আজ বাড়ীতে
একটা
উৎসব
হচ্ছে। চার
পাশে
মানুষের আনাগোনা। হৈচৈ আর
কোলাহলে মেতে
উঠেছে
ছেলে
বুড়ো
সবাই। উৎসবটা
হচ্ছে
গণিমিয়ার মেয়ের
বিয়ে। গণি
মিয়া
তার
সব
আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে এনেছেন। রাতে
কাজের
সুবিধার কথা
চিন্তা
করে
গন্ঞ্জে থেকে
হ্যাজাক লাইট
ভাড়া
করে
নিয়ে
আসছেন। সেই
হ্যাজাক লাইটটি
যখন
জ্বালানো হলো
সেটা
চারদিক
অালো
করে
শো
শো
শব্দ
করতে
লাগলো। কিছুক্ষণ পর
পর
সেটাকে
পাম্প
করার
দরকার
হয়। তাই
সাথে
করে
একজন
লোক
নিয়ে
এসেছেন। লোকটির
নাম
মফিজ। মফিজ
লাইটটির পাশেই
বসে
আছে।
বাড়ীর ছোট
ছোট
ছেলে-মেয়েরা সেই লাইটটিকে ঘিরে
রেখেছে। ফলে
যারা
হলুদ
বাটছিল
তাদের
খুব
অসুবিধা হচ্ছিল। মসল্লা
বাটার
খস
খস
শব্দ
আর
ছেলে-মেয়েদের হৈ হুল্লোড় দেখে
গণি
মিয়া
যারপরনাই অত্যন্ত উদ্বেলিত। তিনি
বাচ্চাদের ধমক
দিয়ে
বললেনঃ
-ঐ পোলাপান তোরা
ঐহান
থিক্কা
সর।
যা
দুরে
যাইয়্যা খেলগা।
অন্ধকার ছাড়।
ছেলেমেয়েরা তার
ধমক
খেয়ে
দুরে
সরে
বসলো।
মশল্লা
বাটতে
বাটতে
ক্লান্ত মরিয়মের মা
বাটা
থেকে
পান
মুখে
দিয়ে
আবার
সেই
খস
খস
শব্দে
মশল্লা
পিশতে
লাগলো।
সমস্যা
হলো
লাইটের
আলো
যত
বাড়তে
লাগলো
ততই
পোকা-মাকড় এসে সেটার
চারদিকে জড়ো
হতে
লাগলো।
সেই
পোকাগুলো কারো
গায়ে
কারো
মুখে
বারি
খেয়ে
বিরক্তি উৎপাদন
করতে
লাগলো।
গণি
মিয়া
সেই
পোকা
মাকড়ের
হাত
থেকে
বাঁচার
জন্য
একটু
দুরে
এসে
বসলেন।
ঠিক
সেই
সময়
তার
এক
মামাতো
ভাই
রফিক
এসে
হাজির।
তারা
প্রায়ই
সম
বয়সী।
মেয়ের
বিয়ের
জন্য
তিনি
তাকে
দাওয়াত
দিয়ে
নিয়ে
আসতে
চেয়েছিলেন। কিন্ত্তু রফিক
সেই
সময়
তার
সাথে
আসতে
পারেনি। রফিক
একজন
মরমী
সাধক।
সে
কোলাহল
পছন্দ
করে
না।
তাই
সেও
একটু
আড়ালে
এসে
বসলো।
গণি
মিয়া
রফিককে
দেখে
জিগ্যেস করলেনঃ
-কি এতো দেরী
করে
আসলি
ক্যান?
তোকে
না
বলেছিলাম সকাল
সকাল
আসার
জন্য?
-তাড়াতাড়ি আইস্যা আমি কি
করমু?
-আরে কস কি?
রইত
পোহাইলে সকালেইতো ঝর্ণার
বিয়ে।
বিয়ে
বাড়ীতে
কতো
কাজ
থাকে
না?
-দাদা আমারে দিয়া
কোন
কাম
অইছে?
