খায়রুল মাজলিশ - দ্বিতীয় পর্ব
-------------------------------------------------
স্থানঃমোমিনুল ইসলাম চিশতী সাহেবের বসত বাড়ী
ওয়াপদা রোড, পশ্চি ম রামপুরা,
ঢাকা-১২১৯।
---------------------------------------
রমজান মাস। বাদ আসর। সালঃ ২০১১ইং।
বিকেল
সাড়ে পাঁচটা বাজে। চারদিকে
রোজাদারদের ইফতারের আয়োজন চলছে। ঠিক সেই মুহুর্তে হযরত খাজা চেরাগে চিশতী
(রহঃ) তসরীফ রাখলেন শাহ্ ফকির মোহাম্মাদ রতন মিয়া চিশতী নিজামীর বসত
বাড়িতে। বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) যখন চিশতী সাহেবের বাড়ীতে আসেন, সে সময়
তাঁর
সাথে উপস্থিত ছিলেন জনাব শেখ আহ্ মদ চিশতী (খাদেম-বাবা চেরাগে চিশতী)।
[ উল্লেখ্য যে, বাবাজান ছিলেন শান্তিবাগ আমার নানাবাড়ীতে। শান্তিবাগ থেকে রিক্সাযোগে আমাদের বাড়ীতে আসেন ]
বাবা
চেরাগে চিশতী (রহঃ) - কে এর ইফতারের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল আমাদের এক পীর ভাই
মোমিনুল হক চিশতীর বাড়ীতে। মোমিন ভাইয়ের বাড়ী ওয়াপদা রোড। আমাদের বাড়ী
থেকে রিক্সাযোগে গেলে ১০/১৫ টাকা ভাড়া। হেঁটেই যাওয়া যায়।
আমাদের
বাড়ীতে অতিথি হয়ে এলেন আবদুর রহমান ভাই [প্রায়ত - সাংবাদিক রহমান ভাই
হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত। বাড়ীঃ গোপালগঞ্জ।] এবং সাথে শহিদ ভাই। আমরা সবাই
বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) - এর পাক চরণে তাজিম বাদ আরজ পেশ করলামঃ মোমিন ভাইয়ের
বাড়ীতে যাবার জন্য। তিনি আর্জি মন্ঞ্জুর করলেন এবং আমাকে আদেশ করলেনঃ
- এই মিয়া, তুমি এখানে থাকো। আরো যারা আসবে, তাদের নিয়ে তুমি ঐ মিয়ার (মোমিন ভাইয়ের দিকে ইংগিত করছেন) বাড়ীতে ইফতারের আগে নিয়ে আসিও।
আমিও বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) আজ্ঞাবহ হয়ে তাঁদেরকে রিক্সাযোগে উঠিয়ে দিলাম এবং অপেক্ষা করলাম ইফতারের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। সে সময়ও আরো চার-পাঁচজন পীর ভাই অামাদের বাড়ীতে আসলেন। এর মধ্যে জিন্নাহ ভাইও উপস্থিত হলেন। তার সাথে পুর্ব পরিচয় থাকায় আমার বেশ সু্বিধা হলো। অতঃপর আমরা ইফতারের দশ মিনিট পুর্বে সেখানে উপস্থিত হই। দেখলাম, বাবা চেরাগে চিশতী মোনাজাত করছেন। আমরাও শামিল হলাম।
- এই মিয়া, তুমি এখানে থাকো। আরো যারা আসবে, তাদের নিয়ে তুমি ঐ মিয়ার (মোমিন ভাইয়ের দিকে ইংগিত করছেন) বাড়ীতে ইফতারের আগে নিয়ে আসিও।
আমিও বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) আজ্ঞাবহ হয়ে তাঁদেরকে রিক্সাযোগে উঠিয়ে দিলাম এবং অপেক্ষা করলাম ইফতারের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। সে সময়ও আরো চার-পাঁচজন পীর ভাই অামাদের বাড়ীতে আসলেন। এর মধ্যে জিন্নাহ ভাইও উপস্থিত হলেন। তার সাথে পুর্ব পরিচয় থাকায় আমার বেশ সু্বিধা হলো। অতঃপর আমরা ইফতারের দশ মিনিট পুর্বে সেখানে উপস্থিত হই। দেখলাম, বাবা চেরাগে চিশতী মোনাজাত করছেন। আমরাও শামিল হলাম।
মাগরিবের
আজান হলো। আমরা একসাথে সবাই ইফতার করছি। ইফতার শেষ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা হলো। নামায
শেষ হলে অনেকেই সেখান থেকে বের হয়ে যান। শুধু থাকি আমি এবং জিন্নাহ ভাই।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শেখ আহমদ ভাই। আমি বাবা জানের কাছে জানতে চাইছিলাম -
চিশতী উদ্যান এবং বোরহানুল আশেকীন সর্ম্পকে।
তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ
- কি জানতে চাও?
