পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪

শরীরের তেজ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

মনিপুর চক্রঃ
মনিপুর চক্রে রয়েছে ১০টি বৃত্তি। এই চক্র দেহের তেজস্তত্ত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এখানেই সবচেয়ে আবেগময় বৃত্তিগুলির অবস্থান। এই চক্রে বৃত্তিগুলি ,-
১।মোহ (Infatuation)- কারোর প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি অন্ধ আকর্ষণ। অধিকাংশ মানুষই হয় তাদের প্রিয়জন বা পোষা প্রিয় জন্তু বা বাড়ী, গাড়ী ইত্যাদি কোন না কোন কিছু নিয়েই সব সময় ব্যস্ত আছে। কোন কিছুর সাথে এই ভাবে অহরহ যুক্ত থাকার ফলে তারা সেই বস্তুর প্রতি একটা নিয়ন্ত্রণহীন তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। এই তীব্র আকর্ষণ মানুষের মনকে বিষয়ের দিকে অন্ধভাবে ছুটিয়ে নিয়ে যায়। যেমন কোন মানুষের এইমোহছোটে অর্থের দিকে বা ক্ষমতার দিকে। কোটিপতি John Gettyবলতেন-“যদি লক্ষপতি হতে চাও তবে আমার মত সব সময় টাকার চিন্তা কর”।
২।তৃষ্ণা (Craving or thirst)- কোন কিছু পাবার তীব্র ইচ্ছা। এই তৃষ্ণা বৃত্তিই মানুষের মোহ বৃত্তিকে জাগিয়ে দেয়। এই তৃষ্ণা কেবল ধন-সম্পদ পাবার তীব্র ইচ্ছাই নয়, এ নাম-যশ-প্রতিপত্তি ইত্যাদি পাবারও ইচ্ছা। এই তৃষ্ণা বৃত্তি প্রবল হয়ে উঠলে এই চক্রের অন্যান্য ঋণাত্মক বৃত্তিগুলিকেও সক্রিয় করে তোলে। যেমন- ঈর্ষা, ঘৃণা, ভয় ইত্যাদি।
৩।ঈর্ষা (Jealousy) - পরশ্রীকাতরতাজনিত সন্দেহ। কারো ভালো দেখতে না পারা।
৪।ঘৃণা (Hatred) - কোন ব্যষ্টি, বস্তু বা স্থানের প্রতি তীব্র অপছন্দ প্রকাশ করা।
৫।ভয় (Fear) - বিপদ, গুরুতর ক্ষতি বা যন্ত্রণা থেকে উদ্ভূত মানসিক অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা।
৬।লজ্জা (Shyness) - লোকাপবাদের ভয়। অন্যের সামনে সহজ হবার আড়ষ্টতা। “করিতে পারিনা কাজ   সদা ভয় সদা লাজ   পাছে লোকে কিছু বলে”। পাছে লোকে কিছু বলতে পারে এই ভয়টাই লজ্জা।
৭।পিষুণতা (Sadistic tendency) - হৃদয়হীনতা, অন্যের দুঃখ কষ্টের প্রতি উদাসীন থাকা।
৮।সুষুপ্তি (Staticity, sleepiness) - সর্বদাই ক্লান্তির ভাব। শারীরিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক সর্বক্ষেত্রেই কাজে অনীহা। সব সময়ই তন্দ্রার ভাব।
৯।বিষাদ (Melancholia) - চরম হতাশা, জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন বা ব্যর্থ হয়ে গেছে এমন ভাবনা।
১০।কষায় (Peevishness )- খিটখিটে মেজাজ। এই কষায় বৃত্তির প্রভাবে মানুষ সহজেই উত্তেজিত হয়, সর্বদাই উত্তেজনার ভাব প্রকাশ করে। এটা হতাশা বা অসহিষ্ণুতা জনিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। আর এই বৃত্তি স্পষ্টতঃই এড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এড্রিনালিন হর্মোনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যখন কোন মানুষ চাপের (Stress) ফলে তার মনিপুর চক্রের সন্তুলন হারিয়ে ফেলে তখন সে খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। কেউ এই বৃত্তির দ্বারা অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে সে একটা আভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় ভুগতে থাকে।এই অবস্থায় স্নায়বিক দুর্বলতার জন্যে প্রায়ই সে টেবিল চাপড়িয়ে মনের অধৈর্য্য ভাব প্রকাশ করে। এরা সহজেই রেগে যায় আর অন্যের সঙ্গে অশিষ্ট, রূঢ় ব্যবহার করে। এই অবস্থায় তারা স্নায়বিক দুর্বলতার জন্যে অজীর্ণ, অম্ল ইত্যাদি উদর সংক্রান্ত রোগেও ভুগতে থাকে।
