পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-পর্ব পন্ঞ্চম

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
মনা পাগলা বেশ ভাবিত হলেন ঐসমস্ত নামাজীদের দেখে যারা দায়সারা গোছের জন্য নামাজ পড়ে। মনা ভাবলোঃ তারা কি জানেন না-সুরা মাউনে ঐ সমস্ত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে কি বলা হয়েছে? ফা-ওয়াইলুল্লিলমুসাল্লিন আন সালাতিহিম সাউন। ফা-সুতরাং ওয়াইলুল্লিল-ওয়াইল দোযখ। মুসাল্লিন- মুসল্লি। সুতরাং তাদের জন্য ওয়াইল দোযখ যারা তাদের সালাত দেখানোর জন্য আদায় করে। সালাত আদায় করতে হবে স্রষ্টাকে হাজির নাজির জেনে, বুঝে। কিন্ত্তু শুধু অনুকরণ করে সালাত আদায় করলে তাতে কোন মহৎ কর্ম সাধিত হয়েছে-এটা মনে করাটা ভুল।

এবার মনা নিজেকে প্রশ্ন করলোঃ তুমি তো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করেছো। এমন কি তুমি তাদের মনের ভেতর ঢুকে তাদের মনের কথা শুনলে। 
কিন্ত্তু তুমি কি তোমার মনের ভেতর ঢুকে দেখেছো?
কে তোমার ভেতর কথা বলে? 
কিভাবে তুমি কার দয়ায় বেঁচে আছো? 
কিভাবে তোমার সৃষ্টি হয়েছে? 
একসময়তো তোমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। তখন তোমার অস্তিত্ব কোথায় ছিল? 
কি অবস্থায় ছিল?

নিজেকে নিজে প্রশ্নগুলো করার পর মনা কেমন যেন হয়ে গেল। সে যেন হারিয়ে যেতে চাইছে কোন এক অজানা জগতে। যে জগত সর্ম্পকে তার কোন ধারণাই নাই। কিন্ত্তু সেই জগতে গেলেই কি সে তাকে দেখতে পাবে? যে ঈশ্বরের কথা সে ভাবছে সে সর্ম্পকে সে কতটুকু জানে? মহাসাগরের থেকে একটা ছোট্র পাখি তার নোখের আচরে কতটুকু পানি সংগ্রহ করতে পারে? অথচ সে যতটুকু পানি নিচ্ছে সেই পানিই তার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। তাহলে সে যে জ্ঞানটুকু লাভ করেছে সেটুকুই তার জন্য যথেষ্ট। কাজেই মহাসিন্ধুর জ্ঞান থেকে যে দর্শনটুকু সত্যদ্রষ্টারা দিয়ে গেছেন সেই অনুষ্ঠানটুকু পালন করাই ধর্ম। 

এবার মনা ভাবা শুরু করলো। প্রথমেই সে শুরু করলো ঈশ্বর শব্দটি নিয়ে। কারণ ঈশ্বর কিংবা ভগবান বা গড বা আল্লাহ যাই বলা হোক না কেন-মুল বিষয়টিতে কোন দ্বিমত নেই। সবকিছু একটি বিন্দুতেই মিলিত হয়েছে। কাজেই ঈশ্বর শব্দটির বিশ্লেষণ দরকার। ঈশ্বর শব্দের মুল হচ্ছে ঈশ্ । যার অর্থ হচ্ছে শক্তি (Energy)। শক্তি কি নিরাকার? অর্থাৎ আকারহীন? আকারহীন কিভাবে আকার সৃষ্টি করে? অথচ কোরআন বলছেঃ আল্লাহু নুরুন সামাওয়াতি ওয়াল আরর্দ। আল্লাহ আসমান এবং জমিনের নুর। আবার এও বলা হয়েছেঃ আল্লাহু কুল্লি শাইইন মুহিত। আল্লাহ সর্ববস্ত্তুতে মুহিত অর্থাৎ দ্রবীভুত অবস্থায় আছেন। যেমন শরবতে পানি ও চিনি একত্রে মিশ্রিত থাকে। সেখান থেকে পানি এবং চিনি পৃথক করা দুরহ ব্যাপার। নুর সর্ম্পকে সুরা নুরে বলা হয়েছেঃ "আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্।মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ  আল মিসবাহু ফী যুজাজা। আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা। লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার।নূরুন আলা নূর। ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।" অর্থঃ আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি। তার জ্যোতির উপমা হচ্ছে যেন একটি কুলঙ্গি বা তাক, যাতে আছে একটি প্রদীপ। প্রদীপটি রয়েছে একটি কাচের চিমনির ভিতরে। চিমনিটি যেন একটি আসমানী বস্তু-যা মোতির মত ঝকমক করছে। এটি উজ্জলতা প্রাপ্ত হয়েছে পবিত্র জয়তুন গাছ থেকে-যা পুর্ব দিকের নয়, পশ্চিমদিকেরও নয়। মনে হয় যেন এর তেলটা এখনই আপনা থেকেই জ্বলে উঠবে যদিও আগুন সেটিকে স্পর্শ না করে। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে চান তার জ্যোতির দিকে পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য নানা উপমা পেশ করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা সকল বিষয় সর্ম্পকেই অবগত আছেন।
এছাড়া প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ বেদে বলা হয়েছেঃ‘রূপংরূপ বিবর্জিতস্য ভবতো ধ্যানেন যদবর্ণিতং।’ অর্থঃ এর মানে হল- ‘হে রূপহীন ঈশ্বর! ধ্যানে তোমার রূপ বর্ণনা করেছি।’ তন্ত্রমতে নারী জগতের আদি কারণ। এই জন্য যে এই নিরাকার রূপহীন ঈশ্বরকে যখন নারী ভাবা হয় তখন ঈশ্বরের মাহাত্ম ক্ষুন্ন হয় না। কাজেই ভক্তের মানসিক প্রবনার ওপরই মাতৃমূর্তির কল্পনা। যে কারণে বলা হয়েছে -
‘সাধকানাং হিতার্থায়ৈ ব্রহ্মণে রূপকল্পনা’
এর মানে হল- ‘সাধকের হিতের জন্য ঈশ্বরের রূপ কল্পনা করা হয়েছে।’
সুপ্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ন এক অনার্য ধর্মীয় বিশ্বাস হল- যোগ ( যাকে আমরা ইয়োগা বলে জানি)। পূজার সঙ্গে যোগ-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। তন্ত্র নারীবাদী হলেও এর কেন্দ্রে রয়েছেন শিব। যিনি প্রধানতম অনার্য দেবতা এবং তন্ত্রে নারীকে জগতের আদিকারণ মনে করা হলেও বিশ্বপ্রকৃতির সমস্ত শক্তির উৎস হলেন শিব।
(চলবে)