পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

গুরুর প্রয়োজনীয়তা

জীবাত্নামাত্রেই পূর্ণতা লাভ করিবেই করিবে-শেষ পর্যন্ত সকলেই সিদ্ধাবস্থা লাভ করিবে।আমরা এখন যাহা হইয়াছি,তাহা আমাদের অতীত কার্য ও চিন্তারাশির ফলস্বরূপ।আর ভবিষ্যতে যাহা হইব,তাহা বর্তমানে যেরূপ চিন্তা ও কার্য করিতেছি,তাহার ফলস্বরূপ হইবে। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের অদৃষ্ট গঠন করিতেছি বলিয়া যে বাহির হইতে আমাদের কোন সহায়তার আবশ্যক নাই,তাহা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন। যখন এই সহায়তা পাওয়া যায়,তখন আত্মার উচ্চতর শক্তি ও আপাত-অব্যক্ত ভাবগুলি ফুটিয়া উঠে,আধ্যাত্মিক জীবন সতেজ হইয়া উঠে,উহার উন্নতি ত্বরান্বিত হয়,সাধক অবশেষে শুদ্ধভাব ও সিদ্ধভাব হইয়া যায়।


এই সঞ্জীবনী শক্তি গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় না। একটি আত্মা কেবল মাত্র অন্য একটি আত্মা থেকেই শক্তি লাভ করতে পারে। আমরা সারাজীবন বই পড়ে ডিগ্রি নিতে পারি,বুদ্ধিমান হতে পারি কিন্তু আধ্যাত্বিক উন্নতি হবে না কিছুতেই।বুদ্ধির উন্নতি মানে যে আধ্যাত্বিক উন্নতি নয়,তা আমাদের বোধগম্য হয় না। আমরা যারা আধ্যাত্বিক কথা বা তথ্য জানার চেষ্টা করি,ধর্মজীবন যাপনে দেখা যাবে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তিতে ভরা। তার একটাই অর্থ দাড়ায়,আমাদের আধ্যাত্বিক জ্ঞানের প্রাচুর্য কম। তাই জীবাত্মার শক্তি জাগ্রত করতে হলে অপর এক আত্মা হতে শক্তির সঞ্চারন প্রয়োজন।
যে ব্যক্তির আত্মা হতে শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকেই গুরু বলে,যে ব্যক্তির আত্মায় শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকে বলে শিষ্য। শক্তি সঞ্চার করতে হলে প্রথমেই যে ব্যক্তি সঞ্চার করবেন তার সেই শক্তি থাকা আবশ্যক। আর যে ব্যক্তির আত্মায় এই শক্তি দেয়া হবে তার সেই শক্তি গ্রহনের সামর্থ থাকা প্রয়োজন। সঠিক অঙ্কুরোদগম এর জন্য বীজ যেমন সতেজ হওয়া প্রয়োজন,ঠিক তেমন মাটিও গুনাগুন সম্পন্ন হওয়া দরকার। ধর্মের প্রকৃত বক্তা অবশ্যই আশ্চর্য পুরুষ হবেন,শ্রোতাও সুনিপুণ হওয়া চাই। যখন উভয়েই আশ্চর্য ও সুনিপুণ হয়,তখনই আধ্যাত্বিক উন্নতি ঘটে।ঐরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত গুরু এবং এইরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত শিষ্য-মুমুক্ষু সাধক।


সকলে ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছে মাত্র,কিছুটা কৌতুহল আছে বৈকী কিন্তু তবুও তারা এখনও ধর্মচক্রবালের বাইরেই আছে। এটারও মুল্য আছে অবশ্যই। কেননা সময়কালে এর থেকেও ধর্ম পিপাসা জাগতে পারে। আর প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল এই যে,যখনই ক্ষেত্র উপযুক্ত হয় তখনই বীজ আসে। অর্থাৎ যখন আত্মার ধর্মলাভের আগ্রহ প্রবল হয়,তখনই ধর্মশক্তি সঞ্চারক পুরুষ সেই আত্মার সহায়তার জন্য অবশ্যই আসবেন।
"যখন গ্রহীতার ধর্মালোক আকর্ষন করিবার শক্তি পূর্ণ ও প্রবল হয়,তখন সেই আকর্ষনে আকৃষ্ট আলোকশক্তি অবশ্যই আসিয়া থাকেন।"
তবে পথে কতগুলি মহাবিঘ্ন আছে,যথা-ক্ষনস্থায়ী ভাবোচ্ছাসকে প্রকৃত ধর্ম পিপাসা বলে ভুল হবার সম্ভাবনা। আমরা নিজেরাই এরূপ খেয়াল করিতে পারি। হয়তো কাউকে খুব ভালোবাসতাম,তার মৃত্যুতে আঘাত পেলাম। মনে হতে পারে,যা ধরছি তাই বুঝি হাত ফসকে চলে যাচ্ছে। আমাদের একটি দৃঢ় আশ্রয় খুজতে হবে,এর জন্য ধর্ম অতীব জরুরী। কিন্তু কয়েকদিন পরে দেখা গেল,সেই ভাব তরঙ্গ আর নেই। আমরা যেইভাবে ছিলাম,সেইভাবেই আছি। আর যতদিন এই মিথ্যা ভাবোচ্ছাসকে ভুল করে ধর্ম পিপাসা মনে করব,ততদিন ধর্মের জন্য যথার্থ ব্যকুলতা জন্মাবে না। আর ততদিন শক্তি সঞ্চারককারী পুরুষেরও সাক্ষাৎ পাব না।
বাধা আরো আছে। অনেকে অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়েও অহংকারে নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করে।
"অজ্ঞানে আচ্ছন্ন,অতি নির্বুদ্ধি হইলেও নিজেদের মহাপন্ডিত মনে করিয়া মূঢ় ব্যক্তিগণ অন্ধের দ্বারা নীয়মান অন্ধের ন্যায় প্রতিপদবিক্ষেপেই স্থলিতপদ হইয়া পরিভ্রমন করে।"
এইরূপ মানুষেই জগত পরিপূর্ণ। সকলেই গুরু হতে চায়,ভিখারী লক্ষ টাকা দান করতে চায়। এমন লোক যেমন সকলের নিকট হাস্যাস্পদ হয়,এই গুরুগণও তেমনি।

Written by:Prithwish Ghosh