পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮

ইবনুল আরাবী ও হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) - ওয়াহদাতুল ওযুদ মতবাদ

ইবনুল আরাবীর ওয়াহদাতুল অযুদ মতবাদ ও হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর চিশতী উদ্যানে বর্ণিত কালাম এক ও অভিন্ন। যেমনঃ ইবনুল আরাবীর 'ওয়াহদাতুল অজুদ' মতবাদ অনুসারে, আল্লাহ বিশ্ব মাঝে ব্যাপ্ত আছেন। এই বিশ্ব জগৎ আল্লাহ-সত্তাময়। আল্লাহ ও বিশ্বে কোন ভেদ নাই। সমগ্র বিশ্বজগতই আল্লাহ এবং আল্লাহ.ই সমগ্র বিশ্ব জগত। 

আল্লাহ বিশ্বজগতে এবং বিশ্বজগত আল্লাহতে অবস্থিত বটে এবং সমস্ত বিশ্ব জগত আল্লাহ বটে কিন্তু সমগ্র অাল্লাহ বিশ্বজগৎ নয়। আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তাও বটে। বিশ্বজগৎ ধারণা হিসাবে আল্লাহর জ্ঞান সত্তার মাঝে বর্তমান। আল্লাহ বিশ্বজগতের মাঝে নিজেকে প্রকাশ করেন। আল্লাহ এই বিশ্বজগতের অন্তর্ব্যাপী সত্তা হিসাবে মিশে থাকলেও আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগত নয়। তিনি বিশ্বজগতের অতিরিক্ত সত্তা।
সাধারণভাবে, ইবনুল আরাবীর 'ওয়াহদাতুল ওজুদ' মতবাদকে সর্বেশ্বরবাদ ও অদ্বৈতবাদ বলা হয় । এই মতবাদকে সর্বেশ্বরবাদ বলা যেতে পারে। তার মতবাদের মধ্যে আল্লাহর কয়েকটি রুপ হলোঃ -

ক. শুদ্ধ স্বরুপ বা অদৃশ্য আল্লাহ,
খ. আকার প্রাপ্ত শুদ্ধ স্বরুপ বা 'হকিকতে মুহম্ম দী, নুরে মুহম্ম দী, 'লগস' বা আদি প্রজ্ঞা রুপ,
গ. আয়ান অাস সাবিতা বা মুল আদর্শ আকার বা প্লেটোর ধারণারুপ,
ঘ. 'ওয়াহদাতুল ওযুদ' বা বিশ্বজগৎ রুপ, বিশ্বজগতই অাল্লাহ এবং আল্লাহই বিশ্বজগৎ এবং 'ইনসানুল কামিল বা পুর্ণমানব রুপ'।

পুর্ণ মানব তথা ইনসানুল কামিল ( পুর্ণমানব ) রুপেই আল্লাহর সমগ্র পরিপুর্ণ অভিব্যক্তি - তাঁর মধ্যে আল্লাহর সমগ্র গুণাবলী অবস্থিত। পুর্ণমানব ও আল্লাহ অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ইবনুল আরাবী বলেন যে, "প্রকৃত সুফী আল্লাহর অতিবর্তিতা ও অন্তর্ব্যাপিতা উভয়েই বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধর্মে আল্লাহকে বিভিন্নরুপে কল্পনা করা হয়েছে বা আল্লাহ বিভিন্নরুপে প্রকাশিত হয়েছেন। কিন্তু একজন সুফী বা অতীন্দ্রিয়বাদী তাঁকে সকল রুপের মধ্যেই দেখতে পান। ধর্মের মধ্যে আল্লাহ মানুষের পাপ পুণ্যের বিচারক হিসাবে চিত্রিত হয় কিন্তু একজন সুফীর অন্তরে  তিনি পরম প্রেমিকরুপে প্রকাশিত হন।"
সংক্ষেপে  এই হচ্ছে ইবনুল আরাবীর ওয়াহ্ দাতুল অযুদ মতবাদ বা সর্বশ্বেরবাদ ।

'যাহা কিছু সব তুমি, তুমি বিনা আমি নই।' 

অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব জগতে যা কিছু দৃষ্টিগোচর হয়, সব কিছুই তিনি। 'আমি' নামক সত্তাটিও তিনি ব্যতীত নন। অর্থাৎ সকল অস্তিত্ব যদি তিনি থেকে সৃষ্ট হয়, তাহলে আমি নামক সত্তাটিও তারই সৃষ্ট বস্তু। মুলতঃ আল্লাহ সকল অস্তিত্বশীল বস্তুর সত্তা। সকল অস্তিত্বের মুল অস্তিত্ব। মানুষের অস্তিত্বের জন্য আল্লাহর অস্তিত্বের প্রয়োজন। অন্যদিকে আল্লাহর পুর্ণরুপে প্রকাশের জন্য মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজন। আল্লাহ নিজেকে পুর্ণ মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠরুপে প্রকাশ করেন।

পরক্ষণেই বলা হয়েছেঃ

উপহার দিব কি গো, কি আছে আমার নাথ 
তোমারইতো দেওয়া সব কোথায় কি পাব সই।

শব্দার্থঃ নাথ (বিশেষ্যপদ) স্বামী, রক্ষক, দীননাথ, প্রাণনাথ, নরনাথ। প্রভু, অধিপতি, জগন্নাথ।
বিশেষণপদঃ সনাথ, অস্বাধীন, পরাধীন।
সইঃ সখী এর কথ্যরুপ। সখা[বিশেষ্যপদ] বন্ধু, মিত্র, বয়স্য, সুহৃদ, সহচর।সখী [বিশেষ্যপদ] স্ত্রী, সখী।

বাস্তবিক জীবনে আমরা দেখিঃ আশেক (প্রেমিক পুরুষ) তার মাশুক (প্রেমাস্পদকে)-কে সন্তুষ্ট করার জন্য নানান প্রকার চেষ্টা তদবীর করে থাকেন। এর মধ্যে কোন কিছু উপহার দেয়া প্রেমাকর্ষণের এক পরম উৎকর্ষ বটে। ঠিক, তদ্রুপ সুফীবাদে, মহান জাত পাককে পরম প্রেমিকারুপে [এখানে সই রুপে ] কল্পনা করে তাঁকে এক অতীন্দ্রিয়বাদীতে রুপান্তরিত করা হয়েছে। এখানে সেই কথাই বলা হচ্ছেঃ  হে প্রভু, তোমাকে আমি কি উপহার দিব। সব কিছুই তো তোমার। প্রতিটি সত্তাই তোমার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সেখানে আমি কোথা থেকে তোমার পছন্দের বিষয়টি উপহার দেব? সবকিছুই তো তুমি, তুমিই তো সব। এর বাইরে তো কিছুই নাই। কাজেই, উপহার দেবার মতো কোন বস্তুই অবশিষ্ট নাই। যদি থাকতো, তাহলে সেই বস্তুটিকেই তোমাকে উপহার স্বরুপ পেশ করা হতো বা করতাম।  যেহেতু নেই সেহেতু সেই প্রশ্ন তোলাই অবান্তর।

ইবনুল আরাবী এও বলেছেন, আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তাও বটে। 

এ সর্ম্পকে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) বলেনঃ  তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া।

মোল্লাগণ পাপ-পুণ্যের হিসাবে আল্লাহ পাককে বিচারকের আসনে বসিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা মনে করে থাকে যে যিনি আরশের অধিপতি, তিনি একটি সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়ে বসে আছেন। একজন একজন করে তার সামনে আসছে। তার পাপ পুণ্য বিচার আচার করে তাকে বেহেস্ত দোযখ যা দেবার দিচ্ছেন। কিন্তু সুফীদের কাছে এই আল্লাহ অর্থহীন। তারা বেহেস্ত দোযখের ধার ধারেন না। তারা মহান সত্তাকে ধারক ও বাহককে আশেক এবং মাশুক নাম দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে রুহ্ হচ্ছে সেই বর্হিজগত থেকে আগত সত্তা। যাকে লক্ষ্য করে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) বলছেনঃ "সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া"।

