পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমী ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-শেষ পর্ব


(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
এই পরমাত্মাকে ইসলামের পরিভাষায় কয় রুহ। রুহ সর্ম্পকে কোরআনে বেশ কিছু আয়াত আছে। এই বিষয়ে আলোচনা করনের আগে একটা কতা কইয়্যা লই। রুহ নামক বিষয় সর্ম্পকে ইহুদিরা নবীপাককে প্রশ্ন করেছিল। হেই প্রশ্ন হুইন্যা আল্লাহ পাক সাথে সাথে নবীর জবানে কয়ঃ কুল্লির রুহ মিন আমরি রাব্বি। বলুন, রুহ আমার রবের হুকুম। হুকুম মানে অইলো আদেশ। আদেশ দেওনের লিগ্যা জবান লাগে। মানে শব্দ উৎপত্তি করণের জন্য একটা যন্ত্র লাগে। যেইডারে কয় স্বরযন্ত্র। আমরা কই হলকুম মানে গলার উঁচু স্থান। হৃদয়ের মইধ্যে বুদ বুদ আকারে যে শব্দ অয় হেইডারে কয় কলুল্লাহ। নিজ দেহের মইদ্যে হেয় (রবরুপে) বইস্যা থাইক্যাই হেইহান থিক্কা হুকুম দিতাছে। জ্ঞানীগণ হেইডারে দেহনের লিগ্যাই তাগো (রবের) সাধন ভজন করে। হেইডা বুজনের লিগগ্যা কোরআন পরলে দেকবেন, বেশির ভাগই আদেশ নিষেধ করা বাইক্য। যেমনঃ তুমি কি দেখ না তোমাকে কি বস্তু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে? দ্যাহেন - প্রশ্নডা কে কারে কইতাছে? কারে দেকতে কইতাছে? যে দেকতাছে হেয় কারে দেকতাছে? যখন বস্তুর সৃষ্টি হয় তারপরই কইতাছেঃ নাফাকতু ফিহে মির রুহি। আমি তোমার ভেতর রুহ ফুঁকে দিলাম। রুহডা ভিতরে প্রবেশ করণের লগেই বস্তুটি চৈতন্যপ্রাপ্ত হয়। হের আগে হেয় (বাীজ বা আত্মা) কিন্ত্তু ছিল মৃত। যহন রুহটা থাকে তহন জীবিত থাকে। তার মাইনে অইলো রুহরুপে সেই মহান জাত পাক মানবদেহের মইধ্যেই নিজেকে প্রকাশের লীলাভুমিরুপে সৃষ্টি কইর‌্যা নুরে মুহম্মদীর সৃষ্টির প্রকাশ বিকাশ দেকতাছে। নুরে মুহাম্মদীর মইধ্যেই রুহটা প্রচ্ছন্নরুপে বিরাজিত থাকে। হেই শক্তি লইয়্যাই হেয় মায়ের রেহেমে প্র্র্র্র্বেশের জন্য আবে হায়াতে সাঁতার কাটে। সুফীদের চিন্তা চেতনা হেই  শক্তিরে কেন্দ্র কইর‌্যা। আর বাউলরা করে ঐ সৃষ্টিরুপ মীনকে। পার্থক্য এইডাই। এই রুহডাই যখন সাধনার বলে বাইরে আহে তহন হেইডারে কয় হুর। নিজরুপে নিজকে দেহাই অইলো মুল সাধনা। সৃষ্টির মুল বিষয় অইলো নুর মুহাম্মদ। এই নুর মুহাম্মদ থিক্ক্যাই সকল কিছুর সৃষ্টি। আল্লাহ পাক বলতেছেন হেই নুর মুহাম্মদকে লক্ষ্য কইর‌্যাঃ যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম, তাইলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না। লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক। আর এই নুর মুহাম্মদীরই পরিপুর্ণ প্রকাশ জাহিরী নবী মুহাম্মদ। নাবালক বাচ্চারে বুঝাইনলার লাইগ্যা একটা মেছাল লাগে। মেছাল না দিলে হেয় বুঝবার পারে না। নুর মুহাম্মদীর মেছাল অইলো জাহিরি নবী মুহাম্মদ। আর হের জবানেই পাইঃ আউয়ালু মা খালাক আল্লাহু নুরী অানামিন নুরুল্লাহি ওয়া কুল্লু শাইইমমিন নুরী। আল্লাহ পাক সর্বপরথম আমার নুর সৃষ্টি করছেন। আমি আল্লাহর নুর থিক্ক্যা আর সমস্ত মাখলুক আমার নুর থিক্ক্যা। সুফীগণের চিন্তা চেতনা বাউলগো চিন্তা চেতনার লগে মিলে না। বাউলরা যেইহানে শ্যাষ করে সুফীরা হেইহান থিক্ক্যা আরম্ভ করে। বাউলগো লগে সুফীগো কহনোই মিলে না। তাই বইল্যা সুফীরা কহনো বাউলগো গাইল্লায় (বকা-ঝকা করা ) না । হেরা কাউরে মারামারি ধরাধরির মইধ্যে নাই। যার যারডা লইয়্যা হেয় হেয় ব্যস্ত। অন্তরের মইধ্যে বাত্তি জ্বালানের লিগ্যা জিকির করণ লাগে। রেয়াজত, ধ্যান-সাধনা করণ লাগে। খালি পইড়্যা পইড়্যা মুখস্ত কইর‌্যা বিদ্যার জাহাজ অইলেই অইবো না। দেহের মইদ্যে বাত্তি জ্বালান সহজ কাজ না...বুঝবার পারছেন।

