পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব সাত

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মানুষের বাক শক্তি অইতাছে কালাম তথা বাইক্য। এই বাক শক্তির গুণেই শব্দময় জগতের সৃষ্টি অইছে। কলুল্লাহার বাণী হুননের লাইগ্যা কান পাতন লাগে। তাইলেই হুনতে পারবি তার কতা বার্তা। হেয় অইলো বোবাজাতের মতো। নীরব ভাষায় হেয় কতা কয়। হের কতা হুননের লিগ্যাইতো মানুষজন ঘর বাড়ী ছাইড়্যা জংগলের মইধ্যে আশ্রয় লইছে। নীরব সাধন করছে। তার পর হের লগে কতা-বার্তা কইছে। নবী পাক হেরা গুহায় ধ্যান না করলে কি হের কতা হুনতে পারতো? নবী পাক আল্লাহ পাকের সাথে কতা কইছে। হের লগে দেহা সাক্ষাত করছে। মুছা নবীওতো মাঝে মাঝে তুর পাহাড়ে যাইয়্যা আল্লাহ পাকের লগে কতা বার্তা কইছে।

-মুছা নবীর কতা বার্তার কতাতো মোল্লাগো মুকে হুনছি। কিন্ত্তু একটা বিষয় মাতার মইধ্যে ঢুকতাছে না। হেইডা অইলোঃ মুছা নবী যহন আল্লাহর লগে দেহা করতে গেল, তহন তো ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ) এর কতা হুনি না। ফেরেস্তা জিব্রাইল কি খালি মহানবী (সাঃ) এর লগেই সাক্ষাত দিয়া কইলোঃ ইকরা বিসমি রাব্বিকাললাজি খালাক। আর অন্যান্য নবীগো লগে দেহা সাক্ষাৎ করে নাই?

-এইডা তো জানি না। মনা বললো।

-বাই তাইলে তাওরাত যে আল্লাহর বাণী মানে আল্লাহর কতা। বাণী মানেতো কতা। তাই না? তো হেই তাওরাত কার মাধ্যমে নাজিল অইলো? কে আনলো এই বাণী? কোরআনের বাণীতো আনছে হযরত জিব্রাইল (আঃ)। তাইলে তাওরাতও কি হযরত জিব্রাইল (আঃ) আনছে?

-কি কমুরে হারুইন্যা, তুইতো দেহি জ্ঞানীগো মতো কতা বার্তা শুরু কইর‌্যা দিচ্ছস। তর লগেতো বেশিক্ষণ বহন যাইবো না...তুইতো দেহি প্যাঁচে ফালাইয়্যা দিবি...তারপর উল্টা পাল্টা বইল্যা আমারে মানুষের আতে মাইর খাওয়াইবি...

-না বাই। হেইডা পারুম না। এই অঞ্চলে বেবাকতে আপনেরে চিনে। তাছাড়া মনের মইধ্যে প্রশ্নডা গুর গুর করছিল। হেরলিগ্যা কইয়্যা হালাইছি। বাই...ভুল অইলে মাফ কইর‌্যা দিয়েন।

-বেডা হোন। হগলতে সব কতা জানে না। দেহা গেছে কেউ জানে বেশি কেউ জানে কম। আবার যে যেইডা জানে অন্যজন হেইডা জানে না। এর লিগ্যাই কইছে জ্ঞানীরা সর্বদাই একসাথে থাকতে পছন্দ করে। তারা কারো লগে বিবাদ করে না। তারা পরস্পর ভাই ভাই। 

-হের লাইগ্যাইতো আপনে আমার বাই। আপনেরে আমি বেশি পছন্দ করি। আপনেরে পাইলে কাম-কাইজ হালাইয়্যা থুইয়্যা আপনের কাছে ছুইট্র্যা আহি।

-হেইড্যা আমি জানি। তয় তোর মইধ্যে জাননের আগ্রহডা বেশি দেইক্ক্যাই তোরে জানাই। নাইলে দেহস না অন্যডির লগে বেশি প্যাঁচাল পারি না। 

-জানিতো বাই। আপনে আমারে পছন্দ করেন। আমার আমারে দেকতে সইর‌্যা যাইতে চান।

-এই যে তুই একটা ফালতু কতা কইলি। তোরে দেকলে পলাই যের লিগ্যা হেইডা অইলো তুই কামের কতা থুইয়্যা আকামের কতা বেশি কস। আর প্যাঁচাস বেশি। কইতাছিলাম কি আর তুই হেই কতা থুইয়্যা একটা প্যাঁচ লাগাইয়্যা দিলি...

-বাই মনের মইদ্যে যে গাই মারে কি করমু কন? কতার মইদ্যে আইলে কি বাদ দেওন যায়?

-না বাদ দেওন যায় না। তয় আগে গুরুত্বপুর্ণ কতাগুলি হুইন্যা লওন উচিত। নাইলে পরে ভুইল্যা যাইতে পারি..

-আইচ্ছা বাদ দেন। আমরা আমাগো কতায় ফিইর‌্যা যাই।

মনা আবার শুরু করলো তার পুর্বের কথা। কিন্ত্তু সে কতা বলে আগের মতো আর ভাব পাচ্ছে না। কারণটা কি? কারণটা আর কিছুই নয়। কারণটা হলোঃ হারুন তাকে যে প্রশ্নগুলো করেছিল সেগুলো মনার মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করছে। সে না পারছে আগের কথায় ফিরে যেতে না পারছে তার কথা চালিয়ে নিতে। কিন্ত্তু মনার মন না বসলেও সে আবার বলা শুরু করলোঃ
(চলবে)

রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব ছয়

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনার কথা শুনে হারুন একটু নড়ে চড়ে বসলো। তারপর মনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলোঃ

-এই যে আপনে কইলেন সুরা ওয়াকেয়ার ৫৮ নং আয়াতে আফারায়াইতুম মা-তুমনুন অর্থঃ ভেবেছ কি তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে । হের পর ৫৯নং আয়াতে আআনতুম তাখলুকনাহ আম নাহনুল খা-লিকুন। অর্থঃ তা থেকে তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? এইডার কথার মানিডা ঠিক বুঝবার পারলাম না...আমাগো কইলো বীর্যপাত সমন্ধে চিন্তা করতে তারপর কইলো তুমরা সৃষ্টি কর না আমি?

