পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত-তৃতীয় পর্ব



(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

ইবলিশ বললোঃ 

আমি যদি প্রথম বৃত্তে প্রবেশ করি, আমাকে দ্বিতীয়টির পরীক্ষার অধীন হতে হবে। এবং অামি যদি দ্বিতীয়টিতে যাই, আমাকে তবে তৃতীয়টির পরীক্ষার অধীন হতে হবে। এবং আমি যদি তৃতীয়টিতে উপনীত হই, তবে আমাকে চতুর্থটির পরীক্ষার অধীন হতে হবে।
সুতরাং না না না না এবং না! এমনকি আমি যদি আমার প্রথমে না এ থাকি, আমি অভিশপ্ত হতাম। দ্বিতীয়টি উচ্চারণে আগে এবং পরিত্যাক্ত হতাম। তৃতীয়টি উচ্চারিত হওয়া অবধি, তাই আমার চতুর্থটি আর কি অর্থ বহন করে? আমি যদি জানতাম সেজদা করলে আমি রক্ষা পাব, তাহলে আমি সেজদাই করতাম। কিন্তু অামি জেনেছি ঐ বৃত্তের পরে অাছে অন্য বৃত্তগুলো। আমি আন্দাজের উপর বলেছি, যদি আমি এই বৃত্ত থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আমি, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থটি থেকে আমি কীভাবে বেরিয়ে আসবো? তাই পঞ্চম লা এর আলিফ-ই-তিনি জীবন্ত প্রভু।"

এখানে মাধ্যম ছাড়া যাকে পাওয়া বা হাসিল করা একেবারেই অসম্ভব। সরাসরি যারা আল্লাহকে পেতে চায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম এবং তার অনুগত প্রেমিক মুর্শিদ, পীর, ফকির, দরবেশ ও তরীকতের সুফীবাদের দাখিল হওয়া ব্যতীত। ইবলিসের মিশনই হল তাদের মিশন। ইবলিশ তাদের পেয়ে খুবই আনন্দিত।

ইবলিশ ভেবেছে, সে যদি আল্লাহর আদেশ মান্য করে আদমকে সেজদা করে, তাহলে ও তাকে স্বর্গীয় ইচ্ছার প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরীক্ষার অধীনে আসতে হত। কিন্তু আদমকে সেজদা না করে, তাকে পতিত হতে হয়েছে। কাজেই একই সংগে তাওহীদ যদি সত্য হয় তবে আদম অবশ্যই পরমের সাক্ষ্য দেয় - তার মধ্যেই জীবন্ত প্রভু।

তাই সুরায় আন নমলের বর্ণ প্রতীক তা-সিনের একত্বের ঘোষণার ভেতর দিয়ে মুনসুর হাল্লাজ তাওহীদের একটি যৌক্তিক সংজ্ঞার উপনীত হয়েছেন। বলেছেন, তাওহীদ সৃষ্ট আত্মসত্ত্বার এক প্রকার বিশ্লেষণ এবং তা সৃষ্ট আত্মসত্ত্বার এমন এক সর্ম্পকে যা বিষয়কে বিষয়ীর সংগে যুক্ত করেছে। আদম থেকে ইবলিশ উত্তম এই অহংকার বোধ যখন ইবলিসের মনে প্রাণে জেগে উঠলো তখনই তার আচরণের পরিবর্তন দেখা গেল। সে পরমের আদেশ অমান্য করলো। কিন্তু মুনসুর হাল্লাজ একক সত্ত্বায় বিলীন (ফানা) হয়ে তারই একত্ত্বেও ঘোষণা করলেন মানবীয় সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়েঃ

"তোমার আত্মা মিশে আছে আমার আত্মায়
মদ যেমন মিশে থাকে জলে;
যা কিছুই তুমি ম্পর্শ করো
আসলে ম্পর্শ করো আমাকে
আত্মার প্রতিটি ধাপে তুমিই আমি।"
হায়! এ কী আমি না তুমি? এ যে দুই খোদা!
সাবধান! সাবধান!! দুই বিশ্বাসের স্বীকৃতি হতে সাবধান
তোমার থাকা প্রকাশ হয়, আমার না থাকা'য়
আমার সমগ্র সমস্ত সমগ্র আমার সমস্ত জটিলতা।

হৃদয়ের দৃষ্টি মেলে দেখেছি প্রভুকে আমার
প্রশ্ন করি 'কে তুমি' সে বলে 'তুমি'
আনা মান আহওয়া ওয়া মান আহওয়া আনা
আমি যারে চাই আমি হয়ে গেছি সে
যাকে আমি চাই সে হয়ে গেছে আমি।


ফলে অামি ও আমার প্রেমাষ্পদ কস্তুরি আর কস্তুরি মৃগের মত অভিন্ন হয়ে গেছি। তাই আমরা এক সুতায় গাথা। মুনসুর হাল্লাজ যখন খোদার সংগে চুড়ান্ত বন্ধুত্বে পৌছালেন, তখন তিনি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে খোদার প্রেমে প্রাণ উৎসর্গ করলেন। তিনি বলেছিলেনঃ 'আমি খোদা' মানে আমি আর নেই।  খোদাই শুধু আছে এখন। অতএব, যে বলেছিল, 'অামি খোদা' সে খোদা ছাড়া আর কেউ নয়, যেহেতু মুনসুর আগে থেকেই নেই হয়ে গেছে।
মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী বলেনঃ