মনার কথা শুনে অনেকেই বাহবা দিতে লাগল। কেউ বা কিছুটা সন্দেহের চোখে দেখলো। কিন্ত্তু কেউ কিছু বললো না। কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরও পায়নি। মনা কেবল ভবার দিকে তাকিয়ে বললোঃ চল যাই। এই বলে তারা আবার হাটা শুরু করলো। কিন্ত্তু কি আশ্চর্য্য কেউ আর আগের মতো হাসছে না। কেমন যেন নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে হাটছে। তাদের দিকে তাকিয়ে সরকার সাহেব মনে মনে বললেনঃ সকলকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক না। কার ভেতর তিনি খেলা করছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন।

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমী ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব সপ্তম

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা যেভাবে বলছিল তাতে অনেকেই বিমোহিত হয়ে শুনছিল। যখন মনা বললোঃরুহটা হলো অবিকল নিজের মতো দেখতে, তখন অনেকেই যেন অন্য জগতে চলে গিয়েছিল। একজন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে কি দেখতে পেলো, কে কাকে দেখলো? কিছু্ই বুঝা গেল না। শুধু তাকিয়ে থেকেই যেন বুঝতে চেষ্টা করছিল-মুল বিষয়টি কি? সবচেয়ে বড়ো কথা হলো-সেই রুহের আকার প্রকার কিছুইতো বুঝিয়ে বলতে পারছে না। কেবল আবেগের বশেই যেন বলে যাচ্ছিল মনা। তাছাড়া সে যেভাবে বলছে তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে সে তাকে দেখেছে। রহিম চাচা হটাৎ করেই মাঝ পথে এ কথাটা জিগ্যাসা করে বসলেন। 

-বাজান, তুমি তারে দেকছো?

মনা এ কথার কোন জবাব দিল না। ঠায় ধুম ধরে বসে রইল। কথা বললো ভবা পাগলা। মনার কথার রেশ ধরেই সে বলা শুরু করলোঃ

-হুনেন, দেহনডা এত সহজ না। গুরুর সাধন ভজন না হইলে কেমতে তারে দেকবার চান? কন? আপনেই কন চাচা মিয়া? এইডা কি সম্ভব?

-না বাজান। হেয় যেইভাজে কইছে মনে অইলো হেয় যেন দেকছে। হের লাইগ্যাই জিগাইলাম বাজান। অন্য কিছু মনে কইর‌্যা কিছু কই নাই।

-বাজান, যারা দেহে হেরা কোন কতা সহজে কয় না। হেরা থাকে নীরবে। নিভৃতে। মানুষের ভীড়ের মইধ্যে হেগো খুঁইজ্যা পাওন যায় না। আপনেরে একটা গান হুনাই। সেই গানডা আমার দাদা পীর লেকছে। গানডার মর্ম বুঝবার পারলে আপনে অনেক কিছুই জানবার পারবেন। বুজবার পারবেন। গানডা অইলোঃ

হে শুজনী গুল বদনী চন্দ্রাননী নয়ন বাঁকা
মুক্তাকেশী প্রাণ প্রিয়াসী চন্দ্রশশী চরণছায়া।।
তব কাননে ধীর গমণে কুসুম কলি ফুটাও চরণে
বিহঙ্গগণে ললিত তানে প্র্র্রেম আলাপন করিবে সদা।
উদিত শশী কিরণ রাশি দুরিবে ভাতি মেঘের কালায়
তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া।
উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমার আমার রবে না চিনন
তুমি অাসিলে রব না আমি তোমার আমার হবেগো দেখা।
কি আছে আমার সকলি তোমার ছলনা কেন করগো নাথ
ধরা পড়িয়ে সাজে কি তোমার করিতে এখন নানা বাহানা।
খন্ঞ্জন গমন মৃগয়ালোচন ওরুপ রাশি লুকিবে কোথা
প্রেমিক সুজন এহেন রতন হারে কি কখন পাইলে দেখা।
সর্বত্র তুমি যেথায় লুকিবে আমাতে তোমার খোঁজ মিলিবে
তেরা শাহাপীর হবে না অধীর তোমার আমার হবেগো দেখা।

ভবা গানটা শুনিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল। দেখতে দেখতে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। বিশেষ করে যখন ভবা গানটা করছিল সেই গানের সুর শুনে আশে পাশের থেকেও লোকজন জড়ো হতে শুরু করলো। ঘরটির মধ্যে তিল ধরণের ঠাই নাই। সকলেই উঁকি ঝুঁকি মারছে। দেখতে চাইছে কে গান করছে? গান গাওয়া শেষ হলে মনা আবার ক্রমান্বয়ে মুখ খোলা শুরু করলোঃ

হুনেন আপনেরা জানতে চাইছিলেন না হের আকার আছে নি? হের আকার আছে। জগতে এমন কিছুই নাই যার আকার নাই। আকার ছাড়া নাম অয় না। আগে হুনছিলাম গ্যাস যেইডারে কই, হেইডা বুজি দেহা যায় না। এহন গ্যাস লাইটের মইধ্যে যেই পানি দেহি, হেইডা কি? পানি নাকি গ্যাস? হেই গ্যাসটারে আমরা খালিচোখে দেহি না। কিন্ত্তু হেইডারে যখন একটা স্বচ্ছ পাত্রের মইধ্যে আটকাইলে দেহা যায়, তাইলে রুহটা দেহা যাইবো না ক্যা? হেইডাতো এই দেহর মইধ্যেই কুল্লে শাইইন মুহিত অইয়া আছে হৃদয়ের মইধ্যে। প্রত্যেকটা বস্তুর মইধ্যেই হেয় আছে মুহিত রুপে। তথা মিশে আছে সত্তাসার অইয়্যা। হিন্দুরা কয় হেইডারে পরমাত্মা। হেইডার আয়তন চুলের আগার দশ সহস্রভাগের একভাগের সমান।
হিন্দুগো ধর্মগ্রন্থ শ্বেতাশ্বর উপনিষদে কইছেঃ
বালাগ্র শতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ।
ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয় স চানস্ত্যায় কল্পতে।।[শ্বেতা ৫/৯]
গীতায়ও ঠিক হেইভাবেই কইছেঃ
কেশাগ্রশতভাগস্য শতাংশর সদৃশাত্মকঃ
জীবঃ সূক্ষ্ম স্বরুপোয়ং সংখ্যাতীতে হি চিৎকণ।। 
(চলবে)

শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমী ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব ষষ্ঠ

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা পাগলা যখন বলছিল আল্লাহর আকার আছে, তাকে দেখা যায়। তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক গুন্ঞ্জন শুরু হয়ে যায়। তারা ছোট বেলা থেকেই শুনে আছে আল্লাহ নিরাকার। তার অাকার নেই। সে বেমিছাল। কোন মিছালই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাহলে এই পাগলা যে বলছে-হেরে দেখা যায়। হের আকার অাছে। হেয় থাহে অন্তরের মণিকোঠায় আবার বলছে সুরা নুরের মইদ্যে হের বর্ণনা আছে। কি সেই বর্ণনা? সে দেখতে কেমন? কেমন তার আকার? আবার সে কিরুপে মোমিনের অন্তরে বাস করে? সমস্ত কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জানতে চাচ্ছে সেই মহান জাত পাক সুবহানের চেহেরা সর্ম্পকে।পিন পতন নীরবতায় মনা পাগলা বলা শুরু করছেঃ

আল্লাহ সুরা নুরের ৩৫ নং মইধ্যে কইছেঃ "আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্।মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ  আল মিসবাহু ফী যুজাজা। আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা। লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার।নূরুন আলা নূর। ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।" এইহানে শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুন মানে অইলো শাজারা মানে গাছ বা বৃক্ষ মুবারাকান মাইনে অইলো পবিত্র আর জাইতুন মানে অইলো জলপাই। তার মানে শাজারাতিম মুবারাকাতিন যাইতুন পবিত্র জলপাই গাছ বুঝাইছে। এইডা অইলো রুপক ভাষা। এইডার আসল রুপ অইলো একজন কামেল-মোক্কাম্মেল অলি-আউলিয়া। বা ধরেন গিয়া একজন মুমিন ব্যক্তি। সুরাডা ব্যাখা করলে অয়ঃ

অাল্লাহু নুরুন সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। 
আল্লাহ আসমান এবং জমিনের নুর। অালো ছাড়া আমরা দেকতে পারি না। যহন কোন কিছুর আলো আমাগো চোহে পড়ে আমাগো চক্ষের রেটিনাডা আমাগো দেহনের লিগ্গ্যা সাহায্য করে। আমরা এই মহা বিশ্বের খুবই অল্প পরিমাণ দেকতে পারি। পুরাডা আমরা একবারে দেকবার পারি না। যতটুকু দেহি সেইডা মহাজগতের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। সেই ক্ষুদ্র অংশের নুরই আল্লাহ।

মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ ; আল মিসবাহু ফী যুজাজা 
এইহানে মিশকাত মানে অইলো খাঁজ কাটা অংশ। ধরেন আগে যে রাজা বাদশাহরা লাইট জ্বালানের লিগা যে খাজ কাটা অংশ ব্যবহার করতো হেইরকম আর কি।অর্থাৎ খাঁজ কাটা অংশ যেইহানে আলো জ্বালাইলে হেইডা প্রতিফলিত অইয়্যা আরো বেশি আলোকিত করে।

আর মিশবাহ অর্থ আলো।মিশবাহ আইছে সুবহ থিক্ক্যা। সুবহ মাইনে ভোর (সুবহ সাদিক) আর মিসবাহ মাইনে যে জিনিস ভোরের মতন উদ্দীপনা দেয় আলো দেয়। ফজর ওয়াক্তের যে আলো হেইডা কতো মোলায়েম। কোন কিছু পুইরা শেষ কইরা দেয় না। হেইরকম আলো আর কি। হেই আলো কই আছে? আছে একটা কাচের ভিতরে। যুজাজা মাইনে অইলো হেই কাচ। বুঝবার পারছেন। হেইডা স্বচ্ছ। পরিস্কার। পরের লাইনে আছেঃ

আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা
কাওকাবুন মানে অইলো একটা অস্বাভাবিক রকমের বড়ো তারা, বা চকচকে তারা
দুররি অইলো অত্যন্ত উজ্জ্বল আর মুবারাকাতিম মাইনে অইলো পবিত্র আর যাইতুন অইলো জলপাই।তাইলে এই আয়াতের অর্থ অইলো - লাইটটা যহন জ্বলে তহন হেইডারে দেকতে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন লাগে। আপনেরা হারিকেন দেকছেন না-হেইডার কতা চিন্তা করতে পারেন। হারিকেনের কাঁচটা পরিস্কার থাকলে আলোডা পরিস্কার দেহা যায়। হেরপরের অায়াতে কইতাছেঃ

লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার
লা মানে অইলো না। শারকিয়্যাতিন অইলো পুর্ব আর গরবিয়্যাহ মাইনে অইলো পশ্চিম। এই হারিকেনটাতে যেই তেল ব্যবহার করছে হেই তেল পুর্ব বা পশ্চিমের কোন জায়গার তেল না। এই তেল আইতাছে আল্লাহর কাছ থিক্কা।
আবার কইতাছে
" ইয়ুদি~~ উ "  মাইনে উজ্জল করা
 ” ইয়ুনি~~ উ ” মানে আগুন থিক্ক্যা
এইহানে আল্লাহ "ইয়ুদি‌‌‌‌‌‌~~ উ ব্যবহার করছে। তার মানে অইলো এই তেলটা আগুন দেয় আগুন ধইর‌া ওডে না ।
নূরুন আলা নূর । ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।  
আল্লাহ যারে ইচ্ছা তার হেই নুর দেহায়। যে আল্লাহর কাছে আলো চায় আল্লাহ তারে অবশ্যই দেহায়। হের লাইগ্গ্যাই আল্লাহ এই আয়াতে কইছে মাইয়্যাশা‍‍‍~~উ ব্যবহার করছে।
এহন আপনেরা যুদি আপনের বুকের দিকে খেয়াল করেন তাইলে দেকবেন একটা খাঁজ কাটা আছে। বুকের ভিতর একটা লাইট আছে যেইডারে আমরা কই হৃদপিন্ড। হৃদপিন্ডের চাইরপাশে একটি স্বচ্ছ কাচের মতন আবরণ থাকে। হেইডারে কয় ফিতরাহ। এই ফিতরাহ দিয়া আমাগো হৃদপিন্ডডা ঢাকা থাকে। আমরা যখন ছোড বাচ্চা আছিলাম তহন এইডা ছিল পরিস্কার। তারপর আস্তে নানান পাপের কারণে হেইডা কালা অইয়্যা ময়ল্যা পইড়্যা ঢাকা পইড়্যা যায়। তহন হেইডার আলো আর দেহা যায় না। যেই আলোডা জ্বলে হেইডা এই জগতের না। হেইডা বাইর থিক্ক্যা আসা। হেইডা অইলো রুহ। হেই রুহ যার যার মতন দেকতে। এই রুহ অইলো আমাগো সত্তা। হের কারণেই আমি আমার মতো। তুমি তোমার মতো। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা সত্তা।
(চলবে)

মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমী ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব পন্ঞ্চম

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা অবাক বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো সকলেই পিরপতন নীরবতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে তাদের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলোঃ

আমি আপনেগো কাছে যেই কতা কমু, আপনেরা তা সিরিয়াসভাবে নিয়েন না। বিষয়ডা চিন্তা কইর‌্যা দেকপেন। যুদি চিন্তা করেন, তাইলে হয়তো সত্যডারে জানতে পারবেন। দেহেন আল্লাহ পাক যহন আদমের সৃষ্টি শেষ করলেন, হেই সময় আল্লাহ পাক হগগল ফেরেস্তাগো ডাইক্যা কইছিলঃ

"ফা ইজা সাওয়াইতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মের রুহি ফা কাউলাহু সাজেদীন "- যখন আমি তাকে (আদম) সম্পুর্ণভাবে তৈরী করবো এবং তার মধ্যে আমার আত্মা ফুঁকে দিব, তখন তোমরা সকলেই (ফেরেস্তা) তার (আদম) সম্মুখে সেজদায় পড়ে যাবে। সুরা হাজর আয়াত-২৯। এই রুহটা হইলো জাননের বিষয়। এই রুহটা এই জগতের না। বাইরে থিক্ক্যা আসা কোন একটা শক্তি যেই শক্তির বলে জীব চলাফেরা করে। এই শক্তির অন্য নাম হইলো ঈসায়ী শক্তি।

হুনেন আমরা হগ্গলেই কই আল্লাহু আকবর। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ শব্দের মাইনে টা কি? আল্লাহ শব্দটারে যুদি ভালো কইর‌্যা লক্ষ্য করেন দেকবেন হেই হানে আল(আলিফ লাম) + লাহ(লাম হে) অর্থাৎ দুইডা লাম আছে। তার আগে আছে আলিফ এবং শেষে আছে হু। আল+ইলাহ+হু=আল্লাহু। আল মানে অইলো সবকিছু । যা কিছু আছে সবকিছু। ইলাহ হইলো উপাস্য বিষয় অর্থাৎ যারে উপাসনা করা হয়। আর হু মানে অইলো তিনি। তার মাইনে অইলো সার্বজনীন উপাস্য যিনি/তিনি। এই তিনিই অইলো জাননের বিষয় যেইডারে কয় রুহ। এইডা ছাড়া কোন শক্তিই কার্যকরী অয় না। হেরলাইগ্গ্যাই কয় সর্বশক্তিমান। সর্বশক্তির আধারই তিনি। তিনি ছাড়া আর কিছুই নাই। সবজায়গায়ই হের উপস্থিতি। হেরে সন্ত্তুষ্ট করণের লিগ্গ্যাই ইবাদত করন লাগে। তার বন্দেগী করন লাগে। সবচেয়ে বড় কথা অইলো কোরানে এই সর্ম্পকে খুবই কম আয়াত আছে। এইডা বড় আচানক বিষয়। হেয় হের বর্ণনাটা বেশি করে নাই। কারণডা কি?
মনা যখন এ কথা বলে সকলের দিকে তাকালেন তখন মনসুর বললোঃ

-ভাই, আফনে যে কইলেন যা কিছু আছে সবই হের। অর্থাৎ আল্লাহর। তাইলে তো ভাই আল্লাহ ছাড়া কিছুই নাই। যেই উপাদানগুলি দেহি হেইডাওতো আল্লাহর। আবার কইছেন - হেয় যেই শক্তি লইয়্যা কাজ করে হেই শক্তিরে কয় ঈসায়ী শক্তি। তাইলে তো দেহি কাম কাইজ যা আছে সবই হেয় করে। হের শক্তি ছাড়া কাম করমু কেমতে? পাপের কামওতো তাইলে হেই করে (নাউযুবিল্লাহ!)। হের শক্তি দিয়াইতো বেহেস্ত দোযক তৈরী। তাইলে হেয় কারে শাস্তি দিব? যুদি শাস্তি দেয় তাইলে হেয়তো হেরেই শাস্তি দেয়? আমরা কারা? বিষয়ডা কি বুজাইতে পারলাম কি-না জানি না। 