-আরে তুমি যে বীর্যপাত করবা, কার উপর করবা? আগে হেইডা ভাবো? তুমি যদি চিন্তা কর আমি মাইয়্যাডারে ভালোবাসি। হেই ভালোবাসার নাম কইর‌্যা তার স্বতীত্ব হরণ করবা? যেই চিন্তা কইর‌্যা বীজটা ঢালবা, হেই বীজটা ঠিক হেয় হেইরকম কইর‌্যাই তৈয়ারী কইর‌্যা পাডাইবো।  নজরুলের কবিতায় পড়ো নাই...শ্রেফ পশুর ক্ষুদা লইয়্যা হেথা মিলে নর-নারী যতো, সেই কামনার সন্তান মোরা তবুও গর্ব কতো? পশুর ভাব লইয়্যা যুদি বীজ ঢালো তাইলে হেই বীজের যে ফসল অইবো হেইডা অইবো পশুর মতোন। যদিও দেকতে মানুষের মতন। হুন যেই নিয়ামত আল্লায় তুমারে দিছে, হেই নিয়ামতের পাই পাই হিসাব হেয় নিব। তুমি কি ভাবছো, তোমারে এম্মনি এম্মনিই ছাইড়্যা দিব?

আরে বাউল ফকির সাধুগো মুকে হুন না. হেরা কি কয়? হেরা হয়-খবরদার, স্বত্ত্বা খন্ডিত করবা না। স্বত্ত্বা খন্ডিত অইলে তুমি বিপদে পড়বা। হেরা কি করে? হেরা যে কয় স্বত্ত্বা খন্ডিত করবা না....যদি স্বত্ত্বা খন্ডিত না অয় তাইলে হেগো ঘরে পুলা-মাইয়্যা আইলো কেমতে? আবার দেহো অন্যদিকে সুফী-সাধকরা বছরের পর বছর নির্জন সাধনা কইর‌্যা কামেল অওনের পর বিয়া সাদী কইর‌্যা হেগো স্বত্ত্বা খন্ডিত কইর‌্যা মুল খনি থিক্ক্যা জগত বাসীর লিগ্যা যেই সন্তান দিয়া গেছে...হেরাও কালজয়ী পুরুষ অইয়্যা গেছে.....কারণ কি? কারণ আর কিছু না.....বীজের খবর লওন....একটা মানুষের বীজের মইধ্যে  কি থাকে? আগে হেইডা জানো মিয়া?

-কেমতে জানমু?

-কেমতে জানমু মানে? তোমার কি বীজ নাই?

-আছে তো? থাকলে হেইডারে কেমতে জানমু? তাইলে তো বীজ বাহির করন লাগবো....এ কথা বলে হারুন একটু লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলো। সেই হাসির সাথে তাল মিলিয়ে মনাও হেসে উঠলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললোঃ

-এই মানবদেহডা আল্লাহ পাকের লীলাভুমি। আল্লাহ অইলো যেই উপাদান দিয়া তুমি তৈরী অইছো। যেমুন আরবা আনাছের বা খামছা আনাছের। আব, আতশ, বাত, খাক, নুর। এই পঞ্চ উপাদানে তুমি সৃষ্ট। এইগুলারে কয় পাক পান্ঞ্জাতন। তোমার বীজও হেই পাক পান্ঞ্জাতন দিয়া সৃষ্টি অইছে। হেই বীজের মইধ্যে আছে উনিশটি উপাদান। সেগুলি অইলোঃ ১। হাইউন, ২। আলিমুন, ৩। কুদিরুন, ৪। মুরিদুন, ৫। সামিউন, ৬। বসিরুন, ৭। কলিমুন, ৮। দম,৯। কদম, ১০। অহম,১১।.ফহম,১২। আক্কেল, ১৩। এলেম, ১৪। হেলেম, ১৫। আগুন, ১৬। পানি,১৭। মাটি,১৮। বাতাস এবং ১৯। নুর। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মইধ্যেও উনিশটি অক্ষর আছে। কিন্ত্তু মুল অক্ষর আছে ১০টি। আর এই ১০টি অক্ষরই মোট ১৯ বার ব্যবহার করছে। যেমুন-১। আলিফ-ব্যবহার অইছে = ৩ বার, ২। মীম-ব্যবহার অইছে = ৩ বার, ৩। বড় হে-ব্যবহার অইছে = ২ বার, ৪। রা ব্যবহার অইছে = ২বার, ৫। লাম-ব্যবহার অইছে = ৪বার, ৬। নুন-ব্যবহার অইছে = ১বার, ৭। ছোট হে-ব্যবহার অইছে = ১বার ৮। বা-ব্যবহার অইছে = ১বার, ৯। সীন-ব্যবহার অইছে = ১বার ১০। ইয়া-ব্যবহার অইছে = ১বার। এই দশ অক্ষর অইতাছে বিসমিল্লাহর প্রাণ বা বীজ অক্ষর। ইলমে তাছাউফের ভাষায় এই বিসমিল্লাহরে কয় নুরে মুহাম্মদ। এই নুরে মুহাম্মদী থিক্ক্যাই ১। কালেব ২। রুহ ৩। ছের ৪।খফি ৫। আগফা ৬। নফস ৭। আব ৮। আতশ  ৯। বাদ এবং ১০। খাকের সৃষ্টি।
প্রথমে তুমি আছিলা তোমার বাবার মাথার মইধ্যে। খায়েশের কারণে তোমার মায়ের গর্ভে তোমারে পাডাইয়্যা দিছে। আর তুমি বন্দী অইয়্যা আইছো এই পৃথিবীতে। হের লাইগ্যাইতো শাহ্ পীর কয়ঃ পাঠিয়ে দিয়েছ তাইতো এসেছি, আমি কি কিছুই জানি? যে পাডাইছে হেরে কিন্ত্তু তুমি দেকতে পারবা না। হেয় আড়ালে থাইক্ক্যাই তোমারে পাডায়ইয়্যা দিছে। হেরে কয় খালেক। মানি সৃষ্টি কর্তা। তুমি তোমার বাবারে সৃষ্টিকর্তা কইতে পারো। কিন্ত্তু কোরআন কইতাছেঃ তুমি সৃষ্টি কর, না আমি? এই অামি হচ্ছে দৃষ্টির অগোচরে থাকা মহা অামি। হেয় রব রুপে সবার মইধ্যেই মুহিত অবস্থায় থাহে। বুঝবার পারছো মিয়া?
আবার দ্যাহো, এই বীজ যহন মাতৃজঠরে যায়, তহন হেরে লালন পালনের লিগা মায়ের বুকের মইধ্যে দুদ আহে। হেই দুদের মইধ্যেই আছে ৫+৭ = ১২ ডা উপাদান। ডাইনধারে ৫ টা। আর বাম ধারে ৭টা। ডাইন ধারের ৫টার নাম অইলো গিয়া ১। নুরী ২। জহুরী ৩। যব্বুরী ৪। সত্তুরি ৫। বে-খুদী। এই পাঁচটা উপাদান দিয়া তৈয়ার অয়ঃ ১। আগুন ২। পানি ৩। মাটি ৪। বাতাস ৫। আকাশ। আর বাম ধারের ৭টার নাম অইলোঃ ১। শনি ২। রবি-সুর্য ৩। সোম-চন্দ্র ৪। মঙ্গল ৫। বুধ-ক্ষুদ্র ৬। বৃহস্পতি-বৃহৎ ৭। শুক্র-বীর্য। এই সাতটি দিয়া যেইগুলা তৈয়ার অয় হেইগুলি অইলোঃ ১। হাইউন-জীবিত শক্তি ২। আলিমুন-জ্ঞান ৩। কুদিরুন শক্তি-কর্মশক্তি ৪। মুরিদুন-যৌনশক্তি ৫। সামিউন-শ্রবণশক্তি ৬। বসিরুন-দর্শন শক্তি ৭। কালিমুন-বাক শক্তি। এই পাঁচ আর সাত মিল্ল্যা অইলো বারোডা রস ভান্ডার যারে কয় কলেমা বা বাক্য। সৃষ্টির মইধ্যে এই কলেমাই সবথিক্ক্যা উত্তম। হেরলিগ্যা এইডারে কয় মুসসফী কলেমা। এই বারোডা থিক্ক্যা আবার আরো বারোডা জিনিসের পয়দা অইছে। হেইগুলা অইলোঃ১.ওয়াজেবুল অযুদ ২। অহেদাল অযুদ ৩। আরেফেল অযুদ ৪। মোমতেনল অযুদ ৫। মোমকেনাল অযুদ ৬। জীবিত শক্তি ৭। জ্ঞান শক্তি ৮। কর্ম শক্তি ৯। শ্রবণ শক্তি ১০। যৌন শক্তি ১১। দর্শন শক্তি ১২। বাক শক্তি।
(চলবে)

শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব পাঁচ

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

চিন্তাযুক্ত মনা পাগলা হারুণের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
- হারুন্যা তুইতো আমারে মহা চিন্তায় ফালাইয়্যা দিলি....

-ক্যান ভাই? কি হইছে....

-এই যে তুই বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম এইডা কোরআনের আয়াত কি-না জানতে চাইছোস...আমিতো লেহা পড়া বেশি করতে পারি নাই..কেমতে জানমু...বই পুস্তক যে পড়মু .....হেই টেক্যা পয়সাও আছিল না...স্কুলেও যাইতে পারি নাই...

-কি যে কন, ভাই? আমিওতো তেমুন লেহা পড়া হিগি নাই....তয় আমিও মসজিদের ইমাম সাবেরে জিগাইছিলাম হেয় যেই কতা কইছে হেডা আপনেরে হুনাইতে পারি?

-ক দেহি...কি কইছে...

- হেয় কইছেঃ
بسم الله الرحمن الرحيم কোরআনের আয়াতের অংশ। সুরা নমলের একটি আয়াত বা অংশ। সুরা ‘তাওবা’ ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রারম্ভে بسم الله الرحمن الرحيم লিখা বা পাঠ করা হয়। তাসমীয়াহ সুরা ফাতিহার অংশ, না অন্যান্য সকল সূরারই অংশ এতে ইমাম, মোজতাহিদ ও তাফসীরবিদগণের মতানৈক্য রয়েছে। ইমামে আ’জম আবু হানীফা (রাঃ) বলেছেন, بسم الله الرحمن الرحيم সুরা নমল ব্যতীত অন্য কোন সূরার অংশ নয়। তবে এটি এমন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা প্রতিটি সূরার প্রথমে লিখা এবং দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম হাকেম, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রাঃ) এর নীতিমালা অনুস্বরণে বিশুদ্ধ হাদীছ রুপে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম প্রথম দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করনে অসুবিধার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ অবতীর্ণ হয়। (মাযহারী)

ইবনে মরদুওয়াইর তাফসিরে রয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আমার ওপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হজরত সুলাইমান ছাড়া অন্য কোনো নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। হজরত জাবির রাঃ বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমণ্ডলী স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে ওঠে, জন্ত্তুগুলো কান লাগিয়ে শয়তানকে বিতাড়ন করে এবং বিশ্ব প্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেন, ‘যে জিনিসের ওপর আমার এ নাম নেয়া যাবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। (তাফসির ইবনে কাসির)

হেয় আরো কইছেঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, ‘জিবরাইল (আঃ) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল (আঃ) বললেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ইকরা বিসমি… অর্থাৎ আপনি পড়ু–ন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।’ (ত্বাবারি, তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩)

-হুম..ভালোইতো কইছে। কিন্ত্তু এইডার হাকীকত কি, হেইডা জানস?