অন্য আরেকটি গজলে তিনি বলেছেনঃ

চাওয়া চাই ফাঁকা ফাঁকি পঞ্চভুতে তুমি বাকী
শাহাপীর নহে মাটি তোমাতে তোমারি রই।।

শব্দার্থঃ
পঞ্চ [বিশেষ্য পদ] বিশেষণ পদ/ ৫ সংখ্যা বা সংখ্যক, পাঁচ। পন্ চ + অ।
ভুত বা আত্মা[বিশেষ্য পদ] জীবাত্মা, পরমাত্মা, ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম[বিশেষ্যপদ] র্নিগুণ, ঈশ্বর, পরব্রহ্ম, সগুণ, বিধাতা। ব্যক্তিবাচক শব্দ ব্রাহ্মণ।
পঞ্চভুত অর্থঃ পাঁচটি দেহ বুঝায়। পঞ্চ মানে পাঁচ আর ভুত অর্থ আত্মা বা দেহ। পঞ্চভুত বলতে পঞ্চ আত্মা বা দেহ বুঝায়। যা ক্ষিতি, অব, তেজ, মরুৎ, ব্যোম নামে পরিচিত। এবং এর প্রতিটিরই একটি করে দেহ আছে। আরবীতে বলা হয় খামছা আনাছের। যা আব, আতস, বাদ, খাক, নুর নামে কথিত আছে। জগতে এই ভুত সমুহ বিস্তৃত আছে।

একজন কুমার যখন এই ভুত সমবিহারে পুতুল তৈরী করে, কিংবা নানা প্রতিমা তৈরী করে তাতে আমরা প্রাণের সঞ্চার হতে দেখি না। কারণ, এর চালিকা শক্তিরুপে রুহ [নাফাক্ তু ফিহে মিররুহী। কুল্লির রুহ্ মিন আমরি রব্বি] না থাকা। এই রুহ্ হচ্ছে বহিঃজগত থেকে আসা মুল সত্তা। ইবনুল আবারী এই সত্তাটিকেই বলেছেনঃ আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তা। যাকে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) পণ্চভুতস্থ তুমি [ রুহ্ ] বাকী রুপে চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি তাঁর মুল সত্তাকে মুল্যহীন মনে করতে নিষেধ করে বলেছেনঃ শাহাপীর নহে মাটি, তোমাতে [প্রভুতে] তোমারি রই [অর্থাৎ তিনি তার সত্তার মধ্যেই লীন হয়ে আছেন]।

সোমবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৮

খায়রুল মাজলিশ - দ্বিতীয় পর্ব

 


















-------------------------------------------------
খায়রুল মাজলিশ - দ্বিতীয় পর্ব
-------------------------------------------------
স্থানঃমোমিনুল ইসলাম চিশতী সাহেবের বসত বাড়ী
ওয়াপদা রোড, পশ্চি ম রামপুরা,
ঢাকা-১২১৯।
---------------------------------------
রমজান মাস। বাদ আসর। সালঃ ২০১১ইং।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে। চারদিকে রোজাদারদের ইফতারের আয়োজন চলছে। ঠিক সেই মুহুর্তে হযরত খাজা চেরাগে চিশতী (রহঃ) তসরীফ রাখলেন শাহ্ ফকির মোহাম্মাদ রতন মিয়া চিশতী নিজামীর বসত বাড়িতে। বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) যখন চিশতী সাহেবের বাড়ীতে আসেন, সে সময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন জনাব শেখ আহ্ মদ চিশতী (খাদেম-বাবা চেরাগে চিশতী)।
[ উল্লেখ্য যে,  বাবাজান ছিলেন শান্তিবাগ আমার নানাবাড়ীতে। শান্তিবাগ থেকে রিক্সাযোগে আমাদের বাড়ীতে আসেন ]

বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) - কে এর ইফতারের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল আমাদের এক পীর ভাই মোমিনুল হক চিশতীর বাড়ীতে। মোমিন ভাইয়ের বাড়ী ওয়াপদা রোড। আমাদের বাড়ী থেকে রিক্সাযোগে গেলে ১০/১৫ টাকা ভাড়া। হেঁটেই যাওয়া যায়। 
আমাদের বাড়ীতে অতিথি হয়ে  এলেন আবদুর রহমান ভাই [প্রায়ত - সাংবাদিক রহমান ভাই হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত। বাড়ীঃ গোপালগঞ্জ।] এবং সাথে শহিদ ভাই। আমরা সবাই বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) - এর পাক চরণে তাজিম বাদ আরজ পেশ করলামঃ মোমিন ভাইয়ের বাড়ীতে যাবার জন্য। তিনি আর্জি মন্ঞ্জুর করলেন এবং আমাকে আদেশ করলেনঃ 