গুফ তায়েউ গুফতায়ে আল্লাহ বুয়াদ
গারচে আজ হালকু মে আবদুল্লাহ বুয়াদ।।
অর্থঃ আল্লাহর কথা আল্লাহই বলেছেন অথচ উহা আল্লাহর দাসের মুখেই শুনা যায়।
(চলবে)

রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

করিম সাহেব কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়লেন। তিনি চিন্তা করে পেলেন না - যে ইবলিশ  প্রথম অবস্থায় আজাজিল ফেরেস্তারুপে ফেরেস্তাদের সর্দার ছিল , সে কেমন করে একটি হুকুম না মেনে থাকতে পারে? কি এমন আদেশ ছিল, যা তার কাছে মানা অসাধ্য ছিল? মুলতঃ সত্যিই কি তার কাছে সেই আদেশটি না-মানার মতো ছিল? যদি তা-ই হতো, তাহলে যিনি আজাজিলকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি অন্তর্যামী নন-তিনি কি জানতেন না ইবলিশ সেটা মানতে পারবে না? না-কি তিনি জেনে শুনেই সেই আদেশটি দিলেন, যা ইবলিশের কাছে মানা দুঃসাধ্য ছিল?

তিনি মাথা চুলকাতে চুলকাতে আবার সেই বইটি হাতে নিলেন। এবং যেখানে তিনি পড়া শেষ করেছিলেন, সেখান হতে আবার পড়া শুরু করলেনঃ









সাইয়্যেদেনা মুসা বললেনঃ

- "তাকে (আল্লাহ পাক) কি মনে করতে পারো এখন?

-ওহে মুসা, শুদ্ধ মনের দরকার নেই কোন স্মৃতির। তার দ্বারা আমি ম্বরিত হই এবং তিনিও স্বরিত হন। তার স্বরণই আমার স্বরণ এবং আমার স্বরণই হল তার স্বরণ। কিভাবে আমাদেরকে পরস্পরকে স্বরণ করার ভেতর দিয়ে আমরা পৃথক হতে পারি? আমার উপাসনা এখন আরো বেশি আনন্দপুর্ণ। আমার স্বরণ আরো বেশি মহিমান্বিত। কেননা, আমি তাকে তার পরমত্বে ইবাদত করেছি আমার সৌভাগ্যের জন্য। এখন আমি তার ইবাদত করি তার (পরম) নিজের জন্য।"
যদি তিনি (পরম) আমাকে তার পরম আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেন নিখিলের আর কাউকেই আমি সেজদা করবো না এবং কোন ব্যক্তি বা কারো সামনে খাটো করবো না, আমার মর্যাদা। কেননা, আমি পরমের কোন প্রতিপক্ষ দাড় করাই না। আমার ঘোষণা অকৃত্রিম এবং আমি প্রেমিকদেরই একজন।

আল হাল্লাজ বলেনঃ আযাযিলের (ইবলিশের পতনের পৃর্ব নাম ) আধ্যাত্মিক অবস্থা নিয়ে নানা তত্ত্ব আছে। একটি তত্ত্ব বলে, বেহেশতে তার একটি মিশন ছিল এবং দুনিয়াতে আরেকটি মিশন। বেহেশতে সে সৎকাজ দেখিয়ে ফেরেস্তাদেরকে শিখিয়েছে এবং পৃথিবীতে মানুষ এবং জিনদের কাছে মন্দ কাজের মাধ্যমে তার মিশন প্রচার করেছে।

যখন ইবলিশ বলেছে, "আমি তার থেকে উত্তম, তখন সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি।" যখন ফারাও বলেছে, আমি জানি না যে আমার থেকে পৃথক স্বর্গীয়ত্ব তোমার আছে। সে তখন উপলব্দি করেননি, যে তার লোকদের মধ্যে আর কেউ সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে প্রভেদ করতে পারে। এবং আমি বললামঃ যদি তুমি তাকে (পরম) না জানো, তবে তার চিন্হ (তাজাল্লি) এবং আমিই সত্য। কেননা, আমাতে সত্যের উপলব্দি থেমে নেই।

তিনি তাকে বললেনঃ তুমি সেজদা করো নাই, হে ঘৃণ্যজন!
সে বললোঃ তারচেয়ে বলো প্রেমিক। কেননা প্রেমিক জনই হয় ঘৃণিতজন। তুমি তাই আমাকে বল ঘৃণ্য। হে সর্ব ক্ষমতাধর এবং অবিচল, অবতীর্ণ কিতাবে আমি পড়েছি যে আমার উপর এমনটাই ঘটবে। তাই কি করে আমি আদমকে সেজদা করি যখন তুমি তাকে বানিয়েছো মাটি থেকে আর আমাকে আগুন থেকে? এই দুই বিপরীতে খাপ খায় কি করে? তারচেয়ে বেশি সময় ধরে ইবাদত করেছি আর আমার আছে উচ্চতর সদগুণ ও বিস্তারিত জ্ঞান এবং আরো শুদ্ধ তৎপরতা।

