পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

তুমি র'বে নীরবে-শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
আজানের শব্দ শুনে মুসল্লীগণ মসজিদের পানে ছুটছে। অনেকেই তাড়াহুড়ো করছে জামাত ধরার জন্য। মুসল্লীদের জন্য নামাজের আহব্বান যেন মহান প্রভুর সান্নিধ্য পাবার জন্য নির্ধারিত। যাদের অন্তরে প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা আছে, আছে ভক্তি - বিশ্বাস, কেবল তারাই জানেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল অালামিন কতোটা দয়া পরবশতঃ হয়ে এই নামাযের ব্যবস্থা করেছেন। অামি তেমন একটা নামায পড়ি না। অধিকাংশ সময়ই শুক্রবার দিন জু্ম্মাার নামায পড়তে চেষ্টা করি। আর ঈদের নামাজতো আছেই। কাজেই এই অামার সালাত হলো সালাতুল বছর। 

অামি দেখলাম, শ্বেতা তার ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়েছে। অাজান শুনলে কেন জানি না, অনেক মেয়েকেই দেখি, মাথায়ঘোমটা টেনে দেয়। কিন্তু কোন পুরুষকে মাথায় টুপি পড়তে দেখা যায় না...বিষয়টা কেমন যেন মনে হলেও বাস্তব।

ঘোমটা দেয়া শ্বেতাকে বেশ লাগছে। কপালে লাল রংয়ের টিপ দেয়ায় কেমন যেন একটা হিন্দুয়ানীর মতো লাগছে। মনে হচ্ছে শ্বেতা যেন হিন্দুঘরানার কোন কুল বধু। আমি শ্বেতাকে বললামঃ

-চলো ওঠা যাক।

-কোথায় যাবে?

-বললাম না...যেদিকে দু'চোখ যায়...নিজের ইচ্ছে মতো চালাব। অজানার উদ্দেশ্যে। কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা...মনে মনে...

-এ্যাই বলো না কোথায় যাবে?

-জানি না। কেন? তুমি কোথাও যেতে চাও?

-নাহ্। আজ আমি তোমার সাথেই থাকতে চাই। তবে অবশ্যই রাত আটটার মধ্যেই আমাকে বাড়ী যেতে হবে।

-ঠিক আছে। অামি তোমাকে সাতটার মধ্যে ছেড়ে দেব। ইচ্ছে করলে তোমাকে বাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিতে পারি? যদি তুমি রাজী থাকো?

-না বাবা। অামাকে যদি দেখে তোমার সাথে বাইকে চড়ে বাড়ীতে অাসছি, তাহলে বাবা আমাকে অাস্ত রাখবে না....

-আরে বাবা, কেউ দেখতেও পারবে না....তোমাকে তোমার বাড়ীর কাছাকাছি একটা স্থানে নামিয়ে রিক্সা ধরিয়ে দেব। সেটাতে চড়ে তুমি বাড়ী চলে যেও....এখনতো সবে মাত্র সন্ধ্যা হলো। মাত্র বাজে ছ'টা দশ। এখনো অনেক সময় বাকী আছে...তুমি দেরী করো নাতো....তাড়াতাড়ি বাইকে চড়ে বসো। 

-কোথায় যাবে?

-এই শ্যুটিং ক্লাবের দিকে। একটা চক্কর দিয়েই তোমাকে বাড়ী পৌঁছে দেব।

আমার কথা শুনে শ্বেতা কিছু বললো না। সে নীরবে আমার সাথে হাঁটা আরম্ভ করলো। আমরা রাস্তাটা পার হয়ে পার্ক করা স্থানে গেলাম। সেখানে গিয়ে বাইকে চেপে বসলাম। পিছন ফিরে শ্বেতাকে দেখলাম, সে যেন মোবাইলে কি যেন খুঁজছে। হয়তো কোন গান হবে। দেখলাম হেড ফোন লাগিয়ে মোবাইলটা তার পার্সে রেখে দিল। মোবাইলের তারটি বের হয়ে কানের নিচে ঝুলে রইলো। দু'কান হতে গলার নিম্নভাগে বুকের কাছে সেটা সমতা বিধান করে নিচের দিকে নেমে গেছে। অামি শ্বেতাকে বললামঃ

-প্লিজ, একটু তাড়াতাড়ি করো না...অাকাশটা হটাৎ কেমন যেন বদলে গেছে...মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।

-অারে বাবা আসছি তো... 

শ্বেতার আমার বাইকে চড়ে বসলো। আমি বাইক স্ট্যাট দিয়ে শুটিং ক্লাবের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। সেই চিরচেনা নিয়মে মাঝে মাঝে ব্রেক কষছি। আর শ্বেতার নরোম বুকের স্পর্শ আমার পিঠে আঘাত করছে। শ্বেতা কিছুটা ভয় পেয়েছে কি-না কে জানে? সে হটাৎ করেই আমাকে জাপটে ধরলো। তার বুকের স্পর্শ আমাকে মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক করে দিচ্ছে। সে আমার ঘাড়ের দিকে নোখ দিয়ে আঁচড় কাটছে। আবার জপটে ধরে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর মতো ভংগী করছে...আমি মাঝে মাঝেই অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ছি। শ্বেতাকে বললামঃ

-একটা বিষয় খেয়াল করেছো?

-কি?

-আজ আমরা কোন ছবি তুলিনি। কোন সেলফিও তুলিনি...মনে হয় যেন সব ভুলে বসে আছি...

-তাহলে এখন তুলি....

-নাহ থাক্....তুমি কি গান শুনছো?

-রবীন্দ্র সংগীত। মোনালি ঠাকুরের গাওয়া....কেন? তুমি শুনবে? 
একথা বলেই শ্বেতা তার কানের একটা হেড ফোন লাগিয়ে দেয় আমার ডান কানে। আমি ও শ্বেতা দু'জনেই শুনছি-

তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।
 মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
 তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥

হটাৎ করেই বৃষ্টি পড়ার মাত্রাটা বেড়ে গেল। আমি বাইকটার স্প্রীড বাড়িয়ে দিলাম। সামনে যে ব্রীজটা আছে সেটা তাড়াতাড়ি পাড় হতে হবে। ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হলে হয়তো জ্বর আসতে পারে। তাছাড়া শ্বেতা ভিজে গেলে আরো বিপদ। আমি তখন স্প্রীড তুলে দিয়েছি প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি...যখন ব্রীজটা পার হলাম ঠিক সেই মুহুর্তে কোথা হতে একটা প্রাইভেট কার সামনে এসে পড়লো। আমি টাল সামলাতে না পেরে সরাসরি প্রাইভেট কারের সংগে লাগিয়ে দিলাম। একটা বিকট শব্দ হলো। এরপর আমার কিছু মনে নেই।

দুদিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেডে। আমার বাঁ পা'টা ভেংগে গেছে। মাথায় ব্যান্ডজ। মুখের বাঁ দিকটা মনে হয় প্রচন্ড ব্যাথায় কাতর হয়ে যাচ্ছি। কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না। ডানে বামে তাকালাম। শ্বেতা কোথায়? তাকে তো দেখছি না? দেখছি কেবল আমার মা-বাবা ভাই বোনকে। আত্মীয়-স্বজন সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ খুলতেই সবাই কেমন যেন চমকে উঠলো। আমার ছোট বোনটা চিৎকার করে কেঁদে ফেললো।

-দাদা, তুই বেঁচে আছিস?

আমি ফিসফিস করে বললামঃ

-শ্বেতা কোথায়?

-ও আছে। বেঁচে আছে। এই হাসপাতালেই ইনটেনসিভ কেয়ারে আছে।

-আমাকে নিয়ে চল। অামি ওকে দেখবো?

