পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০১৫

দর্জির দোকান

ঈদকে সামনে রেখে ধুমছে চলছে পোষাক তৈরী করা। প্রতিটি দর্জির দোকানে কাপড় সেলাইয়ের ঘটর ঘটর শব্দ শুনতে শুনতে মনা পাগলা বিরক্ত হয়ে বলছেঃ

"বানাও বানাও মেশিনতো একটা পাইছো । পোষাক বানাও। সুই দিয়া ঘাই দিবা আর পোষাক বানাইবা। কার পোষাক বানাইলা হেইডা তো দেকলা না। ঐ পোষাকে বন্দী আছে সাঁই রাব্বানা। তোমাগো কান্ড কারখানা আমি কিচ্ছু বুঝি না।"

অতিথি টেইলার্সের মালিক হাতেম আলী সওদাগর। একজন পরহেজগার লোক হিসেবেই সকলে জানে। কিন্ত্তু মনা পাগলা তাকে দেখলেই ক্ষেপে যায়। লম্বা টুপি পড়া, গোফ-দাঁড়ি আছে। আর  চেহারার মধ্যে একটা শান্ত স্নিগ্ধভাব আছে। মাঝে মাঝে পান খায়। গায়ের রং ফর্সা উজ্জ্বল বলে পান খাওয়া ঠোট দুটি লাল টকটকে দেখায়। দেখতে বেশ। কিন্ত্তু মনা পাগলা তাকে ডাকে মিচকা শয়তান । বলে হাতেইম্যা অইলো গিয়া বদের বদ। বশং বদ।  ঐ হালায় জানে এই এলাকার কোন মাইয়্যার বুকের মাপ কার কতো?

লোকজন যখন হাতেম ভাইকে জিগ্যেস করে তখন সে মিষ্টি করে হেসে বলে পাগলের কথায় কান দিলে চলে? পাগলতো পাগলই। ওর কথার কোন মুল্য নাই।

-কিন্ত্তু ওতো মিথ্যেও বলে নাই। সোলেমান জিগ্যেস করে।

-আরে ভাই মাইয়্যা মানুষ অইলো গিয়া মায়ের জাত। মায়ের পোষাক আষাক বানাই তাতে লজ্জার কি আছে?

-না লজ্জার কিছু নাই। কিন্ত্তু আপনে যা করেন তাতে লজ্জার অনেক কিছুই আছে। কথায় কথায় যারা আল্লাহ রসুলের কথা বলে তাদের থেকে যতোটা দুরে থাকা যায় ততো নিরাপদে থাকা যায়। কারণ মিথ্যা কসম খায় শয়তানে। আপনে সত্য কইর‌্যা কনতো? যহন কোন মাইয়্যার বুক মাপের তখন কি আপনার মনে একবার অইলেও খান্নাস ভর করে নাই?

সোলেমানের কথার কোন জবাব না দিয়ে হাতেম আলী তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোলেমান বলে "শোনেন - মনা পাগলা হইলেও ও আপনের মতো রং ধরা লোক না।" 

-কি কইলা মিয়া? হাতেম আলী ক্ষেপে যায়।

কিন্ত্তু দুর হতে মনা পাগলাকে আসতে দেখে সে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে সোলেমানকে চলে যেতে বলে। সোলেমানের সাথে পথেই দেখা হয় মনা পাগলার সাথে। মনা পাগলা বলেঃ

সোলেমান ভাই এই কথার মানে নাই
আছে মাইনে দর্জির দোকানে
যেমতে পারে বোনে কাপড়
দেহায় তারে রং বেরং।।

-কথাটার অর্থ ধরতে পারলাম না। একটু বুঝাইয়া কও। সোলেমান বলে।

-ভাইরে সব কথার মাইনে ধরতে নাই। তোমারে তো প্রথমেই কইলাম এই কথার কোন মাইনে নাই। তারপরও কই। হোন দর্জির দোকান বলতে বুঝান হইছে - জনন ইন্দ্রিয় যেইখানে দেহ পয়দা হয়। যেমতে পারে বোনে কাপড় - মানে অইলো যে যে ভাব লইয়া দেহবীজ বোপন করে কারিগর সেই ভাবে সেই রং মিশাইয়্যাই দেহ পোষাকটা বানায়। বুঝবার পারছো ??? এই অইলো মাইনে....

দর্জির দোকানের অন্য কোন মানে থাকতে পারে তা আজ প্রথম এই পাগলের কাছ সে জানতে পেরে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো....