পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০১৫

ঈশ্বর কণাতত্ত্ব

মনোজান বিবি তার বাড়ীতে নাম করা সব অতিথিদের দাওয়াত  করেছেন। দাওয়াতের উদ্দেশ্য তার সাধন সংগী মনু ফকির একটি সত্য আবিস্কার করেছেন। সেই সত্যকে সবার সামনে প্রকাশ করতে চান। সেই দাওয়াতে আফজাল চেয়ারম্যান, শহীদ মেম্বার সহ আরো অন্যান্য গুরু ভাই বোনদেরকেও দাওয়াত দিয়েছেন। সবাইকে দাওয়াত দিতে পেরে
মনু ফকির বেজায় খুশি। তিনি একটি তত্ত্ব আবিস্কার করেছেন। সেই তত্ত্বানুসারে - ঈশ্বর মানব সৃষ্টি করেন একটি কণার মাধ্যমে। তিনি সেই কণার নাম দিয়েছেন সাঁই। সাঁই স্বয়ং নিজেই কাঁইয়ের দর্শন করে থাকেন। তার মতে, এই কণাই মানব সৃষ্টির জন্য দায়ী। হযরত আদম (আঃ) ভুল করে সাঁই-কাঁই ভেদ না জেনে অটল হতে পারেননি। যদি তিনি অটল হতে পারতেন তাহলে এই দুনিয়াতে আমাদের আসতে হতো না। আর শয়তানও আমাদের ধোঁকা দিতে পারতো না। শয়তানের ধোঁকা খেয়েই আদম (আঃ) গন্দম খেয়েছিলেন। তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই গুরুর সন্তান হতে হবে। গুরুর সন্তান হলে গুরু নিজে সেই সাঁই হয়ে তার সাথে লীলা করবেন। লীলাময়ের লীলার ফলে অটল হয়ে সেই স্বচ্ছ জলে অবগাহণ করবেন। শুষে নেবেন রস। ভেদ বিধি জেনেই তবে লীলাময়ের কাছে যেতে হবে। এ কথা বলেই মনু ফকির একটি গান ধরেনঃ

কি বলিবো সেই বন্দের কথা
হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা নাই রে
ক্ষণে ভাসে শুণ্যের উপর 
ক্ষণে ভাসে নীরে।।

আগত অতিথিদের মধ্যে শহীদ মেম্বার বেশ পড়া-শোনা জানা। আফজাল চেয়ারম্যান শহীদ মেম্বারকে বলেন-মেম্বার আপনেই জিগান। কি জানতে চান? আমরা সবাই শুনি। এই তোমরা কোন কথা বলবা না। যা বলার তারা দুইজনই বলবে। চেয়ারম্যানের অনুমতি পেয়ে শহীদ মেম্বার তার প্রশ্নগুলো করা শুরু করলেন।

তাকে প্রশ্ন করা হলোঃ আপনি কি ভাবে এ তত্ত্ব আবিস্কার করলেন? 

উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি যখন গুরুর কাছে দীক্ষা নেই সেই সময় গুরু আমারে কিছু সাধন ভজন করার জন্য নিয়ম কানুন দিল। সেই নিয়ম কানুনের মইধ্যে একটা হইলো রতি সাধন। কারণ এই বারিবিন্দুই আমাগো জন্ম-জন্মান্তর চক্রাকারে ঘুরাইতাছে। সেই বারিবিন্দু দেকতে অনেকটা মীনের মতো। সেইটা ভরা রসে সাঁতার কাঁটে । সেইটা শোনার পর আমার সোয়াদ হইলো আমি সেই মহান বারি বিন্দু দেকমু। তাই গুরুর কাছে আকুতি মিনতি করি। গুরু আমারে সেই দীক্ষা দেন। আর সাধন সংগী হিসেবে মনোজান বিবিরে দেন। মনোজান বিবির সাথে সাধন কালে আমি সেই সাঁইরে দেখি। সাঁই কেমনে কাঁইয়ের সাথে  লীলা করে সেইটাও প্রত্যক্ষ করি।

কিন্ত্তু আপনি যে তত্ত্ব দিচ্ছেন সেই তত্ত্বানুসারে বোঝা যাচ্ছে যে - বীর্যই সেই সাঁই যিনি সৃষ্টির জন্য দায়ী। কেননা সেই বীর্যইতো রমনীর যোনীতে প্রবেশ করে জরায়ুতে অবস্থান নেয়। শুক্রানু-ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণের ফলেই নারী-পুরুষের জন্ম হয়। তাইতো? যদি সেটা সত্য হয় তাহলে - সেটাতো অন্যান্য পশু-পাখিরও আছে। তাহলে সেটাকে কেন সাধন করা প্রয়োজন?