এই মনিপুর চক্রের সঙ্গেই এড্রিনাল (Adrenal) গ্রন্থি ও প্রোষ্টেট (Prostrate) গ্রন্থি সম্পর্কিত। কিডনীর উপরে আর অগ্নাশয়ের (Pancreas) ঠিক পাশেই এড্রিনাল গ্রন্থি। হঠাৎ কোন বিপদের ফলে চাপের (stress) মুখে পড়ে শরীরে কোন তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলে এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হর্মোন তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিপদের সময় এই গ্রন্থি থেকে এড্রিনালিন (Adrenaline) হর্মোন নিঃসৃত হয়ে সমস্ত শরীরকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করে এই বিপদের বিরুদ্ধে লড়তে বা তার থেকে পালিয়ে বাঁচতে।
প্রাচীন কালে   মানুষ হঠাৎ কোন বিপদের ফলে চাপের (stress) মুখে পড়লে, যেমন কোন মানুষকে হিংস্র বাঘ আক্রমন করলে তৎক্ষনাৎ সে এই বাঘের বিরুদ্ধে শারীরিক শক্তি দিয়ে লড়তো অথবা পালিয়ে যেত। এই ভাবে সে চাপ (stress) থেকে মুক্ত হতো । কিন্তু আধুনিক যুগের শিক্ষিত, সভ্য মানুষ প্রায়ই বিভিন্ন ভাবে চাপের সন্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু আদিম মানুষের মত শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে বা সেই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে এই চাপকে সরাতে পারছে না। যেমন,- যে লোকটা তার অফিসের ঊর্ধ্বতন অফিসারের দ্বারা প্রায়ই ভর্ৎসিত হচ্ছে বা যে ছাত্র লেখাপড়ার জন্যে তার শিক্ষকের দ্বারা প্রায়ই দন্ডিত হচ্ছে– তারা এদের বিরুদ্ধে না দৈহিক শক্তি দিয়ে লড়তে পারছ, না এদের থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারছে। ফলে এই চাপ তাদের মধ্যে জমা হতে থাকে । এই অবস্থায় তাদের দেহের এড্রিনাল গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত এড্রিনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়ে শরীর ও মনকে উত্তেজিত করে রাখে।ফলে,-
  • হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যায়।
  • রক্তের চাপ বেড়ে যায়।
  • সঞ্চিত সুগার রক্তে মিলিত হয় দ্রুত শক্তি পাবার জন্যে।
  • পরিপাক শক্তি কমে যায়।
আজকাল তাই দেখা যায় বহুলোক এই চাপ জনিত রোগে ভুগছে আর মৃত্যুবরণও করছে। বিভিন্ন রোগের কারণ চাপকে যুঝতে জৈব মনস্তত্ত্ব আমাদের গভীর ভাবে সাহায্য করে। আমরা ঘরে, বাইরের কোলাহলপূর্ণ দুষিত পরিবেশে সর্বদা বিভিন্ন ধরণের চাপের মধ্যে থাকি যা আমাদের মনে একটা চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এই মানসিক উত্তেজনার কারণে আমাদের মনিপুর চক্রের সন্তুলন নষ্ট হয়ে যায়, ফলে এই চক্রস্থিত কষায় বৃত্তি খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আর এই বৃত্তি তখন অনুকূল স্নায়ুতন্তুকে উত্তেজিত করে। এই উত্তেজিত স্নায়ুতন্তু এড্রিনাল গ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে, ফলে এড্রিনালিন হর্মোন নিঃসৃত হতে শুরু করে। এই এড্রিনালিন গ্রন্থিরস রক্তে মিশে শরীরকে উত্তেজিত করে ‘লড়ো নতুবা পালাও’ ভাবে সাড়া দিতে। তাই এই ধরণের অত্যধিক এড্রিনালিন রস ক্ষরণ আমাদের হঠাৎ বিপদে ছুটে চলতে শক্তি জোগায়।
