পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

ভাবনার বিষয়-পর্ব দুই

(পূর্ব প্রকাশের পর)

-তুই বলছিস? মাহিন বললো।

-কেন? তোর কি সন্দেহ আছে?

-থাকতেই পারে। থাকাটা কি স্বাভাবিক নয়?

-তর্ক করার জন্য তোকে ডেকে আনিনি। যে জন্য আসছিস চল সেটা নিয়েই ভাবি। একটা কাজের কাজ হবে।

-ঠিক আছে। তুই ভালো করে চা বানা। আমি এই ফাঁকে একটা সিগারেট ধরাই।

মাহিন সিগারেট নিয়ে বারান্দায় বসে আরাম করে টানছে। অামি চুলায় পানি বসিয়ে অপেক্ষা করছি চা বানানোর জন্য। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এল। চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি মাহিন অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ঊর্ধ্ব গগণে। আর বিড় বিড় করে গাইছে নজরুল সংগীতঃ

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
শূণ্যে মহা আকাশে
তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
তারকা রবি শশী খেলনা তব হে উদাসী
পড়িয়া আছে রাঙা পায়ের কাছে রাশি রাশি।
নিত্য তুমি হে উদার
সুখে-দুখে অবিকার।
হাসিছ খেলিছ তুমি আপন সনে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।

মাহিনের গলায় গানটি বেশ মানিয়ে গেল। বিশেষ করে এই আবহাওয়ায়। চা নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম। একটুও বিরক্ত করিনি। পাছে রেশ কেটে যায় এই ভয়ে। গানটি শুনতে বেশ লাগলো। মাহিনকে বললামঃ

-তুই গান কবে শিখলি?

-গান? মাহিন যেন বেশ আশ্চর্য্য বোধ করলো। যেন এ ধরণের প্রশ্ন সে জীবনেও শুনেনি।

-এই যে একটু আগে তুই গাইলি। বেশ লাগলোরে...সত্যি বলছি।

আমি ওর দিকে চায়ের কাপটি এগিয়ে দিলাম। চায়ের কাপটি হাতে নিতে নিতে বললো

-ও কিছু না। জাষ্ট মনের মধ্যে গানটি গেঁথেছিল সেটা ঝেড়ে ফেললাম। আর কি...আচ্ছা ভালো কথা...তোর সেই মনা পাগলার নাম্বারটার অর্থ বোধ করি ব্যাখ্যা করতে পারবো। নাম্বারটা হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করার সময় খেয়াল করে দেখলাম সেখানে একটা ঐক্যতান আছে। তুই ভালো করে দেখ।

মাহিনের কথা শুনে আমি মনোযোগ দিয়ে নাম্বারটা দেখতে লাগলাম। ০১২৩৫৭১২১৯৩২...কিন্ত্তু কোন ঐক্যতান খুঁজে পেলাম না। ওকে প্রশ্ন করলামঃ

-তুই কোথায় ঐক্যতান পেলি বলতো? আমিতো পাচ্ছি না...

-আরে বোকা..ভালো করে দ্যাখ। ০১২৩...এভাবে বাড়তে বাড়তে অর্থাৎ ১+২=৩ আবার ৩+২=৫ আবার ৫+২=৭

-কোন্ সুত্র ধরে পেলি বলতো? জ্যামিতিক হারে না গাণিতিক হারে অর্থাৎ সুত্র উল্লেখ কর।

-তা বলতে পারবো না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যা তাই তোকে বললাম।

-শোন। মনা কিন্ত্তু বলেছিল- প্রথমে আছে "০"। শুন্য অর্থ ন অস্তি। অর্থাৎ যার কোন অস্তিত্বই নাই। সেই শুন্য থেকে এক - এর উৎপত্তি। অর্থাৎ 'আমি'র উৎপত্তি। এরপর সে যখন ভাবে মত্ত হলো তখন তার থেকে আরেকটি অস্তিত্বের উৎপত্তি হলো। সেইটা তুমি। অর্থাৎ আমি এরপর তুমি'র উৎপত্তি। তখন সৃষ্টি হলো দুইভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ দুইয়ের সৃষ্টি হলো।

-হুম। বিষয়টা সত্যিই ভাববার মতো। আমিতো ভেবেছিলাম অন্য কিছু। এখনতো দেখছি এটি আমার চিন্তা চেতনারও বাইরে।

-আরে আমি ভেবে পাইনি বলেইতো  তোকে খবর পাঠিয়েছি।

-আরেকটু ভাবতে দে। মনে হচ্ছে এটি সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক কোন জটিল অথচ সহজ সমীকরণ।

চা খেয়ে কখন যে খালি কাপটি হাতে ধরে রেখেছি তা বলতে পারবো না। মাহিন দেখছি সত্যিই ভাবে ডুবে গেছে। চা পানের পর ও সিগারেট ধরায়। এখন খালি কাপটি হাতে রেখেই হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছে। ভাবুক মনে  উদিত প্রশ্নের সমাধান খুঁজছে উদাস ভংগীমায়। দুর হতে ওকে কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে। আকাশটা যেন নীলিমার রংয়ে রঙিন হয়েছিল সেটিও এখন বিলীন হতে শুরু করেছে। কোন এক আধারের চাদর যেন গ্রাস করতে চাইছে এই নীলিমার রং। অদ্ভুত সব বিষয় আশয় নিয়ে চিন্তা করতে মনে হয় প্রয়োজন গভীর নীরবতা। এই নীরবতাই যেন বিধাতার ভাষা। তাই বিধাতার সেই ভাষা বোঝার জন্য ওকে বিরক্ত করতে চাইলাম না। ভাবুক । ভেবে বলুক মনা পাগলার মোবাইল নাম্বারটি।

(চলবে)