পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

কবর ও মাজারঃ মনা পাগলার ভাবনা - তৃতীয় ও শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা বিরবির করে পড়ে যেতে লাগলো। আর মাওলানা সাহেব তার কথার কোন আমল না দিয়েই হড় হড় করে হেঁটে যেতে লাগলো। সেটা দেখে মনা আরো ক্ষেপে গিয়ে বললোঃ

কিছু্ ইলিয়াস মেওয়াতীর ভক্তরা আমাদের বলছে আমরা না কি মাজার পূজারী। তারা বিভিন্ন ছবি এডিট করে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই তাদের উদ্দেশ্য বলছিঃ

কবর আরবী শব্দ ও মাজার ফার্সী শব্দ। মাজারের কথা শুনলেই ওহাবীদের শরীরে তিন কেজি পরিমানে এলার্জি উঠে। মানুষ যেন মাজার শরীফ জিয়ারতে না যেতে পারে সেজন্য তারা বিভিন্ন চক্রান্তরে জাল বুনছে। তারা মাজার জিয়ারত করা, মাজারে ফুল দেয়া, ইত্যাদিকে শিরক ফতোয়া দিচ্ছে।

যেমুন ধরেনঃ

১. জিয়ারতের উদ্দেশ্য নবীজির রওজা মোবারকে হাজির হওয়া শিরক।
(ফতোয়ায়ে কোররা, ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া)

২. সম্মাানের উদ্দেশ্য হুজুর (দঃ) এর রওজা সামনে দাঁড়ানো শিরক।
অথচ মাজার তথা কবর জিয়ারত বিষয়ে হুজুর (দঃ) অনুমতি রয়েছে। যেমনঃ সুনান ইবনে জাজাহ-তে ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ "নিশ্চ য় রাসূল্লাল্লাহ (দঃ) বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম। এখন এগুলোর যিয়ারতে যাও। কারন কবর যিয়ারত, পৃথিবীতে সংযম ও আখেরাতের স্মরণ আনয়ন করে।
(সহীহ মুসলিম,হাদীস-৯৭৭, সূনানে ইবনে মাজাহ খন্ড-১,পৃ-৫০০,৫০১, সুনানে আবু দাউদ,হাদীস-৩২৩৫, মুয়াত্তা-এ-মালেক খন্ড ২,পৃ-৪৮৫)

উক্ত হাদীস হতে প্রমানিত হল যে, কবর বা মাজার যিয়ারত করা ইসলাম সম্ম ত তথা শরীয়ত সম্ম ত।

নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করার ফজীলত বিষয়ে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছেঃ
"হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল্লাল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন, যে আমার রওজা মুবারক যিয়ারত করবে, তাঁর জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।

(শুয়বুল ঈমান,৬/৫১পৃ, শিফা শরীফ ২/৮৩ পৃ,নাওয়ারিদুল উসুল ফি আহাদিসুর রুসুল, ২/৬৭পৃ, তারগীব ওয়াত তারহীব,২/২৭পৃ, জামিউল আহাদিস,২০/৩৪৮পৃ, জামিউস সগীর,২/৬০৫পৃ,কানজুল উম্মাল,১৫/৬৫১ পৃ, মিজানুল ইতিদাল,২/৪৩৫পৃ) ইমাম সুবকী (রহঃ) উক্ত হাদিসের ব্যাপারে বলেন, উক্ত হাদিস হাসান।(শরহুল মাওয়াহেব,১২/১৮০পৃ) এমনকি মুহাদ্দিস হক দেহলবী (রঃ) ও উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন।

হাশীয়াতুল সানাদী আলা সুনানে ইবনে মাজাহ,২/২৬৮পৃ) এছাড়া ইমাম মুলাক্কন (রহঃ) বলেন,  উক্ত হাদীসটির সনদ শক্তিশালী।(আল বদরুল মনীর,৬/২৯৬পৃ)

হযরত ফাতেমা (সাঃঅাঃ) রাসূল (দঃ) এর চাচা হযরত আমির হামজা (রাঃ) এর মাযার প্রতি প্রতিবার জুমার দিন জিয়ারত করতেন। সেজন্য উনি মদীনা থেকে ৩ মাইল দূরে অবস্থিত ওহুদের প্রান্তরে যেতেন।

১.ইমাম বায়হাকী (রহঃ) আসসুনুনুল কোবরা, ৪র্থ খন্ড-পৃ: ৭৮,হাদীস ৪৯৯৯)
এখন বন্ধুরা আপনারাই বলুন যেখানে হযরত ফাতেমা (রা:) এর স্বয়ং মাজার জিয়ারত করেছেন, আর আজকালের ইয়াজীদের বংশধররা মাজার যিয়ারত করতে কিভাবে নিষেধ করে।

ওহাবীরা মাজার শরীফে ফুল দেওয়াকে শিরক বলে, অথচ তাদের শ্রদ্ধাভাজন ইবনে তাইমিয়া যেদিন ইন্তেকাল করেন, তার লাশ বহনের সময় রাস্তার দুধারে বাড়ী ছাদে লক্ষাধিক মহিলা ফুল ছিটিয়ে শেষবারের মত শোক প্রকাশ করেছিল। (সূত্র: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ আল্লামা আবু মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন, পৃ-২০৭)।

এবার নিচের লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন, দেখবেন সত্য আপনার সম্মু খে প্রকাশ হয়ে যাবে।
মাজার জিয়ারতকারী ও ভক্তিকারী গনই সঠিক, কারন
--মাজার নাই ফেরাউনের।
-- মাজার নাই নমরুদের।
-- মাজার নাই আবু জেহেলের।
-- মাজার নেই ইয়াজীদের।
-- মাজার নেই মোহাম্মদ বিনআব্দুল ওহাবের।
-- মাজার নেই মওদুদীর।

এখন লক্ষ্য করুন, কিন্তু

-- পৃথিবীতে যত নবী- রাসূলের সন্ধান আছে তাদের সকলের মাজার আছে।
-- মাযহাবের ইমাম গণের মাযার আছে।
-- আউলিয়া কেরাম এর মাজার শরীফ আছে।
-- জামানার মুজাদ্দেদগনের মাজার আছে।
-- হাদীস শরীফের ইমাম গনের মাজার আছে।
-- তাফসীরের ইমামগনের মাজার আছে।
-- তরিকতের ইমামগনের মাজার আছে।
-- যারয় ভারত বর্ষে ইসলাম এনেছেন তাদের মাজার শরীফ আছে।
-- এমনকি মাজার বিরোধী গুরু ইবনে তাইমিয়ার ও মাজার আছে।
 কিন্তু মনার কথা কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা যেভাবে অাসছিল, ঠিক সেভাবেই চলে গেল। মনা তাদের বুঝাতে চেষ্টা করলো কিন্তু একটা পাগলের কথার কোন মুল্যই তারা দিতে চাচ্ছিল না। তারা মনার দিকে এখন ফিরেও তাকাচ্ছে না। মনা মাথায় হাত দিয়ে বললোঃসত্যের কুন দাম নাইক্ক্যা....দুর হালার মোল্লা....এই হালার লগে প্যাচাল পাইর‌্যা লাব নাইক্ক্যা। অন্য দিকে যাই গ্যা......এ কথা বলে মনা হাঁটতে শুরু করলো...

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

কবর ও মাজারঃ মনা পাগলার ভাবনা - দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মাথা খারাপের কথা শুনে মনা বিগড়ে যায়। সে বলেঃ

-মাওলানা সাব, মাতা তো আমার খারাপ অয় নাই। মাথা খারাপ হইছে তাগো, যারা কইতাছে অলি আউলিয়াদের মাজার জিয়ারত করা হারাম। তাদের মাজারে সালাম দেওন জায়েজ নাই। কোন মানত করা যাইবো না...অথচ কোরআনে বলতাছেঃ

"ওয়ালা-তাহ্সাবান্নাল্লাযীনা কূতিলূ ফী সাবীলিল্লা-হি আমওয়া-তা; বাল আহ্ইয়া উন ইন্দা রাব্বিহিম ইউরযাকূন (সূরা, আলে ইমরান আয়াত : ১৬৯)। অর্থঃ যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে; তাদেরকে মৃত মনে করো না, তারা বরং জীবিত, নিজের রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, নিজের রবের পক্ষ থেকে রিযিকও প্রাপ্ত। 

ওয়ালা-তাকুলূ লিমাই ইউক্বতালু ফী সাবীলিল্লা-হি আম্ওয়া-তা; বাল আহইয়া উওঁ ওয়ালা-কিললা -তাশ’উরূন (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৫৪) অর্থঃ যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে; তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা জানো না।

"আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্‌য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্‌রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্‌দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল  ‘আজীম। (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪)"। সর্তক হও! জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধু অলি-আউলিয়াদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হন না। যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুসংবাদ আছে, আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য।

-হারামজাদা কিয়ের লগে কি মিলাইতাছে? মনডা কয় দেই একটা কানাপট্রির মইদ্যে... 

-অহনতো দিবেনই...উচিত কতা কইলেই ফাল দেন।

-ওই তুই কি জানস..ক....খালি উল্টা-পাল্টা কইলেই মনে করছে হেয় সব পারে...পারঅইন্যার পো পারঅইন্ন্যা... 

মাওলানা সাহেবের ভেংচি কাটাটা মনার মনঃপুত হয়নি। মনা মনে মনে দুঃখিত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলোঃ

আমি যা কইছি কোরআনই তার দলিল। কোরআনে যা আছে, তাই কইছি। আপনে তো মাওলানা....আপনে কন যেই আয়াত গুলি কইছি তা-কি কোরআনের বাইরে...তাইলে আরো কই হুনেন......

এ কথা বলেই মনা বলতে শুরু করে দিয়েছে। সে বলছেঃ

ওয়ামাই ইউত্বি‘ইল্লা-হা ওয়ার রাসূলা ফাউলাইকা মা’আল্লাযীনা আন’আমাল্লা-হু আলাইহিম মিনান নবিয়্যীনা ওয়াছ্‌ছিদ্দীকিনা ওয়াশশুহাদাই ওয়াছ্ ছালিহীনা, ওয়া হাসুনা উলা-ইকা রাফীক্বা। (সূরা নিসা, আয়াত: ৬৯)

অর্থঃ সত্যবাদী, শহীদ ও সিদ্দীকগণ আল্লাহ ও রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেক। তাঁরা বেহেশতে নবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হবেন, তাঁরা কতই না সুন্দর।

হযরত আলী (আ.) ইরশাদ করেন যে, আমার অন্তরে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা এমনকি শীতল পানি অপেক্ষাও মহানবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা অধিক প্রিয় (হাদিসঃ মাদারেজুন নবুয়্যত)। 
নিশ্চ ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো মৃত্যু নেই, বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয়, ধ্বংসশীল ইহজগৎ থেকে স্থায়ী পরজগতে (আল হাদিস)। নিশ্চ য়ই আমার বন্ধুগণ আমার জুব্বার অন্তরালে অবস্থান করেন। আমি এবং আমার আউলিয়াগণ ব্যতীত তাদের পরিচিতি সম্বন্ধে কেউ অবগত নয় (আল হাদিস)। 

আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্‌য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্‌রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্‌দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল  ‘আজীম। (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতা’লা সবাইকে সর্তক করে বলেন, সর্তক হও! জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধু অলি-আউলিয়াদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হন না। যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুসংবাদ আছে, আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য।
(চলবে)

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

বাউলদের সাধনা

ধর্ম দর্শনের নামে মিথ্যা বাউলিকরণ হয়েছে বাংলায়। বৈষ্ণব ধর্ম, সহজিয়া মতবাদ, সূফী মতবাদের মিলনে বাংলার বাউল ভাবধারা।

★ বাউলরা দেহের ভিতর দেহাতীতের সন্ধান করেন নরনারীর যুগল সাধনার মাধ্যমে। দেহের সাথে দেহের মিলন না হলে মাধুর্য ভজন হয় না। মাধুর্য ভজন না হলে মানুষ হয়ে জন্মানোর স্বার্থকতা কোথায়? এই হলো বাউলদের মৌল জিজ্ঞাসা। এই জিজ্ঞাসার উত্তর তারা খোঁজেন বিকৃতরুচি কাম সাধনায়। এই কারণে বাউলরা জোড়ায় জোড়ায় থাকেন। বাউল সাধনা একাকী পুরুষের বা একাকী নারীর সাধনা নয়। একে এক ধরনের পাশ্চাত্যের 'লিভিং টুগেদারের' সাথেও তুলনা করা চলে। লালনের ধর্মমতের 'চারিচন্দ্রভেদ', 'ষড়চক্র', 'দ্বিদলপদ্ম', 'মূলধারাচক্র', 'সহস্রদলপদ্ম', 'অধর মানুষ', 'ত্রিবেণী', 'সাধনসঙ্গিণী', 'প্রেমভজা' প্রভৃতি কাম আরাধনার ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দের তাৎপর্য জানলে বা শুনলে যে কোনো মানুষের লালনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে।

★ দেখুন বাউলগন কিভাবে পুরুষ-প্রকৃতি (নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কিভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কিভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে 'সহজ মানুষ' রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। অর্থাৎ একটি মেয়ের মাসিকের সময় বাউল সাধুগন সাধনার নামে ধর্ষন করে তিন দিন কারন তারা মনে করে মাসিকের সময় স্বয়ং প্রভু উপর থেকে নারীর যৌনিতে নেমে আসে আর এই আসার সময় নারীর দেহের অধর চাঁদ নামক নীর অর্থাৎ নারীর সাথে সেক্স করতে করতে রস বের হবার পরে একটি সাদা বস্তুু আসে তারা তাকে অধর চাঁদ নামে অভিভূত করে এর পর তারা সেটা পান করে। এবং তারা মনে করে আমরা স্বয়ং প্রভু কে পেয়ে গেলাম।

★ প্রমান দেখুন কি বলে?

★ বাউল-ফকিরেরা ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ মানবদেহের প্রাণের ধারার সাথে কিভাবে মিশে থাকে সে রহস্য উৎঘাটনে সচেষ্ট ছিলেন। বীজ-রজঃ মিলিত হয়ে মানবের জন্ম। আর এই দু'য়ের উৎপত্তি সঙ্গমকালে। উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ে সহজ মানুষ উপস্থিত হয়। বাউলরা এই স্তরে পৌঁছে স্থির থেকে সাধন করতে চায়। কাম নদীর নিন্মমূখী ধারাকে ঊর্ধমূখী করে যারা সহজ মানুষ সাধন করতে পারে, তারা হলো সিদ্ধ পুরুষ। লালন তার গানে বলছেঃ-

আমি কি সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবা রাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পারি দিতে ত্রিবিণে
কত ধনীর ধারা যাচ্ছে মারা
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চিনে
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মইলাম জ্বলে
মইলাম আমি নিশি দিনে
আমি মনিহারা ফণির মতো
হারা হলাম পিতৃধনে।

★লালনের গানে বলা হয়েছে "গুরুরতি সাধন কর"। অর্থাৎ নারীর রতি বা মাসিকের সাধনা। যদিও অনেক বাউল বলে নিজ দেহের বীর্যের সাধনা মুলত নারীর।

মাসিকের প্রতি বাউলদের এই যে মনোভাব তা বুঝতে হলে আমাদের রাধাকৃষ্ণের কাহিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেতে হবে। বলা আছে, একবার কৃষ্ণ রাধা ও অন্যান্য গোপীদের সাথে অবস্থানকালে রাধার মাসিক শুরু হয়। কৃষ্ণ তা টের পেয়ে রাধাকে যেন লজ্জার মুখে পড়তে না হয় এজন্য সে মুহুর্তেই গোপীদের নিয়ে রং বা দোল খেলা শুরু করে। আর এই রং খেলা পরবর্তীকালে সনাতনী হিন্দু দাদা ও দিদিগন হলি খেলা শুরু করেছে আর আমি নাম দিয়েছি মাসিকের লাল রক্তের এর পুজা অর্চনা করন।
দোলপূর্ণিমা বাউলদের প্রধান উৎসবগুলোর একটি। মূলত বাউলরা বৈষ্ণব। বৈষ্ণবদের সাথে বাউলদের প্রধান পার্থক্য বাউলরা ইসলামের ভেক বা ছদ্মবেশ ধরে থাকে। যেমন তারা লুঙ্গি এবং পাগড়ি পরে। কিন্তু খাঁটি বৈষ্ণবরা পরে না। বাউলদের খাদ্যাভাস মূলত হিন্দু বৈষ্ণবদের দেহতত্ত্ব হতে আগত। বাউলরা পান করে মূত্র ও মল তো বটেই সাথে মাসিকের রক্ত ​​ও বীর্য। এর মূলে রয়েছে রাধা ও কৃষ্ণের পরকীয়া প্রেমের কাহিনী। আর আমরা তো জানিই পরকীয়া প্রেমে দেহ ব্যতীত কিছুই নেই। আর তাদের পরকীয়া প্রমিকার নিকট হতে মাসিকের রক্ত ​​চাই।

★ আর সেই জন্য বাউলদের নিকটে কোন নারী বেড়াতে গেলে বা কোন বাউলের নিকটে ফোন নাম্বার থাকলে সেই নারীকে বলে মা তুমি দেবি, মা তুমি জননী তুমি সাক্ষাৎ দেবি দূর্গা তুমি মা লক্ষি তুমি জগত জননী মা তোমার পায়ে ভক্তি মা তোমাকে প্রনাম মা তোমাতেই আমাদের মানব মুক্তি মা গো। বাউলদের এই চতুরতায় নারীগন ধরা খেয়ে যায়য় এবং এই ভাবে তারা বিভিন্ন কাহিনি তৈরী করে কারন মুলত তাদের উদ্দেশ্য সেই নারীর মাসিকের রক্ত ​​পান করা আর সেক্স করা।

