি যদি তোমার ভেতরের প্রকৃত সৌন্দর্য্যটাকে পরির্বধন করতে,তাহলে সেটা হতো তোমার জন্য যেমন কল্যাণকর,তেমনি তোমার স্বজাতীর জন্য হতো অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। অন্ধঅনুকরণ এবং অন্ধঅনুস্বরণ দুটোই দুঃখের কারণ।

#দৃষ্টি এবং তার #প্রসারতাঃ প্রাসঙ্গিক কথোপকথন
--------------------------------------------------
তোমার দৃষ্টি তোমার থেকে পৃথক নয়। তুমি যা দেখছো বলে মনে করছো আসলে তোমার ভেতর লুকিয়ে থাকা স্বত্ত্বাটি তার থেকেও বেশি দেখছে। কারণ তার দৃষ্টিটা অন্তঃদৃষ্টি।
তুমি যদি অন্তঃকরণ দিয়ে কোন বিষয়কে ভালো ভাবে দ্যাখো, তাহলে দেখতে পাবে সেও তোমাকে দেখছে। সে তোমাকে দেখছে বলেই তুমি তার দৃষ্টির আড়াল নও।
যতদুরেই যাও না কেন, তুমি তার দৃষ্টি সীমা কোন ক্রমেই অতিক্রম করতে পারবে না।
এটা অনতিক্রমিক দুরত্ব।
ধরো তুমি একটি বস্ত্তুর দিকে দৃষ্টি দিয়েছো। সেই বস্ত্তুটির মধ্যে একটি বিশেষ স্থানে তোমার দৃষ্টি আটকে গেল। যতবারই তুমি ঐ বস্তুটির তাকাবে ঠিক ততবার তোমার দৃষ্টি আটকে যাবে সেই বস্তুটির দিকে যেটা তুমি বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলে। কারণটা কি? কারণটা হলোঃ তুমি যা দেখেছিলে তোমার মনের ভেতর যে ঘাপটি মেরে বসে আছে,সেও তাই দেখেছিল।
তাই সে-ই তোমাকে ইংগিত দেবে ঐ বস্তুটির দিকে বার বার তাকানোর জন্য। আর তুমিও তাই করবে তোমার অবচেতন মনের গতিধারায়। এটাই দৃষ্টির প্রসারতা।
অন্তঃদৃষ্টিই মনের প্রসারতা বৃদ্ধির পরিমাপক।


#ভেড়ার পাল এবং #রাখালবালকঃ অনুধ্যান এবং অনুধাবণ
-----------------------------------------------------------
একদিন এক বুজুর্গলোক তাঁর কতিপয় শিষ্য এবং ভক্তবৃন্দ নিয়ে পদদলে ভ্রমণ করতে বের হলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন যে, একটি রাখাল বালক একপাল ভেড়া নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছে তাদের চড়াতে। ঐ বুজুর্গলোকটি আরো দেখতে পেলেন যে, পালের গোদা যে ভেড়াটি সম্মুখ পানে হেঁটে যাচ্ছে, সাথে সাথে ঐ ভেড়ার পালও তাদের পালের গোদাকে অনুসরণ করছে। পালের গোদাটি যেদিকে যাচ্ছে, দলের মধ্যে থাকা অন্যান্য ভেড়াগুলো তাকে অনুসরণ করে সে একই দিকে হাঁটছে। এ দৃশ্য দেখে বুজুর্গলোকটি চিৎকার করে কান্নায় ভেংগে পড়লেন।

তাঁর হটাৎ এরুপ পরিবর্তন দেখে তার সাথীবর্গও আর্শ্চয্য হয়ে গেল এবং কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়লো। কি করবে? ভেবে পাচ্ছে না তারা। কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে ভক্তবৃন্দ এবং শিষ্যরা কান্নারত ঐ বুজুর্গ লোকটির এরুপ হটাৎ কান্নার কারণ কি? তা তারা জানতে চাইলেন।

বুজুর্গলোকটি তাঁর কান্না থামিয়ে ভেড়ার পালের ঐ রাখাল ছেলেটিকে দেখিয়ে বললোঃ

-চেয়ে দ্যাখো ঐ বালকটির দিকে, সে কত নিঃচিন্তে হাঁটছে।

-এটা দেখে কান্নার কি হলো?

-আরে বোকার দল, ঐ রাখাল ছেলেটির পালে যে ভেড়াগুলো আছে, সেগুলো কতো আনুগত্যের সাথে তাদের দলপতিকে অনুসরণ করে হাঁটছে। তার মনিবকে তারা কোন পেরেশানীতে রাখে নাই। তারা জানে তাদের মনিব এবং দলপতি তাদের সাথেই আছেন। কাজেই তারা নিঃচিন্ত।

অথচ দেখো, তোমরা তোমার মালিক (রব-ওয়াফি আনফুসিকুম আফ আ'লা তুবছিরুন) তোমার সাথে আছে জেনেও তোমরা তার নির্দেশিত পথে হাঁটছো না...তিনি যে পথে হাঁটার নির্দেশ তোমাদের দিয়েছেন (ওয়া আতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসুলা, ওয়া উলিল আমরি মিনকুম-আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রসুলের এবং তার প্রতিনিধির ), তোমরা তা অস্বীকার করে তোমরা তোমাদের মতো করেই হাঁটছো। তিনি যাঁদের অনুসরণ করতে বলেছেন,তোমরা তাও করছো না। তোমরা প্রকাশেই মনিবের বিরোধিতা করে তাকে কতো পেরেশানীতে রেখেছো-এ চিন্তাই আমার কান্নার কারণ।
-------------------------
#অনুধ্যান ও #অনুধাবণঃ
-------------------------
যারা নিশ্চিত সত্য জানা সত্বেও প্রকৃত সত্যপথ হতে বিচ্যুত হয়ে তাদের স্বার্খচরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিপথে হাটেঁ, তারা নিশ্চয়ই ঐ ভেড়া হতেও নিকৃষ্ট।

#স্বপন #চিশতী


#সত্যের #বোঝাঃ শাকের উপর আঁটি
--------------------------------------
একজন বামন (ক্ষুদ্রাকৃতির মানব) এবং রোগা পটকা ছেলেকে দেখে ভগবানের খুব মায়া হলো। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেনঃ

-হে বামন, তোমার এই অবস্থা কেন?

-আমার এই অবস্থার জন্য মানুষ দায়ী।

-কিরুপ?

-দ্যাখ, ঈশ্বর যখন আমাকে সৃষ্টি করেছিলেন তখন আমি খর্বাকৃতি ছিলাম না। আমি ছিলাম সুদর্শন। আমার সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়ে আমার নাম রাখা হয়েছিল সত্য। কিন্ত্তু দ্যাখো যখন আমি এই ধরণীতে আসলাম, তখন আশরাফুল মাখলুকাত দাবীদার মানবগণ আমার উপর এমন সব বোঝা চাপাতে লাগলো যে সেইভারে আমি ন্যুয্য এবং শ্রীহীন হয়ে পড়ছি। ক্রমাগত এভাবে বোঝা টানতে টানতে আমি এখন রোগা এবং দুর্বল হয়ে গেছি।
-----------
#সত্যসারঃ
-----------
মেঘ যতই অণ্ধকার করে আকাশকে ঢেকে দেবার চেষ্টা করুক না কেন? বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লে তা আবার ঝলমল করে উঠে। সোনালী সুর্য হেসে উঠে। মিথ্যা যতই বড়ো হোক না কেন, সত্যের কাছে কিছুই নয়।


--------------------------------------
বাজ পাখির গল্প এবং শিক্ষা ও উপদেশ
--------------------------------------
বাজ পাখী প্রায় ৭০ বছর জীবিত থাকে ! কিন্ত্তু ৪০ আসতেই বাজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় !
এ'সময় তার শরীরের তিনটি প্রধান অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে !
১. থাবা (পায়ের নখ) লম্বা ও নরম হয়ে যায়।শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২. ঠোঁটটা সামনের দিকে মুড়ে যায়। ফলে খাবার খুঁটে বা ছিঁড়ে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ডানা ভারী হয়ে যায় এবং বুকের কাছে আটকে যাওয়ার দরুণ উড়াল সীমিত হয়ে পড়ে।
ফলস্বরুপ শিকার খোঁজা, ধরা ও খাওয়া তিনটেই ধীরে ধীরে মুশকিল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কাছে তিনটে পথ খোলা থাকেঃ
১. আত্নহত্যা।
২. শকুনের মত মৃতদেহ খাওয়া।
৩. নিজেকে পুনরাস্থাপিত করা।

নিজেকে পুনরাস্থাপিত করতে বাজ আশ্রয় নেয় উঁচু পাহাড়ে। সেখানে বাসা বাঁধে।
সে প্রথমে তার ঠোঁটটা পাথরে ঠোকর মেরে মেরে ভেঙে ফেলে।
একইভাবে নখগুলো ভেঙে ফেলে আর অপেক্ষা করে নতুন নখ ও ঠোঁট গজানোর।
নখ ও ঠোঁট গজালে বাজ তার ডানার সমস্ত পালক গুলো ছিঁড়ে ফেলে। কষ্ট সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে নতুন পালকের।
১৫০ দিনের যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সে সব নতুন করে পায়। পায় আবার আকাশে ওড়ার ক্ষমতা আর পুরনো ক্ষিপ্রতা!
এরপর সে আরো ৩০ বছর জীবিত থাকে আগের মত শক্তি ও গরিমা নিয়ে!
-----------------
শিক্ষা ও উপদেশঃ
-----------------
৪০ আসতেই আমাদের ইচ্ছা, সক্রিয়তা ও কল্পনা দুর্বল হয়ে পড়ে । উৎসাহ, আকাঙ্খা ও শক্তি কমে যায় অর্ধজীবনেই! বাজ পাখির মত মানুষেরও রয়েছে উদ্যম ও অন্তহীন শক্তি।
নিজেকে কখনোই হারাতে দেবেন না আর হারও মানবেন না!

[সংগৃহীত ও পরিমার্জিতঃTanvir alam]

--------------------------------------
অর্ধেক পেয়েছি, বাকী অর্ধেক হারিয়েছি
---------------------------------------
তোমাকে পেয়েছি। চিনেছি। দেখেছি। তোমাকে পাই নি। চিনি না এখন। দেখিনা বহুদিন। তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসি না। একটু ভালোবাসি আর একটু ঘৃণা করি তোমাকে। আমি বোধহয় তোমাকে অর্ধেক পেয়েছি। আর অর্ধেক আমাকে ! হ্যাঁ অর্ধেক !

