পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৪

কে?

চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথাও কোন আলো নেই। চলার পথ পেলেন। হাঁটা শুরু করলেন। পথে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ালেন। দেখলেন একটা গুহা। গুহার চারদিকে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আবার ফিরে যেতেও মন চাইছে না। এত দূর হেঁটে আসার পর কার মন চায় ফিরে যেতে। ক্লান্ত শরীর চাইছে বিশ্রাম করতে। কৌতুহল মন নিয়ে প্রবেশ করলেন গুহার মধ্যে। হাতড়ে বেড়ালেন কিছুক্ষণ। তারপর কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলেন। আপনার প্র্রথম প্রশ্ন হবে - কে ? আপনার শরীরে ভীতির সঞ্জার হলো। আপনার শরীর কাপঁছে অজানা আশংকায়। আপনি হিম শীতল হয়ে গেছেন।শরীর কাঁপছে ভয়ানক ভাবে। আপনি আবার প্রশ্ন করলেন-কে? গুহার মধ্যে থাকা ব্যক্তিটিও থমকে গেছে। সেও ভাবতে পারেনি তার ঘুম কেউ ভাংগাতে পারে? 
প্রশ্ন করায় গুহার ব্যক্তিটি উত্তর দিল - আমি।
অবচেতন মনে আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন - এই আমিটা আবার কে?
মন থেকে আধাঁরের পর্দাকে সরিয়ে দিন। আবার তাকান তার দিকে। দেখেনতো চিনতে পারছেন কি-না? দেখবেন আপনিই সেই। সেই আপনি। আপনার আর তার মাঝে ব্যবধান কেবল মাত্র একটি পর্দার। পর্দা সরানোর ব্যবস্থা করুন। আপনি কর্নফার্ম থাকেন তার দেখা আপনি পাবেনই পাবেন।
পরিশেষে কবির দাসের একটি বয়েত দিয়ে শেষ করতে চাই। কবির দাস বসে আছেন বেদীর উপর। এক ভক্ত প্রশ্ন করলো-মানব মুক্তি কাব মিলেগি?
-পানিকে সামুনদার মে আগ লাগনে পার। কবির দাস উত্তর দিলেন।
-পানিকে সামুনদার মে আগ লাগনে পার ? ভক্ত অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন কবির দাসের দিকে।
-সাগারছে মিলনে ওয়ালে হার নদী জ্বলকে রাখ্ হো নে চাইহে। মাছলি পের পর চলেগি। তব এ কবির জিসছে দেখ না হে উছছে খুলি আখঁও মে দেখ পায়েগি। কবির দাস বললেন। ভক্ত এর ব্যথ্যা চাইলেন। কবির দাস ভক্তের আশা মিটানোর জন্য বললেন-
- পানি কা সামুনদার মতলব - এ শরীর
-আগ কা মতলব - জ্ঞান
-নাদীয়া মতলব - ইন্দ্রিয়া
-মাছলি মতলব - আত্না
-পের মতলব - পরমাত্মা।
শরীর জ্ঞানকে আগনি মে লুপ্ত হো যায় তো ইন্দ্রিয় নি:ক্রিয় হো কার আত্মা পরআত্মা মে বিলীন হো যাতি হে।

ব্যাখ্যাঃ প্রতিটি মানবের দেহে কুলকুন্ডলিনি নামক একটি শক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় আছে মুলাধারে। মুলাধার মুল+আধার। মুল অর্থ প্রধান আর আধার অর্থ স্থান। অর্থাৎ মুলাধার মানে হচ্ছে প্রধান স্থান বা মুল শক্তি। যা আছে লিংগমুলের নিম্নভাগে। সেই শক্তিটি জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন ধ্যান সাধনা। মুলাধার যে স্থানে আছে ঠিক তার উপরস্থলে একটি পাতলা পর্দা আছে। সেই পর্দা ভেদ করে উর্ধ্বগতিতে সহস্রাধারে মিলিত করতে পারলেই সাধনায় সিদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া যায়। মেরুদন্ড়ের নিম্নভাগের সর্বশেষ স্থানেই এ পর্দাবৃত স্থান । তাই জীবশক্তি যখন সেই পথে গমণ করতে চায় তখন চর্তুদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। সেটা কেবল একটিই পথ। তাই জীবাত্মাকে ঐ পথেই যেতে হয়। আলোচ্য গল্পে সেই পথটির কথাই বুঝানো হয়েছে। আর সাধনা দ্বারা পর্দাটি ভেদ করতে পারলে সেই ঘুমন্ত শক্তিটিকে দেখে জীবাত্মা হতভম্ব হয়ে যায়। ঊর্ব্ধরেতা চেতনাশক্তি দ্বারা তাকে আলোকিত করলেই দেখা যায় সেই শক্তিটি স্বয়ং সে নিজেই। মুল ভাষ্য হলোঃ নিজেকে নিজে দেখা। বা তত্ত্বমসি।

বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০১৪

রাক্ষস-খক্ষসের গল্প















হাউ-মাউ খাও
মানুষের গন্ধ পাও।
বাল্যকালে দাদু-নানুদের কাছে রাক্ষসের গল্প শোনেনি এমন বাঙালী খুব কমই পাওয়া যাবে। বৃষ্টির রিমি-ঝিমি শব্দের পাশাপাশি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প শোনার মজাই আলাদা। কিংবা ধরুণ শীতের রাতে লোপ মুড়ি দিয়ে কোন মতে মাথাটা একটু বের করে দাদু-নানুদের গল্প শোনেনি এমন বাঙালী হয়তো হাতে গোনা। আর ডিজিটাল যুগের কথা আলাদা। যে ঠাকুরমা কিংবা ঠাকুরদা যাই বলি না কেন তাদের ঝুলির গল্প যা ছিল কল্পনার দ্বারা সৃষ্ট তা আজ ডিজিটাল রুপে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে উপস্থিত। ভুতের গল্প শুনে কিংবা রাক্ষসের গল্প শুনে ভয়ে গায়ে কাটা দেয়নি এমন সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। ভয়ে বাথরুমে যেতে হলে সাথে কাউকে নিয়ে যেতে হয়েছে।
যুগ পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে গল্পের ধরণ। ডিজিটাল গল্প তারা এনিমেশনে দেখছে। কিন্ত্তু আমাদের সময়ে যে গল্প শুনে আমরা বিমলান্দ উপভোগ করেছি সেই একই গল্প আমাদের ছেলেমেয়েরা দেখছে ডিজিটাল এনিমেশনে। কিন্ত্তু সেই স্বাদ সেই আনন্দ কোথায়? কোথায় সেই দিনগুলি? স্মৃতির পটে হারিয়ে যান। দেখবেন চোখের কোণে এক টুকরো কালো মেঘ ভর করেছে। বৃষ্টি আসার পূর্বে তা হাত দিয়ে কিংবা হাতের আংগুলি দিয়ে সরিয়ে দিন। চশমা ব্যবহার করে থাকলে তা পরিস্কার করে নিন। ধর্তস্থ্য হন। বর্তমানে ফিরে আসুন। আবার তাকান। হারিয়ে যান সেই রাক্ষকের কল্পনায়। দাদু-নানুদের বলা সেই বর্ণনাটা ছিল এরুপ :
এক দেশে ছিল এক রাক্ষস। সেই রাক্ষসের অত্যাচারে ...দাদু রাক্ষস কি? হয়তো প্রশ্ন করে বসলেন। রাক্ষস হলো এয়া বড় তাল গাছের মতো লম্বা মুলার মতো দাঁত....দাদু বলতে থাকলেন আপনি কল্পনায় মেলাতে থাকলেন... সেই রাক্ষস মানুষ ধরে খেত। তার ঘাড় মটকে রক্ত পান করতো। এমনকি গৃহস্থের গরু-ছাগলও। তার অত্যাচার থেকে কেউ রক্ষা পেত না দাদু বলতে থাকলেন আর আপনি কল্পনায় মেলাতে থাকলেন...আর ভয়ে কিছুটা হলেও গায়ে কাঁটা দিতো। অজানা ভয়ে আতংকে কুঁকড়ে যেতে থাকলেন। ধর্তস্থ্য হন।বাস্তবে ফিরে আসুন। এবার তাকান। দেখেনতো কল্পনায় আঁকা সেই রাক্ষস দেখতে পাচ্ছেন কি-না? পাচ্ছেন না তো? পাবেন কি করে? ডিজিটাল যুগে রাক্ষসের ধরণও পাল্টে গেছে। গ্রামের সেই রাক্ষসরা যারা গরীবের রক্ত চুষে খেত  ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার কল্যাণে তারা এখন কাউন্সিলার হয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায়। খুঁজে বেড়ায় কোন ঊর্বশীর রক্তপানের নেশায়। গ্রামের রাক্ষসরা তো এখনো পুরোপুরি মর্ডাণ হয়ে উঠেনি। শহরের রাক্ষকের তুলনায় তারা পাতি রাক্ষস। শহরের রাক্ষসরা মুহুর্তের মধ্যে যে কাউকে খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে। গল্পের রাক্ষসরা মানুষ ধরে এনে গুহার মধ্যে জমা করে রাখতো। আর আরাম করে খেত। সেই গুহা থেকে কেউ মুক্তি পেত না। বর্তমানের রাক্ষসরা গার্মেন্টস নামক গুহা তৈরী করে বন্দি করে রেখেছে হাজার হাজার নর-নারী। কি এক মায়াবি জালে তারা বার বার সেই গুহায় বন্দি হয়। আর রাক্ষসরা মনের আনন্দে গা দুলিয়ে খেতে থাকে নর-মাংস। রক্তপান করছে আর চির্য়ারস বলে ভোগ করছে।
তাজা তাজা নরোম মাংসের স্বাদ যে রাক্ষসরা ভোগ করছে আর  'হাউ মাউ খা্ও মানুষের গন্ধ পাও' বলে গগণ বিদারী চিৎকার করছে সেই চিৎকারে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মানব-মানবীর সোনালী স্বপ্ন। বাস্তবতা দেখতে থাকুন আর কল্পনায় আঁকা সেই রাক্ষসদের মেলাতে থাকুন...অপেক্ষায় থাকুন কবে আসবে সেই সন্ন্যাসী কবে আসবে সেই ডালিম কুমার যাকে দেবে ব্রক্ষ অস্ত্র আর কবে নেবে কোন এক রাজকন্যাকে সেই রাক্ষসরা....