★বাউলগন, "ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তুু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত উল মতের উদ্ভব। তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই

★ বাউলদের মধ্যে রজঃপান অর্থাৎ মেয়েদের মাসিকের রক্ত ​​পান করা একটি সাধারন ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মুত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের ​​একাধিক সেবাদাসী থাকে এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে

★ সাধারণ বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত 'নাড়া' শব্দটির অর্থ হল শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না। তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার 'ওরসে' তাদের আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ। (বা.বা পৃঃ 14) লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ 1986 সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, "আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা। আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ । তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি .. ... আমাদের গুরুই আমাদের রাসুল। ... ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থ ভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন। কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন ... এই সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ। "(দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২ য় সংস্করণ, আগস্ট 1998 পৃঃ 4-95)

★ উপরের কথা গুলো কোন মুসলিম। যদি ভাল ভাবে বুঝে তাহলে কখনো বাউলবাদ তথা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহন করবে না আর এই বাউলবাদ তথা বৈষ্ণববাদ মুসলিম ও সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলি দের ও ক্ষতি করে চলছে দিনের পর দিন । দেখুন মহান রাব্বুল আলামিন আল কোরআনে কি বলে,

★83 - তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? । আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে

★ সূরা আল ইমরান। 85 - যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত

★ সূরা আল ইমরান: 101 - আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের

★ সূরা আল ইমরান: 102 - হে ঈমানদারগণ। আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না

★ সূরা আল ইমরান। 104 - আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম

★ সূরা আল ইমরান: । 105 - আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।

★ এই আয়াত গুলো একটু গভীরতম ভাবে পড়ে তার পরে আপনারা বাউল তথা বৈষ্ণবধর্ম গ্রহন করিয়েন।

★বাউলবাদ সুফিবাদ এর মাঝে প্রবেশ করে কলঙ্কিত করে ফেলেছে দিনের পর দিন তাই আসুন বাউলবাদ না বলুন।

★ বিঃদ্রঃ বৈষ্ণব মতবাদে সবচে বাজে জঘন্যতম কাজটি হলো এদের মাঝে মা বোন মাসি কাকি বলে কিছু নেই। তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করে আমাদের সকল আত্মায় একই। তাই আমাদের মাঝে ভেদাভেদ থাকতে পারে না। আর বৈষ্ণব মতাদর্শ হতে এই রস রতি অর্থাৎ সেক্স এর সাধনা ঢুকে পরেছে লালনবাদে। তাই তাদের মাঝে সেক্স এর সাধনা করে সমস্যাদি নেই।

[ বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ  দি ফিলোফোসি অফ লাভ ]

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

জীবনের দৌড়

স্পার্ম যাকে আমরা শুক্রানু বলি। যা প্রতি বারে আনুমানিক ২০-৩০ কোটি স্পার্ম নির্গত হয়। এই ২০-৩০ কোটি স্পার্ম, ওভামের দিকে পাগলের মত ছুটতে ছুটতে পৌঁছায় মাত্র ৩০০-৫০০ মাত্র আর বাকিরা এই "ছুটে চলার" দৌড়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত অথবা পরাজিত হয়ে মারা যায়,বিলীন হয়ে যায়।

এই ৩০০-৫০০ স্পার্ম, যেগুলো ডিম্বানুর কাছে যেতে পেরেছে তাদের মধ্যে মাত্র একটি, স্পার্ম ডিম্বানুকে ফার্টিলাইজ করে। সেই ভাগ্যবান স্পার্মটি হচ্ছেন আপনি কিংবা আমি।

কখনও কি এই রিয়ালিটি মাথায় এনেছেন?

আপনি তখন দৌড়েছিলেন,যখন আপনার চোখ,হাত পা মাথা ছিল না! তবু আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন সার্টিফিকেট ছিল না! মস্তিষ্ক ছিল না, তবুও আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন শিক্ষা ছিল না, দৌড়েছিলেন কারও সাহায্য ছাড়া, তবু আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়ছিলেন,যখন আপনার একটি গন্তব্য ছিল এবং সেই গন্তব্যের দিকে উদ্দেশ্য ঠিক রেখে একা একাগ্র চিত্তে দৌড়িয়ে ছিলেন এবং শেষ অবধি আপনি জিতেছিলেন।

আর আজ!

আপনি কিছু একটা হলেই ঘাবড়ে যান।  নিরাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু কেন? কেন আপনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন।
এখন আপনার বন্ধু বান্ধব, ভাই বোন, সার্টিফিকেট সবকিছু আছে। হাত-পা আছে, শিক্ষা আছে, প্ল্যান করার মস্তিষ্ক আছে, সাহায্য করার মানুষ আছে, তবুও আপনি আশা হারিয়ে আশা ছেড়ে নিরাশায় দুলছেন।

যখন আপনি জীবনের প্রথম দিনে হার মানেন নি, ৩০ কোটি স্পার্মের সাথে মরণপণ যুদ্ধ করে ক্রমাগত দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন কিছুর অবলম্বন ছাড়া শুধু একা একাই জিতেছেন।

সেখানে আজ! আপনি কেন হারবেন? কেন হার মানবেন? আপনি শুরুতে জিতেছেন, শেষে জিতেছেন, মাঝপথেও আপনি জিতবেন। সবচাইতে বেশী কি চান?  মূল্য দিন, বিরামহীন লেগে থাকুন- আপনি জিতবেন।কারন,আপনার জন্ম সৃষ্টির লক্ষেই!!
এগিয়ে চলুন!

হ্যাঁ আমি এগিয়ে যাব। পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে যাব। কোন বাঁধাই আর আমাকে আটকাতে পারবে না।

[ বিশেষ ধন্যবাদঃ দি ফিলোসোফি অফ লাভ নামক পোষ্টের এডমিনকে ]

আধ্যাত্মিক পাঠ-প্রথম পর্ব

মানবদেহে মহান আল্লাহ্ পাকের সীমাহীন কুদরত ও হিকমাত

নারীর যেমন ২টি স্তন আছে, ঠিক পুরুষেরও ২টি স্তন আছে। নারীর স্তন ৩ টি কাজে লাগে - নিজের যৌবন, স্বামীর সোহাগ ও সন্তানের খাদ্য। কিন্তু পুরুষের স্তন কোন কাজেই লাগেনা। তাহলে আল্লাহ পাক তা দিলেন কেন? কারণ, জগতের সকল নারী পুরুষের স্তনের বোটা কালো বৃত্তাকার। সেই কালো বৃত্তের রহস্য কি? রহস্য অতি গভীর। 

বাম পাশের কালো বৃত্তে আল্লাহ নামের ৪টি হরফ বসানো। ডান পাশের কালো বৃত্ত মুহাম্মাদ নামের ৪টি হরফ বসানো। পুরুষের বেলায় তা ১বার। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে ৮ বার। উপরের কালো বৃত্তে ১বার আর ভেতরে রসুনের পর্দার মত ৭টি পর্দা আছে। ৭ পর্দায় ৭ বার - মোট ৮ বার। প্রত্যেক পর্দায় ৪ টি করে হরফ। ৪ গুন ৮ = ৩২ । তাইতো মায়ের বুকে ৩২ নালীর দুধ তৈরী হয় ।

বামপাশের দুধের ২ আঙ্গুল নিচে লতিফায়ে ক্বালব, যা আল্লাহ্ পাকের মাকাম। যার কারণে জিকরুল্লাহর দ্ধারা মানুষের ক্বালব পরিস্কার হয় ও সেখানে আল্লাহর জাত এবং সিফাতের নূর প্রবাহিত হয়। যাদের ক্বালবে বা অন্তরে ঐ নূর প্রবাহিত হয়, তাদেরকেই বলা হয় ক্বালবে ছালিম বা ওলীআল্লাহ্ । 

ডানপাশের দুধের ২ আঙ্গুল নিচে অবস্থান করে লতিফায়ে রূহ । যা পবিত্র ক্বোরআনুল কারীমের ভাষায় প্রিয় নবীজির মোক্বাম । নবীজির প্রতি পূর্ণবিশ্বাস, আদব-তা'জিম ও অধিকতর দুরুদ পাঠের দ্ধারা নবীজির নূর ঐ রূহে প্রবাহিত হয়। যারা ঐ নূরকে রূহের মাক্বামে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারে, তারাই হলো পাক্কা ঈমানদার বা মুমিনে ক্বামিল। যাদের জন্যে জাহান্নামের আগুন চির তরে হারাম হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ কুফর ও নিফাক্বের জুলমাতে নিজের অন্তর ( ক্বালব)  এবং আত্মা ( রূহ ) কে আধাঁরময় না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বালব ও রূহের নূর দ্ধারা তার ঈমান আলোকিত ও শক্তিশালী থাকবে। যখনি সে কুফর ও নিফাক্বের মাধ্যমে নিপতিত হবে, তখনি তার অন্তর ও রূহ হতে ঈমানের নূর বিদায় নিতে। আর তখনি সে ৬ টি রিপুরোগে আক্রান্ত হয়ে জাহিলিয়াতের দিকে ধাবিত হবে। ঐ শ্রেনীর মানুষগুলো প্রকাশ্য মানবীয় ছুরতে থাকলেও তখন তারা নফসে আম্মারায় প্রভাবিত হয়ে রূহে হায়ওয়ানী বা পশুর আত্মার অধিকারী হবে। যাদেরকে পবিত্র ক্বোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ্ চতুস্পদ জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে ঘোষনা করেছেন। যদিও তাদের মধ্যে বাহ্যিক ইলম, আ'মল ও লেবাস সুন্দর হয়, কিন্তু তাদের ক্বালব ও রূহ থাকবে কুফর এবং নিফাক্বে ভরপুর।

বিধায়, তারা কোন অবস্থাতেই ঈমানের পথে ফিরে আসবে না। তাদের মধ্যে বাহ্যিক সকল ইলম ও আ'মল থাকা সত্ত্বেও তাদের অন্তর ও আত্মা হবে ঈমানের নূরহীন ।

মানবদেহে মহান আল্লাহ্ পাক এত কুদরত ও হিকমাত প্রকাশ করার পরেও, হে আদম সন্তানেরা, তোমরা কিভাবে আল্লাহ ও রাছুলের নাফরমানী করছো ?

[ পোষ্ট ফিলোসোফি অফ লাভ থেকে সৃংগৃহীত ] 

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

কবর ও মাজারঃ মনা পাগলার ভাবনা - প্রথম পর্ব

মনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তারপর বললোঃ কাম সারছে....

মনার এরুপ ভাবনায় এবং কথা বলার ঢং অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। কারণ, তারা একটি কবরস্থানে এসেছে। লাশ দাফন করার জন্য। গতকাল রাত ৯টার দিকে তাহেরের মা মৃত্যু বরণ করেছেন। দুপুরে বাদ যোহর তার লাশের জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্থানে আনা হয়েছে। তাদের সাথে মনাও এসেছে। দাফন শেষে যখন চলে যাবার সময় হলো তার আগে মাওলানা আজিজুর রহমান সাহেব কিছু বয়ান করছেন। বয়ান শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হবে। সেই দোয়ায় সবাই শরিক হবে এমনটাই আশা করেছিল তাহের ভাই। কিন্তু মনা সেই মাওলানার ওয়াজ না শুনে বিভিন্ন কবরের পাশে দাঁড়াচ্ছে আর কবরের ফলকের উপর খেদাই করা লেখাগুলো পড়ছে। সবগুলো লেখাই একই ধরণের। যেমনঃ প্রথমে লেখা-

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম। 
নামঃ মৃত -----------
জন্ম সালঃ ১৯৬৪ ইং
মৃত্যু সালঃ ২০১৭ ইং

তবে একটা লেখা ব্যতিক্রম। সেটা দেখেই মনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে। সেখানে লেখাঃ

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম।
আস সালামু আলাইকুম ইয়া ইয়্যুহাল কুবুর।
নামঃ মৃত ...................
জন্ম সালঃ  ১৯৫০ ইং
মৃত্যু সালঃ ২০০৩ ইং

মনা তখনও সেখানে বসে আছে। এরই ফাঁকে মাওলানা সাহেব মোনাজাত শেষ করে এসেই মনাকে একটা কড়া ধমক দিলেন।
বে...য়া.....দব। তর এত বড় সাহস....চিৎকার চেঁচামেচি কইর‌্যা কবরস্থানরে মাথায় তুইল্যা ফালাইছস। পাইছস টা কি...ধর্ম নিয়া ইয়ার্কি.....

ধমক খেয়ে মনা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। তারপর একটু ধাতস্থ হয়ে বললোঃ

-মাওলানা সাব, খারান। এইডা একটু পড়েন.....মনা হাত দিয়ে কবরটা দেখায়।

মাওলানা মনার ইংগিত করা হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে পড়লোঃ বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম। আস্ সালামু আলাইকুম ইয়া আইয়্যুহাল কুবুর। নাম.....জন্ম সালঃ ১৯৫০ ইং মৃত্যু সালঃ২০০৩ইং। পড়া শেষ করেই মনার দিকে তাকিয়ে জিগ্যাসা করলোঃ 

-পড়লাম। সব ঠিক আছে।

-কেমতে ঠিক আছে মাওলানা সাব....

-কি কইতে চাস তুই....

-মাওলানা সাব, সালাম দেওয়া সুন্নাতে রাসুল। আর জওবাব দেওন ওয়াজিব। এইডা কি সত্য....

-হ

-এই হানেইতো খটকাটা লাগছে..

-কি রকম?

-এই যেমুন ধরেন এই কবরটারে যদি আমি সালাম দেই...আস সালামু আলাইকুম ইয়া আইয়্যুহাল কুবুর....এই কবরের মইদ্যে যে শুইয়্যা আছে...হেয় কি উত্তর দিব....ওয়ালাইকুম আস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু না-কি ওয়ালাইকুম আসসালাম...না কি অন্য কিছু....

-বেআক্কল কয় কি? হেয় উত্তর দিব কেমতে....হেয় তো ৫৩ বৎসর আয়ু পাইছিল। আর আইজ অইলো ২০১৭। ১৪ বৎসর অইয়্যা গেছে গা...ব্যাটা তর কি মাতা খারাপ অইছে....
(চলবে)

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

গুরু তত্ত্ব ও গুরু মহিমা

বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে গুরু তত্ত্ব ও গুরু মহিমা সম্বন্ধে যা যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা সম্বন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত হলোঃ

 রুদ্রযামলে –
অনন্তর গুরু ও শিষ্যের কর্ত্তাব্যাকর্ত্তব্য কথিত হইতেছে। – রুদ্রযামলে কথিত আছে, যে, – কদাচ গুরুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিবে না এবং সহসা কোন বাক্যের প্রত্যুত্তর প্রদান করাও উচিত নহে। দিবানিশি দাসের ন্যায় গুরুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।।

 সারসংগ্রহে –
লিখিত আছে, যে, – সদ্ গুরু আশ্রিত শিষ্যকে একবৎসর পর্য্যন্ত পরীক্ষা করিয়া তৎপরে মন্ত্র প্রদান করিবে। কিন্তু স্বপ্নলব্ধ মন্ত্রে কালাকাল বিবেচনার আবশ্যক নাই। যেরূপ অমাত্যকৃত পাপ রাজায় এবং পত্নীকৃত পাপ পতিতে সংক্রান্ত হয়, তদ্রূপ গুরুও শিষ্যকৃত পাপে অভিভূত হইয়া থাকেন। এক বৎসরে ব্রাহ্মণ, দুই বৎসরে ক্ষত্রিয়, তিন বৎসরে বৈশ্য এবং চারি বৎসরে শূদ্রশিষ্য-যোগ্যতা প্রাপ্ত হয়।।

 তারাপ্রদীপে –
লিখিত আছে, যে, – মন্ত্রের অক্ষর সকলকে দেবতাস্বরূপ এবং সেই দেবতাকে গুরুস্বরূপ বিবেচনা করিবে, কদাচ তাহাদিগের ভেদজ্ঞান করিবে না ।।

 রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, – যদি গুরুর দ্রব্য গ্রহণে অভিলাষ করে অথবা গুরুপত্নী গমন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি মহাপাতকে লিপ্ত হয়, কোনরূপ প্রায়শ্চিত্তে তাহার পাপের শান্তি হয় না। যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা শ্রবণ করে, তাহার সেই দিনকৃত পূজা দেবী গ্রহন করেন না।

 কুলার্ণবে –
কথিত আছে, যে, – যদি কোন স্থানে গুরুর নিন্দা শ্রুতিগোচর হয়, তাহা হইলে কর্ণদ্বয় আবৃত করিয়া তৎক্ষণাৎ তথা হইতে দূরে গমন করিবে, যেন আর সেই সকল দুর্বাক্য কর্ণগোচর হইতে না পারে।

 নিত্যানন্দে –
লিখিত আছে, যে, – মনুষ্যবৎ জ্ঞান করিবে না, যদি গুরুকে মনুষ্য বলিয়া জ্ঞান করা যায়, তাহা হইলে কি মন্ত্রজপ, কি পূজা কিছুতেই সিদ্ধিলাভের সম্ভাবনা নাই। যদি গুরু একগ্রামে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে শিষ্য প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা তাঁহাকে প্রণাম করিবে, গুরু এক ক্রোশ দূরে অবস্থিত হইলে প্রতিদিন একবার তাঁহার নিকট গিয়া প্রণাম করিবে। গুরু অর্দ্ধযোজন দূরে থাকিলে শিষ্য পঞ্চ পর্ব্বে গিয়ে বন্দনা করিবে, যদি এক যোজন হইতে দ্বাদশ যোজন মধ্যে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে যোজনসংখ্যক মাসে গিয়া প্রণাম করিবে। যদি গুরুদেব অতি দূরদেশে থাকেন, তাহা হইলে প্রতি বর্ষে বর্ষে এক এক বার গিয়া শিষ্য তাঁহার চরণ বন্দনা করিবে।।

