পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮

বিবর্ণ ময়ুরের গল্প

















হোকায়েতঃ
-----------
এক বনে বাস করতো একটি ময়ুর। ময়ুরটি তার বন কাননে বেশ ভালোই ছিল। নাচতো পেখম তুলে। যখন ময়ুরটি পেখম তুলে নাচতো তখন চারদিকে তার রুপের আভা ছড়িয়ে পরতো। বৃষ্টির রিনিঝিনির তালে তালে সে যখন রুমঝুম রুমঝুম করে নাচতো তখন চারদিক থেকে পশু পাখিরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। 

একদিন ময়ুরটি একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলো। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে ময়ুরটির দেহ হতে পালকগুলো খসে খসে পড়ে যেতে লাগলো। ফলে এক সময় সে বিবর্ণ হয়ে পড়লো। তার এই বিবর্ণরুপ দেখে আশে পাশের সমস্ত পাখিরা এমন কি তার সমগোত্রীয় ময়ুররাও তাকে অবজ্ঞা করতে লাগলো। এটা দেখে সে বেশ বিষর্ম হলো। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সে গভীর অনুতাপের সাথে স্র্রষ্টার দয়া কামনা করলো। 

দয়ার সাগর মহান স্র্রষ্টা তার প্রতি সদয় হলেন। দৈববাণী হলোঃ

"তুমি দুঃখিত হইও না। চিন্তিত হইও না। ধৈর্য্যধারণ কর। জেনে রাখো, ধৈর্য্যশীলদের সাথে স্র্রষ্টা অবস্থান করেন। তোমাকে  রোগ দিয়েছেন যিনি, সারিয়েও তুলবেনও তিনি।"

দৈববাণী শুনে ময়ুরটি বেশ আনন্দিত হলো। পরদিন সে যখন তার সেই বাগানে প্রবেশ করলো, তখন যথারীতি পাখিরা ঠাট্রা বিদ্রুপ করা শুরু করে দিল। 

কাক বললোঃ

-দ্যাখো দ্যাখো ঐ যে, একটা কুৎসিত ময়ুর আসছে। ওর গা থেকে দুর্গন্ধ আসছে..ছিঃ ছিঃ...আমি দেখতে কালো। আমি ময়লা আবর্জনা খাই। সেখানেই পড়ে থাকি অথচ আমার গা থেকে ওর মতো পঁচা দুর্গন্ধ আসে না...

তোতা বললোঃ

- যা বলেছো ভাই...এমন কুৎসিত প্রাণী আমি এই জগতে কোথাও দেখিনি..ওর চেয়ে আমার ঝুটিটাও সুন্দর।

টিয়া বললোঃ

-ভাই তোতা তা যা বলেছো। আমার এই রাঙা ঠোটটিও ওর চেয়ে সুন্দর।

তাদের এই কথপোকথনে অন্যান্য পাখিরাও হাসাহাসি করতে লাগলো। আর তার সমগোত্রীয় ময়ুররা সিধান্ত নিল তাকে তাদের সমাজ থেকে বের করে দেবে। তারা বললোঃ

-তোর মতো এমন কুৎসিত চেহেরার ময়ুর থাকলে আমাদেরও বদনাম হবে। তুই আমাদের সমাজ থেকে বের হয়ে যা..এক্ষুণি বিদায় হ..

তারা সবাই মিলে বিবর্ণ ঐ ময়ুরটিকে বের করে দিল। 

বিবর্ণ ঐ ময়ুরটি কাদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু তার অন্তরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো সেই দৈববাণীটি। তার বিশ্বাস ছিল সে একদিন অবশ্যই সুস্থ হবে। তখন তারই শরীর থেকে নতুন পালক গজাবে। তা হবে আরো সুন্দর এবং ঝকঝকে পরিস্কার। যাবার আগে সে তাদের উদ্দেশ্যে বলে গেল, তোমরা ভুলে যেও না আমিও তোমদের সমগোত্রীয় ময়ুর পরিবারের সদস্য। আজ আমার দুর্দিনে তোমরা আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছো, সামনে এমন দিনও আসতে পারে যা আমাকে পুর্বের চেয়ে আরো সুন্দর, আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে..

সে আশ্রয় নিল আরেকটি বনে। সেই বনের পরিচ্ছন্ন আবহওয়া তার শরীরের প্রতিটি অনুরনণে প্রবেশ করায় সে দ্রুত সুস্থ হতে লাগলো। এক সময় সে সম্পুর্ণ সুস্থ হলো এবং তারই শরীর থেকে নতুন পালক গজাতে শুরু করে দিল। প্রতিটি পালক বেশ ঝকঝকে। যা পুর্বের চেয়েও সুন্দর এবং মজবুত। একসময় সে পরিপুর্ণ  ময়ুররুপেই আর্বিভুত হলো। সেদিন বনে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো। সে দ্বিগুণ উৎসাহ নিতে নাচতে লাগলো আর গাইতে লাগলোঃ

বয়েতঃ
-------
ইন্নালাহা মা সাবেরীণ বলে ছিলে যখন
তুমিই ছিলে মোর সাথে তখন।
হে দয়াময়,
তোমার এই গুণ গান মম ছুবহান আল্লাহ
জপি তোমার নাম পরতে পরতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।।

গানের সুর ছন্দে বনটি মুখরিত হয়ে উঠলো। দুর দুরান্ত হতে সেই গান শোনার জন্য পাখিরা ছুটে আসতে শুরু করে দিল। তাদের ছুটতে দেখে ময়ুররাও তাদের পিছু নিল। তারপর তারা যা দেখলো, তাতে তাদের চোখ বিষ্ফারিত হলো। তাদের অন্তর প্রকম্পিত হলো। তারা দেখলো, তাদের চেয়েও সুন্দর ঝকেঝকে পালকগুচ্ছ নিয়ে একটি ময়ুর পেখম তুলে গান গাইছে আর নাচছে। এটি আর কেউ নয়। সেই বিবর্ণ হওয়া ময়ুরটি।


 উপদেশঃ
---------
 
কখনো কারো খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রকার কটুক্তি করা উচিত নয়। বরং সহানুভুতি নিয়ে এগিয়ে এসে তাকে সাহায্য করা উচিত। তাকে সাহস দিয়ে মনোবল বৃদ্ধি করা উচিত। যাতে সে ভেংগে না পড়ে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ওয়াল আছর। ইন্নাল ইনসানা লা ফি খুছরীন। কালের শপথ! নিশ্চ য়ই প্রতিটি ইনসান ক্ষতির মধ্যে। এই ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে কালের প্রবাহে অনেকেই পতিত হতে পারে। আপনি জানেন না..সামনে আপনার ভবিষ্যৎ কতটুকু উজ্জ্বল...কতটুকু অনুজ্জ্বল। কাজেই একথাটি সর্বদা স্বরণ রাখা উচিতঃ ইল্লাললাহা মা সাবেরীন। নিশ্চ য়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথেই আছেন।