- এই মিয়া, তুমি এখানে থাকো। আরো যারা আসবে, তাদের নিয়ে তুমি ঐ মিয়ার (মোমিন ভাইয়ের দিকে ইংগিত করছেন) বাড়ীতে ইফতারের আগে নিয়ে আসিও। 

আমিও বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) আজ্ঞাবহ হয়ে তাঁদেরকে রিক্সাযোগে উঠিয়ে দিলাম এবং অপেক্ষা করলাম ইফতারের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। সে সময়ও আরো চার-পাঁচজন পীর ভাই অামাদের বাড়ীতে আসলেন। এর মধ্যে জিন্নাহ ভাইও উপস্থিত হলেন। তার সাথে পুর্ব পরিচয় থাকায় আমার বেশ সু্বিধা হলো। অতঃপর আমরা ইফতারের দশ মিনিট পুর্বে সেখানে উপস্থিত হই। দেখলাম, বাবা চেরাগে চিশতী মোনাজাত করছেন। আমরাও শামিল হলাম।

মাগরিবের আজান হলো। আমরা একসাথে সবাই ইফতার করছি। ইফতার শেষ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা হলো। নামায  শেষ হলে অনেকেই সেখান থেকে বের হয়ে যান। শুধু থাকি আমি এবং জিন্নাহ ভাই। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শেখ আহমদ ভাই। আমি বাবা জানের কাছে জানতে চাইছিলাম - চিশতী উদ্যান এবং বোরহানুল আশেকীন সর্ম্পকে। 
তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ 
- কি জানতে চাও?
-বাবাজান, চিশতী উদ্যান সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছি?

তৎউত্তোরে তিনি বললেনঃ

- তুমি কি জানো, সেটা আগে বলো? [একটু স্মীত হাসি দিয়ে]বাবাজানের সেই রুপ দেখে নিজের ভেতর কেমন যেন করে উঠলো। হায়! এ রুপ কি কখনো কোনো মানুষের হয়....
অামি বললামঃ
- বাবাজান আমি দেখলাম যে, একজন সাধক যখন সারাজীবন সাধনা করেন, তখন তাঁর ভেতর পাক কালাম প্রকাশ পায়। এরপর সেই পাক কালামগুলো লিপিবদ্ধ করলে সেগুলো কিতাব আকারে আসে। যা আমরা পুস্তক আকারে দেখে থাকি। বাবা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) যত রেযাজত [কঠোর তপস্যা] করেছেন, তাঁর ভেতর যে পবিত্র বাণী উঠে অাসছিলো, তা-ই চিশতী উদ্যান।

এরপর বাবা চেরাগে চিশতী  (রহঃ) - এর কাছে আল্লামা ইকবালের একটি শায়ের পেশ করি, যা ছিলঃ
‘তেরে যমির পে যব তক না হো নুজুলে কিতাব
গেড়াহ কুশাহ  না রাজী না সাহেবে কাশ্বাফ’।।
অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তব অন্তরে ঐশী প্রেরণা অবতীর্ণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর রহস্য প্রখ্যাত তফসীরকার  ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীই হোন, বা তফসীরকার কাশশাফের লেখক আল্লামা যমখশরীই হোন, কেউ এর মর্ম গ্রন্থী খুলতে পারবে না।

এ কথা বলার পর তিনি আমার দিকে তাকালেন। এমন ভাবে তাকালেন, যেন আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছে। এমন আগুন জ্বললো বুকের ভেতর, যা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। আমার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেল। অার চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়তে লাগলো। ভয়ে অামি প্রকম্পিত ছিলাম। কতোক্ষণ ছিলাম বলতে পারবো না। তবে হুঁশ আসলো...বাবাজান যখন বললেনঃ

-তুমি ঠিকই বলেছো মিয়া...তুমি কি আসরারের [ আমাদের শ্রদ্ধেয় বড়ো ভাইজান-যাকে আমি দাদাজান বলে ডাকি। তিনি হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর চিশতী উদ্যান এত সুন্দরভাবে দার্শনিক দৃষ্টিভংগীতে আলোচনা করেন, যা না শুনলে মনে হবে চিশতী উদ্যানের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কিছুই শোনা হয়নি। ] কাছে যাও নি...তার সাথে বসে কথা বলবে...বুঝছো নি মিয়া...যাও...