-আরে না অউক।
তুই
পাশে
বইস্যা
থাকলেইতো অনেক
কিছু।
-দাদা যে কি
কন
না?
আমি
থাকি
আমার
মতো।
গ্যান্ঞ্জাম আমার
পছন্দ
না।
হেইডাতো আপনে
জানেন।
-তোরে তো আর
গ্যান্ঞ্জাম করনের
লাইগ্যা ডাকি
নাই।
তুই
পাশে
থাকলে
একটু
ভালো
লাগে।
এই
যা।
-ঠিক আছে দাদা।
আমি
বইস্যাই থাকমু।
আর
যতটা
পারি
কাজে
সাহায্য করমু।
-তয় তুই এইহানে
বয়।
আর
ওগো
কি
লাগে
দেহিস।
আমি
একটু
ভেতর
বাড়ী
যাই।
রফিককে বসিয়ে
দিয়ে
গণি
সাহেব
বাড়ীর
ভেতর
গেলেন।
রফিক
চেয়ারটা টেনে
যেখানে
মশল্লা
বাটা
হচ্ছিল
সেইখানে দৃষ্টি
দিলেন।
দেখলেন
সবাই
যার
যার
কাজে
মগ্ন।
হটাৎ
তার
নজর
গেল
হ্যাজাক লাইটটির দিকে।
তিনি
দেখলেন
- আলো
পেয়ে
পোকারা কেমন
যেন
সেই
অালোর
দিকে
ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
হ্যাজাক লাইটটির ভেতরও
কিছু
পোকা
আগুনে
পুড়ে
ছাই
হয়ে
যাচ্ছে। অন্ধকারে থাকা
পোকারা
আলোর
সন্ধান
পেয়েই
কেমন
যেন
আত্মহারা হয়ে
গেছে।
তার
মনে
পড়লো
ফরিদউদ্দিন আত্তারের কথা।
ফরিদউদ্দিন আত্তার
একজন
নামকরা
আধ্যাত্মিক সাধক
ছিলেন।
তাজকেরাতুল আউলিয়া,মনতাকুততয়ের তার সুফি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী। তিনি
তাঁর
মথ
এবং
অগ্নিশিখা নামক
গ্রন্থে বলেছিলেনঃ
“মথেরা এলো এক
চঞ্চল
লোকালয়ে এক
রাতে
জানতে
কী
সত্য
আছে
মোমের
আলোতে,
”
কবিতার
আদলে
প্রকৃতপক্ষে এটা
একটা
গল্প,
মথ
এবং
প্রদীপশিখাকে নিয়ে
প্রাচীন অাধ্যাত্মিক রূপক
বর্ণনা। আমাদের
মথের
একটা
ছোট
গোষ্ঠী
রয়েছে
যারা
রাতে
একত্রে
মিলিত
হয়েছে।
একটা
মথ
প্রাসাদের জানালায় প্রজ্জ্বলিত মোমবাতির আলো
দেখতে
উড়ে
গেলো।
মথটা
বিস্ময়কর দৃষ্টি
নিয়ে
এইমাত্র যা
দেখেছে
তা
বলতে
ফিরে
এলো।
মথেদের
বিজ্ঞ
পরামর্শদাতা ( শেখ,
তাদের
অধ্যত্মিক নেতা)
সরাসরি
বললেন,
“ সে
ঐ
শিখা
সম্পর্কে কিছু
জানে
না।”
অন্য
আর
একটা
মথ
শিখাটা
দেখতে
গেলো,
সে
ভেসে
বেড়ালো
শিখার
অলৌকিক
আভায়,
ভীরু
কামনার
কম্পিত
ছায়ায়,
তারপর
ফিরে
বলল
আলোর
কত
কাছে
সে
আছে,
এবং
কতটা
সে
উপলব্ধি করেছে
এবং
দেখেছে। আবার
তাদের
বিজ্ঞ
পরামর্শদাতা মথ
বলল,
স্পষ্টতই সে
ঐ
আলোর