আল্লাহ তিনি প্রশংসিত হোন, তাকে বললেনঃ 
-মনোনয়ন করা আমার কাজ। তোমার কাজ নয়।

সে বললোঃ 
- সব রকম পছন্দ এবং আমার পছন্দটাও তোমারই। কেননা, আমার কি ঘটবে তা তুমি ইতিমধ্যে ঠিক করে রেখেছো, হে স্র্রষ্টা। তাকে সেজদা করা থেকে যদি তুমি আমাকে বিরত করে থাকো, বিরত রাথার তুমিই তার কারণ। যদি আমি ভুল বলে থাকি, তুমি আমাকে পরিত্যাগ করতে পারো না। কেননা, তুমি শুনতে পাও সব। যদি তোমার ইচ্ছা থাকতো যে আমি তাকে সেজদা করি, আমি বাধ্য হতে পারতাম। জ্ঞানীদের এমন কাউকেই তো অামি জানি না যে, আমার চেয়ে তোমাকে বেশি জানে।"

 অন্য ফেরেস্তারা সেজদা করল সমর্থন দিতে এবং ইবলিশ অস্বীকার করল, কেননা ইতিমধ্যে সে অনেকটা কাল ধ্যানে অতিবাহিত করেছে। কিন্তু তার ঘটনা বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়েছিল এবং তার চিন্তা বিপথে গিয়েছিল, তাই সে বললঃ "আমি তার থেকে উত্তম। " সে থাকলো অবগুন্ঠনে আবৃত এবং মুল্য দিল না ধুলাকে, তার নিজের জন্য অনন্ত সময়ের পরের, অনন্ত সময়ের জন্য বয়ে আনল নরক যন্ত্রণা।

নোটঃ ইবলিশ আদমকে সেজদা করে তার একত্বের ঘোষণার সংগে স্ববিরোধ সৃষ্টি করতে চায়নি। একদিকে আদেশ মান্য করা এবং অন্যদিকে একত্বের ঘোষণার প্রতি অবিচল থাক। এই দুই বিকল্প থেকে একটিকে নির্বাচনের সংকটে পড়েছে সে। ইবলিসের ভবিষ্যৎ আল্লাহ জানেন, ইবলিশের ইচ্ছা ও পরমের ইচ্ছার অধীন। তবু যে পতিত হয়েছে, তার প্রাককালীন শুদ্ধতা থেকে, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন ইবলিশের বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন।

(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবলঃ ইবলিশের সাথে আদমের দ্বন্দ্ব সংঘাত

বিসমিলল্লাহির রাহমানির রাহিম।
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লী আলা রাসুলিহিল কারিম।

অাল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন দুনিয়ার মিশন শুরু করলেন তখন দুইটি মিশন দিয়ে তিনি শুরু করলেন। তার একটি হল ইবলিশ মিশন এবং অপরটি হলো নুরে মুহাম্মদী মিশন। এই দুটি মিশন কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। অার এই দুই মিশনের ফলে মানুষ ও জিনের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। আযাযিলের পতনের পুর্বে তার অবস্থান দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার আসল রুপ। অপরদিকে, নুরে মুহাম্মদী বিকশিত হওয়ার সময় আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন দেখিয়েছেন তার বন্ধুর আসল রুপ।

প্রেমতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে মনসুর কিংবদন্তীর নায়ক। তার নাম জানে না এমন মুসলমান খুবই বিরল। তার পুর্ণ নাম হলোঃ আল মুগিছ আল হুসাইন ইবনে মনসুর হাল্লাজ ইবনে মোহাম্মদ আল বায়জাবী। তবে তিনি মুনসুর হাল্লাজ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তার আনাল হক বা আমিই মহাসত্য বা আমিই খোদা এই তত্ত্ব সারা বিশ্বের মরমী সাধকদের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি শরিয়ত ও মারিফতের নিগুঢ় রহস্য সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।

এই সময় তিনি তার মতবাদ 'সর্বেশ্বরবাদ' প্রচার করতে শুরু করেন এবং প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। এমন কি পুর্বাঞ্চলের দিকে তিনি অর্থাৎ ভারত বর্ষে ও আগমন করেন। ভারতবর্ষে তিনি বহু কিতাব লিখে মানুষকে দান করেন। অতঃপর তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাব আল তাওয়াসিন' সমাপ্ত করেন। তাতে তিনি সর্বেশ্বরবাদ ব্যাখ্যা করেন। এই কিতাবে তিনি মানুষের উপর আল্লাহর গুণাবলীর নীতি প্রবর্তন করেন এবং ঐশী প্রেমের উম্মাদ আনাল হক এর তত্ত্ব প্রকাশ করেন। নিম্নে তার কিতাব আল তাওয়াসিন থেকে বর্ণনা করা হলোঃ

সুফী আবু উমর আল হুসাইন ইবনে মুনসুর হাল্লাজ বলেছেনঃ "ইবলিশ এবং মোহাম্মদের মিশন ছাড়া আর কোন মিশন প্রতিষ্ঠিত নাই, ইবলিশ শুধু পরম সারসত্ত্বার থেকে পতিত হয়েছিল। যখন মোহাম্মদ সারসত্ত্বার সারসত্ত্বাকে উপলব্দি করেছিলেন তখন ইবলিশকে বলা হয়েছিলঃ 

'সিজদা করো। এবং মোহাম্মদকে দেখ! 

