পৃষ্ঠাসমূহ

আল্লামা ইকবালের কবিতা














  
কবি ইকবালের শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া (অভিযোগ ও অভিযোগের উত্তর)
শিকওয়া বা অভিযোগ

ক্ষতিই কেন সইব বল ? লাভের আশা রাখব না ?
অতীত নিয়েই থাকব বসে- ভবিষ্যত কি ভাবব না ?
চুপটি করে বোবার মতন শুনব কি গান বুলবুলির
ফুল কি আমি ? ফুলের মতোই রইব নীরব নম্রশির ?
কন্ঠে আমার অগ্নিবাণী-সেই সাহসেই আজকে ভাই
খোদার নামে করব নালিশ ! মুখে আমার পড়ুক ছাই !

তোমার সভায় কথা বলার নাইকো যাদের যোগ্যতাই-
পাচ্ছে তারাও ধন-দৌলত ! বেশ তো ! তাতেও দু:খ নাই।
কিন্তু একি ! কাফিররা পায় এই ধারাতেই ‘হুর-কসুর,’
মুসলমানের বেলায় শুধুই ওয়াদা হুরের-স্বর্গপুর !
আফসোস আর আগের মতোন নওকো তুমি মেহেরবান,
ব্যাপারটা কি ? এখন কেন দাও না মোদের তেমন দান ?

মুসলমানদের ভাগ্যে এমন দৈন্য কেন নামল হায় !
অসীম তোমার শক্তি-তুমি করতে পার মন যা চায়।
মরুর বুকে পার তুমি ফুল ফুটাতে বুদবুদের
মরিচীকাও হতে পারে স্নিগ্ধ পানি পথিকদের।
সইছি মোরা জিল্লাতি আর দুশমনদের টিটকারি
তোমার তরে জান দিয়েছি-বদলা দিলে এই তারি ?


জওয়াব-ই-শিকওয়া বা অভিযোগের উত্তর

হঠাত আসিল কালাম-ই আযিম: তোমার এ গানে কাঁদায় প্রাণ,
হৃদয় হতে উছলিয়া-পড়া তোমার প্রেমের এই সে গান।
আকাশেরও দিল কেঁদে ওঠে আজ তোমার করুণ কান্নাতে
বুঝিয়াছি : এই গান আসিয়াছে কত-না গভীর বেদনাতে।
‘শিকওয়া’ এ নয় -প্রশস্তি মোর ! এমন বাচনভঙ্গি তার,
বান্দা এবং খোদার মাঝারে বাঁধিয়াছে সেতু চমতকার !

কি বলিলে তুমি ? মুসলমানের ‘হুর’ সে শুধুই ওয়াদা সার ?
কান্না যতই হোক না করুণ, থাকা চাই কিছু যুক্তি তার।
শাশ্বত মোর আইন-কানুন, শাশ্বত মোর নীতি-বিধান;
কাফির যখন মুসলিম হয়-সেও পাবে ‘হুর’ এক সমান !
তোমাদের মাঝে কারা চায় বল সত্যিকারের ‘হুর-কসুর’ ?
মুসাই তো নাই !- ‘তুর’ পাহাড়ে তো তেমনি করিয়া জ্বলিছে নূর’!

কওমের যারা ওয়ায়েজ, তারা ধার ধারে নাকো সুচিন্তার
বিদ্যুত সম তাদের কথায় হয়না এখন আছর আর ।
রোমস্ রয়েছে আযানের বটে, আযানের রূহ বেলাল নাই
ফালসুফা আছে প্রাণহীন পড়ে, আল-গাজালীরে কোথায় পায় !
মসজিদ আজ মর্সিয়া গায়-নামাযী নাহিকো তার ভিতর ;
হেজাযিরা ছিল যেমন-তেমন কোথায় মিলিবে ধরার পর !


 আল্লামা ইকবালের একটি কবিতা

যার খোঁজে আমি আকাশ পাতাল এতকাল চষে ফিরেছি ,
সে যে বসে আছে আমারই ভেতর আমি কি কখনো ভেবেছি

এই বোকামির খবর যদিবা রটে যায় পৃথিবীতে–
তাইতো কাবার চৌকাঠে পড়ে লজ্জায় মুখ ঢেকেছি ।

কখনো কি তুমি নিজের চেহারা দেখেছো, মজনু, নিজে ?
তাহলে বলতে – লায়লার মতো আমিও নেশায় মজেছি ।

মিলনের রাত পলকে পলকে ফুরায় এ পৃথিবীতে
বিরহের রাত ক্রমেই দীর্ঘ – দীর্ঘই হয় দেখেছি ।

তুমি নৌকার মাঝি কি আমাকে বাঁচাতে পারবে – ভাবো
ডুবে যে যাবেই বাঁচাবে কে তাকে ? ভরা গাঙে আমি ডুবেছি ।

যে-বাতি নিভেছে জ্বালাতে কি তাকে পারতো না এই প্রেম ?
প্রেম তুমি বলো, আমি তো কেবলি অপ্রেম তার দেখেছি ।

যদি চাও দয়া – ছিঁড়ে ফ্যালো জামা , তবে হও সন্নাসি
রাজবাড়িতেও নেই সে রত্ন যাকে আমি এত খুঁজেছি ।

- অনুবাদক: সৈয়দ শামসুল হক