- দেখুন রহিম সাহেব। কথাটা ছিলঃ
"হে সত্যন্বেষী পথিক, তোমরা দর্পনে প্রতিবিম্ব দেখছো, আমি দর্পন, সত্য
সী-মোরগ তোমাদের অন্তরে। দৃষ্টিভ্রমে তোমরা এক কে বহু রুপে দেখছো। পরম সত্য
এক"।
বাক্যটাতে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন বলা হয়েছে-"হে সত্যান্বেষী পথিক "- তার মানে কি? যে সত্যকে জানতে চায়। বুঝতে চায়। সত্য কি? সত্য হচ্ছে - সেই চিরন্তন সত্ত্বা যা রয়েছে অন্তঃকরণে। কারণ অন্তঃকরণই হচ্ছে স্রষ্টার আবাসস্থল। কারণ "কুলুবুল মো'মেনিনা আরশু আল্লাহ "। মোমিনের কলবেই আল্লাহর আরশ।
এর পর বলা হয়েছে-"তোমরা দর্পনে প্রতিবিম্ব দেখছো অামি দর্পণ। কথাটার অর্থ কি? দর্পণ বলতে আমরা বুঝি আয়নাকে। যেটার দিকে তাকালে তার প্রতিবিম্ব দেখা যায়। অর্থাৎ যে দেখে সে দর্শক। যাকে দেখে সে প্রদর্শক। মানে হলো-যে দর্শক সেই প্রদর্শক। আপনি যদি আপনার চেহারাটা আয়নায় দেখেন তখন আয়নাটা হয়ে যায় প্রকাশের মাধ্যম। প্রতিবিম্বিত হবে আপনারই প্রদর্শিত চেহারা।
-ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না? একটু বুঝিয়ে বলুন।
-শুনেন, পুরো জগতটাই আল্লাহময়। কারণ আল্লাহ কুলিশাইয়িন মুহিত। সেই মুহিততো আপনার মাঝেও আছে। যে আয়নাটায় দেখছেন সেটার মধ্যেও সে মুহিত অবস্থায় আছে। এজন্যই বলা লা মওজুদা ইল্লাল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুই নেই। সর্বত্র আল্লাহময়। উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হলো- জগতে সাধারণ্যের কাছে আল্লাহর ধারণা আর সুফীদের আল্লাহর ধারণার মধ্যে পার্থক্য আছে। সাধারণ্যের আল্লাহ জগতের বাহিরে এক অতিইন্দ্রিয় স্বত্তা। যিনি কাহির (কঠোর মনোভাব সম্পন্ন) এবং কঠিন বিচারক। বলা যেতে পারে আল-আদিল তথা সূক্ষ্ম বিচারক। কিন্ত্তু সুফির কাছে তিনি ওয়াদুদ। তিনিই সাকী। এই মুলস্বত্তা কারো কাছে ধরা দেয় পরম প্রেমাষ্পদরুপে।
আজকে আপনার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি শুনুনঃ
বাক্যটাতে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন বলা হয়েছে-"হে সত্যান্বেষী পথিক "- তার মানে কি? যে সত্যকে জানতে চায়। বুঝতে চায়। সত্য কি? সত্য হচ্ছে - সেই চিরন্তন সত্ত্বা যা রয়েছে অন্তঃকরণে। কারণ অন্তঃকরণই হচ্ছে স্রষ্টার আবাসস্থল। কারণ "কুলুবুল মো'মেনিনা আরশু আল্লাহ "। মোমিনের কলবেই আল্লাহর আরশ।
এর পর বলা হয়েছে-"তোমরা দর্পনে প্রতিবিম্ব দেখছো অামি দর্পণ। কথাটার অর্থ কি? দর্পণ বলতে আমরা বুঝি আয়নাকে। যেটার দিকে তাকালে তার প্রতিবিম্ব দেখা যায়। অর্থাৎ যে দেখে সে দর্শক। যাকে দেখে সে প্রদর্শক। মানে হলো-যে দর্শক সেই প্রদর্শক। আপনি যদি আপনার চেহারাটা আয়নায় দেখেন তখন আয়নাটা হয়ে যায় প্রকাশের মাধ্যম। প্রতিবিম্বিত হবে আপনারই প্রদর্শিত চেহারা।
-ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না? একটু বুঝিয়ে বলুন।
-শুনেন, পুরো জগতটাই আল্লাহময়। কারণ আল্লাহ কুলিশাইয়িন মুহিত। সেই মুহিততো আপনার মাঝেও আছে। যে আয়নাটায় দেখছেন সেটার মধ্যেও সে মুহিত অবস্থায় আছে। এজন্যই বলা লা মওজুদা ইল্লাল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুই নেই। সর্বত্র আল্লাহময়। উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হলো- জগতে সাধারণ্যের কাছে আল্লাহর ধারণা আর সুফীদের আল্লাহর ধারণার মধ্যে পার্থক্য আছে। সাধারণ্যের আল্লাহ জগতের বাহিরে এক অতিইন্দ্রিয় স্বত্তা। যিনি কাহির (কঠোর মনোভাব সম্পন্ন) এবং কঠিন বিচারক। বলা যেতে পারে আল-আদিল তথা সূক্ষ্ম বিচারক। কিন্ত্তু সুফির কাছে তিনি ওয়াদুদ। তিনিই সাকী। এই মুলস্বত্তা কারো কাছে ধরা দেয় পরম প্রেমাষ্পদরুপে।
আজকে আপনার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি শুনুনঃ
যে নামের মধ্যে আল্লাহ্ তা’য়ালার সমস্ত গুণাবলি এবং পূর্ণতা বিদ্যমান, তা
আল্লাহ সত্তাগত বা মূল নাম। যথা ‘আল্-ইলাহু’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ আল্লাহু।
আল্লাহু-এর সংক্ষেপ হল ‘হু’। ‘হু’-এর সংক্ষেপ হল এর মর্মার্থ। মর্মার্থে
কোনো শব্দ বা ধ্বনি নেই। কিন্তু হু-এর পেশ-এর স্থলে যের এবং যবরও ব্যবহৃত
হয়। যেমন হাঃ হিঃ হু। কোনো কোনো কিতাবে ‘আল্লাহু’ এর সংক্ষেপ ‘আহ্’ও করা
হয়েছে। আল্লাহু শব্দের প্রথম অক্ষর ‘আলিফ’ এবং শেষ অক্ষর ‘হু’। এ উভয়
অক্ষর মিলে যের, যবর ও পেশ সংযোজনে আহ্, ইহ্ এবং উহ্ গঠিত হয়। অনুরূপভাবে
যে কোনো যিকিরের শব্দের সংক্ষেপায়নে কোনো দোষ নেই। যথা ‘নামাযে
বেলায়েত’-এ উল্লেখ আছে যে, ‘আল-ইলাহু’ সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘ইল্’ হয়েছে।
অর্থাৎ হামজাতে যের আর লাম যযমের সাথে এসেছে। সুফীদের যিকির দ্বারা কখনো ‘ইল্’ এর
হামজাকে হা-এ-হাউওয়াজ দ্বারা বদল করে হেল্ হেল্ শব্দে যিকির করে থাকেন। এ
পদ্ধতিতে প্রত্যেক ধ্বনির মধ্যে আল্লাহ্ নাম পাওয়া যায়। কারণ, এমন কোনো
ধ্বনি নেই, যার মধ্যে ‘হু’ এর লেশ নেই; বরং সব ধ্বনির শেষে ‘হু’-এর
সংক্ষিপ্তরূপ অনিবার্য। অতএব, তাঁর নাম ব্যতীত কোনো শব্দ বা ধ্বনি নেই।
এজন্যই আল্লাহ্ বলেন, يسبح لله ما فى السموات وما فى آلارض (ইউছাব্বিহু
লিল্লাহি মাফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা-ফিল্ আরদি) অর্থাৎ, “আকাশ ও পৃথিবীতে
যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহকে স্মরণ করছে।” এর দ্বারা সমস্ত সৃষ্টির প্রতি
ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা প্রত্যেক বস্তু এবং জীবের সাথেই মূল সত্তা
সম্পৃক্ত। যে কোনো আওয়াজের সাথেই আল্লাহ্ নাম রয়েছে।
শেখ সাদী (রহঃ) বলেন,
“বাজিকিরাশ হরচে বিনি দর খোরাশাস্ত
ওয়ালী দানাদ্ দর ইঁ মা’না কেহ্ গোশ আস্ত।”
“বাজিকিরাশ হরচে বিনি দর খোরাশাস্ত
ওয়ালী দানাদ্ দর ইঁ মা’না কেহ্ গোশ আস্ত।”
অর্থাৎ, অন্তরে যা থাকে, আওয়াজে তা-ই আসে। এ অর্থের প্রতি কান রেখে ধ্যান
করলে, সব আওয়াজেই আল্লাহ্ নাম পাবে। আত্মিক শব্দে ‘হু’ ও আত্মিক-ই হবে।
সব কথায় আল্লাহ্ নাম থাকাটা একটা জ্ঞান রহস্য। অনুরূপভাবে সকল কাজেও
রহস্য আছে। যেমন চোরের চুরির মধ্যে দিয়ে আল্লাহ্ কাজই সম্পন্ন হয়।
কিন্তু রূপক অর্থে অপরাধী হয় চোর। যেমনঃ দাবা খেলার সময় কোনো গুটির চাল
যদি ভুল হয়, তখন সে গুটিটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, যেন গুটিটিই
অপরাধী। আল্লাহ্ কোনো কাজই নিরর্থক নয়। এর রহস্যের প্রেক্ষিতে সব কাজই
ভালো। কটূক্তি কখনো দোয়াতুল্য হয়। যেমন, আল্লাহ্ অলিগণ কটূক্তির মাধ্যমে
কোনো কোনো বিপদাপদ অপসারণ করে থাকেন। কোনো সময় চুরিও আশীর্বাদস্বরূপ হয়।
সময় বিশেষে মাল চুরি হলে ভালো হয়। যেমনঃ হযরত খিজির (আঃ) নৌকা চুরি
করাতে মালিকের উপকার হয়েছে। তবে মানুষের অপরাধী হওয়াটা ভাঙা অলংকার এবং
অস্ত্রের মতো। খরিদ্দারের কাছে এগুলো ভালো নয়। কিন্ত্তু স্বর্ণকার এবং
কামারের কাছে এগুলো ঠিকই আছে। কারণ এর দ্বারা অন্য জিনিস তৈরি হবে। তেমনি
মন্দ কথা এবং অশ্লীল শব্দেরও একই অবস্থা। কেউ যখন কাউকে কোনো অশ্লীল কথা
বলে, তাতেও আল্লাহ্ ইচ্ছাই কার্যকরী হয় এবং তারই নাম ও কাজ সম্পন্ন হয়।
আল্লাহ্ কোনো ব্যক্তির মুখ দিয়ে কোনো বিশেষ সময়ে, যে সমস্ত কথা বলাবার
ইচ্ছা করেন, তখন সে সব কথার একটি জগৎ সৃষ্টি করা হয়। আর সে অনুযায়ী
ব্যক্তির মুখ থেকে তা নিঃসৃত হয়।
সুতরাং আপনি যে দর্পণের কথা বলছেন-সে দর্পণ সে নিজেই। সমগ্র জাহান "সে" ময়। কালামে শামস্ তাব্রীজে বলা হয়েছেঃ-
মালেকুল মুলুক লা শারীকালাহু
ওয়াহ্ দাহু লা ইলাহা ইল্লাহু শামস তাব্রীজ গার খুদাতালাহ ই
খুশবু কা লা ইলাহা ইল্লাহু
কো আনাইন কা মসজুদ হ্যায় মাবুদ হে তু
অওর জো তেরি শাহিদ হে কে মশহুদ হে তু
অওর এক কি লপ্পর হে তেরি হামদ ও সা'না
হর সোওজ মে হর সাঁঝ মে
কো আনাইন কা মসজুদ হ্যায় মাবুদ হে তু
অওর জো তেরি শাহিদ হে কে মশহুদ হে তু
অওর এক কি লপ্পর হে তেরি হামদ ও সা'না
হর সোওজ মে হর সাঁঝ মে
তেরে হি নামছে অওর ইফতেদা হে
তেরেহি নাম তক হর ইনতেহা হে
তেরি হামদ ও সা'না আলহামদুলিল্লাহ
তু মেরি মোহাম্মদ কা খোদা হে...আল্লাহু.
(চলবে)
(চলবে)