কিন্তু ইবলিশ নিজেকে নত করেননি এবং মুহাম্মদকে দেখেননি, তিনি ডানে ও তাকাননি কিংবা বামেও তাকাননি। তার দৃষ্টি একপাশে সরে যায়নি। ধাবিত হয়নি বিশেষ পথে। ইবলিসের ক্ষেত্রে তার মিশন ঘোষিত হওয়ার পর, সে তার আধি ক্ষমতার উৎস থেকে আর ফিরে যায়নি এবং যখন মোহাম্মদের মিশন ঘোষনা করা হলো তিনি তার ক্ষমতার দিকে ফিরে গেলেন।"

আল্লাহ তাকে বললেনঃ 

"সিজদা করো।" 

সে বললোঃ "তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নয়।" এমন কি তোমার অভিশাপ আমার উপর বর্ষিত হলেও না।
অভিশাপ আমাকে কোন শাস্তি দিতে পারবে না।"

সে নিপতিত হল করুণাময়ের অভিশপ্ত সমুদ্রে, সে অন্ধ হলো এবং বললোঃ 

তুমি অন্ধ হলে এবং বললে, তুমি ছাড়া আমার জন্য আর কোন পথ নেই। আমি একজন নিরহংকার প্রেমিক।"

তিনি (আল্লাহ) তাকে বলেনঃ 

তুমি অহংকারী হয়েছো। 

সে বললোঃ যদি আমি এক পলকের জন্য তোমাকে দেখতাম আমার গর্বিত ও উদ্ধর্ত হবার জন্য সেটা হতো যথেষ্ট। কিন্তু আমিতো সেইজন যে, তোমাকে জানে অনন্ত সময়ের আগে, "আমি তার থেকে উত্তম। কেননা, আমি অধিকতর সময়ের জন্য ইবাদত করেছি তোমার।

সিনাই পর্বতে ঢালে মুসার সাথে দেখা হল ইবলিশের সাথে। এবং তিনি তাকে বললেন, 'হে ইবলিস, সিজদা করতে কে তোমাকে বাধা দিলো?

সে বললোঃ "আমাকে  যা বাধা দিয়েছে তা হল আমার প্রেমাষ্পদের একত্বের ঘোষণা। আর আমি যদি সেজদা করতাম, আমি হতাম তোমার মত। কেননা, তোমাকেই কেবল একদা ডেকে আনা হয়েছিল, " পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দিতে' এবং তুমি তাকিয়ে ছিলে। আর আমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, ডাকা হয়েছে আমাকে হাজার বার আদমকে সেজদা করতে কিন্তু আমি আমাকে আনতে পারিনি। কেননা, আমি আমার ঘোষণার অভিপ্রায়টির পক্ষেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। 

সাইয়্যেদেনা মুসা বললেনঃ " তুমি আদেশ অমান্য করেছ।"

ইবলিশ বললোঃ ওটা ছিল একটা পরীক্ষা। কোন আদেশ নয়।

সাইয়্যেদেনা মুসা বলেন, 'পাপ কি নয় সেটা? তোমার চেহারায় তো বিকৃতি দেখা গিয়েছিল।

ইবলিশ বললোঃ আহা মুসা! এটা অভ্যাসের দ্ব্যর্থকতা। আধ্যাত্মিক অবস্থা এর উপর নির্ভর করে না। বদলায়ও না। গুপ্তজ্ঞান একইভাবে সত্য থাকে যেমনটা আদিতে ছিল, বিশেষের পরিবর্তনে তা বদলায় না।"


এই পর্যন্ত পড়ে করিম সাহেবের মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে লাগলো। তিনি কিতাব 'আল তাওয়াসিন' নামক বইটি একপাশে রেখে চোখ মুদে রইলেন। আর নিজেকে কল্পনার রাজ্যে সাজালেন ইবলিশের স্থানে।
(চলবে)

শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭

মাহবুবের সান্নিধ্যঃ পথ চিন্হ ও পদরেখা

কোন এক বালুকা বেলায় গোধুলি লগনে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা পার্কের একটি বেন্ঞ্চিতে বসে খুনসুটি করছিল। তাদের সেই আনন্দ হিল্লোল এবং টিকা-টিপ্পনীও পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছিল। তারা এমন কিছুই করছিল না যে তাদেরকে সেখান হতে চলে যেতে হবে। বরংঞ্চ তাদের সেই আনন্দ ঘন মুহুর্তগুলো সকলেই বেশ উপভোগ করছিল। কিন্তু প্রেমিক যুগলের সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তারা তাদের মতোই সময়কে উপভোগ করছিল।

তোমারই প্রেমে যদি মজে থাকে মন
তবে কেন এই মিথ্যা আস্ফালন, কেন
খুঁজে ফেরে মন, যাচে দ্বিতীয় জন?
এ প্রেম নয়।  কামনা-বাসনা
অধম এ স্বপন বলে,  কেমনে করিব প্রেম
শুদ্ধশত দলে....