সম্পূর্ণ একটা মানুষ কোথায় পাবে বল ? পরিসংখ্যান বলে, প্রত্যেকটা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ভাবে চারটা মানুষ থাকে এবং পরোক্ষ ভাবে ছয় জন।

১। তাকে পাবার আগে তুমি যার ছিলে,
২। তোমাকে পাবার আগে সে যার ছিল।
৩। তুমি যার ছিলে সে এখন যার কাছে আছে
৪। তোমার কাছে আসার আগে মানুষটা যার কাছে ছিল সেই মানুষটা এখন যার কাছে আছে !

আমি বোধহয় তোমাকে অর্ধেক পেয়েছি। আর অর্ধেক আমাকে !
হ্যাঁ অর্ধেক !

তোমার বাকি অর্ধেকটা যাকে দিয়েছো, আমার বাকি অর্ধেকটা যে পেয়েছে... তাদের দুজনের মনেও কী অর্ধেক না পাওয়ার অশান্তি ? আমাদের মতই ? সব ছারখার লাগে রাতে ?

হায়রে পিথাগোরসের সূত্র !! আমি শালা বেহায়ার মত আজো ভালোবাসি।
[সুত্রঃ Tanvir Alam ]

----------------------------
দুঃখবোধ এবং উপলব্দি-মুক্তি
----------------------------
দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার একটা নির্মম সূত্র হল, তোমাকে দুঃখটা পেতেই হবে। একে পাশ কাটিয়ে শেষমেশ তুমি আসলে ভাল থাকতে পারবে না। কেউ তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে এখন তুমি কী করবে ? আমি যাই বলি না কেন দিন শেষে তোমার কষ্টটা তোমাকে পেতেই হবে। 'এখন আমি কী করব' , এর আসলে কোন সন্তুষ্ট জনক উত্তর নেই।

আমি হয়ত তোমাকে কিছুক্ষণ জোর করে হাসাতে পারব। আমি হয়ত দুটা জ্ঞানের কথা বলে পন্ডিত বনে যাব। কাজ হবে না, ঘুরে ফিরে তোমাকে আবার দাঁত খিচিয়ে কাঁদতে হবে।

কান্না আটকে রেখে দিলে সেটা কখনোই বুক থেকে বের হবে না। চোখ মুছে না; তোমাকে একদম হাউমাউ করে কেঁদে কেটে এই কান্নাটা শেষ করতে হবে। 'এখন আমি কী করব' এর একটা জবাব হল - কপাল ফাটিয়ে কাঁদো।

অহেতুক,ঠাট্টা হাসি দিয়ে দিনে বেলা পার করে দিলেও রাত তোমাকে পেয়ে বসবে। এই দুঃখটা তোমার কপালে ছিল, তোমাকে এটা সহ্য করেই ভাল থাকতে হবে। যারা ভাল আছে তাদেরও অনেক যন্ত্রণা আছে। যন্ত্রণা থেকে বাঁচার নির্মম উপায় হল যন্ত্রণা সহ্য করতে জানতে হয়।
[সুত্রঃতানভীর আলম]


#প্রকৃত #আশেকঃ হযরত জুনায়েত বোগদাদী(রহঃ)-এর ঘটনা
-------------------------------------------------------------
হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ) বাজারে গেলেন । দেখলেন, একজন দাসী বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা বললঃ মাথায় কিছু সমস্যা আছে। চাইলে নিতে পার। তিনি বলেনঃ দাসীটির চেহারা দেখে আমার পাগল মনে হলনা। আমি তাকে কিনে নিলাম। হঠাৎ রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম,দাসীটি মুসল্লায় বসে আছে। চোখ হতে অবিরাম অশ্রু ঝরছে। আল্লাহর কাছে সে দুআ করছে। আমি তার কথা নিমগ্ন ধ্যানে শুনছিলাম। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম,দাসী বলছেঃ- হে আল্লাহ! তুমি যে আমাকে ভালবাসো তার কসম! একথা শুনেই জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ) বাধা দিয়ে বললেন,হে আল্লাহর বান্দী! তুমি কি বলছো? বলো,হে আল্লাহ! আমি যে তোমাকে ভালবাসি সেই ভালবাসার কসম!! দাসী সাথে সাথে বলল,মুহাম্মদ হুসাইন! চুপ করো। তিনিই যদি আমাকে ভালো না বাসতেন তাহলে আমাকে এই নামাযের মুসল্লায় এনে দাঁড় করাতেন না। আর তিনি তোমাকেও ওখানে শুইয়ে রাখতেন না। আমাকে ভালবাসেন বলেই নামাজে দাঁড় করিয়েছেন। যদি তোমাকে ভালবাসতেন তোমাকেও নামাযের মুসল্লায় এনে দাঁড় করিয়ে দিতেন। এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ - "হে আল্লাহ! এতদিন পর্যন্ত আমাদের ভালবাসা পর্দাবৃত ছিল। তোমার সাথে আমার সম্পর্কের কথা কেউ জানতো না। এখন মানুষ জেনে ফেলেছে। তুমি এখন আমাকে তোমার কাছে তুলে নাও। এ বলে সজোরে চিৎকার দিল আর সাথে সাথে তার প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল।(ইন্তেকাল হল) জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) বলেনঃ,আমি ঘাবড়ে গেলাম। খুব ভোরে কাফনের কাপড় কিনে এনে দেখলাম,সবুজ রঙের রেশমি কাফনে তার শরীর আবৃত। আর তার উপরে লেখা আছে- ''জেনে রেখ,নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না।''[সূরাঃ ইউনুস আয়াত নং-৬২] তারাই ছিলেন প্রকৃত আশেক। তাদের মুহাব্বত ছিল প্রকৃত মুহাব্বত।

ঘটনাটা পড়ে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অনুভুতির তৈরী হলো। সেই অনুভুতিটি কি, তা বুঝিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হয়তো সেটা রবী ঠাকুরই ভালো বলতে পারবেনঃ

কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে?
আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ--
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন ॥

#স্বপনচিশতী


#কুকুর ও #লেজঃ বর্তমান বাস্তবতা
-----------------------------------
বর্তমান এই সভ্যতায় (!) মানুষও কুকুরের চেয়ে অধম প্রাণী (?)......যে কুকুর তাহার মনিবের ভক্ত হয়, মনিবকে দেখিবা মাত্র সে লেজ নাড়িয়া তাহাকে স্বাগত জানায়....

আমার বিশ্বাস..মানুষের যদি লেজ থাকিত তাহা হইলে তাহার লেজ নাড়িবার ক্ষমতা দেখিয়া বোঝা যাইতো....আদৌ সে প্রভু ভক্ত কি-না?

আফসোস বিধাতা তাহাকে সেই সুযোগ হইতে বন্ঞ্চিত করিয়াছেন। তাই মোনাফেক, ভন্ড কিংবা দুরভিসন্ধিমুলক কোন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হইতে পৃথক করা যায় না। অনেকেই প্রকৃত মানুষকে তাহাদের মতোই কপট মানুষ মনে করিয়া ভুল করিয়া থাকে।

#স্বপনচিশতী

কাক ও কোকিলের গল্পঃ
-----------------------
কাক ও কোকিল দুজনেরই গায়ের রং কালো এবং গঠনও প্রায় একই প্রকার। কন্ঠে তাদের চেনা গেলেও তাদের ছা চেনা বড়ো দুঃষ্কর। কাকের গতিবিধি এবং কোকিলের গতিবিধি ধরা পড়ে তাদের চাল-চলনে, বলনে। সুযোগটা বিধাতাই সৃষ্টি করে দিয়েছে যে, কাক কোকিলের ছা-কে বড়ো করবে। কিন্ত্তু পালন করবে তাদের স্ব প্রকৃতি। তাইতো দেখা যায়-কাকের বাসায় কোকিল বড়ো হলেও স্বভাব প্রকৃতি দুজনেরই পৃথক।

মুল বিষয়ের অনুধাবণঃ
-----------------------
ভিন্ন প্রকৃতিতে বসবাসরত কোন মনুষ্য পরিবারের মাঝে এমন কাউকে দেখা যায় যার স্বভাব-চরিত্র তার পিতা-মাতার কিংবা অন্যান্যদের সাথে কোন মিল নেই। সে ঐ কোকিলের মতোই।

#শামুক ও #শম্ভুকগতিঃ
-----------------------
শামুকের শক্ত বহিরাবরণের ভেতর রয়েছে নরোম তুলতুলে দেহ। তার গতি অতি ধীর লয়ে। যেখানেই বসে সেখানেই সে স্থিরচিত্ত হয়েই বসে। নিজেকে আত্মরক্ষার্থেও সে পটু। তার এ গতির কারণেই শম্ভুকগতি নামকরণ করা হয়েছে।

মুল বিষয়ের অনুধাবণঃ
-----------------------
হে তত্ত্বদর্শী যোগী পুরুষ, নিজেকে যে যোগী ভাবছো, কিংবা সাধু ভাবছো অথবা ভাবছো সুফী, তোমার যাগযোগ্য, ধর্ম-কর্ম দেখেতো মনে হচ্ছে না, যোগে তোমার মতি হয়েছে। যদি তা হতোই, তা হলে তোমার মতি গতি হতো ঐ শামুকটির মতো। ধীর, অচন্ঞ্চল, অটল।
তার থেকে শেখো কিভাবে নিজেকে ঐরুপে গড়ে তুলতে পারো। যোগীরা ধ্যানীরা, জ্ঞানীরা কখনো অচন্ঞ্চল ও অপ্রকৃতিগ্রস্থ হতে পারে না।

#স্বপনচিশতী

#জ্ঞান এবং #অজ্ঞান - প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
-------------------------------------------
"জ্ঞানীর/বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।"
শহীদ যারা তাদেরকে বলা হয়েছেঃ তারা অমর। তারা মরে না। কারণ তারা আল্লাহ পাকের কাছ থেকে রিজিক প্রাপ্ত। প্রশ্ন উঠলোঃ শহীদদের যদি এত অধিক মর্যাদা দেয়া হয়, তাহলে বিদ্বানদের তথা জ্ঞানীদের মর্যাদা তারচেয়েও অধিক কি-না? যদি অধিক হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের মর্তবা কি হতে পারে? চিন্তার বিষয়।

যে শহীদ অমর এবং তার যে রক্ত রয়েছে, তার থেকেও অধিক পবিত্র হচ্ছে জ্ঞানীর কলমের কালি। তাহলে সেই উচ্চমর্যদা প্রাপ্ত জ্ঞানী কারা? তারা হচ্ছেন উলিল আলবাব যাদের ভেতর রয়েছে আলীমুন সেফাতের উজ্জ্বল নিদর্শন। এই আলীমুন সেফাত যার রয়েছে তাকেই বলা আলিম তথা জ্ঞানী।

জ্ঞানীদের মাঝে অন্য কোন জ্ঞানীর পার্থক্য থাকে না। কারণ তারা উভয়েই উভয়ের জগতে জ্ব্যাজ্বল্যমান প্রদ্বীপ্ত সুর্যের ন্যায়। সুর্যালোকে অন্ধকাররুপ অজ্ঞতা দুরীভুত হয়। কিন্ত্তু অজ্ঞানী চিরকালই অন্ধাকারচ্ছন্ন বিধায় তারা নিজেরা যেরুপ আলোক রশ্মি দেখতে পায় না তদ্রুপ অন্যকেও কালিমা লেপন করে ঢেকে দিতে চায়। কারণ চিন্তার গভীরতা তাদের নেই। তাই তারা অজ্ঞানী।
এই বিভ্রান্তরাই যুগে যুগে মহামানবদের বিরোধিতা করে আসছে এবং আজীবন করবেই।

#স্বপনচিশতী

#জ্ঞান এবং #অজ্ঞান - প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
-------------------------------------------
"জ্ঞানীর/বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।"
শহীদ যারা তাদেরকে বলা হয়েছেঃ তারা অমর। তারা মরে না। কারণ তারা আল্লাহ পাকের কাছ থেকে রিজিক প্রাপ্ত। প্রশ্ন উঠলোঃ শহীদদের যদি এত অধিক মর্যাদা দেয়া হয়, তাহলে বিদ্বানদের তথা জ্ঞানীদের মর্যাদা তারচেয়েও অধিক কি-না? যদি অধিক হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের মর্তবা কি হতে পারে? চিন্তার বিষয়।

যে শহীদ অমর এবং তার যে রক্ত রয়েছে, তার থেকেও অধিক পবিত্র হচ্ছে জ্ঞানীর কলমের কালি। তাহলে সেই উচ্চমর্যদা প্রাপ্ত জ্ঞানী কারা? তারা হচ্ছেন উলিল আলবাব যাদের ভেতর রয়েছে আলীমুন সেফাতের উজ্জ্বল নিদর্শন। এই আলীমুন সেফাত যার রয়েছে তাকেই বলা আলিম তথা জ্ঞানী।

জ্ঞানীদের মাঝে অন্য কোন জ্ঞানীর পার্থক্য থাকে না। কারণ তারা উভয়েই উভয়ের জগতে জ্ব্যাজ্বল্যমান প্রদ্বীপ্ত সুর্যের ন্যায়। সুর্যালোকে অন্ধকাররুপ অজ্ঞতা দুরীভুত হয়। কিন্ত্তু অজ্ঞানী চিরকালই অন্ধাকারচ্ছন্ন বিধায় তারা নিজেরা যেরুপ আলোক রশ্মি দেখতে পায় না তদ্রুপ অন্যকেও কালিমা লেপন করে ঢেকে দিতে চায়। কারণ চিন্তার গভীরতা তাদের নেই। তাই তারা অজ্ঞানী।
এই বিভ্রান্তরাই যুগে যুগে মহামানবদের বিরোধিতা করে আসছে এবং আজীবন করবেই।

#স্বপনচিশতী

#মুর্তিপুজা বনাম #মানুষপুজা
__________________
#মুর্তিপুজা = মুর্তি + পুজা। মুর্ত মান হয়ে উঠেন যিনি। বস্তুমোহ থেকে যিনি নির্লিপ্ত থেকে রবকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তথা মুর্তমান করতে পেরেছেন, তিনিই জাগ্রত মুর্তি এবং তার পুজাই মুর্তিপুজা। পুজা বলতে ফুল দ্বারা আর্চনা করা বুঝায়।

#মানুষপুজা = মানুষ + পুজা। মানুষ বলতে মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রতচেতনা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিবিশেষ কে বোঝায়, যার ভেতর রয়েছে স্রষ্টার রহিম এবং রহমান নামক বিশেষ দুটি গুণের প্রকাশ্যমান বৈশিষ্ট্য। এ ধরণের মানুষকে সদা সর্বদাই সমাজের সাধারণ স্তরের জনগণের জন্য কল্যাণপ্রসুত বিভিন্ন কার্য্যসম্পাদন করতে দেখা যায়। তাদের পুজা হয় জনগণের ভজনা দ্বারা। অর্থাৎ তাদের জয়জয়কার হয় মানুষের মুখে মুখে।

সুতরাং উভয়বিদ পুজা বোধবিহীন মানুষ(?) নামক সাধারণ্যের মাথায় ঢোকে না বলেই তারা সর্বদাই এ শ্রেণীর মানুষকে নিন্দাবাক্যে পর্যভুষিত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে। সমাজে ঐরুপ মহাপুরুষ যতো থাকবে, সমাজ তত মঙ্গলময় এবং কল্যাণপ্রসুত হয়ে উঠে এবং যে সমাজে যত মানুষ(?) নামক সামাজিক জীব থাকবে, সে সমাজ তত উৎশৃংখল এবং অধঃপতনে যাবে।

#স্বপনচিশতী

#বোবা, #কালা এবং #কানা হলেই কেবল স্রষ্টাকে দেখা সস্ভব।
---------------------------------------------------------------
একজন গুরুর কাছে একজন শিষ্য যেয়ে বললোঃ
-বাবা আমি স্রষ্টাকে দেথতে চাই।
-তাই? গুরু বললেন।
-হ্যাঁ বাবা।
-আমি যা বলব তা তুমি মানতে পারবে?
-পারবো।
-তাহলে তোমাকে বোবা, কালা এবং কানা হতে হবে।
-কিভাবে?
-তোমার জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। তোমার কানে গরম শিশা ঢেলে দেয়া হবে। এবং তোমার চোখ উপড়ে ফেলা হবে।
গুরুর কথা শুনে শিষ্য দিল ভোঁ দৌড়। ব্যাটা বলে কি? আমার জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। আমার কানে গরম শিশা ঢেলে দেয়া হবে। আর আমার চোখ উপড়ে ফেলা হবে। দরকার নেই এমন গুরুর।
শিষ্যকে চলে যেতে দেখে গুরু হাসলেন। বললেনঃ
"যে শিষ্য বোবা, কালা এবং অন্ধ তিনিই কেবল স্রষ্টাকে দর্শন করতে পারেন।"
-স্বপন চিশতী

ব্যাখ্যাঃ
-------
প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে? বোবাতো কথা বলতে পারে না। কালা তো কথা কানে শুনে না। আর কানা হলে তো চোখে দেখবে না। তাহলে কিভাবে সে স্রষ্টাকে দর্শন করবে? অাসুন দেখিঃ
#বোবাঃ যারা কথা বলতে পারে না.তারা বোবা। শিক্ষা হলো তুমি কুতর্কে জড়িও না। বোবার মতো চুপ করে থাকো।
#কালাঃ যারা কথা কানে শুনতে পারে না তারা কালা। শিক্ষা হলো তুমি অশ্লীল কথা শোনা থেকে বিরত থাকো।
#কানাঃ কানা তাদেরকেই বলা হয় যারা চোখে দেখে না। শিক্ষা হলো তুমি কানার মতো চোথ বুঁজে থাকো। ধ্যানে খেয়ালে রাখো আপনা মুর্শিদকে। তাহলেই তুমি আল্লাহকে দর্শন করতে পারবে।
#স্বপনচিশতী


#খন্ডিত স্বত্ত্বা ও #বিভেদজ্ঞানঃ অনুমাননির্ভরতা ভুল
----------------------------------------------------
একক কোন স্বত্ত্বা যখন তার নিজের স্বত্ত্বাকে খন্ডিত করলেন, তখন সেই খন্ডিত স্বত্ত্বাগুলো কোনটি অত্যাধিক উজ্জ্বল, কোনটি অনধিক উজ্জ্বল আবার কোনটি একেবারেই ম্রিয়মান দেখাতে লাগলো।

তুমি যদি উজ্জ্বল্যপ্রাপ্ত স্বত্ত্বাটিকে স্বীকার কর এবং অনুজ্জ্বল অথবা ম্রিয়মান স্বত্ত্বাটিকে অস্বীকার কর, তাহলে পুর্ণ স্বত্ত্বাটিকেই অস্বীকৃতি জানালে। কেননা ঐ অনুজ্জ্বল স্বত্ত্বাটি বা ম্রিয়মান স্বত্ত্বাটিও ঐ একক স্বত্ত্বাটির একটি খন্ডিত স্বত্ত্বা।

কাজেই তোমার উচিত উভয়কেই মেনে চলা এবং কাউকে অবজ্ঞা না করা। কারণ বিভেদজ্ঞান অজ্ঞানতারই নামান্তর।

#স্বপনচিশতী।

#আলোকপোকাঃ
---------------
আলো আঁধারে ঘিরে থাকা বনাঞ্চলে একধরণের পোকা বাস করে যেগুলো আলো দেখলেই ধেয়ে চলে আসে। যতদুরেই রাখা হোক না কেন...আলোর সন্ধান পেলেই তারা ছুটে আসবে এবং কিছু পোকা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মারা যাবে।

তোমার ভেতর যদি সেই আলো থাকে তাহলে তুমি তা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তোমার হৃদয়ালোকের ঐশী তেজে পোকা-মাকড়ের মতো আশেকান ভক্তবৃন্দ তোমারে ঘিরে ধরবে।

#স্বপনচিশতী

একটি রবীন্দ্র সংগীত, একটি কথা এবং একটি ব্যাথাঃ
---------------------------------------------------
প্রেমের আধুনিক সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, সুপ্রাচীন কালে স্রষ্টাকে নিবেদিত করিয়া রবী ঠাকুর যাহা রচনা করিয়া গিয়াছেন, তাহা বোধ করি ইহলোকে আর কেহ পারিবেন বলিয়া মনে হইতেছে না। আমি অদ্যাবধি দেখি নাই। ইহা কেন বলিলাম, তাহা শুনিবার পুর্বে যেই রবীন্দ্রগীতি নিয়া লিখিতে যাইতেছি তাহার দুই চারিটি চরণ দেখিয়া লইঃ

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না।
মোহ মেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহ মেঘে তোমারে, অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।

গুরুবাদী সাধকের কাংখিত প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা তাহার আপন গুরুই বটে। সেই মহানগুরুর ধ্যানের আকাশে যখনই সাধক তাহাকে দেখিবারে চাহেন, তখনই দেখা দেয় নানান বিষয়াশয় যাহা তাহাকে দেখিতে অন্তরায় সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছে। সেই বিষয়রাশিকেই রবী ঠাকুর মেঘ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।

এরপর বলিয়াছেনঃ

ক্ষণিকও আলোকে আঁখিরও পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে হারাই হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে
আশ না মিটিতে হারাইয়া, পলক না পড়িতে হারাইয়া,
হৃদয় না জুড়াইতে হারাইয়া ফেলি চকিতে

কি করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে, দয়া না করিলে কে পারে
তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে

আর কোন পানে চাহিব না আর করিব হে প্রাণ পণ
ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব বিষয়ও বাসনা বিসর্জন
দিব শ্রীচরণে বিষয়ও, দিব অকাতরে বিষয়ও,
দিব তোমার লাগি বিষয়ও বাসনা বিসর্জন ...


মুক্তো ও ঝিনুক
----------------
ঝিনুক বেশ গর্ববোধ করে বলছেঃ
-আমি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান বস্ত্তুটি পেটে ধারণ করি।
তা শুনে মুচকি হেসে মুক্তোটি বললোঃ
-তোমার পেটে এর উপাদানটি কে দিয়েছে?

#সারমর্ম
----------
যে নারীকে মুল্যবোধের আলোকে শ্রেষ্ঠতম আসনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তার পেছেনে যে একজন মর্যাদাবান পুরুষের হাত আছে, সেটি নারীদের ভুলে গেলে চলবে না। তাকেও সম মর্যাদা দিতে হবে। তবেই না ঝিনুকের স্বার্থকতা।

#স্বপনচিশতী


#মুর্শিদপ্রেমঃ
------------
মুর্শিদের প্রেমে এমনভাবে তোমার মনকে ছুটাও যেমন ধনুক হতে তীর সোজা হয়ে তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। তোমার প্রেমই যেন হয় গুরুর প্রেম।

#স্বপনচিশতী

#কামনাবাসনারপ্রেমঃ
---------------------
কেটে ছেটে বাদ দিয়ে দাও সেই কামনা ভরা প্রেম। যে অঙ্গটি তোমাকে প্রতি মুর্হুতে সৃষ্টির সাথে বন্ধন তৈরী করে।

#স্বপনচিশতী

স্মৃতির ভাব সম্প্রসারণঃমন ও আত্মা
------------------------------------
-তোমার কি মনে আছে সেই দিনটির কথা?
-কোন্ দিনটির কথা,বলোতো?
-ঐযে সেদিন তুমি বলেছিলেঃ

তোমার কেবল তুমি আছো, আছোতো বেশ
আমার কেবল আমি আছি, রাঙ্গিয়েছিতো বেশ।
কিছু তার স্মৃতি, কিছু পাচ্ছি তার রেশ।।

সারসংক্ষেপঃ তোমার আত্মা আর তুমি দুটি কেবল ভিন্ন বিষয়। প্রেম যদি করতেই হয়, তাহলে তোমার নিজের সাথেই করো।ভালো যদি বাসতেই হয় তো নিজেকেই বাসো।যার সাথে চলছো, ফিরছো, অথচ তার সাথে প্রেম করবে না, ভালোবাসবে না - এটা কেমন কথা?

#স্বপনচিশতী

নিরাকার খোদাঃ মোল্লাবাদ বনাম সুফীবাদ
-------------------------------------------
নিরাকার খোদা অনেকেই বলে থাকেন। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে একটি ধারণা পাওয়া যায়। সেটি হলোঃ নিরাকার=নির+আকার এবং খোদা=খোদ তথা নিজ বা আত্মা। তাহলে নিরাকার খোদা = নির (পানি)+আকার +খোদ তথা আত্মা।

নির বলতে জল বা পানি বোঝায়।
আকার অর্থ যার ওজন আছে, আয়তন আছে এবং যা স্থান বা জায়গা দখল করে অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে যা দৃষ্টিগোচরীভুত হয় এবং স্পর্শ করা যায়,তাকেই আকার বলে।
আত্মা বলতে পন্ঞ্চভুতে তথা ক্ষিতি, অপ, তেজ,মরুৎ এবং ব্যোম - এ পন্ঞ্চ উপাদানে সৃষ্ট দেহরুপকে বোঝায়।

এবার আসি ব্যাখ্যা প্রসংগে। পানির কোন আকার নেই। পানিকে যে পাত্রে রাখা হয়, সেই আকার ধারণ করে। তদ্রুপ নিরাকার খোদা যে দেহে অবস্থান করছে, তা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আকারে দেখছে। পণ্ঞ্চভুতে স্থিত আত্মা বিভিন্ন রংগে প্রকাশ হচ্ছে। যেমনঃ ফর্সা, কালো, শ্যামলা ইত্যাদি। যার ফলে যারা আত্মাকে নিরাকার বলছে মুলতঃ তাদের কাছে এর সঠিকরুপটি ধরা পড়ছে না। বিধায় তারা আকাশের দিকে ইংগিত করে নিরাকার বোঝার চেষ্টা করছে। আর যারা তার স্বরুপকে ধরতে পারছে, তারা তাকে তার প্রেমের সমীকরণে নিয়ে রচনা করছে প্রেমের মহাকাব্য। তারা তাকিয়ে থাকে সেই প্রেমের মানুষটির দিকে, যে তাকে প্রতিনিয়ত ভ্রমন করাচ্ছে দেহ হতে দেহান্তরে।

মোল্লাদের সাখে পার্থক্যটা এখানেই। মোল্লারা যেটা বলে-সেটা তারা বুঝে না।

#স্বপনচিশতী


হাঁস ও তার ছানাপোনা এবং আমরাঃ ঐশ্বরিক ভাবমত্ততার একটি শিক্ষা
-----------------------------------------------------------------------
তুমি ভাবছো, কিভাবে ঈশ্বরকে তোমার অন্তরের মনের কোঠায় ঠাঁই দেবে? তাইতো? চলো তোমাকে একটা জিনিস দেখাই। চল আমার সাথে।
ঐ যে জলের ধারে যে ডোবাটা দেখছো..সেখানে ভালো করে লক্ষ্য কর। দ্যাখো কতোগুলো হাঁস তার ছানাপোনা নিয়ে জলকেলি করছে।
দেখতে পাচ্ছো?
হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি।
না, তুমি দেখতে পাচ্ছো না। তুমি যা দেখছো, তাহলো সাধারণভাবে দেখা। একটু চিন্তা করে দ্যাখো, এই হাঁসগুলি জল কাদায় সারাদিন মাখামাখি করে থাকে। অথচ যখন সে ঘরে ফেরে তার গায়ে সামান্যতম পানিও লেগে থাকে না। তারপর দ্যাখো, সেগুলি নিঃচিন্তে জলের মধ্যে ডুব দিয়ে মাছ ধরে আনে। সেটা গলধঃকরণ করে। পেট ভরলেই উড়ে চলে যায় তার আপন গন্তব্যে। কি বুঝলে?

শিক্ষাঃ উপদেশ
--------------
হে সাধুজন, তুমি যদি ঈশ্বরের সংগ পেতে চাও তবে তোমার উচিত ঐ হাঁসগুলোর কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া। দুনিয়ারুপ ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা গায়ে মেখো না। ডুব দাও হৃদয়রুপ গভীর জলে। তুলে আনো তোমার খাদ্য (মুর্শিদের বরযোখ )। তারপর খাও (ধ্যানে ডুবে যাও)। আর উড়ে চলো ঐ হাঁসগুলির মতো নিজস্ব বাসভুমে।



মুরগী ও তার ছানাপোনা
------------------------
বাড়ীর উঠোনে খুঁটে কুঁড়ে খাচ্ছিল একটি মা মুরগী। তার দেখাদেখি মুরগীটির ছানারাও অবিকল তার মতোই খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিল। সহসা এক মুরগী ছানা তার মার কাছে জানতে চাইলঃ

-মা, আমরা এভাবে খুঁটে খুঁটে খাবার খাচ্ছি কেন?
তা শুনে মা মুরগীটা বললোঃ

-বাছা আমাদের রিজিক আল্লাহপাক যেখানে যে অবস্থায়ই রেখেছেন, সেখান থেকেই আমাদের তা অন্বেষণ করেই থেতে হয়।

ব্যাখ্যাঃ অামাদের রিজিক যেখানেই আল্লাহ পাক সুবহানাহু তায়া'লা রেখেছেন, কর্ম করেই তা আমাদের সংগ্রহ করে নিতে হয়।


