পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

সোনার মানুষঃ মনা পাগলার ভাবনা


সোলেমান ভান্ডারী একজন সাদাসিদে মানুষ। প্রাণোচ্ছল এবং প্রাণবন্ত মানুষ। সব সময় তার মুখে হাসি লেগেই থাকে। পেশায় একজন স্বর্ণকার। তার একটি দোকান আছে। নাম-সাদিয়া জুয়েলার্স। কাষ্টমার আসলেই হাসিমুখে আমন্ত্রণ জানায়। আজ তিনি একটি কাজের অর্ডার পেয়েছেন। সেটা হলোঃ একটা পুরোনো বালাকে ভেঙ্গে নতুন করে ডিজাইন করা। সোলেমান এখন সেটাই করছেন। তার পাশে বসে আছে মনা পাগলা। মনাকে সোলেমান খুব ভালোভাবেই চেনে। সে প্রায়ই সোলেমানের দোকানে বসে খোশ গল্পে মেতে থাকে। তার সাথে বসে চা খায়। আজো সে বসে চা খাচ্ছে আর সোলেমানের কীর্তিকলাপ দেখছে। দেখলোঃ-

সোলেমান প্রথমে চুড়িটি ভেঙ্গে কেটে টুকরো টুকরো করে একটা বাটিতে রাখলো। তারপর সেটাতে কিছুটা সোহাগা মেশালো। এরপর সেই বাটিতে এসিড ঢাললো। পরিমাণ মতো এসিড ঢেলে কয়লায় আগুন ধরিয়ে চুঙি দিয়ে ফুঁ দিয়ে কয়লাগুলোকে জ্বালানোর চেষ্টা করলো। যখন কয়লাগুলো আগুনের তাপে লাল টকটকে হলো, তখন সেই বাটিটা আগুনের উপর বসিয়ে দিল।

এসিড আগুনের তাপে ফুটতে শুরু করেছে। কেমন হাল্কা নীল বর্ণ ধারণ করে হাল্কা হলুদ রংয়ের ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। সেই ধোঁয়ায় একটা ঝাঁঝাঁলো গন্ধ কেমন যেন চোখে মুখে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে । মনা একটু নড়ে চড়ে বসলো। সেটা দেখে সোলেমান হাসি হাসি মুখে বললঃ

-দাদা স্বর্ণ পাকা করতাছি…

-বাপরে যেই গন্ধ...আচ্ছা দাদা, এসিডে কি স্বর্ণ সব গইল্যা যাইব গা...

-না দাদা...স্বর্ণের মধ্যে যে খাইদ আছে, হেইডা এই এসিডে খাইয়্যা শেষ কইর‌্যা দিব। তারপর যেইডা থাকবো হেইডা অইলো খাঁটি সোনা। এইডাতে কোন খাইদ থাকে না। এক্কেবারে পাকা সোনা। হেই সোনারে কোন এসিডে পোড়াইলেও আর খাইদ পাইবো না...

সোলেমানের কথা শুনে মনা কি যেন ভাবলো। সে যেন বুঝতে পারছে অন্য কিছু। উদাস ভঙ্গীতে সে চিন্তায় মগ্ন হলো। কিন্ত্তু সে কি চিন্তা করছে...তাকে চিন্তিত দেখে সোলেমান জিগ্যাসা করলোঃ

-কি অইলো দাদা...এক্কেবারে চুপ অইয়্যা গেলেন গ্যা..

-ভাবতাছি?

-কি ভাবতাছেন?

সোলেমানের কথা শুনে মনা বলে উঠলোঃ

-মাবুদগো তুমি আমারে এই স্বর্ণের মতোন খাঁটি কইর‌্যা এই দুইন্ন্যা থিক্কা নিও।

-হটাৎ কি এমুন অইলো, দাদা?

-ভাইরে, এই মাটির মইদ্যেই যখন আমাগো গোর অইব, তহন এই এসিডের মতোন কইর‌্যাই আমাগো পরীক্ষা কইর‌্যা দেকবো...আমরা কত্তদুর খাঁটি.....যুদি খাঁটি অই..তাইলে আর নতুন কইর‌্যা কোন কিছু বানাইবো না...হেমনেই রাইখ্যা দিব। আর যুদি খাঁটি না অই, তাইলে এই মাটির থিক্ক্যাই আবার নতুন কইর‌্যা বানাইয়্যা আবার দুনিয়্যাইতে পাডাইবো....ক্যা তুমি শুন নাই হাদিছে আছেঃ ইন্নাললাহা হারামা আলাল আরদে আরশাদুল আম্বিয়া...নিশ্চয়ই আমি হারাম করিয়া দিয়াছি মাটির জন্য আম্বিয়াদের দেহকে...অর্থাৎ মাটির সাধ্য নাই তাঁর প্রিয় বান্দাদের দেহরে নষ্ট করে। তাছাড়া কোরআন শরীফের সুরা বাকারার ১৫৪ নং আয়াতে আছেঃ
যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত, তোমরা তা বুঝতে পারো না [ ﻭَﻻ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻻ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত কিন্ত্তু তোমরা তা অনুভব করতে পার না। সুরা আল-বাকারাহ আয়াত নং-১৫৪]
তাছাড়া সুরা আলে ইমরানের ১৬৯নং আয়াতে বর্ণিত আছেঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; তারা আল্লাহর কাছ থেকে রিজিক পাচ্ছে [ ﻭَﻻ ﺗَﺤْﺴَﺒَﻦَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗُﺘِﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺗًﺎ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳُﺮْﺯَﻗُﻮﻥَ আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত, তাদেরকে রিয্ক দেয়া হয়। আলে‘ইমরান, ৩/১৬৯]

মনার কথা শুনে সোলেমানের মনে প্রশ্ন জাগেঃ

১. রিজিক কে খায়..জীবিতরা না মৃতরা?
২. মৃতরা কিভাবে রিজিক খায়…সেইটাই রহস্য রয়ে গেল সোলেমানের কাছে

[সংক্ষেপিত]