পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৭

বন্ধু ও বন্ধুত্ব - সম-স্বত্ত্বাবিশিষ্ট প্রাণের উপলব্দি

ইদানিং রহিম সাহেবের কি যেন হয়েছে। কোন কিছুতেই তার মন বসছে না। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে গেছে। কারণ কি? রহিম সাহেব নিজেও তা বুঝতে পারছেন না। একটা কিছু রাখলেই পরক্ষণেই তা ভুলে যান। কোথায় রেখেছিলেন, তা তিনি মনে করতে পারছেন না। কেন এমন হয়? কে জানে.....

রহিম সাহেব কাগজ কলম বের করে কি যেন লিখতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেটিও করতে পারছেন না। মনটা কিছুতেই স্থির হতে চাইছে না। কি করা যায়.....রহিম সাহেব আবার ভাবা শুরু করলেন। তিনি এবার নতুন করে লেখার চেষ্টা করছেনঃ

বন্ধু ও বন্থুত্ব

বন্ধু ও বন্ধুত্ব হচ্ছে সমগুণ বিশিষ্ট প্রাণ। অর্থাৎ মনের সাথে মনের মিল। মনের মিল না হলে বন্ধুত্ত্ব হয় না। বন্ধু হওয়ার প্রধান শর্তই হলোঃ প্রাণের সাথে প্রাণের মনের সাথে মনের মিলনে সমাহিত হওয়া। অন্তঃদৃষ্টিতে বন্ধু হচ্ছেঃ প্রাণের যে স্পন্দনটি প্রতি নিয়ত আপনারই সাথে থাকছে সেটা। সেটা যখন বের হয়ে যায় কোন অজানা দেশের উদ্দেশ্যে, তখন শুন্য খাঁচা পুণ্যময় হয়। যে খাঁচাটি এতদিন লালন পালন করেছেন, সেই খাঁচাটিতে যে ছিল, সেই ছিল অাপনার একান্ত অাপনজন।কাজেই সেই বন্ধুটির দেখা পেতে হলে প্রয়োজন হচ্ছেঃ ধ্যান। ধ্যানের দেশেই কেবল আপনি আপন বন্ধুকে দেখতে পারবেন। সুতরাং প্রয়োজন হচ্ছে ধ্যান....ধ্যান...ধ্যান করা। এর কোন বিকল্প নেই। কেন নেই? কারণ হলোঃ যে বন্ধুটি আপনার সাথে ছিল তার একটা নাম অাছে। আর সেটি হলো রুহ্ ।

রুহ যখন এদেহে এসেছিল কোন অজানা দেশ থেকে, সেই দেশের হদিস কেবল এ বন্ধুটিই জানে। তার সাথে আপনার যে সত্ত্ব্বাটি রয়েছে, মন, সেই সত্ত্বাটির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করুন। তাকে জানতে দিন, কথা বলতে দিন। শুনুন সে কি বলে......শুধু মাত্র বোবা হলেই তার ডাক শুনতে পাবেন আপনি। যদি সে তাঁর আপন ঠিকানা বলে, তাহলে তার সাথে পথ চলুন। তাহলেই কেবল স্র্রষ্টার সঠিক ঠিকানাটা পাবেন। কেননা, তিনি এসেছিলেন-স্র্রষ্টার হুকুমে। অালমে আমরের জগত হতে। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ যিনি হুকুম দিয়েছেন, তিনি কে?

এখানে এসে রহিম সাহেব থেমে গেলেন। কি লিখবেন, ভেবে পাচ্ছেন না.....
তিনি আবার তার আপন চিন্তায় মশগুল হলেন।
তার চিন্তায় ছেদ পড়লো যখন সোহেল সাহেব এসে ডাকলেন। 
রহিম সাহেব এবং সোহেল সাহেব দুজনেই একই কলেজে অধ্যাপনা করেন। একজন ফিলোসফির শিক্ষক অন্যজন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষক। তাতে কি? তারা একই এলাকায় থাকেন। পার্থক্য কেবল একজন বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। অন্যজন বিয়ে করেননি। যিনি করেননি, তিনি হলেন রহিম সাহেব।

-কি ব্যাপার, রহিম সাহেব, কি ভাবছেন?

রহিম সাহেব ভ্রু কুঁছকে সোহেল সাহেবের দিকে তাকালেন। কিন্তু মুখে কিছুই বললেন না। তিনি যা লিখেছেন, সেটা সোহেল সাহেবের দিকে তুলে ধরলেন

-কি এটা?

-পড়েই দ্যাখেন...

সোহেল সাহেব বেশ আনন্দ নিয়েই পড়া শুরু করলেন। কিন্তু তিনি শেষের দিকে এসে ভু্রু কুঁচছে ফেললেন...তারপর তিনি রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-অাপনার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই মশাই...শুধু শুধু যেন তেন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন?

-কেন? কি হয়েছে...সেটাতো বলবেন...

-আরে মশাই, যিনি হুকুম দিয়েছেন তিনিই হচ্ছেন সেই আল্লাহ...যার সর্ম্পকে সুরা ইখলাসে বলা হয়েছেঃ কুলহু আল্লাহু আহাদ। অাল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়া লিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। 

-অারে না মশাই। তিনি আহাদও নন সামাদ ও নন। তিনি হচ্ছেন খালিক। সৃষ্টিকর্তা। এটাই তার নাম। তিনি তাঁর সর্ম্পকে বলেছেনঃ তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন। অাপনি যার কথা বলছেন, তিনি বহুধায় বিভক্ত। কোরঅানে তিনি তার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নাহনু বলে....অানা (অামি) এক বচন অথচ নাহনু অর্থ আমরা। আমি, তুমি, সে। বহু বচন। সেক্ষেত্রে তিনি একা নন। আপনারা নাহনুকে আনা শব্দটির অর্থ দিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন। অাপনাদের ধারণা, স্র্রষ্টা বহু হলে গোলযোগ লেগে যেত। কিন্তু কোরআন বলছে অন্য কথা...যথন তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, তখনই কেবল তিনি তাঁকে পরিচয় দেন, একা বলে। তার কোন দোসর নেই। কিন্তু কোন কিছু সৃষ্টির কথা বললে তিনি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেনঃ নাহনু বলে...যেমন নাহনু আকরাবু ফিহিলায়ে হাবলিল ওয়ারিদ...অামরা তোমার শাহরগের নিকটে.....

(ক্রমশঃ)