পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
মনা ভেবে পেল না  সত্যিকার অর্থে ঈশ্বর কি? কারণ ঈশ্বর সর্ম্পকে চিন্তা করতে গিয়ে সে কেমন যেন গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে। যেমন একটু আগে যে শ্লোকটি আবৃত্তি করছিল সেটিতে বলা হয়েছেঃ‘রূপংরূপ বিবর্জিতস্য ভবতো ধ্যানেন যদবর্ণিতং।’ অর্থঃ এর মানে হল- ‘হে রূপহীন ঈশ্বর! ধ্যানে তোমার রূপ বর্ণনা করেছি।’ রুপহীন বলতে কি বোঝানো হলো? যার রুপ নেই অর্থাৎ এমন কিছু যা বর্ণনাতীত। কিন্ত্তু তারতো উপস্থিতির কথা সে স্বীকার করছে। যদি স্বীকার না-ই করে, তাহলে ধ্যানে কিভাবে সেই রুপহীন ঈশ্বরের কথা বর্ণনা করে? ধ্যান এসেছে ধৈ ধাতু হতে। যার অর্থ চিন্তা করা। যাকে চিন্তা করা হয়, সে হচ্ছে ধ্যেয় এবং যে ধ্যান করে সে ধ্যায়ী। চিন্তন মনন প্রকৃয়াটা আসে মস্তিষ্কের কাছ থেকে। এর পরের অংশে বলা হয়েছেঃ তন্ত্রমতে নারী হচ্ছে জগতের আদি কারণ। এই নারী কি জাগতিক নারীরুপীনী না-কি অন্য কিছু? যদি নারী রুপই ধরা হয় অর্থাৎ জাগতিক নারীর কথাই ধরা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়ঃ আদম যে ভাবে সৃষ্টি হয়েছে সেভাবে কিন্ত্তু হাওয়া সৃষ্টির কথা বলা হয়নি। এর রহস্য কি? এ সম্পর্কে জিগ্যাসা করা হলে প্রায়ই একটি কথা শোনা যায় আর তা হলো হযরত মরিয়ম যেভাবে হযরত ঈসা (আঃ) কে পিতা ছাড়া অর্থাৎ পুরুষ ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন ঠিক তদ্রুপ আদম ও হাওয়াকে সেই ভাবে সৃজিত করেছেন। বিজ্ঞান কিন্ত্তু সেটা বলে না। কারণ পুরুষের স্পার্ম নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন না করলে সন্তান উৎপত্তি সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এর মধ্যে একটা বিরাট রহস্য রয়ে গেছে। সেই অজানা রহস্যটা কি? সেটা কি জানা সম্ভবপর? যদি সম্ভবপর হয়, তাহলে কিভাবে সেই মহা সত্যটি জানা যাবে? কারণ এরই মধ্যেই রয়েছে স্রষ্টার আসল পরিচয়। স্রষ্টা তথা খালিক হলেন সৃষ্টিকর্তা। নামেই বুঝা যায় এটি পুংলিঙ্গ। কাজেই সৃষ্টিকর্তা হবেন পরম পুরুষ। এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্ত্তু সেই পরমপুরুষের রুপটি কি?

মনা আবারো চিন্তায় বিভোর হলেন। কিভাবে তিনি সেই মহান স্রষ্টার রুপ স্বদর্শন করতে পারেন? মনা চিন্তা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। সেই তন্দ্রার মধ্যে সে দেখতে পেল-তার ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি। সে একটি পানা পুকুরে দুটি ব্যাঙের সঙ্গমের ফলে উৎপন্ন বীজগুলো মালাকারে দেখতে পেল। একটার সাথে একটা কেমন যেন মালার মতো জড়িয়ে আছে। কিছুদিন পর দেখতে পেল সেই বীজগুলো থেকে ছোট ছোট ব্যাঙাচি বের হয়েছে। সামনের মাথার দিকটা মোটা। পেছনের দিকে লেজ আছে। মনা একটি ব্যাঙাচি হাতে নিল। ভালোভাবে পরীক্ষার পর দেখতে পেল কালো রংয়ের সেই ব্যাঙাচির পেটের নিচের দিকে গোলাকার বৃত্ত আঁকা। তার কিছুদিন পর সে দেখতে পেল সেটি পুর্ণাঙ্গ ব্যাঙে তখনো রুপ নেয়নি। সেই ছোট ছোট ব্যাঙের পেছনে খানিকটা লেজ তখনো অবশিষ্ট আছে। এরপর সে দেখতে পেল সেই অর্ধপুর্ণাংগ ব্যাঙগুলো পুর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রুপান্তরিত হয়েছে। সেটি কখনো ডাঙায় উঠছে আবার কখনো পানিতে নেমে টুপ করে ডুব দিয়ে পানা পুকুরের জলে হারিয়ে যাচ্ছে। মনাকে সেভাবে বসে থাকতে দেখে একটি ব্যাঙ জিগ্যাসা করলোঃ

-ওগো মানুষ তুমি কি ভাবছো?

