ইবনুল আরাবীর ওয়াহদাতুল অযুদ মতবাদ ও হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর চিশতী উদ্যানে বর্ণিত কালাম এক ও অভিন্ন। যেমনঃ ইবনুল
আরাবীর 'ওয়াহদাতুল অজুদ' মতবাদ অনুসারে, আল্লাহ বিশ্ব মাঝে ব্যাপ্ত আছেন।
এই বিশ্ব জগৎ আল্লাহ-সত্তাময়। আল্লাহ ও বিশ্বে কোন ভেদ নাই। সমগ্র
বিশ্বজগতই আল্লাহ এবং আল্লাহ.ই সমগ্র বিশ্ব জগত।
আল্লাহ বিশ্বজগতে এবং বিশ্বজগত আল্লাহতে অবস্থিত বটে এবং সমস্ত বিশ্ব জগত আল্লাহ বটে কিন্তু সমগ্র অাল্লাহ বিশ্বজগৎ নয়। আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তাও বটে। বিশ্বজগৎ
ধারণা হিসাবে আল্লাহর জ্ঞান সত্তার মাঝে বর্তমান। আল্লাহ বিশ্বজগতের মাঝে
নিজেকে প্রকাশ করেন। আল্লাহ এই বিশ্বজগতের অন্তর্ব্যাপী সত্তা হিসাবে মিশে
থাকলেও আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগত নয়। তিনি বিশ্বজগতের অতিরিক্ত সত্তা।
সাধারণভাবে,
ইবনুল আরাবীর 'ওয়াহদাতুল ওজুদ' মতবাদকে সর্বেশ্বরবাদ ও অদ্বৈতবাদ বলা হয় ।
এই মতবাদকে সর্বেশ্বরবাদ বলা যেতে পারে। তার মতবাদের মধ্যে আল্লাহর কয়েকটি
রুপ হলোঃ -
ক. শুদ্ধ স্বরুপ বা অদৃশ্য আল্লাহ,
খ. আকার প্রাপ্ত শুদ্ধ স্বরুপ বা 'হকিকতে মুহম্ম দী, নুরে মুহম্ম দী, 'লগস' বা আদি প্রজ্ঞা রুপ,
গ. আয়ান অাস সাবিতা বা মুল আদর্শ আকার বা প্লেটোর ধারণারুপ,
ঘ. 'ওয়াহদাতুল ওযুদ' বা বিশ্বজগৎ রুপ, বিশ্বজগতই অাল্লাহ এবং আল্লাহই বিশ্বজগৎ এবং 'ইনসানুল কামিল বা পুর্ণমানব রুপ'।
পুর্ণ
মানব তথা ইনসানুল কামিল ( পুর্ণমানব ) রুপেই আল্লাহর সমগ্র পরিপুর্ণ অভিব্যক্তি - তাঁর মধ্যে আল্লাহর সমগ্র
গুণাবলী অবস্থিত। পুর্ণমানব ও আল্লাহ অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ইবনুল আরাবী
বলেন যে, "প্রকৃত সুফী আল্লাহর অতিবর্তিতা ও অন্তর্ব্যাপিতা উভয়েই বিশ্বাস
করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধর্মে আল্লাহকে বিভিন্নরুপে কল্পনা করা হয়েছে
বা আল্লাহ বিভিন্নরুপে প্রকাশিত হয়েছেন। কিন্তু একজন সুফী বা
অতীন্দ্রিয়বাদী তাঁকে সকল রুপের মধ্যেই দেখতে পান। ধর্মের মধ্যে আল্লাহ
মানুষের পাপ পুণ্যের বিচারক হিসাবে চিত্রিত হয় কিন্তু একজন সুফীর অন্তরে তিনি
পরম প্রেমিকরুপে প্রকাশিত হন।"
সংক্ষেপে এই হচ্ছে ইবনুল আরাবীর ওয়াহ্ দাতুল অযুদ মতবাদ বা সর্বশ্বেরবাদ ।
সংক্ষেপে এই হচ্ছে ইবনুল আরাবীর ওয়াহ্ দাতুল অযুদ মতবাদ বা সর্বশ্বেরবাদ ।
'যাহা কিছু সব তুমি, তুমি বিনা আমি নই।'
অর্থাৎ
সমগ্র বিশ্ব জগতে যা কিছু দৃষ্টিগোচর হয়, সব কিছুই তিনি। 'আমি' নামক
সত্তাটিও তিনি ব্যতীত নন। অর্থাৎ সকল অস্তিত্ব যদি তিনি থেকে সৃষ্ট হয়,
তাহলে আমি নামক সত্তাটিও তারই সৃষ্ট বস্তু। মুলতঃ আল্লাহ সকল অস্তিত্বশীল
বস্তুর সত্তা। সকল অস্তিত্বের মুল অস্তিত্ব।
মানুষের অস্তিত্বের জন্য আল্লাহর অস্তিত্বের প্রয়োজন। অন্যদিকে আল্লাহর
পুর্ণরুপে প্রকাশের জন্য মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজন। আল্লাহ নিজেকে পুর্ণ
মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠরুপে প্রকাশ করেন।
পরক্ষণেই বলা হয়েছেঃ
পরক্ষণেই বলা হয়েছেঃ
উপহার দিব কি গো, কি আছে আমার নাথ
তোমারইতো দেওয়া সব কোথায় কি পাব সই।
শব্দার্থঃ নাথ (বিশেষ্যপদ) স্বামী, রক্ষক, দীননাথ, প্রাণনাথ, নরনাথ। প্রভু, অধিপতি, জগন্নাথ।
বিশেষণপদঃ সনাথ, অস্বাধীন, পরাধীন।
সইঃ সখী এর কথ্যরুপ। সখা[বিশেষ্যপদ] বন্ধু, মিত্র, বয়স্য, সুহৃদ, সহচর।সখী [বিশেষ্যপদ] স্ত্রী, সখী।
শব্দার্থঃ নাথ (বিশেষ্যপদ) স্বামী, রক্ষক, দীননাথ, প্রাণনাথ, নরনাথ। প্রভু, অধিপতি, জগন্নাথ।
বিশেষণপদঃ সনাথ, অস্বাধীন, পরাধীন।
সইঃ সখী এর কথ্যরুপ। সখা[বিশেষ্যপদ] বন্ধু, মিত্র, বয়স্য, সুহৃদ, সহচর।সখী [বিশেষ্যপদ] স্ত্রী, সখী।
বাস্তবিক
জীবনে আমরা দেখিঃ আশেক (প্রেমিক পুরুষ) তার মাশুক (প্রেমাস্পদকে)-কে
সন্তুষ্ট করার জন্য নানান প্রকার চেষ্টা তদবীর করে থাকেন। এর মধ্যে কোন
কিছু উপহার দেয়া প্রেমাকর্ষণের এক পরম উৎকর্ষ বটে। ঠিক, তদ্রুপ সুফীবাদে,
মহান জাত পাককে পরম প্রেমিকারুপে [এখানে সই
রুপে ] কল্পনা করে তাঁকে এক অতীন্দ্রিয়বাদীতে রুপান্তরিত করা হয়েছে। এখানে
সেই কথাই বলা হচ্ছেঃ হে প্রভু, তোমাকে আমি কি উপহার দিব। সব কিছুই তো
তোমার। প্রতিটি সত্তাই তোমার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সেখানে আমি কোথা থেকে তোমার
পছন্দের বিষয়টি উপহার দেব? সবকিছুই তো তুমি, তুমিই তো সব। এর বাইরে তো
কিছুই নাই। কাজেই, উপহার দেবার মতো কোন বস্তুই অবশিষ্ট নাই। যদি থাকতো,
তাহলে সেই বস্তুটিকেই তোমাকে উপহার স্বরুপ পেশ করা হতো বা করতাম। যেহেতু
নেই সেহেতু সেই প্রশ্ন তোলাই অবান্তর।
ইবনুল আরাবী এও বলেছেন, আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তাও বটে।
এ সর্ম্পকে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) বলেনঃ তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া।
মোল্লাগণ
পাপ-পুণ্যের হিসাবে আল্লাহ পাককে বিচারকের আসনে বসিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে
থাকে। তারা মনে করে থাকে যে যিনি আরশের অধিপতি, তিনি একটি সিংহাসনে উপবিষ্ট
হয়ে বসে আছেন। একজন একজন করে তার সামনে আসছে। তার পাপ পুণ্য বিচার আচার
করে তাকে বেহেস্ত দোযখ যা দেবার দিচ্ছেন। কিন্তু সুফীদের কাছে এই আল্লাহ
অর্থহীন। তারা বেহেস্ত দোযখের ধার ধারেন না। তারা মহান সত্তাকে ধারক ও
বাহককে আশেক এবং মাশুক নাম দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে রুহ্ হচ্ছে সেই বর্হিজগত থেকে আগত সত্তা। যাকে লক্ষ্য করে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) বলছেনঃ "সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া"।
অন্য আরেকটি গজলে তিনি বলেছেনঃ
চাওয়া চাই ফাঁকা ফাঁকি পঞ্চভুতে তুমি বাকী
শাহাপীর নহে মাটি তোমাতে তোমারি রই।।
শব্দার্থঃ
