পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা পাগলা বশিরের তাড়া খেয়ে পাছায় হাত বুলাতে বুলাতে আপন মনে হাঁটতে লাগলো। হেঁটে সে চলে এল মহাখালি ওভার ব্রীজের কাছে। তাড়াহুড়া করে হাঁটতে থাকায় তার শরীরটা বেশ কাহিল হয়ে গেছে। মাথার চুলগুলো আঠালো হয়ে গেছে। ধুলো ময়লা জমে জমে অনেকটা জট পাকানোর মতো অবস্থা। তার শরীর বেয়ে ঘাম দরদর করে পড়ছে। ঘামের র্দুগন্ধে কেউ কাছে আসতেও পারছে না। তাছাড়া পাগলদের কাছে কেউ দাঁড়াবে কিংবা কথা বলবে এমনটা চিন্তা করা বৃথা। মনা জানে-তার এই স্যাঁতস্যেতে ময়লা বেশভুষণে খুব যে সুশ্রী মনে হচ্ছে - এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। তারপরও সে যেন একটা স্মার্টবয়। চলা ফেরায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। কিন্ত্তু পারছে না। মনে হয় - সে চাচ্ছে না। সে চাচ্ছে, মনা যেন তার মতোই চলা ফেরা করে।

মনা আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো-লোক জনের ভীড় নেই। কিন্ত্তু ফুটপাথের চায়ের দোকানগুলোতে বেশ ভীড়। লোকজন ছায়াঘেরা পরিবেশে বসে চা খেতে ভালোবাসে। তাছাড়া সবার মাঝে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা। মনা ওপাশটায় দেখলো একজন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিউটি পালন করছে। গাড়ীর বেশ ভীড় লেগে আছে। দুর পাল্লার বাসগুলো ছাড়াও রাজধানীতে চলাচলকারী টেম্পু কিংবা প্রাইভেট কারের ভীড়ও কম নয়। ট্রাফিকটার দিকে তাকিয়ে মনার মনে কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট চিনচিন করে উঠলো। বুকের বামপাশটায় ব্যাথা করছে।

মনা ফুটপাথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দোকানীর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-ভাই একটা চা দেন। দুধ চা...

দোকানী আড়চোখে মনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-দোকানের ভিতরে আইস্যা বসেন।

-এইহানে খাইলে সমস্যা কি?

-আরে ভাই, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়্যা চা খাইলে লোকজনের চলাচলে সমস্যা অইবো।

-ও আমরা দাঁড়াইলেই সমস্যা? আর তুমি যে ফুটপাথের জায়গা দখল কইর‌্যা দোকান তুলছো, হেইডাতে কোন সমস্যা অয় না? 

-আরে ভাই আমরা তো জায়গার ভাড়া দেই। মাগনা থাকি না।

-তাইলে তো আপনে বড়লোক। আপনের একটা ঠিকানা আছে। আমার কোন ঠিকানা নাই। যেইহানে রাইত হেইহানেই কাইত।

-আমি জিগাইছি, আপনের ঠিকানা? মিয়া...এই লন চা খান

একথা বলে দোকানী তার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয়। মনা সেই চা টা কাঠফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুক চুক করে চা খাচ্ছে। আশে পাশের কিছু কৌতুহলী দৃষ্টি মনার দিকে পড়ছে। মনাও এইটাই যেন চাইছিল। সে সেদিকে ভ্রুুক্ষেপ না করে চা খেতে লাগলো। রাস্তার পাশে দাড়ানো পাগলকে দেখে অনেকেই নেমে রাস্তা পাড় হচ্ছে। মনার বেশ ভালোই লাগছে। মনা চায়ের টাকা কোচ থেকে বের করে দিল। আর একটা হলিউড মার্কা সিগারেট নিয়ে বেশ আয়েশ করে টানতে টানতে ওভারব্রীজের উপর উঠে গেল।

ওভারব্রীজের উপর উঠতেই দেখতে পেল এক কোণে একজোড়া কপোত-কপোতী খুনশুটি করছে। কিছু লোকজন বাতাসের আশায় দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের ক্লান্তি দুর করার জন্য। অন্যদিকে একটা স্থানে জটলা করা স্তুপীকৃত একটা পোটলা রাখা। সেখানে একটা পাগলী টাইপের মহিলা কাথা বিছিয়ে শুয়ে আছে। গায়ের রং বেশ খানিকটা মলিন। দেখলে বুঝা যায় আগে বেশ পরিস্কার ছিল। এখন এই পরিবেশে এসে তার গায়ের রংয়ে জং ধরেছে। সাজেও বেশ পরিবর্তন এনেছে। ঠোঁটে লাল রংয়ের লিপস্টিক দিয়েছে। চুলগুলো বেণী করে ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছেঁড়া জুতো। তারপরও বেশ তৃপ্তি নিয়েই বসে আছে। মনে হচ্ছে বিধাতার এই প্রদত্ত পরিণতি সে মেনে নিয়েছে। 

মনা সেখান থেকে সরে এসে ব্রীজটির ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়ালো। তারপর আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ব্রীজটির একটি প্রান্ত শেষ হয়েছে মসজিদের কাছে। পাশেই একটি পুলিশের আস্তানা। একটা থানা। থানাটির কাছেই রেল লাইন। ব্রীজটির অপরপ্রান্ত যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা হাসপাতাল। দু'পাশ দিয়েই গাড়ী সাই সাই করে চলছে। মানুষজনও চলাচল করছে। একটা কুকুর জিহ্বা বের করে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে চলছে। পাশেই আছে ফলের দোকান। আর চায়ের দোকান। ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। শরীরটা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। ঠিক সেই সময় মনার মনে একটা অদ্ভুত খেয়াল চাপলো। সে চিন্তা করলোঃ ঈশ্বরতো সাত আসমানের উপর বসে আছেন। তিনিতো সব কিছুই দেখছেন। মনা নিজেকে ঈশ্বরের স্থানে বসালেন। তারপর তাকিয়ে দেখতে থাকলেন-কে, কি করছে?

(চলবে)