পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

সেলফিঃ অন্যদৃষ্টি-দৃষ্টিরভিন্নতা

মিতু বেশ কায়দা করে নাক-মুখ কুঁচকে একটি ছবি তুললো। তারপর সে ছবি দেখলো। নাহ! ছবিটি তার মনের মতো হয়নি। সে বেশ কায়দা করে আরেকটা ছবি তুললো। তারপর সেই ছবিটি সে তার ফেসবুকে আপলোড করে পোষ্টে লিখলোঃ
"বন্ধুরা বাদাম খাচ্ছি। দ্যাখোতো কেমন দেখাচ্ছে আমাকে..."
মিতুর সেই আপলোড করা সেই ছবিটি দেখে তার বন্ধুরা কেউ লাইক দিল। কেউ বা কমেন্টস করলো। কেউ বা শেয়ার করলো।
মিতুর সেই ছবিটি শাহেদ দেখতে পেল। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই ছবিটির দিকে। ছবিটি দেখে শাহেদের ভাবুক মন কেমন যেন উদাস হয়ে গেল। সে মনে মনে বললোঃ আচ্ছা এই যে ছবিটি আমি দেখছি...এটা কি তারই ছবি...যে মনের ভেতর বসত করছে? যাকে জানার জন্য প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থেই তাগিদ দেয়া হয়েছে…..বলা হয়েছে আত্মানং বিধি। কিংবা সক্রেটিসের সেই মহান উক্তিঃ know thyself. কিংবা মশহুদ হাদিস শরীফের বর্ণনাঃ “মান আরাফা নাফসাহু ফাক্কাদ আরাফা রাব্বাহু”। যে নিজেকে জেনেছে সে তার প্রভুকে জেনেছে?
আত্মা তো পন্ঞ্চ ভৌতিক উপাদান ক্ষিতি, অব, তেজ, মরুৎ, ব্যোম এর সংমিশ্রণে তৈরী পোষাক বিশেষ। সেই পোষাকের ভেতর যে অংগ-প্রতঙ্গগুলো রয়েছে, সেগুলোকে ঢেকে রাখার একটা পর্দা বিশেষ। কিন্ত্তু যিনি এই অংগ-প্রতঙ্গগুলো পরিচালনা করছেন, তিনি কি সেই, যাকে আমি দেখছি…..না-কি তার ছায়া বিশেষ…সর্বস্ব তুমি কাহারো ছায়া…

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

তৈলাক্ত বাঁশের নতুন অংকঃ সফলতাই উন্নয়নের মুলমন্ত্র

আজিজ মাষ্টার প্রাইমারী স্কুলের পিটি শিক্ষক। সেই আজিজ মাষ্টার আজকে একটা মজার খেলা খেলছে। সে পিটি ক্লাসের ছেলেপুলেদের দিকে তাকিয়ে বলছেনঃ
-আচ্ছা তোরা কি তৈলাক্ত বাঁশের অংকটা করেছিলি....
ছেলেরা সমস্বরে হ্যাঁ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিন্ত্তু আজিজ মাষ্টরের সন্দেহ হল। সে আবারো বললোঃ
-যারা যারা অংকটা করেছিস, তারা হাত তোল....
দেখা গেল উপস্থিত সংখ্যার আধিক্যটাই বেশি। সেটা দেখে সে বেশ খুশি হলো। সে সমস্ত ছেলেদেরকে দুটি ভাগে ভাগ করলো। তারপর যারা করেছে, তাদের একদিকে আর যারা করেনি, তাদের অন্য দিকে রাখলেন। এরপর তিনি স্কুলের মাঠে একটি আট-দশ ফুট লম্বা বাঁশে ভালো করে তেল মালিশ করলেন। তারপর সেই বাঁশের মাথায় একটা সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে দিলেন। সেখানে লেখাঃ "বর্তমান সময়ে উন্নয়নের চাবিকাঠি। সাফল্যের মুলমন্ত্র "।
তিনি অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে সেই তেলমাখা বাঁশটি মাঠের মধ্যে পুঁতে রাখলেন। এরপর যে সমস্ত ছেলেরা অংকটা করেছে-তাদের ডাকলেন। তারপর বললেনঃ

-এই বাঁশের মাথায় যে সাইনবোর্ডটি দেখছিস, যে আগে এই সাইনবোর্ডটি এনে আমার কাছে দিবি, তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার।

-কি পুরস্কার, স্যার? ছেলেরা জানতে চাইলো।

-আরে আগে তো সাইনবোর্ডটি আন। তারপর পুরস্কার। আচ্ছা, সবাই জামা খুলে ফেল্। যখন আমি বাঁশিতে ফুঁ দেব, তোরা শুরু করে দিবি। ঠিক আছে...যা সবাই যা।