-কেমতে জানমু ভাই? 

-আরে এইডার হাকীকত আরো গুরুত্বপুর্ণ। তুই দ্যাখ, একটা মানুষ, হের মইধ্যে যা কিছু আছে তার সবই আছে হেই মানুষের বীজের মইধ্যে। মানি অইলোঃ প্রত্যেকটা বীজই হাকীকতে পুর্ণাঙ্গ মানুষ তথা ইনসানে কামিল। হেয় অইতে পারে পুরুষ না অইলে মাইয়্যা মানুষ। হেই দিকে লক্ষ্য কইর‌্যা আল্লাহ পাক কইতাছেঃ

"অাফারায়াইতুম মা-তুমনুন। আআনতুম তাখলুকুনাহ আম নাহনুল খালিকুন। নাহনু ক্বাদ্দারনা বাইনাকুমুল মাওতা ওয়ামা নাহনু বিমাসবুক্বীন।"[সুরা ওয়াকেয়া আয়াত নং-৫৮-৬০]। অর্থঃ মানুষ আপন বীজের যে মৃত্যু ঘটায় অর্থাৎ যে বীর্যপাত করিয়া থাকে তার পরিণতি সে দেখে না? স্খলিত বীর্য হইতে মানুষ সৃষ্টি করা বা না করার দায়িত্ব তাহাদের। তাতনুন অর্থ তোমরা নিক্ষেপ/প্রবাহিত করছ। হের পর অন্য আয়াতে ঐ একই সুরার ৬৩নং আয়াতে কইছেঃ আফারায়াইতুম মা- তাহরুছুন? তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সর্ম্পকে (তোমরা) ভেবেছ কি? আআনতুম তাযরাউনাহ আম নাহনুয যা-রিউন। অর্থঃ তোমরাই কি তাকে অন্কুরিত কর না আমি করি? লাও নাশা-উ লাজ্বাআ'লনা-হু মান ফাজালতুম তাফাক্কাহুন। অর্থঃ অামি ইচ্ছা করলে একে চুর্ণ-বিচুর্ণ করতে পারি, তখন বুদ্ধিহীন হয়ে পড়বে।
(চলবে)

শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব চার

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

-আপনের কতা আমি কিছুই বুঝবার পারতাছি না। কি কইতাছেন? একবার কইতাছেন এই উনিশ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আবার কইতাছেন সুরা আলাকের কতা? কেমুন জানি প্যাচ খাইয়্যা যাইতাছে গা...

-আরে ব্যাডা, যখন সুরা আলাক নাযিল অয় তখন প্রথম পাঁচটা আয়াতই নাযিল অয়। হেই সুময় আর কোন আয়াত নাযিল অয় নাই।

- না অইলে এই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কখন নাযিল অইলো? এইডা কি কুরঅানের অায়াত না?

হারুনের কথা শুনে মনা কেমন যেন ভ্যাবা চেগা খেয়ে যায়? আসলেই তো এই যে আমরা কোরআন পাঠের সময় তাউজ তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইয়াতের রাজিম বলি এবং এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলি...এটা কখন কোন্ সময় নাযিল হলো? কারণ, আল্লাহ পাক বলেছেন, এই সেই কোরআন যার মধ্যে কোন সন্দেহ নাই যারা মুত্তাকি তাদের জন্য। অর্থাৎ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের জন্য এই কোরআনের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ তৈরী করা হয় নাই তথা রাখা হয় নাই। তাছাড়া যখন সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয় তখন সেই আয়াতের উপর অনেকগুলো ঘটনা প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করে। যেমন কথিত আছেঃ যখন মহানবী হেরাগুহায় ধ্যান মগ্ন অবস্থায় ছিলেন তখন তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান, কে যেন তাকে তার নাম ধরে ডাকছে? তিনি সেই আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যান এবং তিনি হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) - এর কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করেন এবং বলেন আমাকে আবৃত কর। হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) - এর চাচাতো ভাই খ্রীষ্টান পাদ্রী ওরাকা ইবনে নওফেল এর কাছে এই ঘটনা ব্যক্ত করলে তিনি তাঁকে বলেনঃ যখন আপনার নাম ধরে ডাকা হবে তখন আপনি বলবেনঃ লাব্বাইক...তারপর শুনেন সে কি বলে? নওফেল এর কথা শুনে মুহাম্মদ যখন হেরা পর্বতের গুহায় আবারো ধ্যানের স্থানে যান তখন তিনি শুনতে পান, তাকে তার নাম ধরে ডাকছে , ইয়া মুহাম্মদ, ইয়া মুহাম্মদ...সেই আহব্বান শুনে তিনি তখন লাব্বাইক বলে সাড়া দিলেন। তখন দেখলেন-এক সুন্দর যুবক এসে তাকে বলছেনঃ পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্তবিন্দু হতে।

