পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮

ময়ুরের সৌন্দর্য্য এবং সত্য-উম্মোাচন

হেকায়াতঃ
একটি বনের মনোরম পরিবেশে একজোড়া ময়ুর-ময়ুরী বাস করতো। বনের গাছ-গাছালি এবং পাখ-পাখালিদের কল-কাকলিতে মুখরিত থাকতো বনটি। মাঝে মাঝে বৃষ্টি এলে বৃষ্টির কলতানে ময়ুর-ময়ুরীটি বৃষ্টির রিমিঝিমি তালে পেখম তুলে নাচতো। নাচের তালে তালে এবং বৃষ্টি পতনের ছন্দে ময়ুর-ময়ুরীটির হুঁশ জ্ঞান থাকতো না যে তাদের পেখম হতে পালক খসে পড়ছে। সেই পালক তুলে নেয়ার জন্য বনের অন্যান্য পাখিদের মাঝে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যেত।
একদিন একটি তোতার হাতে পালক দেখে টিয়া জানতে চাইলোঃ
-তোমার হাতে ওটা কি?

-এটা ময়ুরের পালক। তোতা বললো।

-পালক? এটা দিয়ে কি করো?

-আমি এটা হাতে নিয়ে সেইদিনটির কথা চিন্তা করি, যেদিন তার অপার সৌন্দর্য্য দেখেছিলাম। যে সৌন্দর্য্য আমাকে বিমোহিত করেছিল...

বয়েতঃ
তেরি চেহেরা.ই.আনোয়ার এক দিব্যজ্যোতিঃ
হৃদয়ে চালিয়েছে প্রেমের ছুরি,হরণ করেছে এই অন্তর।
প্রেমের ধারা বইছে অবিরত ঝরেছে কিছু লহু
সর্বদাই করছে এক যিকর.আল্লাহু আল্লাহু আকবর।।
হুসনে এ জলওয়া চলছে অবিরত
আয়নামা তুয়াল্লু ফাছাম্মাা ওয়াজহুল্লায়..
দেখেও দেখে না কোন মু্ন্সি মোল্লায়।।
কিতনে আজিব বাত হ্যায় ইয়ে, কুল্লি শাইইন মুহিত
ম্যায় ভি নেহী জুদা..হই যদি তোমার প্রেমে শহীদ।।

তোতার মুখে ঐরুপ প্রশংসা শুনে টিয়ার সাধ হলো সে সেই বনে যাবে এবং ময়ুরের পেখম তোলার অপরুপ দৃশ্যটি অবলোকন করবে। যথারীতি সে এই কথা অন্যান্য পাখিদের জানালো। তারা টিয়ার মুখে প্রশংসা শুনে সেই সত্য দেখার জন্য বনের ভেতর প্রবেশ করলো এবং দেখতে পেল সত্য-সত্যই একজোড়া ময়ুর-ময়ুরী হাঁটাহাঁটি করছে। কিন্ত্তু তাদের কোন পেখম দেখতে পেল না। তাদের কেমন যেন শ্রীহীন দেখাচ্ছে। এছাড়া তারা পেল না টিয়ার মুখে শোনা বর্ণনার সাথে কোন মিল। তারা টিয়াকে যথারীতি তিরষ্কার করা শুরু করলো। তাদের তিরষ্কার শুনে টিয়াটিও দুঃখ পেল। সে ছুটে গেল তোতার কাছে। গিয়ে দেখলো তোতা তখনো সেই পালকটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে এবং মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে সেই দৃশ্যটি দেখার চেষ্টা করছে। সে তোতাকে বললোঃ
-মিথ্যুক। বন্ধ কর তোমার ঐ ধাপ্পাবাজি। তোমার কথা শুনে আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম একজোড়া বিবর্ণ ময়ুর-ময়ুরী হাঁটাহাঁটি করছে। আমার সাথে অন্যান্যরাও ছিল। তারাও তা দেখেছে।
নির্বিকার চিত্তে তোতাটি বললোঃ

-বন্ধু, মিথ্যা বলিনি। আমার সাথে অন্যান্যরাও দেখেছে। আমি যে সময় ঐস্থানে গিয়েছিলাম সে সময় বৃষ্টি হয়েছিল আর তুমি যে সময় গিয়েছিলে তখন কোন বৃষ্টি ছিল না। ময়ুরের সৌর্ন্দয্য দেখতে হলে চাই বৃষ্টি, চাই পরিবেশ। চাই দেখার জন্য দৃষ্টি শক্তি। চাই সেই শক্তি অন্তরে ধারণ করার ক্ষমতা...

তোমারতো তার কোনটাই হয়নি। তুমি গিয়েছো অসময়ে...তুমি কিভাবে আমার কথার সত্যতা যাচাই করবে...তুমিতো জানোই না কিভাবে সেই সৌন্দর্য্য ধারণ করতে হয়? তাহলে কি সত্য তুমি উম্মোাচিত করবে? যে সত্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে পালকটি এখনো আমার হাতে আছে?


উপদেশঃ

মহান প্রভুর দর্শন লাভ করতে হলে তার দৃষ্টি দিয়েই তাঁকে দেখতে হবে। তার জ্ঞান দিয়েই তাকে জানতে হবে। জ্ঞানের এই দৃষ্টি যদি সঠিক না হয়, তাহলে তাকেও জানা সম্ভব নয়। এই জন্যই বলা হয়েছেঃ ইবাদতের মাধ্যমে তিনি বান্দার হাত হয়ে যান। যা দ্বারা তিনি ধরেন। তিনি তার চোখ হয়ে যান যা দ্বারা তিনি দেখেন। পা হয়ে যান, যা দ্বারা তিনিই চলেন। মুলতঃ তিনিই তার হাত দিয়েই ধরেন। তার চোখ দিয়েই তিনি দেখেন। তার পা দিয়েই তিনি চলেন। যদিও সাধারণ্যের দৃষ্টি শক্তি এত তীক্ষ্ম নয় যে সে তার দৃষ্টি শক্তি দিয়ে বস্তুর গভীরতা ভেদ করে তাকে দেখতে পাবে। এইটাই হচ্ছে হিজাব। তাই
তার দয়া ব্যতীত কেউ তাকে দেখে না। জানে না।
সুতরাং মহান প্রভুর সান্নিধ্য পেতে হলে তারই মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা তারই নির্দেশিত পথে চললেই কেবল দেখা সম্ভব।
#স্বপন #চিশতী