পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

কবর ও মাজারঃ মনা পাগলার ভাবনা - দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মাথা খারাপের কথা শুনে মনা বিগড়ে যায়। সে বলেঃ

-মাওলানা সাব, মাতা তো আমার খারাপ অয় নাই। মাথা খারাপ হইছে তাগো, যারা কইতাছে অলি আউলিয়াদের মাজার জিয়ারত করা হারাম। তাদের মাজারে সালাম দেওন জায়েজ নাই। কোন মানত করা যাইবো না...অথচ কোরআনে বলতাছেঃ

"ওয়ালা-তাহ্সাবান্নাল্লাযীনা কূতিলূ ফী সাবীলিল্লা-হি আমওয়া-তা; বাল আহ্ইয়া উন ইন্দা রাব্বিহিম ইউরযাকূন (সূরা, আলে ইমরান আয়াত : ১৬৯)। অর্থঃ যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে; তাদেরকে মৃত মনে করো না, তারা বরং জীবিত, নিজের রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, নিজের রবের পক্ষ থেকে রিযিকও প্রাপ্ত। 

ওয়ালা-তাকুলূ লিমাই ইউক্বতালু ফী সাবীলিল্লা-হি আম্ওয়া-তা; বাল আহইয়া উওঁ ওয়ালা-কিললা -তাশ’উরূন (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৫৪) অর্থঃ যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে; তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা জানো না।

"আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্‌য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্‌রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্‌দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল  ‘আজীম। (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪)"। সর্তক হও! জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধু অলি-আউলিয়াদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হন না। যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুসংবাদ আছে, আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য।

-হারামজাদা কিয়ের লগে কি মিলাইতাছে? মনডা কয় দেই একটা কানাপট্রির মইদ্যে... 

-অহনতো দিবেনই...উচিত কতা কইলেই ফাল দেন।

-ওই তুই কি জানস..ক....খালি উল্টা-পাল্টা কইলেই মনে করছে হেয় সব পারে...পারঅইন্যার পো পারঅইন্ন্যা... 

মাওলানা সাহেবের ভেংচি কাটাটা মনার মনঃপুত হয়নি। মনা মনে মনে দুঃখিত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলোঃ

আমি যা কইছি কোরআনই তার দলিল। কোরআনে যা আছে, তাই কইছি। আপনে তো মাওলানা....আপনে কন যেই আয়াত গুলি কইছি তা-কি কোরআনের বাইরে...তাইলে আরো কই হুনেন......

এ কথা বলেই মনা বলতে শুরু করে দিয়েছে। সে বলছেঃ

ওয়ামাই ইউত্বি‘ইল্লা-হা ওয়ার রাসূলা ফাউলাইকা মা’আল্লাযীনা আন’আমাল্লা-হু আলাইহিম মিনান নবিয়্যীনা ওয়াছ্‌ছিদ্দীকিনা ওয়াশশুহাদাই ওয়াছ্ ছালিহীনা, ওয়া হাসুনা উলা-ইকা রাফীক্বা। (সূরা নিসা, আয়াত: ৬৯)

অর্থঃ সত্যবাদী, শহীদ ও সিদ্দীকগণ আল্লাহ ও রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেক। তাঁরা বেহেশতে নবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হবেন, তাঁরা কতই না সুন্দর।

হযরত আলী (আ.) ইরশাদ করেন যে, আমার অন্তরে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা এমনকি শীতল পানি অপেক্ষাও মহানবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা অধিক প্রিয় (হাদিসঃ মাদারেজুন নবুয়্যত)। 
নিশ্চ ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো মৃত্যু নেই, বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয়, ধ্বংসশীল ইহজগৎ থেকে স্থায়ী পরজগতে (আল হাদিস)। নিশ্চ য়ই আমার বন্ধুগণ আমার জুব্বার অন্তরালে অবস্থান করেন। আমি এবং আমার আউলিয়াগণ ব্যতীত তাদের পরিচিতি সম্বন্ধে কেউ অবগত নয় (আল হাদিস)। 

আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্‌য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্‌রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্‌দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল  ‘আজীম। (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতা’লা সবাইকে সর্তক করে বলেন, সর্তক হও! জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধু অলি-আউলিয়াদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হন না। যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুসংবাদ আছে, আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য।
(চলবে)

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

বাউলদের সাধনা

ধর্ম দর্শনের নামে মিথ্যা বাউলিকরণ হয়েছে বাংলায়। বৈষ্ণব ধর্ম, সহজিয়া মতবাদ, সূফী মতবাদের মিলনে বাংলার বাউল ভাবধারা।

★ বাউলরা দেহের ভিতর দেহাতীতের সন্ধান করেন নরনারীর যুগল সাধনার মাধ্যমে। দেহের সাথে দেহের মিলন না হলে মাধুর্য ভজন হয় না। মাধুর্য ভজন না হলে মানুষ হয়ে জন্মানোর স্বার্থকতা কোথায়? এই হলো বাউলদের মৌল জিজ্ঞাসা। এই জিজ্ঞাসার উত্তর তারা খোঁজেন বিকৃতরুচি কাম সাধনায়। এই কারণে বাউলরা জোড়ায় জোড়ায় থাকেন। বাউল সাধনা একাকী পুরুষের বা একাকী নারীর সাধনা নয়। একে এক ধরনের পাশ্চাত্যের 'লিভিং টুগেদারের' সাথেও তুলনা করা চলে। লালনের ধর্মমতের 'চারিচন্দ্রভেদ', 'ষড়চক্র', 'দ্বিদলপদ্ম', 'মূলধারাচক্র', 'সহস্রদলপদ্ম', 'অধর মানুষ', 'ত্রিবেণী', 'সাধনসঙ্গিণী', 'প্রেমভজা' প্রভৃতি কাম আরাধনার ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দের তাৎপর্য জানলে বা শুনলে যে কোনো মানুষের লালনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে।

★ দেখুন বাউলগন কিভাবে পুরুষ-প্রকৃতি (নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কিভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কিভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে 'সহজ মানুষ' রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। অর্থাৎ একটি মেয়ের মাসিকের সময় বাউল সাধুগন সাধনার নামে ধর্ষন করে তিন দিন কারন তারা মনে করে মাসিকের সময় স্বয়ং প্রভু উপর থেকে নারীর যৌনিতে নেমে আসে আর এই আসার সময় নারীর দেহের অধর চাঁদ নামক নীর অর্থাৎ নারীর সাথে সেক্স করতে করতে রস বের হবার পরে একটি সাদা বস্তুু আসে তারা তাকে অধর চাঁদ নামে অভিভূত করে এর পর তারা সেটা পান করে। এবং তারা মনে করে আমরা স্বয়ং প্রভু কে পেয়ে গেলাম।

★ প্রমান দেখুন কি বলে?

