পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সাকী ও শারাব

''শরাব ছাড়া আমার হাতের কলম চলছে না।
ধোঁয়াহীন আগুন কোথায় তুই?''
_______ #মির্জা_গালিব

[#অনুবাদঃ(৫৫ঃ১৫)। এবং সার্বক্ষণিক জিনকে রূপান্তর সৃষ্টি করিয়াছেন ধূয়া ছাড়া আগুনের উত্তাপ হইতে।
___ #আল_কোরান]।

'#মারেজ' অর্থাৎ উত্তাপ, ধূয়া ছাড়া উত্তাপ। বস্তুগত আগুনে কিছু না কিছু ধূয়া থাকে। মনের আগুনে ধুয়া থাকে না, অথচ ইহা মনকে জ্বালাইয়া মারে। মনের আগুনে সকল মানুষই কিছু না কিছু জ্বলিয়া থাকে, কিন্তু যে ব্যক্তি সার্বক্ষণিক জিনরূপে রূপান্তর সৃষ্ট হইয়াছে সে মনের জ্বালা হইতেই সৃষ্ট হইয়াছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে জৈবিক ভাব হইতে সৃষ্ট হইয়াছে। অর্থাৎ জান্নাতের স্বভাব মিশ্রণ তাহাতে নাই। জাহান্নামের আগুনের জ্বালা হইতে সৃষ্টি করা হইয়াছে। ইনসানের মধ্যেও জিনভাব আছে কিন্তু তাহা সীমিত পরিমাণ। কামেল গুরুর আশ্রয় ব্যতীত মানুষ এবং জিন জাতিকে অসীম জিনভাব হইতে কে রক্ষা করিবে? (দ্র.৫৫:১৫)।

____ #সদর_উদ্দিন_আহমদ_চিশতী

#সাকী_ও_শরাব
__________________
*১.
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার নামাজ রোজার বদলাতে
চাই নে বেহেশত খোদার কাছে।।
নিত্য মোনাজার করে।।
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে
কায়েস যেমন লায়লী লাগি লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে হলো দিওয়ানা বেতাব।।
বে-খুদীতে মশগুল আমি ।।
তেমনি মোর খোদার তরে।।
হায়…
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে, পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা, চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্‌ সুদূরে সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়, চাহিনা হিসাব ক’রে।।
( https://www.youtube.com/watch?v=uOqYt_urYi8 )

*২.
এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবী সাকী
নেশায় হলাম দীওয়ানা যে, রঙ্গিন হল’ আঁখি।।
তৌহিদের সিরাজী নিয়ে
ডাকলে সবায়ঃ “যা রে পিয়ে।’’
নিখিল জগৎ ছুটে এল, রইল না কেউ বাকী।।
বসল তোমার মহফিল দূর মক্কা- মদীনাতে,
আল- কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।
নরনারী বাদশাহ ফকির
তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজরানা দিল রাঙ্গা পায়ে রাখি।।
তোমার কাসেদ খবর নিয়ে ছুটলো দিকে দিকে,
তোমার বিজয়- বার্তা গেল দেশে দেশে লিখে।
লা-শরীকের জলসাতে তাই
শরীক হল এসে সবাই
তোমার আজান- গান শুনালো হাজার বেলাল ডাকি।।

( https://www.youtube.com/watch?v=jm871xb6dYE )
---------------------------------------
*৩.
প্রেমেরি পেয়ালা পিও মনুরা শ্বাসপ্রশ্বাসে দমবদম
#ছাকি তোমরা ভরিছে পেয়ালা দিতেছে তোমায় হর কদম।
দ্বীন-দুনিয়া করি দাও সদকা আপন বন্ধুয়ার এষ্কেতে
নাহিক কামনা নাহি তামান্না তৌহিদ ঘাটে নাই ধরম।।
আমি ও তুমি ভুলিয়ে যাও হইয়া ফানা নুরেতে
একাতে বাকী হইয়া থাক দমবদম হবে করম।।
তোমার দুশমন তমাকে জানি হইবে মশগুল কর্মতে
নাহিক বাধা নাহি এরদা মাহমুদা পুরি নাই শরম।।
রহে শাহাপির সদায় দেলগীর মুর্শিদপানে হাল খারাব
কবে বাবা করিবে দয়া মিলাইয়া দিবে সেই ছনম।।

*৪.
অল্প মদে হয়না নেশা, বেশি খাইয়া লই
সাকী, পুরা বোতল দে আমারে,
নেশায় মজে রই!
সাকি পুড়া বোতল দে আমারে
নেশায় মজে রই,
নেশার গোরে থেকে যেন
মুহাম্মদের নামটি লই।
-------মাতাল রাজ্জাক।https://m.youtube.com/watch?v=vmtBoO9W4rQ