#মৃন্ময় ও #মৃন্ময়ীর ভালোবাসা এবং দুটো কথা
------------------------------------------------------------------
হামনে মোহাব্বত কি নেশামে আকার উছছে খোদা বানা ডালা
হুঁশ তাব আয়ি যাব উছনে কাঁহা, খোদা কিছি এককা নেহি হোতে।।
--মীর্জা গালিব
------------------------------------------------------------------
ভালোবাসার নেশায় এসে অামি তাকে খোদা বানিয়েছি
হুঁশ তখনই আসলো, যখন সে বললোঃ "খোদা কারো একার নয়"।
------------------------------------------------------------------
মন জগতে যিনি বিভু থাকেন, তিনি সম্পুর্ণই তার। যিনি তাকে ধারণ করেন। বিভু=বি মানে সহিত, সাথে, বিশেষ। ভু মানে মৃত্তিকা, ভুম, ভুমি, পৃথিবী। বিভু অর্থ হচ্ছে মৃন্ময়ী বিশেষ। অর্থাৎ মাটির তৈরী কোন নারী মুর্তি। মুর্তি=মুর্ত মান হয়ে ওঠা। অর্থাৎ জাগ্রত হওয়া।
যদি কোন মৃন্ময় অন্য কোন মৃন্ময়ীকে দেখে ভালো বেসে ফেলে কিংবা প্রেমের প্রতি প্রবল আকর্ষণবোধ করে, তখন সার্বিকভাবে সেই মৃন্ময়টির মানসপটে মৃন্ময়ীর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তখনই ঐ মৃন্ময়ী হয়ে যায় তারই পুজার আকর। তথা খোদা। খোদ অর্থ নিজ। মানস পটে তথা হৃদয়ে খোদিত হওয়া। গেঁথে যাওয়া। বসে যাওয়া ইত্যাদি।
এই বিভু যে কারো একার নয়, সেটা যখন ঐ মৃন্ময় বুঝতে পারে, তখনই তার হুঁশ হয় তথা চৈতন্যপ্রাপ্ত হয়। এই চৈতন্য আসে কেবল সালাত কর্মের মাধ্যমেই। সালাত না করলে মন-মস্তিষ্কে কি লীলা করছে তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা সম্ভব নয়। এই সালাত ওয়াক্তিয়া কোন সালাত নয়। এ হচ্ছে-ধ্যান তথা মেডিটেশন। ধ্যান=ধেয়্+আয়ন। জ্ঞাত এবং জ্ঞেয় যিনি দর্শন করেন।

মুল বিষয়টি হলোঃ
-----------------
যাকে তাকে ভালোবেসে খোদা বানানো উচিতব্য নয়। তা সর্বদাই পরিত্যাজ্য। খোদা এমনই একজনকে বানানো উচিত, যাকে নিজ ভুবনে নিজের মতোই পুজা করা যায়।

বিঃদ্রঃ-
-----
কোন ছাগলছানার ভাষাগত জ্ঞান না থাকলে এবং উপলব্দি ক্ষমতা সীমিত থাকলে এ পোষ্টটিতে কোন মন্তব্য করবেন না। কিংবা কোন প্রকার লাইক বা শেয়ার করবেন না। এ্ পোষ্টটি কেবল তাদের জন্যই যারা বোঝেন এবং উপলব্দি করেন।

#অাত্মীয় ও #স্বজন
--------------------
আত্ম যার জাত সেই আত্মীয় আর স্বরুপ যিনি দর্শন করেন তিনিই স্বজন।
স্ব অর্থ নিজ। জন অর্থ ব্যক্তি বা লোক। লোক আবার দুটো ভাগে বিভক্ত। দেহলোক এবং মনোলোক। দেহলোক তথা জৈবিক ক্রিয়াদিতে মগ্ন আর মনোলোক হচ্ছে ভোক্তা।

-#স্বপনচিশতী

#সুচনা ও #সমাপ্তি
---------------
তোমার জীবনটা একটা বই। যার একটা সুচীপত্র আছে। যে সুচীপত্র রচনাকাল তোমার জন্মলগ্ন। এরপর তুমি ক্রমান্বয়ে লিখে যাও। তোমার জীবনকাল পর্যন্ত। মৃত্যুটাই হলো তোমার সমাপ্তি।

তোমার বইয়ের পাঠক হলো-তারা যারা তোমার সাথে মিশে ছিল একান্ত হয়ে। তুমি চলে যাবে কিন্ত্তু কিছু স্মৃতি রেখে যাবে তাদের মানসপটে....

#স্বপনচিশতী

#আল্লাহ #সর্বশক্তিমান

আল্লাহ=আল+ইলাহ। আল অর্থ সর্ব অর্থাৎ যা কিছু আছে সবকিছু। ইলাহ অর্থ উপাস্য। যার উপাসনা করা হয়। উপাসন=উপ(নিকটে)+আসন(বসা)। অর্থাৎ উপাসনা অর্থ হচ্ছে নিকটে বসা। কার নিকটে বসা? সর্ব শক্তিমানের নিকটে বসা। সালাতের মাধ্যমে আমরা সর্বশক্তিমানের নিকটে বসি। কি জন্যে? শক্তি অর্জনের জন্য। চুম্বকের নিকট লোহা বসলে যেরুপ আকর্ষিত হয় তদ্রুপ লোহারুপ মন নিয়ে অর্থাৎ দৃঢ় চেতা মন নিয়ে বসলে সর্বশক্তিমানের নিকট হতে শক্তি অর্জিত হয়।

-স্বপন চিশতী


#হাঁস ও #বাস্তবতা
----------------
হাঁস সারাদিনমান কাদা নোংরা পানিতে সাঁতার কাটে। ময়লা কাদা ঘুটে। কিন্ত্তু সন্ধ্যায় সে বাড়ি ফেরে নোংরা ময়লা ফেলে। এক ফোঁটা পানিও তার গায়ে লেগে থাকে না।
সংসাররুপ এ মায়া জালে হাঁসের মতোই হোক যোগীর জীবন। যে কর্ম ব্যস্ততার কারণে ছুটে বেড়াবে কিন্ত্তু বাড়িতে ফিরবে একেবারে হাঁসের মতোই।

#স্বপনচিশতী

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

লা মউজুদা ইল্লাল্লাহঃ

লা মউজুদা ইল্লাল্লাহঃ আল্লাহ ব্যতীত কিছুই নাই
-------------------------------------------
সুফীরা বলেনঃ"লা মাউজুদা ইল্লাল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কাহারো অস্তিত্ব নাই। ইহাতে বুঝা যায়ঃ আল্লাহ স্র্রষ্টা হিসাবে তো আছেনই, সৃষ্টিও আছে। কিন্ত্তু সৃষ্টি স্র্রষ্টার বিধা(manifestation)। এই হিসাবে সৃষ্টি এক অর্থে মুল্যহীন। কারণ, তাহার অস্তিত্ব স্র্রষ্টার উপর নির্ভরশীল। এইভাবকেই সুফীরা অন্যভাবে ফুটাইয়া তোলেন। যেমনঃ- "লা ফায়িলা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কার্যের কোনই কর্তা নাই। এস্থলে এই বুঝা যায়ঃ কর্তাও আছেন কর্মও আছে। তবে কর্তা মুখ্য, কর্ম গৌণ্য। ইহা আরো স্পষ্টতর হইয়া উঠে যখন সুফীরা বলেনঃ" লা মুয়াস্ সিরু ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুরই ফলোদয় হয় না। ইহা কতকটা বেদান্ত ভাষ্যের অনুরুপ। বেদান্তের কতক ভাষ্যকার এইরুপ ব্যাখ্যা দিয়াছেন যে, স্র্রষ্টা সৃষ্টি হইতে এইজন্য পৃথক যে, সৃষ্টি 'মায়া' দ্বারা আবৃত। 'মায়া' কাটিয়া গেলে সৃষ্টি-স্র্রষ্টার ভেদাভেদ থাকে না। তখন সৃষ্টি বলিয়া উঠে 'সোহং' (তিনিই আমি)। সুফীরা 'খুদিকে' বিলুপ্ত করিয়া স্র্রষ্টার অস্তিত্বে নিজেকে আবৃত করতঃ "আল্লাহ না হইয়া আল্লাহময় হন।


বন্ধু ও বন্ধুত্ব - সম-স্বত্ত্বাবিশিষ্ট প্রাণের উপলব্দি-তিনি কে?
--------------------------------------------------
বন্ধু ও বন্ধুত্ব হচ্ছে সমগুণ বিশিষ্ট প্রাণ। অর্থাৎ মনের সাথে মনের মিল। মনের মিল না হলে বন্ধুত্ত্ব হয় না। বন্ধু হওয়ার প্রধান শর্তই হলোঃ প্রাণের সাথে প্রাণের মনের সাথে মনের মিলনে সমাহিত হওয়া। অন্তঃদৃষ্টিতে বন্ধু হচ্ছেঃ প্রাণের যে স্পন্দনটি প্রতি নিয়ত আপনারই সাথে থাকছে সেটা। সেটা যখন বের হয়ে যায় কোন অজানা দেশের উদ্দেশ্যে, তখন শুন্য খাঁচা পুণ্যময় হয়। যে খাঁচাটি এতদিন লালন পালন করেছেন, সেই খাঁচাটিতে যে ছিল, সেই ছিল অাপনার একান্ত অাপনজন। কাজেই সেই বন্ধুটির দেখা পেতে হলে প্রয়োজন হচ্ছেঃ ধ্যান। ধ্যানের দেশেই কেবল আপনি আপন বন্ধুকে দেখতে পারবেন।
সুতরাং প্রয়োজন হচ্ছে ধ্যান....ধ্যান...এবং ধ্যান করা। এর কোন বিকল্প নেই। কেন নেই? কারণ হলোঃ যে বন্ধুটি আপনার সাথে ছিল তার একটা নাম অাছে। আছে তার বাসস্থান আর সেটি হলো রুহ্ ।

রুহ যখন এদেহে এসেছিল কোন অজানা দেশ থেকে, সেই দেশের হদিস কেবল এ বন্ধুটিই জানে। তার সাথে আপনার যে সত্ত্ব্বাটি রয়েছে, মন, সেই সত্ত্বাটির বন্ধুত্ব স্থাপন করুন। তাকে জানতে দিন, কথা বলতে দিন। শুনুন সে কি বলে......শুধু মাত্র বোবা হলেই তার ডাক শুনতে পাবেন আপনি। যদি সে তাঁর আপন ঠিকানা বলে, তাহলে তার সাথে পথ চলুন। তাহলেই কেবল স্র্রষ্টার সঠিক ঠিকানাটা পাবেন। কেননা, তিনি এসেছিলেন-স্র্রষ্টার হুকুমে। অালমে আমরের জগত হতে।
কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ যিনি হুকুম দিয়েছেন, তিনি কে?