★ বাউল-ফকিরেরা ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ মানবদেহের প্রাণের ধারার সাথে কিভাবে মিশে থাকে সে রহস্য উৎঘাটনে সচেষ্ট ছিলেন। বীজ-রজঃ মিলিত হয়ে মানবের জন্ম। আর এই দু'য়ের উৎপত্তি সঙ্গমকালে। উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ে সহজ মানুষ উপস্থিত হয়। বাউলরা এই স্তরে পৌঁছে স্থির থেকে সাধন করতে চায়। কাম নদীর নিন্মমূখী ধারাকে ঊর্ধমূখী করে যারা সহজ মানুষ সাধন করতে পারে, তারা হলো সিদ্ধ পুরুষ। লালন তার গানে বলছেঃ-

আমি কি সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবা রাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পারি দিতে ত্রিবিণে
কত ধনীর ধারা যাচ্ছে মারা
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চিনে
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মইলাম জ্বলে
মইলাম আমি নিশি দিনে
আমি মনিহারা ফণির মতো
হারা হলাম পিতৃধনে।

★লালনের গানে বলা হয়েছে "গুরুরতি সাধন কর"। অর্থাৎ নারীর রতি বা মাসিকের সাধনা। যদিও অনেক বাউল বলে নিজ দেহের বীর্যের সাধনা মুলত নারীর।

মাসিকের প্রতি বাউলদের এই যে মনোভাব তা বুঝতে হলে আমাদের রাধাকৃষ্ণের কাহিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেতে হবে। বলা আছে, একবার কৃষ্ণ রাধা ও অন্যান্য গোপীদের সাথে অবস্থানকালে রাধার মাসিক শুরু হয়। কৃষ্ণ তা টের পেয়ে রাধাকে যেন লজ্জার মুখে পড়তে না হয় এজন্য সে মুহুর্তেই গোপীদের নিয়ে রং বা দোল খেলা শুরু করে। আর এই রং খেলা পরবর্তীকালে সনাতনী হিন্দু দাদা ও দিদিগন হলি খেলা শুরু করেছে আর আমি নাম দিয়েছি মাসিকের লাল রক্তের এর পুজা অর্চনা করন।
দোলপূর্ণিমা বাউলদের প্রধান উৎসবগুলোর একটি। মূলত বাউলরা বৈষ্ণব। বৈষ্ণবদের সাথে বাউলদের প্রধান পার্থক্য বাউলরা ইসলামের ভেক বা ছদ্মবেশ ধরে থাকে। যেমন তারা লুঙ্গি এবং পাগড়ি পরে। কিন্তু খাঁটি বৈষ্ণবরা পরে না। বাউলদের খাদ্যাভাস মূলত হিন্দু বৈষ্ণবদের দেহতত্ত্ব হতে আগত। বাউলরা পান করে মূত্র ও মল তো বটেই সাথে মাসিকের রক্ত ​​ও বীর্য। এর মূলে রয়েছে রাধা ও কৃষ্ণের পরকীয়া প্রেমের কাহিনী। আর আমরা তো জানিই পরকীয়া প্রেমে দেহ ব্যতীত কিছুই নেই। আর তাদের পরকীয়া প্রমিকার নিকট হতে মাসিকের রক্ত ​​চাই।

★ আর সেই জন্য বাউলদের নিকটে কোন নারী বেড়াতে গেলে বা কোন বাউলের নিকটে ফোন নাম্বার থাকলে সেই নারীকে বলে মা তুমি দেবি, মা তুমি জননী তুমি সাক্ষাৎ দেবি দূর্গা তুমি মা লক্ষি তুমি জগত জননী মা তোমার পায়ে ভক্তি মা তোমাকে প্রনাম মা তোমাতেই আমাদের মানব মুক্তি মা গো। বাউলদের এই চতুরতায় নারীগন ধরা খেয়ে যায়য় এবং এই ভাবে তারা বিভিন্ন কাহিনি তৈরী করে কারন মুলত তাদের উদ্দেশ্য সেই নারীর মাসিকের রক্ত ​​পান করা আর সেক্স করা।

★বাউলগন, "ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তুু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত উল মতের উদ্ভব। তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই

★ বাউলদের মধ্যে রজঃপান অর্থাৎ মেয়েদের মাসিকের রক্ত ​​পান করা একটি সাধারন ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মুত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের ​​একাধিক সেবাদাসী থাকে এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে

★ সাধারণ বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত 'নাড়া' শব্দটির অর্থ হল শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না। তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার 'ওরসে' তাদের আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ। (বা.বা পৃঃ 14) লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ 1986 সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, "আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা। আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ । তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি .. ... আমাদের গুরুই আমাদের রাসুল। ... ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থ ভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন। কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন ... এই সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ। "(দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২ য় সংস্করণ, আগস্ট 1998 পৃঃ 4-95)

★ উপরের কথা গুলো কোন মুসলিম। যদি ভাল ভাবে বুঝে তাহলে কখনো বাউলবাদ তথা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহন করবে না আর এই বাউলবাদ তথা বৈষ্ণববাদ মুসলিম ও সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলি দের ও ক্ষতি করে চলছে দিনের পর দিন । দেখুন মহান রাব্বুল আলামিন আল কোরআনে কি বলে,

★83 - তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? । আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে

★ সূরা আল ইমরান। 85 - যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত

★ সূরা আল ইমরান: 101 - আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের

★ সূরা আল ইমরান: 102 - হে ঈমানদারগণ। আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না

★ সূরা আল ইমরান। 104 - আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম

★ সূরা আল ইমরান: । 105 - আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।

★ এই আয়াত গুলো একটু গভীরতম ভাবে পড়ে তার পরে আপনারা বাউল তথা বৈষ্ণবধর্ম গ্রহন করিয়েন।

★বাউলবাদ সুফিবাদ এর মাঝে প্রবেশ করে কলঙ্কিত করে ফেলেছে দিনের পর দিন তাই আসুন বাউলবাদ না বলুন।

★ বিঃদ্রঃ বৈষ্ণব মতবাদে সবচে বাজে জঘন্যতম কাজটি হলো এদের মাঝে মা বোন মাসি কাকি বলে কিছু নেই। তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করে আমাদের সকল আত্মায় একই। তাই আমাদের মাঝে ভেদাভেদ থাকতে পারে না। আর বৈষ্ণব মতাদর্শ হতে এই রস রতি অর্থাৎ সেক্স এর সাধনা ঢুকে পরেছে লালনবাদে। তাই তাদের মাঝে সেক্স এর সাধনা করে সমস্যাদি নেই।

[ বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ  দি ফিলোফোসি অফ লাভ ]

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

জীবনের দৌড়

স্পার্ম যাকে আমরা শুক্রানু বলি। যা প্রতি বারে আনুমানিক ২০-৩০ কোটি স্পার্ম নির্গত হয়। এই ২০-৩০ কোটি স্পার্ম, ওভামের দিকে পাগলের মত ছুটতে ছুটতে পৌঁছায় মাত্র ৩০০-৫০০ মাত্র আর বাকিরা এই "ছুটে চলার" দৌড়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত অথবা পরাজিত হয়ে মারা যায়,বিলীন হয়ে যায়।

এই ৩০০-৫০০ স্পার্ম, যেগুলো ডিম্বানুর কাছে যেতে পেরেছে তাদের মধ্যে মাত্র একটি, স্পার্ম ডিম্বানুকে ফার্টিলাইজ করে। সেই ভাগ্যবান স্পার্মটি হচ্ছেন আপনি কিংবা আমি।

কখনও কি এই রিয়ালিটি মাথায় এনেছেন?