-ভাবছি ঈশ্বর সর্ম্পকে।মনা বললো। মনার কথা শুনে ব্যাঙটি হেসে বললো

-এভাবে চিন্তা করলে কি তুমি প্রকৃত সত্যটা জানতে পারবে?

-তাহলে কিভাবে জানতে পারবো?

-আমাদের দিকে তাকাও। আমরা পানির নিচে কি আছে ডুবে দেখতে পারি। আবার ডাঙায় কি আছে তা আমরা উপরে উঠে দেখতে পারি। কিন্ত্তু তুমিতো তোমার রাজ্য থেকে উপরে উঠতে পারছো না। তাহলে তুমি কিভাবে দেখতে পারবে?
তোমাকে প্রকৃত সত্যটা জানতে হলে আমাদের মতো হতে হবে। অর্থাৎ তোমাকে উভয় জগতেই বিচরণ করতে হবে। তবেই না তুমি দেখতে পাবে।

ব্যাঙটির কথা শুনে মনার তন্দ্রা ছুটে গেল। সে জোরে জোরে বলতে লাগলোঃ

আরে গাধার দল, স্রষ্টাকে জানতে চাস, তো ব্যাঙ হ। ব্যাঙের মতো উভয় জগতে বিচরণ কর। তারপর চোখ মেলে তাকা।

দেখবি ছবি পাগল হবি ঘরে রইতে পারবি না।
খোদার খোদা এমন খোদা যিনি আছেন,
কেমন চিন্তা করলে ধ্যান ধরলে হয়ে যাবি দেওয়ানা।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-পর্ব পন্ঞ্চম

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
মনা পাগলা বেশ ভাবিত হলেন ঐসমস্ত নামাজীদের দেখে যারা দায়সারা গোছের জন্য নামাজ পড়ে। মনা ভাবলোঃ তারা কি জানেন না-সুরা মাউনে ঐ সমস্ত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে কি বলা হয়েছে? ফা-ওয়াইলুল্লিলমুসাল্লিন আন সালাতিহিম সাউন। ফা-সুতরাং ওয়াইলুল্লিল-ওয়াইল দোযখ। মুসাল্লিন- মুসল্লি। সুতরাং তাদের জন্য ওয়াইল দোযখ যারা তাদের সালাত দেখানোর জন্য আদায় করে। সালাত আদায় করতে হবে স্রষ্টাকে হাজির নাজির জেনে, বুঝে। কিন্ত্তু শুধু অনুকরণ করে সালাত আদায় করলে তাতে কোন মহৎ কর্ম সাধিত হয়েছে-এটা মনে করাটা ভুল।

এবার মনা নিজেকে প্রশ্ন করলোঃ তুমি তো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করেছো। এমন কি তুমি তাদের মনের ভেতর ঢুকে তাদের মনের কথা শুনলে। 
কিন্ত্তু তুমি কি তোমার মনের ভেতর ঢুকে দেখেছো?
কে তোমার ভেতর কথা বলে? 
কিভাবে তুমি কার দয়ায় বেঁচে আছো? 
কিভাবে তোমার সৃষ্টি হয়েছে? 
একসময়তো তোমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। তখন তোমার অস্তিত্ব কোথায় ছিল? 
কি অবস্থায় ছিল?

নিজেকে নিজে প্রশ্নগুলো করার পর মনা কেমন যেন হয়ে গেল। সে যেন হারিয়ে যেতে চাইছে কোন এক অজানা জগতে। যে জগত সর্ম্পকে তার কোন ধারণাই নাই। কিন্ত্তু সেই জগতে গেলেই কি সে তাকে দেখতে পাবে? যে ঈশ্বরের কথা সে ভাবছে সে সর্ম্পকে সে কতটুকু জানে? মহাসাগরের থেকে একটা ছোট্র পাখি তার নোখের আচরে কতটুকু পানি সংগ্রহ করতে পারে? অথচ সে যতটুকু পানি নিচ্ছে সেই পানিই তার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। তাহলে সে যে জ্ঞানটুকু লাভ করেছে সেটুকুই তার জন্য যথেষ্ট। কাজেই মহাসিন্ধুর জ্ঞান থেকে যে দর্শনটুকু সত্যদ্রষ্টারা দিয়ে গেছেন সেই অনুষ্ঠানটুকু পালন করাই ধর্ম। 