“আয় মোর্গে সেহের ইশক যে পরওয়ানা বিয়ামুজ
কাসুকতারা জান সুদ ও আওয়াজ নাইয়ামাদ”
--- হযরত শেখ সা'দী রাঃ
অর্থ : হে প্রভাতের বুলবুলি, পতঙ্গের কাছে ইশক কাকে বলে তা জেনে নাও, পতঙ্গ যেমন নিজকে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়ে ছাই হতে শিখে।



-----------------------------
সিরাতুল মুস্তাকীমঃ মত ও পথ
-----------------------------
মনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তারপর বললোঃ
- কাম সারছে। সিরাতুল মোস্তাকীম কি জিলাপির মতোন?
- মানে? আমি জিগ্যেস করলাম।
- মানে সোজা। একদম পানির মতন।
- সেইটা কি রকম?
- দ্যাখ্ ছোট্র একটা দ্যাশ। এই দ্যাশের স্বাধীনতার ইতিহাস লইয়্যা কতো ঘাঁটাঘাঁটি হইছে। মারামারি হইছে। একদল হইছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আরেক দল হইছে বিপক্ষের শক্তি। সত্যিকারের ইতিহাস কিভাবে জানবি? পক্ষের লোকতো পক্ষপাতিত্ব করবোই। আর বিপক্ষ দল টিক্কা থাকনের ল্যাইগ্যাও ইতিহাস লেকবো। এহন তুই ক যারা পক্ষের বই পড়ছে তারা বিপক্ষ দলরে গালি দিব আর যে বিপক্ষ দলের বই পড়ছে, হেয় কি ছাইড়্যা কতা কইবো? কইবো না....মাঝখান থিক্ক্যা ফয়দা লুটতাছে তৃতীয়জন। অার ইসলামের ইতিহাসতো আরো নির্মম। আরো করুণ... এইবার আয় সিরাতুল মুস্তাকিমের কতায়।

এই সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থ হইলোঃ সহজ সরল পথ। অর্থাৎ সঠিক পথ। এই সঠিক পথটাই সঠিক আছে। বাকী সব গোল্লায় গেছে। কেমতে? তাইলে শুন্
এই দেশে কয়টা টিভি চ্যানেল আছে?
- এই দশ পনোরোটা বা তারও বেশি আছে বা থাকতে পারে।
- অইচ্ছা, আমরা ধইর‌্যা লইলাম পনোরোটা আছে। এই পনোরোটা চ্যানেলে ইসলামের কোন আলোচনায় পনোরো জন মাওলানা পনোরো রকমের ওয়াজ নছিয়ত করবো। কোরআনের তফসির করবো। পনোরোটা চ্যানেল একটা বিষয়রে পনেরোটা ভাগ কইর‌্যা দিল। ধর তুই চ্যানেল আই দেখলি। আর আমি দেখলাম এটিএন বাংলা। এইবার তোর আর অামার মইদ্যে ফাইট অইবো। কিরলিগ্গ্যা? হেইডা জিগাবি না?
-কি জন্য?
-শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য। তুই কবি আমারটা ঠিক আর আমি কমু আমারটা ঠিক। একই কোরআন। সবাই মানি। মুসলমান হিসাবে। হেই কোরআনরে যহন তুই তফসির করতে যাবি, তহনই প্যাঁচ লাগবো.....তুই তর কতা কবি আর আমি কমু আমার কতা। আমাগো তো মাতা নাইক্ক্যা....মাতা থাকলে না ঠাটামু....যেই মাতা যত্রতত্র নত হয় ঐডা কোন মাতাই না.....আর যেই
মাতা সঠিক জায়গায় নত না হয়, ঐডাও মাতা না......মাতা অইলো হেইডা যেইডা জায়গা মত নত অয়। এই কতাডা আমার মুর্শিদের কতা। যা ব্যাডা এইবার চিন্তা কইর‌্যা দ্যাখ.....সিরাতুল মুস্তাকীম কি?


সমীকরণঃ
----------
মনে পড়ে কি সেই প্রথম দিনের কথাগুলো.....যেখানে তুমি আর আমি ছিলাম....অাজ তুমি আছো.... আর আমি নেই...........
শুনে ................কে যেন বললো উঠলো.........তাহলে কথা বলছে কে?
সে হলো তৃতীয় জন। আমি + তুমি = সে। অানা লতিফা মুনজিল। আলিফ লাম মিম...অালে মিম.....

 

 

তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলেঃ কিছু কথা

তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলেঃ কিছু কথা
---------------------------------------------
তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে।
মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে।।
যেন ঊষার কোলে রাঙা রবি দোলে।।
কূল-মখ্‌লুকে আজি ধ্বনি ওঠে, কে এল ঐ,
কলেমা শাহাদাতের বানী ঠোঁটে, কে এল ঐ,
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, কে এল ঐ,
আকাশ গ্রহ তারা প’ড়ে লুটে,- কে এল ঐ,
পড়ে দরুদ ফেরেশ্‌তা,
বেহেশ্‌তে সব দুয়ার খোলে।।
মানুষে মানুষে অধিকার দিল যে জন,
“এক আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রভু নাই’’ কহিল যে জন,
মানুষের লাগি’ চির-দীন বেশ নিল যে জন,
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে জন,
এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবি,
ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবি,
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল মুক্তি-কলরোলে।।

আবিদারা নামক একজন সাহাবী রসুলে পাক হযরত মুহাম্ম দ (সাঃ) -কে জিগ্যাসা করলেনঃ
ইয়া রাসুলআল্লাহ (সাঃ) - সৃষ্টির প্রারম্ভিক অবস্থায় আল্লাহ পাক কিরুপ অবস্থায় ছিলেন?
উত্তরে রসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লাম বললেনঃ
সৃস্টির প্রারম্ভে আল্লাহ পাক আল-আমা নামক একটি কুপে (অন্ধকারাচ্ছন্ন কুছঝটিকা-কুয়াচ্ছান্ন অবস্খায়) ছিলেন।[সুত্রঃসুফীবাদ ও চার তরীকার পীর - অধ্যাপক এ. এম খলীলুর রহমান পৃষ্ঠা নং-৩৯] তাছাড়া হাদিসে কুদসিতে আছেঃ 'কুনতু কানজান মুখফিয়ান ফাআহবাবতু আনউরাফা ফা খালাকতুল খালাক' - এ হাদীছে কুদছি দ্বারাও আল্লাহর অবস্থান গঞ্জ-এ- মু্খফিতে আছেন/ ছিলেন বলে জানা যায়।
প্রশ্ন হলোঃ যদি আল্লাহ পাক কুচ্ছঝটিকারুপেই থাকেন এবং রসুলে খোদা যদি দেখেই থাকেন, তাহলে-সৃষ্টির পুর্বে তার অস্তিত্ব ছিল। যার প্রমানঃ কুনতু আদামা বাইনাল্লাহি মাইয়াততিন [আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম মাটি ও কাদার মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন]।
দ্বিতীয় প্রশ্ন দাঁড়ায় - তিনি আল্লাহ পাককেও দেখেছেন [মান রানি ফাক্কাদ রায়ান হাক্কা]। যার প্রমাণ পবিত্র শবে মিরাজ শরীফ। কারণ সেখানে অন্য কারো যাবার অনুমতি ছিল না। কেবল রসুলে খোদা হাবীবে শান আহমাদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুজতাবা হুজুর পাক সাঃ এবং মহান জাতপাক আল্লাহ পাকই ছিলেন। সাক্ষ্য কেবল তারা পরস্পর। আর তাদের সাক্ষ্যই চুড়ান্ত।
অবশ্য তা বিশ্বাসীদের জন্য। জ্ঞানীদের জন্য। অজ্ঞানী এবং অবিশ্বাসীদের জন্য নয়।
তৃতীয়তঃ রসুলে খোদা জানলেন কিভাবে যে আল্লাহ পাক সৃষ্টির প্রারম্ভে কুচঝটিকা রুপে ছিলেন? সেটা কিভাবে সম্ভব?
অনেকেই হয়তো আপত্তি তুলতে পারেন - নাওউযুবিল্লাহ ও বলতে পারেন। প্রশ্নও তুললে পারেন। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এর স্বরুপটা তথা সত্যটা বুঝতে পারা যায়।
যে সত্যটা বিবৃত করেছেন অনেক সুফী-সাধক এবং সুফী কবিগণও।
যেমনঃ হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী(রহঃ) বলেছেনঃ

হ্যায় কাঁহা মুছাকে ইতনা তুমছে পেয়ারা মোর্তবা
তুমতো মাহ্ বুবে খোদা হো ম্যায় তেরা দিওয়ানা হো।।
দ্বার হারিমে পর্দায়ে ওয়াছেললে মোয়াল্লা ম্যায় থা কৌণ
সেজদা গাহে জানে জানা ম্যায় তেরা দিওয়ানা হো।।
-কালামে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর চিশতী উদ্দ্যান থেকে সংগৃহীত।