পঞ্চ [বিশেষ্য পদ] বিশেষণ পদ/ ৫ সংখ্যা বা সংখ্যক, পাঁচ। পন্ চ + অ।
ভুত বা আত্মা[বিশেষ্য পদ] জীবাত্মা, পরমাত্মা, ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম[বিশেষ্যপদ] র্নিগুণ, ঈশ্বর, পরব্রহ্ম, সগুণ, বিধাতা। ব্যক্তিবাচক শব্দ ব্রাহ্মণ।
পঞ্চভুত অর্থঃ পাঁচটি দেহ বুঝায়। পঞ্চ মানে পাঁচ আর ভুত অর্থ আত্মা বা দেহ। পঞ্চভুত বলতে পঞ্চ আত্মা বা দেহ বুঝায়। যা ক্ষিতি, অব, তেজ, মরুৎ, ব্যোম নামে পরিচিত। এবং এর প্রতিটিরই একটি করে দেহ আছে। আরবীতে বলা হয় খামছা আনাছের। যা আব, আতস, বাদ, খাক, নুর নামে কথিত আছে। জগতে এই ভুত সমুহ বিস্তৃত আছে।
একজন কুমার যখন এই ভুত সমবিহারে পুতুল তৈরী করে, কিংবা নানা প্রতিমা তৈরী করে তাতে আমরা প্রাণের সঞ্চার হতে দেখি না। কারণ, এর চালিকা শক্তিরুপে রুহ [নাফাক্ তু ফিহে মিররুহী। কুল্লির রুহ্ মিন আমরি রব্বি] না থাকা। এই রুহ্ হচ্ছে বহিঃজগত থেকে আসা মুল সত্তা। ইবনুল আবারী এই সত্তাটিকেই বলেছেনঃ আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তা। যাকে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) পণ্চভুতস্থ তুমি [ রুহ্ ] বাকী রুপে চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি তাঁর মুল সত্তাকে মুল্যহীন মনে করতে নিষেধ করে বলেছেনঃ শাহাপীর নহে মাটি, তোমাতে [প্রভুতে] তোমারি রই [অর্থাৎ তিনি তার সত্তার মধ্যেই লীন হয়ে আছেন]।
অন্য আরেকটি গজলে তিনি বলেছেনঃ
চাওয়া চাই ফাঁকা ফাঁকি পঞ্চভুতে তুমি বাকী
শাহাপীর নহে মাটি তোমাতে তোমারি রই।।
শব্দার্থঃ
পঞ্চ [বিশেষ্য পদ] বিশেষণ পদ/ ৫ সংখ্যা বা সংখ্যক, পাঁচ। পন্ চ + অ।
ভুত বা আত্মা[বিশেষ্য পদ] জীবাত্মা, পরমাত্মা, ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম[বিশেষ্যপদ] র্নিগুণ, ঈশ্বর, পরব্রহ্ম, সগুণ, বিধাতা। ব্যক্তিবাচক শব্দ ব্রাহ্মণ।
পঞ্চভুত অর্থঃ পাঁচটি দেহ বুঝায়। পঞ্চ মানে পাঁচ আর ভুত অর্থ আত্মা বা দেহ। পঞ্চভুত বলতে পঞ্চ আত্মা বা দেহ বুঝায়। যা ক্ষিতি, অব, তেজ, মরুৎ, ব্যোম নামে পরিচিত। এবং এর প্রতিটিরই একটি করে দেহ আছে। আরবীতে বলা হয় খামছা আনাছের। যা আব, আতস, বাদ, খাক, নুর নামে কথিত আছে। জগতে এই ভুত সমুহ বিস্তৃত আছে।
একজন কুমার যখন এই ভুত সমবিহারে পুতুল তৈরী করে, কিংবা নানা প্রতিমা তৈরী করে তাতে আমরা প্রাণের সঞ্চার হতে দেখি না। কারণ, এর চালিকা শক্তিরুপে রুহ [নাফাক্ তু ফিহে মিররুহী। কুল্লির রুহ্ মিন আমরি রব্বি] না থাকা। এই রুহ্ হচ্ছে বহিঃজগত থেকে আসা মুল সত্তা। ইবনুল আবারী এই সত্তাটিকেই বলেছেনঃ আল্লাহ বিশ্বজগতের অতিরিক্ত ও বর্হিভুত সত্তা। যাকে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) পণ্চভুতস্থ তুমি [ রুহ্ ] বাকী রুপে চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি তাঁর মুল সত্তাকে মুল্যহীন মনে করতে নিষেধ করে বলেছেনঃ শাহাপীর নহে মাটি, তোমাতে [প্রভুতে] তোমারি রই [অর্থাৎ তিনি তার সত্তার মধ্যেই লীন হয়ে আছেন]।