মুহাম্মদ (সাঃ) যখন এই ঘটনাটা নওফেল এর কাছে বর্ণনা করেন এবং আয়াতগুলো শুনান, তখন তিনি বলে উঠেন কুদ্দুসুন কুদ্দুসুন। অর্থাৎ পবিত্র আত্মা পবিত্র আত্মা। যাকে আমরা ফেরেস্তা জিব্রাইল বলে জানি। এই ঘটনাটা স্যার সৈয়দ আমির আলী কর্তৃক রচিত দ্যা স্পিরিট অফ ইসলাম নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোখাখাররুল ইসলাম কর্তৃক রচিত ইসলামের ইতিহাসগত বিভ্রান্তির রহস্য নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে।এই ঘটনাটি অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখা যায়-মুহাম্মদকে প্রথমেই ছোট করা হয়েছে বকলম বলে। অর্থাৎ তিনি লেখা পড়া কিছুই জানতেন না। যিনি লেখা পড়া জানেন না, তিনি কিভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করেছেন? কিভাবে তিনি হিলফুল ফুযুল  নামক ঐতিহাসিক ঘটনার সুত্রপাত করালেন? মুসলমানরা বলবেন-আল্লাহর কুদরতে....আরে গাধার দল...সবকিছুই যদি আল্লাহর কুদরতেই হয়, তাহলে সবকিছুই কুদরতেই হোক...এই কুদরত নামক বিষয়টি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটা বিরাট প্রশ্নবোধক চিন্হ এঁকে দিয়েছে। তারা ধরতেই পারছে না যে এ ঘটনা দ্বারা মুহাম্মদ (সাঃ) কতো ছোট করা হয়েছে? তাকে যেতে হয়েছে খ্রীষ্টান পাদ্রীর নিকট। তার কাছে কে আসলো, সেটা সে জানলো না। জানলো-খ্রীষ্টান পাদ্রী। যে খ্রীষ্টান পাদ্রী হেরা গুহা নামক কোন সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন কি-না, তাও মুসলমানরা জানলো না। অথচ সেই ঘটনা পড়ে মুমসলমানরা বলে উঠছেঃ সুবহানাল্লাহ...উল্লেখ্য যে এই পবিত্র আত্মা তথা কুদ্দুসুন এসেছিল। সেই ঘটনাটা বর্ণনা করার সময় কিন্ত্তু হযরত মরিয়ম (আঃ)-কে কিন্ত্তু কোন খ্রীষ্টান পাদ্রীর নিকট যেতে হয়নি। কেননা হযরত মরিয়ম (অাঃ) হচ্ছেন খ্রীষ্টানদের মা মেরী। এবং তার পুত্র হযরত ঈসা (আঃ) হচ্ছেন তাদের মান্যবর নবী। কিন্ত্তু মুসলমানদের নবীকে যেতে হয়েছে খ্রীস্টানদের নিকট। কি আজব তাদের কারসাজি যারা এই ঘটনাটা সাজিয়েছেন? কারা করেছেন? সেটা আবার অন্য ইতিহাস...মনা কোন কুল কিনারা করতে পারছে না...এতক্ষণ সে বিজ্ঞের মতো কথা বলছিল। কিন্ত্তু হারুণের প্রশ্ন শুনে সে সত্যিই মহা চিন্তায় পড়ে গেল।

(চলবে)

রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব তিন

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগুতে লাগলো। আর পেছেনে তাকিয়ে দেখলো হারুন তার পেছনে পেছনে আসছে। কিন্ত্তু এই মুহুর্তে সে চাচ্ছে না কেউ তাকে সঙ্গ দিক। সে অন্য একটা গলির দিকে দ্রুত ঢুকে পড়লো। কিন্ত্তু হারুন নাছোড়বান্দা। সে দৌড়ে মনার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর বললোঃ

-কি ব্যাপার ভাই? আপনে আমারে হালাই থুইয়্যা অাইয়্যা পড়লেন? আর আমি আপনের পিছনে পিছনে দৌড়াইতে দৌড়াইতে শেষ....

-তরে কি কইছি, তুই আমার লগে আয়? আমার লগে অাহিস না। অাইলে বিপদে পড়বি...আমার কথা শোন্ তুই আমারে ছাইড়্যা যাগা...তোর ভালা অইবো?

-আরে রাহেন ভালা-বুড়া....আগে কন আমারে কেন আপনে বেদটা জানাইতে চাইতাছেন না....

-আরে বেশি বেদ জানন ভাল না....জানলে বিপদ আছে...

-খালি বিপদের কথা কয়...হুনেন বিপদের ভয় দেহাইয়্যা আমারে লাব নাই...আমি ডরাই না...

তারা হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের মুল রাস্তা ছেড়ে একটা গলির ভেতর ঢুকলো। সেই গলির প্রথম দোকানটা মাসুমের। এ অন্ঞ্চলে মাসুমের চায়ের দোকানের সুখ্যাতি আছে। গরুর দুধের চা। বেশ ভালো বানায়। দুর দুরান্ত হতে অনেকেই এখানে আসে চা খেতে। দোকানটিতে বসার কোন স্থান রাখা হয় নাই। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চা খায়। মনা সেই দোকানের ধারের কাছে গিয়ে সবুজকে দেখে বললোঃ

-সবুজ ভাই, দুইডা ফাস কেলাস চা দেন....

সবুজ দুজনের জন্য দুই কাপ বানিয়ে দেয়। চায়ে চুমুক দিয়ে মনা বেশ একটা পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে

-...আহা..চা ডা দারুণ হইছে। তোর দোকানের চা না খাইলে মনে অয় না যে চা খাইছি...

মনার কথা শুনে সবুজ লজ্জা পায়। বিনয়ের সুরে বলেঃ

-মনা ভাই, আমরার লাইগ্যা দোয়া করুনচে...যেন ভালা কইর‌্যা চা আফনারারে বানাইয়্যা খাওইতাম পারি।

-আরে বেডা চাতো ভালাই বানাস। এর থন আর কি ভালা বানাইতে পারবি...

