পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শনঃ - পর্ব-৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)


মানব দেহতত্ত্ব বুঝতে হলে আগে বিশ্বতত্ত্ব বা জগৎতত্ত্ব জানা প্রয়োজন। যেভাবে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে ঠিক সেই ভাবেই মানুষের দেহ সৃষ্টি হয়েছে। সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যে ভাবে আল্লাহ্‌ তালা যা যা সৃষ্টি করেছেন, মানব দেহের মধ্যেও অনুরূপ ভাবে সমস্ত কিছু দিয়ে দিয়েছেন। বিশ্ব জগতে আকাশ, বাতাস, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ, উল্কা পিণ্ড, তারা, আগুন, পানি, মাটি, বাতাস, পাহাড়-পর্বত সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু আছে - একটা মানব দেহও পরিপূর্ণভাবে একই রুপে সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিশ্ব জগতকে বলা হয় বড় জগত ( বিগ কমস বা আলমে কবির ) আর মানবদেহকে বলা হয় ছোট জগত ( লিটিল কমস বা আলমে ছগিরা ) । শুধু মানুষ কেন জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ, জড়-অজড় সবাই এই একই পদ্ধতিতে সৃষ্ট। আল্লাহ্‌ তালা কোরআনে ঘোষণা দেন “আমি বিজ্ঞানময়”।

বিজ্ঞান জগত উৎপত্তির বিশেষ স্বরূপ কি? সে বিষয়ে মানুষ আজও ওয়াকিবহাল নয়। এই নিয়ে আজকাল দুটি অভিমত খুবই জোরদার- যেমন ‘বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব’ ও ‘Steady State’ তত্ত্ব। 

বিগ ব্যাঙ (Big Bang) তত্ত্বের মূল কথাঃ দেশে (Space) কোথাও একত্রে ঘনীভূত হয়ে থাকা বস্তুকণা ছিল (Masses)। সম্ভবত সেই বস্তুকণাতে অতিরিক্ত সঙ্কোচনের ফলে কেন্দ্রে উত্তাপের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ঘনীভূত বস্তুকণার মধ্যে কম্প্রেশনের ফলে উত্তাপ সৃষ্টি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণের ফলে কেন্দ্র থেকে বস্তুকণাগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে গোলাকার ভাবে। এইভাবেই গোলাকার জগতের সৃষ্টি হয়েছে। একটা কেন্দ্রে সেই বিস্ফোরণের ফলে বিস্ফোরণ জনিত বেগের ফলে যে জগতের সৃষ্টি হয়েছে এর স্বপক্ষে প্রমান মেলে যদি জগতের গতি-প্রকৃতি লক্ষ করা যায়। কারণ বর্তমানে প্রমানিত হয়েছে যে, কোন এক বিশেষ কেন্দ্র থেকে বস্তু জগত ক্রমশ দুরে সরে যাচ্ছে। সেই সরে যাওয়া গতিও প্রচণ্ড।  প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার মাইল। বস্তু জগত এই ক্রমশ ব্যপ্তির জন্য কেন্দ্র এবং পরস্পর থেকে যে ভাবে সরে যাচ্ছে তা একটি সুন্দর উদাহরন দিয়ে বোঝানর চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন একটা ব্লাডার।  ব্লাডারের গায়ে অনেক গুলি ফুটকি দিয়া তাকে ফুলালে যেমন ফুটকি গুলি কেন্দ্র ও পরস্পরের কাছ থেকে দুরে সরে যায়, জগতও তেমনি কেন্দ্র থেকে ক্রমশ দুরে সরে যাচ্ছে। ফুটকিগুলি যেমন পরস্পর পরস্পরের থেকে সরে যায়, তেমনি জগতের গ্রহ নক্ষত্রও সরে যাচ্ছে। চিত্রটি নিম্নরূপ......




  
চলবে.........

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শনঃ - পর্ব ২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)


আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করে বলেন “মানুষ আমার রহস্য”। এই মানুষকে নিয়ে যত আমার লীলা। এই লীলাতেই আমি বাস করি। আমি সৃষ্টি করি মানুষকে বারাম খানায় বসে (Uterus অথবা মাতৃ গর্ভকে বারাম খানা বলা হয়) এই মাতৃগর্ভ অথবা বারামখানা পবিত্র স্থান।
আমাদের পিতা-মাতার আনন্দময়ী প্রেম-ভালবাসার যত্নের ফসল আমরা মানব, শুক্রকিট ডিম্বাণুর প্রক্রিয়ায় আমরা সৃষ্টি। যখন আমরা মাতৃগর্ভে রক্ত পিণ্ড হয়ে আসি, তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে একটা নূরের ফুঁৎকার দেন এবং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন জ্যোতির্ময় ফুঁৎকার দিয়ে বারাম খানায় বসে আমাদের লালন পালন করতে শুরু করেন। তখন আমরা মাংস পিণ্ড রূপ ধারন করি এবং পরিপূর্ণ একটা মানুষ অবয়বে সৃষ্টিতে আসি, অনেক আদর করে উনি আমাদের অবয়বকে উনার শিল্পমনা দিয়ে যত্ন করে আমদের অবয়বের হাতের যায়গায় হাত, চোখের যায়গায় চোখ, সমস্ত ইন্দ্রিয় গুলিকে উনি সুন্দর অবস্তায় অবস্থান করে দেন। আর দেহের ভিতর যকৃত, প্লীহা, হৃদপিণ্ড - এইভাবে সমস্ত দেহ যন্ত্র সাজিয়ে দেন। তখন আমি পরিপূর্ণভাবে একটি মানব আকৃতিতে গঠনপ্রাপ্ত হই। যখন উনি উনার নূরের ফুঁৎকারটা দেন তখন থেকে শুরু হয় আমাদের দেহের গঠন প্রণালী। এই ফুঁৎকার মাথার তালুর থেকে এসে ঘাড়ের পিছন থেকে একটি রগ নালীর ভিতর দিয়ে মলদ্বার এবং জলদ্বার এর মাঝখানে একটা গর্ত আছে, সেই গর্তে এসে জ্যোতির্ময় নূরটি অবস্থান নেয়। আর এই গর্তের নামই “কুণ্ডলিনী”


উনি আমাদের দেহের জীবাত্মা হয়ে আছেন। (ফ্যানের সুইচ যেমন অন করলে পাখা ঘোরা শুরু করে, তেমনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যখন ঐ নূরের ফুঁৎকারটা মানব দেহে প্রবেশ করান তখন থেকেই আমাদের দেহের রক্ত-সঞ্চলন, কোষ সঞ্চলন, হৃদস্পন্দন শুরু হয়। এইভাবে আল্লাহ্‌ পালনকর্তা হয়ে লালন পালন শুরু করেন।


সৃষ্টিতে এসে মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে ততই কুণ্ডলিনীর গর্তের ঐ নূরের ফুঁৎকারটা পাথর আকার ধারন করতে থাকে। এই ফুঁৎকারটি পাথর আকার থেকে কোমল আকারে ধারন করাতে আমাদের কি করতে হবে???? ধ্যান ধ্যান ধ্যান............ 


চলবে.........

শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শনঃ - পর্ব ১


--------------------------------
প্রথম পর্বঃ ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শন
--------------------------------
সৃষ্টিকর্তা গুপ্ত ও অব্যক্ত ছিলেন । তখন উনার কোন প্রশংসা ছিল না, তার প্রশংসার প্রকাশ তখনও আরম্ভ হয় নাই। তিনি “নূর” অর্থাৎ “জ্যোতির্ময়
নূরে মোহাম্মাদী” রূপে যখন আত্মপ্রকাশ করলেন, তখন উহাই হইল তাহার সকল প্রশংসার আধার। সমগ্র সৃষ্টি “নূরে মোহাম্মাদী” হতে আগত হয়েছে এবং হইতেছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসার মুলাধার হইলেন “নূরে মোহাম্মাদী”। “নূরে মোহাম্মাদী” কোন একটি ব্যক্তি নয়। উহা অসংখ্য জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্বের মূলাধার। সে ব্যক্তিত্বের মৌলিক অর্থাৎ সাধারন নাম হইল “মোহাম্মাদ” অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রশংসিত।
এই সৃষ্টি জগতে এমন একজন মুলাধারের আগমন যিনি প্রদীপ্ত প্রদীপ, যিনি সর্ব সাধকদের শিরোমণি, যিনি আল্লাহ্‌জাহিরী রূপ “হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ)”, এই ধরণীর বুকে খুদায়ী ফরমান নিয়ে আগমন করেছেন। আমরা মানুষ উনারি অনুসরণ করবো সত্য দ্রষ্টা হয়ে - এটা কি সারা জাহানের কর্তব্য নয়??? উনি যে হেরা গুহার সন্ধান দিয়ে গেছেন, তাহা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। আমরা সকলেই তাহা ভুলে গিয়াছি। হেরা গুহা কোন পর্বত গুহা নয়। গুহা প্রতিটি মানব দেহের মধ্যেই বিদ্যমান। হেরা গুহার আরেকটি নাম হলো জ্ঞান কেন্দ্র। অর্থাৎ হেরা গুহাকে জ্ঞান কেন্দ্র বলা হয়। যিনি গুহায় ধ্যানস্থ অবস্থায় প্রবেশ করিবেন বা নিমজ্জিত হইতে পারিবেন, তিনিই আল্লাহ্‌সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহ্‌পরিচয় এবং নিজেকে চেনা, নিজেকে জানা, নিজেকে বুঝতে পারিবেন। এই ধ্যান “হুযুর’পাক (সাঃ)” সহ প্রতিটি নবী পয়গম্বর, অলী-আউলিয়া, মুনি ঋষি, সাধকজন প্রেরিত তথ্য প্রকাশের পূর্বে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যে মহা জ্যোতির সন্ধান লাভ করিয়া ছিলেন, সেই মহা জ্যোতির প্রাপ্তি ব্যতীত মানব জীবন পরিপূর্ণ ভাবে সার্থকতা লাভ করিতে পারে না। এই হেরা গুহার প্রাপ্তব্য বিষয় হইল জ্যোতির্ময় কোরআন, পূরান, বেদ-গীতা, বাইবেল ইত্যাদি।

চলবে.....