যামলে –
জামলে লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা করে, সে গতশ্রী ও গতায়ু হইয়া শতকোটি কল্প নরকে নিমগ্ন থাকে।।

পুরশ্চরণরসোল্লাসে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুকে সর্বদা শিবময় ভাবনা করিবে। গুরু পুত্রকে গণেশসদৃশ, বধূকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী ন্যায় এবং গুরুর কুল ভৈরবগণ সদৃশ বিবেচনা করিতে হয়।

বৃহন্নীলতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর অভাবে গুরুপত্নীর অর্চ্চনা করিবে। তাঁহার অভাবে গুরুপুত্র, গুরুপুত্রের অভাবে গুরুকন্যা, গুরুকন্যার অভাবে গুরুস্নুষা এবং এই সকলের অভাবে গুরুবংশীয় অপরের পূজা করিবে। যদি তদ্ধংশীয়গণেরও অভাব হয়, তাহা হইলে গুরুর মাতামহ, মাতূল ও মাতুলানীর পূজা করিতে হয়।।

 গুরুগীতা –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি প্রতিদিন ভক্তিসহকারে গুরুর পাদোদক পান করেন, তিনি সার্দ্ধত্রিকোটি তীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।

গুপ্তসাধনতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ত্রিসন্ধ্যা গুরুর পাদোদক পান করেন, সংসাররূপ মোহপথে তাঁহাকে আর পুনরাগমন করিতে হয় না এবং যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে গুরুপাদোদক শিরোপরি ধারণ করেন, তিনি সর্ব্বতীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।

যোগিনীতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – গুরুর উচ্ছিষ্ট ও গুরুপুত্রের উচ্ছিষ্ট ভক্তিসহকারে ভোজন করিবে, যদি তাহাতে ঘৃণা বোধ করে, তাহা হইলে অধোগতি প্রাপ্ত হয় ।।

কুলার্ণবে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পাদুকা, ছত্র, শয্যা ও ভূষণাদি দর্শন মাত্র নমস্কার করিবে, সেই সমস্ত দ্রব্য কদাচ নিজে ভোগ করিবে না ।।

গুরুগীতা –
কথিত আছে, যে, – গুরু যেরূপ উপদেশ প্রদান করিবেন, তাহাতেই মনঃশুদ্ধি করিবে। গুরু সৎই বলুন আর অসৎই বলুন তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করা উচিত নহে। গুরুর নিকট কদাচ মিথ্যা বাক্য প্রয়োগ করিবে না ।।

পিচ্ছিলাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ধর্ম্মবিমোহিত হইয়া পৈতৃক কুরুকুল পরিত্যাগ করে, সেই ব্যক্তি যে পর্য্যন্ত চন্দ্রসূর্য ধরাতলে অবস্থিত থাকে, তাবৎ কাল ঘোর নরকে পতিত হয় ।

জামলে –
লিখিত আছে, যে, – গুরু, গুরুপুত্র, গুরুপত্নী ও গুরুর বন্ধুগণের দোষ কদাচ প্রকাশ করিবে না; ইঁহাদিগের কোন দ্রব্য ভক্ষণ করা উচিত নহে। কিন্তু তাঁহারে আপন ইচ্ছানুসারে প্রদান করিলে তাহা ভক্ষণ করিতে পারে।।

কুলাগমে –
লিখিত আছে, যে, – যদি পূজাকালে গুরু, গুরুপত্নী বাঁ গুরুপুত্র সমাগত হন, তাহা হইলে পূজা পরিত্যাগ পূর্ব্বক তাঁহাদিগেরই অর্চ্চনা করিবে; ইহাই শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। সেই দিন শিষ্যের পক্ষে কোটি সূর্য্যগ্রহণের তুল্য। হে দেবি ! চন্দ্রগ্রহণ দিবসের ন্যায় সেই দিন শিষ্যের পক্ষে পরম শুভপ্রদ জানিবে।।

গুরুর দর্শনমাত্র সর্ব্বপাপ দূরীভূত হয়। হে দেবি ! গুরুকে দর্শন করিবা মাত্র তৎক্ষণাৎ দান করিবে। গুরুর প্রীতি সাধন হইলে দেবতার প্রীতি সাধন হয় এবং দেবতা সন্তুষ্ট হইলে মন্ত্র সিদ্ধি হইয়া থাকে।।

মুন্ডমালাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পূজা না করিয়া যে ব্যক্তি ইষ্টদেবতার অর্চ্চনা করে, ভৈরব স্বয়ং তাহার মন্ত্রের তেজ হরণ করেন।। 

রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, -শিষ্য গুরুর সহিত কোন দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় বাঁ গুরুকে ঋণদান অথবা গুরুর নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিবে না।।
Written by:Prithwish Ghosh

গুরু

গুরু (বি) -- উপদেষ্টা, উপদেশক, শিক্ষক, দীক্ষক, দেশিক, দিশারী, শাস্ত্রীয় জীবনের উপদেষ্টা, সাধনপন্থা নির্দেশক, সম্মানে বা বয়সে জ্যেষ্ঠ, মাননীয় ব্যক্তি,(বিণ) -- ভারী, গুণসম্পন্ন, দুর্বহ, দায়িত্বপূর্ণ, কঠিন, মহান, দুরূহ, শ্রদ্ধেয়, মাননীয়, অতিশয়, অধিক, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, knowledge, master, teacher ---.যে মহান মনীষী মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন তাকে গুরু বলা হয় আবার চিত্তপটের সাথে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যাদিকে জ্ঞান বা রূপকার্থে গুরু বলা হয়।
-
আপনদেশের মধুরবাণী
গুরু আমায় শোনাও না
দেশবাসী কয় উল্টাকথা
সোজা করে শোনায় না
... গুরু উপায় কী আমার
কেমনে হব তিরবেণী পার.......
....ত্রিতাপ জ্বালায় পরাণ পুড়ে
গুরু উপায় বল না
....প্রেমজ্বালায় অঙ্গ জ্বলে
মদনজ্বালা সহে না......
...গুরু বলো উপায় কী আমার
কেমনে হব তিরবেণী পার......
.....শেষের সে'দিন তুমি বিনে
........আর তো কেউ রবে না .......
-
গুরু চার প্রকার ---
-
যথা --
১. মানুষগুরু -- মানুষ আকারধারী যে মহান মনীষী সাধারণ মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা প্রদান করেন তাকে মানুষগুরু বলে। যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবার গুরুপদ প্রাপ্ত ব্যক্তির জ্ঞানকেও গুরু বলে।
-
২.জগৎগুরু -- সারাবিশ্বে বিরাজিত বাতাসকে জগৎগুরু বলে। আবার নাসিকার শ্বাসকেও জগৎগুরু বলে। যেমন -- 'রণে, বনে, পাহাড়ে ও জঙ্গলে যেখানে আমাকে স্মরণ করবে সেখানেই আমাকে পাবে।' তাই - মানুষগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারে না কিন্তু জগৎগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারেন।
-
৩. কামগুরু ----- শাস্ত্রীয় মতে কামের প্রতীতি মদনকে কামগুরু বলে। মূলতঃ পুরুষ জীবের শিশ্নকে কামগগুরু বলে। “প্রেম প্রকৃতি স্বরূপসতী, কামগুরু হয় নিজপতি, ও মন অনুরাগী না হলে, ভজন সাধন হয় না”। কাম ব্যতীত যেমন জীবের প্রজন্ম টিকিয়ে রাখা যায় না তেমন কোন প্রজাতির জীব সাংসারিক, সামাজিক, দলবদ্ধ বা সঙ্ঘবদ্ধ হতেও পারে না। জীবের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য কামশাস্ত্রে কামের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমন কামযজ্ঞ পরিচালনার জন্য শিশ্নের গুরুত্ব আরো অপরিসীম। কামযজ্ঞ পরিচালনা করার গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই শিশ্নকে কামদেবতা বা কামপ্রতীতি বা কামগুরু বলা হয়।
-
৪. পরমগুরু ------ জীবের লালনপালনকর্তা পরমেশ্বরকেই পরমগুরু বলে। “পরমগুরু বড়ই রঙ্গিলা আমার মনভোলা, কত নামে ধরাধামে করে আকারে লীলাখেলা” বা “ত্রিবেণীর ত্রিধারে, মীনরূপে গুরু বিরাজ করে, কেমন করে ধরবি তারে, বলরে অবুঝ মন”। পরমেশ্বর হলেন তরলমানুষ --- যিনি এখনো মূর্ত আকার ধারণ করেননি। মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট, সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল, মস্তিস্কে অবস্থিত 'চন্দ্রসুধা'।
-
গুরু যার থাকে সদয়
শমন বলে কিসের ভয়
গুরু চেনা সহজ নয়রে ....গুরু চেনা সহজ নয়
জগৎগুরু চিনতে গেলে ...মানুষ গুরু ভজতে হয় .......... জয় গুরু

Written by:Prithwish Ghosh

গুরু ও শিষ্যের লক্ষণ

গুরু চিনব কি করে???

সূর্যকে প্রকাশ করতে মশালের প্রয়োজন হয় না। সূর্যকে দেখার জন্য আর বাতি জ্বালতে হয় না। সূর্য উঠলে আমরা স্বভাবতই জানতে পারি যে সূর্য উঠেছে। এইরূপ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য লোকগুরুর আবির্ভাব হলে আত্মা স্বভাবতই জানতে পারে যে,তার উপর সত্যের সূর্যালোকপাত শুরু হয়েছে। সত্য স্বতঃপ্রমাণ,তাকে প্রমাণ করতে অপর কোন সাক্ষের প্রয়োজন নাই-এটা স্বপ্রকাশ। সত্য আমাদের অন্তস্থলে প্রবেশ করে,এর সামনে সমগ্র জগত এসে দাড়ালেও সে বলবে-"আমিই সত্য"। যে সকল আচার্যের হৃদয়ে জ্ঞান ও সত্য সূর্যালোকের ন্যায় উজ্বল,তারা জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরুষ। জগতের অধিকাংশ লোকই তাদের ঈশ্বর বলে পুজা করে।

কিন্তু আমরা অপেক্ষাকৃত অল্প জ্ঞানীর নিকটও আধ্যাত্বিক সাহায্য লাভ করতে পারি। আর আমাদের অন্তর্দৃষ্টি এমন প্রখর এবং নিখুত নয় যে,আমরা আচার্যের বা গুরুর সম্পর্কে যথার্থ বিচার করব। তাই গুরু-শিষ্যে দুজনেরই কতগুলি পরীক্ষা আবশ্যক।


শিষ্যের এই গুণগুলি আবশ্যক-পবিত্রতা,প্রকৃত জ্ঞানপিপাসা ও অধ্যবসায়। অশুদ্ধাত্মা পুরুষ কখনও ধার্মিক হতে পারে না। কেননা কায়মনোবাক্যে কেউ পবিত্র না হলে সে ধার্মিক হতে পারবে না।আর জ্ঞানতৃষ্ণা সম্পর্কে বলা যায়,আমরা যা চাই,তা পাই-এটাই সনাতন নিয়ম। কিন্তু অন্তরের সাথে একাত্ন না হয়ে চাইলেই কি সেই কাম্য প্রাপ্ত হয়?

ধর্মের জন্য প্রকৃত ব্যাকুলতা অনেক বড় জিনিস। আমরা ধর্মকে সচারচর যতটা সহজ মনে করি,ঠিক ততটা সহজ নয়। শুধুমাত্র ধর্মকথা শুনলে বা ধর্মগ্রন্থ পড়লেই প্রমানিত হয় না ধর্মপিপাসার কথা। যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে ব্যাকুলতা জাগ্রত না হবে,যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে প্রবৃত্তির উপর জয়লাভ না হবে,ততদিন আমাদের সংগ্রাম আবশ্যক। এই সংগ্রাম হবে পাশব প্রকৃতি ও অভ্যাসের উপর। দুই একদিনের কাজ নয় এটি,বছরের পর বছর,যুগান্তর কিংবা কয়েক জন্মও কেটে যেতে পারে। কারো জন্যে সহজেই সিদ্ধিলাভ হয়,আবার কারো জন্যে ধীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়। যদি অপেক্ষার কাল আসে তবে সেক্ষেত্রেও ধৈর্য ধরতে হবে।

যেই শিষ্য এইরূপ অধ্যবসায় সহকারে সাধনে প্রবৃত্ত হয়,তার সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।


গুরু সম্পর্কে এটা দেখা দরকার তিনি শাস্ত্রের মর্মজ্ঞ কিনা। জগতের সকলেই বেদ,পুরান বা অন্যান্য গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করে।কিন্তু শাস্ত্রসমূহ কেবল কতগুলো শব্দ এবং ব্যাকরণ - ধর্মের কয়েকটি অস্থি মাত্র। যে গুরু শব্দ নিয়ে আলোচনা করেন এবং মনকে শুধু শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা চালাতে চান,তিনি ভাব হারিয়ে ফেলেন। আর শাস্ত্রের মর্ম যিনি জানেন,উনিই যথার্থ ধর্মাচার্য।
শাস্ত্রের শব্দজাল যেন মহারণ্য, মানুষ নিজেকে একবার হারিয়ে ফেললে পথ খুজে পায় না।
"শব্দজালং মহারণ্যং চিত্তভ্রমণকারণম।"(বিবেকচূড়ামণি)
অর্থাৎ শব্দজাল মহারণ্যের ন্যায়,চিত্তের ভ্রমনের কারন। শব্দযোজনা হচ্ছে বক্তৃতা ও শাস্ত্র মর্ম ব্যাখ্যা করবার জন্য,এটা কোনভানেই মুক্তির সহায়ক নয়। যারা এমন করেন,তাদের ইচ্ছা লোকসমাজে তাদের সম্মান হোক,পণ্ডিত বলে সবাই গণ্য করুক। কিন্তু জগতের প্রধান ধর্মাচার্যগণ কেউ এইভাবে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করেন নি। তারা শাস্ত্রের শব্দার্থ ও অর্থ নিয়ে প্যাচান নাই,বরং জগৎকে শাস্ত্রের মহান ভাব শিক্ষা দিয়েছেন। আর যাদের শেখানোর কিছুই নেই,তারা দুই একটা শব্দ নিয়েই গবেষণা করে তার নাড়ি নক্ষত্র বের করার প্রয়াস করেন।


এক আম বাগানে কয়েকজন বেড়াতে গেল। বাগানে গিয়ে তারা হিসাব আরম্ভ করল-কয়টা আম গাছ,কি রকম আম ধরেছে,কোন ডালে কত পাতা,শাখা-প্রশাখা কেমন,আমের বর্ণ,আকৃতি,গন্ধ ইত্যাদি। পরস্পরের মধ্যে এরূপ বিচারে যুক্তি তর্ক বাধতে শুরু করল এক সময়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন বিচক্ষন। সে আমের বিচার না করে আম পেড়ে খেতে শুরু করল। কে বেশি বুদ্ধিমান???
আম খেলে পুষ্টি পাবে,পাতা গুনে লাভ কি। পাতা গোনা এবং অন্যকে জানানো বন্ধ করে দাও। অবশ্য এরূপ কাজের কিছুটা উপযোগিতা আছে। তবে সেটা ধর্মরাজ্যে নয়। যারা এইরূপ পাতা গুনে বেড়ায় তাদের ভিতর থেকে একটি ধর্মকথাও বের করা সম্ভব হয় না। ধর্ম যদি জীবনের লক্ষ্য হয়,তবে সেই লক্ষ্যে পৌছাবার জন্য পাতা গোনার মত এতো কষ্ট না করলেও হবে। যদি ভক্ত হতে একান্তই ইচ্ছা জাগে,তবে শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় কিংবা ব্রজে জন্মেছিলেন,শৈশবে কিংবা যৌবনে কি কাজ করেছিলেন,তা জানার আবশ্যকতা নেই। গীতায় কর্তব্য ও প্রেম সম্পর্কে যে সুন্দর শিক্ষা আছে,আগ্রহের সাথে তা অনুসরন করাই হবে ভক্তের কাজ।
শাস্ত্র প্রণেতা সম্পর্কে অন্যান্য বিষদ বিষয় জানা কেবল পন্ডিতদের আমোদের জন্য। তারা যা চায়,তাই নিয়ে থাকুক। তাদের পন্ডিতি তর্কবিচারে "শান্তিঃ শান্তিঃ" বলে আমাদের আম খাওয়াই শ্রেয়।


গুরুর নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক। অনেক সময়ে লোকে বলিয়া থাকে ,"গুরুর চরিত্র,গুরু কি করেন না করেন,দেখিবার প্রয়োজন কি? তিনি যা বলেন,তাহাই বিচার করিতে হইবে। সেইটি লইয়াই কাজ করা প্রয়োজন।" এ কথা ঠিক নয়। গতি-বিজ্ঞান,রসায়ন বা অন্য জড়-বিজ্ঞানের শিক্ষক যাহাই হউন না কেন,কিছু আসে যায় না। কারন উহাতে কেবল বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধ্যাত্মবিজ্ঞানের আচার্য অশুদ্ধচিত্ত হইলে তাঁহাতে আদৌ ধর্মালোক থাকিতে পারে না। অশুদ্ধচিত্ত ব্যক্তি কী ধর্ম শিখাইবে? নিজে আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্ধি করিবার বা অপরে শক্তি সঞ্চার করিবার একমাত্র উপায়-হৃদয় ও মনের পবিত্রতা।

যতদিন না চিত্তশুদ্ধি হয়,ততদিন ভগবদ্দর্শন বা সেই অতীন্দ্রিয় সত্তার আভাসজ্ঞানও অসম্ভব। সুতরাং ধর্মাচার্যের সম্বন্ধে প্রথমেই দেখা আবশ্যক তিনি কি চরিত্রের লোক,তারপর তিনি কি বলেন তাহাও দেখিতে হইবে। তাহার সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক। তবেই তাহার কথার প্রকৃত একটা গুরুত্ব থাকে,কারন তাহা হইলেই তিনি প্রকৃত শক্তি সঞ্চারকের যোগ্য হইতে পারেন। নিজের মধ্যেই যদি সেই শক্তি না থাকে,তবে তিনি সঞ্চার করিবেন কি? গুরুর মন এরূপ প্রবল আধ্যাত্বিক স্পন্দন সম্পন্ন হওয়া চাই যে তাহা যেন সমবেদনাবশে শিষ্যে সঞ্চারিত হইয়া যায়। গুরুর বাস্তবিক কার্যই এই- কিছু সঞ্চার করা,কেবল শিষ্যের বুদ্ধিবৃত্তি বা অন্য কোন শক্তি উত্তেজিত করিয়া দেওয়া নয়। বেশ স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়,গুরু হইতে শিষ্যে যথার্থই একটি শক্তি আসিতেছে।সুতরাং গুরুর শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক।


দেখা আবশ্যক,গুরুর উদ্দেশ্য কি? 