-তুই কিভাবে যাবি? তোরতো পা তো.......একথা বলেই মুন্নি কেঁদে ফেললো।

মুন্নি আমার ছোট বোন। ছোট হলেও সে ইঁচড়ে পাকা...আমার আর শ্বেতার ব্যাপারটা ও জানে। আমি আমার পরিবার থেকে সম্পুর্ণ পৃথক থাকি। তারা থাকে বনানীতে। আর আমি হাজিপাড়ার একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকি। পড়া শোনা করার জন্য। আমি একসিডেন্ট করেছি শুনে তারা সবাই এসেছে। কিন্তু খবর পেলো কিভাবে? কে তাদের খবর দিল? আর কে-ই বা হাসপাতালে নিয়ে এলো? এ সমস্ত প্রশ্নগুলো যেমন ঘুরপাক খাচ্ছে, তেমনি ঘুরপাক খাচ্ছে শ্বেতা কেমন আছে? তাকে দেখতে মন চাইছে....আমি বললাম 

-একটা হুইল চেয়ার নিয়ে আয়...

একটা হুইল চেয়ারে আমাকে বসানো হলো। আমি সেটাতে চড়ে বসলাম। সাথে আমার ছোট বোন। আর আমার এক খালাতো ভাই মানিক। মানিক ঠেলে ঠেলে হুইল চেয়ারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ইনটেনসিভ কেয়ারের রুমটার দিকে। যেখানে শ্বেতাকে রাখা হয়েছে। অামি সেখানে ঢুকতে চাইলাম। কিন্তু ডাক্তার আমাকে ভেতরে ঢূকতে দিলো না। অামি বাহির থেকে শ্বেতাকে দেখছি। পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ। ডান কাত হয়ে শুয়ে আছে। পুরো শরীরটা সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। পাশের মেশিনটাতে একটা সবুজ রেখা আপ-ডাউন করছে। সু-সান নীরবতা চারদিকে। কেউ কোন কথা বলছে না। শ্বেতার পাশে বসা একজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শ্বেতার মা। আমি ওর মা-বাবাকে কখনো দেখিনি। কথাও হয়নি কোন দিন। অার কোনদিন হবেও না। মানিকের কাছে শুনলামঃ শ্বেতাকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেছে ডাক্তাররা। যে কয়দিন বেঁচে থাকবে,এভাবেই থাকতে হবে ওকে। 

ডাক্তার যা-ই বলুক, শ্বেতা বেঁচে থাকবে চিরদিন চির জীবন। যতো দিন আমি বেঁচে থাকবো, ততোদিন শ্বেতাও বেঁচে থাকবে। আমি মানিককে বললামঃ

-তোরা চলে যা। আমাকে একটু একা থাকতে দে..

ওরা সবাই চলে গেল।আমি কান্নায় ভেংগে পড়লাম। চোখের দু'ধার দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে অজস্র্র জলরাশি। সেই জলস্র্রোত যেন শ্বেতাকে স্পর্শ করছে না...হৃদয়ের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আমার মন-প্রাণ। কিন্তু তাতেও সাড়া মিললো না শ্বেতার। আমি আবারো আস্তে আস্তে করে ডাকলাম......শ্বেতা। নাহ্ ওর ঘুম কিছুতেই ভাঙ্গছে না...ও ঘুমাক। 

অামি ইনটেনসিভকেয়ারের সামনের কাঁচের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি আমার শ্বেতাকে। শ্বেতাকে স্পর্শ করতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে আমি এক পালক ভাংগা কপোত হয়ে আমার কপোতীর কাছে যেতে পারছি না। 

কেন আমি বেঁচে রইলাম? কেন আমি শ্বেতার মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারলাম না...যমদুত কেন আমাকে দেখলো না...স্র্রেফ আমার ভুলের কারণেই কি আজকে শ্বেতার এই অবস্থা....এর জন্য কি আমি দায়ী.....না আমার গতি...কোন টা....যেটাই হোক শ্বেতা...তুমি আমার। কেবলই আমার। আমার নিঃশ্বাসে, আমার বিশ্বাসে। আমার প্রাণে...আমার হৃদয়ে....তুমি র'বে নীরবে।

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭

তুমি র'বে নীরবে-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

ছিপছিপে শরীরের সাব-ইন্সপেক্টরকে দেখে শ্বেতা ভ্রুু কুঁচকে বললোঃ 

-তোমার মামার শরীরে তো পুষ্টির অভাব আছে। দ্যাখো না, কেমন ছিপছিপে? ইয়া লম্বা...

-শুন শ্বেতা, এই মামাকে কিছুদিন পর তুমি দেখলে চিনতে পারবে না...দেখবে ইয়া মোটা সোটা হয়ে গেছে...

-কেন? সে কি প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খাবে? কিংবা ব্যালেন্স ডায়োট করবে?

শ্বেতার কথা শুনে আমার এমন হাসি আসলো যে, নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ যে কি পরিমাণ কষ্ট করে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর। তাছাড়া সারাদিনমান যে কনেস্টবল কিংবা ট্রাফিক পুলিশ এই রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে  তার কার্য পরিচালনা করে, সেটা সত্যিই কষ্টসাধ্য। আমি যখন মনে মনে একথা চিন্তা করছিলাম, তখন দেখলাম, সেই পুলিশ সার্জেন্ট জ্যামটা মুহুর্তের মধ্যেই ক্লিয়ার করে দিল। সত্যিই বেশ করিৎকর্মা লোক....

আমি বাইকটি চালিয়ে মোল্লা টাওয়ারকে পাশ কাটিয়ে হাতির ঝিলে প্রবেশ করলাম। যে সময়টাতে হাতির ঝিলের দিকে প্রবেশ করি, সে সময় হাল্কা ইলশে গুড়ি টাইপের বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা দুজনেই এই বৃষ্টিটা বেশ উপভোগ করছিলাম। আর মাঝে মাঝে হাল্কা ব্রেক কষছিলাম যাতে শ্বেতা আমার পিঠের উপর ঝাপটে পড়ে। উদ্দেশ্য হলো ওর নরোম তুলতুলে দেহটার উত্তাপ নেওয়া। আমার এই দুষ্ট বুদ্ধিটা শ্বেতা বুঝতে পারছে কি-না জানি না, তবে ব্রেক কষার সাথে সাথে সত্যিই শ্বেতা দেহটা এলিয়ে দিতো। মাঝে মাঝে শ্বেতাকে দেখছি সে ইচ্ছে করেই হোক আর অনিচ্ছাই হোক, আমাকে জড়িয়ে ধরছে...আমি সেটা বেশ উপভোগ করছি।

বাইকটা টান দিয়ে সোজা চালিয়ে যাচ্ছি। শ্বেতা জানতে চাইলোঃ আমরা  কোথায় যাচ্ছি? আমি বললামঃ কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা...আজ যে দিকে মন চায়, সেদিকেই যাবো। শ্বেতা বললোঃ

-এ্যাই আমার ক্ষিদে পেয়েছে...চল না কিছু খাই ?

-কি খাবে?

-যা ইচ্ছে তোমার...

আমি বাইকটা একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে শ্বেতাকে নিয়ে একটা বারে ঢুকলাম। জায়গাটা ইষ্টার্ণ হাউজিং সোসাইটির হাতির ঝিলের প্রবেশ মুখে। সেখানে বেশ কিছু ছোট খাটো বার আছে। একটা স্মাার্ট ছেলে এসে জিগ্যেস করলোঃ 

-স্যার কি খাবেন?