মুল কথাঃ
----------
জগতের একজন মাশুকের জন্য তোমার ইশক্ যদি এতোটাই বিভোর থাকে যে, তোমার আশে পাশের কথা, এমন কি পরিবেশ পরিস্থিতির দিকেও তোমার কোন খেয়াল না থাকে, তাহলে দিদারে এলাহি যারা লাভ করেছেন, সেই আশেকদের কেমন করে জগতের দিকে খেয়াল থাকে? তাদের খেয়ালতো কেবল তাদের মাশুক ইশক্ এ ইলাহীর দিকেই ধাবিত থাকে। যেমনটা থাকে ঝর্ণার পানি প্রবাহ

শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭

দাম-বাদাম

কোন এক গোধুলি লগনে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা একটি পার্কের বেন্ঞ্চিতে বসে খুঁটে খুঁটে বাদাম খাচ্ছিল। বাদামের খোসাগুলো মেঝে পড়েছিল। আর বাদামের খোসা ছাড়ানোর ফলে হাল্কা গোলাপি রংয়ের পাতলা আবরণগুলো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে পড়ছিল।
মনে হচ্ছিলঃ সেগুলো যেন প্রজাপতির মতো উড়ছে। তা দেখে বাদামের খোসাটির বেশ হিংসে হচ্ছিল। বাদামের শক্ত আবরণের খোসাটি পাতলা আবরণের খোসাটির দিকে তাকিয়ে বললোঃ


-তুমি তো বেশ আছো হে.... মনে হচ্ছে বেশ খুশি তুমি?

-কেন নয়, বন্ধু? আমাকে আমার প্রিয়জন তার ফু'য়ের ( ফূঁ দেয়া অর্থাৎ মুখের বাতাস দ্বারা উড়ানো ) জোড়ে আমাকে বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে....এখানে আমার দোষ কোথায়...

-অামি তোমার দোষের কথা বলছি না হে, বন্ধু। আমি বলছি তোমার ভাগ্যের কথা...

-তাই বলো। 
তোমার ভাগ্যতো দেখি খুবই খারাপ। তুমি সযতনে আগলে রাখো মুল অংশটিকে। কতো ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয় তোমাকে। আর সেই তোমাকেই পড়ে থাকতে হয় পায়ের কাছে। কতো লাথি-খোটা খেতে হয় তোমাকে। খাওয়া শেষ হলে তোমাকে তো কেউ চিনেই না...কতো বদ নছীব তুমি? এ কথা শুনে

শক্ত আবরণের মুল অংশটি অর্থাৎ খোসাটি কান্না ভরা কন্ঠে বলে উঠলোঃ

-ভাইরে, আমি ত্যাগ স্বীকার করছি বলেই তুমি সুরক্ষিত আছো। আমার কষ্টের কারণেই তোমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। আমার যাতনা কেবল আমিই বুঝি তুমি বুঝবে না। 

"মম যাতনা বিরহ বেদনা, সকলি হে তোমারি
তোমাকে দেখিবার তরে মম সজল আঁখিতে
অশ্রু ঝরে। ঝরে বরিষণ....
এ কেবল তোমাতেই সমর্পিতে চায়, এ হৃদয়
আঁখি জল।"

মুল বক্তব্যঃ  বাদামের মুল অংশটি আমি এবং তার অপর অংশটি তুমি। একটি দাম ও অপরটি বা-দাম। তথা দামের সহিত। যেমন তোমার সাথে তোমার প্রিয় কোন ব্যক্তির সান্নিধ্য হয়ে উঠেছে তোমার কাছে দামী।  সেই দামটাই তুমি আর তোমার সাথে যে প্রিয়জন ছিল সে হলোঃ আমি। তাই আমি দাম এবং তুমি বাদাম  অর্থাৎ দামের সহিত। 
অামি ও তুমি এবং প্রিয় মুহুর্ত - যে কোন দরবেশের জন্যই কাংখিত। দরবেশগণ, সেই আশাতেই বসে থাকেন- বাদামের জন্য।

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭

গ্যাস-বেলুনঃ মনা পাগলার অনুভব এবং অনুধাবণ-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর গুণ

মনা দেখছে ছোট ছোট বাচ্চারা গ্যাস বেলুন কিনছে। 
নানা রং বে-রং বেলুনগুলোতে গ্যাস ভরে দেয়ায় তা উপর দিকে উঠে যাচ্ছে। এবং তা বাতাসে অনায়েসে ভেসে বেড়াচ্ছে। হাল্কা বাতাস পেলেই সেই বেলুনগুলো দোল খাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সেই বেলুন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা যেভাবে পারছে, বাবা-মা, ভাই-বোন, যার কাছ থেকে পারছে টাকা এনে গ্যাসভর্তি বেলুন কিনছে। বেলুন কিনে সেই বেলুন ওড়াতে ওড়াতে মনের আনন্দে বাড়ী যাচ্ছে। আর যারা বেলুন কিনতে পারছে না, তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেলুনগুলোর দিকে। মনাও তাদের দলের একজন। তার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। তাই সে এক কোণে বসে সেই বেলুনগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