আমাদের অধিকাংশ চাপগুলি তখনই আসে, যখন আমাদের অহংবোধ কোন সত্যিকারের বা কাল্পনিক বিপদের সংকেত পায়। যখন অপমান, সমালোচনা বা অন্যের রক্তচক্ষু ইত্যাদি মানসিক আঘাতের ফলে আমাদের আত্মসন্মানবোধ আহত হয়। তখন আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হয় পালিয়ে যেতে চাই নতুবা এসবের বিরুদ্ধে লড়ে বদলা নিতে চাই। আর তা করতে পারলেই আমরা এই চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি। কিন্তু আধুনিক সভ্য জগতে সাধারণতঃ আমরা দৈহিক ক্রিয়া-কলাপের মাধ্যমে এই চাপ থেকে মুক্ত হতে পারি না, এগুলো আমাদের ভিতরে জমা হতে থাকে। ফলস্বরুপ আমাদের রক্তের চাপ বেড়ে যায়, হৃদকম্প শুরু হয়, শরীরের মাংস পেশী উত্তেজিত হয়, পাকস্থলী আলোড়িত হয়। কিন্তু আমরা আমাদের এই অনুভূতিগুলি কাউকে প্রকাশ করিনা, লুকিয়ে রাখি। আমাদের রাগ, হতাশা সব সব কিছু দমন করে রাখি। বাইরে এমন ভাব দেখাই যেন কিছুই হয়নি, সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে।
আজকাল আমরা, ঘরে বা বাইরে কাজে সর্বদা এত বেশী চাপজনিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হই যে এই ধরণের উত্তেজনা সহ্য করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সব সময় একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করি, দুশ্চিন্তায় থাকি কিন্তু এই ভিতরে জমে থাকা চাপা উত্তেজনাকে বার করার কোন রাস্তাই খুঁজে পাই না। আমরা সব সময়‘Red alert’ থাকি আর আমাদের সহানুভূতি সম্পন্ন স্নায়ুতন্তুও সর্বদা উত্তেজিত থাকে। আমরা সর্বদা কেমন যেন খিটখিটে, দ্বিধাগ্রস্থ ও দুশ্চিন্তার মধ্যে থেকে থেকে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলি। ফলে ক্রমেই আমরা কাজের অযোগ্য হয়ে পড়ি আর অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের জীবনকে উপভোগ করার সমস্ত শক্তিই যেন শেষ হয়ে যায়।
এই অবস্থায় আমরা প্রায়ই দ্রুত সমাধান খুঁজি মদ-গাঁজা-হেরোইন-সিগারেট-কফি-ড্রাগ ইত্যাদির মাধ্যমে। আমরা এই ভাবে নেশাগ্রস্থ হয়ে নিজেকে ভুলতে চাই, চাপকে ক্ষণিকের জন্যে দূরে সরিয়ে রেখে মনের শান্তি পেতে চাই। কিন্তু কালক্রমে এগুলিই আমাদের চাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কফির caffeine আমাদের রক্তের চাপ ও হৃদস্পন্দনকে বাধা দেয়, সিগারেটের নিকোটিন (nicotine) হার্ট ও ফুসফুসের রোগ তথা ক্যানসার তৈরী করে। আর মদ তৈরী করে লিভার, হার্ট ও মস্তিষ্কের রোগ।