গুরু যেন অর্থ,নাম যশ বা কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মশিক্ষাদানে প্রবৃত্ত না হন- সমগ্র মানবজাতির প্রতি শুদ্ধ প্রেমই যেন কার্যের নিয়ামক হয়। আধ্যাত্বিক শক্তি শুদ্ধ প্রেমের মাধ্যমেই সঞ্চারিত করা যাইতে পারে। কোনরূপ স্বার্থপূর্ণ ভাব,লাভ বা যশের ইচ্ছা এক মুহূর্তে এই সঞ্চারের মাধ্যম নষ্ট করিয়া ফেলে। ভগবান প্রেমস্বরূপ,আর যিনি ভগবানকে প্রেমস্বরূপ বলিয়া জানিয়াছেন,তিনিই মানুষকে ভগবদ্ভাব শিক্ষা দিতে পারেন।

আর যদি গুরুতে এই সব লক্ষণ বর্তমান থাকে,তবে জানিতে হইবে কোন আশঙ্কা নাই। নতুবা তাহার নিকট শিক্ষায় বিপদ আছে,তিনি হৃদয়ে সদ্ভাব সঞ্চার করিতে না পারেন,হয়তো অসদ্ভাব সঞ্চার করিবেন। এই বিপদ হইতে নিজেকে সর্বতোভাবে সাবধান রাখিতে হইবে। "যিনি বিদ্বান,নিষ্পাপ ও কামগন্ধহীন,যিনি শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ" তিনিই প্রকৃত সদগুরু।

গুরুই ধর্মশিক্ষার্থীর চক্ষু খুলিয়া দেন। সুতরাং কোন ব্যক্তির সহিত তাহার বংশধরের যে সম্বন্ধ,গুরুর সহিত শিষ্যেরও ঠিক সেই সম্বন্ধ। গুরুর প্রতি বিশ্বাস,বিনয়নম্র আচরণ,তাহার নিকট শরণগ্রহন ও তাহার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যতিরেকে আমাদের হৃদয়ে ধর্মের বিকাশ হইতেই পারে না। আর ইহাও বিশেষ লক্ষ্য করিবার বিষয় যে,যে সব দেশে গুরু শিষ্যের এরূপ সম্বন্ধ আছে,কেবল সেই সব দেশেই অসাধারন ধর্মবীরগণ জন্মিয়াছেন। আর যেসব দেশে গুরু শিষ্যের এ সম্বন্ধ রক্ষা করা হয় নাই,সে সব দেশে ধর্মের শিক্ষক কেবল বক্তামাত্র।

Written by:Prithwish Ghosh

গুরুর প্রয়োজনীয়তা

জীবাত্নামাত্রেই পূর্ণতা লাভ করিবেই করিবে-শেষ পর্যন্ত সকলেই সিদ্ধাবস্থা লাভ করিবে।আমরা এখন যাহা হইয়াছি,তাহা আমাদের অতীত কার্য ও চিন্তারাশির ফলস্বরূপ।আর ভবিষ্যতে যাহা হইব,তাহা বর্তমানে যেরূপ চিন্তা ও কার্য করিতেছি,তাহার ফলস্বরূপ হইবে। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের অদৃষ্ট গঠন করিতেছি বলিয়া যে বাহির হইতে আমাদের কোন সহায়তার আবশ্যক নাই,তাহা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন। যখন এই সহায়তা পাওয়া যায়,তখন আত্মার উচ্চতর শক্তি ও আপাত-অব্যক্ত ভাবগুলি ফুটিয়া উঠে,আধ্যাত্মিক জীবন সতেজ হইয়া উঠে,উহার উন্নতি ত্বরান্বিত হয়,সাধক অবশেষে শুদ্ধভাব ও সিদ্ধভাব হইয়া যায়।


এই সঞ্জীবনী শক্তি গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় না। একটি আত্মা কেবল মাত্র অন্য একটি আত্মা থেকেই শক্তি লাভ করতে পারে। আমরা সারাজীবন বই পড়ে ডিগ্রি নিতে পারি,বুদ্ধিমান হতে পারি কিন্তু আধ্যাত্বিক উন্নতি হবে না কিছুতেই।বুদ্ধির উন্নতি মানে যে আধ্যাত্বিক উন্নতি নয়,তা আমাদের বোধগম্য হয় না। আমরা যারা আধ্যাত্বিক কথা বা তথ্য জানার চেষ্টা করি,ধর্মজীবন যাপনে দেখা যাবে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তিতে ভরা। তার একটাই অর্থ দাড়ায়,আমাদের আধ্যাত্বিক জ্ঞানের প্রাচুর্য কম। তাই জীবাত্মার শক্তি জাগ্রত করতে হলে অপর এক আত্মা হতে শক্তির সঞ্চারন প্রয়োজন।
যে ব্যক্তির আত্মা হতে শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকেই গুরু বলে,যে ব্যক্তির আত্মায় শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকে বলে শিষ্য। শক্তি সঞ্চার করতে হলে প্রথমেই যে ব্যক্তি সঞ্চার করবেন তার সেই শক্তি থাকা আবশ্যক। আর যে ব্যক্তির আত্মায় এই শক্তি দেয়া হবে তার সেই শক্তি গ্রহনের সামর্থ থাকা প্রয়োজন। সঠিক অঙ্কুরোদগম এর জন্য বীজ যেমন সতেজ হওয়া প্রয়োজন,ঠিক তেমন মাটিও গুনাগুন সম্পন্ন হওয়া দরকার। ধর্মের প্রকৃত বক্তা অবশ্যই আশ্চর্য পুরুষ হবেন,শ্রোতাও সুনিপুণ হওয়া চাই। যখন উভয়েই আশ্চর্য ও সুনিপুণ হয়,তখনই আধ্যাত্বিক উন্নতি ঘটে।ঐরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত গুরু এবং এইরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত শিষ্য-মুমুক্ষু সাধক।


সকলে ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছে মাত্র,কিছুটা কৌতুহল আছে বৈকী কিন্তু তবুও তারা এখনও ধর্মচক্রবালের বাইরেই আছে। এটারও মুল্য আছে অবশ্যই। কেননা সময়কালে এর থেকেও ধর্ম পিপাসা জাগতে পারে। আর প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল এই যে,যখনই ক্ষেত্র উপযুক্ত হয় তখনই বীজ আসে। অর্থাৎ যখন আত্মার ধর্মলাভের আগ্রহ প্রবল হয়,তখনই ধর্মশক্তি সঞ্চারক পুরুষ সেই আত্মার সহায়তার জন্য অবশ্যই আসবেন।
"যখন গ্রহীতার ধর্মালোক আকর্ষন করিবার শক্তি পূর্ণ ও প্রবল হয়,তখন সেই আকর্ষনে আকৃষ্ট আলোকশক্তি অবশ্যই আসিয়া থাকেন।"
তবে পথে কতগুলি মহাবিঘ্ন আছে,যথা-ক্ষনস্থায়ী ভাবোচ্ছাসকে প্রকৃত ধর্ম পিপাসা বলে ভুল হবার সম্ভাবনা। আমরা নিজেরাই এরূপ খেয়াল করিতে পারি। হয়তো কাউকে খুব ভালোবাসতাম,তার মৃত্যুতে আঘাত পেলাম। মনে হতে পারে,যা ধরছি তাই বুঝি হাত ফসকে চলে যাচ্ছে। আমাদের একটি দৃঢ় আশ্রয় খুজতে হবে,এর জন্য ধর্ম অতীব জরুরী। কিন্তু কয়েকদিন পরে দেখা গেল,সেই ভাব তরঙ্গ আর নেই। আমরা যেইভাবে ছিলাম,সেইভাবেই আছি। আর যতদিন এই মিথ্যা ভাবোচ্ছাসকে ভুল করে ধর্ম পিপাসা মনে করব,ততদিন ধর্মের জন্য যথার্থ ব্যকুলতা জন্মাবে না। আর ততদিন শক্তি সঞ্চারককারী পুরুষেরও সাক্ষাৎ পাব না।
বাধা আরো আছে। অনেকে অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়েও অহংকারে নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করে।
"অজ্ঞানে আচ্ছন্ন,অতি নির্বুদ্ধি হইলেও নিজেদের মহাপন্ডিত মনে করিয়া মূঢ় ব্যক্তিগণ অন্ধের দ্বারা নীয়মান অন্ধের ন্যায় প্রতিপদবিক্ষেপেই স্থলিতপদ হইয়া পরিভ্রমন করে।"
এইরূপ মানুষেই জগত পরিপূর্ণ। সকলেই গুরু হতে চায়,ভিখারী লক্ষ টাকা দান করতে চায়। এমন লোক যেমন সকলের নিকট হাস্যাস্পদ হয়,এই গুরুগণও তেমনি।

Written by:Prithwish Ghosh

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন -- শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

তাছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিকাশের যে চারটি পর্যায় আছে তা হল - Hadronic -- এখানে মৌলিক পদার্থ S.N Force দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । Laptonic -- এখানে শক্তি Electron ও Positron দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । Radiative -- এখানে বিস্ফোরণের আলো প্রথম দেখা যায় ও Stellar -- যেখানে Proton ও Electorn যুক্ত হয়ে Hydrozen অণু তৈরি করে তার মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে আলো রূপ জ্যোতি দেখা যায় । 

এই সময় শক্তি জাগরকরা মহাবিভ্রান্তিতে পরে যান। দর্শন না হবার জন্য তাঁরা যে উন্নতি হচ্ছে এ কথাটা তাঁরা বুঝতে পারেন না । যতক্ষণ দর্শন ততক্ষণ অলৌকিক বলে যা কিছু মনে হোক না কেন --- আসলে তা একধরণের সীমাবদ্ধতা। যখন দর্শন হারিয়ে জ্যোতির্মণ্ডলে প্রবেশ করা যায় তখন নির্গুন শূন্যতার কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। এই জ্যোতিকে অনেকে সেইজন্য ঈশ্বরের জ্যোতি বা বিভূতি বলে বর্ণনা করেছেন। কিছুদিন এই জ্যোতির্মণ্ডলে ঘোরাফেরার পর শক্তি উত্তোলক নিজেরই মধ্যে দৈবী ক্ষমতা অনুভব করতে পারেন, তখন কোন মানুষের ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান দেখার জন্য ধ্যানযোগ আসনে বসে জগত সত্ত্বার সূক্ষ্ম অংশে জীব কর্মফল প্রক্ষিপ্ত ছবি দেখার প্রয়োজন হয় না। 

চোখ বুজলেই এক ধরণের দৈবী ভাষা প্রতীকের মাধ্যমে যেন কথা বলতে আরম্ভ করে। এটি যথার্থই দৈবী সত্ত্বা প্রেরিত কোন সংকেত বা মানুষ নিজেই দৈবী সত্ত্বায় উপনীত হন সেটা ভেবে দেখার বিষয় এবং অবশেষে ধ্যানযোগী নিজেই বলে বসে "আমিই সেই"। সংকেতময় ভাষাগুলোর অর্থই আমাকে ভেতর থেকে কে বলে দেয় ? সেই অন্তঃস্থলের গভীর রহস্যের স্বরূপ এখনও আমি মিঠু ভেদ করতে পারিনি । জ্যোতির্ময় ধোঁয়ার মতো যে মেঘরূপ ছবি এঁকে আমার সঙ্গে কথা বলে, সেই মেঘই বা কি ? 

মাঝে মাঝে মনে হয় "ঈশ্বরের বিভূতি", সত্যিই কি তাই ? এই জ্যোতির্ময় বিন্দুমণ্ডলের উর্ধ্বে যখন স্বচ্ছ কাঁচের মতো জগত ভেসে ওঠে,আমি মিঠু সেখানে তখন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিবিম্ব লক্ষ্য করি। আরও অবাক হই যখন নিবিড় নিদ্রার মতো একটা গভীর প্রশান্তির মধ্যে কিছুক্ষণ হারিয়ে যাই, ফিরে এসে দেহমনকে মনে হয় " স্নিগ্ধ...স্নিগ্ধ...স্নিগ্ধ..."। অপূর্ব এক প্রেম ভালোবাসা ভালো লাগায় তখন আমার সমগ্র চৈতন্য সত্ত্বা ভরে যায়, তখন মনে হয় এই শেষ লাভটুকুই যথার্থ লাভ, আর সবই মিথ্যা। সুখ-সম্পদ, নাম-যশ সবার চাইতে প্রশান্তিই বড়। আল্লাহ্ মানুষকে সবকিছু দিয়ে শুধু এই প্রশান্তিটুকুই নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। নির্বিকার নীরবতায় সেখানে হয়তো আল্লাহর কোলে বসে তাঁরই সঙ্গে আমি মিঠু সেই প্রশান্তিটুকুই ভাগ করে নিই। অহংকারের থেকে বলছি না, যারা তৃষ্ণার্ত, যাদের ধ্যানযোগী হবার প্রবল ইচ্ছা তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এই প্রশান্তিটুকু রাখা হলো। এই বলে শেষ করলাম "ধ্যানে দেহ জগত দর্শন''।

Written by:Ariful Islam Mitu

মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন -- পর্ব ৪০

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

দেহতত্ত্বের কথা আগেই বলেছি, দেহতত্ত্বে মূলাধারস্থ শক্তি কোন কোন স্তরে উঠলে কি কি রঙ ও দৃশ্য দেখা যায়, তাও বর্ণনা করা হয়েছে । এই দর্শন পর্যায়ে মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান ও মনিপুরী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দর্শনগুলি হয় পার্থিব দর্শন টেলিপ্যাথি ধরণের। কখনও কখনও কিছু অলৌকিক ছবি উঁকি দিয়ে উর্ধ্বস্তরের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। 

নানা দর্শন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে হতে থাকে অনাহুতে, যে স্তরে উঠলে আত্মা দুঃখ বেদনা দ্বারা আহত হয় না, চক্রমন্ডল থেকে আজ্ঞাচক্র পর্যন্ত। এই সময়ের দর্শন সাধারণত আকাশে স্থির গ্রহ গ্রহান্তর ও জগতের সূক্ষ্মাতলে অবস্থিত সূক্ষ্ম আত্মাদের। মাঝে মাঝে কিছু কিছু দৈবীস্বত্ত্বার সাক্ষাৎও মেলে, এঁরা জীবন্তরূপে প্রতিভাত হলেও সিনেমার পর্দায় দেখা ছবির মত, যথার্থ রক্তমাংসের জীব নয়। কিংবা এঁরা হয়তো সত্যিকারেরই জীব -- বেশী মাত্রাযুক্ত। বেশী মাত্রাযুক্ত প্রাণী কম মাত্রাযুক্ত প্রাণীর কাছে আকস্মাৎ আবির্ভূত হতে পারে আবার তেমনই হারিয়েও যেতে পারে। ফলে এঁদের অস্তিত্ব অপরের কল্পনাপ্রসূত তরঙ্গ বিক্ষেপ হেতু কিংবা দর্শকের সংস্কারের প্রক্ষেপ হেতু তা বলা কষ্টকর। কিন্তু এই সময়ে মাঝে মাঝে সুমধুর নানা গন্ধ নাকে এলেও নানা শব্দ শ্রূত হলেও বিভ্রান্তি জন্মে। তখন এই দর্শনকে মিথ্যা বলে মনে হয় না। 

