পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ জুলাই, ২০১৫

মনা পাগলার সাথে কখোপকথন

অনেক দিন হলো সুফী সাহেবের ওখানে যাওয়া হয় না। বারবার মাহিনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছি। তাছাড়া শ্বেতাকেও আগের মতো পাচ্ছি না।  মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। চিন্তা করছি একবার সুফী সাহেবের ওখান থেকে ঘুরে আসবো কি-না? কারণ মাসটা হচ্ছে রমজান। এমাসে চারদিকে চলে ইফতার পার্টির আয়োজন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। চট করে রেড়ী হয়ে বের হয়ে পড়লাম সুফী সাহেবের আস্তানার উদ্দেশ্যে।

রমজান মাস। সংযমের মাস। সংযম মানে কি? আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিমরা জানে বলে মনে হয় না। চারদিকে একটা গলা কাটা ভাব বিরাজ করে। রিক্সাওয়ালা থেকে আরম্ভ করে মুদির দোকানদার সবাই একটা বাড়তি দাম রাখার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যার বলী হচ্ছে সাধারণ জনগণ। দশ টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় একশ দশটা দামে। বিশ-ত্রিশ টাকার বেগুন বিক্রি হয় একশ বিশ টাকায়। জানে ইফতারে বেগুণী লাগবেই। তরকারী হতে আরম্ভ করে সব কিছুতেই কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ লাগবেই। তাই দামেরই উম্মত্ততা। সরকার বলছে বাজার স্থিতিশীল আছে। যোগান আছে। কোন কিছুরই অভাব নেই। কিন্ত্তু বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টাটা। পন্ঞ্চাশ টাকার ভাড়া চাচ্ছে আশি টাকা। কি যে করি...
অানমানে ভাবছি হাঁটবো কি-না?

-কিরে ভাই কি ভাবছস?

পাগল গোছের একটি লোক আমাকে জিগ্যাসা করলো। আমিও তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম

-আপনি কি ভাবে জানলেন যে আমি কিছু ভাবছি?

-আমি চেহারা দেখেই বলবার পারি।

-তাই? তাহলে তো দেখছি আপনি বিরাট সাধু। এমনলোকও অাছে যে চেহারা দেখেই সব কিছু বলে দিতে পারে?

- পারে। বিশ্বাস থাকলেই পারে।

-তাই? তা বিশ্বাসটা কিভাবে করবো?

-এই যেমন ধর তুই আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করস সেই রকম আর কি?

লোকটির কথায় আমি ভালো করে লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। পড়নে ময়লা নোংরা কাপড়। দাঁতগুলো হলুদ। মাথার চুলগুলো  উসকো খুসকো। তালি দেয়া কোট গায়ে। দাঁড়ি-গোঁফে একাকার। পড়নে লুংগি। পকেটে বাঁ হাত ঢোকানো। ডান হাতে সিগারেট। ধুমছে সিগারেট টানছে আর ফুস ফুস করে ধুয়া ছাড়ছে। লোকটাকে দেখে কেমন যেন কৌতুহল হলো। আমি লোকটির নাম জানতে চাইলাম। বললাম

-কি নাম আপনার?

-আমার নাম মনা পাগলা।

-তা মনা ভাই আপনি আমার কাছে কি চান?

-তোর কাছে চাওয়ার মতো আমার কিছুই নাই। তারচেয়ে তুই আমার কাছে চা। আমি তোকে একটা জিনিস দিব যা তুই জীবনে কোনদিনও পাস নাই।

একথা বলে মনা পাগলা তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে দিল। সেখানে একটি মোবাইল নাম্বার দেয়া। আর নিচে লেখা। এই নাম্বারে ডায়াল করলে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে কথা বলা যায়। নাম্বারটি হচ্ছেঃ ০১২৩৫৭১২১৯৩৩-৩৪। সত্যিইতো। এ রকম নাম্বার তো কখনো পাইনি। তাছাড়া গ্রামীন কিংবা বাংলা লিংক বা এয়ারটেল বা রবি নাম্বারও নয়। তাহলে এই নাম্বারটার অর্থ কি? আর এরকম কোন নাম্বার আছে বলেতো আমার জানা নেই। আমি তাকে বললামঃ

-এই নাম্বারতো গ্রামীণ রবি কিংবা এয়ারটেলের নয়।

-আরে ব্যাটা এইটা হইলো আল্লাহর নাম্বার। আমি এই নাম্বারে ডায়াল করে আল্লাহর সাথে কথা কই।

তার কথা শুনে আমার ভ্রু কুঁচকে গেল। বলে কি লোকটা? সে এই্ নাম্বারে ডায়াল করে আল্লাহর কথা বলে। একমাত্র পাগল ছাড়া এই কথা কেউ এমন করে বলতে পারে না। আর লোকটি তো দেখছি সত্যিই পাগল। আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ

-এই নাম্বার আপনি কোথা হতে পেলেন?

-সাধনা করে পাইছি।

-তো সেই পাওয়া নাম্বারটা আপনি আমাকে কেন দিচ্ছেন?

-কারণ তুইও পাগল।

বলে কি লোকটা। আমি পাগল। কি রকম পাগল?  আমি বললামঃ

-কিভাবে বুঝলেন আমি পাগল?

-শোন আমরা সবাই পাগল। আমরা সবাই মনা পাগলা। মন নামক যে বস্তুটা আছে সেটা সবাইকে পাগল করে রেখেছে। কেউ ভবের পাগল। কেউ ভাবের পাগল। ভব হচ্ছে দুনিয়া। আর ভাব হচ্ছে মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত কেন্দ্রবিন্দু। যা সুখ দুঃখের অনুভুতিতে কাজ করে। তোরে যেই নাম্বারটা দিচ্ছি তা নিয়া একটু চিন্তা ভাবনা কর। তাহলে তুই জানতে পারবি একটি সত্য। যে সত্য সকলের জন্যই প্রযোজ্য। শোন নাম্বারটা দেখ। প্রথমে আছে "০"। শুন্য অর্থ ন অস্তি। অর্থাৎ যার কোন অস্তিত্বই নাই। সেই শুন্য থেকে এক - এর উৎপত্তি। অর্থাৎ 'আমি'র উৎপত্তি। এরপর সে যখন ভাবে মত্ত হলো তখন তার থেকে আরেকটি অস্তিত্বর উৎপত্তি হলো। সেইটা তুমি। অর্থাৎ আমি এরপর তুমি'র উৎপত্তি। তখন সৃষ্টি হলো দুইভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ দুইয়ের সৃষ্টি হলো। কি বুঝা গেল কিছু?

এবার আর তাকে পাগল বলে মনে হচ্ছে না। তাই কাগজটাতে আবার চোখ বুলালাম। দেখলাম ০১২.... আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখি সে নাই। হন্ হন্‌ করে হেঁটে চলে যাচ্ছে...আমি তাকে পিছন থেকে বার বার ডাকার চেষ্টা করলাম। কিন্ত্তু কিছুতেই সে আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। দৌড়ে তাকে ধরার চেষ্ট করলাম। লাভ হলো না। বললো-জানার চেষ্টা কর। সত্যটা পেয়ে যাবি।

আমি সুফী সাহেবের ওখানে যাওয়া বাদ দিয়ে সেই নাম্বার নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। কিন্ত্তু কিছুতেই মেলাতে পারছি না। নাম্বারটা দেখছি আর ০১২ পর্যন্তই দেখতে পাচ্ছি...