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

এ কেমন মুসলিম আমরা?

শুক্রবার দিন সাধারণতঃ জহির সাহেবের তেমন কোন কাজ থাকে না। থাকলেও তিনি তেমন কোন কাজে আগ্রহ দেখান না। তিনি ভাবেনঃ সপ্তাহের বাকী দিনগুলোতে তো কাজেই ব্যস্ত থাকি। তাই এই দিনটি তিনি রেষ্টে থাকবেন। ঘুমাবেন। বেলা করে উঠে গোসল করে জুম্মাার নামায পড়তে যাবেন। নামায শেষ হলে সোজা বাড়ীতে চলে আসবেন। খাওয়া দাওয়া করবেন। এরপর আরামসে বসে টিভি দেখবেন। নয়তো কোন বই অথবা পত্রিকা পড়বেন। বরাবর এটাই ছিল জহির সাহেবের রুটিন। তিনি এই নিয়মেই চলে আসছেন। কিন্তু কথায় বলে-সব দিন সমান যায় না। 

আজ তেমনি হলো। তার এক নিকট আত্মীয় হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে করাতে দেরী হয়ে গেল। এ দিকে জুম্মাার নামাযের সময়ও ঘনিয়ে এল। তিনি কোন রকমে রোগীকে হাসপাতালে রেখে দ্রুত মসজিদের দিকে ছুটলেন। আর যেতে যেতে যেতে তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে রোগীর পাশে বসে থাকতে বলে দ্রুত চলে গেলেন।

জহির সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন একটা দশ বাজে। তার মানে এখনো বিশ মিনিটের মতো সময় আছে। তিনি আর দেরী করলেন না। দ্রুত কাছাকাছি কোন মসজিদের দিকে ছুটলেন। মসজিদটা কাছেই ছিল। হাসপাতালের সাথেই লাগোয়া মসজিদ। জহির সাহেব মসজিদের ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখলেনঃ 
মুসল্লিরা কেউ কেউ সুন্নাত নামায আদায় করছেন। কেউ বা বসে আছেন। কেউ বা হাঁটু মুড়ে বসেছে। কেউ বা ঝিঁমুনি দিয়ে পড়ে আবার সোজা হয়ে বসছেন। কিন্তু জহির সাহেব মসজিদের ভিতরে না ঢুকে আগে ওযুখানায় যেতে চাইলেন। কারণ তাকে আগে ওজু করতে হবে। তারও আগে তাকে হাম্মাামখানায় (প্রস্র্রাব-পায়খানার স্থান, গোসলের স্থান) যেতে হবে। তিনি আশে পাশে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করছেন - কোন কিছু নজরে পড়ে কি-না?
তিনি দেখলেনঃ 
মসজিদের বারান্দার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা গিয়েছে, সেদিকটায় একটা সাইনবোর্ডে তীর চিন্হ দিয়ে লেখাঃ "অযু খানা এইদিকে।"

জহির সাহেব আর দেরি করলেন না। তিনি দ্রুত সেদিকটায় চলে গেলেন। তারপর দেখলেনঃ 
মসজিদটিতে ওযু করার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর পাশেই রয়েছে প্রস্র্রাবখানা। তিনি সেদিকটায় ঢুকে ভিমরি খাবারমতো অবস্থায় পড়ে গেলেন। দেখলেনঃ 
মুসল্লিরা যারা প্রসাব করেছেন, তাদের অনেকেই একহাতে পুংলিঙ্গটিকে চেপে ধরে নাচানাচি করছেন। একবার বাম পা কাত করে ডানদিকে নিচ্ছেন আরেকবার ডান পা কাত করে বাম দিকে নিচ্ছেন। তিনি একজনকে জিগ্যস করলেনঃ
ভাই সাহেব, এমনটা করার কারণ কি? ...এভাবে নাচছেন কেন?

-কি কন, ভাই? নাচি করতাছি কই? 

-এই যে প্রস্র্রাব করার পর উঠে দাঁড়াচ্ছেন তারপর এইভাবে নাচানাচি করছেন....

