পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০১৪

ধাক্কা














ওই ব্যাটা দেইখ্যা পথ চলতে পারস না? হালা কানা জানি কোনহানকার।পিছনের থিক্কা ধাক্কা দিলি ক্যান? ভাই একটু আস্তে ধাক্কা দেন। সামনে ভীড়। দেখেন না? কি ব্যাপার ভাই? ধাক্কা ধাক্কি করেন ক্যান?
দৈনন্দিন জীবনে পথে-ঘাটে অফিস-আদালতে, বাসে-ট্রেনে যেখানেই যান এই ধাক্কা শব্দটি কমন। আপনি হয়তো মার্কেটে গেছেন, সেখানেও একই অবস্থা। শুক্রবার মসজিদে গেছেন নামায  পড়তে। নামায শেষ। সিড়ি বেয়ে নামছেন দেখলেন পেছন থেকে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে।
এই কমন ব্যাপারটা একটু আনকমনভাবে নেন। কি রকম? বলছি।শুনুন।আপনার ভেতর যে চেতনা ঘুমিয়ে আছে তাকে একটু ধাক্কা দিন। দেখেন না সে কি বলে? যে চেতনা আপনার চৈতন্যকে জাগ্রত করে রাখছে সে চৈতন্যকে আচ্ছন্ন করে রাখছে মায়া বা মোহ।
এই মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন আপনি। সে মায়া আপনাকে প্রলুব্ধ করে রেখেছে লোভে। কামে। হিংসা-বিদ্বেষে। আপনি হয়ে পড়েছেন তার ক্রীড়ানক। সে আপনাকে নাচাচ্ছে আর আপনি নাচছেন। একটা মাকড়শার কথা চিন্তা করুন। তার জালের দিকে তাকান। সে তার মধ্যে থাকা লালা দিয়ে একটি জাল বুনে থাকে। সে জালে নিজেরই অজান্তেই পোকা-মাকড় আটকে যায়। যতই ছাড়াতে চায় ততই সে জড়িয়ে যায়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়লে সেটাকে মাকড়শা আস্তে আস্তে খেয়ে ফেলে। ঠিক তদ্রুপ এই দুনিয়াটা মাকড়শার জালের মতোই নানান প্রলুব্ধকারী বিষয় দিয়ে ঘেরা। আপনি হয়তো নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যা্ছেন এই জালে। তাই বলছিলাম আপনার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা ঐ চেতনাকে একটু ধাক্কা দিন। ধাক্কা খেয়ে চেতনাটা কি বলে একটু কান পেতে শুনুন। তাই বলছিলাম : " চৈতন্যপ্রাপ্ত হোন। সোনার মানুষ হবেন "।

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০১৪

শপিং মল




















রাজধানীর অভিজাত বিপণীবিতানগুলোর আলোর ঝলকানিতে চোখ ফেরানো দায়। হরেক রকম বাহারী জিনিসে ঠাসা। অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা এসমস্ত বিপণীবিতানগুলোর আধুনিক নাম শপিংমল। আধুনিক পরিবারের বিত্তশালীর ধনীর দুলালীরা এখানে ফ্যাশান শোর মতো পোষাক আষাক পড়ে আসে। হাই মাম হাই ডেড ফ্যামেলির জন্য এ বাজার রীতিমতো বদলে দিয়েছে প্রাচীন আমলের হাট-বাজার। কারো কারো ফ্যাশান শো দেখে চোখ ফেরানোই দায়।

বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে যে ব্যাংলিশ কালচার আমাদের সন্তানদের মুখে শুনতে পাচ্ছি সেই শব্দগুলো নিয়েই যদি আমরা এ শপিংমলকে অর্থ করি তাহলে কি দাঁড়ায়? মল বুঝেনতো? নাকি সেটারও অর্থ বলে দিতে হবে? হাসবেন না। প্লিজ একটু ভাবুন।

যে রং ঢংয়ের দুনিয়া তা মরে গেলেই শেষ। মরার পর আপনি হবেন পোকা-মাকড়দের জন্য সুপারমল। অর্থাৎ চমৎকার ভাগাড়। জীবিত অবস্থায় যা কিনে খাচ্ছেন তা কিছুক্ষণ পরেই স্থান পায় ঐ ভাগাড়ে। বাহারে দুনিয়া ! বাহারে সুপার মল। সুখেও তুমি দু:খেও তুমি। যে আমি খাবার কিনে খাচ্ছি সেই আমিই একদিন পরিণত হব ঐ সুপার মলে।

শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০১৪

কাক ও বোকা লোক


একদিন এক লোক টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে তার খুব লোভ হলো সে ঐভাবে রান্না করে মাংস খাবে। সে ঝটপট রা্ন্নার রেসিপিটা লিখে নিল। এরপর সে মাংস কেনার জন্য দোকানে গেল ও রেসিপি অনুযায়ী সবরকম বাজার করলো। বাজারটা অনেক দূরে হওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে সে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লো। তার খুব পানির তেষ্টা পেল। সে মাংসের টুকরোটা একটি গাছের নিচে রাখলো। তারপর সে পানি পান করার জন্য পুকুরে নামলো। দু ‘এক আজলা পানি পান করে চোখে মুখে ঝাঁপটা দিতে লাগলো। আর ঐদিকে ঐ গাছের মগডালে বাস করতো এক কাক। লোকটি কাকটিকে দেখতে পায়নি।
কাকটি দেখতে পেল লোকটি মাংস রেখে পানি খেতে নিচে নামছে। আর দেরী না করে কাকটি ছোঁ মেরে ঐ মাংসের টুকরোটা নিয়ে মগডালে চলে গেল। লোকটি তা দেখে হা হা করে উঠলো। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করেও লাভ হলো না। কাকটি ঠোঁট দিয়ে ঠোকর মেরে একটু একটু করে মাংস খায় আর ডাকে কা কা… লোকটি কাকটির খাবারের ঐ দৃশ্য দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। পরক্ষণে বলে উঠলো – ওরে বোকা কাক ! মাংস কিভাবে রান্না করে খেতে হয় তা তুই জানবি কিভাবে? রেসিপিতো আমার কাছে।
আপনি যদি আপনার মূল্যবান বস্তুুটি যেখানে সেখানে ফেলে রাখেন আপনার অবন্থা হবে ঐ বোকা লোকটির মতো। দেহটি পড়ে থাকবে শুধু মূল্যবান বস্তুটি হারিয়ে যাবে।

মূল সার সংক্ষেপঃ-
টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান বলতে-বুঝানো হয়েছে বর্তমান জামানাকে।
মাংস কেনার অর্থ-দেহের মুল বস্তুটি সংগ্রহ করা তথা জমানো।
রেসিপি – বলতে পুস্তকাদিতে যে ভাব বা ভাষায় প্রকাশিত তথ্যাদি।
মাংস গাছের নিচে রাখার অর্থ- মুল বস্ত্তুটি নিজের কাছে গচ্ছিত রাখা।
গাছের নিচে রাখার অর্থ-মুলবস্তুটি দেহের নিম্নে নিয়ে যাওয়া। গাছ অর্থ দেহ।
পানি খাওয়ার অর্থ-পরিতৃপ্তির আশা করা।
কাক অর্থে-কাম কামিনীগণ।
ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে খাওয়ার অর্থ-কাম কামিনিগণ মুল বস্ত্তুটিকে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চালু করা অর্থাৎ আপনার দেহের মুল বস্তুটিকে সে গ্রহণ করতে চাইছে।
লোকটির হাসার অর্থ-সে তার মুলবস্তুটি হারিয়ে ফেলে নিজেকে তৃপ্ত করতে চাইছে মিথ্যা আশ্বাসে।
প্রকৃত অর্থে বাজারে আমরা দেহতত্ত্ব বিষয়ক অনেক বই পুস্তক দেখে থাকি। সেখানে দেহতত্ত্ব বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যাদির সন্নিবেশ ঘটাতে দেখা যায়। আমাদের অবচেতন মন সেটাকে গ্রহণ করার জন্য মেতে উঠতে চাইছে নতুন আংগিকে। আপনি যদি কোন কামেল মুর্শিদের তত্ত্বাবধানে সে বিষয়ের প্রশিক্ষণ না নিয়ে বাজার থেকে বই কিনে পড়ে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে যান, তবে সেখানে আপনার অবস্থা হবে ঐ বোকা লোকটির মতোই। আপনার বই-পুম্তকের পাহাড় পড়ে থাকবে আর আপনি হারিয়ে আসবেন আপনার মুল বস্ত্তুটি অর্থাৎ যে উপাদান দ্বারা আপনি সৃষ্টি হয়েছেন।
এ গল্পটির মুল প্রতিপাদ্য বিষয়ই এটি। ভাব প্রকাশে হয়তো দুর্বল কিন্তু চিন্তা-চেতনায় তা মোটেই দুর্বল নয়।