পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

বৃষ্টি নিয়ে ভাবনাঃমনা পাগলার চিন্তা

মনার আজ মন ভালো নেই। সে মন মরা হয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে বাহিরের আবহাওয়ার সাথে তার মনের একটা সর্ম্পক তৈরী হয়ে গেছে। এই শ্রাবণ মাসের বারিধারায় স্নাত হওয়া একটা সময় তার সিজোনাল বাথ থাকলেও তা এখন পাল্টে গ্যাছে। তার এই ধরণ সরণ সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নয়। কিন্ত্তু তাকে যারা চেনে,তারা তার এই ধরণ-সরণ সম্পর্কে জানে। তাদেরই একজন হচ্ছেন জামিল ভাই। সেই জামিল ভাই এসে মনার কাঁধে হাত রেখে বললঃ
- কেমন আছেন?
- যেমন দেখছেন?
- দেখছি তো ভালোই আছেন।
- তাহলে ভালোই আছি।
- মন খারাপ কেন?
- ভাবচ্ছি।
- কি ভাবছেন?
- বৃষ্টির কথা...
- বৃষ্টির কথা ! জামিল ভাই কথাটা শুনে অনেকটা ভুত দেখার মতো করে চমকে উঠে বললেনঃ
- মেয়েটা কোথায় থাকে?
-আরে মিয়া, কিয়ের মাইয়্যা...আমি কইতাছি বাইরে যে বিষ্টি অইতাছে,হেইডার কথা..
জামিল ভাই দেখলেন মনা তার আসল রুপে ফিরে গেছে। তাই সে বেশ প্রফুল্ল বোধ করছেন। একটা স্বস্তি পাচ্ছেন। যাক্ শেষ পর্যন্ত মনাকে তার আসলরুপে পাওয়া গেল। তাহলে তার ভাবনার বিষয়টা জানা যেতে পারে....জামিল ভাই আস্তে করে মনাকে বললেনঃ বৃষ্টি সম্পর্কে কি ভাবছেন? সেটা কি বলা যাবে?
মনা দেখলো জামিল কেমন যেন মায়াবি গলায় কথাগুলো বলছে। মনার একটু দয়া হলো। সে ও আস্তে আস্তে করে জামিলকে বললোঃ

- তুমি যদি একটা পাত্রে পানি রেখে জ্বাল দিতে থাকো সেটা বাস্প হয়ে উড়ে যায়। সেটা জমে কখনোই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে না..তাহলে...কি পরিমাণ পানি বাষ্প হলে সেটা জমে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে....মাঝে ....মাঝে শিলাবৃষ্টিও হয়? সুর্যকে কে নির্দেশ দিল পর্যাপ্ত পরিমাণ তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করতে? না-কি মাটির বুক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে সিক্ত করণের জন্য পানি প্রয়োজন? মাটি কি কান্না করছিল পানির জন্য? যদি কান্না করেই থাকে, তাহলে সেই কান্না আমরা শুনতে পাই না কেন? অার যদি কান্না না করেই থাকে, তাহলে সে কার কাছে পানির জন্য আর্জি প্রার্থনা করছিল?
দ্যাখো,মহান রব মাটির ডাক শুনে বৃষ্টির পানি দিয়ে তাকে সিক্ত করেছেন। যেন শক্ত মাটিগুলো রসালো হয়। রসের জন্য প্রয়োজন পানি। বিধাতা সেই পানি দিয়ে জমিনকে সিক্ত করছেন। কারণ জমিন থেকে যে ফসল উৎপন্ন হবে তা তার বান্দারা আহার করবে। সেই আহার থেকে খাদ্যরস দেহবীজে পরিণত হবে। তারপর নতুন কিছু শিশু দুনিয়াতে আগমণ করবে। কেউ কেউ নির্গমণও হবে। তারপরও কথা থেকে যায়..

- কি কথা?

