পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৮ জুন, ২০১৫

মনা পাগলা ও ভবা পাগলার কথোপকথন

মনা অনেক ক্ষণ ধরে গভীর মনোযোগের সাথে কি যেন পড়ছে? তাকে পড়তে দেখে ভবা জিগ্যেস করেঃ

- কিরে মনা কি পড়স?

- কি আর পড়মুরে ভাই? একটা লেখা দেইখ্যা মনডা বড়ো উদাস হইয়্যা গেল। মনা উত্তর দেয়।

- কি দেহি?

মনা কাগজটি ভবার হাতে ধরিয়ে দেয়। কাগজটি দেখে ভবাও অবাক হয়ে যায়।
সেখানে লেখাঃ " ০১৩৫৭১২১৯৩২৩৩ এই নম্বরের অর্থগুলো যে জানতে পাড়বে সে একটি সত্য আবিস্কার করতে পারবে।" কখনো মনে হয় এটি একটি মোবাইল নাম্বার । আবার কখনো মনে হয় এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন একটি কিন্ত্তু অাছে। কিন্ত্তু কি কিন্ত্তু আছে তা ধরা যাচ্ছে না। দুজনেই বেশ গভীর আগ্রহ নিয়ে লেখাটি দেখছে আর ভাবছে।

হটাৎ নীরবতা ভংগ করে মনা উচ্চ স্বরে হাসতে আরম্ভ করলো। তাকে হাসতে দেখে ভবা জিগ্যেস করেঃ

- কি রে কিছু পেলি?

-আরে না পাইলে কি আর হাসি?

- কি পেলি?

- ঘোড়ার ডিম।

-ধুর ব্যাটা ফাইল্যামি ছাড়। বিষয়ডা যে লেকছে হেয় খুব ভাইব্যা চিন্তাই লেকছে। এইডা বুঝবার পারছি।

- শোন হাসলাম এই কারণে যে এই সংখ্যাগুলো দ্বারা যে বিষয়গুলা বুঝাইছে হেইডা বড় মামুলি ব্যাপার। দেক ভালো কইর‌্যা দেখ -  প্রথম '০' অর্থ কিছুই নাই। মানে অস্তিত্বহীন। ন অস্তি। অর্থাৎ ঘোড়ার ডিম। তারপরে ১। এর মাইনে হইলো - সৃষ্টি কর্তা একজন।

- কেমতে বুঝলিরে মনা?

-আরে ব্যাডা মোবাইলের নাম্বার অইলে কেউ এই কতা কইতো না যে এইডার মইধ্যে একটা সত্য আছে? তহনই আমার মনে অইলো এইডা দিয়াতো সৃষ্টি তত্ত্বের কতা কয় নাইতো? পরে ভাল কইর‌্যা দেইখ্যা সিওর অইছি।  

-তার মানে তুই কইতে চাস তুই সৃষ্টিতত্ত্ব বুঝতে পারছস?

- না পারলে কেমতে কইতে পারলাম?

-তাইলে তুই পুরাডা ব্যাখ্যা কর দেহি?

- হ আমি কই আর তুমি শিক্ষা লও আর কি? তোমার চালাকি আমি বুঝবার পারছি।

-ক্যা তুই ভাবছস তুই একলা জানস? আর আমি কিছু জানি না? আমার গুরু কি আমারে শিক্ষা দেয় নাই?

- কি শিক্ষা দিছে পারলে ক দেহি?

 -তোমার চালাকিও আমি বুঝবার পারছি। অামি কই আর তুমি হেইডা শিক্ষা লও আর কি?

 -তর্ক বাদ দে। আসল কথায় আয়। তুই এইডা কই পাইলি?

-আমার গুরু আমারে দিছে আর কইছে এই নাম্বারে ডায়াল করলে আল্লাহরে পাওয়া যায়। তাই আমি হেইডা নিয়া ভাবতাছি আর এই সুময়  তুই আইলি।

-তাইলে আয় দুজনে মিললা বাইর করার চেষ্টা করি এই লেখাটার মধ্যে কি আছে?