এবার মনা ভাবা শুরু করলো। প্রথমেই সে শুরু করলো ঈশ্বর শব্দটি নিয়ে। কারণ ঈশ্বর কিংবা ভগবান বা গড বা আল্লাহ যাই বলা হোক না কেন-মুল বিষয়টিতে কোন দ্বিমত নেই। সবকিছু একটি বিন্দুতেই মিলিত হয়েছে। কাজেই ঈশ্বর শব্দটির বিশ্লেষণ দরকার। ঈশ্বর শব্দের মুল হচ্ছে ঈশ্ । যার অর্থ হচ্ছে শক্তি (Energy)। শক্তি কি নিরাকার? অর্থাৎ আকারহীন? আকারহীন কিভাবে আকার সৃষ্টি করে? অথচ কোরআন বলছেঃ আল্লাহু নুরুন সামাওয়াতি ওয়াল আরর্দ। আল্লাহ আসমান এবং জমিনের নুর। আবার এও বলা হয়েছেঃ আল্লাহু কুল্লি শাইইন মুহিত। আল্লাহ সর্ববস্ত্তুতে মুহিত অর্থাৎ দ্রবীভুত অবস্থায় আছেন। যেমন শরবতে পানি ও চিনি একত্রে মিশ্রিত থাকে। সেখান থেকে পানি এবং চিনি পৃথক করা দুরহ ব্যাপার। নুর সর্ম্পকে সুরা নুরে বলা হয়েছেঃ "আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্।মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ  আল মিসবাহু ফী যুজাজা। আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা। লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার।নূরুন আলা নূর। ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।" অর্থঃ আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি। তার জ্যোতির উপমা হচ্ছে যেন একটি কুলঙ্গি বা তাক, যাতে আছে একটি প্রদীপ। প্রদীপটি রয়েছে একটি কাচের চিমনির ভিতরে। চিমনিটি যেন একটি আসমানী বস্তু-যা মোতির মত ঝকমক করছে। এটি উজ্জলতা প্রাপ্ত হয়েছে পবিত্র জয়তুন গাছ থেকে-যা পুর্ব দিকের নয়, পশ্চিমদিকেরও নয়। মনে হয় যেন এর তেলটা এখনই আপনা থেকেই জ্বলে উঠবে যদিও আগুন সেটিকে স্পর্শ না করে। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে চান তার জ্যোতির দিকে পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য নানা উপমা পেশ করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা সকল বিষয় সর্ম্পকেই অবগত আছেন।
এছাড়া প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ বেদে বলা হয়েছেঃ‘রূপংরূপ বিবর্জিতস্য ভবতো ধ্যানেন যদবর্ণিতং।’ অর্থঃ এর মানে হল- ‘হে রূপহীন ঈশ্বর! ধ্যানে তোমার রূপ বর্ণনা করেছি।’ তন্ত্রমতে নারী জগতের আদি কারণ। এই জন্য যে এই নিরাকার রূপহীন ঈশ্বরকে যখন নারী ভাবা হয় তখন ঈশ্বরের মাহাত্ম ক্ষুন্ন হয় না। কাজেই ভক্তের মানসিক প্রবনার ওপরই মাতৃমূর্তির কল্পনা। যে কারণে বলা হয়েছে -
‘সাধকানাং হিতার্থায়ৈ ব্রহ্মণে রূপকল্পনা’
এর মানে হল- ‘সাধকের হিতের জন্য ঈশ্বরের রূপ কল্পনা করা হয়েছে।’
সুপ্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ন এক অনার্য ধর্মীয় বিশ্বাস হল- যোগ ( যাকে আমরা ইয়োগা বলে জানি)। পূজার সঙ্গে যোগ-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। তন্ত্র নারীবাদী হলেও এর কেন্দ্রে রয়েছেন শিব। যিনি প্রধানতম অনার্য দেবতা এবং তন্ত্রে নারীকে জগতের আদিকারণ মনে করা হলেও বিশ্বপ্রকৃতির সমস্ত শক্তির উৎস হলেন শিব।
(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-চতুর্থ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। যে ঈশ্বরকে ভালবেসে তিনি সৃজিত করেছেন, সেই ভালবাসার সৃষ্টিটি তাকে ভুলে বসে আছে। মনে হচ্ছে মনা পাগলা ঈশ্বরের ব্যথিত চিত্ত উপলব্ধি করতে পারছেন। ভালোবাসা মনের মধ্যে যে আবেগের সৃষ্টি করে তার তুলনা কোন কিছুতেই দেয়া চলে না। কেবল প্রেমিকই বুঝতে পারে প্রেয়সীর ব্যথা। যেমনটা মনা পাগলা উপলব্ধি করতে পারছে। মনার কোন কিছুই ভালো লাগছে না। কেন মানুষ স্রষ্টাকে ভুলে বসে আছে? সে আবার তাকালো পুর্ব পাশে। সেখানে সে দেখতে পেল চায়ের দোকানে যুবক বয়সের কিছু তরুণদের। মনা তাদের ব্যাপারে বেশ কৌতুহল বোধ করলো। সে চেষ্টা করলো তাদের কথোপকথন শোনার। তারা আলোচনা করছে আল্লাহ পাকের অপুর্ব সৃষ্টি কৌশল নিয়ে। মনা বেশ আনন্দ পেল তাদের কথোপকথনে। তাদের মধ্যে একজনকে মনার বেশ পছন্দ হলো। সে বলছেঃ

শোন একবার এক সাধু একশো বছর ধ্যান সাধনা করে গিরিশৃংগ হতে নেমে এল। সেই সাধুকে দেখার জন্য দর্শনার্থীদের মাঝে বেশ সাড়া পড়ে গেল। তারা সাধুর কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়। তো সেই সময় কোন একজন বেশ সাহস নিয়ে সাধুকে জিগ্যেস করলোঃ 

-প্রভু, তুমিতো একশত বছর তপস্যা করে এলে। স্রষ্টা সর্ম্পকে কিছু জানতে পারলে? 

