পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮

আত্মদর্শন কি?


 

















দর্শন শাস্ত্রে এবং সুফিবাদে আত্মদর্শন নিয়ে অনেক কথাই লেখা রয়েছে। এমনকি হিন্দুদের সনাতন ধর্মে, গৌতম বুদ্ধের শাস্ত্রে আত্মদর্শন নিয়ে অনেক কথাই লেখা হয়েছে। হটাৎ করে কেউ এত শাস্ত্র পড়তে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রথমে আসি আমার আত্মদর্শন হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নে। 
অনেকেই জানতে চান আত্মদর্শন কি এবং সেটা কিভাবে হয়? আপনার আত্মদর্শন হয়েছে কিনা?

আমার দর্শন নিয়ে কিছু বলা হতে বিরত থাকলাম। তবে আত্মদর্শন নিয়ে আমি সহজ ভাবে আল কোরআনের দৃষ্টিতে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি-

আত্মদর্শন হলঃ নিজেকে দর্শন এবং নিজের মধ্যে রুহের মানবীয় দর্শন। আত্মদর্শনের জন্য নফস (প্রান), রুহ (আত্মা), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময়ের (স্রষ্টার) মধ্যে সম্পর্ক ও ক্রিয়াকলাপ জানা এবং নিজের মধ্যে অনুধাবন করা জরুরী। তারপর মালিকের কৃপা হলে একদিন হয়ত ইলহাম, ইলকান, কাশফ বা স্বপ্নের মাধ্যমে আপনি আপনাকে দেখতে পাবেন। নফস (প্রান), রুহ (আত্মা), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময় (স্র্রষ্টা) এই চারটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আল কোরআনে এ বিষয় গুলো নিয়ে অনেক কথা থাকলেও তার থেকে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি।

আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-

আয়াতঃ ওয়া নাফাখতু ফীহি মির রুহী ।
অর্থঃ এবং সেটার মধ্যে(মানবকৃতিতে) আমার হইতে রুহ ফুতকার করে দেই । [সূরা হাজর, আয়াত-২৯]

আয়াতঃ "ওয়া ফি আনফুসিকুম; আফালা তুবসিরুন । 
অর্থ- আমি তো তোমাদের নফসের সাথেই মিশে আছি। তোমরা আমাকে দেখ না কেন ? [সূরা যারিয়াত, আয়াত-২১]

এই দুই আয়াত হতে জানতে পারলাম আল্লাহ কে জানতে ও চিনতে হলে নিজের নফস (প্রান) এবং রুহ সম্পর্কে জানা জরুরী।
আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-

আয়াতঃ "ওয়াসিয়া কুরসিয়্যূহুস (তার সিংহাসন) সামওয়াতি ওয়াল আরদ্ব; ওয়া-লা ইয়াউদু-হু হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল (উচ্চ,উর্ধ্ব) আজিম (মহান,আজমত)।"
অর্থঃ তার সিংহাসন আকাশসমুহ এবং জমিন ব্যাপী বিস্তৃত । এবং না তার কোন অবসাদ আছে উভয়েরই সংরক্ষণে এবং তিনিই সুউচ্চ মহান। [সুরা বাকারা, আয়াত-২৫৫]

আয়াতঃ "ওয়া লিল্লাহিল মাশরিকূ (পূর্ব)ওয়াল মাগরিবু (পশ্চিম) ফাআইনামা তুওয়াললু ফাসামমা ওয়াজহুল্লাহ (আল্লাহর চেহারা)। ইন্না-ল্লাহা ওয়াসিউন (সকল দিকেই অবস্থিত। সর্বব্যাপী। সকল দিকে বিস্তৃত,পরিব্যাপ্ত ) আলীম ( জ্ঞানী, সবকিছু জানেন )।
অর্থঃ এবং পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফেরাও সুতরাং সেখানেই আল্লাহর চেহারা।নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল দিকেই বিস্তৃত, সবকিছু জানেন । [সুরা বাকারা, আয়াত-১১৫]

আয়াতঃ "সিবগাতাল্লাহ  ওয়া মান আহসানূ (সুন্দরতম,উতকৃষ্ট) মিনা-ল্লাহি সিবতাগাতাঁও ওয়া নাহনূ (আমরা) লাহূ আবিদূন।
অর্থঃ আল্লাহর রং এবং কে আল্লাহর চাইতে রংয়ে উত্তম? এবং আমরা তারই জন্য ইবাদতকারী। [সুরা বাকারা, আয়াত-১৩৮]

আয়াতঃ "সানুরিহিম আয়াতিনা ফিল আফাক্বি ওয়া ফি আনফুসিহিম হাত্তা ইয়াতাবাইয়্যানা লাহুম আন্নাহুল হাক্ক; আওয়ালাম ইয়াকফি বিরাব্বিকা আন্নাহু আলা কুল্লি শায়ইন শাহিদ। আলা ইন্নাহুম ফি মিরইয়াতিম মিললিক্বায়ে রাব্বিহিম। আলা ইন্নাহু বিকুল্লি শায়ইম মুহিত।