ছেলেরা উন্নয়নের চাবিকাঠি ধরার জন্য এবং পুরস্কার পাওয়ার জন্য ইতি মধ্যেই লম্ফ জম্ফ শুরু করে দিয়েছে। অনেককেই দেখা গেল বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আজিজ স্যারের দিকে। সেটা দেখে স্যারও মহা খুশি। তিনি আর দেরী করলেন না...রেড়ি ওয়ান...টু...থ্রি বলে বাঁশিতে ফুঁ দিলেন। আর অম্মনিতেই শুরু হলে গেল নাচন কুর্দন। একজন উঠতে চায়তো আরেকজন ঠেলে ধরে...সবারই দৃষ্টি ঐ সাইনবোর্ডটির দিকে। অন্য কোন দিকে তাদের মন নেই....ধ্যান নেই....তাদের লক্ষ্য একটাই উন্নয়নের চাবি। আর সাথে পুরস্কার।

আজিজ স্যার লক্ষ্য করলেনঃ ছেলেরা ইতিমধ্যেই মারামারি শুরু করে দিয়েছে। কেউ তাকিয়ে দেখছে...স্যার কিছু বলেন কি-না? কিন্ত্তু যখন দেখলো স্যার তেমন কিছুই বলছে না...তখন তারাও বুঝলো....এখন স্যার কি বলবে না। কারণ তিনিতো তাদেরকেই বলেছেন যেভাবে পারিস ঐ সাইনবোর্ড লেখা কাগজটি স্যারের হাতে দিতে। কাজেই যারা এ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো...স্যারের মৌন সম্মতি আছে, তখনই তারা দ্বিগুণ উৎসাহে মারামারি করছে।
আজিজ স্যার চেয়ারে বসে ছেলেদের মারামারি দেখছেন আর হাসছেন। তার সাথে যোগ দিয়েছে সেই ছেলেপুলেরা যারা অংকটা করেনি। তারাও স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে হাসছে...

তারা দেখছেঃ সারভাইভার ফর দ্যা ফিটেস্ট.....ওয়েলিং ব্যামবো...ক্লাইবিং দ্যা চিন্ডেন।

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

বিউটিকুইন নিউ অপেরা হাউসঃ মনার অনুভব

শীতের আমেজ আসতে শুরু করেছে কেবল। এরই মধ্যে মধ্যরাতে শিশিরের ফোটা আর কুয়াশায় ঘেরা চাদর প্রকৃতি ফেলতে শুরু করেছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে য়াত্রাগান, পালাগানের শিল্পীদের তোড়জোড়। শীতের রাত দীর্ঘ হয় বলে এ সময়টাতেই বেশি চলে এই পালা উৎসব। বিউটিকুন নিউ অপেরা হাউস ঠিক সে রকমভাবেই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে। তাদের সামনে একটি অনুষ্ঠান করার কথা আছে। সেই অনুষ্ঠানে যাবার আগে যাত্রাগানের রিহার্সেল চলছে.....

মনা সেই অনুষ্ঠান দেখার জন্য একটি কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে। সে দেখছে-যাত্রাদলের লোকজন কি ভাবে সাজছে। কেউ গায়ে রাজা-বাদশার পোষাক পড়ে নিজেকে রাজা ভেবে বলছেঃ সেনাপতি....সেনাপতি ..এই কে আছিস..এক্ষুণি মন্ত্রীকে খবর দাও....কেউ হয়তো সেনাপতি সেজে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে যাবার প্রস্ততি নিচ্ছে...একটি লোহার তলোয়ার নিয়ে আপনা আপনি নাচাচ্ছে...কেউ বা বাইজি সেজে নাচছে...তবলা বাদক তবলায় টোকা দিচ্ছে...আর বলছে...তা...ধিন ধিন..ধিন না..তুন না...তা তিন..তিন না...সেই শব্দ শুনে বাইজী হাল্কা তালে নাচছে....

পাশে বসা নাট্য পরিচালক পান্ডুলিপি নিয়ে হাল্কা শব্দে উচ্চারণ করছে আর সেই কথা শুনে শুনে অভিনেতা অভিনেত্রীরা সংলাপ বলছে। ভুল হলেই সে ক্ষেপে যাচ্ছে আর সংলাপ ভালো করে শুনতে বলছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চরিত্রের বাইরে কাউকে কোন কথা বলতে শুনছে না....

মনা মুগ্ধ হয়ে দেখছে....সবকিছু। এরমধ্যে সে দেখলো সফেদ দাঁড়িওয়ালা সাদা পায়জামা-পান্ঞ্জাবী গায়ে দিয়ে একটি লোক হাতে একতারা নিয়ে গান গাইতে গাইতে বলছে....ওরে বেভুল...তুই...