- কি কি আছে?

-স্যার গ্রিল, বার্গার, পিৎজা, হটডগ, সেন্ডউইচ....

আমি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-কি খাবে?

-একটা পিৎজা নাও....

আমি সেই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললামঃ 

-একটা পিৎজা আর...সাথে কোক দাও

ছেলেটি কিছুক্ষণ পর পিৎজা এবং কোক দিল। পিৎজাটা দেখতে বেশ। গরম । খেতেও বেশ। বেশ আরাম করে শ্বেতা খাচ্ছে। আমি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে দেখছি। শ্বেতা খেতে খেতে বললোঃ

-এ্যাই তুমি খাবে না....

-তোমার ক্ষিদে লেগেছে...তুমি খাও

-তাই? ঠিক আছে। তুমি হা করো। আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি...

-এই নাও হা করছি...হা..........হা...........হা

-আরে আমি তোমাকে ওভাবে হা করতে বলিনি...এই নাও...প্লিজ একটু খাও...

শ্বেতা একটুকরো পিৎজা হাতে নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিল। আমি খেতে খেতে ভাবলাম, ইশ! শ্বেতা যদি আমাকে এভাবে রোজ খাইয়ে দিত। আমি পিৎজা চিবুতে চিবুতে শ্বেতার দিকে তাকালাম। পড়ন্ত বিকেলে শ্বেতার মুখটা বেশ উজ্জল দেখাচ্ছে। বারটির কাঁচের দেয়াল ভেদ করে একটুকরো রোদ্দুর এসে ভিতরে প্রবেশ করেছে। সেই রোদ্দুরটা পড়েছে শ্বেতার উপর। উজ্জল শ্যামলা গায়ের রং যেন আলো চকচক করছে। আমি কবি হলে বলতামঃ

তোমার প্রেমে পুড়ে আমার অন্তর হলো ছাই
ওগো প্রেমিকা, ওগো প্রিয়সী, বলো তুমি
এ জ্বালার ঔষধ কোথা পাই।।

তোমার দেহের বল্লরী যেন ধারালো কোন ছোড়া
ছুঁইলেই যেন মোর হৃদয় কেটে হবে ফালা ফালা।
শোন হে সুন্দরী, তনুমন,
প্রেম দিয়েছি, ভালোবেসেছি তোমায় আমি অণু ক্ষণ।।
কাটার ভয় আমি করি না করো, দেহ বল্লরীর
কেটে যেতে দাও হৃদয় মোর
সন্ঞ্চরী, আখেরির।।

-কি হলো? কি ভাবছো? চলো উঠা যাক।

শ্বেতার কথায় আমি ধাতস্থ হলাম। আমি ছেলেটাকে ডেকে বিল দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। শ্বেতা আমার সামনেই আছে। তার হাত দুটো টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম। বাইকটা সেই বারটির পাশেই পার্ক করা। আমরা রাস্তাটা পার হয়ে পশ্চি ম দিকটায় নরোম ঘাসের উপর বসলাম। ঝকঝকে আকাশটা বেশ লাগছে। বৃষ্টিটা থেমে গেছে। কিন্তু দিয়ে গেছে একটা চমৎকার আকাশ। একফালি নরোম রোদ্দুর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা পনেরো বাজে। আছরের নামাজ শেষ করে মুছল্লীরা মসজিদ থেকে বের হচ্ছে। কেউ কেউ ডায়াবেটিস রোগীর মতো হাঁটার অভ্যাস করছে। আর ডায়বেটিস রোগীরা তাদের মতো করে লেফট-রাইট ভংগীতে হাঁটছে। আর আমাদের মতো আরো অনেক জুটি এখানে ওখানে বসে কথোপকথন করছে। কেউ কেউ খুনসুটি করছে। হাসতে হাসতে ইচ্ছে করেই শরীরের উপর পড়ছে। জানি অামি। সেটা কেবল সান্নিধ্যটাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য। একটা স্মৃতি চিন্হ এঁকে দেবার জন্য। 

মুরুব্বী গোছের একটা লোককে বলতে শুনলাম। সে বলছে - "আধুনিকতার নামে আজকাল ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেল্লাপনা বেশ বেড়ে গেছে। আমরা যতটাই আধুনিক হচ্ছি ঠিক ততোটাই বেহায়া হয়ে যাচ্ছি। আমাদের লাজ-লজ্জা বেশ কমে গেছে।"

লোকটির কথা শুনে মনে হলোঃ সত্যিই আমরা বেহায়া হয়ে যাচ্ছি? আমাদের কি একটুও লজ্জা শরম নেই? এই যে, শ্বেতা নামের মেয়েটি আমার পাশে বসে আছে সেই সকাল থেকে, তারও কি লজ্জা শরম নেই? প্রেমের জায়গায় কি লজ্জা শরম থাকতে নেই? আরে বাবা, লজ্জা শরম থাকলে কি কেউ প্রেম করতে পারে? অামি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-এ্যাই শ্বেতা, আচ্ছা সত্যি করে বলোতো, আমাদের কি লজ্জা শরম নেই?

-এটা কি ধরণের কথা হলো? আর হটাৎ ই বা তুমি এ কথা কেন বলছো?

-নাহ্ ...ঐ যে মুরব্বীকে দেখছো, সে বলছে আজকাল ছেলে-মেয়েদের মধ্যে না-কি বেল্লাপনা বেড়ে গেছে?

-বেল্লাপনা বেড়ে গেলে তার কি? তাকে কি আমরা কোন ক্ষতি করেছি...না-কি তাকে দেখিয়ে তোমাকে কিস দিয়েছি?

-ঠিক আছে। সে তো চলে গেছে। এখন না হয় কিস টাই দাও...

-কি বলছো তুমি?

-আরে বাবা, তুমিইতো বলছো? তাকে দেখিয়ে তুমি কিস দাও না..সে তো কাছেই নেই...প্লিজ দাও না...

-ধুর...তুমি কি সব পাগলের মতো কথা বলছো?

-প্লিজ...একটা...ওয়ান মোর

শ্বেতা আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই একটা কিস দিল। আমি এমন একটা অনুভুতি পেলাম..আমার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেল। আমার পঁচিশ বছরের জীবনে এমন একটা উপহার পাবো, তা স্বপ্নেও ভাবিনি...আমার পাশে বাইশে পা দেয়া একটা জ্বলজ্যান্ত ঊর্বশী বসে আছে। যার দেহে আগুন জ্বলছে। যার উত্তাপ এই পৃথিবীও পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া কথা। যার দেহের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে বিধাতা কি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে এঁকে দিয়েছেন বিশেষ ধরণের আল্পনা। এ আল্পনার রেখা খুব কম প্রেমিকই দেখতে পায়। অথবা এমনও হতে পারে এ আল্পনার ভাঁজটি দেখার জন্যই প্রেম প্রেম খেলা। কিংবা মধুবনের মধু আহরণের জন্যই মধুকরের উপস্থিতি। সে যাই হোক, আমি বেশ উপভোগ করছি।

মাগরিব নামাযের আজান শোনা যাচ্ছে। মাইকে ভেসে আসছে....হাইয়্যা আলাস সালা
(চলবে)