-আরে ভাই, এইভাবে না করলেতো প্রস্র্রাব ক্লিয়ার অয় না...তাছাড়া প্রস্র্রাব ক্লিয়ার না অইলে তো কিছু প্রস্র্রাবতো আটকাইয়া থাকে। এইভাবে করলে হেইটা ক্লিয়ার অইয়্যা টিস্যু পেপারে পইড়্যা যায়। তারপর ভালো কইর‌্যা মুইছ্যা হালাইলেই তো অইয়্যা গেল। হের পর ওযু করলেই অইলো।

-কিন্তু আমরা তো আগে দেখেছি প্রস্র্রাব করার পর ভালো করে পানি ঢাললে পানির সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে প্রস্র্রাবের আটকে থাকা অংশটি একটু চাপ দিলেই বেরিয়ে আসে। এরপর পানি ঢাললেই চলে। ক্ষেত্রবিশেষে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেললেই হলো। লাফালাফির তো প্রয়োজন পড়ে না....

-আরে ভাই, আগের দিন বাগে খায়। হেই দিনের কথা ভুইল্যা যান...এহন আধুনিক যুগ...

-তাই আধুনিক যুগে আপনারা এভাবে লিংগ ধরে লাফালাফি করবেন? আপনারা কি বুঝতে পারছেন, যারা আপনাদের এ বিদ্যা শেখাচ্ছে তারা ইসলামটাকে একটা বাজে বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন...তাছাড়া এটা দেখতেও দৃষ্টি কটু লাগে....এটাকে তারা একটা জঘন্য বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন...

-ভাই আপনার বক্তৃতা থামান। আপনার কথা আপনার কাছেই রাখেন...আপনে এই সবের কি বুঝেন?

জহির সাহেব অগ্যতা আর কি করবেন? তিনি চুপ করে গেলেন। ঐদিকে সানি আজানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দ্রুত ওযুখানায় গেলেন। ওযু করলেন। তারপর একটা জায়গা দেখে ফরয নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। আর মনে মনে ভাবলেনঃ
আমরা কি দিন দিন রাসুলের সুন্নাত ভুলে যাচ্ছি...দিনকে দিন মসজিদ পাকা হচ্ছে আর আমাদের ঈমান-আমান কাঁচা হচ্ছে...সেজদার স্থানে জুতো রাখা হয়েছে...নামাযের মধ্যে বলা হয়েছেঃ তুমি যখন নামায পড়তে দাঁড়াবে তখন খেয়াল করবে তুমি আল্লাহ পাককে দেখছো আর যদি তা না পারো, তাহলে মনে মনে খেয়াল করবে আল্লাহ পাক তোমাকে দেখছেন...যেস্থানে সেজদা দিয়েছো সেদিকটায় খেয়াল করবে....এখন সেদিকটায় খেয়াল করলে তো জুতো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়ার কথা না....তাহলে যে নামায পড়ছি তা-কি আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হবে...তার রেজা-মন্দি সন্তুষ্টি বিধান করা কি হচ্ছে....

তার চিন্তা-ধারায় ছেদ পড়লো যখন সবাই নামাযে কাতার বন্দী হবার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। জহির সাহেবও দাঁড়ালেন....তারপর নামায শেষ করে হাসপাতালের পথ ধরলেন।


মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

হিন্দুধর্মমত অবলম্বনে আত্মতত্ত্ব বিজ্ঞানঃ শ্রী কৃষ্ণই হচ্ছেন ভগবান

চিন্ময় আত্মা, স্থুল জড় দেহ নয়। আর জীবাত্মা হলো পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভগবান হচ্ছেঃ পূর্ণ আর আত্মা তার অংশ অর্থাৎ অপুর্ণ। তাই জীবাত্মার নিত্য ধর্ম হচ্ছেঃ ভগবানের সেবা করা। কেননা অংশের কাজ হলোঃ পুর্ণের সেবা করা। মনের ধর্ম হলোঃ সংকল্প ও বিকল্প এবং দেহের ধর্ম হলোঃ ভোগ আর ত্যাগ। দেহের ছয়টি পরিবর্তন হলোঃ  জন্ম-বৃদ্ধি -স্হিতি-সন্তান/সন্ততি সৃষ্টি-ক্ষয়-মৃত্যু। জীবের স্বরূপ হলোঃ  কৃষ্ণের 'নিত্যদাস' - শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত। আত্মার আকার চুলের অগ্রভাগের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। তা এতই ক্ষুদ্র যে এই জড় চক্ষু  দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করা যায় না। এ ছাড়া আত্মা জড় পদার্থ নয়। তাই জড়ীয় ইন্দ্রিয় ও যন্ত্র দিয়ে তা দেখা অসম্ভব। এই জড় জগৎটি ভগবানের বহিরঙ্গা ত্রিগুনাত্মিকা মায়া শক্তির প্রকাশ। ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার-এই আটটি উপাদান নিয়ে এই জড় জগৎ তৈরী হয়েছে। পঞ্চ মহাভূত হচ্ছেঃ - ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও বোম। ইন্দ্রিয় পাঁচটি বিষয় হলোঃ - রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শ। পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় হচ্ছেঃ- নাক, জিভ, চোখ, কান ও ত্বক। পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়  হলোঃ -বাক, পানি, পাদ, উপস্থ ও বায়ূ। জীবের স্হূল শরীরটি ভূমি, জল,বায়ূ, অগ্নি ও আকাশ দিয়ে তৈরী। এবং সূক্ষ শরীরটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার নিয়ে গঠিত। জীবের প্রকৃত সমস্যা হলো - জন্ম জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু। 

