পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

পাখিদের কথোপকথন-দ্বিতীয় পর্ব

রহিম সাহেব চিন্তিত মনে বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন। দেখলেন দুর আকাশে কিছু পাখি উড়াউড়ি করছে। বইটা তিনি আবারো পড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্ত্তু কিছুতেই তার মন বসছে না। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তার মনে কেবল একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল - "হে সত্যন্বেষী পথিক, তোমরা দর্পনে প্রতিবিম্ব দেখছো, আমি দর্পন, সত্য সী-মোরগ তোমাদের অন্তরে। দৃষ্টিভ্রমে তোমরা এক কে বহু রুপে দেখছো। পরম সত্য এক"।
চিন্তিত মনে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তারপর সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাগানের দিকটায় গেলেন। দেখলেন-ছোট্ট একজোড়া টুনটুনি পাখি এ ডাল  ও ডাল করছে আর খুনখুটি করছে। পুকুর পাড়ে হাঁসেরা জলকেলি করছে। গাছের ডালে একটি শালিক পাখি কি যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাচ্ছে। দুর আকাশে উড়ে যাচ্ছে চিল। বাড়ির চালায় একটি কাক বসে থেকে থেকে ডাকছে কা... কা...।
পাখিদের নিয়ে তিনি একমনে ভাবা শুরু করলেন। তার আর কোন দিকে খেয়াল রইল না। বাগানের ভেতরটায় প্রবেশ করতেই দেখলেন কতোগুলো চড়ুই পাখি ফুরুৎ করে উড়ে চলে গেল। কিন্ত্তু কাকটি তার দিকে ঘাড় উঁচিয়ে তাকিয়ে রইল আর শব্দ করে ডাকতে লাগলো কা ... কা...। 
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। চারদিকে হাল্কা একটা অন্ধকারের চাদর কে যেন বিছাতে শুরু করেছে। তাকে ওভাবে হাঁটতে দেখে জমিলার খানিকটা ভয় হলো। তিনি ভাবলেন-লোকটার হটাৎ কি হলো? কি যেন অানমনে চিন্তা করছে আর পায়চারি করছে? এ সময়তো তার এমন করার কথা না। এসময় লোকটা চা না পেলে পাগলের মতো হয়ে যায়। চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ি মাতিয়ে তোলে। অথচ আজকে তাকে অন্যরকম লাগছে। কোন চিৎকার চেঁচামেচি নেই। নেই কোন সাড়া শব্দ? ঘটনাটা কি? 
তিনি হাঁটতে হাঁটতে রহিম সাহেবের পাশে এসে দাঁড়ালেন। রহিম সাহেব দেখেও না দেখার ভান করে কোন কথা বললেন না। তিনি ভাবতে লাগলেন সী-মোরগের কথা। জমিলা জিগ্যেস করলেন-কি হয়েছে তোমার? কোন কথা বলছো না? কি যেন চিন্তা করছো?
-ও তুমি বুঝবে না। আর তোমাকে বলেও কোন লাভ নেই।
-কি হয়েছে শুনি?
-তুমি কি সী-মোরগ চেন?
-সী-মোরগ? এটা আবার কি? কোথায় দেখলে সী-মোরগ?
-বইতে। 
-বইতে? তো সেটা নিয়ে ভাববার এতো কি আছে?
-কি আছে মানে? তুমি কি জানো তোমার ভেতর একটা সী-মোরগ লুকিয়ে আছে। সেই সী-মোরগ রোজ ভোররাতে তোমাকে ডেকে তোলে। তোমাকে নীরবে নিভৃতে গান শোনায়। তোমার সাথে কথা বলে।
-আমার সাথে কথা বলে? কই আমিতো কখনো শুনিনি।
-তুমি কিভাবে শুনবে? তুমিতো জানোই না। আর শোনার মতো তোমার কান কোথায়?
-আমার শোনার দরকার নেই। তুমি শুন। তোমার সী-মোরগের কথা।
জমিলা বুঝলেন। তার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। তিনি আর কিছু না বলে শুধু বললেন-সন্ধ্যা হয়েছে। চলো ভেতরে চল। 
এ কথা বলেই জমিলা হন হন করে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করলেন। রহিম সাহেবও আর কিছু না বলে তার পিছু পিছু ছুটলেন। রাতে খাওয়া দাওয়া করে রহিম সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নে দেখলেন- তিনি বাজারে গেলেন। বাজারে যেয়ে দেখলেন - সব চিল কাক শকুনগুলো জড়ো হয়েছে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তিনি তার পরিচিত দোকানে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন একটা বাজ পাখি বসে আছে। তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। আরে তিনিতো এসেছেন - জনতা স্টোরে। এই দোকানের মালিকতো জহির সাহেব। বাজারে তিনি একটি বড়ো দোকান দিয়েছেন। তার বন্ধুমানুষ। কিন্ত্তু তিনি কাকে দেখছেন? তিনি সেখান থেকে বের হয়ে গেলেন গোস্তবিতানে। এই দোকানে কচি গরু ছাগল জবেহ করে বিক্রি করা হয়। দোকানী তার পরিচিত। সেই দোকানে ঢুকতেই তিনি হতচকিত হয়ে গেলেন। দেখলেন-একটা শকুন বসে আছে। তিনি ভয়ে সেখান থেকে সরে এসে গেলেন মাছের বাজারে। বাজারে ঢুকতেই দেখলেন কতোগুলো কাক বক আর চিলের মিলন মেলা। তিনি আর ভেতরে প্রবেশ করলেন না। তিনি সোজা বাড়ির পথ ধরলেন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলেন তার ছোট্ট টুনটুনিটা তার কাছে দৌড়ে এসে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আর একটা দাঁড় কাক তাকে জিগ্যেস করলো-কি বাজার এনেছো? না বলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। হাত মুখ ধোয়ার জন্য তিনি ওয়াশ রুমে গেলেন। ওয়াশরুমে পানির ঝাপটা দিতেই দেখলেন তার পালকগুলো ভিজে একাকার হয়ে গেছে। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন-তিনি একটি বন-মোরগ। 
ধড়মড় করে তিনি ওঠে বসলেন। তার ঘুম ভেংগে গেল। পাশেই দেখলেন তার স্ত্রী অঘোড়ে ঘুমাচ্ছে। আর তার বাচ্চা মেয়েটাও হাত পা ছড়িয়ে কেমন আয়েশের ভংগিতে ঘুমাচ্ছে। তিনি আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। কিন্ত্তু কিছুতেই তার ঘুম হলো না। তিনি মনে মনে ভাবলেন-সকাল হলেই তিনি সোবহান সাহেবের সাথে কথা বলবেন। তিনি আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। চোখ বুঁজে পড়ে রইলেন।

জমিলার ডাক চিৎকার চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভেংগে গেল। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন-সাড়ে আটটা বেজে গেছে। তিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। (চলবে)