পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

শেখ সাদী (রহঃ) এর কিতাব গুলিস্তা - প্রথম অধ্যায়

বাদশাহের ঘটনাঃ
-----------------
ঘটনাঃ কবি বলেন, একদিন এক বাদশাহকে বলতে শুনলাম, যে এক বন্ধীকে হত্যা করতে আদেশ দিচ্ছেন। তখন বন্দী নিরাশ হয়ে বাদশাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে লাগলো। কথিত আছে, যে ব্যক্তি জীবনের আশা ত্যাগ করে, তার মনে যা থাকে তাই সে প্রকাশ করে দেয়।
ওয়াক্তে জরুরাত চু নামানাদ গরেজ
দস্তে বগীরাদ ছারে শামশিরে তেজ।
অর্থাৎ কবি বলেন, অসহায় অবস্থায় যখন পলায়ন করার আর পথ না পায়, তখন ধারালো তলোয়ারের অগ্রভাগ ধরতে সে দ্বিধা করে না।
ব্যাখাঃ যখন কোন ব্যক্তি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং তার মৃত্যুর আশংকা দেখে, পালাবার পথ না পায়, তখন নৈরাশ্য অবস্থায় মনের সব সাহস অর্জন করে শত্রুর মোকাবেলা করতে উদ্যত হয়, যদি সে ধারালো তলোয়ারের আঘাত প্রতিরোধ করতে অন্য কোন কিছু না পায়, তখন সে তার নিজের কোমল হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। তাতে সে সফল হোক বা না হোক। যেমনঃ বয়াতে কবি বলেনঃ
ইযা ইয়াইসাল ইনসানু তালা লেসানুহু
কাসিন নাওরেম মাগলুবিঈ' ইয়াসুলু অালাল কালবি।
অর্থাৎ কবি বলেন, জীবনের কঠিন মুহুর্তে মানুষ যখন নিরাশ হয়ে যায় তখন তার জিহ্বা লম্বা হয়ে যায়। অর্থাৎ মুখে যা আসে তাই বলে থাকে। যেমন-বিড়াল, কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে উপায় না দেখে নিজের ছোট থাবা দ্বারা কুকুরকে আঘাত করতে চেষ্টা করে।
বাদশা নিজের অধীনে বন্দীবে কিছু বলতে শুনে তার কথা বুঝতে না পেরে উপস্থিত উজিরদের জিগ্যাসা করলেন, সে কি বলছে? উজিরদের মধ্যে সৎ উদ্দেশ্যের একজন উজির ছিল। সে বাদশাহর নিকট আরজ করলো, হে বাদশাহ নামদার! বন্দী বলছে-
উচ্চারণঃ ওয়াল কাজিমিনাল গাইযা ওয়াল আফিনা আনিন্নাসি ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুল মুহসীনীন। অর্থাৎ রাগ দমনকারী এবং মানুষের অপরাধ ক্ষমাকারীকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন।
উজিরের এ কথা শুনে বাদশাহর মনে দয়া হলো। তিনি বন্দীকে হত্যা করার আদেশ বাতিল করলেন। কিন্তু দ্বিতীয় উজির তার বিরুদ্ধ ছিল। সে বললোঃ আমাদের সহকর্মীদের মধ্য হতে কারো পক্ষেই বাদশাহর দরবারে সত্য ছাড়া মিথ্যা বলা ঠিক নয়। এ বন্দী বাদশাহকে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ করেছে। 
বাদশাহ তার কথায় কান দিলেন না। মুখ-মন্ডল অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ সে যা বলেছে তা মিথ্যা। তা আমার নিকট বেশি পছন্দ হয়েছে। তুমি যে সত্য বলেছ তার অপেক্ষায়। কেননা, তার কথার উদ্দেশ্য সৎ, তোমার কথার উদ্দেশ্য অসৎ এবং পাপ। জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, সৎ উদ্দেশ্যের জন্য মিথ্যা বলা ভালো। অসত্যের জন্য সত্যও ভালো নয়।

হর কে শাহ আঁ-কুনাদ কেহ উ গোয়েদ
হায়ফে বাশদকে জুয নেকু গোয়েদ।
অর্থঃ কবি বলেন, যখন বাদশাহ নামদার তাই করবেন, যা তিনি বলবেন তখন সৎ ছাড়া অসৎ বলা দুঃখের বিষয় হবে।