আপনি তখন দৌড়েছিলেন,যখন আপনার চোখ,হাত পা মাথা ছিল না! তবু আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন সার্টিফিকেট ছিল না! মস্তিষ্ক ছিল না, তবুও আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন শিক্ষা ছিল না, দৌড়েছিলেন কারও সাহায্য ছাড়া, তবু আপনি জিতেছিলেন। আপনি তখন দৌড়ছিলেন,যখন আপনার একটি গন্তব্য ছিল এবং সেই গন্তব্যের দিকে উদ্দেশ্য ঠিক রেখে একা একাগ্র চিত্তে দৌড়িয়ে ছিলেন এবং শেষ অবধি আপনি জিতেছিলেন।

আর আজ!

আপনি কিছু একটা হলেই ঘাবড়ে যান।  নিরাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু কেন? কেন আপনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন।
এখন আপনার বন্ধু বান্ধব, ভাই বোন, সার্টিফিকেট সবকিছু আছে। হাত-পা আছে, শিক্ষা আছে, প্ল্যান করার মস্তিষ্ক আছে, সাহায্য করার মানুষ আছে, তবুও আপনি আশা হারিয়ে আশা ছেড়ে নিরাশায় দুলছেন।

যখন আপনি জীবনের প্রথম দিনে হার মানেন নি, ৩০ কোটি স্পার্মের সাথে মরণপণ যুদ্ধ করে ক্রমাগত দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন কিছুর অবলম্বন ছাড়া শুধু একা একাই জিতেছেন।

সেখানে আজ! আপনি কেন হারবেন? কেন হার মানবেন? আপনি শুরুতে জিতেছেন, শেষে জিতেছেন, মাঝপথেও আপনি জিতবেন। সবচাইতে বেশী কি চান?  মূল্য দিন, বিরামহীন লেগে থাকুন- আপনি জিতবেন।কারন,আপনার জন্ম সৃষ্টির লক্ষেই!!
এগিয়ে চলুন!

হ্যাঁ আমি এগিয়ে যাব। পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে যাব। কোন বাঁধাই আর আমাকে আটকাতে পারবে না।

[ বিশেষ ধন্যবাদঃ দি ফিলোসোফি অফ লাভ নামক পোষ্টের এডমিনকে ]

আধ্যাত্মিক পাঠ-প্রথম পর্ব

মানবদেহে মহান আল্লাহ্ পাকের সীমাহীন কুদরত ও হিকমাত

নারীর যেমন ২টি স্তন আছে, ঠিক পুরুষেরও ২টি স্তন আছে। নারীর স্তন ৩ টি কাজে লাগে - নিজের যৌবন, স্বামীর সোহাগ ও সন্তানের খাদ্য। কিন্তু পুরুষের স্তন কোন কাজেই লাগেনা। তাহলে আল্লাহ পাক তা দিলেন কেন? কারণ, জগতের সকল নারী পুরুষের স্তনের বোটা কালো বৃত্তাকার। সেই কালো বৃত্তের রহস্য কি? রহস্য অতি গভীর। 

বাম পাশের কালো বৃত্তে আল্লাহ নামের ৪টি হরফ বসানো। ডান পাশের কালো বৃত্ত মুহাম্মাদ নামের ৪টি হরফ বসানো। পুরুষের বেলায় তা ১বার। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে ৮ বার। উপরের কালো বৃত্তে ১বার আর ভেতরে রসুনের পর্দার মত ৭টি পর্দা আছে। ৭ পর্দায় ৭ বার - মোট ৮ বার। প্রত্যেক পর্দায় ৪ টি করে হরফ। ৪ গুন ৮ = ৩২ । তাইতো মায়ের বুকে ৩২ নালীর দুধ তৈরী হয় ।

বামপাশের দুধের ২ আঙ্গুল নিচে লতিফায়ে ক্বালব, যা আল্লাহ্ পাকের মাকাম। যার কারণে জিকরুল্লাহর দ্ধারা মানুষের ক্বালব পরিস্কার হয় ও সেখানে আল্লাহর জাত এবং সিফাতের নূর প্রবাহিত হয়। যাদের ক্বালবে বা অন্তরে ঐ নূর প্রবাহিত হয়, তাদেরকেই বলা হয় ক্বালবে ছালিম বা ওলীআল্লাহ্ । 

ডানপাশের দুধের ২ আঙ্গুল নিচে অবস্থান করে লতিফায়ে রূহ । যা পবিত্র ক্বোরআনুল কারীমের ভাষায় প্রিয় নবীজির মোক্বাম । নবীজির প্রতি পূর্ণবিশ্বাস, আদব-তা'জিম ও অধিকতর দুরুদ পাঠের দ্ধারা নবীজির নূর ঐ রূহে প্রবাহিত হয়। যারা ঐ নূরকে রূহের মাক্বামে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারে, তারাই হলো পাক্কা ঈমানদার বা মুমিনে ক্বামিল। যাদের জন্যে জাহান্নামের আগুন চির তরে হারাম হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ কুফর ও নিফাক্বের জুলমাতে নিজের অন্তর ( ক্বালব)  এবং আত্মা ( রূহ ) কে আধাঁরময় না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বালব ও রূহের নূর দ্ধারা তার ঈমান আলোকিত ও শক্তিশালী থাকবে। যখনি সে কুফর ও নিফাক্বের মাধ্যমে নিপতিত হবে, তখনি তার অন্তর ও রূহ হতে ঈমানের নূর বিদায় নিতে। আর তখনি সে ৬ টি রিপুরোগে আক্রান্ত হয়ে জাহিলিয়াতের দিকে ধাবিত হবে। ঐ শ্রেনীর মানুষগুলো প্রকাশ্য মানবীয় ছুরতে থাকলেও তখন তারা নফসে আম্মারায় প্রভাবিত হয়ে রূহে হায়ওয়ানী বা পশুর আত্মার অধিকারী হবে। যাদেরকে পবিত্র ক্বোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ্ চতুস্পদ জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে ঘোষনা করেছেন। যদিও তাদের মধ্যে বাহ্যিক ইলম, আ'মল ও লেবাস সুন্দর হয়, কিন্তু তাদের ক্বালব ও রূহ থাকবে কুফর এবং নিফাক্বে ভরপুর।

বিধায়, তারা কোন অবস্থাতেই ঈমানের পথে ফিরে আসবে না। তাদের মধ্যে বাহ্যিক সকল ইলম ও আ'মল থাকা সত্ত্বেও তাদের অন্তর ও আত্মা হবে ঈমানের নূরহীন ।

মানবদেহে মহান আল্লাহ্ পাক এত কুদরত ও হিকমাত প্রকাশ করার পরেও, হে আদম সন্তানেরা, তোমরা কিভাবে আল্লাহ ও রাছুলের নাফরমানী করছো ?

[ পোষ্ট ফিলোসোফি অফ লাভ থেকে সৃংগৃহীত ] 

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

কবর ও মাজারঃ মনা পাগলার ভাবনা - প্রথম পর্ব

মনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তারপর বললোঃ কাম সারছে....