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

তুমি র'বে নীরবে-পর্ব এক

অাজ সকাল থেকেই মেঘ আসবো আসবো করছে কিন্তু আসছে না। আকাশটাও মেঘের আনা-গোনায় ভেলা ভাসিয়েছে। এই আসছে, আবার যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস মুহুর্তেই শরীরে শিহরণ ধরিয়ে দিচ্ছে। অামি পাঁচ তালার যে রুমটাকে থাকি, সেখান থেকে জানালা খুলে দিলেই পুরো আকাশটাই দেখা যায়। রুমের গ্লাসগুলো হাল্কা রঙিন। তাই রুমের ভেতর থেকে প্রকৃতির সেই রুপ ভালো ভাবে দেখা যায় না। প্রকৃতি দেখতে হলে অবশ্যই খালি চোখে তাকিয়ে দেখতে হবে। উপভোগ করার জন্য চাই একটা মন। সুন্দর মন। কিন্তু আজকের প্রকৃতি একটু ভিন্ন ধাঁচের।

সাদা নরোম তুলতুলো মেঘ গুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির ঝপটা এসে পড়ছে বারান্দায়। 

অামার মনের কোণেও আকাশের মতোই মেঘ জমেছে। যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি হওয়ার আশু সম্ভাবনা আছে। মনটা খারাপ থাকায় ভেবেছিলাম বিছানায় শুইয়ে বই পড়ে কাটিয়ে দেব। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? হটাৎ কলিং বেলের অাওয়াজে বিছানা থেকে উঠতে হলো। বিছানা হতে নেমে দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠলো।
দেখলাম শ্বেতা দরজায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। আজ শ্বেতা শাড়ী পড়েছে। কপালে দিয়েছে লাল টিপ। শ্বেতা এম্ম নিতেই সুন্দর। তার উপর মানান সই শাড়ি, লাল টিপ....চোখ দুটো টানা টানা হরিণীর মতোন। বেশ অবাক করা দৃষ্টি। একবার তাকালে তাকে ঠিক মতো অনুভব করা যায় না। বার বার তাকাতে হয়। অামি তাকিয়েই ছিলাম...
আমাকে হেবলার মতো তাকাতে দেখে শ্বেতা বললোঃ

- কি হলো? ভেতরে আসতে বলবে না? না-কি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে?

শ্বেতার কথায় আমি সম্বিত ফিরিয়ে পেলাম । তারপর তাকে ভেতরে আসতে বললাম। শ্বেতা ঘরে ঢুকেই নাকে আংগুল চেপে বললোঃ

- উফ্। সিগারেটের উৎকট গন্ধে ঘরটা পুরো ভরে গেছে...কতো সিগারেট খাও তুমি...

- বেশি না। এই ধরো সারা দিনে এক প্যাকেট যায়...আর রাতে প্রায় অর্ধেক...

- তার মানে তুমি দেড় প্যাকেট সিগারেট খাও...

আমি হাসলাম। কোন উত্তর দিলাম না। আমি খেয়াল করলাম, শ্বেতার গা থেকে মিষ্টি একটা পারফিউমের গন্ধ আসছে। সেই গন্ধটা কেন যেন আদিম প্রবৃত্তিটাকে জাগিয়ে দিতে চাইছে। সিগারেটের গন্ধটা আমি পাচ্ছি না। আমি পাচ্ছি একটা ভালো লাগার শিহরণ। একটা অনুভুতি। অামি সহসাই বলে উঠলামঃ
- চলো। বাহিরে যাব। আজ সারাদিন তোমাকে নিয়ে বাইকে ঘুরবো। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব। 'কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা' মার্কা গানের মতো।
এ কথা বলেই আমি শ্বেতার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে গ্যারেজের কাছে এসে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে দারোয়ান সফিক চাচা একটা বিকট হাসি দিয়ে স্যালুট দিল।  বললোঃ

- ভাইজান, কি বাইরে যাইতাছেন?
আমি হোন্ডাটার তালা খুলে সেটাতে চেপে বসলাম। পাশেই শ্বেতা বসলো। তারপর আমি হোন্ডা স্ট্যাড দিতে দিতে বললামঃ

- জ্বি চাচা। বাইরে যাচ্ছি। আসতে দেরী হতে পারে। খেয়াল রাখবেন। আমি পেছন ফিরে  শ্বেতার দিকে তাকিয়ে  বললামঃ শক্ত করে চেপে ধরো। হোন্ডা কিন্তু টান দেব। সে সময় কিন্তু পড়ে যেতে পারো...
আমার কথা শুনে শ্বেতা আমাকে পেছন থেকে জোরে চেপে ধরে। শ্বেতার বুকটা আমার পিঠের সাথে লেপ্টে থাকে। আমি ভেতরে ভেতরে একটা নরোম উষ্ণতার ছোঁয়া পাই। শ্বেতা আমাকে এমন শক্ত করে ধরেছে যে, আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। তবুও আমি কিছু বললাম না। কেবল মুচকি হাসলাম।
সফিক চাচা পুরো গেটটাই খুলে দিয়েছে। আমার কোন অসুবিধাই হলো না। আমি নির্দ্দিধায় হোন্ডাটা মুল রাস্তায় নিয়ে আসলাম। তারপর সাঁই করে টান দিয়ে এগিয়ে চললাম।  আমি যে দিকে থাকি, সেখান থেকে হাতির ঝিল মিনিট পনেরো দুরত্ব। হেঁটে গেলে বড়ো জোর অাধা ঘন্টা লাগতে পারে। সেই পনেরো মিনিটের রাস্তাটা বানিয়ে ফেললাম পাঁচ মিনিটের রাস্তা। রাস্তা ফাঁকাই ছিল। তাই হোন্ডা টান দিতে কোন অসুবিধাই হলো না। কিন্তু মোল্লা টাওয়ারের সামনে একটা জ্যামে পড়ে গেলাম। জ্যামটা বেশ বড়ো সড়ো। পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। তারা রিক্সাওয়ালাদের বেদম পেটাচ্ছে। রিক্সাওয়ালারা পরি মরি করে তাড়াতাড়ি ছুটতে গিয়েই একটার সাথে আরেকটার চাকা লাগিয়ে জ্যামের সৃষ্টি করেছে। অবশ্য সেই জ্যামটা ছুটতে কতোক্ষণ লাগতে পারে, আমি মনে মনে সেটা চিন্তা করছি আর হোন্ডাটা আস্তে আস্তে টানছি। অার একটু একটু করে সামনের দিকে এগুচ্ছি......
রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়েছে মৌচাক-মগবাজারের দিকে, সেই রাস্তার পাশেই একটা যাত্রী ছাউনির মতো জায়গায় গোটা কয়েক পুলিশ বসে ছিল। তারা শ্বেতার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। শ্বেতা বেশ অপ্রস্তুত হয়েই মুখটা ঘুরিয়ে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ 
- এ্যাই জোরে চালাও না...

- আরে বাবা...যাচ্ছি তো....বেশি জোরে টানা যাবে না। টানলে মামারা আটকাবে?

- মামা পেলে কোথায়...