অর্থঃ আমি তাদের জন্য প্রকাশ করবো, আমার নিদর্শনসমুহ (চিহ্নসমুহ) সমগ্র বিশ্বজগতে এবং তাদের মধ্যে(নফসের মধ্যে), যতক্ষণ না সুস্পষ্টভাবে তাদের নিকট প্রকাশ হয় যে, নিশ্চ য় তা সত্য। ইহাই কি তোমাদের প্রভুর জন্য যথেষ্ট নয় যে, নিশ্চ য়ই তিনি সবকিছু/সববস্তুর উপর সাক্ষী।

জেনে রাখ! নিশ্চ য়ই তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের (দর্শনের) ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করে। সাবধান (জেনে রাখ)! নিশ্চ য়ই তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (সুরা হামীম সেজদাহ,আয়াত- ৫৩,৫৪)

এই আয়াত গুলো হতে জানতে পারলাম আল্লাহ কে জানতে ও চিনতে হলে নিজের নফস(প্রাণ), বিশ্ব (প্রকৃতি,সৃষ্টি) ও বিশ্বময় (স্র্রষ্টা) সম্পর্কে জানা জরুরি।

সুতরাং মহান রাব্বুল আলামিন কে নিজের মধ্যে জানতে ও অনুধাবন করতে নফস [প্রাণ],  রুহ [আত্মা] , বিশ্ব [প্রকৃতি,সৃষ্টি] ও বিশ্বময় [স্র্রষ্টা] এই চারটি বিষয় সম্পর্কে জানা জুরুরি। এ বিষয় গুলো জেনে ও অনুধাবন করে যে সিবগাতাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রং বা স্বভাবে রঞ্জিত হতে পারেন, তার মধ্যে রুহ জাগ্রত হয় বা রুহ নাযিল হয়। 

মালিকের কৃপায় রুহ কারো উপর জাগ্রত হলে সাধক রুহের মানবীয় দর্শন পেয়ে যান যা ''বাশারান সাবিইয়া তথা পরিপুর্ন মানবকারে দেখা যায়। 

আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ
ফাত্তাখাযাত মিন দুনিহিম হিজাবান;ফাআরসালনা ইলাইহা রুহানা ফাতামাসসালা লাহা বাশারান সাবিইয়া।

অর্থঃ যখন তিনি (মরিয়ম) মানুষ হতে পর্দা গ্রহন করলেন,তারপর তার প্রতি আমরা আমাদের রুহ প্রেরণ করলাম। উহা তার (মরিয়মের) সামনে পুর্ণ মানব রুপে আত্মপ্রকাশ করলো। [সুরা মরিয়ম, আয়াত-১৭]

ক্বালাত ইন্নী আউযু বিররাহমানি মিনকা ইন কুনতা তাক্বিয়া।
অর্থঃ মরিয়ম বললেন, আমি তোমার হইতে রহমানের নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যদি তোমার মধ্যে খোদার ভয় থাকে।
 
ক্বালা ইন্নামা আনা রাসুলু রাব্বিকি; লিআহাবা লাকি গুলা মান যাকিয়া।
অর্থঃ তিনি (রুহ) বললেন, নিশ্চ য়ই আমি তোমার রবের প্রেরিত [একজন রাসুল]।  আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র প্রদান করিব।
[সুরা মরিয়ম, আয়াত- ১৮-১৯]

এ আয়াতগুলোর একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। মরিয়ম যখন মানুষ হতে পর্দা অর্থাৎ নির্জনে দুনিয়ারি হতে খোদার ধ্যানে মশগুল হলেন তখন তার উপর রুহ নাযিল হলো পুর্ণমানবাকারে। রব হতে রুহ যখন পুর্ণ মানবাকারে হযরত মরিয়মের কাছে প্রকাশ হলো তখন মরিয়ম তাকে দেখিয়া ভয় পান। কেননা রুহ তার নিকটে পুরুষের আকৃতি/রুপে এসেছিলেন। এ নির্জনে পুরুষ দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। রুহ যখন মরিয়মকে অভয় দিল যে আমি তোমার রবের নিকট হতে প্রেরিত একজন রাসুল। আমি তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দেওয়ার জন্য এসেছি। মরিয়ম তার কথায় আশ্বস্ত হলে তিনি মরিয়মকে একটি সন্তান দান করেন।

এই রুহ যে সাধকের উপর যখন নাযিল হয় সেটাই তার জন্য শবে কদর এবং মেরাজ। রুহ যে কোন রুপ ধারন করতে পারে তবে মানবরুপই তার সত্যিকার ও আসলরুপ। রুহ যার উপর নাযিল হয়, সে সাধারন মানব নহে। সে আল্লাহর আকৃতির মানব। এজন্য হাদিসে বলা হয়েছেঃ "নিশ্চ য়ই আল্লাহ আদমকে তার নিজ আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। যার উপর রুহ নাযিল হয়, সে আদম অর্থাৎ আল্লাহর প্রকৃতি (স্বভাব) এবং আকৃতি (সুরত) তার উপর মুর্তিমান হয়। 
সুতরাং যে নিজেকে চিনতে পেরেছেন তার উপর রুহ নাযিল হয়েছে।  সে সৃষ্টি ও স্র্রষ্টার পরিচয় লাভ করতে পারে। ওয়াস সালাম। শান্তি।