মনা আর ভবা দুইজনে গভীর ভাবে ভাবতে লাগলো কি আছে ঐ লেখাটার মধ্যে। চারদিকে একটা গভীর নীরবতা বিরাজ করছে। সেই নীরবতা ভংগ করে দুর হতে শোনা যেতে লাগলো পাখির কিচির মিচির।

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০১৫

দর্জির দোকান

ঈদকে সামনে রেখে ধুমছে চলছে পোষাক তৈরী করা। প্রতিটি দর্জির দোকানে কাপড় সেলাইয়ের ঘটর ঘটর শব্দ শুনতে শুনতে মনা পাগলা বিরক্ত হয়ে বলছেঃ

"বানাও বানাও মেশিনতো একটা পাইছো । পোষাক বানাও। সুই দিয়া ঘাই দিবা আর পোষাক বানাইবা। কার পোষাক বানাইলা হেইডা তো দেকলা না। ঐ পোষাকে বন্দী আছে সাঁই রাব্বানা। তোমাগো কান্ড কারখানা আমি কিচ্ছু বুঝি না।"

অতিথি টেইলার্সের মালিক হাতেম আলী সওদাগর। একজন পরহেজগার লোক হিসেবেই সকলে জানে। কিন্ত্তু মনা পাগলা তাকে দেখলেই ক্ষেপে যায়। লম্বা টুপি পড়া, গোফ-দাঁড়ি আছে। আর  চেহারার মধ্যে একটা শান্ত স্নিগ্ধভাব আছে। মাঝে মাঝে পান খায়। গায়ের রং ফর্সা উজ্জ্বল বলে পান খাওয়া ঠোট দুটি লাল টকটকে দেখায়। দেখতে বেশ। কিন্ত্তু মনা পাগলা তাকে ডাকে মিচকা শয়তান । বলে হাতেইম্যা অইলো গিয়া বদের বদ। বশং বদ।  ঐ হালায় জানে এই এলাকার কোন মাইয়্যার বুকের মাপ কার কতো?

লোকজন যখন হাতেম ভাইকে জিগ্যেস করে তখন সে মিষ্টি করে হেসে বলে পাগলের কথায় কান দিলে চলে? পাগলতো পাগলই। ওর কথার কোন মুল্য নাই।

-কিন্ত্তু ওতো মিথ্যেও বলে নাই। সোলেমান জিগ্যেস করে।

-আরে ভাই মাইয়্যা মানুষ অইলো গিয়া মায়ের জাত। মায়ের পোষাক আষাক বানাই তাতে লজ্জার কি আছে?

-না লজ্জার কিছু নাই। কিন্ত্তু আপনে যা করেন তাতে লজ্জার অনেক কিছুই আছে। কথায় কথায় যারা আল্লাহ রসুলের কথা বলে তাদের থেকে যতোটা দুরে থাকা যায় ততো নিরাপদে থাকা যায়। কারণ মিথ্যা কসম খায় শয়তানে। আপনে সত্য কইর‌্যা কনতো? যহন কোন মাইয়্যার বুক মাপের তখন কি আপনার মনে একবার অইলেও খান্নাস ভর করে নাই?

