পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

চক্রঃ মৃত্তিকার অন্যরুপের সৃষ্টি - মনা পাগলার অনুভব

মনা আজ পাল পাড়ায় ক্ষীরমোহন পালের বাড়িতে আসছে। তার উদ্দেশ্য কি, তা ক্ষীরমোহন ধরতে পারছে না। সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, ক্ষীরমোহন চরকা ঘুরিয়ে কিভাবে মাটির পুতলা বানাচ্ছে ? সে বেশ ভাবুক ভঙ্গীতে বসে ক্ষীরমোহন পালের হাতের কারুকার্য পর্যবেক্ষণ করছে। ক্ষীরমোহন পাল তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনার দিকে তাকিয়ে জানতে চাচ্ছেঃ

-ওমন তাকাইয়্যা তাকাইয়্যা কি দেখতাছো মনা বাবু?

-দেকতাছি তোমার কীর্তি........

-হেইডা দেইক্যা তুমি কি করবা? তুমি কি বানাইতে পারবা?

-পারুম না দেইক্যাইতো তোমার কীর্তিকর্ম দেইক্যা সৃষ্টিকর্তারে বুঝবার চেষ্টা করতাছি...হেয় কেমুন কইর‌্যা মানুষ পুতুল বানায়...এই মাটি দিয়া.....একেকটা একক রকম...কি সোন্দর বার্নিশ করা....আবার ভিতরে কি সোন্দর বাত্তি জ্বালাইয়্যা রাকছে....দেকছোনি....

ক্ষীরমোহন এবার বুঝতে পারলোঃ কেন মনা এমন করে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ? সে সেটা বুঝতে পেরে বললোঃ

-ভাইরে....ভগবানের লীলা বোঝা ভার....আমাগো কি সাধ্য আছে এই মাটির পুতলা দেইখ্যা তারে বুঝবার পারি....হেয় তো কর্ম অনুসারে চরকা ঘুরাইয়্যা এই মাটি দিয়াই সবকিছু বানাইতাছে....হগ্গলতেরে এই মাটি দিয়াই সৃষ্টি করতাছে...অবিরাম অনবরত... মইর‌্যা গেলে এই মাটির মধ্যেই হান্দাইয়্যা থুইতাছে....পইচ্যা গইল্যা হেইডাই আবার অন্যরুপে অন্য কোন ক্ষীরমোহনের হাতে পইর‌্যা এই মাটির পুতল্যা অইয়্যা আবার দুইন্যাইতে আইতাছে....আগুনে পুড়ুক আর পানিতে পরুক...যেইভাবেই মরুক না কেন্......

মনা ক্ষীরমোহন পালের কথা শুনে বললোঃ

-কিন্ত্তু আমি ভাবতাছি অন্য কতা। সৃষ্টিকর্তা যে চরকা বানাইছে....হেই চরকায় পইর‌্যা কত জনম জানি ঘুরতাছি....আইজক্যা মনা পাগলা....কাইল মরণের পর কি অমু...কোন্ ক্ষীরমোহনের হাতে পইর‌্যা কোন্ পুতল্যা অমু....মাটির পুতলা না-কি মাটির কুত্তা বিলাই...নাকি মাটির হাত্তি ঘোড়া...কি যে অমু কইতে পারতাছি না...যুদি জানতে পারতাম....আহা...রে....

" সুব.ই.আজল ইয়ে মুঝছে কাঁহা জিব্রাইল নে
জো আকাল কা গুলাম হো...ও দিল না কার কবুল "।
-আল্লামা ইকবাল।