যাত্রাদলের মালিক রহিম সাহেব মনার পাশেই বসা ছিল। মনাকে দেখে রহিম সাহেব জিগ্যেস করলোঃ

-ভাইজান কেমুন বুঝতাছেন? ব্যবসা করতে পারমু তো....

মনা রহিম সাহেবের সেই কথার কোন উত্তর দিল না। সে ভাবতে শুরু করলো তার নিজের মতো করে।

এই মহা বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা রব রুপে সকলেরই মাঝে বিরাজিত। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেনঃ সুন্দরতম আকৃতিতে। জমিনের বুকে সে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিচিত। সেই রবই তার মাঝে বিরাাজিত। তিনি যা বলছেন, আমরা কি তা শুনতে পাচ্ছি...যেমনটা এই যাত্রাপালার নাট্যপরিচালক হাল্কা শব্দে উচ্চারণ করছেন? যখন ভুল করেছন...তখন বিবেক এসে যেমন গান করে জানান দেয়, ঠিক তদ্রুপ আমরাও ভুল করলে আমাদের বিবেক এসে কি জানান দেয়? যদি দেয়, তাহলে সেই ভুল আমরা সংশোধন করছি না কেন ....না-কি না করাটাও আমাদের নাট্যচরিত্রেরই অংশ...

মনা যেন দেখতে পেল বিউটিকুইন নিউ অপেরা হাউসের মালিকের মতো তারই মালিক যিনি সমগ্র জগতের পরিচালক, তিনিও তার অপেরা হা্উসকে প্রতি নিয়তই সাজাচ্ছেন নিত্য নতুন রুপে। তার কথা কেউ শুনতে পায়...কেউ পায় না..কেউ তার নাট্য পরিচালককে দেখতে পায়, কেউ পায় না...সবই যেন সেই চিত্রনাট্য সাজানোর মতো করেই সাজানো....ভালো-মন্দ মিলিয়েই এই বিউটিকুন নিউ অপেরা হাউস।

"জিন্দেগী আপনি যব ইস শাকাল ছে গুজরি গালিব
হাম ভি ক্যা ইয়াদ করেগি কি খোদা রাখতে থি।"