মনার এরুপ ভাবনায় এবং কথা বলার ঢং অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। কারণ, তারা একটি কবরস্থানে এসেছে। লাশ দাফন করার জন্য। গতকাল রাত ৯টার দিকে তাহেরের মা মৃত্যু বরণ করেছেন। দুপুরে বাদ যোহর তার লাশের জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্থানে আনা হয়েছে। তাদের সাথে মনাও এসেছে। দাফন শেষে যখন চলে যাবার সময় হলো তার আগে মাওলানা আজিজুর রহমান সাহেব কিছু বয়ান করছেন। বয়ান শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হবে। সেই দোয়ায় সবাই শরিক হবে এমনটাই আশা করেছিল তাহের ভাই। কিন্তু মনা সেই মাওলানার ওয়াজ না শুনে বিভিন্ন কবরের পাশে দাঁড়াচ্ছে আর কবরের ফলকের উপর খেদাই করা লেখাগুলো পড়ছে। সবগুলো লেখাই একই ধরণের। যেমনঃ প্রথমে লেখা-

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম। 
নামঃ মৃত -----------
জন্ম সালঃ ১৯৬৪ ইং
মৃত্যু সালঃ ২০১৭ ইং

তবে একটা লেখা ব্যতিক্রম। সেটা দেখেই মনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে। সেখানে লেখাঃ

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম।
আস সালামু আলাইকুম ইয়া ইয়্যুহাল কুবুর।
নামঃ মৃত ...................
জন্ম সালঃ  ১৯৫০ ইং
মৃত্যু সালঃ ২০০৩ ইং

মনা তখনও সেখানে বসে আছে। এরই ফাঁকে মাওলানা সাহেব মোনাজাত শেষ করে এসেই মনাকে একটা কড়া ধমক দিলেন।
বে...য়া.....দব। তর এত বড় সাহস....চিৎকার চেঁচামেচি কইর‌্যা কবরস্থানরে মাথায় তুইল্যা ফালাইছস। পাইছস টা কি...ধর্ম নিয়া ইয়ার্কি.....

ধমক খেয়ে মনা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। তারপর একটু ধাতস্থ হয়ে বললোঃ

-মাওলানা সাব, খারান। এইডা একটু পড়েন.....মনা হাত দিয়ে কবরটা দেখায়।

মাওলানা মনার ইংগিত করা হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে পড়লোঃ বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম। আস্ সালামু আলাইকুম ইয়া আইয়্যুহাল কুবুর। নাম.....জন্ম সালঃ ১৯৫০ ইং মৃত্যু সালঃ২০০৩ইং। পড়া শেষ করেই মনার দিকে তাকিয়ে জিগ্যাসা করলোঃ 

-পড়লাম। সব ঠিক আছে।

-কেমতে ঠিক আছে মাওলানা সাব....

-কি কইতে চাস তুই....

-মাওলানা সাব, সালাম দেওয়া সুন্নাতে রাসুল। আর জওবাব দেওন ওয়াজিব। এইডা কি সত্য....

-হ

-এই হানেইতো খটকাটা লাগছে..

-কি রকম?

-এই যেমুন ধরেন এই কবরটারে যদি আমি সালাম দেই...আস সালামু আলাইকুম ইয়া আইয়্যুহাল কুবুর....এই কবরের মইদ্যে যে শুইয়্যা আছে...হেয় কি উত্তর দিব....ওয়ালাইকুম আস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু না-কি ওয়ালাইকুম আসসালাম...না কি অন্য কিছু....

-বেআক্কল কয় কি? হেয় উত্তর দিব কেমতে....হেয় তো ৫৩ বৎসর আয়ু পাইছিল। আর আইজ অইলো ২০১৭। ১৪ বৎসর অইয়্যা গেছে গা...ব্যাটা তর কি মাতা খারাপ অইছে....
(চলবে)

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

গুরু তত্ত্ব ও গুরু মহিমা

বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে গুরু তত্ত্ব ও গুরু মহিমা সম্বন্ধে যা যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা সম্বন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত হলোঃ

 রুদ্রযামলে –
অনন্তর গুরু ও শিষ্যের কর্ত্তাব্যাকর্ত্তব্য কথিত হইতেছে। – রুদ্রযামলে কথিত আছে, যে, – কদাচ গুরুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিবে না এবং সহসা কোন বাক্যের প্রত্যুত্তর প্রদান করাও উচিত নহে। দিবানিশি দাসের ন্যায় গুরুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।।

 সারসংগ্রহে –
লিখিত আছে, যে, – সদ্ গুরু আশ্রিত শিষ্যকে একবৎসর পর্য্যন্ত পরীক্ষা করিয়া তৎপরে মন্ত্র প্রদান করিবে। কিন্তু স্বপ্নলব্ধ মন্ত্রে কালাকাল বিবেচনার আবশ্যক নাই। যেরূপ অমাত্যকৃত পাপ রাজায় এবং পত্নীকৃত পাপ পতিতে সংক্রান্ত হয়, তদ্রূপ গুরুও শিষ্যকৃত পাপে অভিভূত হইয়া থাকেন। এক বৎসরে ব্রাহ্মণ, দুই বৎসরে ক্ষত্রিয়, তিন বৎসরে বৈশ্য এবং চারি বৎসরে শূদ্রশিষ্য-যোগ্যতা প্রাপ্ত হয়।।

 তারাপ্রদীপে –
লিখিত আছে, যে, – মন্ত্রের অক্ষর সকলকে দেবতাস্বরূপ এবং সেই দেবতাকে গুরুস্বরূপ বিবেচনা করিবে, কদাচ তাহাদিগের ভেদজ্ঞান করিবে না ।।

 রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, – যদি গুরুর দ্রব্য গ্রহণে অভিলাষ করে অথবা গুরুপত্নী গমন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি মহাপাতকে লিপ্ত হয়, কোনরূপ প্রায়শ্চিত্তে তাহার পাপের শান্তি হয় না। যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা শ্রবণ করে, তাহার সেই দিনকৃত পূজা দেবী গ্রহন করেন না।

 কুলার্ণবে –
কথিত আছে, যে, – যদি কোন স্থানে গুরুর নিন্দা শ্রুতিগোচর হয়, তাহা হইলে কর্ণদ্বয় আবৃত করিয়া তৎক্ষণাৎ তথা হইতে দূরে গমন করিবে, যেন আর সেই সকল দুর্বাক্য কর্ণগোচর হইতে না পারে।

 নিত্যানন্দে –
লিখিত আছে, যে, – মনুষ্যবৎ জ্ঞান করিবে না, যদি গুরুকে মনুষ্য বলিয়া জ্ঞান করা যায়, তাহা হইলে কি মন্ত্রজপ, কি পূজা কিছুতেই সিদ্ধিলাভের সম্ভাবনা নাই। যদি গুরু একগ্রামে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে শিষ্য প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা তাঁহাকে প্রণাম করিবে, গুরু এক ক্রোশ দূরে অবস্থিত হইলে প্রতিদিন একবার তাঁহার নিকট গিয়া প্রণাম করিবে। গুরু অর্দ্ধযোজন দূরে থাকিলে শিষ্য পঞ্চ পর্ব্বে গিয়ে বন্দনা করিবে, যদি এক যোজন হইতে দ্বাদশ যোজন মধ্যে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে যোজনসংখ্যক মাসে গিয়া প্রণাম করিবে। যদি গুরুদেব অতি দূরদেশে থাকেন, তাহা হইলে প্রতি বর্ষে বর্ষে এক এক বার গিয়া শিষ্য তাঁহার চরণ বন্দনা করিবে।।