এই দর্শন অত্যন্ত বিরল হয়ে আসে সপ্ততলে উঠার পর। এরপর চৈতন্যশক্তি যখন মেরুদণ্ড পথে সহস্রারের বৃত্ত মণ্ডলে আনন্দলোকে অর্থাৎ বিন্দুর বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করে তখন জ্যোতি ভিন্ন আর কিছুই লক্ষ করা যায়না। এই জ্যোতি হল অনন্ত দেশে শক্তি বিস্ফোরণজনিত প্রথম পর্যায়ের জ্যোতি। তাছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিকাশের যে চারটি পর্যায় আছে তা হল - Hadronic -- এখানে মৌলিক পদার্থ S.N Force দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। Laptonic -- এখানে শক্তি Electorn ও Positron দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। Radiative -- এখানে বিস্ফোরণের আলো প্রথম দেখা যায় ও Stellar -- যেখানে Proton ও Electorn যুক্ত হয়ে Hydrozen অণু তৈরি করে তার মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে আলো রূপ জ্যোতি দেখা যায়। এইসময় শক্তি জাগরকরা মহাবিভ্রান্তিতে পরে যান । দর্শন না হবার জন্য তাঁরা যে উন্নতি হচ্ছে এ কথাটা তাঁরা বুঝতে পারেন না। 

(চলবে)
Written by:Ariful Islam Mitu

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শন পর্ব-৩৯

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

জীবাত্মা খুবই ছোট বলে অনেকে মনে করেন, কারো মতে অঙ্গুষ্ট প্রমাণ, কারো মতে অনুতূল্য । আসলে আমি অধম বলি--- জীবত্মা স্থুল দেহেরই পরিমাণ স্বরূপ। এ হল এক ধরনের সূক্ষ্ম পরমাণু দিয়ে সৃষ্টি-বিজ্ঞান যাকে Estoplasm নামে অবিহিত করতে চায়। এই ধূমাকৃতি সূক্ষ্ম পদার্থ বলে স্থুল নজরে দৃষ্ট হয় না। ওজনেও হালকা । মৃত্যুর পর পানি যেমন ডুবন্ত দেহকে ঠেলে উপরে তোলে তেমনি কোন একটা কিছু যেন সেই সূক্ষ্ম সত্ত্বাকে ভাসমান করে উপরে তুলে দেয়। 

কামনা বাসনা যার যত কম তাঁর সূক্ষ্মদেহ ততই লঘু এবং মৃত্যুর পর লঘুতার পরিমাণ এক একজন এক এক স্তর প্রাপ্ত হন । কেউ যদি তার ধ্যান শক্তিতে জীবিত অবস্থায় মূলাধারস্থ সুপ্ত শক্তিকে সূক্ষ্ম বায়ুর দ্বারা তাড়িত্ করে স্তরে স্তরে যদি উর্ধে উঠাতে পারেন, তবে তিনি সেই সেই স্তরে কখনও কখনও সূক্ষ্ম আত্মা সমূহের তরঙ্গের সমান্তরাল পর্যায় এলে তা্ঁদেরকে দেখতে পান।


কোন শক্তি উত্তলনকারী ব্যাক্তি মূলাধারস্থ শক্তিকে যে স্তরে উঠান সেই স্তরের আনূপাতিক যে তরঙ্গ তা তাঁর মস্তিষ্ক স্নায়ুতে আলোড়ন সৃষ্টি করে সেই সেই Frequency র সমান্তরাল Frequency র বিভিন্ন স্তরের সূক্ষ্মদেহী প্রাণী বা আত্মাকে তা্ঁর তৃতীয় নয়নে অর্থাৎ মস্তিষ্ক তরঙ্গের টিভির পর্দায় দেখা ছবির মতন ফুটিয়ে তোলে এবং সূক্ষ্মদেহের যে অস্তিত্ব আছে যারা ধ্যান যোগে সফল তাঁদের কাছে এইটাই বিশ্বাসযোগ্য। দেহের উর্ধে অদৃশ্য সেই সত্ত্বা যে আলোর তরঙ্গ হিসাবে ফটোর চোখে ধরা পরে এটাও বিশ্বাসযোগ্য 

(চলবে)
Written by:Ariful Islam Mitu

শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৮

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

যত কামনার পশুত্ব বেশি, ততই তার Frequency স্থূল, ততই সে স্থূলতার ভারে আচ্ছন্ন। এইক্ষেত্রে জগতের মধ্যে জীবকে ব্যাখা করলে তাকে সাগরে নিমজ্জিত একটি জাহাজ বলে প্রতীয়মান হবে। মালপূর্ণ জাহাজের অধিকাংশই জলের নীচে থাকে। জাহাজ হালকা হলে একমাত্র নিচের অংশ ছাড়া আর বাকি সব অংশ উপরেই থাকে। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। যতই তার কামনা বাসনার ভার, ততই তার নিমজ্জমান অবস্থা। যত কামনা বাসনা কম ততই তার লঘুতা। লঘুতা হলেই তার উচ্চমার্গ বা স্তর। 

ধরা যাক এই ডায়াগ্রামের ছবিটার মতো দাঁড়াবে । নিম্নে ছবিটা দেওয়া হলঃ



চিত্র অনুসারে, স্থূল জগতে প্রথম দিকের মানুষ কামনা বাসনায় থাকে ভর্তি । ফলে জগত সমূদ্রে আকুন্ঠ ডুবে আছে। মৃত্যুর পর জগত পর্যায়ের প্রথম স্তরে সে ঘোরা ফেরা করে অর্থাৎ মূলাধার স্তরে । দ্বিতীয় পর্যায়ের মানুষের কামনা বাসনা আরেকটু কম । মৃত্যুর পর তার দেহের সূক্ষ্মাংশ কামনা-বাসনার তুলনামূলক লঘুতা হেতু স্বাধিষ্ঠান পর্যায়ে ভাসমান থাকে। তৃতীয় পর্যায়ের মানুষ অর্থাৎ যার কামনা বাসনা আরও কম, মৃত্যুর পর তার সূক্ষ্ম দেহের লঘুতা আরও বেশি। সে তার সূক্ষ্ম দেহের সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় স্তরে হালকা হয়ে ভাসতে থাকে। তিন স্তর পর্যন্ত পার্থিব জগতের অভিকর্ষ অত্যন্ত বেশি। ফলে এইসব স্তর থেকে সূক্ষ্ম দেহগুলি অতি তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে নেমে এসে মাতৃগর্ভ হতে জন্মলাভ করে। এইসব আত্মা জলভরা মেঘের মতো। বেশিক্ষণ ভাসমান থাকতে পারে না। জলভরা মেঘ যেমন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, তেমনই কামনা-বাসনার ভার ঘনীভূত হয়ে অল্পদিনের মধ্যেই এই তিন স্তরের আত্মাকে ভারী করে তোলে। পুনরায় তারা পৃথিবীতে ঝরে পড়ে অর্থাৎ নতুন দেহ ধারণ করে। চতুর্থ পর্যায়ে যারা ওঠে তারা অনেকটা কম কামনা-বাসনা দ্বারা আক্রান্ত। এরা চতুর্থ স্তরে বেশ কিছুদিন বিরাজ করে। 

এখানে অনেকটা শান্তভাবে থাকে কিন্ত তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিম্নস্তরের আত্মারা স্থূলদেহের অভাবে কামনা-বাসনা দ্বারা পীড়িত হয়ে কষ্ট পায় এবং চতুর্থ পর্যায়ে যে আত্মা যেতে পারে (আত্মা মানে সূক্ষ্ম দেহ) BIOPLASMIC BODY, সে কিছুদিন শান্তিতে থাকার পর অবচেতন কামনা বাসনা পুনরায় ফুটে উঠতে থাকলে অর্থাৎ কর্মের ভোগের উপর উদয় বিলয় ঘটতে থাকলে সূক্ষ্মদেহ ভারপ্রাপ্ত হয় ও অবশেষে জলভরা মেঘের মতো একদিন নিচের দিকে ঝরে পড়ে। 

(চলবে)
Written by:Ariful Islam Mitu

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

বস্তু সত্ত্বা তার শেষভাগ থেকে আবার উৎসে ফিরে যাবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়, অর্থাৎ বিস্ফোরণের শক্তি যখন শেষ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের টানে দ্রুত আভ্যন্তরমুখী হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ''Centripetal Force'' নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জগতের গোলাকার পরিধির প্রান্তভাগে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জড় থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে মন, মন থেকে যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাতে মনুষ্য জাতি ও জীব আত্মপ্রকাশ করে । 

তাঁরা স্থূল জগত Centripetal Force এর টানে লয় প্রাপ্ত হবার আগেই আপন আন্তর্সত্ত্বায় জগত রহস্যের মূল সূত্র ধরতে পেরে জেনে যান যে জগতে প্রত্যেকটি পদার্থের মধ্যেই জগত ব্রহ্মাণ্ডের লীলা স্তব্ধ হয়ে আছে । শক্তির বিচ্যুরণ হলে সেই ক্রিয়া আবার ফুটে ওঠে। মানুষ দেহতত্ত্বের মধ্যে সেই সত্য আবিষ্কার করে জগতের উৎসের সন্ধান পেয়েছে। যে সত্য সন্ধানের কাহিনী বর্তমান পুস্তকের দেহতত্ত্বাংশে আমি মিঠু লিখেছি । 

অণু পরমাণু থেকে জীব ও মানুষ সব কিছুতেই জগত সৃষ্টি প্রক্রিয়ার নানা স্তর ভেতরের শূন্যতাকে আবরিত করে আছে । এই আবরণ একে একে সরে গেলে ভেতরের অনন্ত শূন্যতা তার স্বরূপে ফিরে যায় । যেমন পিঁয়াজের শেষ খোসা সরে গেলে অন্তঃস্থ শূন্যতা বাইরের শূন্যতার সঙ্গে একাকার হয়ে মিলে যায় । শক্তির একান্নতম ধাপে জগত স্থূলতা প্রাপ্ত হয় । দেহতত্ত্বে এই একান্ন ধাপ সপ্তস্তরে বিভক্ত । এর মধ্যে স্থূল থেকে সূক্ষ্ম বস্তু স্তর রয়েছে ছয়টি । তার তন্মত্র সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুকরণ রয়েছে সপ্ততলে। 

সপ্ততলের শেষ পর্যায়ে ব্রহ্মরন্ধ্রে কিছুই নেই। রয়েছে শুধু মহাশুন্যতা। স্থুলতা হলো তরঙ্গের হের ফের হেতু, সুক্ষ্মতাও তাই । যত স্থূল, Frequency তত কম । যত সূক্ষ্মাসূক্ষ্ম, Frequency তত বেশি । আলোর নির্দিষ্ট Frequency যেমন দৃশ্যমান। অতিরিক্ত Frequency তেমনই অদৃশ্য। তেমনই বস্তুসত্ত্বার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটি Frequencyই বস্তুরূপে বিরাজমান।বেশি হলে সূক্ষ্ম অবস্থায় স্থিতিমান। যা স্থূল দৃষ্টি দ্বারা দর্শনযোগ্য নয় । জীবের ক্ষেত্রে এই Frequency তার কামনা,বাসনা,লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, গীবত,অহংকার, আমিত্বের আবেগ । যত কামনার পশুত্ব বেশি ততই তার Frequency স্থূল।  ততই সে স্থূলতার ভারে আচ্ছন্ন । এইক্ষেত্রে জগতের মধ্যে মানুষ জীবকে ব্যাখা করলে তাকে সাগরে নিমজ্জিত একটি জাহাজ বলে প্রতীয়মান হবে । 

(চলবে) 
Written by:Ariful Islam Mitu

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৬

( পুর্ব প্র্রকাশের পর হতে ) 

যা রচিবে তাই সত্য তুমি
কবি তবো মনোভূমি,
রামের জনম স্থান
অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন

...... সত্যি সত্যি কবি যদি মানস নেত্রে রামায়ণ কাহিনী তৈরি করেন, জাগতিক সূক্ষ্মা সত্ত্বার জীবন্ত হয়ে তা ফুটে থাকতে পারে । প্রতিটি মানুষের প্রতিটি চিন্তাই জাগতিক সূক্ষ্মাসত্ত্বায় চিত্র হয়ে ফুটে আছে, খারাপ চিন্তাই হোক আর ভালো চিন্তাই হোক । শক্তি জাগরণ প্রয়াসী ব্যক্তিরা অনেকেই তাই চৈতন্য সত্ত্বাকে উত্তোলনকালে নানা ধরণের ছবি দেখে থাকেন--- যে ছবিগুলো তাঁদের কাছে অদ্ভূত হেঁয়ালির মতো মনে হয় ।

এর কারণ, তাঁরা নিজেরা এ ধরণের কোন চিন্তা কখনও করেছেন বলে তাঁদের মনে পড়ে না । যে পটভূমিতে এই দর্শন হয় তা দর্পন সাদৃশ্য, সেই স্বচ্ছ দর্পন সাদৃশ অবস্থাকেই ফকির লালন বাবা বলেছেন ''আরশি নগর'' আর তিব্বতি লামারা বলেছেন ''স্বচ্ছ পাথর"। এ স্বচ্ছ পাথরে বা আরশি নগরে যে শুধু জীবের তরঙ্গজনিত প্রতিফলনই দেখা যায় তা নয়, স্থূল দেহান্তে জীবাত্মার অবস্থানও হয় এই সূক্ষ্ম জগতে ।

ফলে এই আরশি নগরে যাঁদের প্রবেশাধিকার হয়েছে, তাঁরা স্থূল দেহ শেষে মানুষের সূক্ষ্মা অস্তিত্বও সেই মার্গে গেলে দেখতে পান । এ ক্ষেত্রেও অদ্ভূত এক তত্ত্ব কাজ করে, এ তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল হয়েছেন আধ্যাত্মবিদরা । আধ্যাত্মপুরুষেরা পরমাত্মার উপর ছয়টি, কারও মতে পাঁচটি আবরণে আবদ্ধ জীবরূপে স্বতন্ত্র সত্ত্বার কল্পনা করেছেন ।

ঘটনাটি এই ধরণের--- শূন্যস্থিত শক্তি স্বভাব গুণে বিস্ফোরিত হলে নানা তরঙ্গে গোলাকার, কিছুটা ডিম্বাকৃতি অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে । অধিমনোবিজ্ঞানে এই বিস্ফোরণের ফলে সম্প্রসারণশীল গোলক একান্নটি কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে অর্থাৎ ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়ে । একান্নতম ধাপে শক্তির ফ্রিকোয়েন্সি হেতু তা অণুর বা পরমাণুর রূপ নেয় ।
তাদেরই পারস্পারিক যোগাযোগে স্থূল বস্তু সত্ত্বার উদ্ভব হয় । বস্তু সত্ত্বা তার শেষভাগ থেকে আবার উৎসে ফিরে যাবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়, অর্থাৎ বিস্ফোরণের শক্তি যখন শেষ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের টানে দ্রুত আভ্যান্তরমুখী হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ''Centripetal Force'' নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জগতের গোলাকার পরিধির প্রান্তভাগে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জড় থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে মন, মন থেকে যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাতে মনুষ্য জাতি ও জীব আত্মপ্রকাশ করে । 
 
( চলবে )

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৫

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

অতীতের চিত্র দেখতে হলে কুণ্ডলিনীর গতিমাত্রা তীব্রতম হতে হবে। আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি বেশি হওয়া প্রয়োজন--- Tachyon moves faster than the speed of Light, So goes back in Time........... এসব তত্ত্ব নিয়ে জগতেও তোলপাড় ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও তাঁদের এমন ত্রুটি রয়েছে, যে জন্য অলৌকিক কথা কতকগুলি অভিজ্ঞতা হলেও তার যে যথার্থ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি তাঁরা তা ধরতে পারছেন না। আবার এই অলৌকিক ক্ষমতাগুলিকে ব্যবহার করে কেউ কেউ বা রীতিমত প্রতারণা করবার চেষ্টা করছেন বা মহাপুরুষ সেজে প্রতারণার পথ ধরেছেন। 

অধুনা ইউরোপীয় প্যারাসাইকোলজীর নামে যে জগতে প্রবেশ করে দিশেহারা অবস্থাতে আছেন, সে অবস্থা ভারতীয়রা অনেক আগেই অধিগত করেছিলেন এবং মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এগুলি যে এক ধরণের অন্তরায়, তা বুঝে বহু পূর্বেই এসব পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সত্যকে জানা। বিশ্বের উৎস কোথায়, সত্য কোথায়, তা জানার জন্যই তাঁদের অভিযাত্রা। শেষ পর্যন্ত সেই সত্যকে তাঁরা জেনেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে, সবই সত্য, জীব, অজীব, সব। অন্তরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে অর্থাৎ স্থূলতার খোলস খুলে ফেললে নিত্য ও অনিত্যের মধ্যে কোন ভেদ থাকে না। কিন্তু সেসব কথা থাক। যে কথা বলা হচ্ছিল তাই বলা যাক। অর্থাৎ দৈব ভাষার জগতে প্রবেশের পূর্ব পর্যায়ে দিব্য দর্শন জগতের কথা প্রতীকময় দৈব ভাষা জগতে প্রবেশ করার আগে অদ্ভুত এক দৈব দর্শন হয় কোন এক ঘটনা প্রবাহে--- ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগে যে এমন হতে পারে এই ইচ্ছা শক্তিই পীর ও সাধুদের করায়ত্ত্ব আছে বলে হাজার হাজার লোক তাঁদের সান্নিধ্যে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকেন। তবে ইচ্ছা শক্তি জাগরিত হয়েছে এমন পীর বা সাধুদের সংখ্যা কম। কদাচিৎ দেখা যায়। সবই খুঁত, নিখুঁত নয় । 

চল্লিশ বছর পদ্ম আসনে বসে অনেকেই সাধনা করেছেন। কিন্তু চল্লিশ বছরে মানুষের স্থূল দেহ বন্ধনের অন্তরালে যে 'অনন্ত অসীম' বিরাজ করছে তার কোন সন্ধান পান না। অথচ এইসব পীর সাধুদের শিষ্য সামন্তের অভাব নেই। সে ধরণের অপদার্থদের সংখ্যা কম নেই। যাকে এঁরা আত্মতত্ত্ব বলেন সেই আত্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এঁদের কারোরই নেই। না থাকার কারণ, শাস্ত্রে বাক্যের প্রতি নির্ভেজাল আত্মসমর্পণ এবং প্রশ্ন করার স্পর্ধাহীনতা। 

মানুষ নিজেই যে একধরণের স্র্রষ্টা বা ঈশ্বর অপেক্ষা কোন অংশে কম নয়। এ কথা তারা জানেন না। তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাষা ও ছন্দ কবিতায় বাল্মীকি সম্পর্কে ব্রহ্মার বক্তব্য যে কতদূর সত্য সাধারণ মানুষ তাতো বোঝেই না আর পীর বা সাধুরা বুঝবেন কি? রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন বলেই লিখেছেন---

যা রচিবে তাই সত্য তুমি কবি তবো মনোভূমি, 
রামের জনম স্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন...... 