সে দেখলোঃ 

বেলুনওয়ালা একটি খালি বেলুন নিয়ে প্রথমে টেনেটুনে দেখলো। তারপর পরখ করে নিল বেলুনটি ফুটো কি-না? সেটা দেখার পর গ্যাস চালিত একটি সিলিন্ডারের মুখে বেলুনটি পুরে দিল। তারপর সেই বেলুনটিতে গ্যাস ভরে দিল। এরপর সেটার মুখ শক্ত করে বেঁধে সুতো দিয়ে বেঁধে দিল। সেই সুঁতোর টানে বেলুনটি উপরে উঠে ভাসতে লাগলো।

সেটা দেখে কি মনে করে মনা পাইছি রে পাইছি বলে চিৎকার করে উঠলো। তারপর ধেই ধেই নাচতে লাগলো। তার সেই উদ্ভট নাচ দেখে মানুষজন জমে গেল। তারা জানতে চাইলো কি হয়েছে? কেন সে পাইছি পাইছি বলে চেঁচিয়ে উঠলো? সে কি এমন জানতে পেরেছে যে, যার জন্য পাইছি রে পাইছি বলে চিৎকার করতে হলো ? প্রশ্নটা করলেন সোহেল ভাই। 

প্রশ্নটা শুনে মনা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো এবং দার্শনিকের ভংগিতে বললোঃ 

-কমু ক্যান?

-না বললে তাহলে কেন চিৎকার চেঁচামেচি করলি? 

-করছি আমার মনের ইচ্চা হইছে তাই চিল্যাইছি

-দ্যাখ্ ভাই, জানি তুই কিছু একটা বুঝতে পেরেছিস। আমরা সেইটাই জানতে চাইছি...

-হুম। শোন্ তাহলে...

একথা বলে মনা তার ভাবের কথা প্রকাশ করতে লাগলোঃ
অামি দেখলাম, বেলুনওয়ালা বেলুনগুলো  নিয়ে পরখ করে ফুটো আছে কি-না সেটা পরীক্ষা করছে। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সেটাতে গ্যাস ভরে বাতাসে ভাসিয়ে দিল। অামি চিন্তা করলাম, আল্লাহ পাক ঐ বেলুনওয়ালার মতো আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। তারপর যাকে তিনি বেছে নেন, সেটাতে তিনি ঐ বেলুনওয়ালার মতো রুহ ফুঁ দেন। রুহ ফুঁকে দেয়ার ফলে সে ঐ বেলুনের মতোই শুন্যে ভাসবে। কিভাবে?
অাল্লাহ পাক আমাদের সেই মন্ত্রটা শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই মন্ত্রটা হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাাদুর রাসুল্লাহ (সাঃ)। 

লা মানে মহা শুন্যতা। শেরেক শুন্য অবস্থা।
ইলাহা অর্থ উপাস্য । ইলাহ দুই প্রকার। ১, নারী ইলাহ এবং ২. পুরুষ ইলাহ। এই ইলাহ হলোঃ পুরুষ ইলাহ। পুরুষ ইলাহা মোহশুন্য মোহ-মুক্ত মন। ইল্লাল্লাহ -ইল্লাহ অর্থ ব্যতীত + আল্লাহ।
আল্লাহ = আল+ইলাহ। আল অর্থ প্রতিষ্ঠিত। ইলাহ অর্থ উপাস্য । আল্লাহ = প্রতিষ্ঠিত উপাস্য। এখানে উপাস্য হচ্ছেন সেইব্যক্তি, যিনি যার মনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন। মনের কেন্দ্র বিন্দুটিই আল্লাহ। নারী ইলাহ কখনোই মোহ থেকে মুক্ত হতে পারে না। কারণ, এই ইলাহ লা-সালাতিদের ইলাহ। সালাত প্রকৃয়ায় বসে উদয়-বিলয় ঘটিয়ে মনশুন্য তথা মোহ মুক্ত করে ফেলেন। তথা যাকাত দিয়ে ফেলেছেন। বিলিয়ে দিয়েছেন। খালি করে ফেলেছেন। তাই মন মহা শুন্যবস্থা বিরাজ করে।
মুহাম্মাাদুর রাসুল্লাহ (সাঃ) মুহাম্মাাদ আল্লাহর রাসুল। এখানে ব্যক্তি মুহাম্মাাদের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কোরআন মতে, ব্যক্তি মুহাম্মাদ নুরে মুহম্মদী হতে পৃথক কোন সত্ত্বা নয়। নুরে মুহম্মদী হচ্ছেনঃ Divine character and qualities attained in the person of a Muhammad is Noore Muhammadi. অর্থাৎ যে কোন একজন মোহাম্মাাদ দ্বারা অর্জিত স্বর্গীয় চরিত্র এবং গুণাবলীকেই "নুরে মুহাম্মাাদী" বলে।

