চক্র,
গ্রন্থি
ও বৃত্তিঃমানবদেহ পাঞ্চভৌতিক সত্তা- ক্ষিতি, অপ,
তেজ, মরুৎ,ব্যোম এই
পঞ্চ তত্ত্বে তৈরী। এই মানব
দেহকে অন্নময় কোষও বলা
হয়।জীবদেহ একটা জৈবিক যন্ত্র।
আমাদের মন এই জৈবিক
যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করে। এই
জৈবিক যন্ত্রে রয়েছে স্নায়ুকোষ-স্নায়ুতন্তু,
চক্র, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি,দশ ইন্দ্রিয়। আবার
খাদ্য, জল, আলো, বায়ু
ইত্যাদি দ্বারা এই শরীর
পুষ্ট হয়। প্রাণশক্তি এই
শরীররূপী জৈবিক যন্ত্রটাকে সচল
রাখে।
আমাদের
মন হ’ল কতগুলি
বৃত্তির সমাহার। মানব মনে ৫০টি
মূল বৃত্তি রয়েছে। প্রতিটি
মানুষের মধ্যে রয়েছে ষড়রিপু
আর অষ্টপাশ। কাম, ক্রোধ, লোভ,
মোহ, মদ, মাৎসর্য্য এই
ছয়টিকে বলে রিপু বা
শত্রু। আর ঘৃণা, শঙ্কা,
ভয়, লজ্জা, জুগুপ্সা, কুল,
শীল ও মান এই
আটটিকে বলে অষ্টপাশ বা
বন্ধন রজ্জু। মানুষের মন
এই সব বৃত্তির প্রভাবে
কাজ করে।
স্নায়ুকোষ
ও স্নায়ুতন্তুঃ জীবদেহে রয়েছে অসংখ্য স্নায়ুকোষ
ও স্নায়ুতন্তু। মন এই স্নায়ুকোষ-স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে কাজ করে।এই স্নায়ুগুলির
মূল নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্ক।মস্তিষ্ক এগুলি নিয়ন্ত্রণ করে
কতকগুলি স্নায়ুকেন্দ্রের মাধ্যমে। মূলাধার চক্র, স্বাধিষ্ঠান চক্র,
মনিপুর চক্র, অনাহত চক্র
ও বিশুদ্ধ চক্র এইগুলি এক
একটা স্নায়ুকেন্দ্র।
অন্তঃক্ষরা
গ্রন্থিও
বৃত্তিঃ
আমাদের শরীরে রয়েছে কতকগুলি
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। যেমন- পিনিয়াল, পিটুইটারী,
থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, থাইমাস,
এড্রিনাল, গোনাড্স ইত্যাদি।
এই গ্রন্থিগুলি থেকে এক ধরণের
রস ক্ষরিত হয় তাকে
বলে হর্মোন। এই হর্মোন ক্ষরণের
ওপর মানুষের বিভিন্ন বৃত্তি তথা তার
আচার ব্যবহার নির্ভর করে। কোন
একটা গ্রন্থি যদি ত্রুটিপূর্ণ বা
দুর্বল হয় তবে সেই
গ্রন্থির সঙ্গে সম্পর্কিত বৃত্তিরও
কম বা বেশি প্রাবল্য
দেখা যায়। তাই আমরা
দেখতে পাই কারো মধ্যে
কাম বৃত্তি প্রবল, কারো
মধ্যে লোভ বা ক্রোধ
বৃত্তি প্রবল। আবার বৃত্তির
প্রভাবে দুর্বল স্নায়ুকোষ, স্নায়ুতন্তু
দারুন ভাবে স্পন্দিত হয়,
কম্পিত হয়। ফলে সারা
শরীর থর থর করে
কাঁপতে থাকে। শরীরের বিশেষ
বিশেষ অংশে রক্ত সঞ্চালন
বেড়ে যায়, হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া
ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চিন্তাশক্তি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন
মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে
বৃত্তির দাসে পরিণত হয়।
মনের
এই বৃত্তিগুলির অভিপ্রকাশ ঘটে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে।
আবার ইন্দ্রিয় আমাদের ঘুমন্ত বা
সুপ্ত বৃত্তিকে জাগ্রত করে দেয়।
যেমন কেউ যখন লোভনীয়
মিষ্টি দেখে(চক্ষু ইন্দ্রিয়ের
দ্বারা) তখন তার মনে
মিষ্টি খাবার লোভ জাগে।
লোভ একটা বৃত্তি যা
মিষ্টি দেখার পূর্বে সুপ্ত
ছিল কিন্তু মিষ্টি দেখার
সাথে সাথে জেগে উঠলো।
তাই বৃত্তিকে জাগ্রত করার ব্যাপারে
ইন্দ্রিয় উত্তেজক হিসেবে কাজ করে।
সব কর্মই কোন না
কোন বৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়।
জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যখন কোন অনুভূতি
আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায় তখন মন
সেই অনুভূতি গ্রহণ করে আর
সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক সেই
অনুভূতির দ্বারা সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রকে
উত্তেজিত করে দেয়।
আমাদের
শরীরের সর্বত্র জালের মত ছড়িয়ে
রয়েছে অসংখ্য স্নায়ুতন্তু। এই
স্নায়ুতন্তুর মধ্যে যেগুলি শরীরের
বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে
অনুভূতি বহন করে মস্তিষ্কে
নিয়ে আসে তাদের বলে
সংজ্ঞা নাড়ী(Sensory nerves)
আর যে স্নায়ুতন্তুগুলি মনের
ইচ্ছাকে কাজে রূপ দেবার
জন্যে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ে পৌঁছে দেয় তাদের
বলে আজ্ঞা নাড়ী(motors nerves)।
এই স্নায়ুগুলির মূল নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্ক।
মস্তিষ্ক এগুলি নিয়ন্ত্রণ করে
কতকগুলি প্রধান স্নায়ুকেন্দ্রের মাধ্যমে।
মুলাধার চক্র, স্বাধিষ্ঠান চক্র,
মনিপুর চক্র, অনাহত চক্র
ও বিশুদ্ধ চক্র এই গুলি
এক একটা স্নায়ুকেন্দ্র।
এখন
মস্তিষ্ক থেকে কোন অনুভূতি
এই স্নায়ুকেন্দ্রে এলে সঙ্গে সঙ্গে
তা’ চক্রস্থিত তৎসম্পর্কিত বৃত্তিকে জাগিয়ে দেয়। আর
উত্তেজিত স্নায়বিক স্পন্দন নালীবিহীন গ্রন্থিকেও(Endocrine gland)সক্রিয় করে তোলে।
ফলে নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হর্মোন
রক্তে মিশে শরীরের সমস্ত
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা ইচ্ছাশক্তিবা আবেগকে
প্রভাবিত করে। মন তখন
জাগ্রত বৃত্তির দ্বারা আবেগ তাড়িত
হয়ে ছুটে চলে আকাঙ্ক্ষিত
বস্তুর দিকে। এখন এই
গ্রন্থিরস ক্ষরণ যদি সন্তুলিত
মাত্রায় হয় তা’হলে
বৃত্তির প্রভাব মনের নিয়ন্ত্রণে
থাকে। কিন্তু গ্রন্থিরস ক্ষরণ
যদি সন্তুলিত মাত্রায় না হয় তা’
হলে মন বৃত্তির ওপর
তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর
তখনই মানুষ হিতাহিত জ্ঞান
শূণ্য হয়ে ছুটে চলে
বৃত্তির তাড়নায়। যদিও সে জানে
যে এ কাজের পরিণাম
ভাল নয় তবুও তা
সে করে। ভাল হতে
চাইলেও সে ভাল হতে
পারে না। সৎ পথে
চলতে চাইলেও সে চলতে
পারে না।
আমরা
যে খাদ্য খাই তার
সার ভাগ রসে পরিণত
হয়। আর সেই রস
রক্তে, রক্ত মাংসে, মাংস
মেদে, মেদ অস্তিতে, অস্তি
মজ্জায় ও মজ্জা শুক্রে(Lymph)
পরিণত হয়। এই লিম্ফের
কাজ হ’ল দেহের
রক্তকে পরিষ্কার রাখা আর দেহের
লাবন্য ও ঔজ্জ্বল্য অটুট
রাখা। এই লিম্ফ উপরে
উঠে মস্তিষ্ককে পুষ্ট ও শক্তিশালী
করে। তাই বুদ্ধিজীবিদের জন্যে
পর্যাপ্ত পরিমানে লিম্ফ দরকার। এই
লিম্ফ বিভিন্ন নালীবিহীন গ্রন্থিতে গিয়ে হর্মোনে পরিণত
হয়। আমাদের শরীরে রয়েছে
অনেকগুলি নালীবিহীন গ্রন্থি- যেমন, পিনিয়াল, পিটুইটারী,
থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, থাইমাস,
এড্রিনাল, প্যানক্রিয়াস, গোনাড্স ইত্যাদি।
এই
গ্রন্থিগুলি থেকে বিভিন্ন ধরণের
হর্মোন নিঃসৃত হয়। এই
হর্মোন রস রক্তে মিশে
আমাদের শরীর ও মনকে
দারুন ভাবে প্রভাবিত করে।
প্রতিটি গ্রন্থি আবার বিশেষ চক্রের
সঙ্গে সম্পর্কিত। এই গ্রন্থিগুলির চারপাশে
আবার কতকগুলি উপগ্রন্থি রয়েছে। এই গ্রন্থি
ও উপগ্রন্থিগুলি থেকে নিঃসৃত রস
তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত চক্রে
যে বৃত্তিগুলি রয়েছে সেগুলিকে উত্তেজিত
করে। তাই এই হর্মোন
ক্ষরণের ওপরে মানুষের বিভিন্ন
আচার ব্যবহার নির্ভর করে।
মানবদেহের
বিভিন্ন গ্রন্থি ও উপগ্রন্থিগুলি যে
চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত সেই
চক্র দ্বারাই তারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
শিশুর জন্মের সাথেই তার
দেহে এই সমস্ত গ্রন্থি
ও চক্র থাকে। কিন্তু
সেগুলি সব সঙ্গে সঙ্গে
কাজ করতে শুরু করে
না। মাতৃজঠরে শিশুর কোন গ্রন্থিই
কাজ করে না। সেখানে
মায়ের গ্রন্থির মাধ্যমেই তার কাজ চলে।
শিশুর জন্মের পরে কিছু
গ্রন্থি কাজ করতে শুরু
করে। এই গ্রন্থিগুলির বিকাশের
সাথে সাথে তার শরীরে
হর্মোনের সংরচনায়ও পরিবর্তন আসে। হর্মোনের সংরচনায়
পরিবর্তন তার স্নায়ুকোষেও পরিবর্তন
আনে। বিভিন্ন প্রকার হর্মোনের মাধ্যমে
স্নায়ুকোষগুলি মানুষের এই জৈবদেহ পরিকাঠামোকে
নানান্ ভাবে উত্তেজিত করে।
এই স্নায়ুকোষ, গ্রন্থিরস ইত্যাদি তথা আমাদের মানসিক
ক্রমবিকাশের সাথে সাথে শারীরিক
সংরচনাগত পরিবর্তনও স্বাভাবিক। আর কোন একটা
গ্রন্থি থেকে গ্রন্থিরসের স্বাভাবিক
বা অস্বাভাবিক ক্ষরণের ওপরে আমাদের মনের
স্থিরতা বা চাঞ্চল্য নির্ভর
করে।
[তথ্য সুত্র সংগ্রহ : দি নিউজ]
[তথ্য সুত্র সংগ্রহ : দি নিউজ]