সোলেমানের কথার কোন জবাব না দিয়ে হাতেম আলী তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোলেমান বলে "শোনেন - মনা পাগলা হইলেও ও আপনের মতো রং ধরা লোক না।" 

-কি কইলা মিয়া? হাতেম আলী ক্ষেপে যায়।

কিন্ত্তু দুর হতে মনা পাগলাকে আসতে দেখে সে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে সোলেমানকে চলে যেতে বলে। সোলেমানের সাথে পথেই দেখা হয় মনা পাগলার সাথে। মনা পাগলা বলেঃ

সোলেমান ভাই এই কথার মানে নাই
আছে মাইনে দর্জির দোকানে
যেমতে পারে বোনে কাপড়
দেহায় তারে রং বেরং।।

-কথাটার অর্থ ধরতে পারলাম না। একটু বুঝাইয়া কও। সোলেমান বলে।

-ভাইরে সব কথার মাইনে ধরতে নাই। তোমারে তো প্রথমেই কইলাম এই কথার কোন মাইনে নাই। তারপরও কই। হোন দর্জির দোকান বলতে বুঝান হইছে - জনন ইন্দ্রিয় যেইখানে দেহ পয়দা হয়। যেমতে পারে বোনে কাপড় - মানে অইলো যে যে ভাব লইয়া দেহবীজ বোপন করে কারিগর সেই ভাবে সেই রং মিশাইয়্যাই দেহ পোষাকটা বানায়। বুঝবার পারছো ??? এই অইলো মাইনে....

দর্জির দোকানের অন্য কোন মানে থাকতে পারে তা আজ প্রথম এই পাগলের কাছ সে জানতে পেরে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো....

বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

মনা পাগলার পোষাক ভাবনা

আজ সকালে মনা পাগলা একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসেছে। সে তার জামা-কাপড় খুলে দিগম্বর হয়ে পুরোনো কাপড় চোপড়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বলছে...ও এই তাহলে আত্মার রহস্য।
তার কথা বার্তার মাথা মুন্ডু কেউ কিছু বুঝছে না। সবাই তাকে ঘিরে একটা জটলা তৈরী করে বসে আছে। বাচ্চা-কাচ্চারা তাকে দিগম্বর দেখে হাসছে। মহিলারা লজ্জায় মাথা হেট করে কোন দিকে না তাকিয়ে সিটকে পড়ছে। লোকজন বলাবলি করছে - এইটা আবার কোথ্থ থেকে আমদানী হলো ? চারদিকে জটলা দেখে এসআই মতিন সাহেব কনস্টেবল জহিরকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন। ভিড় ঠেলে জনতাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তিনি যেয়ে দেখলেন-মনা পাগলা সম্পুর্ণ দিগম্বর হয়ে বসে আছেন। তার জামাটা মেলে ধরা। নিচে পেন্ট। সেটা দেখে মনা পাগলা খিল খিল করে হাসছে আর বলছে-

"আমি আমার আত্মার থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি দেখছি আমার পুরোনো পোষাক।"

কনস্টেবল জহির বললোঃ

-স্যার পাছার মইধ্যে দুইড্যা লাথ্থি দিয়া ওর আত্মার পোষাক পড়াইয়্যা দেই। হুকুম দেন স্যার।

-আরে রাখো তোমার লাথি মারা। আগে দেখি ব্যাপারটা কি?

তিনি মনা পাগলাকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে গাড়ীতে ওঠালেন। আর জহিরকে বললেন তার কাপড় চোপরগুলো নিয়ে আসতে। গাড়ীতে তোলার সময় সেই কাপড় পড়ে নিতে বললেন। কিন্ত্তু মনা পাগলা অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তার কথাঃ

-ঐ পুরান পোষাক আমি আর পড়ুম না। আমি আমার মতো থাকতে চাই।

অগ্যতা মতিন সাহেব তাকে গাড়ীতে করে থানা হাজতে পাঠালেন।

ওসি জহিরুল হক সাহেব মাইজভান্ডারী তরীকার লোক। তিনি এসআই মতিন সাহেবের কাছ থেকে মনা পাগলার ঘটনা জানতে চাইলেন। মতিন সাহেব আদ্যপান্ত সমস্ত ঘটনাই খুলে বললেন। ওসি সাহেব মনা পাগলার সাথে কথা বলতে চান। তিনি বিষয়টাতে কৌতুহল বোধ করছেন।