হারুন দেখলো মনা সবুজের সাথে কথা বলে কাল ক্ষেপন করছে। সে চাচ্ছে হারুন চলে যাক। মনাকে একা করে দিক। কিন্ত্তু তার ভাব ভঙ্গীতো ভালো ঠেকছে না...মনে হচ্ছে সে মুল কথা না শুনে যাবে না...দেখাই যাক না কি হয়...

হারুন চা খেয়ে সিগারেট কিনলো। অার একটা মেছ কিনলো। তারপর মনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-এই দিকটায় বহেন। এইডা নিরিবিলি আছে। কেউ ডিটাব করবো না।

এই কথা বলে হারুন ম্যাচ আর সিগারেটের প্যাকেটটা মনার দিকে বাড়িয়ে দেয়। তারপর মনা একটা সিগারেট ধরিয়ে হারুণের পাশে আয়েশ করে গা এলিয়ে দিয়ে বসে। তারপর সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলি আকাশের দিকে ছেড়ে বলেঃ

-বুঝলি রে পাগলা - মানুষের বীজের মইধ্যেই আছে আসল তত্ত্ব। হেই তত্ত্বটা বুঝবার পারলে মানুষ যে কতো উর্ধ্বস্তরে উইট্যা যাইতে পারতো গা...হেইডা মানুষ জানে না...দেখ সুরা মুদাচ্ছির আয়াত নং ৩০। হেইহানে আল্লাহ পাক কইছেঃ "এরপর উনিশ"। এই উনিশ কইথ্ক্কিা আইলো? প্রথমে যহন সুরা আলাক নাজিল হয় তহন আয়াতের সংখ্যা আছিল ৫। তারপর দীর্ঘদিন ধইর‌্যা আর কোন আয়াত আহে নাই....হেই সুময় মক্কার কাফেররা মহানবীরে দারুণ অপমান আর অপদস্ত করছিল। আল্লায় কইলোঃ "অামি শীঘ্রই আপনার উপর ভারী কালাম নাজিল করুম।" আয়াত নং-৫ সুরা নাম্বার ৭৩। এই উনিশ আর কিছুই না। এইডা অইলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এইহানে আয়াতের সংখ্যা উনিশ। আবার দ্যাখ, কোরআনে মোট সুরার সংখ্যা ১১৪টা। এইডা ১৯ দিয়া ভাগ দে। দেখবি মিল্ল্যা যাইবো গা। ১১৪/১৯=১৬

প্রথমে যেই সুরা নাজিল করা অয়, হেইডা অইলো সুরা আলাকের পাঁচটি আয়াত। যার মইদ্যে উনিশটা শব্দ আছে। এই উনিশটি শব্দের মইদ্যে ৭৬টি অক্ষর আছে। ৭৬ শব্দটিও ১৯ দিয়া ভাগ দিলে মিল্ল্যা যায় গা..(৭৬/১৯=৪)..যুদিও এই সুরাডা নাযিল অইছিল প্রথমে। এহন আছে ৯৬নম্বর স্থানে। উল্টা দিক দিয়া যদি গনন যায় তাইলে দেকবি এই সুরা অইতাছে ১৯ নাম্বারে। সুরা মুদাচ্ছিরে ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ পাক কইছেঃ "এর উপর রইছে উনিশ"। ঘটনা এইডা না। সুরা নাস যেই সুরাডা সবার শেষ সুরা, হেই সুরার শব্দ সংখ্যাও ১৯ । তার মাইনে কি? এই উনিশের মইদ্যে কি আছে?

-বাই আমারও জাননের ইচ্ছা আছে। এই উনিশের মইধ্যে কি আছে?

-কি আছে? এহনো বুঝবার পারস নাই?

-না...

-গাধা..তাইলে আরো হোন, প্রথম ওহী সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াতের শব্দসংখ্যার মতনই কোরআনের আরো বহু পরিসংখ্যান আছে। যেমন ধর
কোরআন যে আনছে হেরে কয় রসুল। রসুল শব্দটা কোরআনে আইছে - ৫১৩ বার।
যার বাণী রাসুল আনছে হেরে কয় রব। রব শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৫২ বার।
কোরআনের কেন্দ্রীয় বাণী অইতাছে ইবাদত। ইবাদত শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৯ বার।
কেন্দ্রীয় বাণীর আরেকটা ভাষা অইলো আবদ। এই শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৫২ বার।
আবদের কাম যে করবো হেরে কয় আবীদ। কোরআনে আবিদ শব্দটা আইছে - ১৫২ বার।
এই সবই ১৯ দিয়া ভাগ দে। মিল্ল্যা যাইবো গা।
(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এস. আই জহির কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেনঃ

- এতটুকুন বাচ্চাটাকে থানায় নিয়ে লাভ নেই। তারচেয়ে এক কাজ করা যায়, যদি ঐ মেয়েটা এই নাবালকটিকে দত্তক নিতে চায় তাহলে থানা থেকে তার নামে একটি সাধারণ ডায়েরী করে ওর হেফাজতে দেয়া যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য কতিপয় লোকের স্বাক্ষর লাগবে...

স্বাক্ষ্য দেয়া লাগতে পারে শুনে অনেকেই কেটে পড়তে শুরু করেছে। কিন্ত্তু কেটে পড়তে পারছে না জমির সাহেব। তাকে অবশ্যই স্বাক্ষ্য দিতে হবে। যদি স্বাক্ষ্য না দেয়, তাহলে সে ঝামেলায় পড়তে পারে...কাজেই সে রাজী হয়ে গেল। এস আই জহির বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে...কি যেন মনে মনে বলল। তার পর সে গাড়ীতে উঠতে আদেশ করলো অন্যান্যদের। সবাই গাড়ীতে উঠলে ফোস করে একরাশ ধোয়া তুলে গাড়ীটি ছুটে চললো থানার দিকে। 

লোকজনের জটলার ভেতর একটা মেয়ের দিকে বার বার চোখ আটকে যাচ্ছিল মনার। সে বার বার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে...দেখছে মেয়েটি তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। ওড়নার আঁচল দিয়ে থেকে থেকে চোখ মুছছে। কেউ যেন দেখতে না পায়, সে জন্য সে একটা বড় ঘোমটা টেনে দিয়েছে। মনাকে ঐ মেয়েটার দিকে বার বার তাকাতে দেখে হারুন ব্যাপারী বেশ অবাক হলো। মনা কখনো কোন মেয়ের দিকে বার বার তাকাচ্ছে, সেটা বিরল। তাছাড়া মনার প্রেমে পড়ার বয়সও নেই...সে দেখতেও সুশ্রী নয়। কোন মেয়ে কোন পাগলের প্রেমে পড়েছে..সেটা বিরল...তাহলে ঐ মেয়েটার দিকে বার বার দৃষ্টি দেয়ার কারণ কি? হারুণ ব্যাপারী বেশ কৌতুহলী হলো। সে দেখতে চাইলো মনা আসলে কি করে?
লোকজন চলে যেতেই জায়গাটা বেশ ফাঁকা হয়ে গেল। তছি পাগলী বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে থানায় গেছে। সাথে জমির সাহেব। সাংবাদিক ভাইরাও চলে গেছে...যে মেয়েটি বার বার চোখ মুছছিল, সেই মেয়েটি মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে..অার মনা সেই মেয়েটির যাওয়ার দৃশ্য দেখে বললোঃ

-হায়রে মায়ের মন...দেইখ্যা গেলা তোমার বাচ্চাটার কি অবস্থা অয়? তোমারে কেউ না দেকলেও আমি ঠিকই বুইঝ্যা হালাছি...সাংবাদিকরাও তোমার খবর পায় নাই..পুলিশও চিনলো না...আমি কিন্ত্তু ধইর‌্যা ফালাইছি.....হা...হা....

মনাকে ওভাবে হাসতে দেখে হারুন জিগ্যেস করে

-কেমতে বুঝলেন?

-দেহেন না...কেমুন কইর‌্যা ঘোমটা দিছিলো আর হেই ঘোমটার ফাঁক দিয়া চোক মুছছিল...

-হেইডা দেইখ্যাই ধইর‌্যা হালাইছেন?

-ব্যাডা হোন...মায়ের মন হইল তারই সন্তানের মতো। হেই সন্তান যেমুন কইর‌্যা তারে জানান দেয়, তার নাড়ীর ধন যারে পেটে ধরছে তারও একটা টান হেয় অনুভব করবোই...হেই টানেই মাইয়্যাডা ছুট্রা আইছে...কিন্ত্তু সমাজের ভয়ে কাছে আসতে সাহস পায় নাই....

-হায়রে প্রেম...দেহের টানে মিলনের লিগ্যা যেই বাচ্চাটারে জন্ম দিল....হেই সন্তানডারে ঐ ময়লার মইধ্যে হালাইতে একটুও বিবেকে বাধলো না....

প্রেমের কথা শুনে এবং বিবেকের কথা শুনে মনা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল। মনা চিন্তায় মশগুল হলো। মনা মাথা নিচু করে রইলো। মনাকে হটাৎ চুপ করে থাকতে দেখে হারুন বললোঃ

-কি অইলো? হটাৎ কইর‌্যা থুম মাইর‌্যা গেলেন গ্যা

-ভাবতাছি...

-কি ভাবতাছেন?

-কওন যাইবো না...

এ কথা বলে মনা হন হন করে হাঁটতে লাগলো। মনাকে হাটতে দেখে হারুনও মনার পেছনে হাঁটতে লাগলো।
(চলবে)

বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতাঃ প্রথম পর্ব

মনার মন ভালো নেই। আজকে সে যে দৃশ্যটি দেখেছে সেটিকে সে কোন মতেই মানতে পারছে না। বার বার সে একই কথার পুনরাবৃত্তি করছেঃ 

-মানুষের অইলোটা কি? আরে, এ্যাগো আল্লাহয় কেমতে আশরাফুল মাখলুকাত কইর‌্যা দুন্নিইয়্যায় পাডাইলো? কেমতে এগো আশরাফুল মাখলুকাত কওন যায়? আরে এ্যাগো থিক্ক্যাতো রাস্তার কুত্তাও ভালো...

মনাকে বির বির করতে দেখে হারুন ব্যাপারী জিগ্যেস করলোঃ

-কি অইছে? কি কইত্যাছো এ ডি...

-ঐ দ্যাখ। একটা ডাষ্টবিনের দিকে ইশারা করে দেখায় মনা। তারপর বলে

......দ্যাখছোস মানুষের একটা বাচ্চা ডাষ্টবিনের মইধ্যে পইড়্যা আছে...মইর‌্যা গেছে...মনে হয়... মানুষের একটা বাচ্চা.... হেইডা পইর‌্যা আছে ডাষ্টবিনের মইধ্যে......মনে অইলো রাস্তার মইধ্যে যেমুন কুত্তা বিলাই বাচ্চা জন্ম দেয়... হেই রকম...কি কমুরে বাই...মা-বাবার মইধ্যে কোন দয়া মায়া আল্লায় রাখে নাই...এইডা কেমুন বাবা-মা?