আবার এই সব সঞ্চিত আবেগময় চাপা উত্তেজনা আমাদের দেহে স্থায়ী হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরণের psychosomatic লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-ক্ষুধামন্দ, অনিদ্রা, স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া বা শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি। এই সাইকোসোমাটিক লক্ষণগুলি তখন শরীরের কোন একটা দুর্বল অঙ্গে ঘনীভূত হয়ে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন হার্টের ধড়ফড়ানি, অম্লরোগ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট। পরিশেষে এগুলি মারাত্মক ধরণের শারীরিক রোগে পরিণত হয়, যেমন-হৃদরোগ, আল্‌সার, শ্বাসরোগ। এইগুলি আবার আরও অধিক মাত্রায় নতুন চাপের সৃষ্টি করে এই রোগগুলিকেই বাড়িয়ে দেয়।
ডাক্তারেরা আজকাল জানতে পেরেছেন যে দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট চাপগুলি, ছোট ছোট সমস্যা আসলে জীবনের অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকেও আমাদের বেশী অসুস্থ করে তোলে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ক্রমাগত অসুস্থ আত্মীয়, অফিসের সহকর্মীদের দুর্ব্যবহার, দেরীতে বাস বা ট্রেন আসা বা ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি সাধারণ চাপগুলি স্বাস্থের পক্ষে তেমনই মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন হতে পারে বিবাহ বিচ্ছেদ, পরিবারের কারো মৃত্যু বা চাকরী হারানোর মত আবেগাহত অভিজ্ঞতার দ্বারা।
কিছু কিছু লোক অবশ্যই আছে যারা অপরের থেকে এই চাপগুলির প্রতি বেশী সংবেদনশীল। অধুনা গবেষণায় দেখা গেছে, যে লোকগুলি খুবই খিটখিটে মেজাজের আর ঝগড়া বা যুদ্ধ প্রিয় তারা খুব সহজেই এই সহানুভূতিসম্পন্ন স্নায়ুতন্তুর ‘লড়ো নতুবা পালাও’ ভাবের শিকার হয়। এই ধরণের লোককে ‘Type A’ ব্যষ্টিত্ব বলা হয়। এই ‘Type A’ ব্যষ্টিরাই সাধারণ লোকের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশী হার্টের রোগে ভুগে থাকে। কারণ তাদের এই খিটখিটে ভাব বা ঝগড়া বা যুদ্ধপ্রিয়তা যা কিনা মনিপুর চক্রের কষায় ও ঘৃণা বৃত্তির সমন্বয়- তা তাদের এড্রিনাল গ্রন্থিকে সর্বদা অত্যধিক উত্তেজিত করে রাখে। ফলে অতিরিক্ত এড্রিনালিন হর্মোন রক্তে মিশে তাদের রক্তের চাপকে বাড়িয়ে দেয় আর তাদের লিভার থেকে চর্বি নিঃসৃত হয়ে রক্তে মিশতে থাকে। সুতরাং তাদের রক্তের Cholesterolএর পরিমানও বাড়তে থাকে। আর এর ফলে ধমনীতে মারাত্মকভাবে চর্বি জমে তাদের ধমনীর গতি বন্ধ হয়ে যায়। এই বর্ধিত Cholesterol জনিত উচ্চ রক্তচাপই হৃদরোগাক্রান্ত হবার কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে এই ‘Type A’ ব্যষ্টিরা অধিকাংশই ধূমপায়ী, অতিরিক্ত মদ্যপায়ী আর অতি ভোজনের ফলে অতিরিক্ত মোটা। কারণ তাদের মনিপুর চক্র সন্তুলিত না থাকার ফলে ‘তৃষ্ণা’ বৃত্তি সব সময় খুবই সক্রিয় থাকে, তাই তারা সব কিছুই অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করে থাকে। এটা তাদের হার্ট এটাকের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়। আর অতিরিক্ত এড্রিনালিন হর্মোন তাদের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থাকেও (immune system) অবদমন করে রাখে। তাই এই লোকগুলির এই সব রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা সব সময় বাড়তেই থাকে।
