পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮

চিশতী উদ্যানঃ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ - অনুধাবণ ও অনুরোনন


আল্লাহর নামে যিনি রহমান, রহিম।

কৃতজ্ঞতা সেই পবিত্র সত্তার, যিনি দিয়েছেন জ্ঞান এবং শিক্ষা একজন জ্ঞানী গুরুর মাধ্যমে। পুর্ণ শক্তির আধার সেই মহান সত্তাটির, যার বিকাশ ক্রমশঃ......দিক বিদিক....যিনি তাঁর মহান পবিত্র সত্তার মাধ্যমে বোধশক্তি ও চেতনার পুর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে নবী সা. এর প্রতি দরুদ মালাইকাসহ পাঠ করছেন এবং তা করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিবর্গ, যাঁদেরকে তিনি হিকমত দান করে ভাবুকরুপে দিওয়ানা করে রেখেছেন এবং তারই প্রশংসা গীতি রচনার মাধ্যমে তা প্রস্ফুটিত করে তুলেছেন।

হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী রহ. ছিলেন সেই মহান সত্তার ধারক এবং বাহক। যিনি তাঁর মহান সত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন প্রেমময় গীতি কাব্য 'চিশতী উদ্যান' রচনা করে। ভাবুক এবং আশেকদের জন্য রচনা করে গেছেন এক অমর প্রেম গাঁথা।

যার ভাষা এবং শব্দচয়ন যেন কোন ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ। এ প্রত্যাদেশ কেবল ঐশ্বরিক প্রেমেরই প্রতিফলন। যিনি ডুবে থাকতেন প্রেম সাগরে। অবগাহন করতেন নিত্য নবরুপে। তিনি যেন প্রতিটি মুহুর্ত ডুবে থাকতেন ঐশ্বরিক প্রেমের মহাসাগরে। আর স্বার্থক ডুবারু রুপে তুলে আনতেন মণি মানিক্য। রত্ন-সম্ভার।

এটি শুধু প্রেমময় গীতি কাব্যই নয়। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে তাঁর চিন্তা-চেতনা। ভাব-দর্শন। সুফীবাদের স্বার্থক রুপায়ন। রুপ-স্বরুপের আর্বিভাব এবং তার দর্শন।

কাজেই সাধারণ মানুষের পক্ষে চট করে চিশতী উদ্যানের ব্যাখা বিশ্লেষণ ধরা সম্ভবপর নয়। কেবল চিন্তার গভীরে গেলেই এর মাহাত্ম্য বোঝা যায়।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি।

চিশতী উদ্যানের প্রথম গজলটি হলোঃ

অয় মেরে মওলা তু ছবছে আলা,
তুহি হ্যায় আফজল তুহি হ্যায় আহসান।
--------------------------------------
ভাষার মাধুর্য্য লক্ষ্য করুনঃ প্রথম চরণটিতে যে শব্দগুলো আছে-তা হলোঃ ফার্সি, উর্দু এবং আরবী ভাষার শব্দ সম্ভার। অয় শব্দটি ফার্সি ভাষার শব্দ। যার অর্থঃ তুমি এসো।
মেরে [উর্দৃ] - আমার। মওলা [আরবী] - প্রভু। তু [উর্দৃ] - তুমি। ছবছে [ফার্সি] - সবার, সবার চেয়ে। অালা [আরবী] - উপরে। উর্ধ্বে। আফজল [ফার্সি] - অতি মনোহর। আহসান [আরবি] - সুন্দর অবয়ব। ফি আহসানে তাকবীম [তুলনীয়]।

শব্দগত অর্থে হয়ঃ
তুমি এসো আমার প্রভু, তুমিই সবার উর্ধ্বে
তুমিই অতি উত্তম, তুমিই অতি মনোহর।।

সাধারণ বা সরল অর্থে হয়ঃ
হে আমার প্রভু তুমিই সবার উর্ধ্বে
তুমিই অতি উত্তম, তুমিই অতি মনোহর।।

পার্থক্য হলোঃ

প্রথমটি কাউকে ভালোবেসে আহব্বান করা। অর্থাৎ কারো প্রেমে পতিত হলে সেই প্রেমিকাকে আহব্বান করা। কোনা আশেক তার মাশুককে দেখে তার প্রতি আসক্ত হয়ে তাকে কাছে আহব্বান করা। তাঁকে দেখে তার রুপ-প্রকৃতি বর্ণনা করা। যা হুব্বুন এর অর্থ বহন করে।
আর অন্যটি হলো সাদামাটা ভাযায় আহব্বান করা।

কাজেই আমাদের ঘরানার যারা আছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে - মহান মুর্শিদের এই মহান প্রেমময় গীতি কাব্যটি যেন অনাদরে অবহেলায় পড়ে না থাকে। তাঁকে যত্ন করে তুলে না রেখে উপলব্দি করতে শিখুন। হয়ত মহান মুর্শিদ কেবলার দয়া আপনার উপরও পতিত হতে পারে...কে জানে মুর্শিদ কাকে কোন্ হালতে রাখতে পছন্দ করেন...বাবা চেরাগ-ই-চিশতী রহ. আপনাদের সহায় হোন।

ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।