*৫. #অনুবাদঃ (৭৬:৬+৭) চক্ষু : ইহা দ্বারা আল্লাহর দাসগণ পান করেন : তাহারা ইহা সঞ্চালিত করেন এক একটি সঞ্চালন। তাহারা দৃষ্টি দ্বারা অর্জন করেন পরিপূর্ণতা এবং ভয় করেন সেই সময়টিকে যাহার মন্দ ব্যাপক (বা বিস্তৃত) হইয়া থাকে।
___#আল_কোরান।

#ব্যাখ্যাঃ আপন #মুর্শেদের চেহারা মোবারকের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া তাঁহা হইতে আপন চক্ষু দ্বারা প্রেম শরাব পান করিবার রীতি অনেক তরিকার মধ্যে ব্যবস্থা হিসাবে প্রচলিত আছে। অবশ্য নিছক বস্তুবাদী তরিকার মধ্যে ইহা থাকিবে না। তাহারা ইহাকে শেরেক বলিয়াই মনে করে।
আল্লাহর দাসগণ চক্ষু দ্বারা পান করিয়া পূণ্যবান হইয়া থাকেন। তাহারা পান করেন আপন কামেল মুর্শেদের চেহারার অমৃত সুধা। মুর্শেদের চেহারা ধ্যান করা আল্লাহর দাসত্বের প্রধান অঙ্গ। এই আমল দ্বারা যাহারা পূণ্যবান হইয়াছেন তাহারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এক এক করিয়া আগমনকারী প্রত্যেকটি বিষয়ের উপরে। ইহাতে মোহকালিমা হইতে সকল বিষয় পরিশুদ্ধ হইয়া সৌন্দর্যমণ্ডিত হইয়া উঠে। বিষয়ের বিষমুক্ত হইয়া সকলই সুন্দরমধুময় হইয়া যায়।
এইরূপে তাহার দৃষ্টি দ্বারা অর্জন করেন জীবনের পরিপূর্ণতা। তাহারা ভয় করেন সেই সময়ের মন্দকে যাহা সংসার জীবনে সাধারণত ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করিতেছে। মানুষ জন্মলগ্ন হইতে সালাত কর্ম শুরু না করা পর্যন্ত সময়কে মন্দ সময় বলিয়া আখ্যায়িত করা হইয়াছে। কারণ, মানুষ এই সময় সালাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে এবং বিষয় মোহের শিরিক দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে বিধায় সে পরিপূর্ণভাবে একজন মুশরেক এবং কাফের। সালাত কর্ম আরম্ভ না করা পর্যন্ত সময়ের মন্দ স্বরূপটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি করিতেই থাকে। এই কারণে সাধকগণ এই মন্দ সময়টিকে ভয় পান এইজন্য যে, পরজীবনে জ্ঞানী গুরুর সংস্পর্শে আসিবার সম্ভাবনা নাও থাকিতে পারে। কারণ, অর্জিত বিষয়মোহ এবং কুফুরী ক্রমবর্ধমান হইয়া মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে গ্রাস করিয়া ফেলে।

#টীকাভাষ্যঃ________
#সাকী#শারাব :
শারাব অর্থ ধর্মরাশি। সাকী অর্থ সম্যক গুরুরূপে যিনি পবিত্র শারাব পান করান। ইন্দ্রিয়পথে আগমনকারী ধর্মরাশি, বিষয় তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত মানুষ অহরহ পান করিতেই আছে। সালাতের সাহায্যে মোহমুক্ত হইয়া পান করিতে না পারিলে এইগুলির সকলই অপবিত্র। মোহমুক্ত পান পদ্ধতি শিক্ষাদান করেন সম্যক গুরু।
মানুষ উচ্চমানের জীব। তাহার ধর্মরাশির প্রাচুর্য যেমন অত্যধিক তেমনই উহাদের প্রতি আকর্ষণ এবং তৃষ্ণাও অত্যন্ত প্রবল। ধর্মরাশি তৃষ্ণা তাহাকে সৃষ্টির মধ্যে ধরিয়া রাখে। মুক্তপুরুষের অসীম জ্ঞানবারি হইতে তথা জ্ঞানের প্রসবণ হইতে পান করিয়া এই তৃষ্ণা নিবারণ করিতে হইবে নতুবা জন্ম-মৃত্যুর চক্র হইতে মুক্তির কোন উপায় নাই।

#তথ্যসুত্রঃ
 
★*৫.#কোরান #দর্শনঃ মাওলা সুফি সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশতী র.।
★*৩.#চিশতী #উদ্যানঃ মাওলানা খাজা শাহপীর চিশতী নিজামী র.।
★*১-২.#নজরুল #রচনাবলী