- যে শিশুটি ভুমিষ্ট হবে সে হবে লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি অাহসানে তাকবীম। সেই শিশুটিকে তিনি বিভিন্ন ধাপে ধাপে সৃষ্টি করেছেন। যেমন সুরা নুহ আয়াত নং ১৪। বলছেনঃ ওয়াকাদ খালাকা কুম আতওয়ারা.....তিনি (আল্লাহ) গঠন করিয়াছেন তোমাদিগকে উন্নতির নানা মাত্রায় (পর্যায়ক্রমে-বিভিন্ন ধাপে ধাপে)। সেই ধাপগুলো কি কি? একটু চিন্তা করে দেখ। এক সময় তোমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। তুমি ছিলে নিরাকার। এরপর তোমার আকার দেয়ার প্রয়োজন হয়েছে। কখন? যখন তুমি নুৎফারুপে ছিলে। সেই নুৎফার উৎপত্তি এই মাটি। ফা ইন্না খালাকনাকুম মিন তুরাবেন [সুরা হজ্জ আয়াত-২২]। তোমাকে গঠন করিয়াছি মাটি হইতে। কিরুপে? ওয়াল্লাহু আনবাতাকুম মিনাল আরদে নাবাতান-সুম্মা ইউয়িদুকুম ফিহা ওয়া ইউখরেজুকুম ইখরাজান [সুরা নুহ আয়াত নং-১৭-১৮]। বরং আল্লাহ তোমাদিগকে উদ্ভুত কয়িাছেন ভুমি হইতে-উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদিগকে ফিরাইয়া লইবেন এবং তিনি তোমাদিগকে সেখান হইতে বাহির করিবেন-এক (নতুন) জাত হিসাবে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কি জানো? ইনসান সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপটি। যেমন সুরা মোমিনুন আয়াত নং-১৪তে বলা হয়েছেঃ 
সুম্মা খালাকনান নুৎফাতা আলাকাতান মুদগাতান। অতঃপর অামরা সেই শুক্রবিন্দুকে দৃঢভাবে আটকাইয়া রাখি(জরায়ুতে)। ফা খালাকনাল মুদগাতা এজামান। পরে সেই দৃঢ়ভাবে আটকাইয়া রাখা বস্তুটাকে পরিণত করি চিবানো গোশতের পিন্ডরুপে। ফা কাসাওনাল এজামান লাহমান। এবং সেই চিবানো গোশতের পিন্ডকে রুপ দেই হাড়-হাড্ডিতে এবং সেই হাড্ডির উপরে দেই আবরণ-অক্ষত গোশতের দ্বারা।ছুম্মা আনশানা-হু খালক্কান আ-খার। অতঃপর তাকে অন্য একটি সৃষ্টি বানিয়ে দাঁড় করিয়েছি। ফাতাবা-রাকাল লাহু আহসানুল খালিকিন। সুতরাং তোমার সৃষ্টিকর্তা সুন্দরতম বরকতময়। 
দ্যাখো আল্লাহপাক কেবল মানব সৃষ্টির ব্যাপারেই কেবল বলেছেন ফাতাবা-রাকাল লাহু আহসানুল খালিকীন। আর অন্য সবার ক্ষেত্রে রাব্বুল আলামিন। খালিক তিনিই যিনি উপাদান ছাড়াই সৃষ্টি করতে পারেন। এ কথাটা কেবল আল্লাহ পাকের ক্ষেত্রেই খাটে। অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা, এই বিশ্ব ভুমন্ডল কেবল মাত্র মহান জাত পাক আল্লাহ পাকের। কাজেই তার উপাদান দিয়েই তুমি সৃষ্টি করছো। এজন্য তুমি হচ্চো সানে মানে দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা। যা কেবল ইনসানের ক্ষেত্রেই খাটে। এটা মাজেজি। হাকিকি নয়। পুর্ণ হাকিকি হচ্ছে মহান জাত পাক সুবহান ওয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম। তিনিই হচ্ছেন খালিক। তিনি ব্যতীত আর কেউ এ নামের যোগ্য নন।

মনার কথা শুনে জামিল ভাই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি ভাবতেই পারেননি বৃষ্টি নিয়ে কেউ এভাবে ভাবতে পারে? মনে মনে তিনি মনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা অবনত করলেন।