#দমা_দম_মাস্ত_কালান্দার

গানটি মূলত সূফী শাহবাজ কালান্দারের শানে রচিত হয়েছে।
ওনাকে 'লাল' নামে ডাকা হত কারণ তিনি লাল রঙের গেরুয়া পোষাক পরতেন। তবে এ-নিয়ে ভিন্নজনের ভিন্নমত রয়েছে। হযরত শাহ্‌বাজ সাহেবজি অত্যন্ত জালালী মেজাজের ছিলেন, তাঁর অনেক কাজ কর্মই প্রথাবিরোধী ছিল। তারপরও বুজুর্গগণ তাঁকে অনেক আদর করতেন, তাই তাঁকে #লাল বলা হতো, উর্দুতে আদরণীয়কে লাল বলা হয়। তাঁকে লাল বলার এটাই কারণ। কেবলমাত্র পোশাকের জন্য তাঁকে লাল বলা হতো এ ধারণা হয়তো ঠিক নয়।
'#শাহবাজ' বলার কারণ হল তিনি মহৎব্যক্তি ছিলেন। এবং '#কালান্দার' বলার কারণ হল তিনি সূফী সাধক ছিলেন । এছাড়া চিরকুমার সাধু যাঁরা উচ্চ আধ্যাত্মিক স্তরে পৌঁছেছেন তাঁদেরকেও #কালান্দার বলা হয় ।
সৈয়দ মুহাম্মদ উসমান মারওয়ান্দি (১১৪৯-১২৭৪) লাল শাহবাজ কালান্দার নামে অধিক পরিচিত ।
তিনি সিন্ধু , পাকিস্তানের একজন সুফি দার্শনিক-কবি ছিলেন ।
তিনি সোহরাওয়ার্দিয়া ত্বরিকার অনুসারী ছিলেন।
#প্রিয়_বন্ধুগণ,
আসুন জেনে নেই গানটির বাংলা অনুবাদঃ
দাম মাস্ত কালান্দার মাস্ত মাস্ত -
অর্থঃ মাতাল (প্রেমেনিমগ্ন) কালান্দার এখন আত্মহারা ,
ইক ভিরদ হ্যায় দাম দাম আলি আলি
অর্থঃ তাঁর প্রতি-প্রত্যেক নিঃশ্বাসে এখন আলী'র স্তুতি ,
ছাখি লাল কালন্দার মাস্ত মাস্ত
অর্থঃ সেই লাল-বসনের কালান্দার এখন আত্মহারা ,
(এখানে ১২ তম শতাব্দীর সূফিসাধক লাল শাহবাজ কালান্দার'কে ইঙ্গিত করা হয়েছে)
ঝুলে লাল কালান্দার মাস্ত মাস্ত
অর্থ: (পুনরায় লাল শাহবাজ কালান্দার' এঁর আত্মহারা অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে) ,
আখি জা মালাঙ্গা তু আলি আলি আখি জা মালেঙ্গা
অর্থঃ হে প্রেমিকেরা ! আলি আলি ডাকতে থাক , ডাকতেই থাক ,
আখি জা মালেঙ্গা সাজেয়া পে মুন লাইন গেঁ
অর্থ:হে সহগামীরা ! ডাকতেই থাক । তারা (অবিশ্বাসীরা) তোমাদের সত্যকে গ্রহণ করবে ,
আজ নে তে কাল সারে আলি আলি কাহেঁ গেঁ
অর্থ:আজ নয়তো কাল সবাই আলী আলী ডাকবেই ডাকবে
রাবনে কিন্নে শান বানায়ে
অর্থ: খোদা কত (অগণিত) মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
[ #মন্তব্যঃ "রাবনে কিন্নে শান বানায়ে এটার অর্থটা বোধয় মানুষ হবেনা মর্যাদা বা তারিফ হবে প্রভূ এতো মর্যাদা দিয়েছেন অনেক কে। হয়তো সেটাই বুঝিয়েছেন।
"রাবনে কিন্নে #শান বানায়ে'' এখানে শব্দটা যদি #ইনসান হয় তাহলে মানুষ অর্থাৎ অনুবাদকের কথাটা ঠিক আছে।]
বে কারাম তে কারাম কামায়ে
অর্থঃএবং তিনি অকৃতজ্ঞদেরও কৃপা করেছেন,
জেহদা ভি তেরে তে আঁয়ে
-অর্থঃযে তোমার দ্বারে উপনিত হয়েছে ,
ও না কাভহি ভি খালি জায়ে
- অর্থঃকেউ রিক্তহস্তে ফেরত যায় নি ,
শানা উঁচিয়া তেরাঁ পীরা
অর্থঃহে প্রতিভূ ! (মওলা আলি'কে সম্বোধিত) তোমার অনুগ্রহ উত্তুঙ্গ ,(অতি সুউচ্চ তোমার শান)
হোভান দোর হানেরিয়াঁ পীরা
- অর্থঃবদান্যতায় হৃদ-আঁধার (এমনকি আমারও) দূরীভূত করুন , হে প্রতিভূ ! ,
আসানা রেহ-মা তেরিয়া পীরা
- অর্থ:আমি আমার অগণিত প্রত্যাশা টুকে রেখেছি তোমার সকাশে , হে প্রতিভূ ! ,
সুন আরজা আজ মেরিয়া পীরা
- অর্থ:আমার আর্জিকে শ্রবণ করুন , হে প্রতিভূ !
#নাজার_কারাম_দি_পাভি_সাইয়া
অর্থঃদয়ার্ত দৃষ্টি আমরাও যেন পাই , হে প্রেমাস্পদ ! ,
#বেরিয়ান_বানে_ধাভি_সাইয়া
- অর্থঃআমাদের ভাটার টানে হারাতে দিও না হে , প্রেমাস্পদ ! ,
#ভুল_না_কিদরে_জায়ি_সাইয়া
-অর্থ: কখনও আমাদের ভুলে যেও না , হে প্রেমাস্পদ ! ,
#লাইয়ান_তোদ_নিভয়ি_সাইয়া
অর্থ:তোমার দয়ার প্রতিজ্ঞা পূরণ করিও , হে প্রেমাস্পদ !
________
বহুল প্রচারিত এ গানটি ভারতীয় উপমহাদেশে শতাব্দী ব্যাপী প্রচলিত এবং জন নন্দিত। এটি মূলত একটি কবিতার বিবর্তিত রূপ। যা সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আমীর খসরু বিরচিত ।
পরবর্তীতে এটি পাঞ্জাবী কবি বুল্লে শাহ্‌ কতৃক সংকলিত হয়।

আমার ভাংগা ঘরে চাঁদের আলো উছলিয়া পড়ে

আমার ঘরটি বেশ ছোট। সেই ছোট্র ঘরটিতে এই শীতের উত্তুরি হাওয়া হু হু করে ঢুকে পড়ে। হাড় কাঁপুনি শীতের আমেজ বেশ উপভোগ্য হয়। ঘরটির পেছনে আছে মুল খালের একটি অংশ। কাঠ দিয়ে ঘাট তৈরী করা হয়েছে। সেই ঘাটে যখন হাঁটি তখন মড় মড় শব্দ করে। মনে হয় এক্ষুণী বুঝি ভেংগে যাবে।কিন্তু ভাংগে না। শব্দ করাটা বাতিক। শব্দ করতেই হবে। নচেৎ কি ভাবে জানান দেবে সে এখনো টিকে আছে? যেমনটা আমাদের ভেতরটা ডিব ডিব করে জানান দেয়। ঠিক সেইরুপ। পার্থক্য হলোঃ একটা প্রকৃতির অংশ অন্যটি প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত। যাদের সম্মি লনে তৈরী করা হয়েছে এই ঘাটটি।
সুদীর্ঘ শীতের রাত্রি শেষে যখন প্রকৃতির নিয়মে জগন্নাথ পুর্ব দিকে উঁকি দেয়, তখন একচিলতে রোদ্দুর এসে উঠোনে আছড়ে পড়ে। সোনালী সেই রোদ্দুর জানান দেয়, সে এখনো আমাদের মতো ছা-পোষাদের কীট পতঙ্গের মতো বাঁচিয়ে রেখেছে। জগতের নাথ সুর্যদেবকে তাই সনাতনীরা প্রথানুযায়ী নমস্কার করে থাকে। অন্যদিকে চাঁদনী রাতে যখন চাঁদমামা তার আলো ফেলে তখন এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করে। পুরো উঠোনজুড়ে চলে আলো-আঁধারির খেলা। এমন মায়াবী পরিবেশে মনটা বেশ উথাল পাথাল করে। হারিয়ে যেতে চায় কোন এক অচেনা অজানা দেশে। কিন্তু চাইলেই কি তা পারা যায়? যায় না। দয়াময় যখন দয়া করে ডাকবেন, তখন অবশ্যই সেই ডাকে সারা দিয়ে চলে যেতে হবে। হারাতে হবে বিধাতার এই সাজানো সংসার। কি অদ্ভুত? তাই -না?
হযরত থাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) তাঁর চিশতী উদ্দ্যানে বলেছেনঃ
কেনোরে মন বুঝতেছো না, এ ভবের ভাবনা ভেবে, লাভ কিরে তোর ওরে কানা।
সত্যিইতো। এ ভব খেলাঘরে কিছুদিনের জন্য এসেছি। আবার চলে যাবো। কিন্তু যখন আমার সন্তানদের দিকে তাকাই, তখনই প্রাণটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। এই সন্তানদের ছেড়ে একদিন বিদায় নিতে হবে। নিয়তির এমনই বিধান যে, তা অলংঘনীয়। এই নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই।
সত্যিই.. কি রহস্যময় এই জগত সংসার.....

ছেঁড়া কাগজ ও তার আর্তনাদ

ছেঁড়া কাগজ ও তার আর্তনাদ
----------------------------
বাতাসে একটুকরো ছেঁড়া মলিন কাগজ উড়ছে। এথানে সেখানে। উড়তে উড়তে সেই মলিন কাগজটি একটি স্থানে এসে স্থির হয়ে বসে রইলো।
সেই পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন এক বুজুর্গ লোক। সে কাগজটি দেখতে পেয়ে সেটা হাতে তুলে নিল তারপর পড়া শুরু করলো। পড়া শেষ হতেই লোকটি সেটা তার বুক পকেটে রেখে দিল।
সেটা দেখে এক পথিক সেই বুজুর্গলোকটির কাছে জানতে চাইলোঃ
-জনাবে আলা, কি লেখা রয়েছে সেই কাগজটিতে।
উত্তরে বুজুর্গলোকটি উত্তর দিলঃ
-কাগজটির করুণ পরিণতির কথা লেখা রয়েছে।
লোকটি বিশদ ভাবে জানতে চাইলো। সেটা লক্ষ্য করে বুজুর্গলোকটি বললোঃ
-শুন তাহলে। আমি প্রথমেই কাগজটির কাছে জানতে চাইলাম, তুমিতো সাদা ছিলে। কে তোমাকে মলিন করলো? সে জানালো-কলমকে জিগ্যাসা কর। আমি কলমের কাছে জানতে চাইলাম, তুমি কাগজটিকে মলিন করলে কেন? কলম উত্তর দিল-তার জন্য তোমরাই দায়ী। আমি বললাম কিভাবে? সে জানালোঃ আমার লেখার সাধ্য নেই। তোমরা মানুষেরা আমাকে দিয়ে যা খুশি লিখিয়েছো। অামি সেভাবেই চলেছি। তোমাদের হাতের পুতুল হয়ে। কাজেই আমাকে দোষ দিও না। আমি ভেবে দেখলামঃ ঠিকইতো। আমরাইতো তাকে মলিন করেছি। কাজেই আমার উচিত তাকে যথাযথ সম্মাান দেয়া। তাই তাকে বুকে তুলে নিয়েছি।

#সংসার

#সংসার
সংসার=সম্+সার। সম মানে সমান। আর সার মানে মুল বা মৌল। অর্থাৎ মুল বিষয়ে সমান অধিকার। চেয়ে দেখ জগত সংসারের দিকে। সর্বক্ষেত্রেই দেখতে পাবে, #জগতপতি সকলকেই সমান অধিকারে তার সমস্ত বিষয়াবলি বিলিয়ে দিচ্ছে।
তুমি যদি তোমার সংসারের দিকে তাকাও, তাহলে দেখতে পাবে, পিতা-মাতাতো দুরের কথা, তোমার অতি নিকটাত্মীয়ও এমনকি তোমারই রক্তের ভাই-বোন তোমার মতো নয়। তুমিও তাদের মতো নও। সকলেই সঙ ধরে মুল বিষয় নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। যে সংসারে এই মনোভাব বিরাজ করে, সেটা সংসার নয়। তাহলে সেটা কি? সেটা হলো সঙ ধরা সার। অর্থাৎ #সঙসার