-ভাই, আপনের যে কতা হেইডা গুরুত্বপুর্ণ কতা। যা কিছু আছে সবইতো হের। হেয় ছাড়া জগতে কিছুই নাই। আল মাশরিকু ওয়াল মাগরিবু ফা আইনামাতুয়াল্লু ফা ছাম্মা ওয়াজহুল্লাহ। পুর্ব-পশ্চিম অতঃপর তুমি যে দিকে তাকাও হেই দিকেই আল্লাহর চেহারা। আবার কইছেঃ নাহনু আকরাবু ফি হাবলিল ওয়ারিদ। আমরা তোমার শাহরগের নিকটে। দেহেন ভাই, আপনে যদি ভালো কইর‌্যা বুঝবার চেষ্টা করেন তা্‌ইলে দেকবেন আদম এবং শয়তান ও ফেরেস্তাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লিগ্গ্যা যহন প্রতিযোগিতা অয় তখন আল্লাহর যেই শক্তি  কাজ করছিল হেইডারে কয় রব। রব মানে পালন কর্তা। অর্থাৎ আদমের পালন কর্তা অইয়্যাা হেয় আদমরে কিছু শিক্ষা দীক্ষা দিছিল। যেইডা কুরআনে আছেঃ সুরা বাকারার মইধ্যে। তাইলে হের জ্ঞান লইয়া আপনে পৃথিবীতে আইছেন শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার লইয়্যা। আশরাফুল মাখলূকাত অইয়্যা। হেই শ্রেষ্ঠত্ব আপনে বজায় রাখতে পারছেন নি, হেইডা কি হেয় বিচার করবো না? হেয়তো আপনের সাথেই আছে। হেরে লইয়্যা আপনে আকাম-কুকাম করবেন আর কইবেন হেয়ও করছে, হেইডা অইবো না। হেয় আপনের লগেই থাক্ক্যাইয়াই দেকতাছে আপনে কি করেন? আপনেরে কয় নফস। নফস নামে আত্মা। আর এই আত্মা অর্থাৎ কি-না আপনের যে দেহডা এইডা পাঁচটা উপাদান দ্বারা তৈরী। এলমে তাসাউফের ভাষায় হেই উপাদানগুলিরেই কয় আল্লাহ। তাইলে আল্লাহ একজন না। পাঁচ জন। এই পাঁচজনকে লইয়্যাই কোরআনে নাহনু কইছে। এই নাহনু মানে এগোরে অয় পাক পান্ঞ্জাতন। পাক মানে পবিত্র। তন মানে দেহ। পাক পান্ঞ্জাতন মানে পাঁচটা পবিত্র দেহ। যাগো ফকিরি ভাষায় কয়-ওয়াযেবুল ওযুদ, মোমতেনালেওযুদ, মোমকেনাল ওযুদ,আরেফল ওযুদ এবং অহেদাল ওযুদ। মানি অইলো মাটি,পানি,আগুন,বাতাস ও আকাশ। এই পন্ঞ্জভুতই অইলো সমগ্র সৃষ্টির মুল উৎস। এ্যাগোরে লইয়্যাই আল্লাহর পরিবার। হেই পরিবারের প্রধানরে কয় খালেক। মানে সৃষ্টিকর্তা। বাড়ীর মইদ্যে যে প্রধান থাহে হেরে কয় কর্তা। এই দেহঘরের মইদ্যে হেয় অইলো অচিন পাখি। কারণ দেহ মানে উপাদানগুলি জগতের রং রুপ দেইক্যা হেরে ভুইল্ল্যা গেছে গা। তারে চিনে না দেইক্ক্যাই হেরে অচিন পাখি কয়। কিন্ত্তু যারা মোমিন তারা হেরে চিনতে পারে। দেকতে পারে। হের আকার আছে। প্রকার আছে। হের অস্তিত্ব টের পাওন যায়। হেয় থাকে অন্তরের মণিকোঠায়। সুরা নুরের মইধ্যে হের বর্ণনা আছে।
(চলবে)

[ বিঃদ্রঃ আমার লেখাটি বিশেষ করে তরীকতপন্থীদের জন্য প্রযোজ্য। বেমুরীদ তথা যারা তরীকত নেননি বা যারা সাধারণ জ্ঞানের কিংবা ভাষা জ্ঞানে জ্ঞানী তারাও দয়া করে বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি না করলে খুশি হবো। এছাড়া মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রীরা অথবা যারা আরবী লাইনে লেখা পড়া করেছেন, তারাও এ লেখাটি দয়া করে এড়িয়ে চলবেন। এ নিয়ে কোন প্রকার বাহুল্য কিংবা তর্ক-বিতর্ক করার ইচ্ছা বা আকাংখ্যা আমার নেই। আপনাদের সকলকেই ধন্যবাদ। ভুল ভ্রান্তি মানুষই করে। মনা পাগলা আপনাদের মতোই মানুষ। তারও ভুল হতে পারে। পাগলের প্রলাপ কেবল মাত্র পাগলদের জন্যই প্রযোজ্য। কোন সুষ্থ্য মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। ]

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমি ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব চার

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা তখন যেন অন্য এক মানুষ। জগতের সাথে তার কোন সর্ম্পক নেই। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সমস্ত বন্ধন। সে ডুবে আছে বিভুর প্রেমে। মনা কারো দিকে দৃকপাত না করে অবলীলায় বলে যাচ্ছে একের পর এক কোরআনের আয়াত। তিনি যে আয়াতটি পাঠ করছিলেনঃ (সুরা মুমেনুন আয়াত নং ১২ "ওয়া লাকাদ খালাকনাল ইনসানা মিন সুলালাতেম মিন তীন") সেটির ব্যাখ্যায় বলছেঃ 