- ঐ যে, সামনে যে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে সেই হলো মামা। 
অামি দাঁড়িয়ে থাকা সাব ইন্সপেক্টরকে দেখিয়ে দিলাম।
(চলবে)

বাইয়াতঃ ইসলামী শরীয়তের আলোকে পীর-মুরিদ

ইসলামী শরীয়তের আলোকে পীর-মুরীদির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় দলিলঃ

পীর-মুরীদিঃ

পীর শব্দটি ফার্সি, আরবীতে বলা হয় মোর্শেদ । মোর্শেদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। যিনি তরীকতের রাস্তায় খোদা-প্রাপ্তির প্রশিক্ষণ দেন তিনিই মোর্শেদ বা পথপ্রদর্শক, যাকে ফার্সীতে পীর বলা হয় ।
“মুরীদ” শব্দটি আরবী, যার অর্থ হল ইচ্ছাপোষণকারী, যিনি তরীকতের রাস্তায় বা খোদা-প্রাপ্তির রাস্তায় মোর্শেদ বা পথপ্রদর্শকের অধীনে থেকে খোদা অন্বেষণের শপথ / অঙ্গীকার করেন তিনিই মুরীদ ।

আর পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল (সাঃ) থেকে চলে আসছে, রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের খোদামুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন, সাহাবা (রাঃ)-গণ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন । তাই বলা যায় রাসূল (সাঃ) পীর, ও সাহাবা (রাঃ)-গণ হলেন মুরীদ।

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বাইয়াত প্রধানত পাঁচ প্রকার । যথাঃ

১.মাওলাইয়াতের বাইয়াত / খিলাফাতের বাইয়াতঃ - যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্বের প্রতীক হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা তার নিযুক্ত / মনোনীত ব্যাক্তির নিকট বাইয়াত গ্রহন করতে হবে । এক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই আওলিয়া পর্যায়ের মহা মানব হতে হবে । মুয়াবিয়া ও এজিদী চক্রান্তের কারনে বর্তমানকালে সময়ে এমন রাষ্ট্রনায়ক পাওয়া দুষ্কর । তবে রাসূল সাঃ ও তার আহলে বাইয়াতের মাওয়্লাইয়াতের / খিলাফাতের ধারা বর্তমানেও প্রবাহমান ও চিরকাল বিরাজ থাকবে অতএব রাসূল সাঃ ও তার আহলে বাইয়াতের মাওয়লাইয়াতের / খিলাফাতের ধারা অনুস্মরণ করে অলী পর্যায়ের মহা-মানবের নিকট বাইয়াত গ্রহন করা অত্যাবশ্যক ।

২.বাইয়াতে ইসলামঃ - তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া । অন্য ধর্মের অনুসারী বা কোন ধর্মের অনুসারীই নয় এমন কেহ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিতে চাইলে, রাসূল সাঃ ও তার আহলে বাইয়াতের মাওলাইয়াতের / খিলাফাতের ধারা অনুস্মরণ করে বাইয়াত গ্রহন করিতে হইবে ।

৩.শপথের বাইয়াতঃ - তাকওয়া পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার জন্য একাধিকবার বাইয়াত গ্রহন করার বিধান রয়েছে, যাকে বাইয়াতে তাসাওউফ-ও বলা হয় । একাধিকবার বাইয়াতের বিধান থাকিলেও এর মানে এই নয় যে পুঃন পুঃন বাইয়াতের শর্ত ভঙ্গ করিয়া নতুন করিয়া বাইয়াত গ্রহন করিবে । শুধুমাত্র তাকওয়া ও পরহেযগারীতে দৃঢ় থাকিবার জন্যই এই প্রকারের বাইয়াত গ্রহন করিবার বিধান রয়েছে ।

৪.বাইয়াতে যিহাদ ও হিজরতঃ - রাসুল সাঃ, যিহাদে গমন অথবা কাফেরদের জুলুম ও অত্যাচারে অতিষ্ট হইয়া রাষ্ট্র বা ঐ অঞ্চল ছেড়ে অন্যস্থানে চলে যাওয়ার প্রাকালে এই প্রকার বাইয়াত করিতেন ।

৫.জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াতঃ - যদি কখনো যিহাদের ময়দানে ভয়ে পালিয়ে যাবার শংকা দেখা দেয়, তখন আমীরে জিহাদের তথা যিহাদের নেতৃত্ব-দানকারীর হাতে দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ আবশ্যক ।

প্রথম প্রকারের বাইয়াত গ্রহন করা প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। কোরআন ও হাদীসে উক্ত বাইয়াতের উপরে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে যা গ্রহন না করিলে তার মৃত্যু হবে জাহেলের ।

পবিত্র কোরআনে আলোকে বাইয়াতঃ

সুরাঃ মায়েদা-র ৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ " হে ঈমানদার-গণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এবং তার নৈকট্য লাভের জন্য অছিলা ( অলী পর্যায়ের মুর্শীদ ) তালাশ কর। "

সুরা নিসা-র ৫৯ নং আয়াতে বলেনঃ " হে ইমানদার-গণ ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (ধর্মীয় নেতা)। "

সূরা বনি ইসরাইল-র ৭১ নং আয়াতে বলেনঃ " স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) নেতা সহ আহবান করব। "

সুরা লোকমান-র ১৫ নং আয়াতে বলেনঃ " যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখি হয়েছে তাঁর পথ অনুস্মরণ কর। "

সুরা আম্বিয়া-র ৭ নং আয়াতে বলেনঃ " জিকির সম্বন্ধে তোমাদের জানা না থাকলে (আহলে জিকির / জিকিরের মধ্যে বসবাসকারীদের) যিনি জানেন তাঁর নিকট হতে জেনে নাও।"

সুরা তাওবাহ-র ১১৯ নং আয়াতে বলেনঃ " হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (ছাদেকিন) সত্যবাদী গণের সঙ্গী হয়ে যাও। "

সুরা  কাহাফ-র ১৭ নং আয়াতে বলেনঃ " আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী (অলি-মুরশিদ) পাবে না ।"

সুরা ইউনুছ-র ৬২-৬৪ আয়াতে বলেনঃ "সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই, এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহে, তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন হয় না, উহাই মহা সাফল্য। "

সূরা ফাতিহা-র ৬,৭ আয়াতে মহান আল্লাহ প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন এই বলে যে, "আমাদের সরল সঠিক পথ (সীরাতে মুস্তাকিম) দেখান, যা আপনার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ ।"

সূরা ফাতহ-র ১০ নং আয়াতে বলেনঃ "হে রাসুল,যাহারা আপনার হাতে বাইয়াত (আনুগত্যরে শপথ) করে, তারা-তো আল্লাহর হাতেই আনুগত্যেরে শপথ করে, আল্লাহর হাত তাহাদের হাতরে উপর রয়ছে, অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে, অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার র্পূণ করে আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।"

হাদিসের আলোকে বাইয়াতঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি । আমার বান্দা আমি তার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে আমার কাছে বেশী প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জণ করতে পারে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জণ করতে থাকে, এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অব্যশই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা সংকোচ মু'মিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপসন্দ করি।"
==> সহীহ বুখারী ৬৫০২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, "যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন দলীল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে । আর যে ব্যক্তি বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে ব্যক্তি জাহিলী যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করল ।“
==> মুসলিমঃ হাদীস নং- ৪৮৯৯

আউফ বিন মালিক আশজাঈ রাঃ বলেন, আমাদের সাত বা আট নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমরা কেন রাসূল (সাঃ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল সাঃ এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল সাঃ এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না?

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, সালাত কায়েম কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর। তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই নিচে নেমে তুলে নিয়েছে।
==> সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৪৩

উরওয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহিলাদের বাইয়াত বিষয়ে আম্মাজান আয়শা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (সাঃ) কখনোই মহিলাদের হাত স্পর্শ করেননি। বরং তিনি মুখে মুখে বাইয়াত নিয়ে নিতেন। বাইয়াত হয়ে গেলে বলতেন, যাও! তোমাকে আমি বাইয়াত করে নিয়েছি।
==> সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৮৬৬

ফাতেমা বিনতে মুসা ইবনে জাফার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "জেনে রাখ! যে ব্যক্তি আহলে বাইত তথা অলি-আউলিয়ারদের এর ভালবাসা অন্তরে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , তার মৃত্যু শহীদের মৃত্যুর ন্যায় হবে ।"
==> তিরমিজি শরিফ

হযরত আহমদ বিন হাম্বল (রাঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত - রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ "আল্লাহর অলি-আওলিয়ারা বিনা হিসাবে ৭০ লাখ ভক্ত বা মুরিদানকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবেন ।"
==> বায়হাকি শরিফ

[কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ হোসাইন অাল অামিন ]

বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭

নির্জনে আপনি কেমন মুসলিম?