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বেলুন বাঁশি - দ্বিতীয় পর্ব


(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
-ঐ মিয়া, তুমি কি মসনবী শরীফ পড়ছো? মনা মোবারকের দিকে তাকিয়ে বললো..
মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহঃ) তার মসনবী শরীফের প্রথমেই কইছেঃ
বিশনু আজ না এচু হেকাইযে মিকুনাদ
ওয়াজ জুদাই হা শিকাইয়েত মীকুনাদ।
 অর্থঃ মাওলানা রুমী (রহঃ) বলেনঃ বাঁশের বাঁশি যখন বাজে,তখন তোমরা মন দিয়ে শোনো, সে কি বলে? সে তার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হয়ে ক্রন্দন করছে।
এই দেহডা অইতাছে বাঁশের বাঁশি। এই দেহডারে মাওলানা বাঁশের বাঁশির সাথে তুলনা করছে। বাঁশের ঝাড় থিক্ক্যা বাঁশটা কাইট্র্যা আননের ফলে ঐ কাডা বাঁশটা যেইডা দিয়া বাঁশি বানাইছে,হেইডা তার আগের জায়গায় মানে অইলো ঐ বাঁশ ঝাড়ে যাওনের লিগ্গ্যা কানতাছে।

-এইহানে কান্দনের কি অইলো?

-ধুর ব্যাটা..তুই বুঝলে তো কামই অইছিলো। বাঁশের ঝাড় মানে অইলো আলমে অারওয়াহ। যেহানে সমস্ত রুহগুলিরে আল্লাহ্ বানাইয়্যা রাকছিল..হেই হান থিক্ক্যা এই জমিনে আওনের ফলে অর মনে যে ব্যাথা বেদনা, হেইডা মনে কইর‌্যাই কান্দে...বুছবার পারছো?

-এইডা তো মাউলানা সাহেবের কতা...আপনে যে বেলুন বাঁশির কতা কইতাছিলেন,হেঁইডা কন হুনি...

-হুন। আমাগো দেহের মইধ্যে বাতাস ধইর‌্যা রাখনের লিগা যেইডা আল্লাহয় বানাইছে, হেইডারে আমি বেলুন দিয়া বুঝাইছি। আর ছোড এই যে কন্ঞ্চিটা দেকবার পারতাস..এইডা অইলো গিয়া গলা....আর এই যে বড় বাঁশের মোডা অংশডা দেকতাছস, যেইডা দিয়া বাতাস বাইর অইলে বাজে, হেইডা অইলো হলকুম...এই যে গলার মোডা অংশডা।
আল্লাহয় যখন রুহ ফুঁইক্যা দেয়, তহন একটা বাতাস আদমের দেহতনে ঢূইক্ক্যা যায় নাক দিয়া.....এইডা অইলো আধ্যাত্মিক বাতাস। আল্লাহর এই ফুঁ দেওনের ফলে আদম চৈতন্য পায়। মানে অইলো আদম জাইগ্গ্যা যায়..হেই বাতাসটা হেইহানেই বইয়্যাই হেয় দেহরাজ্যে রাজত্ব করতাছে...এই যে ডুব ডুব শব্দ হুনতাছোস, এইডাই অইলো হেইডা। বেলুন বাঁশি....হের বাঁশি হেয় যেমতে মন চায়, হেমতে বাঁজায়....অামরা খালি হুনি....

আমার হৃদয় বীণায় কেমন করে বাজাও তুমি সুর
আমি শুনি সেই সুর, বড় সুমধুর।।
তোমার সুরে মাতওয়ারা এই জাহান, করে এই আহব্বান
লা হু আল্লাহু, ওয়াহ্ দাহু লা শারিকা লাহু।।

এইডা অইলো হেইডা, যেইডারে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন নাফাক্ তু ফি মির রুহি কয়....

মনার কথা শুনে মোবারক কি বুঝলো কে জানে, সে বিকট একটা চিৎকার দিয়ে কান্না কাটি শুরু করে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় মনা হতভম্ব হয়ে যায়...সে কি বলবে...কিছুই বুঝতে পারছে না....সে কেবল অাউড়াচ্ছেঃ

ছিনাহ খাহাম শরাহ অাজ ফেরাক
তা বগুইয়াম শরহে দরদে ইশতিয়াক।
অর্থঃ অামার বিচ্ছেদের ব্যথা অনুভব করার জন্য ভুক্তভুগী অন্তর দরকার। পাষাণ অন্তঃকরণ আমার যাতনা বুঝতে পারবে না...তাই যে অন্তঃকরণ বিচ্ছেদের ব্যথায় টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সেই অন্তঃকরণ পেলেই আমার ব্যথা ব্যক্ত করিবো। অন্যথায় আমার রোদন বৃথা যাবে।

বেলুন বাঁশি - প্রথম পর্ব

আজ সকালে ছেলে-মেয়েরা সবাই তাড়াতাড়ি করে মেলায় চলে এসেছে। মেলা শেষ হতে আর বেশি দিন বাকী নেই। তাই যারা বাদ পড়েছিল কেনাকাটায়, তারা আজ খুব সকাল সকাল চলে এসেছে। সাথে ছেলে-মেয়েদের হৈ-হুল্লোড় , চিৎকার চেঁচামেঁচিতে যেন মৃতবৎ মেলাটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

দোকানীরা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। শেষ সময়ে যাতে পুঁজি নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে পারে, তারই একটা প্রতিযোগীতা চলছে। সকল দোকানদাররা তাদের জিনিস পত্রের দাম কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে তৈজস জিনিস পত্রের দাম কম হওয়ায় গৃহিণীরা ব্যস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি তাদের পছন্দ মাফিক জিনিস কিনছে। কিন্তু একটা জিনিসের দাম কিছুতেই কমছে না। সেটা হলোঃ বেলুন বাঁশি। একটা বাঁশের বাঁশি ও একটি বেলুন একত্র করে বানানো হয়েছে। বাঁশিটিতে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে দিলেই বাঁশিটি বাজতে শুরু করে। বাশিটি আহামরি কিছুই নয়। কিন্তু সেই বাঁশিটি কেনার জন্যও মনা পাগলাও ছেলে-মেয়েদের সাথে বাঁশিওয়ালার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। সেও একটি বাঁশি কিনতে চাইছে। কিন্তু বাঁশিওয়ালার এককথা। দাম দশ ট্যাকা। এক ট্যাকাও কম না।
মনা বাঁশিওয়ালাকে লক্ষ্য করে বলছেঃ

-বাই, দুই ট্যাকা কম রাখেন। এই ধরেন আট ট্যাকা...

-কইলাম না, একট্যাকাও কম অইবো না....

-দেননারে বাই...এই আপনের পায়ে দরি...বাই বাই দেন...

-অই মিয়া, তুমি এই বাঁশি দিয়া কি করব্যা...

-হেইড্যা জাননের কাম নাই।

মনার অনেক পীড়াপিড়িতে বাধ্য হয়েই দোকানী মনার কাছে একটি বেলুন বাঁশি বিক্রি করে। বাঁশিটি হাতে পেয়ে মনা এতই খুশি হয়ে গেছে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না....তার এই উল্লাসের কারণ কি? কেউ তা ধরতে পারছে না। আর মনাও সেটা বলতে চাচ্ছে না...
বাঁশিটি পেয়ে মনা সেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। দেখছে আর ফুঁ দিয়ে বেলুনটি ফুঁলিয়ে বাঁশিটি বাজাচ্ছে। বাঁশিটি বাজছে আর মনা হাসছে। তার হাসি আর কিছুতেই থামতে চাচ্ছে না...হাসির থমকে সে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটা মানুষ বাঁশি বাজাচ্ছে আর সেই বাঁশিটি বাজার সাথে সাথেই সে হাসছে আর গড়াগড়ি খাচ্ছে - এমন অভুতপুর্ব দৃশ্যটি দেখে সকলেই মনাকে ঘিরে ধরেছে। মনা তাদের দেখে বিরক্ত হয়ে বলছেঃ

-কি বাইরা, খাড়াইয়্যা খাড়াইয়্যা কি দেকতাছো?

কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। সকলেই কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনা সেখান থেকে বের হয়েই একটা টং ঘরে ঢুকলো। তারপর সেখানে বসে বাঁশিটি খুললো। দেখলো একটা বাঁশের কন্ঞ্চি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। বাশের চিকন কন্ঞ্চিটি কেটে একটা পাতলা আবরণ তুলে নেয়া হয়েছে এবং সেটি সেখানেই লেগে আছে। আরেকটি বাঁশের মোটা কন্ঞ্চি গোল করে কেটে সেটার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। বাতাস যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। মোটা বাঁশের কন্ঞ্চির শেষ প্রান্তে একটা বেলুন বেঁধে দেয়া হয়েছে। ছোট চিকন বাঁশের কন্ঞ্চিটিতে ফুঁ দিয়ে বেলুনটি ফুলালে যতক্ষণ ফুঁ দেয়া বাতাস থাকে, ততক্ষণ বাঁশিটি বাজতে থাকে। এটা এমন কিছু আহমরি কিছু নয়। সবাই তা দেখেছে। কিন্তু মনার দেখা আর তাদের দেখার মধ্যে একটা বিশাল ব্যবধান আছে। সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে...সেটা দেখে মোবারক মামা তাকে জিগ্যাসা করে...

-বাই, এমুন কইর‌্যা তাকাইয়্যা তাকাইয়্যা কি দেকতাছেন....

-কি দেকতাছি, হেইডা তোমাগো কাছে কইলে মিয়া এই বাঁশির লিগ্গ্যা দেওয়ানা অইয়্যা যাইব্যা গা...

-কন কি বাই?

-ঠিকই কইতাছি।

-তয় হুনি দেহি আপনের বয়ান....

-মিয়া, বয়ান হুননের আগে চা খাওয়াও আর সিগারেট দেও...চা খাইতে খাইতে কই...

মোবারক মামা মনাকে চা এবং সিগারেট দেয়। মনা চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে থাকে...

(চলবে)