আরবী সুলালাত শব্দের অর্থ বিশুদ্ধ সারভাগ-যার দ্বারা কোন কিছু থেকে তার সারনির্যাস নির্গত করা  বুঝায়। আবার এই শব্দডা অন্যত্র ব্যবহার করা হইছে। হেইহানেও একই কথা বলা হইছে। আপনে দেহেন-মানুষের দেহের সারভাগ অর্থাৎ মুলবস্ত্তুই অইলো এই বীর্য। যেডারে কন মীন। হের উৎপত্তি অইলো পানি খিক্কা। কেদার(কর্দম) সারভাগ বলতে হেইসব রাসায়নিক ্‌উপাদানকে বুঝাইছে-যেইসব আহে পানির সারভাগ থিক্কা। সুরা ফোরকানের ৫৪ নং অায়াতে বলা হইছেঃ
"ওয়া হুয়াল্লাযি খালাকা মিনাল মা-য়ে বাশারান ফাজায়ালাহু নাসাবাও ওয়া সেহরান।" অর্থঃ (আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি মানুষকে পানি হইতে গঠন করিয়াছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন বংশধারা (পুরুষের মাধ্যমে) এবং আত্মীয়তার ধারা নারীদের মাধ্যমে।" কোরআনে নারী সৃষ্টির বেপারে বলা অইছেঃ

"খালাকাকুম মিন নাফসেন ওয়াহেদাতেন ওয়া খালাকা মিনহা জাওজাহা"[সুরা নিসা আয়াত ৪] অর্থঃ সেই একক সত্তা যিনি গঠন করিয়াছেন তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হইতে এবং তাহা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার স্ত্রী। এই অায়াতের পুনরাবৃত্তি হইছে সুরা আরাফ আয়াত নং ১৮৯, সুরা জু'মার আয়াত নং ৬। সুরা রুমের অায়াত নং ২১ এবং সুরা শুরার ১১ নং আয়াতে।

মনা এ পর্যন্ত বলে থামলেন। তারপর তাকালেন সরকার সাহেবের দিকে। 

সরকার সাহেব নিতান্তই গোবেচারাধরণের মানুষ। স্কুলে এক সময় ইসলামিয়াত পড়াতেন। সেই সুত্র ধরে তিনি মাদ্রাসায়ও লেখা পড়া করেছেন। নিয়মিতই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ফজর ওয়াক্তে কোরআন তেলওয়াত করেন। কিন্ত্তু কখনো এ বিষয়টি নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করেননি। করার প্রয়োজনবোধও করেননি। হালে কিছু পাগলগোছের মানুষকে দেখে তাদের প্রতি আ্গ্রহবোধ করেন এবং তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে, পুরুষের বীর্যই হচ্ছে মীনরুপী আল্লাহ। এই মিন মাতৃজঠরের পানিতে বেড়ে ওঠে। সেই পানিকেই বলা হয় আবে-হায়াত তথা জীবন পানি। তিনি তাদেরকে এ প্রশ্নটি করেননি কখনো যে - যে মীনরুপী ঈশ্বরের সৃষ্টি আছে, সে কখনো স্রষ্টা হতে পারে না। কেননা, মীন নিজেই পরনির্ভরশীল। যে পরনির্ভরশীল সে কিভাবে স্রষ্টা হয়? তাকে লালন পালন করার জন্য তার মায়ের খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। খাদ্য বিনা সে বাঁচতে পারে না। পুষ্টিকর খাবার খেলে মাতৃজঠরে ধারণকৃত শিশুটি সবল হয়। পক্ষান্তরে খাদ্য যদি পুষ্ট না হয়, তাহলে সেই শিশুটি রুগ্ন হয়। এজন্য ডাক্তাররা মায়েদেরকে বেশি বেশি করে সুষমখাদ্যের উপর জোর দিয়ে থাকেন। তাহলে যে খাদ্য খেয়ে দেহে বীজ তৈরী হয় - সেই বীজ কিভাবে সৃষ্টা হতে পারে - বিষয়টি ঠিক বোধ্যগম্য হচ্ছে না। এটা যে একটা অবান্তর চিন্তা-ধারা তা সুস্পষ্ট। একটা বীজকে বিশ্লেষণ করলে এর ভেতর পাওয়া যায় অনেক অনেক অজানা রহস্য। যেমন ক্রোমজোম। সেই ক্রোমজোম বংশধারা বা বংশগতি নিয়ন্ত্রণ করে। ছেলে-মেয়ের আকার প্রকার লিংগ ইত্যাদি। সেই ক্রোমজোমকেও বিজ্ঞানীরা এনালাইসিস করে অনেক অজানা তথ্য জানাতে সক্ষম হচ্ছেন। ডি এন এ টেষ্ট এর মধ্যে অন্যতম। তাহলে সেই ঈশ্বরকে বিজ্ঞানীরা কাঁটাছেড়া করে তছনছ করে ফেলছেন। সেটা মনে করে সরকার সাহেব একটু মুচকি হাসলেন। তিনি মনার কথার একটা যোগসুত্র খুঁজে পেয়েছেন যে অন্তত মনা সেদিকে যাচ্ছে না। তাহলে সে কোনদিকে যেতে চা্চ্ছে? সে কি বলতে চাচ্ছে - তিনি মনার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-তুমি তো দেখি বেশ জানলে ওয়ালা লোক। অনেক কিছুইতো বললা। সবই শুনলাম। মাটি থেকে কিভাবে শিশুর উৎপত্তি তাতো কোরআনের আলোকেই বললা। আমরা তো তেমন কিছুই জানি না। আমরা যেটা করি সেটা কেবল তোমাদের মতো পাগল গোছের বা্‌উলদের কাছ থেকে শুনি। ঐসব সাধনা ফাধনা আমরা করি না। তাই ঐ বিষয়টা আমাদের জানা নাই। তোমরা বাবা সাধনা টাধনা কর। তোমরাই বল। আমরা শুনি। কি কন আপনেরা? 