যামলে –
জামলে লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা করে, সে গতশ্রী ও গতায়ু হইয়া শতকোটি কল্প নরকে নিমগ্ন থাকে।।

পুরশ্চরণরসোল্লাসে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুকে সর্বদা শিবময় ভাবনা করিবে। গুরু পুত্রকে গণেশসদৃশ, বধূকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী ন্যায় এবং গুরুর কুল ভৈরবগণ সদৃশ বিবেচনা করিতে হয়।

বৃহন্নীলতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর অভাবে গুরুপত্নীর অর্চ্চনা করিবে। তাঁহার অভাবে গুরুপুত্র, গুরুপুত্রের অভাবে গুরুকন্যা, গুরুকন্যার অভাবে গুরুস্নুষা এবং এই সকলের অভাবে গুরুবংশীয় অপরের পূজা করিবে। যদি তদ্ধংশীয়গণেরও অভাব হয়, তাহা হইলে গুরুর মাতামহ, মাতূল ও মাতুলানীর পূজা করিতে হয়।।

 গুরুগীতা –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি প্রতিদিন ভক্তিসহকারে গুরুর পাদোদক পান করেন, তিনি সার্দ্ধত্রিকোটি তীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।

গুপ্তসাধনতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ত্রিসন্ধ্যা গুরুর পাদোদক পান করেন, সংসাররূপ মোহপথে তাঁহাকে আর পুনরাগমন করিতে হয় না এবং যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে গুরুপাদোদক শিরোপরি ধারণ করেন, তিনি সর্ব্বতীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।

যোগিনীতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – গুরুর উচ্ছিষ্ট ও গুরুপুত্রের উচ্ছিষ্ট ভক্তিসহকারে ভোজন করিবে, যদি তাহাতে ঘৃণা বোধ করে, তাহা হইলে অধোগতি প্রাপ্ত হয় ।।

কুলার্ণবে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পাদুকা, ছত্র, শয্যা ও ভূষণাদি দর্শন মাত্র নমস্কার করিবে, সেই সমস্ত দ্রব্য কদাচ নিজে ভোগ করিবে না ।।

গুরুগীতা –
কথিত আছে, যে, – গুরু যেরূপ উপদেশ প্রদান করিবেন, তাহাতেই মনঃশুদ্ধি করিবে। গুরু সৎই বলুন আর অসৎই বলুন তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করা উচিত নহে। গুরুর নিকট কদাচ মিথ্যা বাক্য প্রয়োগ করিবে না ।।

পিচ্ছিলাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ধর্ম্মবিমোহিত হইয়া পৈতৃক কুরুকুল পরিত্যাগ করে, সেই ব্যক্তি যে পর্য্যন্ত চন্দ্রসূর্য ধরাতলে অবস্থিত থাকে, তাবৎ কাল ঘোর নরকে পতিত হয় ।

জামলে –
লিখিত আছে, যে, – গুরু, গুরুপুত্র, গুরুপত্নী ও গুরুর বন্ধুগণের দোষ কদাচ প্রকাশ করিবে না; ইঁহাদিগের কোন দ্রব্য ভক্ষণ করা উচিত নহে। কিন্তু তাঁহারে আপন ইচ্ছানুসারে প্রদান করিলে তাহা ভক্ষণ করিতে পারে।।

কুলাগমে –
লিখিত আছে, যে, – যদি পূজাকালে গুরু, গুরুপত্নী বাঁ গুরুপুত্র সমাগত হন, তাহা হইলে পূজা পরিত্যাগ পূর্ব্বক তাঁহাদিগেরই অর্চ্চনা করিবে; ইহাই শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। সেই দিন শিষ্যের পক্ষে কোটি সূর্য্যগ্রহণের তুল্য। হে দেবি ! চন্দ্রগ্রহণ দিবসের ন্যায় সেই দিন শিষ্যের পক্ষে পরম শুভপ্রদ জানিবে।।

গুরুর দর্শনমাত্র সর্ব্বপাপ দূরীভূত হয়। হে দেবি ! গুরুকে দর্শন করিবা মাত্র তৎক্ষণাৎ দান করিবে। গুরুর প্রীতি সাধন হইলে দেবতার প্রীতি সাধন হয় এবং দেবতা সন্তুষ্ট হইলে মন্ত্র সিদ্ধি হইয়া থাকে।।

মুন্ডমালাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পূজা না করিয়া যে ব্যক্তি ইষ্টদেবতার অর্চ্চনা করে, ভৈরব স্বয়ং তাহার মন্ত্রের তেজ হরণ করেন।। 

রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, -শিষ্য গুরুর সহিত কোন দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় বাঁ গুরুকে ঋণদান অথবা গুরুর নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিবে না।।
Written by:Prithwish Ghosh