-আরে তারা সাধন ভজন জানে না বইল্যাইতো গরু ছাগল। পশু-পক্ষি। তারা যদি সাধন ভজন জানতো তাইলে কি আর পশু পাখি থাকতো।

-তাই না? আচ্ছা আদম-হাওয়া না হয় ভুল করে গন্দম খেয়ে এ দুনিয়াতে এসেছিল। পশু-পাখিরা কোন্ ভুলে সৃষ্টি হলো? তারাও কি ভুল করে গন্দম খেয়েছিল?

-আরে এইডা কোন প্রশ্ন হইলো? মানুষ হইলো আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ নিজ হাতে এই মাটির পুতলা বানাইছে। তার পরে হেয় নিজে এই পুতলার মইধ্যে বইস্যা লীলা করতাছে। হেই লীলা বোঝে কার সাধ্য?

-যে লীলা বোঝা কারো সাধ্য নেই তা আপনে বুঝে গেলেন?

-আরে ভাই আল্লাহয় কারে কি জ্ঞান দিছে হেইডা হেয়ই ভালো জানে। আল্লাহয় যদি আমারে সেই জ্ঞান দেয় তাতে আপনের কি সমস্যা? আমি গুরুর সাধনা কইর‌্যা যা পা্‌ইছি সেইটাই আপনেগোরে জানাইছি।

-আচ্ছা আপনে যে কিছুক্ষণ আগে বললেন-আল্লাহ মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়েছে। তারপর সেই পুতুলের মধ্যে সে নিজে ঢুকেছে। তাই তো? যদি তাই হয় তাহলে সে কিভাবে সেই পুতুলের ভেতর ঢুকলো?

- আল্লাহ পাক বলেছেন " নাফাকতু ফি মিররুহি"। এই নাফাক তু ফি বলেই রুহ রুপে আল্লাহ মানুষের মধ্যে ঢুকছে।

-তাই না? নাফাকতু কথাটির অর্থ হলো ফুঁকে দেয়া। কিছু ফুঁকে দেয়ার অর্থ হলো কোন কিছু তারমধ্যে অনুপ্রবেশ করা। আর ফুঁ দিলে বাতাস জাতীয় কিছু নির্গত হবে। সেটাতো সত্য না-কি? যদি সত্য হয় তাহলে সে শুক্রানু রুপে ঢুকেনি। তিনি ঢুকেছেন বায়ুরুপে।

- আরে পন্ঞ্জভুতে সৃষ্টি আদমের মইধ্যেই আছে। পন্ঞ্জ ভুত হইতাছে - ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ বোম। এই মরুৎই বায়ু। মানব দেহে উপপন্ঞ্চাশ প্রকার বায়ু্ আছে। হেই বায়ুর মইধ্যে উদানবায়ু, ব্যানবায়ু, সমানবায়ু, প্রাণবায়ু, নাগ, কংকরসহ আরো অনেক বায়ুই আছে।

-বায়ুরুপেই যদি ঢুকে থাকে তাহলে যতক্ষণ শ্বাস বায়ু থাকে সেই সময় পর্যন্ত জীব জীবিত থাকে। শ্বাস বায়ু বা প্রাণ বায়ু বের হয়ে গেলে জীবের দেহের কোন মুল্যই থাকে না। তখন সেটাকে বলা হয় লাশ। সেই লাশকে যদি কাঁটা ছেঁড়া করা হয় তখনও তার দেহের মধ্যে অাপনার তথা কথিত সাঁই দেখা যাবে। কারণ শুক্রাণু থাকে অন্ডকোষে। কিন্ত্তু যে বেরিয়ে গেল সেইটার দেখা আপনি পাবেন না। এখন আপনে বলেন - কার মুল্য বেশি? আপনার সাঁইয়ের না প্রাণবায়ুর? 

এ কথা শুনে মনু ফকির চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কেননা কুম্ভক প্রক্রিয়ায় এই দমকে সাধন করেই সাঁই-কাঁই সাধন করা হয়। তাহলে কার গুণ বেশি...বায়ুর না শুক্রাণুরুপী সাঁইয়ের?