-মীর্জা গালিব

ডিজিটাল ফকিরঃ মনে বুঝিলাম তাহারা অন্য জাতের মানুষ

অাধুনিক যুগে অতি আধুনিক ফকির হচ্ছে ডিজিটাল ফকির। ভাবছেন ডিজিটাল ফকির কি জিনিস? যারা আমার মতো ল্যাপটপ কাঁধে নিয়ে অফিসে অফিসে ওয়েবসাইটের কাজের জন্য ঘুরে বেড়ায়, তারাই হচ্ছে আধুনিক কালের ডিজিটাল ফকির। কেন বললাম এই কথাটা? তাহলে শুনুনঃ-
নতুন বাজার ভাটারা থানা থেকে দশ টাকা রিক্সাভাড়া। আমিনউদ্দিন মার্কেটের সামনেই একটা নাম করা অফিসে কাজের সন্ধান পাই। আমারই এক বন্ধু মাসুম ভাইয়ের মাধ্যমে। মাসুম ভাই আমাকে ফোন দেয়। তো অামি সেই ফোন পেয়ে ঝোলাটা (ল্যাটপট) কাঁধে নিয়ে দে ছুট। অফিসে ঢূকতেই মাথা ঘুরে গেল। এত্ত বড়ো অফিস..বাপরে বাপ....না জানি কতো টাকার কাজ দেয়...আমিতো মনে মনে মহা খুশি....যাক্ শেষ বেলায় একটা কাজ পেলে খারাপ কি? তাছাড়া পকেটও খালি। কি করি...হেনতেন ভাবতে থাকি..আর মনে মনে ভাবতে থাকি...কাজটাতো সিম্পল। দু একদিনের মধ্যেই করে ফেলা যাবে। কিন্ত্তু কতো নিবো..এই যখন ভাবছি তখন সে আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে যায়....গ্রিল মুরগী আর রুটি। সাথে কোকাকোলা...খাচ্ছি আর ভাবছি...লোকটাতো ভালোই...বিনা মুল্যে এত ভালো খাবার পেলাম। পঁচিশ চেয়ে লাভ নেই। বিশের মধ্যেই করে দিব। এটাই ঠিক করে রাখলাম। সেই খাবার টেবিলেই খাবার খেতে খেতে তার ওয়েবসাইটের ব্যাপারে কথা হলো। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই কাজটা করে দেব। তাকে আামার অফারের কথাটা বললাম। সে সাথে সাথে লাফ দিয়ে ওঠে বললোঃ বি....শ হাজার টা....কা। আরে ভাই কালকে আরেক জন অাসছিল..সেতো বলেছে....দশ হাজার টাকা....তার কথা শুনে এবার আমার লাফ দেবার পালা...এটাতো বেশ জটিল কাজ । আমরা অনেকদিন ধরে এই কাজের সাথে জড়িত আছি বলেই কাজটা সহজ মনে হচ্ছে....প্রথম প্রখম এরকম একটি সাইট তৈরী করতে কম করে হলেও দশ-বারো দিন লেগে যাবে। সেই কাজটাই করতে চাইছে....মাত্র দশ হাজার টাকায়....ঠিক আছে...বিশ না দিলেন পনেরো হাজার দিতেই হবে। আমি কোক খেতে খেতে বললাম।
ভদ্রলোক পকেট থেকে সাথে সাথে চেক বই বের করে সই করে সাইনঅাপ মানি হিসেবে পাঁচ হাজার টাকার চেক দিল। অামি তো মনে মনে মহা খুশি....একেবারে খুশিতে বাগ বাগ....ফাঁকা পকেটে চাকা লাগতে শুরু করেছে...
বাড়িতে ফোন করলাম..তুমি চিন্তা করো না..অামি কালকেই তোমাকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেব। এখন কাজ করতে দাও....আমার গিন্নিতো খুশিতে আটখানা...কালকেই টাকা পাবে....আর আমি রাত জেগে জেগে কাজ করে সেই চেকটা নিয়ে পরদিন সকালে ব্যাংকে গেলাম।
ব্যাংকে দেখলাম এক সুন্দরী উর্ব্বশী কর্মকর্তা। তার কাছে চেকটা দিলাম। সে চেকটি নিয়ে কমপিউটারে টিপে টাপে মুখে অদ্ভুত হাসি নিয়ে বেশ কোমল গলায় বললোঃ ভাইয়্যা একাউন্টে টাকা নেই। ব্ল্যাপ দিয়েছে আপনাকে......চেকটা হাতে নিয়ে আমি ফোন করলাম সেই সুদর্শন অতিথিকে। যিনি আমাকে আপ্যায়ন করে দ্রুত ফেনী হতে ঢাকায় এনে কাজটা দিয়েছেন। দেখলাম, সে ফোন তুলছে না....মাথা ঘুরে গেল..খবর নিয়ে জানতে পারলাম...সে নেই....বাহিরে চলে গেছে......তার কাজটা অনলাইনে এখনো অাছে...কেবল নেই আমার পারিশ্রমিকের টাকা.....মনে মনে বুঝিলাম ইহারা অন্য জাতের মানুষ।...সেই অন্যজাতের লোকটার দেশের বাড়ীর নামটা নাই বা বললাম...পাঠকরা অনুমান করে নিয়েন। এই অন্য জাতের লোকদের কারণেই আমার স্বপ্ন বার বার ভংগ হয়.....হৃদয় হয় খন্ড বিখন্ড.....

Neither visible naked eye or microscopic vision 
but internal vision that my heart bleeds.......

গল্প নয়..সত্য....

অণু গল্পঃ মনা পাগলার তত্ত্বনির্যাস

অাধ্যাত্মিক দর্শন এবং সুফীবাদ কি? সুফী কারা? প্রশ্নটা জানতে চাওয়া হয়েছিল মনার কাছে।
প্রশ্নটা শুনে মনা কিছু বললো না। শুধু একটা সাদা কাফনের কাপড় আর হাতে একটা কলার থোড় (কলার মোচা) নিয়ে আসলো। তারপর সেটাকে বিছালো। সেই কাফনের কাপড়ের বাম পাশটাতে কলার মোচাটা রেখে বললোঃ

-জ্ঞান থাকলে এই বার বুঝে নে....

-কি করলেন...কিছুইতো বুঝবার পারতাছি না....