আত্মা শরীরের হৃদ্দেশে অবস্থান করে। দেহে আত্মার অবস্থানের  লক্ষন হচ্ছে দেহে পরিব্যাপ্ত চেতনা। আত্মা দেহ হতে নিষ্ণ্ক্রান্ত হলে দেহ একটি অচেতন, পচনশীল, জড়পীণ্ডে পরিনত হয়। এই জড় জগৎ এ ৮৪ লক্ষ প্রকারের জীব যোনি রয়েছে। এদের মধ্যে কীটপতঙ্গ ১১ লক্ষ, জলচর ৯ লক্ষ, উদ্ভিদ ২০ লক্ষ, পশু ৩০ লক্ষ, পাখি ১০ লক্ষ এবং মানুষের মধ্যে রয়েছে ৪লক্ষ প্রজাতি। জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্হান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন হতে বার্ধক্য অবস্হায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থকে। কিন্তু  দেহস্থ আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। ঠিক যেমন পুরানো কাপড় পরিত্যাগকরে নতূন কাপড় পরিধান করা হয়,ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযোগ্য জরাজীর্ণ শরীর ত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুযায়ী নতুন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নতুন শরীর ধারনকে বলা হয় পুনঃজন্ম । জীবের চরম লক্ষ্য হচ্ছেঃ – পরমেশ্বর ভগবানের সংগে তার হারানো সম্পকর্কে পুনঃস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া,  কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা। সর্ব আনন্দের উৎস হচ্ছেন সচ্চিদানন্দময়ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। জীব যে নিত্য আনন্দ লাভের আশা করছে, তার জন্য তাকে পরম পুরুষ ভগবানর সাথে তার নিত্য, অবিচ্ছেদ্য, প্রেমময় সম্পর্কের পুনঃস্থাপন  করতে হবে। যা অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু ক্ষনস্থায়ী কিন্তু অন্তিমে দুঃখজনক তাকে প্রেয় বলে। আর যা লাভ করা পরিশ্রম সাপেক্ষ, কিন্তু চিরস্থায়ী ও সুখজনক তাকে শ্রেয় বলে। জীবনের প্রকৃত শ্রেয় হচ্ছে নিজের স্বরূপ প্রাপ্ত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দে অহৈতুকী ভক্তিভাবে তার সেবায় নিযুক্ত হওয়া। জীবের দুঃখের মূল কারন কৃষ্ণবিস্মৃতি। জীব যখন কৃষ্ণের সংগে তার নিত্য সম্পর্কের কথা ভূলে যায়, তখন তার নিত্য স্বরূপ চিন্ময় আত্মা, এ বিষয়ে বিস্মৃতির ফলে এবং এই দেহকে আত্মবুদ্ধি করার ফলে এ জগতে জীব প্রতিনিয়ত দুঃখে জর্জরিত হয় । 

পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছে ভগবান, যার থেকে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। যিনি সমস্ত বিশ্ববহ্মান্ডের পালন করেন এবং সংহারের কারণ হন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান। যাহার মধ্যে সমগ্র ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী,জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে, তাকে ভগবান বলা হয়। ভগবান সাকার। তার রূপ রয়েছে। তবে তা জড় নয়, অপ্রাকৃত। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ, তিনি নিত্য, জ্ঞান ও আনন্দময় মূর্তিবিশিষ্ট। যোগী চার প্রকার – কর্মযোগী, জ্ঞানযোগী, ধ্যানযোগী ও ভক্তিযোগী। 

জ্ঞানযোগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন।  অষ্টাঙ্গ যোগী বা ধ্যানযোগী ধ্যানের মাধ্যমে পরমাত্মার উপাসনা করে থাকেন। ভক্তিযোগ অবলম্বনকারী ভগবানের ভক্তরাই ভগবানের উপাসনা করে। ভগবানের অস্তিত্বের প্রমাণ লাভ  করবার জন্য আমাদের শাস্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। শাস্ত্র থেকে আমরা  বুঝতে পারব যে ভগবান আছেন। ভগবান হচ্ছেন তিনি যিনি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের  সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের কারণ। সৃষ্টির পেছনে কারও না কারও হাত আছেন।  যিনি বুদ্ধি প্রদান করেছেন, এই সমস্ত উপাদান প্রদান করেছেন এবং যিনি এই  বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান। ভগবানের সাথে  জীবের
সম্পর্ক  হচ্ছে নিত্যপ্রভু ও  নিত্যদাস । জড়জগৎ ভগবানের অনুৎকৃষ্টা বহিরঙ্গা শক্তি থেকে উৎপন্ন ।