আউয়ালে মোহাম্মাাদ, আখেরে মোহাম্মাাদ, জাহেরে মুহাম্মাাদ, বাতেনে মোহাম্মাাদ। সর্বযুগেই মোহাম্মাাদ সশরীরে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ অাউয়ালুনা মোহাম্মাাদ, আখেরুনা মোহাম্মাাদ, আওসাতুনা মোহাম্মাাদ, কুল্লানা মোহাম্মাাদ।" অর্থাৎ আমাদের আদি মোহাম্মাাদ, আমাদের শেষ মোহাম্মাাদ, অামাদের মধ্য হইল মোহাম্মাাদ আমাদের সবাই মোহাম্মাাদ। আল্লাহর অাপন চরিত্রই সৃষ্টির মধ্যে মহা গুরুর অভিব্যক্তিরুপে যুগে যুগে সে সকল বিকাশ হইয়া থাকে তাহাই নুরে মোহাম্মদী। পরম গুণাবলীর অপ্রকাশিত রুপ হইলেন নিরাকার আল্লাহ এবং প্রকাশিত অবস্থায় উহা হইলেন জাহের আল্লাহ।

নুরে মোহাম্ম দীর বিকাশ লাভের জন্যই সমগ্র সৃষ্টির প্রয়োজন হইয়াছে অথচ নুরে মোহাম্ম দী শব্দটিও কোরআনে কোথাও একত্রে নাই। একই রুপে দেখা যায় 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাাদুর রাসুলাল্লাহ' কথাটি কোরআনে একত্রে উল্লেখিত নাই অথচ ইহা সকল ধর্মের এবং কোরআনের মুলমন্ত্র। এই মুলমন্ত্র অন্তরে ধারণ করলেই গ্যাস বেলুনের মতো উড়বি। বুঝতে পারলি কিছু?

-নাহ্ । কি সব ছাই পাশ বললেন.....কিচ্ছুই বুঝি নাই
সোহেল ভাইয়ের কথা শুনে মনা পাগলা হো হো হেসে উঠলো।
বুঝাইলে বুঝতে পারি নতুবা বুঝিবে কই?

--------
মুলভাবঃ
--------
সাধারণ মানুষের মধ্যে পরম প্রভুর ভাবের অভাব হওয়ায় তারাই মুলতঃ অভাবী বলে গণ্য হয় ভাব দর্শনে। যার মধ্যে ভাবের অভাব নেই, তারাই ভাবের মানুষ। এই ভাবের মানুষের মধ্যে প্রভু প্রেম উৎপন্ন হয়ে থাকে তার আপন মুর্শিদের মাধ্যমে। সেই প্রেমের কারণেই তাদের মনে বিরাজ করে এক স্বর্গীয় সুখ। সেই সুখের কারণেই তারা জগতের কোন বস্তুবাদের মুখোপেক্ষী হয় না। নিরাসক্ত মনেই তারা ভাবের উদয়-বিলয়ে সর্বদাই খেলা খেলে থাকেন প্রভুর সাথে। তাই উদয়-বিলয়ে তারা দেখতে পান সৃষ্টির দর্শন। স্র্রষ্টা তাদের অন্তঃকরণেরই মালিক হয়েই তাদের জানান দেন সেই গোপন তথ্য যা মারিফত নামে কথিত হয়। এই গোপন তত্ত্ব কেবল তারাই অনুভব করতে পারেন যার রয়েছে একটি সুন্দর অন্তঃকরণ। তাই একটি সুন্দর অন্তঃকরণ তৈরীর কথা কোরআন পাকে বলা হয়েছেঃ কাদ আফলাহা মান যাক্কা—হা--। ওয়াকাদ খা— বা মান দাসসা—হা--। যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। সূরা আশ শামস।

এখানে বেলুনওয়ালা বলতে একজন কামেল মুর্শিদকে বোঝানো হয়েছে। যিনি তার ভক্তগণকে পরীক্ষা করে তার ভেতর ইশকে এলাহীর দিদার তৈরী করে দেন। যা বেলুনওয়ালার গ্যাস ভরার দ্বারা বোঝানো হয়েছে। রং-বেরংয়ের বেলুন বলতে দেহগত অবস্থা বুঝানো হয়েছে। আর বেলুন উড়ানোর অর্থ হলোঃ মুক্তির দেশে চলে যাওয়া...যা মুর্শিদের হাত ধরেই হতে হয়। এছাড়া অন্য কোন পদ্বতি নেই। তথা উপায় নেই। পুর্ব জামানার বুজুর্গানে দ্বীণগণ অবশ্যই কোরআন এবং রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথেই হেঁটেছেন। তাই তাদেরকে অনুসরণ করা আহলে সুলুকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। যারা এর থেকে বিরত থেকেছেন, কেবল তাদের মুখেই বুজুর্গাণে দ্বীনদেরকে নিন্দাবাক্য প্রয়োগ করতে দেখা যায়। তারাই বলেঃ পীর ধরা দরকার নেই।
প্রশ্ন হলোঃ ভারত বর্ষের মহান অলী আল্লাহ সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীব নেওয়াজ (রহঃ) কেন হযরত খাজা উসমান হারুণী (রহঃ) এর হাতে বায়াত হলেন? জগত শ্রেষ্ঠ মাওলানা রুমী (রহঃ) কেন হযরত খাজা শামস্ তাব্রীজ (রহঃ) এর হাতে বায়াত হলেন? তাদের থেকে বতর্মান জামানায় যে সমস্ত মাওলানা(!) - মৌলভীরা(?) আছেন, তারা বিখ্যাত হয়েছে গেছেন, না তারা জ্ঞানে গুণে তাদের থেকে বড়ো হয়ে গেছেন.....এই সমস্ত খান্নাস ওয়ালা ইবলিশের চামচাদের থেকে যত দুরে থাকা যায়...ততই নিরাপদে অবস্থান করবেন। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ। যাযাক আল্লাহু খাইরান....