(চলবে)

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৪

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এই বিশ্ব আত্মার বিশেষ কোন তরঙ্গ পর্যায়ের ছবির সঙ্গে জীবাত্মার আন্তর-সচ্ছতার নির্দিষ্ট স্তর সমান্তরাল হলেই এমন হয় । সূক্ষ্ম জগতের এই রহস্যটাই অদ্ভূত, যদিও ভূত-ভবিষ্যত সম্পর্কিত ছবি Web Length এর ভিত্তিতেই কাজ করে, তবুও এই সব তরঙ্গ অনেক সময় এমন সব Symbolic ছবি ছুড়ে দেয়, যেগুলি রীতিমত হেঁয়ালী । মনের আকাংক্ষা চেতনার প্রহরীকে এড়িয়ে বার হবার সময় ছদ্মবেশ ধারণ করে । সেই ছদ্মবেশ অদ্ভূত Symbolic . আমি যাকে দৈব জগতের ক্রিয়া কলাপ বলে মনে করি, তাও অনেক সময় অদ্ভুত প্রতীকের ছবিতে আত্মপ্রকাশ করে । তবে এই হেঁয়ালী অত্যন্ত বেশি রকমের কাজ করে প্রতীকময় ভাষাতে, যেই কথা বর্তমান অধ্যায়ের পরেই আসছি । 

বর্তমান অধ্যায়ের বক্তব্য হলো জীবাত্মার স্বচ্ছ সত্ত্বায় জাগতিক সমান্তরাল স্বচ্ছতায় প্রতিফলিত চিত্র দর্শন-যে স্বচ্ছতা স্বত্ত্বাকে তিব্বতি লামারা 'স্বচ্ছ পাথর' বলে বর্ণনা করেছেন । দর্শন ক্ষমতাকে তাঁরা ভগবৎ ক্ষমতাপ্রসূত বলে মনে করেন এবং একে গুহ্য তত্ত্ব ESOTERIC KNOWLEDGE হিসাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অগোচরে রাখতে চান । কিন্তু বর্তমান আমি মিঠু একে অধিমনোবিজ্ঞানের একটি সীমাক্ষেত্র মনে করি । অধিবিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের উপরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে আমার তা হলো---- Telepathy (কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মাধ্যম ছাড়াই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে চিন্তা তরঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়া )। Clairvoyance (মানুষের কাছে অজ্ঞাত ঘটনা সম্পর্কে অতিন্দ্রিয় জ্ঞান অর্জন এহেতু ) । Psychometry (কোন অদৃশ্য ব্যক্তি বিষয়ে তার ব্যবহৃত সামগ্রী দেখে তার সম্পর্কে কথা বলা )। Pre-Recognition (এতে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা যায় ) । 

Psychokinesis (মানসিক শক্তি বলে বস্তু নাড়িয়ে দেওয়া ) । Teleportation ( এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়া ) । Lavitation ( ভূমি থেকে উর্ধ্বে উঠা । Psychic Healing (আত্ম শক্তি বলে রোগ নিরাময় করা )। Materialisation ( শূন্য থেকে ইচ্ছা শক্তি বলে বস্তু তৈরি করা ) । Out of the body projection (অর্থাৎ স্থূল দেহ থেকে সুক্ষ্মা স্বত্ত্বাকে বিচ্ছিন্ন করে আকাশ পথে পরিভ্রমণ করা ) । কুলকুন্ডলিনীর গতি আলোর গতির বেশি হলে সময় পিছনে চলে । ফলে পরমাত্মায় ফুটে থাকা ছবি মানুষ নেত্রে ফুটে ওঠে । এই ক্ষেত্রে কারণের আগেই ফল দেখা যায় । 

আবার কোন গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম হলে, তার প্রাণী দীর্ঘকায় হয় । অতীতের চিত্র দেখতে হলে কুণ্ডলিনীর গতিমাত্রা তীব্রতম হতে হবে, আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি বেশি হওয়া প্রয়োজন--- Tachyon moves faster than the speed of Light, So goes back in Time........... 

(চলবে)

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্ম জগতে ধ্যান দর্শন আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান । তিব্বতের লামাদের কাছে নাকি একধরণের স্বচ্ছ পাথর আছে, যে পাথরে ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ছবি ফুটে থাকতে দেখা যায় । আসলে তিব্বতীয় পাথর সম্পর্কে যে গল্প আছে তা যথার্থ পাথর নয় অন্য কিছু, সে গোপন রহস্য ভেদ হবার নয় । 

গুহ্যবিদ্যার গোপন কথা সাধকরা কখনই প্রকাশ করতে চান না, তাই হয়তো পাথরের গল্প করেছেন । আসলে এই স্বচ্ছ পাথর হল আত্মার স্বচ্ছ দর্পন । পূর্বেই বলেছি যে, ব্যক্তি ও বস্তুর বা বিশ্বজগতের গঠনপ্রণালী একই ধরণের । বস্তুর যদি স্থূল বন্ধনের এক প্যাঁচ খোলে তো বিশ্বেরও স্থূলবন্ধনের এক প্যাঁচ খুলে যায় । তখন দুই স্বচ্ছতার পর্যায়ের মধ্যে এক সমান্তরাল ভাব সৃষ্টি হয় অর্থাৎ আত্মার সূক্ষ্ম অবস্থাও বস্তুর সূক্ষ্ম অবস্থা একটা স্বচ্ছ ব্যবধানের এপার ও ওপারে থাকে । যতক্ষণ ব্যবধান ততক্ষণ ব্যক্তির অভ্যন্তরস্থ স্বচ্ছতার নাম আত্মন এবং বিশ্বের অভ্যন্তরের স্বচ্ছতার নাম ব্রহ্মণ । শেষ ব্যবধান ঘুচে গিয়ে দুইটি যখন একাকার হয়ে যায় তখন হয় পরমাত্মন । 

ফলে বিশ্ব আত্মায় তরঙ্গ নিক্ষিপ্ত কোন ছবি জীবাত্মায় তার প্রতিসরণ ঘটায় , ঘটনাটাটি এইরকমঃ ধরা যাক বহু পূর্বে পৃথিবীতে কোন এক যুদ্ধ হয়েছে, যেমন মহাভরতের যুদ্ধ । সেই যুদ্ধের তরঙ্গজনিত প্রতিফলন বিশ্ব আত্মার স্বচ্ছ অবস্থায় ফটোর নেগেটিভে ধরা ছবির মত হয়ে আছে । বিশ্ব আত্মার যে স্তরে এই ছবি ফুটে আছে জীবাত্মার সে স্তর উন্মোচিত হলে -- এবং বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার অনুরূপ স্তরের আকস্মাৎ সমান্তরাল ভাব হলে অর্থাৎ correspondence of wave length হলে জীবাত্মায় সেই বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির প্রতিসরণ ঘটবে । এই বিশ্ব আত্মার বিশেষ কোন তরঙ্গ পর্যায়ের ছবির সঙ্গে জীবাত্মার আন্তর-সচ্ছতার নির্দিষ্ট স্তর সমান্তরাল হলেই এমন হয় । 

(চলবে)

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন পর্বঃ ৩২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্মজগতে ধ্যান দর্শন-- 

দিব্যজগতে প্রবেশ করে দৈবী-ভাষা অধিগত হবার আগে আত্মার স্বচ্ছ দর্পনে জীবন্ত কতকগুলি চিত্র দেখা যায়, দৈবী ভাষার পূর্বস্তর হিসেবে একে বলা যায় দৈবীদর্শন । দৈবী-ভাষাতে জীব ও জগতের ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বোঝা যায় । দৈবী দর্শনে এই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্র দর্শন হয় । 

ধ্যান যোগের মাধ্যমে এই চিত্র দর্শন পর্যায় পার হলে তবেই দৈবী সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৈবী ভাষার মাহাত্ম্য বোঝা যায়। এই দৈবী দর্শন কিভাবে হয় বর্তমান অধ্যায়ে সে কথাই আগে বর্ণনা করে নিচ্ছি। দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণকালে পূর্বেই বলেছি যে, শক্তি বায়ুতাড়িত হয়ে মেরুদণ্ডের রন্ধপথে উর্ধদিকে যত উঠতে থাকে ততই মস্তিষ্ক স্নায়ুতে শক্তি তরঙ্গের তারতম্য হিসেবে মানুষের নিজের অভ্যন্তরেই নানা স্তরে নানা পর্যায়ের স্বচ্ছতা অনুভুত হয়। এই স্বচ্ছতায় তরঙ্গের সমভাব হেতু অনুরূপ তরঙ্গের নানা ছবি ফুটে উঠে। Wave length reflects the picture of different things which correspond to the created wave length in the brain. যে স্বচ্ছতার মধ্যে সমতরঙ্গের এইসব ছবি প্রতিফলিত হয় সেই সচ্ছতাকেই "আত্মা" রূপে বলা হয়েছে। 

তাই আত্মার স্বরূপ কি? এ ধরনের কথা বোঝাতে গিয়ে আমি "মিঠু" বলি --- আত্মা হল উজ্জ্বল, আত্মা স্বচ্ছ। এই উজ্জ্বল বা স্বচ্ছ আত্মার আরেকটি বিশেষ গুণ আছে যাকে বলা হয়েছে Viscous ও Glue অর্থাৎ একধরণের আঠা জাতীয় জিনিষ, তাই এই রহস্যগত কথা এই পর্যন্ত থাক। বস্তুত স্থূল জগতের অভ্যন্তরস্থ এই উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ আত্মার অবস্থা অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মত। স্থূল জগতে যখন যে জিনিষের মধ্য থেকে তরঙ্গ Wave Length ওঠে সেই জিনিষের অনুপাতে Proportionate to the body of the object - এই নেগেটিভ সদৃশ্য আত্মায় তাঁর প্রতিফলন পড়ে স্থায়ী হয়ে যায় । 

সম্প্রসারণশীল জগত স্বভাবগুণে সংকুচিত হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হলে তবেই এই তরঙ্গের আনুপাতিক চিত্রগুলি মুছে যায়, নইলে আত্মার স্বচ্ছ অবস্থার নানা স্তরে ছবির মত তা ফুটে থাকে। অতীতে বস্তু জগতের যেসব ঘটনা ঘটে গিয়ে বস্তুর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে, তারও নানা পর্যায়ের তরঙ্গের আনুপাতিক ছবি কিন্তু সেই আত্মার দর্পনে ফুটে আছে । বর্তমানে যা ঘটেছে তাও তরঙ্গ অনুপাতে সেই স্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে নিজেকে অনবরত বিচ্যুরিত করে দিচ্ছে। তাৎক্ষনিক এই তরঙ্গানুপাতিক ছবির বাইরেও ব্যক্তির প্রাণীজগতের নানা মানুষিক তরঙ্গ দেহানুপাতিক তরঙ্গ বিচ্যুরিত করে দিয়ে পরমাত্মায় কর্মফল হিসেবে তাঁর ছবি এঁকে রাখছে। আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান।

 (চলবে)

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্মজগতে ধ্যান দর্শন--

দিব্যজগতে প্রবেশ করে দৈবী-ভাষা অধিগত হবার আগে আত্মার স্বচ্ছ দর্পনে জীবন্ত কতকগুলি চিত্র দেখা যায়, দৈবী ভাষার পূর্বস্তর হিসেবে একে বলা যায় দৈবীদর্শন । দৈবী-ভাষাতে জীব ও জগতের ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বোঝা যায় । দৈবী দর্শনে এই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্র দর্শন হয় । ধ্যান যোগের মাধ্যমে এই চিত্র দর্শন পর্যায় পার হলে তবেই দৈবী সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৈবী ভাষার মাহাত্ম্য বোঝা যায় । এই দৈবী দর্শন কিভাবে হয় বর্তমান অধ্যায়ে সে কথাই আগে বর্ণনা করে নিচ্ছি । 

দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণকালে পূর্বেই বলেছি যে, শক্তি বায়ুতাড়িত হয়ে মেরুদণ্ডের রন্ধপথে উর্ধদিকে যত উঠতে থাকে ততই মস্তিষ্ক স্নায়ুতে শক্তি তরঙ্গের তারতম্য হিসেবে মানুষের নিজের অভ্যন্তরেই নানা স্তরে নানা পর্যায়ের স্বচ্ছতা অনুভুত হয় । এই স্বচ্ছতায় তরঙ্গের সমভাব হেতু অনুরূপ তরঙ্গের নানা ছবি ফুটে উঠে । Wave length reflects the picture of different things which correspond to the created wave length in the brain. যে স্বচ্ছতার মধ্যে সমতরঙ্গের এইসব ছবি প্রতিফলিত হয় সেই সচ্ছতাকেই "আত্মা" রূপে বলা হয়েছে । তাই আত্মার সরূপ কি? এ ধরনের কথা বোঝাতে গিয়ে আমি "মিঠু" বলি --- আত্মা হল উজ্জ্বল, আত্মা স্বচ্ছ । এই উজ্জ্বল বা স্বচ্ছ আত্মার আরেকটি বিশেষ গুণ আছে যাকে বলা হয়েছে Viscous ও Glue অর্থাৎ একধরণের আঠা জাতীয় জিনিষ, তাই এই রহস্যগত কথা এই পর্যন্ত থাক । 

বস্তুত স্থূল জগতের অভ্যন্তরস্থ এই উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ আত্মার অবস্থা অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মত । স্থূল জগতে যখন যে জিনিষের মধ্য থেকে তরঙ্গ Wave Length ওঠে সেই জিনিষের অনুপাতে Proportionate to the body of the object - এই নেগেটিভ সদৃশ্য আত্মায় তাঁর প্রতিফলন পড়ে স্থায়ী হয়ে যায় । 

সম্প্রসারণশীল জগত স্বভাবগুণে সংকুচিত হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হলে তবেই এই তরঙ্গের আনুপাতিক চিত্রগুলি মুছে যায়, নইলে আত্মার স্বচ্ছ অবস্থার নানা স্তরে ছবির মত তা ফুটে থাকে । অতীতে বস্তু জগতের যেসব ঘটনা ঘটে গিয়ে বস্তুর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে, তারও নানা পর্যায়ের তরঙ্গের আনুপাতিক ছবি কিন্তু সেই আত্মার দর্পনে ফুটে আছে । বর্তমানে যা ঘটেছে তাও তরঙ্গ অনুপাতে সেই স্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে নিজেকে অনবরত বিচ্যুরিত করে দিচ্ছে । তাৎক্ষনিক এই তরঙ্গানুপাতিক ছবির বাইরেও ব্যক্তির প্রাণীজগতের নানা মানুষিক তরঙ্গ দেহানুপাতিক তরঙ্গ বিচ্যুরিত করে দিয়ে পরমাত্মায় কর্মফল হিসেবে তাঁর ছবি এঁকে রাখছে । আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান। 

 (চলবে)

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩১

(পুর্ব প্রকাশের পহ হতে) 
তবে এইসব প্রতীকী ভাষার ব্যাখ্যা স্বরূপ বুঝতে হলে দেহতত্ত্ববোধ আগে থাকা প্রয়োজন । 

ব্রহ্মবিদ্যার অধিকারীগণ নিজেরা আত্মচেতনায় আধ্যাত্মজগতের আঙিনায় প্রবেশ করে যথার্থস্বরুপ চৈতন্যসত্ত্বায় উপলব্ধি করতে পারেন অনায়াসে এই প্রতীকী ভাষার, এই কারনে আধ্যাত্মজগতে প্রবেশের পর মনে হবে সব রহস্যময় । বস্তুগ্রাহ্য ভাষা দিয়ে তার যথার্থ রূপরেখা অঙ্কন করা যায় না । সেইজন্য প্রতীকময় ভাষায় এবং রূপক গল্পে এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে । যেমনঃ অগস্ত্যের সমুদ্র শোষণ, একটা ছোটখাট মানুষ সমুদ্র শোষণ করে ফেলবেন তা সম্ভব নয় । 

আসলে এ হল জীবাত্মার সীমিত বন্ধন হারিয়ে অনন্ত হওয়া, নিজের মধ্যে অনন্তকে ধারণ করা--- অর্থাৎ নিজেই অনন্ত হওয়া--- যে অনন্ত আবারনের সীমার মধ্যে তার নিজের অভ্যন্তরেই রয়েছে, যে কথা মনে রেখে আধ্যাত্মিক কবি নজরুল লিখেছিলেন '' ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর । '' পিঁয়াজের খোলা ছাড়িয়ে নিলে ভেতরকার শূন্য যেমন বাইরের শূন্যের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, সেইরকম অর্থাৎ পিঁয়াজের ভেতরকার শূন্যতা অনন্ত শূন্যতাকে গ্রাস করে অর্থাৎ আত্মস্থ করে, অর্থাৎ নিজের অসীমত্ব উপলব্ধি করে । নিজস্ব কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলে আধাত্ম প্রতীক ব্যাঞ্জনার কোন স্বরূপ ধরা যায়না এবং কাউকে বোঝানও সম্ভব নয় । 

উপরোক্ত যে মরমিয়া গানের কথা আমি '' মিঠু " বলেছি সে সবই আধ্যাত্মজগত থেকে আহরিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রতীকময় রুপ, কোন অধমের সেই আধ্যাত্মজগতের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলে এইসব প্রতীকী ব্যাঞ্জনার স্বরূপ প্রকাশ করা যায় না । বাক্যার্থে কথাগুলির অর্থ এক, ভাবার্থে আর এক । 

তাইতো মরমিয়া শব্দের অর্থ হল-- " To close অর্থাৎ to close outer senses ." বহিরিন্দ্রিয় বন্ধ করলে মানুষ মরম বা অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে কুন্ডুলিনীর শক্তি বৃদ্ধি হেতু অনন্ত আকাশের রহস্য দেখতে পায় । মরমে এই দর্শন হয় বলে এরাঁ মরমিয়া নামে পরিচিত। Greek শব্দ Myem = to close থেকে মরমিয়া শব্দের ইংরেজি হল Mystic. আর অধি Para beyond আত্ম (জীবাত্মা) থেকে অধি+আত্ম = আধ্যাত্ম শব্দ । ধর্ম আর আধ্যাত্ম শব্দ এক নয় । ইংরেজি Religion শব্দের অর্থও ধর্ম নয়, আধ্যাত্মতা । কারণ Religion শব্দের উৎস হল ল্যাটিন শব্দ Religare অর্থাৎ Tie back. অর্থাৎ উৎসের সঙ্গে গীটছড়া বাঁধা । 

চলবে.........