দিগম্বর মনাকে হাজির করা হলো ওসি সাহেবের রুমে। তিনি মনার কাছে এর রহস্য জানতে চাইলেন। মনা প্র্রথমে ইতঃইস্ত করেও শেষে তার কথা বলা শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ

-স্যার গীতায় আছেঃ
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরণি, যথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী । (২/২২) অর্থঃ নরঃ(মনুস্য) যথা (যেমন) জীর্ণানি বাসাংসি (ছিন্ন বস্ত্র সকল) বিহায় (পরিত্যাগ করিয়া) অপরাণি নবানি(অন্য নতুন বস্ত্র সমুহ)গৃহ্নাতি(ধারণ করে) তথা (তদ্রুপ) দেহী (আত্মা) জীর্ণানী (জরাগ্রস্ত) শরীরানি (শরীর সকল) বিহায় (পরিত্যাগ করিয়া) অন্যানি নবানি (অন্য নতুন শরীর সমুহ) সংযাতি(পরিগ্রহ করে)।।
ভাবার্থঃ মানুষ যেমন পুরাতন কাপড় পরিত্যাগ করে নতুন কাপড় পরিধান করে, আত্মাও পুরাতন দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহে প্রবেশ করে ।।


-তাই? আর এজন্য আপনি আপনার পোষাক খুলে ফেলেছেন?

-জ্বি স্যার। আমি দেখাতে চেয়েছি-এই যে আমি যে পোষাক পড়ে আছি, সেটা হচ্ছে আমার দেহ। আমার এ সত্যিকারের পোষাকটাকে সেদিনই খুলে যাবে যেদিন আমি এ দেহের মধ্যে থাকবো না। তার মানে আমার আমিকে ধারণ করার জন্য প্রয়োজন হয়েছে পোষাকের।

-ইন্টারেষ্টিং..

-স্যার খালি কি ইন্টারেষ্টিং? অামি যদি আত্মহত্যা করি পরক্ষণেই অন্য একটা পোষাকে পরিধান করে আমাকে আবার পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি আবার অন্য কোন গর্ভে জন্মলাভ করবো।

-ব্যাটা কয় কি?

- কেন স্যার? আপনি কি কোরআন পড়েন নাই? সুরা আনকাবুত আয়াত নং ৫৭ তে বলা হয়েছেঃ
كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ‌ۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٥٧
আরবি উচ্চারণঃ কুল্লু নাফ্সিন্ যা-য়িক্বাতুল্ মাউতি ছুম্মা ইলাইনা-র্তুজাঊন্।
বাংলা অনুবাদ
২৯.৫৭ প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আর অন্য আয়াতে সুরা আলে এমরানের ২৭নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ
 تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আরবি উচ্চারণ
৩.২৭। তূলিজ্জুল লাইলা ফিন্নাহা-রি অতূলিজুন নাহা-রা ফিল্লাইলি অতুখ্রিজুল্ হাইয়্যা মিনাল মাইয়্যিতি অতুখ্রিজ্বুল্ মাইয়্যিতা মিনাল্ হাইয়্যি অর্তাজুকু মান্ তাশা - উ বিগাইরি হিসা-ব্।
বাংলা অনুবাদ
৩.২৭ ‘আপনি রাতকে দিনের মাঝে এবং দিনকে রাতের মাঝে প্রবেশ করান আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে ইচ্ছা বিনা হিসেবে রিজিক দান করেন’।


মনার কথা শুনে ওসি সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন মনা পাগলার দিকে। পোষাক নিয়ে এমন করে তো কখনো ভেবে দেখেননি। আজ একটা দিগম্বর পাগল এ কি বলছে? তিনি একবার মনার দিকে তাকাচ্ছেন আরেক বার নিজের পোষাকের দিকে তাকাচ্ছেন....কেন যেন তার মনে হচ্ছে নিজের পোষাকটা খুলে ফেলতে....