গ্রন্থ সহায়িকাঃ  কোরঅান দর্শন-সুফী সদরউদ্দিন আহমেদ চিশতী (রহঃ)।

শেখ সা'দী (রহঃ) এর গুলিস্তা ও বোস্তা - দ্বিতীয় পর্ব

লতিফাঃ ফরীদুন বাদশাহর বালাখানার উপর নিম্নের বয়াত খুদিত ছিল -

জাহান আয় বেরাদার নমাদার বকাছ
দেল আন্দর জাহা আফেরি বন্দ ও বছ
মকন তাকিয়া বর মুলকে দুনিয়া ও পোস্ত
কে বেছিয়ারে কাছ চু-তুঁ পরওয়ারাদ ও কোস্ত
চু (আহাঙ্গা) রফতান কুনাদ জানে পাক
চেবর তখতে মুরদান চেবর রোয়ে খাক।

অর্থঃ কবি বলেন, হে ভাই ! পৃথিবী কারো জন্য চিরস্থায়ী আবাস স্থল নয়, এখানে সবাই মুসাফির। সুতরাং তোমার হৃদয় অাল্লাহ পাকের প্রতি নিবন্ধ কর এবং তা যথেষ্ট মনে কর। এ বিশাল পৃথিবীর বুকে কোন কিছুর ভরসা করো না। কেননা পবিত্র আত্মা যখন চলে যাবার জন্য উদ্যত হবে, তখন বালাখানায় মৃত্যু হওয়া আর মাটিতে মৃত্যু হওয়া একই কথা।

ব্যাখ্যাঃ খোরাসান রাজ্যের এক বাদশাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে সবুক্তগীনকে স্বপ্নে দেখলেন, তার সারা শরীর পঁচে গলে মাটির সাথে মিশে গেছে। কিন্তু শুধু চোখ দুটি কোটরের মধ্যে ঘুরছে এবং তিনি চার দিকে দেখছেন। এ স্বপ্নের তাবির করার জন্য অনেক আলেমকে আহব্বান করা হল। সকল আলেমরা তার স্বপ্নের তাবির বর্ণনা করতে অপারগ প্রকাশ করলেন। কিন্তু একজন দরবেশ সেখানে উপস্থিত হলেন এবং উক্ত স্বপ্নের তাবির বলে দিলেন। তিনি বললেনঃ 
সুলতান মাহমুদ কবরে বসে এখন পর্যন্ত দেখছেন, তার রাজ্য অন্যের হাতে চালিত হচ্ছে।

বছ নামু্ওয়ার বযীরে জমিন দফন করদাআন্দ
কায হাস্তিশ বরুয়ে জমিন বরনিশাঁ নমানাদ।
আঁপীরে লাশারা কে ছপরদান্দ যিরে খাক
খাকশ চুনা বখোরদ কাজুস্তখাঁ নমানাদ।
জিন্দাস্ত নামে ফররুখ নওশির ওয়া বকায়ের
গারচে বাছে গোজাস্ত কে নওশির ওয়া নমানাদ।
খায়রে কুন আয়ে ফুলাঁ ও গণিমত শুমার ওমর
জা আঁ পেশতর কে বাঙ্গ বর অাইয়াদ ফূলাঁ নামানাদ।

কবি বলেনঃ অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হয়েছে। যাদের নাম ও চিহ্ন এখন আর পৃথিবীতে নেই। বৃদ্ধ নওশিরওয়াঁ বাদশাহকেও মাটিতে কবর দেয়া হয়েছে। মাটি তাকে এমনভাবে হজম করে ফেলেছে যে, তার এক টুকরো হাড়ও অবশিষ্ট নেই। কিন্তু বাদশাহ নওশিরওয়াঁ খুবই ন্যায় পরায়ন ছিলেন বলে তার নাম এখনো পৃথিবীতে স্বরণীয় হয়ে আছে। যদিও অনেক দিন কেটে গেছে, নওশিরওয়াঁ বাদশাহ পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। 

অতএব, কবি এখানে উপদেশস্থলে বলছেনঃ হে মানব সকল, তোমরা উত্তম কাজ কর এবং নিজের জীবনকে লুটের মালের ন্যায় মনে কর। একদিন খবর প্রকাশ হয়ে যাবে যে, তুমি আর এ পৃথিবীতে নেই। এর পুর্বে তুমি তোমার ভালো কাজসমুহ সম্পন্ন করে রাখ, না হয় পরে তুমি আফসোস করবে।