সরকার সাহেব উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন। উপস্থিত সকলেই সেই কথায় সায় দিয়ে বললোঃ

-ওই কউক। আমরা হগলতে হুনি।

মনা সকলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন - সকলেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্ত্তু মনা কি বলবে? ভেবে কিছু পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে যেন খেই হারিয়ে ফেলছে। সে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলো। তারপর মৌনব্রত পালন করলেন। কেউ কিছু বলছে না। সকলেই মনার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে চাচ্ছে মনা কি বলে? এ মুহুর্তে মনা যেন একজন গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। মনা ভাবতেও পারেনি তার কথা শোনার জন্য এ আগ্রহ সকলের মাঝে জাগবে? কিন্ত্তু তাকেতো কিছু বলতে হবে? কি বলবে সে?
(চলবে)

শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমি ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব তিন

(দুই পর্বের পর হইতে)

(জমিন-মৃত্তিকা-আরবী আরদ ইংরেজী আরথ) এই আরদ বা আরথ তথা মৃত্তিকার কথাটাই পুণরায় উল্লেখিত হইয়াছে সুরা নজমের ৩২ নং আয়াতে।

তিনি আরো বলেছেনঃ

ফাইন্না খালাকনাকুম মিন তুরাবেন [সুরা হজ আয়াত-৫] অর্থঃ আমরা তোমাদিগকে গঠন করিয়াছি ( বা সৌষ্ঠবদান করিয়াছি) মাটি হইতে। মানুষ যে মৃত্তিকা দ্বারা পরিগঠিত, সেই কথাটাই আবারো উল্লেখিত হইয়াছে সুরা কাহাফ ৩৭ নং আয়াতে, সুরা রুমের ২০ নং অায়াতে, সুরা ফাতের অায়াত নং ১১ এবং সুরা মুমেন এর ৬৭ নং আয়াতে।

সুরা আনআম আয়াত নং ২। এতে বলা হয়েছেঃ " হুয়াল্লাজি খালাকাকুম মিন তীনেন "। অর্থঃ (আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি তোমাদিগকে গঠন করিয়াছেন কর্দম হইতে।

মনা সরকার সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেনঃ

-আফনের কতা গুলা কিন্ত্তু আমার দিকেই টানতেছে সরকার সাহেব। ভাইব্যা দেহেন। আমি কইছিলাম আমাগো দেহের মইধ্যে যে বীজ আছে যেইগুলাকে কয় দেহবীজ, সেই দেহবীজের উদ্ভব কিন্ত্তু এই মাটি খিক্ক্যা। মাটির মইধ্যে যে গাছ-গাছালি আছে পাখ-পাখালি আছে হেইগুলারে আমরা আহার কইর‌া থাকি। হেই খাইদ্যের সার ভাগ থিক্কা অয় বীর্য। আর বীর্য মাতৃগর্ভে স্থান লইয়্যা কালক্রমে অয় মানুষ। হেইডারে আপনেরা কন সাঁই বা আলেক সাঁই, প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ। আমি আপনেরে প্রশ্ন করছিলাম যে, পুরুষের বীর্য যখন মায়ের বীর্যের মইধ্যে স্থান লওনের লিগ্গ্যা একজন আরেক জনের লগে পারাপারি করে তখন সেই বীর্যের মইধ্যে যে শক্তি, হেই শক্তিডা কোথা থিক্ক্যা আইলো? ওর মইধ্যে যদি শক্তি না থাকতো তাইলে হেইডা কেমতে হাতর (সাঁতার) কাটতে পারে? কন দেহি? হেই শক্তিরে আপনে কি কইবেন?

মনার কথা শুনে সরকার সাহেব বললেনঃ

-মুল আধারে যে শক্তি সেই শক্তি হচ্ছে ঈশ্বরের শক্তি তথা আল্লাহ পাকের শক্তি। আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টিতে বিরাজমান। সুতরাং সেই শক্তিও আল্লাহ পাকের।

-এ্যা...এইবার লাইনে আইছেন। আল্লাহ পাক বলছেনঃ আল্লাহু কুল্লে শাইইন মুহিত। আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টিতে মুহিত তথা দ্রবীভুত আছেন। তথা মিশে আছেন। দেহেন সুরা রহমান আয়াত নং ১৪। এইহানে আল্লাহ পাক কইতাছেঃ "খালাকাল ইনসানা মিন সালসালেন কালফাখখার।" অর্থঃ আল্লাহ গঠন করিয়াছেন মানুষকে কর্দম হইতে-মৃৎশিল্পের মতো করিয়া। সুরা হিজরের ২৬নং আয়াতে বলছেঃ
"ওয়া লাকাদ খালাকনাল ইনসানা মিন সালাসালেম মিন হামায়েম মাসনুন"। অর্থঃ আমরা মানুষকে গঠন করিয়াছি কর্দম হইতে নকশাকাটা নরোম মাটি হইতে।" হামায়েম মাসনুন-এর আরেকটা অর্থঃ"পচা-গলা কাদামাটি-সুদীর্ঘ সময়কালে যার চেহারা সুরত পরিবর্তিত ও রুপান্তরিত অ্‌ইছে। এই কথাটাই আবার সুরা হিজরের ২৮-৩৩ নংং আয়াতে বলছে। আবার যুদি সুরা মুমেনুন আয়াত ১২তে দেখেন হেইহানে লেকা আছেঃ "ওয়া লাকাদ খালাকনাল ইনসানা মিন সুলালাতেম মিন তীন "। অর্থঃ আমরা গঠন করিয়াছি মানুষকে কাদামাটির বিশুদ্ধ সারভাগ হইতে।

