পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

বন্ধু ও বন্ধুত্ব - সম-স্বত্ত্বাবিশিষ্ট প্রাণের উপলব্দিঃ শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

প্রচলিত কোরআনের মধ্যে যে ৩১ টি আয়াতে আল্লাহ নিজেকে আমরা বলেছেন, তার মধ্য হতে প্রয়োজনীয় কয়েকটি আয়াত আপনাদের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করলামঃ-

 وَإنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ

And certainly We! we it is who give life, and cause death, and we are the Inheritors.
আর আমরাই জীবন দান করি ও মৃত্যু দান করি, এবং আমরাই ইহার উত্তরাধীকার। সূরা হিজর আয়াতঃ ২৩


إِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْأَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَإِلَيْنَا يُرْجَعُونَ
Verily, we will inherit the earth and whatsoever is thereon, And to Us they all shall be returned.
আর আমরাই সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর উত্তরাধীকার থাকিয়া যাইব। সূরা মরিয়ম আয়াতঃ ৪০


ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَى بِهَا صِلِيًّا
Then, verily, We know best those who are most worthy of being burnt therein.
আর আমরা জানি যাহারা দোজখে যাইবার অধিক উপযোগী। সূরা মরিয়ম আয়াতঃ ৭০
إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ

Verily, we give life to the dead and We record that which they send before(them), and their traces and all things We have recorded with numbers(as a record) in a Clear Book.
নিশ্চ য়ই আমরা মৃতদিগকে জীবিত করিব। সূরা ইয়াসিন আয়াতঃ ১২



وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
And indeed We have created man and We know what his ownself whispers to him. And We are nearer to him than his jugular vein(by our knowledge)
আর মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছি নফসের কু-মন্ত্রণা হইতে।আর আমরা রহিয়াছি তাহাদের স্কন্ধশীরা হইতেও নিকটে। সূরা কাফ আয়াতঃ ১৬ 

إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَإِلَيْنَا الْمَصِيرُ
Verily, We it is Who give life and cause death; and to Us is the final return.
নিশ্চ য়ই আমরাই জীবন দেই ও আমরাই মৃত্যু ঘটাই। সূরা কাফ আয়াতঃ ৪৩

نَحْنُ خَلَقْنَاكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُونَ
We created you: then why  do you believe not?
আমরাই তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি তবুও সত্য স্বীকার করিতেছ না। সূরা ওয়াকিয়া আয়াতঃ ৫৭


أَأَنتُمْ تَخْلُقُونَهُ أَمْ نَحْنُ الْخَالِقُونَ
Is it you who create it(i.e. make this semen into a perfect human being) or are We the Creator?
উহাকে তোমরা সৃষ্টি করো- নাকি আমরা সৃষ্টি করি? সূরা ওয়াকিয়া আয়াতঃ ৫৯
نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ
we have decreed death to you all, and We are not outstripped.
আর আমরাই তোমাদের মৃত্যু নির্ধারণ করিয়াছি। আর আমরা উহাতে অসমর্থ নই। সূরা ওয়াকিয়া আয়াতঃ ৬০
أَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ
তাহা তোমরা অঙ্কুরিত করো- না আমরা অঙ্কুরিত করি? সূরা ওয়াকিয়া আয়াতঃ ৬৪
Is it you that make it grow, or are We the Grower?


إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنزِيلًا
Verily, it is We Who have sent down the Qur'an to you (O Muhammad PBUP)by stages.
নিশ্চ য়ই আমরা নাযিল করিয়াছি নাযিলকৃত কোরআনে। সূরা দাহর আয়াতঃ ২৩

সোহেল সাহেব ক্ষেপে গিয়ে বললেনঃ

-অারে আপনে থামেনতো ?

-কেন ভাই? কি সমস্যা.....

-সমস্যা আছে।

-সমস্যা আছে? মানে কি? তাই বলে কি সত্যটা প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই?