গুরু

গুরু (বি) -- উপদেষ্টা, উপদেশক, শিক্ষক, দীক্ষক, দেশিক, দিশারী, শাস্ত্রীয় জীবনের উপদেষ্টা, সাধনপন্থা নির্দেশক, সম্মানে বা বয়সে জ্যেষ্ঠ, মাননীয় ব্যক্তি,(বিণ) -- ভারী, গুণসম্পন্ন, দুর্বহ, দায়িত্বপূর্ণ, কঠিন, মহান, দুরূহ, শ্রদ্ধেয়, মাননীয়, অতিশয়, অধিক, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, knowledge, master, teacher ---.যে মহান মনীষী মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন তাকে গুরু বলা হয় আবার চিত্তপটের সাথে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যাদিকে জ্ঞান বা রূপকার্থে গুরু বলা হয়।
-
আপনদেশের মধুরবাণী
গুরু আমায় শোনাও না
দেশবাসী কয় উল্টাকথা
সোজা করে শোনায় না
... গুরু উপায় কী আমার
কেমনে হব তিরবেণী পার.......
....ত্রিতাপ জ্বালায় পরাণ পুড়ে
গুরু উপায় বল না
....প্রেমজ্বালায় অঙ্গ জ্বলে
মদনজ্বালা সহে না......
...গুরু বলো উপায় কী আমার
কেমনে হব তিরবেণী পার......
.....শেষের সে'দিন তুমি বিনে
........আর তো কেউ রবে না .......
-
গুরু চার প্রকার ---
-
যথা --
১. মানুষগুরু -- মানুষ আকারধারী যে মহান মনীষী সাধারণ মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা প্রদান করেন তাকে মানুষগুরু বলে। যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবার গুরুপদ প্রাপ্ত ব্যক্তির জ্ঞানকেও গুরু বলে।
-
২.জগৎগুরু -- সারাবিশ্বে বিরাজিত বাতাসকে জগৎগুরু বলে। আবার নাসিকার শ্বাসকেও জগৎগুরু বলে। যেমন -- 'রণে, বনে, পাহাড়ে ও জঙ্গলে যেখানে আমাকে স্মরণ করবে সেখানেই আমাকে পাবে।' তাই - মানুষগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারে না কিন্তু জগৎগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারেন।
-
৩. কামগুরু ----- শাস্ত্রীয় মতে কামের প্রতীতি মদনকে কামগুরু বলে। মূলতঃ পুরুষ জীবের শিশ্নকে কামগগুরু বলে। “প্রেম প্রকৃতি স্বরূপসতী, কামগুরু হয় নিজপতি, ও মন অনুরাগী না হলে, ভজন সাধন হয় না”। কাম ব্যতীত যেমন জীবের প্রজন্ম টিকিয়ে রাখা যায় না তেমন কোন প্রজাতির জীব সাংসারিক, সামাজিক, দলবদ্ধ বা সঙ্ঘবদ্ধ হতেও পারে না। জীবের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য কামশাস্ত্রে কামের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমন কামযজ্ঞ পরিচালনার জন্য শিশ্নের গুরুত্ব আরো অপরিসীম। কামযজ্ঞ পরিচালনা করার গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই শিশ্নকে কামদেবতা বা কামপ্রতীতি বা কামগুরু বলা হয়।
-
৪. পরমগুরু ------ জীবের লালনপালনকর্তা পরমেশ্বরকেই পরমগুরু বলে। “পরমগুরু বড়ই রঙ্গিলা আমার মনভোলা, কত নামে ধরাধামে করে আকারে লীলাখেলা” বা “ত্রিবেণীর ত্রিধারে, মীনরূপে গুরু বিরাজ করে, কেমন করে ধরবি তারে, বলরে অবুঝ মন”। পরমেশ্বর হলেন তরলমানুষ --- যিনি এখনো মূর্ত আকার ধারণ করেননি। মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট, সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল, মস্তিস্কে অবস্থিত 'চন্দ্রসুধা'।
-
গুরু যার থাকে সদয়
শমন বলে কিসের ভয়
গুরু চেনা সহজ নয়রে ....গুরু চেনা সহজ নয়
জগৎগুরু চিনতে গেলে ...মানুষ গুরু ভজতে হয় .......... জয় গুরু

Written by:Prithwish Ghosh

গুরু ও শিষ্যের লক্ষণ

গুরু চিনব কি করে???

সূর্যকে প্রকাশ করতে মশালের প্রয়োজন হয় না। সূর্যকে দেখার জন্য আর বাতি জ্বালতে হয় না। সূর্য উঠলে আমরা স্বভাবতই জানতে পারি যে সূর্য উঠেছে। এইরূপ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য লোকগুরুর আবির্ভাব হলে আত্মা স্বভাবতই জানতে পারে যে,তার উপর সত্যের সূর্যালোকপাত শুরু হয়েছে। সত্য স্বতঃপ্রমাণ,তাকে প্রমাণ করতে অপর কোন সাক্ষের প্রয়োজন নাই-এটা স্বপ্রকাশ। সত্য আমাদের অন্তস্থলে প্রবেশ করে,এর সামনে সমগ্র জগত এসে দাড়ালেও সে বলবে-"আমিই সত্য"। যে সকল আচার্যের হৃদয়ে জ্ঞান ও সত্য সূর্যালোকের ন্যায় উজ্বল,তারা জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরুষ। জগতের অধিকাংশ লোকই তাদের ঈশ্বর বলে পুজা করে।

কিন্তু আমরা অপেক্ষাকৃত অল্প জ্ঞানীর নিকটও আধ্যাত্বিক সাহায্য লাভ করতে পারি। আর আমাদের অন্তর্দৃষ্টি এমন প্রখর এবং নিখুত নয় যে,আমরা আচার্যের বা গুরুর সম্পর্কে যথার্থ বিচার করব। তাই গুরু-শিষ্যে দুজনেরই কতগুলি পরীক্ষা আবশ্যক।


শিষ্যের এই গুণগুলি আবশ্যক-পবিত্রতা,প্রকৃত জ্ঞানপিপাসা ও অধ্যবসায়। অশুদ্ধাত্মা পুরুষ কখনও ধার্মিক হতে পারে না। কেননা কায়মনোবাক্যে কেউ পবিত্র না হলে সে ধার্মিক হতে পারবে না।আর জ্ঞানতৃষ্ণা সম্পর্কে বলা যায়,আমরা যা চাই,তা পাই-এটাই সনাতন নিয়ম। কিন্তু অন্তরের সাথে একাত্ন না হয়ে চাইলেই কি সেই কাম্য প্রাপ্ত হয়?

ধর্মের জন্য প্রকৃত ব্যাকুলতা অনেক বড় জিনিস। আমরা ধর্মকে সচারচর যতটা সহজ মনে করি,ঠিক ততটা সহজ নয়। শুধুমাত্র ধর্মকথা শুনলে বা ধর্মগ্রন্থ পড়লেই প্রমানিত হয় না ধর্মপিপাসার কথা। যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে ব্যাকুলতা জাগ্রত না হবে,যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে প্রবৃত্তির উপর জয়লাভ না হবে,ততদিন আমাদের সংগ্রাম আবশ্যক। এই সংগ্রাম হবে পাশব প্রকৃতি ও অভ্যাসের উপর। দুই একদিনের কাজ নয় এটি,বছরের পর বছর,যুগান্তর কিংবা কয়েক জন্মও কেটে যেতে পারে। কারো জন্যে সহজেই সিদ্ধিলাভ হয়,আবার কারো জন্যে ধীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়। যদি অপেক্ষার কাল আসে তবে সেক্ষেত্রেও ধৈর্য ধরতে হবে।

যেই শিষ্য এইরূপ অধ্যবসায় সহকারে সাধনে প্রবৃত্ত হয়,তার সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।


গুরু সম্পর্কে এটা দেখা দরকার তিনি শাস্ত্রের মর্মজ্ঞ কিনা। জগতের সকলেই বেদ,পুরান বা অন্যান্য গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করে।কিন্তু শাস্ত্রসমূহ কেবল কতগুলো শব্দ এবং ব্যাকরণ - ধর্মের কয়েকটি অস্থি মাত্র। যে গুরু শব্দ নিয়ে আলোচনা করেন এবং মনকে শুধু শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা চালাতে চান,তিনি ভাব হারিয়ে ফেলেন। আর শাস্ত্রের মর্ম যিনি জানেন,উনিই যথার্থ ধর্মাচার্য।
শাস্ত্রের শব্দজাল যেন মহারণ্য, মানুষ নিজেকে একবার হারিয়ে ফেললে পথ খুজে পায় না।
"শব্দজালং মহারণ্যং চিত্তভ্রমণকারণম।"(বিবেকচূড়ামণি)
অর্থাৎ শব্দজাল মহারণ্যের ন্যায়,চিত্তের ভ্রমনের কারন। শব্দযোজনা হচ্ছে বক্তৃতা ও শাস্ত্র মর্ম ব্যাখ্যা করবার জন্য,এটা কোনভানেই মুক্তির সহায়ক নয়। যারা এমন করেন,তাদের ইচ্ছা লোকসমাজে তাদের সম্মান হোক,পণ্ডিত বলে সবাই গণ্য করুক। কিন্তু জগতের প্রধান ধর্মাচার্যগণ কেউ এইভাবে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করেন নি। তারা শাস্ত্রের শব্দার্থ ও অর্থ নিয়ে প্যাচান নাই,বরং জগৎকে শাস্ত্রের মহান ভাব শিক্ষা দিয়েছেন। আর যাদের শেখানোর কিছুই নেই,তারা দুই একটা শব্দ নিয়েই গবেষণা করে তার নাড়ি নক্ষত্র বের করার প্রয়াস করেন।