-বাবাজান, চিশতী উদ্যান সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছি?
তৎউত্তোরে তিনি বললেনঃ
-
তুমি কি জানো, সেটা আগে বলো? [একটু স্মীত হাসি দিয়ে]বাবাজানের সেই রুপ
দেখে নিজের ভেতর কেমন যেন করে উঠলো। হায়! এ রুপ কি কখনো কোনো মানুষের
হয়....
অামি বললামঃ
- বাবাজান
আমি দেখলাম যে, একজন সাধক যখন সারাজীবন সাধনা করেন, তখন তাঁর ভেতর পাক
কালাম প্রকাশ পায়। এরপর সেই পাক কালামগুলো লিপিবদ্ধ করলে সেগুলো কিতাব
আকারে আসে। যা আমরা পুস্তক আকারে দেখে থাকি। বাবা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) যত
রেযাজত [কঠোর তপস্যা] করেছেন, তাঁর ভেতর যে পবিত্র বাণী উঠে অাসছিলো, তা-ই
চিশতী উদ্যান।
এরপর বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) - এর কাছে আল্লামা ইকবালের একটি শায়ের পেশ করি, যা ছিলঃ
এরপর বাবা চেরাগে চিশতী (রহঃ) - এর কাছে আল্লামা ইকবালের একটি শায়ের পেশ করি, যা ছিলঃ
‘তেরে যমির পে যব তক না হো নুজুলে কিতাব
গেড়াহ কুশাহ না রাজী না সাহেবে
কাশ্বাফ’।।
অর্থাৎ
যতক্ষণ পর্যন্ত তব অন্তরে ঐশী প্রেরণা অবতীর্ণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর রহস্য
প্রখ্যাত তফসীরকার ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীই হোন, বা তফসীরকার কাশশাফের লেখক আল্লামা যমখশরীই হোন, কেউ এর মর্ম
গ্রন্থী খুলতে পারবে না।
এ
কথা বলার পর তিনি আমার দিকে তাকালেন। এমন ভাবে তাকালেন, যেন আমার ভেতরটা
জ্বলে পুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছে। এমন আগুন জ্বললো বুকের ভেতর, যা ভাষায়
প্রকাশযোগ্য নয়। আমার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেল। অার চোখ থেকে অবিরাম পানি
পড়তে লাগলো। ভয়ে অামি প্রকম্পিত ছিলাম। কতোক্ষণ ছিলাম বলতে পারবো না। তবে হুঁশ আসলো...বাবাজান যখন
বললেনঃ
-তুমি ঠিকই বলেছো মিয়া...তুমি কি আসরারের [ আমাদের শ্রদ্ধেয় বড়ো ভাইজান-যাকে আমি দাদাজান বলে ডাকি। তিনি হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) এর চিশতী উদ্যান এত সুন্দরভাবে দার্শনিক দৃষ্টিভংগীতে আলোচনা করেন, যা না শুনলে মনে হবে চিশতী উদ্যানের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কিছুই শোনা হয়নি। ] কাছে যাও নি...তার সাথে বসে কথা বলবে...বুঝছো নি মিয়া...যাও...
এরপর বাবাজানকে তাজিম করে বের হয়ে আসি।
আসার
পর জিন্নাহ্ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেঃ
- ভাইজান, আপনার কারণে বাবাজানের কাছে চিশতী উদ্যানের হাকীকাত সর্ম্পকে কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারলাম।
- ভাইজান, আপনার কারণে বাবাজানের কাছে চিশতী উদ্যানের হাকীকাত সর্ম্পকে কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারলাম।
জিন্নাহ ভাইয়ের কথা শুনে আমি বললামঃ
- জিন্নাহ্
ভাই, আপনিতো আমারই ভাই। আমি বাবাজানের কাছে যা জানতে চেয়েছি, অাপনিও তা
জানতে পেরেছেন। এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য কার কি হতে পারে? সবাইতো চিশতী উদ্যান
পড়ে। কিন্তু এর মর্মার্থ কতোজন জানতে পেরেছে...সেটা হলো বড়ো কথা
বাদ সালাম। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।