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩০

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

সেই প্রতীকের অর্থ সূক্ষ্মভাবে ধরা গেলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত করা যায়। ভুল হলে উল্টো ফল হয়। 

যেমনঃ প্রাচীনকালে পারস্য যখন এথেন্স আক্রমণ করে তখন এই আক্রমণের পরিণতি কি হতে পারে তা জানার জন্য এথেনীয়রা ডেলফি নামক একজন সাধকের কাছে দৈবী বাণী শোনার জন্য গিয়েছিল । সেখানে দৈবী বাণী হয়েছিল এরকম যেঃ "Athens would be destroyed except the Wooden Wall" অর্থাৎ কাঠের দেওয়াল ছাড়া বাকী এথেন্স ধ্বংস হবে । এথেন্স শহরের চতুর্দিকে সত্যি সত্যি কাঠের দেওয়াল ছিলও । ডেলফির ভবিষ্যৎ বাণীতে যাদের অগাধ বিশ্বাস ছিল তারা দৈব বাণী বাক্যার্থ ধরে নিয়ে এথেন্সেই থেকে গেলেন এবং কাঠের দেওয়ালের পিছনে আশ্রয় নিলেন । 

এথেন্সের তখন রাষ্ট্রনেতা থেমিস্টোক্লিস। তিনি আদেশ দিলেন, "সবাই নৌকাতে গিয়ে আশ্রয় নাও!" যারা দৈবী বাণী অপেক্ষা রাষ্ট্র বাণীতে বেশি আস্থাশীল ছিলেন, তারা নৌকাতে উঠলেন। ইতোমধ্যে পারস্য বাহিনী এথেন্স আক্রমণ করলো। কাঠের দেওয়াল তাদের ঠেকাতে পারলো না। এথেন্স ধ্বংস হলো। যারা কাঠের দেওয়ালের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা মারা গেলেন। কিন্তু এথেন্সের নৌকা বাহিনীর কাছে পারস্যের রণবহর ধ্বংস হয়ে গেল। তারপর পারস্য ফিরে যেতে বাধ্য হলো। প্রশ্ন হলঃ তাহলে কি ডেলফির দৈব বাণী মিথ্যা হলো ? বাক্যার্থে তা মিথ্যা হলো ঠিকই, কিন্তু ভাবার্থে সত্য হলো। কাঠের তৈরি জাহাজই এথেন্সের স্বাধীনতা রক্ষা করলো। যা রক্ষা করে তা দেওয়াল তুল্য। সুতরাং ভাবার্থে কাঠের রণবহরই ছিল দেওয়ালতুল্য। দৈব ভাষা এমনই প্রতীকময় (Symbolic) ও ইঙ্গিতবহ (Suggestive) হয় । কারণ অতিন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি তথাকথিত ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। 

ডেলফির দৈব বাণীর মতো সাধকের অন্তরমথিত সেই প্রতীকময় ভাষা যখন নিঃসৃত হয়, তথাকথিত পণ্ডিত ব্যক্তিরা বাক্যার্থ দিয়ে তখন তার যথার্থ অর্থ ধরতে পারেন না। কাঠের দেওয়ালকে যারা কাঠের দেওয়াল বলেই ভাবেন তারা এথেন্সের মূর্খ নাগরিকদের মতই ভুল করেন। ব্যাখার নামে তারা নানা আবোল তাবোল বকতে থাকেন। 

মরমিয়া সাধক, যারা নিজের অন্তর্জগতে ডুব দেয় বা দিয়েছেন তাঁরা এরকম অনেক রহস্যময় অনুভূতিকেই প্রতীকী ভাষার রূপ দিয়েছেন--- যেমন রাম প্রসাদ সেন একজন প্রথিতযশা শাক্ত পণ্ডিতকে রাম প্রসাদ সেনের এই গানের অর্থ জিজ্ঞাস করেছিলেনঃ "এবার কালী তোমায় খাবো"। তিনিও এর ব্যাখা দিতে পারেন নি। একজন বৈষ্ণব পণ্ডিতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মীরার "জ্যোতি মে জ্যোতি মিলাও" এর অর্থ কি ?  তিনিও কিছু বলতে পারেন নি । তবে এইসব প্রতীকী ভাষার ব্যাখ্যা স্বরূপ বুঝতে হলে দেহতত্ত্ববোধ আগে থাকা প্রয়োজন। 

(চলবে)

শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৯

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

কবি তাই ঘটনা লক্ষ্য করে লিখেছেন "শূন্যে শুন্য মিলাইলো ।" 

মানুষের এই দেহটাও একটা পেঁয়াজের খোলসের মতো। মানবদেহের বাসনা-কামনার তীব্রতার হের ফের হেতু খোলগুলো পুরু এবং সূক্ষ্ম। যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায়, ততো বাসনার স্তর সূক্ষ্ম। যত বহির্দেশাভিমুখী, ততই তা স্থূল। পেঁয়াজের একেকটা স্তর খুললে স্তরে স্তরে রঙ পাল্টায়। মানুষ যত তার ধ্যান জগতের ভেতরে ঢুকতে পারে ততই তার স্থূল আবরণ সরে গিয়ে সূক্ষ্ম আবরণ দেখা দেয়। পেঁয়াজের একেক আবরণের যেমন বর্ণভেদ আছে। তেমনই মানুষ যতই তার ভেতরে প্রবেশ করে ততই নিজের ভেতরে বর্ণের তারতম্য দেখতে পায়। 

এমনটি হওয়ার কারণ মানুষের দৈহিক গঠন ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে মূলাধার পর্যন্ত এমনভাবে স্তরে স্তরে সাজানো যার সঙ্গে BLACK HOLE থেকে নির্গত শক্তির ধাপে ধাপে প্রান্তমুখী হয়ে বিশ্ব সৃষ্টি করার মিল রয়েছে। বিশ্ব সৃষ্টির আদিতে উত্তাপ ছিল তীব্রতম। সেখানে সেজন্য যেমন রয়েছে তীব্র জ্যোতি তেমন ঘন নীল রঙ। যতই নীচে নেমেছে ততই রঙের তীব্রতা কমে গেছে। তাই বলা হয়েছে "The Hotter a Star bluer it is and the more luminous it is. In a Blue Galaxy, light comes essentially from hot star---whereas in a Red Galaxy,light from cold stars. 

তাছাড়া Galaxy গুলি মানুষের দেহেরই মতো অসংখ্য cell দ্বারা গঠিত। Just as a human being a collection of hundred trillion cells--- is typically in a steady state between synthesis and decay and more than the sum of it's parts, so also in a Galaxy. সেইজন্য মানুষ নিজের ভেতরেই নানা রঙের খেলা দেখে আশ্চর্য্য হয় ধ্যান জগতে। এই রহস্যময় অন্তর্জগত দেখতে পেয়েই অনেক ধ্যানীযোগীগণ বলে উঠেছেন, "মানুষের দেহ একটা 'রঙের বাক্স' "। সেই রঙ বেরঙের বিচিত্র জগতে যে মানুষ প্রবেশ করে অনেক রহস্যময় জিনিস দেখে, সে অবাক হয়ে যায়। তার রহস্যময় অনুভূতিকে তখন সে নানা প্রতীকময় ভাষাতে প্রকাশ করে। কারণ পরিচিত বাচনভঙ্গি দিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার সে যথার্থ ব্যাখা করতে পারে না। তাছাড়া অদ্ভুত প্রতীকের মাধ্যমেও দিব্য জগত তাঁকে বিভিন্ন ধরণের ইঙ্গিত দেয়। সেই প্রতীকের অর্থ সূক্ষ্মভাবে ধরা গেলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত করা যায়। ভুল হলে উল্টো ফল হয়। 

(চলবে)

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৮

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)


বীজের মধ্যে যেমন মহীরূহ থাকে, শূন্যের মধ্যেও তেমনই জগত থেকে যায় ।



বীজের মধ্যস্থিত অদৃশ্য মহীরুহ যেমন তার গুণস্বরূপ, জগৎও তেমনই পরব্রহ্মের গুণস্বরূপ । ফুটে উঠলে দেখা যায়, না ফুটে উঠলে সুপ্ত থাকে । যে মৌল বস্তুপুঞ্চ স্থুল জগৎ তৈরি করেছে, মাত্রার দিক থেকে তা এত ক্ষুদ্র যে, প্রায় অদৃশ্য থাকে বললেই চলে । বিজ্ঞানে একে বলে Seemingly invisible matter. তবে তার অস্তিত্ব যে থাকে না তা নয় । আর জগৎ যদি মিথ্যে হয় তাহলে শীবশঙ্করের কথাও মিথ্যা। এই কারনে যে, জগতের অংশ হিসেবে শীবশঙ্করও মিথ্যা । 

মিথ্যা থেকে উদ্ভুত বাক্যও মিথ্যা, বরং শীবশঙ্করের কথাটাকে এইভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে, যেমন "ব্রহ্ম নিত্য জগৎ অনিত্য," নিত্য হল VOID. VOID স্থিত শক্তি কখনও ফুটে উঠে আবার কখনও লয় প্রাপ্ত হয় । অর্থাৎ VOID এ সুপ্ত (LATENT) অবস্থা প্রাপ্ত হয় । আবার ফুটে উঠে জগৎ গতিশীল রূপ ধারণ করে । VOID অর্থাৎ অনন্তের বুকে সুপ্ত শক্তির এই যে নিত্য লীলা এর স্বরূপ যোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেন না । আর VOID বা VACCUMও যে অনুভূতিহীন তা নয়, কারন দেখা যায় শূন্যে কোন বৃহৎ বস্তু দেখা দিলে তার পাশে শুন্যও বেঁকে যায় । আধ্যাত্মিক মানব নজরুল ইসলামের লেখাতেই বোধ হয় একটি গান শোনা যায়---"ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেরব, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর ।" 

ধ্যান সাধন মানুষকে নিজের অন্তরের দিকে তাকাতে শিখিয়েছে । যখনই সে নিজের অন্তরের দিকে তাকাবার অবকাশ পেয়েছে, তখনই অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছে যে, দেহটা ক্ষুদ্রাকৃতি হলেও আসলে ক্ষুদ্র নয় । সীমার মধ্যে অসীম লুকিয়ে রয়েছে । এটা ঘটে মনঃসংযোগের ফলে, মানুষের কুণ্ডলিনী শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবার জন্য । ত্রিমাত্রিক জীবের শক্তি মাত্রা চতুর্মাত্রিক হলেই বিজ্ঞানের ভাষায় It could also turn us inside out. আর এই কারনেই আমরা নিজেদের মধ্যে অনন্ত বিশ্ব প্রত্যক্ষ করি । সীমার মধ্যে অসীমের এই আত্মগোপনের ব্যাপারটি আমরা অত্যন্ত সহজে বুঝে থাকি একটা পিঁয়াজকে চোখের উপর রেখে । 

একটা পিঁয়াজকে যদি শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা যায় এবং তারপর একে একে তার খোলস বা আবরণ খুলে ফেলা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, শেষ আবরণটুকু সরে গেলে ভেতরে কিছুই নেই । রয়েছে সব VOID. তখন বাইরেও VOID. দুই VOID এ মিলে গিয়ে আবারনের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যায় । কবি তাই ঘটনা লক্ষ্য করে লিখেছেন "শূন্যে শুন্য মিলাইলো ।" 


(চলবে)

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সে যাই হোক, কথাটি হচ্ছে এই যে একদল মানুষ ব্যাখার অতীত জীবনের বহু ঘটনাকে বিধাতা পুরুষের ললাট লিখন বলে ধরে নেন এবং সেখানে যা লিখিত আছে তা ঘটবেই এবং তাকে অতিক্রম করা যাবে না--------- এরূপ বিশ্বাস করেন । কিন্তু একজন খেয়ালী বিধাতা পুরুষ কপালে আপন মর্জিতে যা খুশি তাই লিখে দেবেন এবং মানুষ জীবকে তাই ভোগ করতে হবে এমন কোন কাহিনীতে বর্তমান আমি মিঠু বিন্দুমাত্র আস্থাতে নেই । আমি বিশ্বাস করি, মানুষ পৃথিবীতে নিজস্ব কর্মফলই ভোগ করে তা ইহজন্মের হোক, গতজন্মের হোক । তার সুখ দুঃখের স্রষ্টা সে নিজেই, অন্য কেউ নয় । একটা মানুষের কর্মফলই গুপ্তচিত্র হিসাবে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার খাতায় তার বর্তমান,ভবিষ্যৎ কে এঁকে রেখে দেয় । সেই ভবিষ্যৎই মানুষের কর্মজীবনে নির্দিষ্ট সময়ে ঘটনাগুলি ঘটে যায় । 

তবে বিধাতা পুরুষের অস্তিত্বে আমি মিঠু বিশ্বাস করি এবং দেব দেবীর অস্তিত্বেরও । কিন্তু আল্লাহ্ বা ভগবান এর স্বতন্ত্র দেহ ধারী কোন অস্তিত্বরূপ নেই, উনি প্রকৃতপক্ষে নিরাকার । এই নিরাকার রূপ ধরে কোন মহাসাধক বা মহাপুরুষের ভিতর জাগ্রত হন । তখন উনি আকার সাকার রূপ নেন । 

হিন্দুমতে নির্গুণ (VOID) কে ভগবান বলেন কারণ ভগবান ভগের অধিকারী, ভগ হলো-- যোনী বা শক্তি (KINETIC ENERGY). এই ভগ শূন্যতার মধ্যে নিস্ক্রিয় থাকে । তখন অবিচলিত নিরবতা । আর এই অবিচল নিরবতাকেই পরব্রহ্ম বা পরমাত্মন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । শক্তি যখন তার নিজস্ব চরিত্র অনুযায়ী নড়ে ওঠে, তখনই জগত বা SPHERICAL UNIVERSE কিছুটা OVAL ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে, যাকে আরেক নামে VACCUM FLUCTUATION IN QUANTUM FIELD বলে । দেশে (SPACE) এ জগত রহস্যের যে বিচিত্র লীলা খেলা চলছে কখনও তাতে একমেবাদ্বিতীয়ম অবস্থা হলেও আবার দ্বৈতের আবির্ভাব হয় । অবস্থাটা গভীর ভাবে বিচার করতে গেলে শিব শঙ্কের পুরুশ-প্রকৃতি তত্ত্ব দাঁড়াতে চায় বটে কিন্তু চিরকালীন একটা দ্বৈত সত্ত্বা স্বীকৃত হয় না । এক্ষেত্রে শিব শঙ্করের অদ্বৈতবাদ সত্য বটে ।

কিন্তু তাই বলে "ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা" এ কথা গ্রাহ্য নয় । ব্রহ্ম থেকে উদ্ভুত যে জগত তা মায়ারূপে প্রতিফলিত হলেও যেহেতু তা সত্য স্থিত শক্তি থেকে উদ্ভুত, তাই তা মিথ্যা হতে পারে না । জগত অদৃশ্য হলেও শূন্য সুপ্তভাবে থাকে । শুণ্য সুপ্তভাবে থেকে আবার প্রকাশিত হয় বলে তার অস্তিত্ব যে নষ্ট হয়ে যায় তা নয় । বীজের মধ্যে যেমন মহীরূহ থাকে, শূন্যের মধ্যেও তেমনই জগত থেকে যায় । 

( চলবে )

মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৬

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

ঠিক এমনিভাবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণও দুশ্চরিত্র ও লম্পটে পরিণত হন। যদি তাঁর নানা লীলা কাহিনীর অন্তর্নিহিত অর্থ ধরা না পড়ে। -- গোপিনীদের বস্ত্রহরণ তো পর্নোগ্রাফীর গল্প পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া ষোল হাজার পত্নীও সুসংযমী চরিত্রের পরিচায়ক নয় । কিন্তু গোপিনীদের যদি জীবাত্মা বলে ধরি এবং বস্ত্র কে যদি কামনা বাসনা রূপ পাশ বলে ধরি, তাহলে অশ্লীল গল্পটি অতি শ্লীল ও মহৎ ভাবাদর্শে উদ্বোধিত হয় । 