একজন বললেন: আমি প্র্যাকটিসিং মুসলিম। কিন্তু নির্জনে প্রাকটিসিং হওয়াটা খুব কঠিন।
অধিকাংশ মুসলিমই ভুগছে এই অভিন্ন সমস্যায়। বলা হয়ঃ সাধু হয়ো না মানুষের সামনে। আর শয়তান হয়ো না আড়ালে যেয়ে। ইব্‌ন আল-ক়ায়্যিম বলেছেন, “যাঁরা আল্লাহকে চেনেন তাঁদের সবার মত হচ্ছেঃ মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে একাকী যে পাপ করা হয়। আর লক্ষ্যে অবিচল থাকার মূল কারণ হচ্ছে নিভৃতে আল্লাহর ‘ইবাদাহ করা।”




আমাদের অনেকেই শয়তানকে খারাপ বলেন সবার সামনে; কিন্তু আড়ালে তাকেই বানান সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কী সাংঘাতিক!
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, পুনরুত্থানের দিনে আমার উম্মাাহ্-র এক দল লোক হাজির হবে তিহামাহ পাহাড় পরিমাণ ভালো কাজ সাথে নিয়ে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকে করে দেবেন বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা।”
হ়াদীস়টির বর্ণনাকারী স়াওবান বললেনঃ “এদের সম্পর্কে আমাদের আরও জানান, রাসূলুল্লাহ ﷺ, আরও বলুন। যাতে অজান্তে আমরা তাদের মতো না হই।”
তিনি বললেনঃ “ওরা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই জ্ঞাতিগোষ্ঠী। রাতে ওরা ‘ইবাদাত করে তোমাদের মতোই। কিন্তু ওরা যখন একাকী থাকে তখন ওরা আল্লাহর বেধে দেওয়া সীমারেখা লঙ্ঘন করে।”

আপনার ব্যাপারে অন্যে কী বলল, সেটা নিয়ে তুষ্ট হওয়ার মতো বোকামি করবেন না। সামনে কী করছেন তারা শুধু সেটাই জানে, আড়ালের খবর তারা রাখে না। আল্লাহ আর আপনার মধ্যে যা আছে সেটাকে ঠিক করুন; এটাই হিসেব করা হবে বিচারের দিনে।

মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭

কষ্টগুলোর জীবনকাল

আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কুর’আনে আমাদের বলে দিয়েছেন যে, প্রত্যেকটি জিনিসের জন্যই তিনি একটি সময়কাল নির্ধারণ করে রেখেছেন। এর মাঝে আমাদের প্রতিকূলতা ও সংগ্রামও অন্তর্ভুক্ত। এদের প্রত্যেকটিরই রয়েছে সূচনা ও সমাপ্তি; আছে একটি নির্ধারিত সময়কাল। জীবনের সকল পরিস্থিতিরই একটি নির্দিষ্ট সময় পর অবসান ঘটে অথবা পরিবর্তন ঘটে।
আমার জীবনের বেশকিছু সময় রয়েছে যখন এ আয়াতটি আমাকে গভীর প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ এই আয়াতটির রয়েছে সুগভীর তাৎপর্যঃ-


“তুমি তোমার রবের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করো, তুমি (অবশ্যই) আমার চোখের সামনে আছো।” [সূরা আত-তূর :৪৮]
শেখার আছে অনেক কিছুই
১. আল্লাহ্‌ আপনার অবস্থার পরিবর্তন করবেন। শুধু ধৈর্যধারণ করতে হবে। আর এই কষ্টের মুহূর্তটা পার করে যেতে হবে। এটা কখনও চিরস্থায়ী নয় এবং আপনার আল্লাহ এর দায়িত্বে আছেন (আপনার রবের সিদ্ধান্ত)।
২. “তুমি (অবশ্যই) আমার চোখের সামনে আছো।” এমনকি *কষ্টের সময়টা* পার করার সময়ও তাঁর চোখের সামনে। তিনি আমাদের খেয়াল রাখছেন। কী পরম শান্তি!
৩. আপনি শুধু এ কারণেই ধৈর্যধারণ করবেন না যে,
(ক) আল্লাহ্‌র নির্দেশ আপনার অবস্থার নিয়ন্ত্রণ করছে বরং এ কারণেও যে,
(খ) তিনি আপনাকে দেখছেন।
 তিনি হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক, এমনকি যখন আমাদের কষ্টের সময়, তখনো। প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে, আপনি তাঁর দৃষ্টি ও সুরক্ষার মধ্যে আছেন এবং আপনি ধৈর্যধারণে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতেও আপনার ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতাটা, আপনার প্রতি আপনার রবের বিশাল এক অনুগ্রহ ও উপহার।

সারকথা: আল্লাহ তাঁর সীমাহীন জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের পরিস্থিতি দেখছেন এবং আমাদের ধৈর্যধারণের সামর্থ্যটিও তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।
[ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ  ইয়াসমিন মোগাহেদ ]

সৃষ্টিরহস্যের আলোচনা

মে নেনে কে হামু বুত
মি গুফত আনাল হক
দার সুরাতে মনসুর
মনসুর না বুদা
কে বারাদার বারামাত
“জালালউদ্দিন রুমি


অক্সিজেন যদি থিসিস হয় এবং হাইড্রোজেন হয় এন্টিথিসিস এবং উভয়টার সংমিশ্রণে তথা সিনথেসিস যদি পানি হয় তবে কি বলতে পারি না যে, ফেরেস্তা থিসিস এবং শয়তান এন্টিথিসিস এবং উভয়ের সংমিশ্রনে তথা সিনথেসিসে আমরা পাই মানুষ। মানুষের গুণগত বৈশিষ্টকে যদি ভাগ করি তবে ফেরেস্তা তথা সম্পুর্ণ পবিত্র এবং শয়তান তথা সম্পুর্ণ অপবিত্র উভয়টারই সংমিশ্রন পাই । একই মানুষের আকারের মধ্যে আল্লাহর ওলিকেও পাই আবার একই মানুষের আকারের মধ্যে শয়তানকেও পাই । এই দ্বান্দিক বিশ্লেষণের ব্যাপ্তিটাই হলো সমস্ত পৃথিবীতে বাস করা মানুষগুলো, যেন একটা না থাকলে অন্যটার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না। আল্লাহ মানুষের পূর্বে ফেরেস্তাদের তৈরি করলেন। চরিত্রের বিশ্লেষণে ফেরেস্তা হলো সম্পূর্ণ ভাল (অ্যাবসোলিউট গুড) । এই সম্পুর্ণ ভালো ফেরেস্তাদের অপবিত্র কাজ করার কোন অধিকারই দেওয়া হলো না। কিন্তু এই সম্পুর্ন ভালোটাই তথা ফেরেস্তাদের আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ ভালো লাগলো না। তিনি বানালেন শয়তান । শয়তান হলো সম্পূর্ণ অপবিত্র (অ্যাবসোলিউট ব্যাড)। এই সম্পূর্ণ অপবিত্র তথা শয়তানকেও আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ খারাপ লাগলো। তাই তিনি সম্পূর্ণ ভালো ফেরেস্তা আর সম্পূর্ণ খারাপ শয়তানের সংমিশ্রণে বানালেন মানুষ । এই ফেরেস্তা এবং শয়তানের মিশ্রিত রুপ মানুষই আল্লার কাছে সবচাইতে প্রিয় । তাই মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তথা আশরাফুল মাখলুকাত (ক্রাউন অব দ্য ক্রিয়েশন) বলে ঘোষণা করলেন। নিদিষ্ট সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (লিমিটেড ফ্রি উইল অ্যান্ড চয়েজ) দেওয়া হলো। এই ইচ্ছাশক্তি তথা আমিত্ব বর্জন করে আল্লাহতে ফানা হয়ে যাবার ফর্মুলা দিলেন। আমিত্ব বর্জন করলেই আল্লাহর জাতের সঙ্গে মিশে যাবার সর্বোচ্চ পুরষ্কার পাবার কথা ঘোষণা করলেন।
[ সুত্রঃ সুফীবাদ-ডাঃ জাহান্গীর আল সুরেশ্বরী ]