-শুনেন, মানুষের প্রচলিত চিন্তা চেতনা ছাড়াও বংশানুক্রমিকভাবে অনেকেই মুসলমান সেজে বসে আছে। তারা তার বাপ-দাদার ধর্ম মতে ইসলাম ধর্ম নামস্ববর্স্ব রুপে মুসলমান হিসেবে দুনিয়াতে জাহির হয়ে আছেন। তাদের সংথ্যা অগণিত। তারা শুনলে ক্ষেপে যাবে। কারণ, আপনি আপনার যে দর্শনের কথা বলছেন, সেটা তারা দেখতে যাবে না। আর বিশ্বাস করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। তাই বলছিলাম কি, এসব চিন্তা চেতনা বাদ দিয়ে বিয়ে থা করে সংসারী হউন। তাতেই মংগল।

-হুম..কথাটি মন্দ বলেননি....কিন্তু যে ইসলামের জন্য দয়াল নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রাণ প্রিয় নাতী ইমাম হুসাইন(আঃ)-কে কুরবাণী দিলেন, সেটার কি হবে? যে ইসলামের আলোকে আলোকিত পুণ্যময় জীবন, সেই জীবনকে অস্বীকার করে কি পার পাওয়া যাবে?

-তা যাবে না...কিন্তু অনুর্বর মস্তিষ্ক সম্পন্ন কিছু নাম স্বর্বস্ব মুসলমানদের জন্য তা সম্ভবপর হবে বলে মনে হয় না...যাই হোক আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি। একটু ভেবে দেখবেন...

একথা বলে সোহেল সাহেব বের হয়ে গেলেন।

সোহেল সাহেব চলে যেতেই তিনি ভাবলেন...নাহ্ বহুত হয়েছে...আর নয়....যারটা সে.ই বুঝবে..চলুক যেভাবে চলছে....ক্ষতি কি...

সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৭

বন্ধু ও বন্ধুত্ব - সম-স্বত্ত্বাবিশিষ্ট প্রাণের উপলব্দি

ইদানিং রহিম সাহেবের কি যেন হয়েছে। কোন কিছুতেই তার মন বসছে না। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে গেছে। কারণ কি? রহিম সাহেব নিজেও তা বুঝতে পারছেন না। একটা কিছু রাখলেই পরক্ষণেই তা ভুলে যান। কোথায় রেখেছিলেন, তা তিনি মনে করতে পারছেন না। কেন এমন হয়? কে জানে.....

রহিম সাহেব কাগজ কলম বের করে কি যেন লিখতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেটিও করতে পারছেন না। মনটা কিছুতেই স্থির হতে চাইছে না। কি করা যায়.....রহিম সাহেব আবার ভাবা শুরু করলেন। তিনি এবার নতুন করে লেখার চেষ্টা করছেনঃ

বন্ধু ও বন্থুত্ব

বন্ধু ও বন্ধুত্ব হচ্ছে সমগুণ বিশিষ্ট প্রাণ। অর্থাৎ মনের সাথে মনের মিল। মনের মিল না হলে বন্ধুত্ত্ব হয় না। বন্ধু হওয়ার প্রধান শর্তই হলোঃ প্রাণের সাথে প্রাণের মনের সাথে মনের মিলনে সমাহিত হওয়া। অন্তঃদৃষ্টিতে বন্ধু হচ্ছেঃ প্রাণের যে স্পন্দনটি প্রতি নিয়ত আপনারই সাথে থাকছে সেটা। সেটা যখন বের হয়ে যায় কোন অজানা দেশের উদ্দেশ্যে, তখন শুন্য খাঁচা পুণ্যময় হয়। যে খাঁচাটি এতদিন লালন পালন করেছেন, সেই খাঁচাটিতে যে ছিল, সেই ছিল অাপনার একান্ত অাপনজন।কাজেই সেই বন্ধুটির দেখা পেতে হলে প্রয়োজন হচ্ছেঃ ধ্যান। ধ্যানের দেশেই কেবল আপনি আপন বন্ধুকে দেখতে পারবেন। সুতরাং প্রয়োজন হচ্ছে ধ্যান....ধ্যান...ধ্যান করা। এর কোন বিকল্প নেই। কেন নেই? কারণ হলোঃ যে বন্ধুটি আপনার সাথে ছিল তার একটা নাম অাছে। আর সেটি হলো রুহ্ ।