এরপর বাবাজানকে তাজিম করে বের হয়ে আসি।

আসার পর জিন্নাহ্ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেঃ

- ভাইজান, আপনার কারণে বাবাজানের কাছে চিশতী উদ্যানের হাকীকাত সর্ম্পকে কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারলাম। 
জিন্নাহ ভাইয়ের কথা শুনে আমি বললামঃ
- জিন্নাহ্ ভাই, আপনিতো আমারই ভাই। আমি বাবাজানের কাছে যা জানতে চেয়েছি, অাপনিও তা জানতে পেরেছেন। এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য কার কি হতে পারে? সবাইতো চিশতী উদ্যান পড়ে। কিন্তু এর মর্মার্থ কতোজন জানতে পেরেছে...সেটা হলো বড়ো কথা

বাদ সালাম। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৮

খায়রুল মাজলিশ-প্রথম পর্ব

------------------------------
খায়রুল মাজলিশ।
স্থানঃ বারাহিগুনী দরবার শরীফ
বিষয়ঃ চিশতী উদ্যান
-----------------------------

হযরত খাজা চেরাগী চিশতী (রহঃ) এর বেছালে হক প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে প্রথম উরশ শরীফে লক্ষাধিক ভক্তপ্রাণ আশেকানে চিশত উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন করেরহাটের মাওলানা সাহেব। যার নামঃ হযরত মাওলানা শাহ্ ফজলুল হক চিশতী। তিনি করেরহাটের মাওলানা সাহেব নামেই সুখ্যাতি অর্জন করেছেন এবং লোকজন তাঁকে সে নামেই সমধিক চেনেন।

তিনি চিশতী উদ্যান শরীফ থেকে এতো সু্ন্দর ও মনোমুগ্ধকর বক্তৃতা করছিলেন যে, উপস্থিত আশেকানে চিশতগণ একাগ্রচিত্তে তা শ্রবণ করছিলেন। প্রসংগক্রমে তিনি বললেনঃ সুফী সদরউদ্দিন চিশতী ভাই সাহেব, একদিন আমাকে ডেকে বললেনঃ
-ভাই সাহেব, বাবাজান কিবলা আমাকে দিয়ে কোরআন দর্শন লিখিয়েছেন। অথচ 'চিশতী উদ্যান' তাঁর কালাম শরীফের একটা ব্যাখ্যাও আমাকে দিয়ে লিখাননি। আর আপনি কি অবলীলাক্রমে তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দিয়ে যাচ্ছেন।
শুনে তিনি বললেনঃ

-ভাই সাহেব, বাবা শাহ্পীর চিশতী (রহঃ) বলেছেনঃ - আরে মিয়া, তুমিতো দেখছি ভাতের হাঁড়ির ঢাকনাটা উদলা করে দিচ্ছো..অর্থাৎ আমার সব রহস্য ব্যক্ত করে দিচ্ছো। ভাই সাহেব, তাঁর অনুমতিক্রমেই আমি এই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিচ্ছি। এটা আমার মন গড়া কথা নয়। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন বলেই আমি বলতে পারছি।

সুধী আশেকানে চিশতগণ,

এ ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর সারা জীবনের ধ্যান সাধনার ফসল হলো চিশতী উদ্যান। মুলতঃ এটি গজলের বই হলেও এর মধ্যে রয়েছেঃ অফুরন্ত জ্ঞানভান্ডারের রহস্যাবলী। এর মধ্যে রয়েছে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) - এর ঐশ্বরিক প্রেমগাঁথা এবং খাজা গরীব নওয়াজ (রাঃ) এর শানে রচিত কালামে পাক। যা পারস্য দেশের আদলে রচিত হলেও বাংলাতে এমন উর্দ্দু, ফার্সী ভাষার সংমিশ্রণে লিখিত গজলের বহিঃপ্রকাশ কদাচিৎ দেখা যায় না। এতে যেমন রয়েছে মাওলানা রুমীর দর্শন তেমনি রয়েছে ইবনুল আরাবীর দর্শন। 

তেরে ইশক্ নে মুঝে এ্যায়ছা মাস্তি কর দিয়া
হার পাল হার ধরকন মে তুহি তু দেখা দিয়া।।

#স্বপন #চিশতী