নিজ দর্পণ ও দর্শনঃ অনুভবের নতুন দিগন্ত

মনা আমাকে ডেকে বললোঃ
-কি রে কি করছিস?
-তেমন কিছু না। বসে আছি।
-একটা গল্প শুনবি।
-বলো। তার আগে বলো তুমি কেন আমাকে গল্প শুনাতে চাইছো?
-গল্পটির মধ্যে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। দেখি তুই ধরতে পারিস কি-না?
-ঠিক আছে। বল....
মনা তার গল্প বলা শুরু করলোঃ শোন তাহলে-
এক বনে ভেতর মনের সুখে বাস করতো পশু-পাখিরা। তাদের মধ্যে কোন মনমালিন্য ছিল না। ছিল না কোন বিভেদ। বনের রাজা সিংহ মশাই তাই আরামেই দিন গুজরান করছিল। তার মন্ত্রী মশাই বাঘ মামা নাকে তেল দিয়ে অঘোরে ঘুমাতো। কিন্ত্তু বিপদে ছিল পন্ডিত মশাই শিয়াল মামার । রাজার আদেশ ছিল প্রজাদের খোঁজ খবর নেবার। সে দুর দুরান্তে প্রত্যন্ত অন্ঞ্চলে ঘুরে ফিরে প্রজাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরে খবরাখবর নিত। কে কেমন আছে?
একদিন সেই শিয়াল গেল দুরের কোন এক গ্রামে। মাথার উপর তখন প্রচন্ড রোদের তাপ। উত্তাপে শিয়াল বেশ কাহিল হয়ে পড়লো। আশে পাশে কারো কাছে যে আশ্রয় নেবে সেই উপায়ও নেই। কি করা...বেচারা কষ্ট করে হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছ তলায় আশ্রয় নিল। সেই সময় সে চিন্তা করলো ক্ষাণিকক্ষণ বিশ্রাম নিলে মন্দ হতো না। কিন্ত্তু তার আগে পেট পুরে পানি খাওয়া দরকার। কোথায় পানি পাওয়া যায়...কিছু দুর হাঁটার পর সে একটা পুকুর দেখতে পেল। পরিস্কার স্বচ্ছ পানি। সে আজলা ভরে পানি পান করলো। হটাৎ সে দেখতে পেল সেই পানিতে তারই মতো দেখতে অবিকল আরেকটি শিয়াল। আরে..এটা আবার কে...প্রথমে সে ঘাবড়ে গেল। তারপর সে আবারো উঁকি দিল সেই পুকুরে। দেখলো-তারই মতো দেখতে...অবিকল সে-ই যেন। নিজেকে নিজে দেখতে পেয়ে শেয়ালের মনে আনন্দ আর ধরে না..সে নাচতে নাচতে গাইতে শুরু করে দিলঃ-
আমি দেখেছি আমারে, গভীর কালো পদ্মজলে
আমার আমিকে খুঁজে ফিরে পেয়েছি আজ সদ্যমুলে।
গান গাইতে গাইতে সে যাচ্ছে আর নাচছে। শেয়াল পন্ডিত বলে কথা। আশে পাশের বনের সমস্ত পশু-পাখি শেয়ালের গান শুনে হতভম্ভ হয়ে গেল..তারা বুঝতে পারলো না...তার সেই গীত নৃত্যের মর্ম কথা।
এদিকে সেই কথা বনের রাজা সিংহ মশাইয়ের কানেও গেল। সে মন্ত্রীকে আদেশ করলোঃ যাও...এক্ষুণি ঐ ব্যাটাকে ধরে নিয়ে এস। যথা আজ্ঞা বলে মন্ত্রী মহাদয় বেরিয়ে পড়লো। তারপর সে শিয়াল ব্যাটাকে ধরে নিয়ে আসা হলো রাজ সভায়। সিংহ মশাই শেয়ালের কাছে জানতে চাইলো-মুল বিষয়টি কি?
শেয়াল সবিস্তারে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। শুনে সিংহ মশাইও সেটা দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলো। সাথে অনেকেই গেল।
সত্যিইতো...সিংহ তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি যে নিজেকে দেখা যায়...বাঘও বাদ গেল না..একে একে সকলেই নিজেকে দেখার আগ্রহ নিয়ে যখন দেখা শুরু করলো-ঠিক তখনই পুকুরটির পাড় ভেঙ্গে হুড়মুড় করে সবাই পানিতে পড়ে গেল। তারপর কে কার আগে উঠবে, সে প্রতিযোগীতায় মত্ত হয়ে সকলেই ডুবে মরলো।
দুরে দাঁড়িয়ে শেয়াল তখন বললোঃ
"যখন আমি আমাকে দেখলাম - একা দেখলাম। যখন সকলকেই দেখলাম - আমরা হলাম। তাও ঠিক ছিল। কিন্ত্তু সকলই যখন সকলকে দেখতে চাইলো তখনই সর্বনাশ হলো।"
এখন বল। এই গল্পটি থেকে তুই কি শিখলি?
-গল্পতো গল্পই। এর থেকে শেখার কি আছে?
-আছে রে বোকা। সব গল্পই কেবল গল্প নয়। গল্পের ভেতরও রহস্যময়তা লুকিয়ে থাকে। তুই যদি ভালো করে লক্ষ্য করিস, তাহলে দেখবি ধর্মগ্রন্থগুলিও বিভিন্ন নবী-রসুলদের কেচ্ছা-কাহিনীর বর্ণনা আছে। আবার যদি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ দেখিস,তো সেখানেও পাবি গল্প। যেমনঃ গীতায় অর্জুনের সাথে শ্রীকৃষ্ণের কথোপকথন। আবার রামায়ণে সীতার কাহিনী বর্ণিত আছে। প্রতিটি ধর্মগ্রণ্থেই গল্পের অবতারণা করা হয়েছে। এছাড়া মসনবী শরীফেও গল্প আছে।
-তাই না-কি?
-হ্যাঁ ঠিক তাই। তুই পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলি ভালো করে পড়ে দেখিস। তাহলেই আমার কথার সত্যতা পাবি। এখন বল্ এই গল্প থেকে তুই কি শিখলি?
-শিখলাম এটাই যে, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন রব রুপে প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই নিহিত আছেন সুপ্তাবস্থায়। এই রবকে দেখার জন্য নির্জন সাধনা একান্ত প্রয়োজন। যখন সাধনায় সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়, তখন রব জাগ্রত হয়ে তার সম্মুখে জাহির হয়। সেটাকে তখন হুর বলে। এই হুর দর্শন তথা আমাকে আমি দর্শন করার সমতুল্য। যেমন শিয়াল মহাশয় একা পানি খেতে যেয়ে নিজেকে দেখেছে। এইটাই তার দর্শন। সে তার ভেতর যে আমি রুপী রব আছে, সেটা অনুভব করতে পেরেছে। একে একে সবাই তা অনুভব করতে পেরেছে। কিন্ত্তু সকলেই সেই রবের দর্শন পায়নি। কাজেই নির্জন সাধনা ব্যতীত রবের দর্শন সম্ভবপর নয়।
-শিয়াল কি বলেছিল? শিয়াল বলেছিলঃ যখন আমি আমাকে দেখলাম - একা দেখলাম। তার মানে সে নিঃস্ব। নিজেই নিজের মধ্যে বন্ধী ছিল। যখন সকলকেই দেখলাম - আমরা হলাম। অর্থাৎ যখন সকলেই একসাথে দেখলো তখন তারা তাদের মধ্যে নিজেেদরকে দেখে আমরা হয়েছে। যেমনঃ সিংহ দেখেছে আমি, বাঘ দেখেছে আমি, হরিণ দেখেছে আমি। এই আমি-এর সমষ্ঠিই হচ্ছে আমরা। অর্থাৎ আমরা-আমি, তুমি, সে। আনা-লতিফা-মুনজিল। এরুপে প্রকাশ। প্রথমে হযরত আদম (আঃ)। এরপর হযরত হাওয়া (আঃ)। তারপর তাদের মাধ্যমে জগতের প্রকাশ। আমরা আসলাম। বুঝা গেছে কিছু?