মনার কথা শুনে আশে পাশের লোকজন মনার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারা বুঝতে পারছিল না একটা পাগল কি ভাবে কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা দেয়? তারা ধরেই নিয়েছিল যে মনা পাগলা সাধারণ পাগল টাইপেরই কেউ। কিন্ত্তু মনার কথা শুনে সরকার সাহেব বেশ কিছুক্ষণ মনার দিকে তাকিয়ে রইলেন....
(চলবে)

মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমি ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি -পর্ব দুই

(প্রথম পর্বের পর)

এছাড়া আরো আছেঃ

৪. "ওয়া আনজালঅ মেনাস সামায়ে মা-আন ফা-আখরাজনা বিহি আজওয়াজাম মেন নাবাতেন শাত্তা [সুরা তা-হা আয়াত ৫৩] অর্থঃ এবং আল্লাহ তিনিই - যিনি আসমান হইতে পানি বর্ষান এবং তদ্দ্বারা আমরা পয়দা করি জোড়ায় জোড়ায় উদ্ভিত-একটা আরেকটা হইতে আলাদা। এখানে জাওজ - একজোড়া বহুবচনে আজওয়াজ শব্দের তরজমা। এই শব্দটির মুল অর্থঃ যেখানে একজন আরেক জনের মিলিত সংগী মিলিতভাবে তৈরী করে জোড়া। এই জাওজ শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় বিবাহিত দম্পত্তি কিংবা একজোড়া বুঝাতে।

৫. "ওয়া মেন কুল্লেস সামারাতে জায়ালা ফিহা জাওজায়নেসনায়নে.... " [সুরা রাদ আয়াত-৩] অর্থঃ এবং যে সমস্ত ফল(আল্লাহ) দিয়াছেন ৯জমিনের বুকে) তাহাদের দুইটিতে মিলিয়া একজোড়া। 

৬. ওয়াল্লাহু আনবাতাকুম মিনাল আরদে নাবাতান-সুম্মা ইউয়িদুকুম ফিহা ওয়া ইউখরেজুকুম ইখরাজান" [সুরা নুহ আয়াত ১৭ ও ১৮]। অর্থঃ বরং অাল্লাহ তোমাদিগকে উদ্ভুত করিয়াছেন ভুমি হইতে-উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদিগকে ফিরাইয়া লইবেন এবং তিনি তোমাদিগকে সেখান হইতে বাহির করিবেন-এক(নতুন)জাত হিসাবে।

৭. "মিনহা খালাকনাকুম-ওয়া ফিহা নুয়ীদুকুম-ওয়া মিনহা নুখরেজুকুম তারাতান উখরা " [সুরা তা-হা আয়াত-৫৫]। অর্থঃ এই জমিন হইতেই আমরা তোমাদিগকে পগিঠিত করিয়াছি এবং ইহাতেই তোমাদিগকে ফিরাইয়া লইব এবং ইহা হইতেই তোমাদিগকে বাহির করিব অন্য সময়ে। এই আয়াতে মাটি থেকে মানুষের বিকাশের উপরে গুরুত্ব আারোপ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, আমরা পুনরায় এই মাটিতেই ফিরে যাব এবং সেই সাথে এখানে এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে অাল্লাহ শেষ বিচারের দিনে এই মাটি থেকেই আমাদের পুনরুখ্থান ঘটাইবেন।

সরকার সাহেব একের পর আয়াত পাঠ করে যাচ্ছেন। তা শুনে মনা পাগলা ও ভবা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেল এবং হা করে সরকার সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইল। আর সরকার সাহেব বেশ গুছিয়ে কোরআনে পাকের আয়াতের অর্থ সহ বর্ণনা করে যাচ্ছেন। তা শুনে আশে পাশের লোকজনের মধ্যে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হলো। তারা মনা ও ভবাকে নিয়ে এবং সরকার সাহেবকে নিয়ে মতিনের দোকানের ভেতর ঢুকে গেল। 

মতিন মিয়া সরকার সাহেবকে আগে থেকেই চিনতেন। সরকার সাহেব একটি স্কুলের ইসলামিয়াতের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা শেষ করে তিনি এখন টিউশনী করে বেড়ান। তার এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন এবং বড় সামিউল অষ্ট্রেলিয়াতে কমপিউটার সাইন্সে পড়া শোনা করছে। ছোটটিও সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বাইরে যাবার চেষ্টা করছে। মতিন সবাইকে চা দিয়েছে। মনা চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভবাকে বললোঃ

-ভবা কি বুঝলি?

-তোতা পাখি। খালি কইতাছে। কইতে দে। দেখবি এক সময় সবই এক জায়গায় আইস্যা থাইম্ম্যা গেছে। তখন শুরু করিস...

-আমি ও তাই ভাবতাছি। দেহি কদ্দুর যাইতে পারে....

লোকজনের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। সবাই বেশ আগ্রহ বোধ করছে। আসলে প্রকৃত বিষয়টি জানার জন্য যেন সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তারা জানতে চায় কে জেতে? পাগলেরা না সরকার সাহেব? তারা ধরেই নিয়েছে এখানে একটা ছোট্ট খাট্ট বাহাছ হচ্ছে। অথচ কেউ বুঝতে চাইছে না আসলে কি নিয়ে কথা হচ্ছে? মানুষের মধ্যে আগ্রহবোধ কাজ করে কেবল কৌতুহল নিবারণের জন্য। কৌতুহল মিটে গেলে তারা আর সেটাকে মনে রাখে না।

চা শেষ করে সরকার সাহেব আবারো বলা শুরু করলেনঃ

"হুয়া আনাশাঅাকুম মিনাল আরদে...[সুরা হুদ অায়াত ৬১] অর্থঃ তিনিই অাল্লাহ তোমাদের উদ্ভব ঘটাইয়াছেন জমিন হইতে...

(চলবে)