এক আম বাগানে কয়েকজন বেড়াতে গেল। বাগানে গিয়ে তারা হিসাব আরম্ভ করল-কয়টা আম গাছ,কি রকম আম ধরেছে,কোন ডালে কত পাতা,শাখা-প্রশাখা কেমন,আমের বর্ণ,আকৃতি,গন্ধ ইত্যাদি। পরস্পরের মধ্যে এরূপ বিচারে যুক্তি তর্ক বাধতে শুরু করল এক সময়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন বিচক্ষন। সে আমের বিচার না করে আম পেড়ে খেতে শুরু করল। কে বেশি বুদ্ধিমান???
আম খেলে পুষ্টি পাবে,পাতা গুনে লাভ কি। পাতা গোনা এবং অন্যকে জানানো বন্ধ করে দাও। অবশ্য এরূপ কাজের কিছুটা উপযোগিতা আছে। তবে সেটা ধর্মরাজ্যে নয়। যারা এইরূপ পাতা গুনে বেড়ায় তাদের ভিতর থেকে একটি ধর্মকথাও বের করা সম্ভব হয় না। ধর্ম যদি জীবনের লক্ষ্য হয়,তবে সেই লক্ষ্যে পৌছাবার জন্য পাতা গোনার মত এতো কষ্ট না করলেও হবে। যদি ভক্ত হতে একান্তই ইচ্ছা জাগে,তবে শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় কিংবা ব্রজে জন্মেছিলেন,শৈশবে কিংবা যৌবনে কি কাজ করেছিলেন,তা জানার আবশ্যকতা নেই। গীতায় কর্তব্য ও প্রেম সম্পর্কে যে সুন্দর শিক্ষা আছে,আগ্রহের সাথে তা অনুসরন করাই হবে ভক্তের কাজ।
শাস্ত্র প্রণেতা সম্পর্কে অন্যান্য বিষদ বিষয় জানা কেবল পন্ডিতদের আমোদের জন্য। তারা যা চায়,তাই নিয়ে থাকুক। তাদের পন্ডিতি তর্কবিচারে "শান্তিঃ শান্তিঃ" বলে আমাদের আম খাওয়াই শ্রেয়।


গুরুর নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক। অনেক সময়ে লোকে বলিয়া থাকে ,"গুরুর চরিত্র,গুরু কি করেন না করেন,দেখিবার প্রয়োজন কি? তিনি যা বলেন,তাহাই বিচার করিতে হইবে। সেইটি লইয়াই কাজ করা প্রয়োজন।" এ কথা ঠিক নয়। গতি-বিজ্ঞান,রসায়ন বা অন্য জড়-বিজ্ঞানের শিক্ষক যাহাই হউন না কেন,কিছু আসে যায় না। কারন উহাতে কেবল বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধ্যাত্মবিজ্ঞানের আচার্য অশুদ্ধচিত্ত হইলে তাঁহাতে আদৌ ধর্মালোক থাকিতে পারে না। অশুদ্ধচিত্ত ব্যক্তি কী ধর্ম শিখাইবে? নিজে আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্ধি করিবার বা অপরে শক্তি সঞ্চার করিবার একমাত্র উপায়-হৃদয় ও মনের পবিত্রতা।

যতদিন না চিত্তশুদ্ধি হয়,ততদিন ভগবদ্দর্শন বা সেই অতীন্দ্রিয় সত্তার আভাসজ্ঞানও অসম্ভব। সুতরাং ধর্মাচার্যের সম্বন্ধে প্রথমেই দেখা আবশ্যক তিনি কি চরিত্রের লোক,তারপর তিনি কি বলেন তাহাও দেখিতে হইবে। তাহার সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক। তবেই তাহার কথার প্রকৃত একটা গুরুত্ব থাকে,কারন তাহা হইলেই তিনি প্রকৃত শক্তি সঞ্চারকের যোগ্য হইতে পারেন। নিজের মধ্যেই যদি সেই শক্তি না থাকে,তবে তিনি সঞ্চার করিবেন কি? গুরুর মন এরূপ প্রবল আধ্যাত্বিক স্পন্দন সম্পন্ন হওয়া চাই যে তাহা যেন সমবেদনাবশে শিষ্যে সঞ্চারিত হইয়া যায়। গুরুর বাস্তবিক কার্যই এই- কিছু সঞ্চার করা,কেবল শিষ্যের বুদ্ধিবৃত্তি বা অন্য কোন শক্তি উত্তেজিত করিয়া দেওয়া নয়। বেশ স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়,গুরু হইতে শিষ্যে যথার্থই একটি শক্তি আসিতেছে।সুতরাং গুরুর শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক।


দেখা আবশ্যক,গুরুর উদ্দেশ্য কি? 


গুরু যেন অর্থ,নাম যশ বা কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মশিক্ষাদানে প্রবৃত্ত না হন- সমগ্র মানবজাতির প্রতি শুদ্ধ প্রেমই যেন কার্যের নিয়ামক হয়। আধ্যাত্বিক শক্তি শুদ্ধ প্রেমের মাধ্যমেই সঞ্চারিত করা যাইতে পারে। কোনরূপ স্বার্থপূর্ণ ভাব,লাভ বা যশের ইচ্ছা এক মুহূর্তে এই সঞ্চারের মাধ্যম নষ্ট করিয়া ফেলে। ভগবান প্রেমস্বরূপ,আর যিনি ভগবানকে প্রেমস্বরূপ বলিয়া জানিয়াছেন,তিনিই মানুষকে ভগবদ্ভাব শিক্ষা দিতে পারেন।

আর যদি গুরুতে এই সব লক্ষণ বর্তমান থাকে,তবে জানিতে হইবে কোন আশঙ্কা নাই। নতুবা তাহার নিকট শিক্ষায় বিপদ আছে,তিনি হৃদয়ে সদ্ভাব সঞ্চার করিতে না পারেন,হয়তো অসদ্ভাব সঞ্চার করিবেন। এই বিপদ হইতে নিজেকে সর্বতোভাবে সাবধান রাখিতে হইবে। "যিনি বিদ্বান,নিষ্পাপ ও কামগন্ধহীন,যিনি শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ" তিনিই প্রকৃত সদগুরু।