আমি আর কিছু বললাম না। কেবল তাকিয়ে দেখলাম মনার দিকে.....কেমন যেন অদ্ভুত দেখাচ্ছে মনাকে।

ময়না ও মনা পাগলার কথোপকথনঃ অনুভবের এক নতুন দিগন্ত

মনা একটি ময়না পাখি কিনে এনেছে। মনা শুনেছে ময়নার ভোকালকড নাকি মানুষের কাছাকাছি। তাকে শিক্ষা দিলে সে সবকিছু বলতে পারে। তাই মনার খেয়াল হলো সে তার কেনা ময়নাটিকে কথা শেখাবে। কিন্ত্তু কি শিখাবে? অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করলো তার যা ইচ্ছা তাই সে শেখাবে। তার আগে তাকে তার নিজের ভাষা শেখাবে। যাতে সে সব কিছুই বলতে পারে।
মনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সে ময়নাটিকে কথা বলাতে সমর্থ্য হলো। একদিন মনা তার প্রিয় ময়নাটিকে জিগ্যেস করলোঃ
-আচ্ছা তুই যখন জঙ্গলে ছিলি তখন কি ভালো ছিলি না-কি এখন ভালো আছিস?
উত্তরে ময়নাটি বললোঃ
-আমি যখন জঙ্গলে ছিলাম তখন স্বাধীন ছিলাম। উন্মুক্ত আকাশে দিগন্ত জোড়া ডানা মেলে উড়তে পারতাম। দিক বিদিগ ছুটে বেড়াতে পারতাম। আমার স্বজাতীয়দের সাথে কথা ভাব-ভালোবাসা বিনিময় করতে পারতাম। কতো সুখে ছিলাম আমি। তুমি আমাকে ঐ মুক্ত অবস্থা হতে ধরে এনে এই খাঁচায় বন্দী করেছো। এখন আমি না পারছি ঐ নির্মল আকাশে উড়তে, না পারছি আমার স্বজাতীয়দের সাথে মেলা মেশা করতে? তুমিই আমার সর্বনাশ করেছো?
-কিভাবে আমি তোর সর্বনাশ করলাম?
-তুমি আমাকে তোমার ভাষা শিখিয়ে তোমার মতো করে গড়ে তুলেছো। তোমার ভাষায় আমি আমার স্বজাতীয়দের সাথে ভাব-ভালোবাসা বিনিময় করতে পারবো না। তারা আমার কথা বুঝবে না...যেহেতু তুমি তোমার মতো করেই আমাকে বির্নিমাণ করেছো।
-তাহলে তুই আমার ভাষা কেন শিখলি?
-তুমি শিখিয়েছো তাই। আমিতো প্রথমে শিখতেই চাইনি। তুমি আমাকে বন্ধী করে জোর করে শিখিয়েছো। না শিখতে চাইলে তুমি আমাকে মারতে...আহার বন্ধ করে দিতে...আমি অনাহারে থেকে শিখেছি....এ থেকে আমার মুক্তি নেই। আমাকে মুক্ত হতে হলে অবশ্যই তোমার আনুগত্য করতে হবে। তাই তোমার আনুগত্য স্বীকার করে আমি তোমার মতো করে নিজেকে বির্নিমাণ করার কাজে মনোযোগী হলাম।
এখন দ্যাখ, আমি কতো সুখে আছি। প্রতিদিন কতো মানুষ আসে আমাকে দেখবার জন্য। যারাই আসে তারাই অবাক হয়। ভাবে,..বন্যপাখি কি ভাবে তাদের ভাষায় ভাব বিনিময় করে? তারা জানে না, আমার গুরু ইনসানে কামিল।
ময়নার মুখে কথাগুলো শোনার পর মনা একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলোঃ-
আন্তা ফাওক্কী,আন্তা তাহতী, আন্তা আমামী, আন্তা খালফী, আন্তা ফি ওয়া আনা মা'আল জিহাতি ফিহা আয়নামাতুয়াল্লু ফা ছাম্মা ওয়াজহুল্লা।"
উঠাও আবরণ দাও দরশন, তোমার আমার রবে না চিনন
তুমি আসিলে রব না আমি, তোমার আমার হবেগো দেখা।।
[ কালামে পাক হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী(রহঃ)]

মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

মৃত্তিকা মায়াঃ মনার অনুভব


মনা একমুঠো মাটি নিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করছে। তার হাতে কিছু সিমের বীজ। আর কিছু খেজুরের বীজ। বীজগুলো নিয়েও সে নাড়াচাড়া করছে। উল্টে পাল্টে দেখছে। কিন্ত্তু কিছু বলছে না। মাটিগুলো একটি জায়গায় গর্ত করে তার থেকে উঠানো হয়েছে। গর্তটির মধ্যে সে বীজগুলো পুঁতে ফেলল। তারপর পানি ঢাললো। দুর থেকে অনেকেই মনার এ কীর্তিকলাপ দেখছে। কিত্তু কেউ কিছু বলছে না। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে মনার কার্যটাই দেখছে। অার তা দেখে মনা মিটি মিটি হাসছে। কারণ কি?

এবার মনা হাসতে হাসতে উঠে এল। তারপর সোজা চলে এল মোবারক মামার চায়ের দোকানের সামনে। ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে মনা মোবারকের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-মোবারক ভাই, ফাস কেলাস একটা চা বানাইয়্যা দেনতো খাই।

-তাতো দিমু। তয় মামা এখখান কতা জিগাই।

-কি জিগাইব্যা তা আমি জানি। ঠিক আছে তারপরও তুমি কও...কি কতা...

-মামা, আপনেরে দেকলাম পরথত মাডি উডাইলেন। তারপর হেই মাডিডি চিপরাইলেন। ধুলা বানাইয়্যা হালাইলেন। আবার মাডিডি থুইয়্যা বীজগুলি লইয়্যা দাপাদাপি করলেন। গর্তের মইদ্যে হেডিরে হালাইয়্যা মাডি দিয়্যা পানি দিলেন। ঘটনাডা কি মামা?

-জানতাম তুমি জিগাইব্যা...আগে চা দেও। চা খাই আর একটা বিড়িও দিও। খাইতে খাইতে কই....

মোবারক মনার জন্য সুন্দর করে একটা চা বানালো এবং একটি সিগারেটও দিল। মনা উদাস ভংগিতে কি যেন ভাবতে ভাবতে চা খাচ্ছে আর সিগারেটে একটা করে টান দিচ্ছে। কিন্ত্তু কিছু বলছে না...চুপ থাকতে দেখে মোবারক আবারো মনাকে ইয়াদ করাইয়্যা দিল...চা সিগারেট শেষ করে মনা এবার তার মতো করে বলতে শুরু করলোঃ