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-ইবলিশের সাথে আদমের দ্বন্দ্ব সংঘাত - পঞ্চম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সুরা বাকারার ৩১নং আয়াতঃ
----------------------------
ওয়া (এবং) আললামা (শিক্ষা দেওয়া) আদামা (আদমকে) আসমাঅা (নামগুলি, নামসমুহ) কুললাহা (ইহার সব কিছু)
অর্থঃ এবং আদমকে নামসমুহ শিক্ষা দিলেন, ইহার সব কিছু। 
সুমমা (তারপর) আরাদাহুম (তাহাদেরকে উত্খাপন/ উপস্থাপন/প্রস্তাবন/আনয়ন/পেশ/উপস্থিত করিলেন) আলা (উপরে) মালাইকাতি (ফেরেস্তাদের)। 
অর্থঃ তারপর ফেরেস্তাদের উপর উপস্থাপন করিলেন। ফাকাআলা (সুতরাং বলিলেন) আমবিউন (অামাকে জানা্ও) বিআসমাই (নামসমুহের সহিত) হাউলায়ে (এইসবের)।
অর্থঃ সুতরাং বলিলেন, আমাকে জানাও এইসবের নামসমুহ 
ইন (যদি) কুনতুম (তোমরা হও) সাদিকিন (সত্যবাদী)।
অর্থঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

[ And He taught Adam all the names (of everything). then He showed to the angels and said "Tell Me the names of these if you are truthful" verse of Quran. Surah 2. Al- Baqarah. Ayat No-31. ]

সুরা বাকারার ৩২ নং অায়াত
 ---------------------------
কালু (তাহারা [ফেরেস্তারা] বলিল) সুবহানাকা (তুমি ভাসমান, পবিত্র) লা (না) ইলমা (জ্ঞান) লানা (অামাদের) ইললা (ব্যতীত, একমাত্র, ছাড়া) মা (যাহা) অাললামতানা (অামাদেরকে শিক্ষাইয়াছ) ইননাকা (নিশ্চ য়ই তুমি) আনতা (তুমি) আলিমুল (জ্ঞানী) হাকিম (বিজ্ঞানী)। 
অর্থঃ তাহারা (ফেরেস্তারা) বলিল, তুমি ভাসমান (পবিত্র), আমাদের জ্ঞান নাই একমাত্র যাহা তুমি আমাদেরকে শিক্ষাইয়াছ,
নিশ্চ য়ই তুমি, তুমিই জ্ঞানী, বিজ্ঞানী।

[ They (angels) said: "Glory be to You. we have no knowledge except what you have taught us. Verily it is You, the All-knower,the All-wise." verse of Quran. Surah 2. Al- Baqarah. Ayat No-32.]

করিম সাহেব উপরোক্ত ৩১ এবং ৩২নং আয়াত দুটি ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করলেন। তিনি দেখতে পেলেন, ফেরেস্তাদের সাথে অাল্লাহ্ পাকের কথোপকথনে ফেরেস্তারা আল্লাহ পাকের কাছে প্রশ্ন করেন এবং আল্লাহ পাক সে সব প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। এবং পরীক্ষা করার ছলে তিনি আদমকে কিছু জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন। তারপর তিনি ফেরেস্তাদের কাছে জানতে চান, বিষয় সমুহের নাম। কিন্ত্তু ফেরেস্তারা সে সবের নাম বলতে পারলো না। ফেরেস্তারা বললোঃ আপনি আমাদের যতটুকু জ্ঞান দিয়েছেন, আমরা ততটুকুই জানি। এর বেশি আমরা জানি না। অাদমকে জিগ্যাসা করায় অাদম সমস্ত কিছুর নাম বলে দিল। 

এথানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়। সেটা হলোঃ আদমের শিক্ষক হলেন আল্লাহ্ পাক। যেহেতু তিনিই আদমকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার - সেটা হলোঃ ফেরেস্তাদেরও শিক্ষক হচ্ছেন আল্লাহপাক। কারণ, তাদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী হলোঃ মা আললামতানা ইন্নাকা আনতা অালিমুল হাকিম। এই দু'টোর মধ্যে  তুলনামুলক বিচারে আদমই শ্রেষ্ঠ। কারণ,

