পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

একটি প্রশ্ন, মাকড়শা এবং মনা পাগলার উত্তরঃ অনুভবতার এক নতুন দিগন্ত

মনার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল বহুদিন থেকেই। কিন্ত্তু উত্তরটা জানা ছিল না। আজ মশাং বাজারে জুনাব আলীর দোকানে চা খেতে এসে সে উত্তরটা পেয়ে গেল। উত্তরটা পেতেই সে অতি উচ্ছ্বাসে নৃত্য আরম্ভ করলো। তার পাগলা নাচ দেখে আশে পাশের সমস্ত লোকজনের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। মনা সেটা থোড়াই কেয়ার করে। সে সেদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো করেই নৃত্য করতে লাগল। আর গাইতে আরম্ভ করলোঃ

কতো কি সহিব নাথ, আমিতো আমারও নই
কেমনে চরণে র'ব আমিতো আমার নই।।

মনার গান থামতেই রজব আলী বয়াতী তার একতারাটা নিয়ে মনার হাতে সঁপে দিল। মনা সেটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকলো। আর তারটাতে হাল্কা টোকা মেরে টুংটাং শব্দ করতে লাগলো। সে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে যন্ত্রটার দিকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উপর দিকে মাথা তুলে বললোঃ

উপহার দিব কি গো কি আছে আমার নাথ
তোমারইতো দেওয়া সবি কোথা কি পা'ব সই।
রজব আলী বয়াতি মনাকে প্রশ্ন করলোঃ
-মনা ভাই, তোমার এতো খুশির কারণ কি?

শুনে মনা বললোঃ

-আমার একটা প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন ছিল। কিন্ত্তু সেটা পাচ্ছিলাম না। আজ এই মেলায় এসে সেই প্রশ্নের উত্তরটা পেলাম একটা মাকড়াশার কাছ থেকে।
-মাকড়শার কাছ থেকে? মাকড়শার কথা শুনে রজব আলী আশ্চর্য্য হয়ে গেল।

সেটা দেখে মনা বললোঃ

-দ্যাখেন, একজন কুম্ভকার যখন কোন কিছু তৈরী করে, সেটার জন্য কিছু উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। যেমন মাটি, পানি, আগুন, বাতাস, আকাশ ইত্যাদি। আমার মনে প্রশ্নের উদয় হলোঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন যে, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, সেই সৃষ্টির উপাদান তিনি কোথায় পেলেন?

বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপনি যদি দেখেন, দেখবেন সমস্ত উপাদানগুলিই এই মহাবিশ্বে ছড়ানো ছিটানো ছিল। একজন কুমারের কথা চিন্তা করেন। দেখবেন, কুমার যে জিনিসটি তৈরী করতে চান, সেটা তার মাথায় একটা উপাদান হিসেবে কেন্দ্রীভুত ছিল। সেই কেন্দ্রীভুত চিন্তারেখাকে বাস্তবায়ন করার জন্য তার যে সমস্ত উপাদানের প্রয়োজন ছিল, সেগুলি সংগ্রহ করে তারপর সে তার কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে বস্ত্তুটি সৃষ্টি করেন। যেমনঃ মাটির হাঁড়ি কুড়ি, ফুলদানি, ব্যাংক, মুর্তি ইত্যাদি।
আবার বিপরীত দিক থেকে চিন্তা করেন। হাঁড়ি কুড়ি, ফূলদানি, ব্যাংক, মুর্তি ইত্যাদি ঐ মাটির মধ্যেই নিহিত ছিল। কুমারের হাত ধরেই তারা বাস্তবতার রুপ নিল। তার মানে, ঐ হাঁড়িকুঁড়ির জন্য একজন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন ছিল। আর সেটা হলোঃ কুমার।

-কি বলেন ভাই?

-আমি ঠিকই বলছি। কেবল চিন্তা-ভাবনাটা আপনার। আপনি কি আমার চিন্তা-চেতনা ধরতে পারছেন কি-না? সেটা হলো বড়ো কথা....

-তাইলে এইবার কন, আল্লাহয় এই দুনিয়্যা সৃষ্টি করার উপাদান কৈ পাইলো?

-এই বিষয়টা উপলব্দি করার জন্য আপনাকে তাকাতে হবে একটা মাকড়শার দিকে। দেখবেন, মাকড়শা যে জাল বুনে, সেই জাল বুনার জন্য যে সমস্ত উপাদানের প্রয়োজন পড়ে, সেটা তার নিজের ভেতরই ছিল। সেটা কি? সেটা হলো তার লালা। অর্থাৎ তার মুখনিঃসৃত রসাবলী। সেটা দিয়েই সে জালটা তৈরী করে। ঠিক তদ্রুপ, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই জগত সৃষ্টির জন্য যে সমস্ত উপাদানের প্রয়োজন ছিল, সবই তার মধ্যে নিহিত আছে। সেই জন্য সে কারো মুখাপেক্ষী নয়। তাইতো বলা হয়েছেঃ

তোমারইতো দেওয়া সবই কোথায় কি পা'ব সই।

-কন কি ভাই?

-শুধু তাই নয়। কোরআন শরীফে বলা হয়েছেঃ আল্লাহু কুল্লিশাইইন মুহিত। অাল্লাহ যিনি প্রতিটি বস্ত্তুর মধ্যেই নিহিত আছেন তথা দ্রবীভুত অবস্থায় আছেন। তাহলে সমগ্র জগতের প্রতিটি বস্ত্তুই আল্লাহসত্তাময়। আল্লাহ ব্যতীত কিছুই নেই। লা মউজুদা ইল্লাল্লাহ....

মনার কথা শুনে রজব আলী বয়াতি মনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাই দেখে মনা বললোঃ
বুঝাইলে বুঝতে পার নতুবা বুঝিবে কই....