মনার মুখে এ কথা শুনে হারুন ব্যাপারী বুঝতে পারলো ব্যাপারটা কি? হারুন ব্যাপারী অনুমান করতে পারছে হযতো কোন কপোত-কপোতীর যুগলবন্দীর অবৈধ ফসল। যার মাসুল দিতে হলো ঐ মাসুম বাচ্চাটাকে। হারুন দেখলো - সেখানে একটা ছোট খাটো জটলার সৃষ্টি হয়েছে। লোক জন নানান কথা বলাবলি করছে...হারুন কৌতুহলী হয়ে সে জায়গায় গেল এবং উঁকি দিয়ে দেখলো - কাঁথা দিয়ে মোড়ানো একটা সদ্যপ্রসুত বাচ্চাকে কে বা কারা যেন ডাষ্টবিনে ফেলে রেখেছে। বাচ্চাটিকে মনে হয় রাতের আঁধারের কোন এক সময় ফেলে রেখে গেছে। বাচ্চাটির কান্নার শব্দ শুনে ময়লা কুড়াতে আসা ছোট ছোট বাচ্চারা চিৎকার চেঁচামেঁচি করে উঠে। সেই চিৎকার শুনেই আশে পাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তারা দেখে পুলিশে খবর দেয়। আর মনা হয়তো সেই সময় ঐ ঘটনাটা দেখেছে। হারুন আর মনা দুজনেই পাশে দাঁড়িয়ে আবারো সেই বাচ্চাটিকে দেখছে...বাচ্চাটির গায়ের রং ফর্সা...স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো নয়। রোগা-পাতলা...ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গেছে... মনে হয়..পানি বা দুধ কোনটাই দেয়া হয়নি...বাচ্চাটাকে কেউ ধরতে সাহস পাচ্ছে না....সবাই পুলিশের জন্য অপেক্ষা করছে...কিছু মহিলারা মুখে কাপড় টেনে ঘোমটা পড়ে দেখতে এসেছে...তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছে..আহারে...বাচ্চাটা কতো সুন্দর..কার বাচ্চা...কেডা এমুন কাম করলো....অর মা-বাপ...কে জানে...মানুষ আর মানুষ নাই...বেবাকতে পশু অইয়্যা গেছে গা....

বাচ্চার কান্না শুনে কেউ ধরতে সাহস না পেলেও তছি পাগলী আর সহ্য করতে পারলো না। সে ছুটে এসে বাচ্চাটাকে টেনে কোলে তুলে নিল। তার পর কাউকে কিছু বুঝে উঠতে না দিয়েই নিজের বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করলো। তছি নিজের বুকে তুলে  কাপড় দিয়ে ঢেকে নিজের স্তনের একটা বোঁটা বাচ্চাটার মুখের মধ্যে গুঁজে দিল। বাচ্চাটা সেই বোঁটাটা মুখে পুড়ে টানার চেষ্টা করছে দেখে তছি খুশিতে আটখানা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলোঃ

-বাঁইচ্যা আছে...দুত খাইতাছে...

আশে পাশের মুরব্বী স্থানীয়রা লজ্জা পেলেও তছির এই মমত্ববোধ দেখে খুশি হলো। আর মহিলারা তাদের ঘোমটাটা আরো দীর্ঘায়িত করলো। ছোট ছোট বাচ্চারা তছিকে ঘিরে রেখেছে...ব্যাপারটা লক্ষ্য করে মনা হাসলো। ঠিক সেই সময় একটা পুলিশের গাড়ি আসলো। সাংবাদিকরা বাচ্চাটার ছবি তুলল। রিপোর্ট লেখার জন্য সাংবাদিকরা যখন তাদের কাগজ কলম বের করছে তখন পুলিশের এস.আই জহির এসে জিগ্যেস করলোঃ

-দেখি বাচ্চাটা....

তছি পাগলী বাচ্চাটাকে কাপড় সরিয়ে দেখালো।

-কার বাচ্চা...

-কেমতে কমু...তছি বললো।

-কার বাচ্চা...সেটা না জেনে ধরছিস ক্যান...

-আরে না ধরলেতো মইর‌্যা যাইতো গা...

-হুম...তুই কি প্রথম দেখেছিস...

-জ্বে না..অামি খবর পাইয়্যা আছি। অাইয়্যা দেহি বাচ্চাটা এইহানে এই খ্যাতা দিয়া জরাইন্ন্যা আছিল। আমি হেইডা সরাইয়্যা বুকে তুইল্ল্যা নিছি..তারপর দুত দিছি...

-ভালো করেছিস...আচ্ছা থানায় কে ফোন করছিল...

-অামি। জমির সাহেব পাশে থেকে বললেন।

-আচ্ছা...কি হয়েছে..ঘটনাটা খুলে বলুনতো...

-আমরা ফজরের নামাজ শেষ করে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। সেই সময় ঐ বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেঁচিতে শুনি একটা বাচ্চা ডাষ্টবিনের মধ্যে পড়ে আছে। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো মারা গেছে..তাই আপনাদের ইনফর্ম করা...

-হুম।

সাংবাদিকরা পুলিশের জেরার ঘটনা সহ সবকিছুই লিপিবদ্ধ করছিল। সাংবাদিক রহমান সাহেব...রিপোর্ট লেখার ফাঁকে জমির সাহেবকে জিগ্যেস করলেনঃ

-আচ্ছা....বাচ্চাটাকে কখন ফালানো হয় সেটা কি অনুমান করে বলতে পারবেন...

-না ভাই। তা পারবো না। মনে হয় মাঝ রাতের কোন এক সময় কেউ ফেলে রেখে গেছে...বুঝতেইতো পারছেন..সমাজে লোক লজ্জার ভয়ে হয়তো রাতের আঁধারকেই কাজে লাগিয়েছে...

-এখন এই বাচ্চাটাকে কি করা যায়? জানতে চাইলেন রহমান সাহেব এস,আই জহিরের কাছে...

(চলবে)