প্রকৃতি উপলব্ধি করতে
পারে
নি।
অবশেষে,
অন্য
আর
এক
মথ
প্রেমাত্মক হয়ে
শিখার
মধ্যে
উড়ে
গেলো,
নিমজ্জিত হলো,
এবং
আগুনে
সম্পূর্ণ নিঃশেষ
হলো।
মথেদের
নেতা
সমর্থনের সুরে
বললেন
ঐ
মথটাই
সত্য
জানে।
সুতরাং
এই
চিত্র
থেকে
আমরা
অনেক
কিছু
উপলব্ধি করতে
পারি।
শিখাটি,
অবশ্যই
আল্লাহ,
সেই
চিরন্তন। এবং
মথেরা
হলো
স্বতন্ত্র ব্যক্তি সত্তা,
অাধ্যাত্মিক সাধক,
আল্লাহর প্রেমিক। আমরাই
সেই
মথ।
আত্তার
আমাদের
এক
অন্তর্নিহিত সত্যকে
মনে
করিয়ে
দিয়েছেন যা
কেবল
অধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন মানুষ
করে
থাকেনঃ
আল্লাহকে নিয়ে
চিন্তা
করাই
যথেষ্ট
নয়,
বা
আল্লাহ
সম্পর্কে তত্ত্ব
প্রদান
করা,
বা
প্রার্থনা করা,
বা
আল্লাহ
সম্পর্কে পাঠ
করা,
বা
কেবল
বিশ্বাস করা,
বা
আল্লাহর ক্ষণিক
উপলব্ধি যথেষ্ট
নয়।
কারো
ধার্মিকতা বা
সাধুতাতে নয়,
দিব্যকে কেবল
দুজনের
নিরন্তর দ্বিধাহীন মিলনে
( direct encounter) জানা
সম্ভব।
এমনকি
‘দুজনের
মিলন’(encounter)
শব্দটা
দুজনের
সাক্ষাতের ইঙ্গিত
করে।
না,
মথটি
প্রকৃত
সত্য
জানে,
কেউ
সেই
দীপ্তিময় আলোকে
জানতে
পারে
কেবল
নিজের
সত্তাকে সেই
আলোর
সত্তায়
পরিণত
করে,
নিজের
অহমকে
বিসর্জন দিয়ে
যা
তাকে
আলোর
সত্তা
থেকে
পৃথক
করে
রেখেছে।
ঐ
শিখাময়তাকে জানার
একমাত্র পথ
হলো
তার
সঙ্গে
প্রেমময় হওয়া।
অভূতপূর্ব সৌন্দর্য যা
থেকে
আমাদের
বেপরোয়া প্রবৃত্তি, ক্ষুদ্র আমিত্ব
দূরে
সরিয়ে
রেখেছে,
সেই
নৃত্যরত আলোর
সাথে
মিলনে
একাত্ম
হওয়া।
আমরা
সবাই
নিজেদের ঐ
মথের
মত
চঞ্চল
সত্তা
মনে
করি—অন্তঃসার শূন্য। শিখাটি আমাদের
সেই
শিক্ষা
দেয়।
শব্দেরা ব্যর্থ
হয়,
ধারণা
ব্যর্থ
হয়,
কিন্তু
আমরা
এক
বিস্ময়কর, গুঢ়
উপায়ে
আমাদের
নিঃশেষ
করতে
শিখি।
জানে,
সে
জানে
যে
সত্য
আমরা
খুঁজি,
সেই
গোপন
সত্য
যা
আমরা
বলতে
নারি
কিন্ত্তু বুঝি।”
আত্তারের সেই
কাহিনী
মনে
রফিক
হারিয়ে
গেলেন
সেই
ভাবতন্ময়তার দেশে।
চারপাশ
থেকে
শোনা
যেতে
লাগলো
হ্যাজাকের শো
শো
শব্দ
আর
মশল্লা
পিশার
খসর
খস
খসর
খস
শব্দ..যেন মথেরা উল্লাসে মেতেছে
কোন
এক
সত্যকে
আবিস্কারের নেশায়....