-সাধুটি উত্তর দিলঃ একশত বছর সাধনা করে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে তাকে জানা সম্ভব নয়। 

তখন সকলেই বেশ অবাক হয়ে সাধুটির দিকে তাকিয়ে রইল। 
তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি দেখে সাধুটি বললঃ 
-মহান স্রষ্টাকে জানা সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সৃষ্টি নিজেই স্রষ্টার ভেতর লীন হয়ে রয়েছে (আল্লাহু কুল্লি শাইইন মুহিত)।একটি ডিমের কথাই ধরো। ডিমের ভেতর বাচ্চাটা যেভাবে সুপ্ত অবস্থায় থাকে বাচ্চাটির তখন বর্হিবিশ্ব সর্ম্পকে কোন ধারণাই থাকে না। তাকে যদি ঐ খোলসটি দেখিয়ে বলা হয়, তুমি এই খোলসটির মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় ছিলে। তখন ঐ বাচ্চাটির মনে যেরুপ ধারণা জন্মে তদ্রুপ তোমার ভেতরও সেই একই ধারণার সৃষ্টি হবে। তোমাকে বুঝতে হবে-তোমার স্রষ্টা তোমার ভেতর সুপ্ত অবস্থায় আছেন। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে যেরুপ ডিমের অস্তিত্ব লোপ পায়, তদ্রুপ তুমি তোমার ভেতর যে সত্তাটি আছে, তাঁকে পরম যত্নে ফুটিয়ে তোমার আত্মা হতে বের করে আনো। তখন তুমি দেখতে পাবে - এই অপরুপ রুপময় সৃষ্টি জগত কেবল তোমাকে উপহার দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তখন তোমার আর খোলসের প্রয়োজন নেই।  তুমি মুক্ত স্বাধীন চিত্তে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারবে। এটাই সাধনার মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মনা বেশ ভাবিত হলো যুবকটির কথা শুনে। কতো সহজেই কিছু সুন্দরভাবে একটি উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিল। অথচ তখন তার আশে পাশে বেশ কিছু যুবক তার মতামতটি গ্রহণ করতে চাইল না। তারা বললোঃ ডিম আগে না-মুরগী আছে? যদি ডিমের কথাই ধরো তাহলে তোমাকে মুরগীর অস্তিত্বর কথা স্বীকার করতে হবে। অার যদি বলো মুরগী আগে তাহলে সেই মুরগীটি কে সৃ্ষ্টি করেছে? এইসব অবাস্তর প্রশ্ন করা শুরু করে দিল। ঠিক সেই সময় সেই তরুণটি বেশ দৃঢ়তার সাথে বলা শুরু করলোঃ শোন তোদের আরেকটি হাদিসের কথা শোনাই। একবার রাসুলে পাক (সাঃ) এর সান্নিধ্যে এসে আবিদারা (রাঃ) নামক এক সাহাবা রসুলে পাক (সাঃ) কে বললেনঃ ইয়া রাসুল আল্লাহ, আল্লাহ পাক সৃষ্টির প্রারম্ভে কিরুপ অবস্থায় ছিলেন? উত্তরে রাসুলে পাক (সাঃ) বললেনঃ সৃষ্টির প্রারম্ভে আল্লাহ পাক আল-আমা নামক একটি কুপে কুচ্ছঝটিকা (কুয়াশাচ্ছন্নরুপে) রুপে ছিলেন। প্রশ্ন হলোঃ সেই সময় তো অাল্লাহ পাক ছাড়া কারো অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। তো সৃষ্টির পুর্বে আল্লাহ পাক কিরুপ ছিলেন তা জানা তার কথাও নয়। তাহলে সে আল্লাহ পাক কি অবস্থায় ছিলেন, তা জানলেন কিভাবে? এখন যদি এই প্রশ্নে সমাধান করা হয় তাহলে স্বীকার করতে হবে রসুলে পাকের (সাঃ) অস্তিত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাকের পুর্বে ছিল। এটা কি সম্ভব? তুই বল্....তরুণ ছেলেটির কথা শুনে অন্যান্যরা হতচকিত হয়ে গেল। তারা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না...