তফসীরে ইবনে কাসির - এ বর্ণিত আছেঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন হযরত আদম (অাঃ) এর সৃষ্টিকার্য আরম্ভ হয় তখন ফেরেস্তাগণ বলেছিলেনঃ " আমাদের অপেক্ষা বেশি মর্যদা সম্পন্ন ও বিদ্বান মাখলুক সৃষ্ট হওয়া অসম্ভব।" এ কারণে তাদের উপর অাল্লাহর পরীক্ষা এসে যায় এবং কোন সৃষ্ট জীবই পরীক্ষা হতে নিস্তার পায়নি। যমীন ও আসমানের উপরেও পরীক্ষা এসেছিল এবং ওরা অবনত মস্তকে ও সন্ত্তুষ্ট চিত্তে অাল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেছিল।  ফেরেস্তাদের তাসবীহ ও তাকদীসের অর্থ হচ্ছেঃ মহান অাল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা, নামায পড়া, বেয়াদবী হতে বেঁচে থাকা, তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা এবং তাঁর অবাধ্য না হওয়া। "কুদ্দুসুন" এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। রসুলল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসিত হচ্ছেনঃ "কোন্ কালামটি সর্বোত্তম?" উত্তরে তিনি বলছেনঃ "ওটা হচ্ছে ঐ কালামটি যা মহান আল্লাহ পাক তাঁর ফেরেস্তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। ঐ কালামটি হচ্ছেঃ সুবহান অাল্লাহ ওয়াবি হামদি। (সহীহ মুসলিম) পৃষ্ঠা নং ২২০। 
(চলবে)

মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত - চতুর্থ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

করিম সাহেব লেখাটি পড়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি কি করবেন বা কি লিখবেন....এ নিয়ে তিনি সংশয়ে ভুগছেন। তিনি চিন্তা করে পেলেন না, কেন ও কি জন্যে ইবলিশ পতিত হলো? ইবলিশ তো খারাপ কিছু বলেনি...তাহলে তাকে কেন মহান স্র্রষ্টা কোন করুণা দেখালেন না? কেবল একটি সেজদা না করাই কি এর মুল কারণ? সেজদা তো কেবল আল্লাহ্ পাকের জন্যই। তাহলে এ কোন্ সেজদা? এবং সে সেজদার নাম কি? বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুললো। তিনি পবিত্র কোরঅান শরীফের সুরা বাকারার ৩০ থেকে ৩৫ নং অায়াত কয়টি ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করলেন। এবং সাথে তফসীর গ্রন্থও রাখলেন। তারপর পড়া শুরু করলেনঃ

সুরা বাকারা আয়াত নং ৩০
--------------------------
ওয়া (এবং) ইজ (যখন) কালা (বলিলেন) রাব্বুকা (আপনার রব, পালনকর্তা) লিলমালাইকাতি (ফেরেস্তাদের জন্য) ইন্নি (নিশ্চয়ই আমি) জায়েলুন (নির্বাচন করিব) ফিল (মধ্যে) আরদি(পৃথিবীতে) খলিফাতান (প্রতিনিধি, খলিফা )। ক্কালু (তাহারা বলিল) আতাজআলু (তুমি কি নির্বাচন করিবে? ) ফিহা (ইহার মধ্যে ) ওয়া (এবং) ইয়াসফিকু (ঝরানো, প্রবাহিত করা) দিমাআ (রক্ত)
ওয়া (এবং) নাহনু (অামরা) নুসাববেহু (তাসবিহ করি) বিহামদিকা (তোমার প্রশংসা ) ওয়া (এবং) নুকাদদেসু (পবিত্রতা বর্ণনা করি) লাকা (তোমার) । কালা (বলিলন) ইন্নি (নিশ্চ য়ই আমি) আলামু (জানি) মা (যাহা) লা (না) তাঅালামুন (তোমরা জানো)। 

[ And (remember ) when your Lord said to the angels: "Verily, I am going to place (mandkind) generations after generations on earth." They said: "Will You place therein those who will make mischief therein and shed blood, --while we glorify You with praises and thanks and sanctify You." He praises and thanks and sanctify You." He (Allah) said: "I know that wich you do not know."  verse of Quran. Surah2. Al-Baqarah. Ayat No.30 ]

অর্থঃ এবং যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয়ইই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো, তারা বললো আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আমরাইতো আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।

করিম সাহেব কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়লেন এবং সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতের ব্যক্ষা এবং বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিলেন। তিনি একটি শিরোনাম দিলেন এবং লিখলেনঃ

অাদম সৃষ্টির ব্যাপারে অাল্লাহ পাকের সাথে ফেরেস্তাদের কথোপকথনঃ
-----------------------------------------------------------------
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে, অাল্লাহ পাকের সাথে আদম সৃষ্টির ব্যাপারে কথোপকথন হচ্ছে। ফেরেস্তারা আল্লাহ পাকের কাছে জানতে চাচ্ছেন-কাকে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করতে যাচ্ছেন? যারা দুনিয়াতে যেয়ে রক্তপাত করবে, মারামারি করবে, কাটাকাটি করবে? তারচেয়ে  তারাইতো ভালো আছেন। তারা মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ঘোষণা করছেন। সেটাইতো ভালো। কিন্তু আল্লাহ পাক তাদের প্রশ্নোত্তরে বললেন-অামি যা জানি, তোমরা তা জানো না। তার অর্থ হতে পারে - আদম সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহপাকের বিশেষ কোন পরিকল্পনা ছিল। যে পরিকল্পনার ব্যাপারে ফেরেস্তারা ছিল সম্পুর্ণ অজ্ঞ। তাই তারা আদম সৃষ্টির ব্যাপারে ভেটো প্রদান করেছিল। আর এ আয়াতের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছেঃ-

