পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০১৪

রাক্ষস-খক্ষসের গল্প















হাউ-মাউ খাও
মানুষের গন্ধ পাও।
বাল্যকালে দাদু-নানুদের কাছে রাক্ষসের গল্প শোনেনি এমন বাঙালী খুব কমই পাওয়া যাবে। বৃষ্টির রিমি-ঝিমি শব্দের পাশাপাশি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প শোনার মজাই আলাদা। কিংবা ধরুণ শীতের রাতে লোপ মুড়ি দিয়ে কোন মতে মাথাটা একটু বের করে দাদু-নানুদের গল্প শোনেনি এমন বাঙালী হয়তো হাতে গোনা। আর ডিজিটাল যুগের কথা আলাদা। যে ঠাকুরমা কিংবা ঠাকুরদা যাই বলি না কেন তাদের ঝুলির গল্প যা ছিল কল্পনার দ্বারা সৃষ্ট তা আজ ডিজিটাল রুপে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে উপস্থিত। ভুতের গল্প শুনে কিংবা রাক্ষসের গল্প শুনে ভয়ে গায়ে কাটা দেয়নি এমন সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। ভয়ে বাথরুমে যেতে হলে সাথে কাউকে নিয়ে যেতে হয়েছে।
যুগ পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে গল্পের ধরণ। ডিজিটাল গল্প তারা এনিমেশনে দেখছে। কিন্ত্তু আমাদের সময়ে যে গল্প শুনে আমরা বিমলান্দ উপভোগ করেছি সেই একই গল্প আমাদের ছেলেমেয়েরা দেখছে ডিজিটাল এনিমেশনে। কিন্ত্তু সেই স্বাদ সেই আনন্দ কোথায়? কোথায় সেই দিনগুলি? স্মৃতির পটে হারিয়ে যান। দেখবেন চোখের কোণে এক টুকরো কালো মেঘ ভর করেছে। বৃষ্টি আসার পূর্বে তা হাত দিয়ে কিংবা হাতের আংগুলি দিয়ে সরিয়ে দিন। চশমা ব্যবহার করে থাকলে তা পরিস্কার করে নিন। ধর্তস্থ্য হন। বর্তমানে ফিরে আসুন। আবার তাকান। হারিয়ে যান সেই রাক্ষকের কল্পনায়। দাদু-নানুদের বলা সেই বর্ণনাটা ছিল এরুপ :
এক দেশে ছিল এক রাক্ষস। সেই রাক্ষসের অত্যাচারে ...দাদু রাক্ষস কি? হয়তো প্রশ্ন করে বসলেন। রাক্ষস হলো এয়া বড় তাল গাছের মতো লম্বা মুলার মতো দাঁত....দাদু বলতে থাকলেন আপনি কল্পনায় মেলাতে থাকলেন... সেই রাক্ষস মানুষ ধরে খেত। তার ঘাড় মটকে রক্ত পান করতো। এমনকি গৃহস্থের গরু-ছাগলও। তার অত্যাচার থেকে কেউ রক্ষা পেত না দাদু বলতে থাকলেন আর আপনি কল্পনায় মেলাতে থাকলেন...আর ভয়ে কিছুটা হলেও গায়ে কাঁটা দিতো। অজানা ভয়ে আতংকে কুঁকড়ে যেতে থাকলেন। ধর্তস্থ্য হন।বাস্তবে ফিরে আসুন। এবার তাকান। দেখেনতো কল্পনায় আঁকা সেই রাক্ষস দেখতে পাচ্ছেন কি-না? পাচ্ছেন না তো? পাবেন কি করে? ডিজিটাল যুগে রাক্ষসের ধরণও পাল্টে গেছে। গ্রামের সেই রাক্ষসরা যারা গরীবের রক্ত চুষে খেত  ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার কল্যাণে তারা এখন কাউন্সিলার হয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায়। খুঁজে বেড়ায় কোন ঊর্বশীর রক্তপানের নেশায়। গ্রামের রাক্ষসরা তো এখনো পুরোপুরি মর্ডাণ হয়ে উঠেনি। শহরের রাক্ষকের তুলনায় তারা পাতি রাক্ষস। শহরের রাক্ষসরা মুহুর্তের মধ্যে যে কাউকে খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে। গল্পের রাক্ষসরা মানুষ ধরে এনে গুহার মধ্যে জমা করে রাখতো। আর আরাম করে খেত। সেই গুহা থেকে কেউ মুক্তি পেত না। বর্তমানের রাক্ষসরা গার্মেন্টস নামক গুহা তৈরী করে বন্দি করে রেখেছে হাজার হাজার নর-নারী। কি এক মায়াবি জালে তারা বার বার সেই গুহায় বন্দি হয়। আর রাক্ষসরা মনের আনন্দে গা দুলিয়ে খেতে থাকে নর-মাংস। রক্তপান করছে আর চির্য়ারস বলে ভোগ করছে।
তাজা তাজা নরোম মাংসের স্বাদ যে রাক্ষসরা ভোগ করছে আর  'হাউ মাউ খা্ও মানুষের গন্ধ পাও' বলে গগণ বিদারী চিৎকার করছে সেই চিৎকারে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মানব-মানবীর সোনালী স্বপ্ন। বাস্তবতা দেখতে থাকুন আর কল্পনায় আঁকা সেই রাক্ষসদের মেলাতে থাকুন...অপেক্ষায় থাকুন কবে আসবে সেই সন্ন্যাসী কবে আসবে সেই ডালিম কুমার যাকে দেবে ব্রক্ষ অস্ত্র আর কবে নেবে কোন এক রাজকন্যাকে সেই রাক্ষসরা....