গুরুই ধর্মশিক্ষার্থীর চক্ষু খুলিয়া দেন। সুতরাং কোন ব্যক্তির সহিত তাহার বংশধরের যে সম্বন্ধ,গুরুর সহিত শিষ্যেরও ঠিক সেই সম্বন্ধ। গুরুর প্রতি বিশ্বাস,বিনয়নম্র আচরণ,তাহার নিকট শরণগ্রহন ও তাহার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যতিরেকে আমাদের হৃদয়ে ধর্মের বিকাশ হইতেই পারে না। আর ইহাও বিশেষ লক্ষ্য করিবার বিষয় যে,যে সব দেশে গুরু শিষ্যের এরূপ সম্বন্ধ আছে,কেবল সেই সব দেশেই অসাধারন ধর্মবীরগণ জন্মিয়াছেন। আর যেসব দেশে গুরু শিষ্যের এ সম্বন্ধ রক্ষা করা হয় নাই,সে সব দেশে ধর্মের শিক্ষক কেবল বক্তামাত্র।

Written by:Prithwish Ghosh

গুরুর প্রয়োজনীয়তা

জীবাত্নামাত্রেই পূর্ণতা লাভ করিবেই করিবে-শেষ পর্যন্ত সকলেই সিদ্ধাবস্থা লাভ করিবে।আমরা এখন যাহা হইয়াছি,তাহা আমাদের অতীত কার্য ও চিন্তারাশির ফলস্বরূপ।আর ভবিষ্যতে যাহা হইব,তাহা বর্তমানে যেরূপ চিন্তা ও কার্য করিতেছি,তাহার ফলস্বরূপ হইবে। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের অদৃষ্ট গঠন করিতেছি বলিয়া যে বাহির হইতে আমাদের কোন সহায়তার আবশ্যক নাই,তাহা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন। যখন এই সহায়তা পাওয়া যায়,তখন আত্মার উচ্চতর শক্তি ও আপাত-অব্যক্ত ভাবগুলি ফুটিয়া উঠে,আধ্যাত্মিক জীবন সতেজ হইয়া উঠে,উহার উন্নতি ত্বরান্বিত হয়,সাধক অবশেষে শুদ্ধভাব ও সিদ্ধভাব হইয়া যায়।


এই সঞ্জীবনী শক্তি গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় না। একটি আত্মা কেবল মাত্র অন্য একটি আত্মা থেকেই শক্তি লাভ করতে পারে। আমরা সারাজীবন বই পড়ে ডিগ্রি নিতে পারি,বুদ্ধিমান হতে পারি কিন্তু আধ্যাত্বিক উন্নতি হবে না কিছুতেই।বুদ্ধির উন্নতি মানে যে আধ্যাত্বিক উন্নতি নয়,তা আমাদের বোধগম্য হয় না। আমরা যারা আধ্যাত্বিক কথা বা তথ্য জানার চেষ্টা করি,ধর্মজীবন যাপনে দেখা যাবে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তিতে ভরা। তার একটাই অর্থ দাড়ায়,আমাদের আধ্যাত্বিক জ্ঞানের প্রাচুর্য কম। তাই জীবাত্মার শক্তি জাগ্রত করতে হলে অপর এক আত্মা হতে শক্তির সঞ্চারন প্রয়োজন।
যে ব্যক্তির আত্মা হতে শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকেই গুরু বলে,যে ব্যক্তির আত্মায় শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকে বলে শিষ্য। শক্তি সঞ্চার করতে হলে প্রথমেই যে ব্যক্তি সঞ্চার করবেন তার সেই শক্তি থাকা আবশ্যক। আর যে ব্যক্তির আত্মায় এই শক্তি দেয়া হবে তার সেই শক্তি গ্রহনের সামর্থ থাকা প্রয়োজন। সঠিক অঙ্কুরোদগম এর জন্য বীজ যেমন সতেজ হওয়া প্রয়োজন,ঠিক তেমন মাটিও গুনাগুন সম্পন্ন হওয়া দরকার। ধর্মের প্রকৃত বক্তা অবশ্যই আশ্চর্য পুরুষ হবেন,শ্রোতাও সুনিপুণ হওয়া চাই। যখন উভয়েই আশ্চর্য ও সুনিপুণ হয়,তখনই আধ্যাত্বিক উন্নতি ঘটে।ঐরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত গুরু এবং এইরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত শিষ্য-মুমুক্ষু সাধক।


সকলে ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছে মাত্র,কিছুটা কৌতুহল আছে বৈকী কিন্তু তবুও তারা এখনও ধর্মচক্রবালের বাইরেই আছে। এটারও মুল্য আছে অবশ্যই। কেননা সময়কালে এর থেকেও ধর্ম পিপাসা জাগতে পারে। আর প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল এই যে,যখনই ক্ষেত্র উপযুক্ত হয় তখনই বীজ আসে। অর্থাৎ যখন আত্মার ধর্মলাভের আগ্রহ প্রবল হয়,তখনই ধর্মশক্তি সঞ্চারক পুরুষ সেই আত্মার সহায়তার জন্য অবশ্যই আসবেন।
"যখন গ্রহীতার ধর্মালোক আকর্ষন করিবার শক্তি পূর্ণ ও প্রবল হয়,তখন সেই আকর্ষনে আকৃষ্ট আলোকশক্তি অবশ্যই আসিয়া থাকেন।"
তবে পথে কতগুলি মহাবিঘ্ন আছে,যথা-ক্ষনস্থায়ী ভাবোচ্ছাসকে প্রকৃত ধর্ম পিপাসা বলে ভুল হবার সম্ভাবনা। আমরা নিজেরাই এরূপ খেয়াল করিতে পারি। হয়তো কাউকে খুব ভালোবাসতাম,তার মৃত্যুতে আঘাত পেলাম। মনে হতে পারে,যা ধরছি তাই বুঝি হাত ফসকে চলে যাচ্ছে। আমাদের একটি দৃঢ় আশ্রয় খুজতে হবে,এর জন্য ধর্ম অতীব জরুরী। কিন্তু কয়েকদিন পরে দেখা গেল,সেই ভাব তরঙ্গ আর নেই। আমরা যেইভাবে ছিলাম,সেইভাবেই আছি। আর যতদিন এই মিথ্যা ভাবোচ্ছাসকে ভুল করে ধর্ম পিপাসা মনে করব,ততদিন ধর্মের জন্য যথার্থ ব্যকুলতা জন্মাবে না। আর ততদিন শক্তি সঞ্চারককারী পুরুষেরও সাক্ষাৎ পাব না।
বাধা আরো আছে। অনেকে অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়েও অহংকারে নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করে।
"অজ্ঞানে আচ্ছন্ন,অতি নির্বুদ্ধি হইলেও নিজেদের মহাপন্ডিত মনে করিয়া মূঢ় ব্যক্তিগণ অন্ধের দ্বারা নীয়মান অন্ধের ন্যায় প্রতিপদবিক্ষেপেই স্থলিতপদ হইয়া পরিভ্রমন করে।"
এইরূপ মানুষেই জগত পরিপূর্ণ। সকলেই গুরু হতে চায়,ভিখারী লক্ষ টাকা দান করতে চায়। এমন লোক যেমন সকলের নিকট হাস্যাস্পদ হয়,এই গুরুগণও তেমনি।

Written by:Prithwish Ghosh