মনা দেখলো হ্যাঁ এখনো কিছু তরুণ আছে যারা সৃষ্টি এবং স্রষ্টা সর্ম্পকে চিন্তা ভাবনা করে। তারা বুঝতে চেষ্টা করে সত্য কোন্ পথে? তার এটা বেশ ভালো লাগলো। মনা সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পশ্চিম দিকে তার দৃষ্টি নিবন্ধ করলো। দেখলো মসজিদে আজান হচ্ছে। সেই আজান শুনে মুসল্লিরা মসজিদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এবার মনা সেইদিকটায় দৃষ্টি দিল এবং বোঝার চেষ্টা করলোঃ মুসল্লিদের মনের অবস্থা কি? তারা কি জন্যে মসজিদে যায়? তারা কি স্রষ্টাকে ভালোবেসে মসজিদে যায় না-কি স্রষ্টার ভয়ে মসজিদে যায়? না-কি অন্যকোন কারণে..যদি অন্য কোন কারণ হয়, তাহলে সেই কারণটা কি?

মনা দেখলো কেউ যায় স্রষ্টার ভালোবাসার টানে।  কেউ যায় মসজিদে জুতা চুরি করার জন্য। কেউ যায় নানা সমস্যা হতে মুক্তি পাবার আশায়। কেউ যায় আল্লাহ পাকের রহমত পাবার আশায়। কেউ যায় নিছক দায়সারা গোছের কারণে। কিন্ত্তু মনা ভেবে পেল না - এই দায়সারা গোছের লোকেরা কেন ভীড় করে মসজিদে? মসজিদ হচ্ছে সেজদার জায়গা। যেখানে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করে তার প্রতি পুর্ণ আস্থা স্থাপন করে কেবল তারই উদ্দেশ্যে মাথা অবনত করে সেজদা করবে। সেখানে দায় এড়ানোর কোন যুক্তি থাকতে পারে না।

(চলবে)

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-তৃতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা দেখতে থাকলো পশ্চিম পাশ হতে হেঁটে হেঁটে একজন বৃদ্ধ মহিলা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্ত্তু গাড়ীর ক্রমবর্ধমান চলাচলে পার হতে পারছে না। সে মনে মনে বলছেঃ "হায় আল্লাহ! কেমতে এই রাস্তা পার হই? কেউ কি নাই যে আমারে পার কইর‌্যা দেয়?" অন্যদিকে সে দেখতে পাচ্ছে রেললাইনের উপর দিয়ে মানুষজন কেউ ঈশ্বরকে স্বরণ করছে না। তারা মেতে আছে দৈনন্দিন জীবনের আজেবাজে কথোপকথনে। মনা তাকালো পুর্ব পার্শ্বের ফলের দোকানের দিকে। দোকানদাররা তাদের ফলের পশরা সাজিয়ে বসে আছে। কিন্ত্তু খদ্দর পাচ্ছে না। একজন বলছেঃ শালার কার মুক দেইক্যা যে আইজক্যা ঘর থন বাইর হইছিলাম...একটাও কাষ্টমারও আহে না। হাসপাতালের দিক হতে মানুষজন বের হচ্ছে। মনা সে দিকে তাকালো। দেখলো একজন বলছেঃ আল্লাগো তারে তুমি বাঁচাইয়্যা দেও। হেয় না বাঁচলে আমরা কেমনে চলমু? আমাগো কি অইবো? আরেক জন বলছেঃ এত ঝামেলা আর ভাললাগে না। হালায় মরেও না...অন্যদিকে আরেকজনকে বেশ প্রফুল্ল মনে হলো। সে বলছেঃ আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া। অল্পতেই বেঁচে গেছে। মনা ভেবে পেল না-মানুষের মন এত বিচিত্র কেন? কেউ প্রার্থনা করছে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে। আর কেউ চাইছে মৃত্যু। যে মৃত্যু চাইছে তার মধ্যে সে দেখতে পাচ্ছে লোভের প্রকটরুপ। আর যে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে তার মধ্যে দেখতে পাচ্ছে-ভালোবাসার বন্ধন। কিন্ত্তু তার মধ্যে তাওয়াক্কুল (আল্লাহতে ভরসা করা ) কম। কারণ সে ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখতে পারছে না। সে চিন্তায় বিভোর কেবল বেঁচে থাকার আকুলতা নিয়ে। 

এবার মনা তাকালো দক্ষিণদিকটায়। সেখানে লোকজনের চলাচল কম। গাড়ীর সংখ্যা বেশি থাকায় থেমে থেমে গাড়ীগুলো পাড় হচ্ছে। ট্রাফিকটা গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সে একটু বিশ্রামের আশা করছে। কিন্ত্তু পারছে না সার্জেন্ট এর কারণে। সে একটা গালিও দিল। অন্যদিকে গাড়ীর ড্রাইভারগুলোর দিকে তাকিয়ে মনা হচকিয়ে গেল। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেরই মতিগতি সুবিধার মনে হচ্ছে না। তারা বেশ তাড়াহুড়া করতে চাইছে যাত্রী উঠানোর আশায়। সেটাতে যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্ত্তু তাদের মনে কোন আল্লাহ খোদার নাম-নিশানা খুঁজে পেল না। তাদের মধ্যে কেবল ট্রীপ টানার চিন্তা।

মনা ভেবে পেল না যে ড্রাইভারটি চালকের আসনে বসে আছে সে যদি একটু ভুল করে তাহলে গাড়ীতে থাকা সমস্ত যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সে এ ব্যাপারে নির্বিকার। সে মনে মনে বলছে জান-মালের মালিক আল্লাহ। যুদি একসিডেন্ট হয় তার লিগ্যা আমি দায়ী থাকমু ক্যান? জানের মালিকতো আল্লাহ।  মনা মনে মনে বলছে-আরে গাধা, তোরে আল্লাহ বিবেক বুদ্ধি দিয়েছে। দিয়েছে রিযিকের ব্যবস্থা করে। তোর উপরতো অনেক লোকের দায়িত্ব। তুই তোর গাড়ীতে যাত্রী উঠিয়েছিস তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিবি বলে..তা না করে সব দোষ আল্লাহর উপর চাপাচ্ছিস কেন? জবাবদিহিতায়তো তুই তো ফেঁসে যাবিরে গাধা...

মনা আবার তাকালো পুর্বদিকটায়। সেখানে চায়ের দোকানে লোকজন গম গম করছে। চায়ের কাপের টনটনাটন অাওয়াজও কানে আসছে। মনা এবার সেদিকটায় তাকালো। তাদের কথোপকথন শোনার চেষ্টা করছে। দেখলো সেখানেও কেউ ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথনে। সময় ক্ষেপন করছে কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে। তাদের মধ্যেও কাউকে পাওয়া গেল না যাকে আল্লাহ পাকের উপর পুর্ণ আস্থাবান বলা চলে। মানুষের হলো টা কি? সবাই আল্লাহ পাককে ভুলে গেল না-কি?
(চলবে)

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা পাগলা বশিরের তাড়া খেয়ে পাছায় হাত বুলাতে বুলাতে আপন মনে হাঁটতে লাগলো। হেঁটে সে চলে এল মহাখালি ওভার ব্রীজের কাছে। তাড়াহুড়া করে হাঁটতে থাকায় তার শরীরটা বেশ কাহিল হয়ে গেছে। মাথার চুলগুলো আঠালো হয়ে গেছে। ধুলো ময়লা জমে জমে অনেকটা জট পাকানোর মতো অবস্থা। তার শরীর বেয়ে ঘাম দরদর করে পড়ছে। ঘামের র্দুগন্ধে কেউ কাছে আসতেও পারছে না। তাছাড়া পাগলদের কাছে কেউ দাঁড়াবে কিংবা কথা বলবে এমনটা চিন্তা করা বৃথা। মনা জানে-তার এই স্যাঁতস্যেতে ময়লা বেশভুষণে খুব যে সুশ্রী মনে হচ্ছে - এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। তারপরও সে যেন একটা স্মার্টবয়। চলা ফেরায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। কিন্ত্তু পারছে না। মনে হয় - সে চাচ্ছে না। সে চাচ্ছে, মনা যেন তার মতোই চলা ফেরা করে।

মনা আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো-লোক জনের ভীড় নেই। কিন্ত্তু ফুটপাথের চায়ের দোকানগুলোতে বেশ ভীড়। লোকজন ছায়াঘেরা পরিবেশে বসে চা খেতে ভালোবাসে। তাছাড়া সবার মাঝে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা। মনা ওপাশটায় দেখলো একজন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিউটি পালন করছে। গাড়ীর বেশ ভীড় লেগে আছে। দুর পাল্লার বাসগুলো ছাড়াও রাজধানীতে চলাচলকারী টেম্পু কিংবা প্রাইভেট কারের ভীড়ও কম নয়। ট্রাফিকটার দিকে তাকিয়ে মনার মনে কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট চিনচিন করে উঠলো। বুকের বামপাশটায় ব্যাথা করছে।

মনা ফুটপাথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দোকানীর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-ভাই একটা চা দেন। দুধ চা...

দোকানী আড়চোখে মনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-দোকানের ভিতরে আইস্যা বসেন।

-এইহানে খাইলে সমস্যা কি?

-আরে ভাই, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়্যা চা খাইলে লোকজনের চলাচলে সমস্যা অইবো।

-ও আমরা দাঁড়াইলেই সমস্যা? আর তুমি যে ফুটপাথের জায়গা দখল কইর‌্যা দোকান তুলছো, হেইডাতে কোন সমস্যা অয় না? 