-শুন মিয়া....পরথম মাডি উডাইয়্যা দেকবার চাইলাম - এই মাটি দিয়া আমাগো সৃষ্টি করছে। এই মাটিতেই আমাগো আবারো শোয়ানো অইবো। আবার এই মাডি থিক্ক্যাই আমাগো উডাইবো [মিনহা খালাকনাকুম....তারাতান উখরা]। আমি তার লাইগ্যা মাডিডারে ভাল কইর‌্যা দেকবার চাইলাম। কেমতে উডাইবো? সবতো এই মাডিই খাইয়্যা হালাইবো। তহন আড্ডি গুড্ডি ছাড়াতো কিছুই থাকবো না..একসময় হেইডাও থাকবো না.....তাইলে কেমতে কি? পরক্ষণেই মনে পড়লো আল্লাহয় কইছেঃ ওয়াল্লাহু আনবাতাকুম মিনাল আরদে নাবাতান-সুম্মা ইউয়িদুকুম ফিহা ওয়া ইউখরেজুকুম ইখরাজান। [ বরং অাল্লাহ তোমাদিগকে উদভুত করিয়াছেন ভুমি হইতে। উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদিগকে ফিরাইয়্যা লইবেন এবং তিনি তোমাদিগকে সেখান হইতেই বাহির করিবেন-এক নুতন জাত হিসেবে।] হেইডা মনে অওনের পরথিকক্যা....হাসলাম...

-হ দেকলামতো আপনে খালি হাসতেছন। দোকানের বেবাকতেই দেকছে। আমারে খালি জিগায় মোবারক, মনায় খেজুর বিচি দেইখ্যা ওমনে হাসতাছে ক্যা....বিচির মইধ্যে কি দেকছে...

-ভাইরে বিচির মইধ্যে কি দেকছি হেই কতা সমাজের কাছে ভাইঙ্গ্যা চুইর‌্যা কওন যাইবো না...বিচির রহস্য বড়োই বিচিত্রময়...বিচিত্রময় এই মাডিও। একই মাডি থিক্ক্যা একেক রকমের গাছ অয়। মরিচের বিচ হালাইলে মরিচ অয়..হেইডা ঝাল..আওউক লাগায়। রস মিষ্টি। খেজুর লাগায়...রস মিষ্টি...কতো কি লাগায়...কত কি অয়...এইডারেই কয় কুদরত। এই কুদরতি খেলা খেলতে গিয়া ধরা দিল এই মাডির শরিলটাতে। এই শইল্যের মইধ্যেই হেয় অাছেরে বোকা...এই মাডিডায়ই মায়া লাগাইছে। মাডিরে ভালো বাসতে শিক। উচা উচা কতা কইয়্যা আর ফালাইয়্যা লাব নাই। হগ্গলরেই এই মাডির মধ্যে হান্দাইতে অইবো। সময় থাকতে মাডির মতো অইয়্যা যাগা....মায়া করতে শিক...দরদ দিয়া যত্নআত্তি কইর‌্যা যারে পালতাছস....হেয় একদিন উড়াল দিবই দিব...যুদি হেরে ধইর‌্যা রাখতে না পারস..তার কোন ঠিকানাও পাবি না,, কোন নিশানাও পাবি না.....কাঁহাছে আনা কাঁহাছে জানা...না নিশানা নাই ঠিকানা [কালামে হযরক থাজা শাহ্ পীর চিশতী (রঃ)]....। ধরতে পারলে আর মরণ নাইরে পাগলা.....কবরে হাশরে মাওলা থাকবোরে তোর সংগ যাই....দিন থাকিতে পন্থ ধরা চাই....[কালামে হযরত থাজা শাহ্ পীর চিশতী (রঃ)]।

মনা তার বুকের বাম পাশটায় হাত রেখে বললোঃ

" হৃদয়ও বনে অতি গোপনে একারও বাঁশি শুনেছি প্রাণে...মরমে মরি চাহি নেহারি...সন্ধানে আমার পাইবে দেখা" [কালামে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ)]। গভীর রাইতে বইস্যা বইস্যা এই মাটির শইল্যের মধ্যে কান পাইত্তা হুনবি...হেয় কি কয়...হেরে সময় থাকতেই চিনন লাগেরে পাগলা....দিবসও ফুরাইয়্যা গেলে মতি গতির ঠিক নাই....দিন থাকিতে পন্থ ধরা চাই...রে অবোধ ভাই....যহন তারে চিনবি তহন কবি..উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমারও আমার রবে না চিনন...তুমি আসিলে রব না আমি...তোমারও আমার হবে গো দেখ্যা..[কালামে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ)]।

মনা উঠে যেতে যেতে বললো-যত্ন কর....এই মাডিটারে য্ত্ন কর....যতনে রতন মিলে...

মনার কথা শুনে উপস্থিত সকলেরই মুখ হা হয়ে গেল। কেউ কোন কথা বললো না। কেবল মোবারকের চোখের দেখা দিল....একফোঁটা বারিবিন্দু...যা সৃষ্টি হয় মহা সিন্ধু থেকে...এর উৎসও কেউ জানে না...ছোট্র এই দেহের মধ্যে কি অমুল্য ধনই না তিনি রেখেছেন...