জীব সকল পাশ বন্ধন মুক্ত হলেই অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান মেলে। অর্থাৎ ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাক্ষাৎ পায় বা তাঁকে লাভ করে । এই শ্রীকৃষ্ণ মূলত বৈকুন্ঠাধিপতি অর্থাৎ এমন এক অবস্থায় বিরাজ করেন যেখানে কোন প্রকার কুণ্ঠা আলোড়ন নেই। UN STIRRED STATE OF VACUUM. ষোল হাজার পত্নী হলো ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ষোল হাজার গুণের প্রতীক । এই গুণ হলো COUNTLESS DIMENSIONS. আমরা মানুষ মাত্র একটি সময় ও তিনটি মাত্রা দেখতে অভ্যস্ত । এতে SPACE TIME কে Flat দেখায়। যেন কমলা লেবুর খোসা রূপ আবরণের মত। 

কাছ থেকে দেখলে সবই বাঁকা ও ভাঁজ করা দেখায় । দূর থেকে দেখলে সুডৌল, খুব ছোট হলে এটি দশ মাত্রার এবং বেশি রকম বাঁকানো । কিন্তু বৃহত্তর বৃত্তে এর বক্রত্ব অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা যাবে না। তবে এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন জাগে যে - কিছু কিছু মাত্রা বেঁকে গোল হয়ে গেলেও সব যায় না কেন ? এর একটি সম্ভাব্য উত্তর এই যে, দেশের দুটি মাত্রা আমাদের মত জটিল জীবের উদ্ভবের পক্ষে সহায়ক নয় । এক্ষেত্রে তার খাদ্যাখাদ্য, রক্ত চলাচল ব্যাখা করা অসম্ভব । ত্রিমাত্রার বেশি হলেও আমাদের মত ত্রিমাত্রিক জীবের পক্ষে তা ব্যাখা করা দুরূহ। তিন মাত্রাধিক দুটি জিনিসের দূরত্বের ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ত্রিমাত্রিক জিনিসের ক্ষেত্রে তার প্রভাব অপেক্ষা কম । অনুপাত এই ধরণেরঃ তিন মাত্রার ক্ষেত্রে ১/৪, চার মাত্রায় ১/৮, পাঁচ মাত্রায় ১/১৬ চতুর্মাত্রায় এবং অনুরূপভাবে কম হ্রাসমান । এমনও অনেক জগত আছে যেখানে সব মাত্রাই ক্ষুদ্র বৃত্তাকার কিংবা চতুর্মাত্রার বেশি মাত্রিক বস্তুও FLAT. তবে এক্ষেত্রে কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর এসব বিচার করে দেখার জন্য অস্তিত্ব না থাকাই সম্ভব। সুতরাং বহু মাত্রার গুণ হিসাব করা যায় না । গুণই পুরুষের স্ত্রী হিসাবে কল্পিত । 

পুরাণ কাহিনীতে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার একটি গল্প আছে ----- তিনি নাকি মানুষের সকল কর্মের হিসাব রাখেন । মৃত্যুর পর হিসাবের খাতা খুলে মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাকে জাহান্নাম (নরক) বা জান্নাত (স্বর্গ) বাসের অনুমতি দেন । গল্পটি হাস্যকর প্রমাণিত হবেই---- যদি না তার অন্তর্নিহিত সত্যকে ধরা যায় । আসলে জড় জগতের অন্তরালে সূক্ষ্ম এক জগত আছে। যেমন নির্দিষ্ট FREQUENCY নিয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য আলোর বাইরে একটি সূক্ষ্ম আলো আছে । সেই সূক্ষ্ম জগত সূক্ষ্ম আলোর মতই আমাদের কাছ থেকে গুপ্ত থাকে । সেই সূক্ষ্ম জগতের চরিত্র অনেকটা ফটোনেগেটিভের মত । 

মানুষের কর্মজনিত তরঙ্গ বা Vibration কর্মকারীর সম আকৃতির তরঙ্গ সৃষ্টি করে ফটোনেগেটিভের উপর দাগ ফেলার মত ব্যক্তি মানুষের সূক্ষ্ম ছাপ ফেলে যায়। তাতে কর্মজনিত কম্পনের ফলস্বরূপ তার সূক্ষ্ম চিত্র ফুটে ওঠে । এই চিত্রটি সাধারণ মানুষের স্থূল দৃষ্টির অগোচরে গুপ্ত ভাবে থাকে বলেই একে 'চিত্রগুপ্ত' বলা হয়েছে, অর্থাৎ 'যে চিত্র গুপ্ত' । সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী সাধক সেই সূক্ষ্ম চিত্র দেখতে পেয়ে প্রতিটি মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন । এই সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথাই চিত্র গুপ্তের কাহিনী আকারে পুরাণে স্থান লাভ করে আছে । সেই পুরাণ পড়ে কেউ যদি চিত্র গুপ্তের হাত পা ওয়ালা কোন জীব বলে ধরে নেন। যিনি মুদিখানার হিসাব রক্ষকের মত হিসাব লিখে চলেছেন, তাহলে এর চাইতে ভ্রান্ত ধারণা আর কিছুই হতে পারে না । 

এ ধরণের কাহিনীকে যিনি সত্য বলে গ্রহণ করেন তিনি অজ্ঞ এবং বর্বর ছাড়া আর কি হতে পারেন ? যেমন ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিঃ " এই... খারাপ কাজ করিস না ! তোর দুই কাঁধে দুই ফেরেস্তা আছে। যাদের নাম মুনকির আর নকির । ওরা তোর কর্মের হিসাব লিখছে । সাবধান !" এইভাবেই পুরাণ, কোরআন, বেদ, গীতা, বাইবেল বিভিন্ন গ্রন্থের রূপকের ব্যাখ্যাগুলি বিকৃতরূপে প্রতিফলিত হয়ে আছে এইসব ভাষ্যে । সুতরাং বিধাতার ললাট লিখনও সেই ধরণেরই একটি কাহিনী, সন্দেহ নাই।

চলবে.........

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৫

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

যেমনঃ পরশুরামের কথাই ধরা যাক । পরশুরাম দশ অবতারের এক অবতার । অবতার বলতে আমরা বুঝি - দেহ ধারন করে জগতে ঈশ্বরের আবির্ভাব । জৈবিক দেহ ধারণ করলেও প্রাণীকূলের কাছে তিনি নমস্য । এই নমস্য হবার জন্য এমন কতগুলি গুণ তাঁর মধ্যে প্রকটিত হয়, যেগুলি শ্রদ্ধাযোগ্য । যেমনঃ পিতা মাতাকে শ্রদ্ধা, সত্য ভাষণ, অহিংসা মনোভাব, জীবে প্রেম ইত্যাদি । কিন্তু পরশুরামের কাহিনী যদি বিচার করি, তাহলে তাঁর মধ্যে এমন কোন শ্রদ্ধা করার মত গুণই নেই । তিনি মাতৃ হত্যা করেছিলেন। হিংসার বশবর্তী হয়ে একুশবার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রীয় করেছিলেন । 

একটা মানুষ যে গুণে দৈব সত্ত্বা প্রাপ্ত হয়, সে গুণও তাঁর ছিল না। যেমনঃ বশিষ্ট । বশিষ্ট ঠিক পরশুরামের বিপরীত মেরুর মানুষ । শত পুত্র নিহত হলেও তিনি বিশ্ব মিত্রের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেননি । এইজন্য তিনি ব্রাক্ষণ শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ আত্মবশ । বশিষ্ট শব্দের অর্থ হল আত্মবশ। সেই বশিষ্টের উদাহরণের পাশে হিংসায় উন্মুক্ত পরশুরাম কি করে অবতার অর্থাৎ ঈশ্বরের গুণাবলী নিয়ে অবতার হিসাবে চিহ্নিত হতে পারেন ? 

আসলে এই গল্পটির একটি রূপকার্থ আছে । রূপকার্থ এইরকম --------- মাতা মানে 'Energy জগত' । শুণ্যতার বুকে সুপ্ত এই Energy বা শক্তি স্বভাব গুণে ফুটে উঠে গোলাকার জগতের রূপ নেয়। এই জগতকে হনন করে অর্থাৎ জয় করে অর্থাৎ নিষ্ক্রিয়য় করে সেই শূন্যতে যিনি ধ্যান মার্গে ফিরে যেতে পারেন, তিনিই ঈশ্বররূপে গ্রাহ্য হন । পরশুরাম এই জগতকে জয় করেন নির্গুণ শুণ্যতায় তিনি স্থিত হতে পারতেন । সুতরাং তিনি ছিলেন ঈশ্বরতূল্য। জগত অর্থাৎ শক্তিজয়ী হিসাবে তিনি মাতৃঘাতী । কারণ শক্তিকে স্ত্রীলিঙ্গ বা মাতারূপে কল্পনা করা হয় ।

ক্ষত্রিয় হলেন তিনি যার মধ্য সত্বঃ রজঃ ও তম গুণের মধ্য রজঃ ও তম গুণের প্রাধান্য বেশি থাকে । কোন সাধক একুশ দিন সমাধিস্থ থাকলে এই রজঃ ও তম গুণের সম্পূর্ণ নাশ হয় । তখন তিনি ঈশ্বরের নির্ভেজাল সত্বঃ গুণের অধিকারী হন । পরশুরাম একুশ দিন সমাধিস্থ থেকে জড় দুই গুণ অর্থাৎ রজঃ ও তম কে জয় করতে পেরেছিলেন বলেই একুশবার ক্ষত্রিয় নিধনকারী রূপে বর্ণিত হয়েছেন । তিনি কুঠারধারী। এ কুঠার নরহত্যার প্রয়োজনে ব্যবহৃত কুঠার নয়। এ হলো জ্ঞান কুঠার । যার দ্বারা অজ্ঞানরূপ অন্ধকারকে ছেদন করে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় । সেইজন্য অদ্যবধি শৈব সাধকরা কুঠার প্রতীক ধারণ করে থাকেন । গল্পের এই রূপকার্থ খুঁজে পেলে পরশুরামের অবতার তত্ত্বের যুক্তিযুক্তকতা প্রমাণিত হয় । কিন্তু এই রূপকার্থ ধরা না গেলে তা কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার তূল্য হয় । 

চলবে...
 

বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৪

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

একজন মানুষের নিজের সারা জীবন সে যদি সুবিচারকের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিচার করে, তাহলে জীবনে ঘটনা প্রবাহের অন্তরালে সে এমন অনেক অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করতে পারবে যা প্রকৃতপক্ষে কৌতূহলপ্রদ ও চমক সৃষ্টিকারী । অন্তত আমি মিঠু যদি আমার ফেলে আসা জীবনের দিকে তাকাই তাহলে এমনতর চিন্তা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না । 

জীবনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে বাস্তববাদীর বিচারে যার কোন ব্যাখা চলে না, দেওয়াও সম্ভব নয় । সে সব ঘটনা কেমন করে কিভাবে ঘটলো পার্থিব বিচার বিশ্লেষণে অন্তত আমি নিজে তার কোন হদিস পাই না। এমনতর ঘটনার পেছনে নিয়তির কোন হাত আছে বলে ধরে নিই বা অনেকে মনে করেন এই নিয়তি কি? ''অদৃষ্ট''। সাধারণের ধারণা সব কিছু ঘটনার পেছনেই রয়েছে বিধাতা পুরুষের হাত বা অদৃষ্ট লিখন । অর্থাৎ জন্মকালে তিনি কার জীবনে কি ঘটবে তা লিখে দেন ------ সেই লেখা অনুযায়ীই মানুষের জীবন পরিচালিত হয় । কিন্তু এসব ধারণা অবশ্যই পৌরাণিক কাহিনী প্রসূত । 

পুরান, কোরআন, বেদ, গীতা এবং বিভিন্ন গ্রন্থে অনেক সত্যকে সাধারণের পাঠযোগ্য করে তোলার জন্য গল্পের আকারে পরিবেশন করে, গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয় অবশ্য রূপকের মাধ্যমে একটি সত্যকে বর্ণনা করা । কিন্তু কালক্রমে এই রূপকার্থ লোকে বিস্মৃত হয়ে যায় । তখন রূপক নামক বহিরাবরণরূপী যে গল্প, তা-ই সত্য হয়ে দাড়ায় । রূপকার্থ বর্জিত হয়ে গল্পগুলি যখন অবিশ্বাস্য ননসেন্সে পরিণত হয় । এই জগতে আধ্যাত্ম সাহিত্যে এইভাবেই প্রতিগ্রন্থের মাধ্যমে কলঙ্ক পড়েছে । 

পুরানের ইংরেজী প্রতিশব্দ Mythology--- যার অর্থ দাঁড়ায় 'অবিশ্বাস্য' । তাই সব পুরান সত্যি সত্যিই অবিশ্বাস্য হয়েছে । সভ্যজাতি অধ্যাত্মতার ক্ষেত্রে জগতবাসীকে বর্বর বলে ভাবতে শিখেছে । এই জগতের সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও অধ্যাত্ম সত্য হারিয়ে গিয়ে কতকগুলি কুসংস্কারই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে এবং জন্ম জন্ম ধরে তারা সেই কুসংস্কার অনুসরণ করে তাকেই সত্য বলে আকড়ে ধরেছে । 

রক্ষণশীল মানসিকতার জন্য কিছুতেই এর বাইরে সে যেতে চায় না। এমনি করে একদিন মানুষে মানুষে ভেদাভেদের প্রশ্নটাও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে জগতবাসীর মনে । নইলে স্থির মস্তিষ্কে বিচার করলে পুরানের বহু গল্পই আপাত অর্থে গ্রাহ্য হতে পারে না । যেমন, পরশুরামের কথাই ধরা যাক । 

চলবে............

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এই জন্য খুব কম সাধকই দীর্ঘক্ষণ ব্রহ্ম সান্নিধ্যে বা সমাধিতে নির্বিকল্প অবস্থায় থাকতে পারেন। অধিকাংশ সাধকই ব্রহ্মা সান্নিধ্যে থাকেন ততটুক সময়ই যতক্ষণ একটি সরষের দানা মশের শিঙের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এই ব্যক্তি চেতনা অবলুপ্তি ভীতিকে লক্ষ্য করেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “ কেনরে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়, জয় অজানার জয়।” 

কিন্তু এইসব কি তিনি সচেতনভাবে লিখেছেন অথবা পূর্ব জন্মের সংস্কার বশে তন্ময় অবস্থাতে এসব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তা স্পষ্ট করে বলা খুবই দুষ্কর। কারণ সচেতনভাবে এ সম্পর্কে তার রচনা যেমন ‘ধর্ম’ নিবন্ধ সত্যি সত্যি অধ্যাত্ম জগতে বিচরণশীল ব্যাক্তিদের কাছে অত্যন্ত অপর্যাপ্ত ও দুর্বল বলে মনে হয়। ফলে ধারনা হয় যে, পূর্ব জন্মের সংস্কারই তার তন্ময় মুহূর্তে ফুটে উঠে তাকে এমন অতিন্দ্রিয় মরমিয়াভাবে রঞ্জিত করেছে। যোগীদের কাছে শোনা যায়, ষষ্ঠতলে এখনও রবীন্দ্রনাথ নিদ্রামগ্ন অবস্থায় সুক্ষ্মাদেহে বিরাজমান। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ শুন্যতাবোধের অতীত। কিন্তু শুন্যতায় সমাধিস্থ হয়ে ফিরে এলে পরম প্রশান্তি অনুভুত হয়। এজন্য কবি অজানার (বোধাতীতের) জয়গান করেছেন। বিজ্ঞান কিন্তু শুন্যতা বোধের অতীত হলেও IR RESPONSIVE নয়। কারন VACUUM এ FIELD তৈরি হলে তার চারপাশে শুন্যতায়ও আলোড়িত হয়। SPACE এ বৃহদায়তন OBJECT থাকলে তার চতুর্দিকে শুন্যতা বেকে যায়। শ্রী শ্রী চণ্ডীর এই শ্লোকটিও এই অর্থে অত্যন্ত কৌতুহল উদ্দীপক। এর বাক্যার্থ সহজ হলেও ভাবার্থ নিতান্ত কঠিন। এবং এই ভাবার্থ বোঝা না গেলে এসব পাঠ করা নিরর্থক। 

চণ্ডীতে শুম্ভ যখন পার্বতীকে রমনীরত্ন হিসাবে তাকে অথবা তার অনুজ নিশুম্ভকে পতিত্বের বরন করতে বলেছেন তখন পার্বতী বা দুর্গা তার জবাবে বলেছেনঃ “যো মাং জয়তি সংগ্রামে যো মে দর্পং ব্যপোহতি যো মে প্রতিবলো লোকে স মে ভর্তা ভবিষ্যতি।” অর্থাৎ আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, যিনি আমাকে সংগ্রামে পরাজিত করতে পারবেন, তাকেই আমি পতিত্বে বরণ করব। এ কথার বাহ্যিক অর্থ এই যে, শুম্ভ- নিশুম্ভ তাকে সংগ্রামে পরাজিত করতে পারলে তাদের একজনকে তিনি পতিত্ব বরন করবেন। এই কাহিনীকে যারা যথার্থ অর্থে বিশ্বাস করেন তারা মূর্খ। তাদের চণ্ডী পাঠের কোন মুল্য নাই। অধ্যাত্ম জগতেও অনুপ্রবেশ ঘটেনি। এই ভাবার্থই হল সত্য।

চলবে.........