-আরে ভাই আমরা তো জায়গার ভাড়া দেই। মাগনা থাকি না।

-তাইলে তো আপনে বড়লোক। আপনের একটা ঠিকানা আছে। আমার কোন ঠিকানা নাই। যেইহানে রাইত হেইহানেই কাইত।

-আমি জিগাইছি, আপনের ঠিকানা? মিয়া...এই লন চা খান

একথা বলে দোকানী তার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয়। মনা সেই চা টা কাঠফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুক চুক করে চা খাচ্ছে। আশে পাশের কিছু কৌতুহলী দৃষ্টি মনার দিকে পড়ছে। মনাও এইটাই যেন চাইছিল। সে সেদিকে ভ্রুুক্ষেপ না করে চা খেতে লাগলো। রাস্তার পাশে দাড়ানো পাগলকে দেখে অনেকেই নেমে রাস্তা পাড় হচ্ছে। মনার বেশ ভালোই লাগছে। মনা চায়ের টাকা কোচ থেকে বের করে দিল। আর একটা হলিউড মার্কা সিগারেট নিয়ে বেশ আয়েশ করে টানতে টানতে ওভারব্রীজের উপর উঠে গেল।

ওভারব্রীজের উপর উঠতেই দেখতে পেল এক কোণে একজোড়া কপোত-কপোতী খুনশুটি করছে। কিছু লোকজন বাতাসের আশায় দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের ক্লান্তি দুর করার জন্য। অন্যদিকে একটা স্থানে জটলা করা স্তুপীকৃত একটা পোটলা রাখা। সেখানে একটা পাগলী টাইপের মহিলা কাথা বিছিয়ে শুয়ে আছে। গায়ের রং বেশ খানিকটা মলিন। দেখলে বুঝা যায় আগে বেশ পরিস্কার ছিল। এখন এই পরিবেশে এসে তার গায়ের রংয়ে জং ধরেছে। সাজেও বেশ পরিবর্তন এনেছে। ঠোঁটে লাল রংয়ের লিপস্টিক দিয়েছে। চুলগুলো বেণী করে ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছেঁড়া জুতো। তারপরও বেশ তৃপ্তি নিয়েই বসে আছে। মনে হচ্ছে বিধাতার এই প্রদত্ত পরিণতি সে মেনে নিয়েছে। 

মনা সেখান থেকে সরে এসে ব্রীজটির ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়ালো। তারপর আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ব্রীজটির একটি প্রান্ত শেষ হয়েছে মসজিদের কাছে। পাশেই একটি পুলিশের আস্তানা। একটা থানা। থানাটির কাছেই রেল লাইন। ব্রীজটির অপরপ্রান্ত যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা হাসপাতাল। দু'পাশ দিয়েই গাড়ী সাই সাই করে চলছে। মানুষজনও চলাচল করছে। একটা কুকুর জিহ্বা বের করে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে চলছে। পাশেই আছে ফলের দোকান। আর চায়ের দোকান। ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। শরীরটা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। ঠিক সেই সময় মনার মনে একটা অদ্ভুত খেয়াল চাপলো। সে চিন্তা করলোঃ ঈশ্বরতো সাত আসমানের উপর বসে আছেন। তিনিতো সব কিছুই দেখছেন। মনা নিজেকে ঈশ্বরের স্থানে বসালেন। তারপর তাকিয়ে দেখতে থাকলেন-কে, কি করছে?

(চলবে)

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা - প্রথম পর্ব

চৈত্রের খররৌদ্রে সুর্যস্নানের মতো ভিজছে মনা পাগলা। তাতে তার কোন বিকার নেই। সে কেবল হাঁটছে। হাতির ঝিলের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে। হন হন করে। তার হাটার ধরণ দেখে অনেকেই তার দিকে কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে। তাতে কি? সে তার আপন মহিমায় সমুজ্জল। সে কারো দিকেই ভালো করে তাকাচ্ছে না। নির্ভার দৃষ্টি নিয়ে সে হেঁটেই চলেছে। রাজ পথের পীচগুলো গলে স্যান্ডেলের সাথে লেগে যাচ্ছে। উত্তাপে পায়ের তালু হতে ব্রক্ষ্মতালু পর্যন্ত ধরে যায়। অধিকক্ষণ হাঁটলে হয়তো অনেকেরই হীটস্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ডাক্তারই অধিক পরিমাণে পানি পান করার কথা বলেছেন। পারলে লেবুর শরবত। তাতে শরীর তরতাজা থাকবে। কিন্ত্তু মনা পাগলা ডাক্তারের পরামর্শ থোড়াই কেয়ার করে। সে চলছে তার মতো করে।

তার হাটার ধরণ বলছে সে কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে হাটছে। যেন তাকে এক্ষুণি যেতে হবে কোন মিটিংয়ে। কিন্ত্তু সে তো কোন অফিস করে না। তার কোন অফিস নেই। তাহলে এত তাড়া কিসের? সে হেঁটে হেঁটে নিকুন্ঞ্জের কাছে চলে এল। সেখানে দেখতে পেল-একটি পুলিশের ঘর রয়েছে। মুলতঃ সেটা হলো কমিউনিটি পুলিশ বক্স। সেখানে গার্ডরা বসে থাকে। ডিউটি দেয়। ডিউটি দেয়া কোন একজন পুলিশকে বলছেঃ

-ভাই, আপনেরে একটা কথা জিগাই?

