পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

মনা পাগলার পোষাক ভাবনা

আজ সকালে মনা পাগলা একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসেছে। সে তার জামা-কাপড় খুলে দিগম্বর হয়ে পুরোনো কাপড় চোপড়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বলছে...ও এই তাহলে আত্মার রহস্য।
তার কথা বার্তার মাথা মুন্ডু কেউ কিছু বুঝছে না। সবাই তাকে ঘিরে একটা জটলা তৈরী করে বসে আছে। বাচ্চা-কাচ্চারা তাকে দিগম্বর দেখে হাসছে। মহিলারা লজ্জায় মাথা হেট করে কোন দিকে না তাকিয়ে সিটকে পড়ছে। লোকজন বলাবলি করছে - এইটা আবার কোথ্থ থেকে আমদানী হলো ? চারদিকে জটলা দেখে এসআই মতিন সাহেব কনস্টেবল জহিরকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন। ভিড় ঠেলে জনতাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তিনি যেয়ে দেখলেন-মনা পাগলা সম্পুর্ণ দিগম্বর হয়ে বসে আছেন। তার জামাটা মেলে ধরা। নিচে পেন্ট। সেটা দেখে মনা পাগলা খিল খিল করে হাসছে আর বলছে-

"আমি আমার আত্মার থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি দেখছি আমার পুরোনো পোষাক।"

কনস্টেবল জহির বললোঃ

-স্যার পাছার মইধ্যে দুইড্যা লাথ্থি দিয়া ওর আত্মার পোষাক পড়াইয়্যা দেই। হুকুম দেন স্যার।

-আরে রাখো তোমার লাথি মারা। আগে দেখি ব্যাপারটা কি?

তিনি মনা পাগলাকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে গাড়ীতে ওঠালেন। আর জহিরকে বললেন তার কাপড় চোপরগুলো নিয়ে আসতে। গাড়ীতে তোলার সময় সেই কাপড় পড়ে নিতে বললেন। কিন্ত্তু মনা পাগলা অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তার কথাঃ

-ঐ পুরান পোষাক আমি আর পড়ুম না। আমি আমার মতো থাকতে চাই।

অগ্যতা মতিন সাহেব তাকে গাড়ীতে করে থানা হাজতে পাঠালেন।

ওসি জহিরুল হক সাহেব মাইজভান্ডারী তরীকার লোক। তিনি এসআই মতিন সাহেবের কাছ থেকে মনা পাগলার ঘটনা জানতে চাইলেন। মতিন সাহেব আদ্যপান্ত সমস্ত ঘটনাই খুলে বললেন। ওসি সাহেব মনা পাগলার সাথে কথা বলতে চান। তিনি বিষয়টাতে কৌতুহল বোধ করছেন।

দিগম্বর মনাকে হাজির করা হলো ওসি সাহেবের রুমে। তিনি মনার কাছে এর রহস্য জানতে চাইলেন। মনা প্র্রথমে ইতঃইস্ত করেও শেষে তার কথা বলা শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ

-স্যার গীতায় আছেঃ
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরণি, যথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী । (২/২২) অর্থঃ নরঃ(মনুস্য) যথা (যেমন) জীর্ণানি বাসাংসি (ছিন্ন বস্ত্র সকল) বিহায় (পরিত্যাগ করিয়া) অপরাণি নবানি(অন্য নতুন বস্ত্র সমুহ)গৃহ্নাতি(ধারণ করে) তথা (তদ্রুপ) দেহী (আত্মা) জীর্ণানী (জরাগ্রস্ত) শরীরানি (শরীর সকল) বিহায় (পরিত্যাগ করিয়া) অন্যানি নবানি (অন্য নতুন শরীর সমুহ) সংযাতি(পরিগ্রহ করে)।।
ভাবার্থঃ মানুষ যেমন পুরাতন কাপড় পরিত্যাগ করে নতুন কাপড় পরিধান করে, আত্মাও পুরাতন দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহে প্রবেশ করে ।।


-তাই? আর এজন্য আপনি আপনার পোষাক খুলে ফেলেছেন?

-জ্বি স্যার। আমি দেখাতে চেয়েছি-এই যে আমি যে পোষাক পড়ে আছি, সেটা হচ্ছে আমার দেহ। আমার এ সত্যিকারের পোষাকটাকে সেদিনই খুলে যাবে যেদিন আমি এ দেহের মধ্যে থাকবো না। তার মানে আমার আমিকে ধারণ করার জন্য প্রয়োজন হয়েছে পোষাকের।

-ইন্টারেষ্টিং..

-স্যার খালি কি ইন্টারেষ্টিং? অামি যদি আত্মহত্যা করি পরক্ষণেই অন্য একটা পোষাকে পরিধান করে আমাকে আবার পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি আবার অন্য কোন গর্ভে জন্মলাভ করবো।

-ব্যাটা কয় কি?

- কেন স্যার? আপনি কি কোরআন পড়েন নাই? সুরা আনকাবুত আয়াত নং ৫৭ তে বলা হয়েছেঃ
كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ‌ۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٥٧
আরবি উচ্চারণঃ কুল্লু নাফ্সিন্ যা-য়িক্বাতুল্ মাউতি ছুম্মা ইলাইনা-র্তুজাঊন্।
বাংলা অনুবাদ
২৯.৫৭ প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আর অন্য আয়াতে সুরা আলে এমরানের ২৭নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ
 تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আরবি উচ্চারণ
৩.২৭। তূলিজ্জুল লাইলা ফিন্নাহা-রি অতূলিজুন নাহা-রা ফিল্লাইলি অতুখ্রিজুল্ হাইয়্যা মিনাল মাইয়্যিতি অতুখ্রিজ্বুল্ মাইয়্যিতা মিনাল্ হাইয়্যি অর্তাজুকু মান্ তাশা - উ বিগাইরি হিসা-ব্।
বাংলা অনুবাদ
৩.২৭ ‘আপনি রাতকে দিনের মাঝে এবং দিনকে রাতের মাঝে প্রবেশ করান আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে ইচ্ছা বিনা হিসেবে রিজিক দান করেন’।


মনার কথা শুনে ওসি সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন মনা পাগলার দিকে। পোষাক নিয়ে এমন করে তো কখনো ভেবে দেখেননি। আজ একটা দিগম্বর পাগল এ কি বলছে? তিনি একবার মনার দিকে তাকাচ্ছেন আরেক বার নিজের পোষাকের দিকে তাকাচ্ছেন....কেন যেন তার মনে হচ্ছে নিজের পোষাকটা খুলে ফেলতে....