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭

সালাত

আরবি ভাষায় যাকে সালাত বলা হয়, ফারসি ভাষায় তাকে বলা হয় নামাজ। আমরা সবাই এ নামাজের জন্য পরস্পর পরস্পরকে আহ্বান করে থাকি মসজিদসমূহে। বাংলা ভাষায় এই সালাত বা নামাজ এর অর্থ দাঁড়ায় যোগাযোগ। কোরান-এ আল্লাহ বলেনঃ ইন্নাস সালাতা লি জিকরি অর্থাৎ,“নিশ্চয়ই সালাত আমার (সহিত) সংযোগের জন্য।”
সালাত দুই প্রকারঃ 
(১) ওয়াক্তিয়া সালাত এবং
(২) দায়েমি সালাত।

ওয়াক্তিয়া সালাত এবং দায়েমি সালাত পাশাপাশি আলোচনা ও জ্ঞান-গভীর গবেষণা পাওয়া যায় যে সকল গ্রন্থে, তার মধ্যে নিম্ন বর্ণিত গ্রন্থসমূহ উলেখযোগ্যঃ

(ক) দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিনঃ খাজাবাবা 
(খ) মাত্লাউল উলূমঃ বাবা জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী
(গ) নিহ্নবে চিত্তদাহ :সুফিবাদ সার্বজনীনঃ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী।

হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.) যাঁকে আমরা খাজা বাবা বলে জানি, তাঁর রচিত গ্রন্থে (দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন) সালাত তথা নামাজের গভীর গবেষণামূলক আলোচনা পাওয়া যায়। ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী রচিত নিহ্নবে চিত্তদাহঃ সুফিবাদ সার্বজনীন - গ্রন্থে সালাতের ৮২ বার কোরান-এর তাগিদ সম্পর্কে এবং দায়েমি সালাত সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে।
(১) ওয়াক্তিয়া সালাতঃ শরিয়তের বিধান মোতাবেক মসজিদে কিংবা বাড়িতে সময় অনুযায়ী সালাত আমরা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করে থাকি। এ প্রকার সালাত ছোট বড় সকলেরই জানা। ধর্মীয় নিয়মনীতি ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনের জন্য তাগিদ রয়েছে যা পালন অবশ্যই কর্তব্য।
(২) দায়েমি সালাতঃ যে সালাত সার্বক্ষণিকভাবে বজায় রাখা হয় তাই দায়েমি সালাত। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, যে যোগাযোগ সার্বক্ষণিকভাবে বজায় রাখা হয় তা-ই দায়েমি সালাত। মহানবি বলছেনঃ "আসসালাতুদ দাওয়ামি আফজালুম মিনাল সালাতিল ওয়াক্তি" অর্থাৎ ওয়াক্তিয়া নামাজ হতে দায়েমি নামাজ অনেক মর্যাদাপূর্ণ। মহানবি দায়েমি সালাত বা নামাজে গুরত্ব আরোপ করেছেন। সালাত বা নামাজ মানে যদি যোগাযোগ হয়, তবে সে যোগাযোগ কার সঙ্গে? নিশ্চয়ই আলাহর সঙ্গে। দুনিয়ার সঙ্গে নয়। কারণ, যারা ঘোর দুনিয়াদার তারা দায়েমি সালাতি হতে পারে না। তরিকতপন্থী তথা গুরবাদী ব্যক্তিগণ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কামেল পীর/ গুরুর সাহায্য নিয়ে সাধনার মাধ্যমে নফ্স হতে খান্নাস তাড়ানোর পরে দায়েমি সালাত বা আলাহ্ র সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন। কোরান-এর সুরা মারেজের ২৩ নং আয়াতে দায়েমি সালাত সম্পর্কে বা আল্লাহর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের প্রসঙ্গে পাইঃ "আলাজিনাহুম আলা সালাতেহিম দায়েমুনা" অর্থাৎ “তারা সালাতের (নামাজের) উপর সব সময় অবস্থান করেন। সালাত সম্পর্কে মহানবির আরও অনেক হাদিস আছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না যেয়ে শুধু দু-একটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। জান্নাতের চাবি হলোঃ নামাজ আর নামাজের চাবিটি হলোঃ তাহারাত (পবিত্রতা)। আমরা অনেকেই “জান্নাতের চাবি নামাজ” এ বলেই শেষ করে দিই, কিন্তু নামাজের চাবিটি হলো পবিত্রতা” এইটুকু বলি না। পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ হয় না। ‘পবিত্রতা’ কথাটি শুধু দেহের বাহ্যিক পবিত্রতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে না। সালাতি যখন তার নফ্সের সাথে মিশে থাকা খান্নাসকে বের করে দিতে পারে তখন সত্যিকারের পবিত্রতা হয় এবং তখনই দায়েমি সালাত হয়। পানি কিংবা সাবানের সাহায্যে যতই পরিষ্কার করার পবিত্রতা আনয়নের চেষ্টা করা হোক না কেন, আসল বা হাকিকি পবিত্রতার প্রশ্নে তা বুঝানো হয় নাই বা তা সম্ভব নয়। ওয়াক্তিয়া সালাত পালনের জন্য সময় নির্ধারিত থাকে কিন্তু দায়েমি সালাতের সময় নির্ধারিত নয়, বরং সার্বক্ষণিক। ওয়াক্তিয়া সালাতের সঙ্গে রুকু-সেজদার বিষয়টি দৃশ্যমান বা দেখা যায় কিন্তু দায়েমি সালাত নিজের মধ্যে
যোগাযোগের ধারা গভীরভাবে ধারণ করে রাখে, যা বাইরে থেকে বোঝা খুব কঠিন। আলাহর সাথে গভীর প্রেম করেন ওলি, গাউস, কুতুব, পীর, ফকির, দরবেশ, সাধকগণ। আলাহর সাথে বান্দার এরূপ গভীর ভালোবাসা বন্দেগির একাগ্রতা না হলে সম্ভব নয়। নির্জনে, লোকচক্ষুর আড়ালে, গোপনে, হৃদয়ে ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে যে বন্দেগি করা হয় সেরূপ বন্দেগিই আলাহ পছন্দ করেন বলে আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কারণ, লোক-দেখানো বন্দেগি করা সম্পর্কে সুরা মাউনে সাবধান করে দিয়েছেন। যার কারণে রাতের গভীরে সাধক ধ্যানসাধনার কার্যটি গোপনে সম্পন্ন করেন। এটা ছাড়াও বলতে গেলে বলতে হয় যে যত বন্দেগির কথা কোরান-এ পাই তা রাতের বেলায় নির্জনে গোপনে। যেমনঃ কদর রাত হয় রাত্রিতে। সিয়াম পূর্ণ কর রাত্রির দিকে (২ঃ১৮৭)। রাত্রে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে তাগিদ (সুরা মোজাম্মেল) ইত্যাদি। তবে কথা হলো যে, সবার জন্য দায়েমি সালাত নয়। সবার জন্য হেরা গুহার ধ্যানসাধনা নয়। সবার জন্য পীর-মোর্শেদ নয়। তকদির নামক বিষয়কে যদি বিশ্বাস করি, তবে এই বলতে পারি যে, কেউ ওলি, গাউস, কুতুব, দরবেশ, পীর, ফকির হবে। আবার কেউ মানুষের মাথায় আঘাত করে সর্বস্ব লুণ্ঠন করবে। কেউ আলাহর সাথে দিদার বা প্রেম করার জন্য সর্বস্ব হারিয়ে বনজঙ্গলে ধ্যানসাধনায় মগ্ন হবে। আবার কেউ কোটিপতি বা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নেবে। তকদির নামক বিষয়কে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মেনে নিতে হয়। জগতে বড় বড় মুনি-ঋষিগণ সবাই গুরু বা মোর্শেদ বা পীর ধরেছেন। সর্বশক্তিমান আলাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য। একজন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন পীর বা ওলির শিক্ষা নিয়ে বা তাঁকে অনুসরণ করে সত্যের সন্ধান করা ভালো ?  না-কি নিজে নিজে সন্ধান করা ভালো ?  তা একটু গভীরভাবে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলে বোঝা যাবে। সত্যের সন্ধান করতে হলে নিরপেক্ষ জ্ঞান গবেষণা প্রয়োজন।

আসসালাতু মেরাজুল মোমেনিন অর্থাৎ, সালাত মোমিন ব্যক্তির জন্য মেরাজ। কিন্তু বলা হয় নাই যে আসসালাতু মেরাজুল আমানু তথা সালাত আমানুর জন্য মেরাজ তথা আল্লাহ দর্শন । তেমনি হাদিসে পাই, কুলুবুল মোমিনলু আরশ আল্লাহ । মোমিনের কলবে আলাহর বাসস্থান। এখানেও মোমিনের জায়গায় আমানু বলা হয় নাই। কারণ মোমিন ও আমানুর মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। মনকে লোভ-মোহমুক্ত করার পরে নফ্স হতে খান্নাস দূর করার পরে একটা মহাশূন্য ভাব সৃষ্টি হয়, আর তখনই দায়েমি সালাত হয়। মনের মধ্যে বিভিন্ন বা জঞ্জাল থাকলে সালাত হয় না। মনের মধ্যে মোহযুক্ত খারাপ চাহিদা থাকলে মন তখন অকারণে জঞ্জালযুক্ত অনেক চিন্তার গোলাম হয়ে যায়। এ অবস্থায় সালাত সম্ভব নয়। সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ইয়া আইয়্যুহালাজিনা আমানু লা তাকরাবুস সালাতা ওয়া আনতুম সুকারা । শুকারা বলতে সাধারণ মানুষ আপন খেয়ালে নেশাগ্রস্ত বুঝায়। রূপক অর্থেঃ চিনির মতো নেশা অর্থাৎ ক্ষুদ্র নেশা। মনের মধ্যে ক্ষুদ্রতম নেশা নিয়েও সালাতের ধারে কাছে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। সে জন্য আল্লাহ কোরান-এ ধমকের ভাষায় যা বলছেন তার মর্মকথা হলোঃ “সালাতের ধারে কাছে এসো না যে পর্যন্ত তুমি নেশাগ্রস্ত (চিনির নেশায়) থাকো”। এখানে চিনির নেশা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য এটা বোঝানো যে, সাধারণ বস্তুর মোহ মনের মধ্যে লেগে থাকলে আলাহর সাথে সালাতির যোগযোগ সম্ভব নয়। সুরা মোমিনের ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ ফা কালা রাব্বুকুম উদ্উনি আসতা জেবলাকুম। এখানে উদ্উনি অর্থ একাকী। আলাহ বলেনঃ “একাকী ডাক দাও তবে আমি অবশ্যই ডাকের জবাব দেব।” এখানে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে একা হলে একা বুঝায় না, বরং নফ্স-এর মধ্যে যে খান্নাস আছেঃ মিন সাররিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস (সুরা নাস) তা বের করে একা হলে আল্লাহ ডাকের জবাব দেবেন। শর্ত হচ্ছে একা হওয়া। সাধনা ছাড়া মোরাকাবা-মোশাহেদা ব্যতীত খান্নাস তাড়ানো সম্ভব নয় এবং একা হওয়া সম্ভব নয়। উদ্উনি অর্থ হচ্ছে একা তথা একবচন। উদ্উনা অর্থ হচ্ছে, একের অধিক তথা বহুবচন। একা না হলে বা একা হতে না পারলে আলাহ ডাকের জবাব দেবেন না এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় উক্ত আয়াতে। তাই গভীর ধ্যানসাধনা তথা মোরাকাবা-মোশাহেদার মাধ্যমে যখন নিজের ভিতরে খানড়বাস নামক শয়তান দূর করা যায় তখন সাধক একা হয়েছেন এমন বোঝায় এবং এমন শর্তে আল্লাহ কোরান-এ ঘোষণা দেন এইভাবে যে, “একাকী ডাক দাও তবেই আমি ডাকের জবাব দেবো।” খানড়বাস তাড়ানো সম্ভব হলে উক্ত সালাতি ব্যক্তির দায়েমি সালাত বা সার্বক্ষণিক সালাত (নামাজ) কায়েম হয়।

সালাত সম্পর্কে চিশতিয়া তরিকতের শিরোমণি হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.) যাঁকে আমরা সম্মাান করে খাজা বাবা বলে সম্বোধন করে থাকি, তাঁরই রচিত দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন কেতাবের বাংলায় অনুবাদ করেছেন জনাব জেহাদুল ইসলাম ও ড. সাইফুল ইসলাম খান।  এই কেতাবে আমাদের প্রিয় মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাহাবি এবং খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর নিকট নামাজ/ সালাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। খাজা বাবা রচিত সে মূল্যবান কেতাব দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন-এ নামাজের হাকিকত সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তা সবাইকে অবাক করে দেয়। মুক্তভাবে নিরপেক্ষভাবে তা গবেষণা করা উত্তম।
[ তথ্যসুত্রঃ সুফীবাদ এবং ইন্টারনেট ]

রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭

অনুকাব্যঃ চেরাগ.ই.ইশক


অনুকাব্যঃ চেরাগ.ই ইশক
------------------------
তোমারই ইশক.কেতে যে জন জ্বলে দিবা-নিশি
হরদম ডাকে তোমায়, গেয়ে প্রেমের গীতি।
নাই তো আশ তার সহায় সম্পত্তিতে
তবুও ডাকে তোমায় পাপিয়া সংগীতে।।
কোকিলের কুহু ডাক, কিংবা বুলবুলির
তোমারই শান তার অমৃত বুলি।।
চেরাগে চিশতী তুমি, হৃদয়ের ধ্বনি
তোমাকেই জানি মানি, তুমি.ই. অন্তর্যামী।।
অধীনে দীনহীন কাঙালে কয়
তোমাতেই থাকি যেন সদা তুমিময়।।
#স্বপন #চিশতী





 অনুকাব্যঃ অনুযোগ
------------------
দানপাত্র হাতে দিয়ে তুমি, সাজিয়েছো দাতা
বিচারকের আসনে বসে, সাজিয়েছো ত্রাতা।
জালিমেরে দিয়ে তুমি বাড়াও তোমার শান,
বুঝিনা আমি, কি করে সাজো তুমি রহিম-রহমান ?

#স্বপন #চিশতী