পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

লায়লী - মজনুঃ ইশকে এলাহির প্রেম সম্পর্কীয় বয়ান


ওহে দরবেশগণ! একবার মজনু শুনিলো লায়লী গরীবদিগকে খাদ্যদ্রব্য দান করিতেছে। মজনুও একটি কাঠের পাত্র লইয়া অন্যান্যদের সাথে লাইনে দাঁড়াইল। সকলকেই কিছু কিছু দিয়া বিদায় করিল কিন্তু মজনুকে কিছুই দিল না। অধিকন্তু তাহাকে দেখিয়া লায়লী গৃহাভ্যন্তরে চলিয়া গেল। ইহা দেখিয়া মজনু মনের উল্লাসে নাচিতে আরম্ভ করিল।

লোকে তাহাকে ধিক্কার দিয়া বলিল - আরে নাচার মতো কি হইল? অন্যান্যকে তো কিছু কিছু দিল। আর তোমাকে দেওয়া তো দুরের কথা। তোমার চেহারা দেখিয়াই তো বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল।

মজনু বলিল - তোমরা ঠিকই বলিয়াছ। আমাকে কিছুই দেয় নাই। কিন্তু ইহাতো সত্য যে আমার প্রেমাষ্পদ আমাকে স্বচক্ষে দেখিয়াছে। ইহার চেয়ে আনন্দের বিষয় আমার আর কি হইতে পারে?

অতঃপর তিনি অশ্রু সজল নয়নে বলিলেন - ওহে দরবেশগণ! যে প্রেম সাগরে নিমজ্জিত সে-ই এ কথার মর্মার্থ উপলব্দি করিতে পারিবে। যে প্রেমের দাবী করে; তাহার কর্তব্য আজীবন প্রেমাষ্পদের দরজায় আঘাত হানা। ক্রমাগত আঘাতের ফলে একদিন না একদিন দ্বার উন্মুক্ত হইবেই আর সে তাহার আকাঙ্খিত বস্তু লাভ করিবেই।

কাযি হামিদ উদ্দীন নাগুরী (রহঃ) তাঁহার গ্রন্থের একস্থানে লিখিয়াছেন - "কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিবেন - মজনুকে হাযির কর। তাহাকে হাজির করা হইলে বলিবেন - যে সমস্ত লোক পৃথিবীতে আমার প্রেমের দাবী করিতো তাহাদিগকে মজনুর সন্মুখে উপস্থিদ কর।"

সকলকে উপস্থিত করা হইলে আল্লাহতা'য়া এরশাদ করিবেন - "যদি প্রেমের দাবী কর তবে মজনুর ন্যায় কর। যতদিন সে জীবিত ছিল লায়লী ব্যতীত অন্য কিছুতে তাহার ধ্যান ছিল না। মৃত্যুর সময় সে লায়লীকে স্বরণ করিয়াই মরিয়াছে। আজ হাশরের মাঠেও তাহার মুখে সেই একই কথা - লায়লী।"

অতঃপর বলিলেন - আশেকদের জন্য ইহাই কষ্টি পাথর। অর্থাৎ যে ব্যক্তি বন্ধুত্বের দাবী করে তাহার কর্তব্য সেই দাবীতে দৃঢ় থাকা। দিনের পর দিন বন্ধুদ্বের প্রেমের বাধন মজবুত হওয়া ব্যতীত যেন ঢিলা না হয়।

ওহে দরবেশগণ! নেজামী গানজুরী (রহঃ) অতি উচ্চ পর্যায়ের একজন খোদা প্রেমিক ছিলেন। আধ্যাত্মিক প্রেম সমন্ধে তিনি বহু মুল্যবান তথ্য লিখিয়া গিয়াছেন। একবার আমি তাহার মজলিশে উপস্থিত হইলাম। সেখানে আরো বহু দরবেশ উপস্থিত ছিলেন। মজলিশে সা'মা(ভক্তিমুলক গান) হইতেছিল। কাওয়াল যে গান গাহিতেছিল - উহার দুইটি লাইন এখনো আমার স্মরণে রহিয়াছে। উহার অর্থ এই যে "প্রকৃত প্রেম কখনো হ্রাস পায় না আর প্রকৃত প্রেমিকও পদঙ্খলন করে না। যেই প্রেম যর্থার্থ নয় উহাতো যুবকদের কাম প্রবৃত্তির উপকরণ মাত্র।"

তথ্যাবলীঃ
--------
গ্রন্ধসুত্রঃ ইসরারুল আউলিয়া (আউলিয়া রহস্য)। পৃষ্ঠাঃ ১১-১৩ দ্রষ্টব্য।
মুল গ্রন্থঃ হযরত খাজা শায়খ ফরীদ (রাঃ)।
অনুবাদঃ আবদুল জলীল।
ফেরদৌস পাবলিকেশনস, ৪১ নর্থব্রুকহল রোড, ঢাকা।
ইমেজ সংগ্রহঃ ইন্টারনেট।