ডাক্তারেরা বলেন যে, ‘Type A’ ব্যষ্টিরা যাদের সহানুভূতি সম্পন্ন স্নায়ুতন্তু সব সময় ‘red alert’থাকে তারা প্রায়ই খুব ক্ষমতা লোভী হয়। এও তাদের মনিপুর চক্রস্থিত ‘তৃষ্ণা’ ও ‘মোহ’ বৃত্তির অতিরিক্ত সক্রিয়তার ফলে হয়ে থাকে। যখন তারা এই ক্ষমতা অর্জন করতে গিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়, তখন তাদের মধ্যে একটা শত্রুতাভাব জেগে ওঠে। ফলে তাদের এড্রিনালিন হর্মোন অতিরিক্ত পরিমানে নিঃসৃত হতে থাকে আর তাদের রক্তের চাপ আরও বেড়ে যায়।
এই মনিপুর চক্রের সঙ্গে প্রোষ্টেট (Prostrate) গ্রন্থিও যুক্ত। প্রোষ্টেট গ্রন্থির বিকাশের সাথেই লজ্জা বৃত্তি জেগে ওঠে ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৩/৪ বৎসরের ছেলেমেয়েদের মনে কোন লজ্জাবৃত্তি থাকে না, কেননা তখনও তাদের এই গ্রন্থি বিকশিত হতে শুরু করে নি। এই বৃত্তি জন্মগত নয়, বয়সের সঙ্গে এই বৃত্তি শিশুদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যেমন একটা শিশু ৩/৪ বৎসর বয়স পর্যন্ত উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে, তার মধ্যে কোন লজ্জা বৃত্তি নাই। বাবা-মা ই তার মধ্যে লজ্জাবৃত্তি ঢুকিয়ে দেন, কাপড় পরতে বাধ্য করেন। কিন্তু শিশু একটু বড় হ’লে তার প্রোষ্টেট গ্রন্থি বিকশিত হয়, ফলে কাপড় না পরিয়ে কোথাও তাকে বের করা কঠিন।
মনিপুর চক্রের এই উপগ্রন্থির স্বাভাবিক রসক্ষরণের ফলে-
*লজ্জাবৃত্তি জেগে ওঠে।
কিন্তু এই গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত রসক্ষরণ হলে তখন তার মধ্যে একটা-
*মানসিক বিষাদের (Melancholia) ভাব জেগে ওঠে।
এই বিষাদ গ্রস্ত লোকেরা ভাবে- এখানে শুধু দুঃখই আছে, বেঁচে থাকার প্রয়োজন কী? কেউ আমার বন্ধু নয়, আত্মীয় নয়। এটা এক ধরণের মানসিক রোগ, একে Melancholia বলে। আবার এই গ্রন্থি থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম হর্মোন নিঃসৃত হলে তার মধ্যে সব সময় একটা-
*ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব জেগে ওঠে।
একটু ভয় পেলেই তার মানসিক ভ্রান্তিদর্শন হয়, সে মনে করে সে ভুত দেখছে।
তাই আমরা এখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নালীবিহীন গ্রন্থি, আবেগজনিত সমস্যা তথা বিভিন্ন রোগের সঙ্গে বৃত্তি ও চক্রের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এখন এই জৈব মনস্তত্ত্ব (Bio-Psychology) শুধু আমাদের রোগের কারণ নির্নয়েই সাহায্য করে না, আমাদের রোগ সারাতেও সাহায্য করে। যেমন, ধনুরাস্‌ন, ময়ুরাসন, চক্রাসন, ও আগ্নেয়ী মুদ্রা এড্রিনাল গ্রন্থির ওপর সরাসরি চাপ দিয়ে এই গ্রন্থির হর্মোন ক্ষরণকে সন্তুলিত করে, যা চাপ (Stress) মুক্ত করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া যোগ সাধনা (Meditation) ও শবাসনের মাধ্যমেও
*চাপ (Stress) দূর হয়।
*হৃদযন্ত্রের গতি স্বাভাবিক হয়,
*শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ধীর হয়,
*মাংসপেশী ও স্নায়ুতন্তুকে আরাম দেয়।