রুহ যখন এদেহে এসেছিল কোন অজানা দেশ থেকে, সেই দেশের হদিস কেবল এ বন্ধুটিই জানে। তার সাথে আপনার যে সত্ত্ব্বাটি রয়েছে, মন, সেই সত্ত্বাটির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করুন। তাকে জানতে দিন, কথা বলতে দিন। শুনুন সে কি বলে......শুধু মাত্র বোবা হলেই তার ডাক শুনতে পাবেন আপনি। যদি সে তাঁর আপন ঠিকানা বলে, তাহলে তার সাথে পথ চলুন। তাহলেই কেবল স্র্রষ্টার সঠিক ঠিকানাটা পাবেন। কেননা, তিনি এসেছিলেন-স্র্রষ্টার হুকুমে। অালমে আমরের জগত হতে। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ যিনি হুকুম দিয়েছেন, তিনি কে?

এখানে এসে রহিম সাহেব থেমে গেলেন। কি লিখবেন, ভেবে পাচ্ছেন না.....
তিনি আবার তার আপন চিন্তায় মশগুল হলেন।
তার চিন্তায় ছেদ পড়লো যখন সোহেল সাহেব এসে ডাকলেন। 
রহিম সাহেব এবং সোহেল সাহেব দুজনেই একই কলেজে অধ্যাপনা করেন। একজন ফিলোসফির শিক্ষক অন্যজন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষক। তাতে কি? তারা একই এলাকায় থাকেন। পার্থক্য কেবল একজন বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। অন্যজন বিয়ে করেননি। যিনি করেননি, তিনি হলেন রহিম সাহেব।

-কি ব্যাপার, রহিম সাহেব, কি ভাবছেন?

রহিম সাহেব ভ্রু কুঁছকে সোহেল সাহেবের দিকে তাকালেন। কিন্তু মুখে কিছুই বললেন না। তিনি যা লিখেছেন, সেটা সোহেল সাহেবের দিকে তুলে ধরলেন

-কি এটা?

-পড়েই দ্যাখেন...

সোহেল সাহেব বেশ আনন্দ নিয়েই পড়া শুরু করলেন। কিন্তু তিনি শেষের দিকে এসে ভু্রু কুঁচছে ফেললেন...তারপর তিনি রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-অাপনার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই মশাই...শুধু শুধু যেন তেন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন?

-কেন? কি হয়েছে...সেটাতো বলবেন...

-আরে মশাই, যিনি হুকুম দিয়েছেন তিনিই হচ্ছেন সেই আল্লাহ...যার সর্ম্পকে সুরা ইখলাসে বলা হয়েছেঃ কুলহু আল্লাহু আহাদ। অাল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়া লিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। 

-অারে না মশাই। তিনি আহাদও নন সামাদ ও নন। তিনি হচ্ছেন খালিক। সৃষ্টিকর্তা। এটাই তার নাম। তিনি তাঁর সর্ম্পকে বলেছেনঃ তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন। অাপনি যার কথা বলছেন, তিনি বহুধায় বিভক্ত। কোরঅানে তিনি তার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নাহনু বলে....অানা (অামি) এক বচন অথচ নাহনু অর্থ আমরা। আমি, তুমি, সে। বহু বচন। সেক্ষেত্রে তিনি একা নন। আপনারা নাহনুকে আনা শব্দটির অর্থ দিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন। অাপনাদের ধারণা, স্র্রষ্টা বহু হলে গোলযোগ লেগে যেত। কিন্তু কোরআন বলছে অন্য কথা...যথন তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, তখনই কেবল তিনি তাঁকে পরিচয় দেন, একা বলে। তার কোন দোসর নেই। কিন্তু কোন কিছু সৃষ্টির কথা বললে তিনি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেনঃ নাহনু বলে...যেমন নাহনু আকরাবু ফিহিলায়ে হাবলিল ওয়ারিদ...অামরা তোমার শাহরগের নিকটে.....

(ক্রমশঃ)