-বলেন। ভদ্রভাবে ডিউটি অফিসারটি বললো।

-ভাই এই যে আপনেরা ডিউটি দেন তাতো আপনাদের সময় ভাগ করা থাকে। তাই না?

-জ্বি। সবার নাম এখানে লেখা আছে। কে কোন্ কোন্ সময় ডিউটি দেবে? সে অনুযায়ী তাদের ডিউটি দেয়া লাগে।

-আইচ্ছা ভাই, আল্লাহর ফেরেস্তাদেরওতো ডিউটি ভাগ কইর‌্যা দেওয়া আছে। তাই না?

- ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা। আবার বলেন।

-মানে আল্লাহর অগণিত ফেরেস্তাদের মইধ্যে চাইরজন প্রধান ফেরেস্তা আছে। সেই ফেরেস্তাগো তো ডিউটি আল্লাহয় ভাগ কইর‌্যা দিছে। যেমন ধরেনঃ হযরত জিব্রাইল (আঃ)। ইনি আল্লাহ পাকের বাণী নবী-রসুলদের কাছে পৌঁছান। তারপর হযরত ইসরাফিল (আঃ)। ইনি শিংগা হাতে নিয়া বইস্যা আছেন। আল্লাহ পাকের হুকুমের অপেক্ষায়। আল্লাহ পাক হুকুম দিলে তিনি শিংগায় ফুঁ দিবেন। তাতে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস হইয়্যা যাইব। এরপর ধরেন হযরত আজরাইল (অাঃ)। তিনি আল্লাহর হুকুমে জীবের জান কবয করেন। তারপর হযরত মিকাইল (আঃ)। ইনি আল্লাহর হুকুমে বারি বর্ষণ করেন।

-এই সব তো আমরা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বইয়ে পড়েছি সেই স্কুল লা্ইফে।

-জ্বি। আমি সেইটারই কতা কইতাছি। অামিও পড়ছি স্কুলে। তো এখন দেখেন। এই চাইর জন ফেরেস্তাদের মইধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত ফেরেস্তা হচ্ছেন হযরত আজরাইল (আঃ)। তারপর হযরত মিকাইল (আঃ)। ঝড়-বৃষ্টি প্লাবন দিতে দিতে ক্লান্ত হইয়া আছেন। আর হযরত ইসরাফিল (আঃ) তো শিংগা হাতে লইয়্যা হাত ব্যাথা কইর‌্যা ফালাইতাছে। এই তিন ফেরেস্তাদের চেয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সবচেয়ে বেশি আরামে আছেন। তার কোন ডিউটি এখন আর নাই। 

-অই মিয়া এই সব কি আবোল তাবোল বলছেন? ধর্ম সর্ম্পকে আপনে কি জানেন? পুলিশের সাথে ফাইজল্যামি? বেশি চুদুর বুদুর করবি তো এমন প্যাদানি দিমু যে হোগার ছাল দিয়া ডুগডুগি বাজাইতে পারবি।

-ভাই আপনে এত রাইগ্যা জাইতাছেন কেন? আপনেই দেহেন হেই শ্যাষ নবী হযরত মুহাম্মদের পর আর কোন নবী-রসুল আর এই জগতে আসবে না। যদি না আহে তাইলে হযরত জিব্রাইল (আঃ) তো বেকার বইস্যা আছে। তাই না?

-হালারপো গেলি...ধর্ম লইয়্যা ফাইলামি....পুটকির মইদ্যে দিয়া এই লাডিডা ঢুকাইয়্যা দিলে দেখবি...তোর ফকিরি গেছে গ্যা....

মনা পাগলা ক্ষেপে দিয়ে বললোঃ

-দেন ভাই..লাডিডা হোগার মইদ্যে ঢুকাইয়্যা দেন। লইয়্যা যাই...

পুলিশটি ক্ষেপে গিয়ে মনা পাগলার পাছার মধ্যে কয়েক ঘা বসিয়ে দিল। ঠিক তক্ষুণি মনা পাগলা খেয়াল করলোঃ পুলিশটির নাম বশির। মনা পাগলা পাছায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলোঃ

-বশির মানে হইলো সুসংবাদ দাতা। আর সেই বশির আমারে কি সুসংবাদটাই না দিল...হেই সুসংবাদে পাছার মইদ্যে দাগ পইর‌্যা গেছে..কাউরে দেহনের উপায় নাই...

বশিরকে তেড়ে আসতে দেখে মনা পাছা ডলতে ডলতে ভোঁ দৌড় দিল।

(চলবে)