প্রথমতঃ সৃষ্টিজগতে মানুষের মর্যাদা এত উপরে যে মহান আল্লাহ মানুষের সৃষ্টি বা মানুষকে তার প্রতিনিধি বানাবার বিষয়টি ফেরেশতাদের কাছে উত্থাপন করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ প্রতিনিধি নিয়োগের পুরো দায়িত্ব মহান আল্লাহর অন্য কারো নয়।

তৃতীয়তঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হলো, প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং পরে তার বর্ণনা দেয়া। মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টি এবং মানুষকে তার প্রতিনিধি বানাবার ক্ষেত্রে এ পন্থা প্রয়োগ করেছেন এবং এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের অজ্ঞতা দূর করেছেন।

চতুর্থতঃ শাসক বা ঐশী প্রতিনিধিকে ন্যায় বিচারক হতে হবে। ফাসেক বা কলুষিত ব্যক্তি এ মর্যাদার উপযুক্ত নয়। আর এ জন্যই ফেরেশতারা বলেছিলো, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী মানুষ কি করে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারে?

পঞ্চমতঃ নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার সময়, অপরের কেবল দোষ-ত্রুটি ও দুর্বল দিক, আর নিজের ভালো দিকটাই দেখা ঠিক নয়।

ষষ্ঠতঃ ইবাদত কেবল মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ইবাদত ও প্রশংসা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অগ্রগামী হওয়া সত্ত্বেও, পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারেনি।

সপ্তমতঃ কিছু লোকের অনিষ্টতা ও বিভ্রান্তির কারণে, অন্যদের বিকাশ লাভের পথ রুদ্ধ করে দেয়া ঠিক নয়। মহান আল্লাহ এটা ভালো করেই জানতেন যে, এক শ্রেণীর মানুষ ভুল পথে চলবে, কিন্তু তারপরও তিনি মানুষকে তার প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করেননি।

অষ্টমতঃ কোন কিছু সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করতে দোষ নেই। ফেরেশতারা আল্লাহর কাজের প্রতিবাদ জানাবার জন্য প্রশ্ন করেননি বরং নিজেদের ধারণা আরো স্পষ্ট করার জন্যই প্রশ্ন করেছিলেন।

এ পর্যন্ত লিখে করিম সাহেব বেশ চমকিত হলেন। কারণ, তিনি বিষয়টিতে একটি আলোর দিক দেখতে পাচ্ছেন।  ফেরেস্তাদের চেয়েও মানব শ্রেষ্ঠ এবং মহান আল্লাহ পাক এ মানবের সৃষ্টির পরিকল্পনার একটি অংশ। এতে করে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু তা'য়ালার অসীম কৃপা এবং দয়া ছাড়াও আদম মহান স্র্রষ্টার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর একটি সুযোগ পেয়ে গেলেন। সে জন্যই হয়তো বলা হয়েছেঃ আদ্ দুনিয়া মাজরাতুল উখরা। অর্থাৎ দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের ক্ষেত্র স্বরুপ। দুনিয়াতে যা কিছু করা হবে, তার হিসাব তিনি অবশ্যই নিবেন। কারণ, প্রথম থেকেই ফেরেস্তাদের প্রকোপের মুখে পড়তে হয়েছিল আদমকে। তাই, অাদমের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক যতোটাই কঠিন ঠিক ততোটাই সহজ। সহজ এই জন্য যে, তিনি জানেন, দুনিয়াতে যেয়ে অাদম হয়তো নানান গুনাহ খাতা করতে পারে এবং সেই গুনাহ-খাতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তার একটা দিক-নির্দেশনাও দিয়ে দিলেন এবং তাকে কিছু  বাক্য শিখিয়ে দিলেন। এবং তার রহমত হতে নিরাশ হওয়ার জন্য নিষেধ করে দিলেন।

করিম সাহেবের বুকটা ভরে গেল একটা অস্ফুট আনন্দে এবং মহান স্র্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার নয়ন অশ্রুু সিক্ত হলো। তিনি মনে মনে বললেনঃ হে মহান রব, তোমায় দয়া এবং করুণার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। শেষ বিচারের দিন, তুমি আমাকে তোমার রহমত হতে নিরাশ করো না। আমি যেন তোমার রহমতের ছায়ায় থাকতে পারি.....

অতঃপর করিম সাহেব তার অশ্রু সংবরণ করে সুরা বাকারার ৩১ নং আয়াতের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করলেনঃ
(চলবে)